প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

(৫) যৌনাঙ্গের ভেতরের অংশ


(৬) স্তন ও তার অংশবিশেষ

ঋতুচক্র ও প্রজনন

একটি ছোট মেয়ে মহিলা হয়ে উঠছে। এর লক্ষণ যেমন স্তন বড় হওয়া বা বগলে ও যৌনাঙ্গে কেশ জন্মানো, তেমনই একটি সমসাময়িক ঘটনা হচ্ছে তার রজঃস্বলা বা ঋতুমতী হওয়া বা তার মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। অনেক সময়ই সাধারণ ভাষায় এই অবস্থাকে 'শরীর খারাপ' এমনকি 'অশুচি' ইত্যাদি অবৈজ্ঞানিক আখ্যা দেওয়া হয়। আসলে এ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, যা না ঘটলে অস্বাভাবিক মনে করতে হবে।

এই অংশে ঋতুচক্র বাবদ মেয়েদের শরীরের ভিন্নতা ও পৃথক পৃথক ধরণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ছাড়াও আলোচনা করা হয়েছে গর্ভাধান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। এখানে শরীরের বিশেষ বিশেষ লক্ষণ যা থেকে গর্ভাধানের সম্ভাব্যতা চিহ্নিত করা যাবে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভাধানের সম্ভাবনা বাড়ানো যাবে, এবং আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান আরও বাড়ানো যাবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ঋতুচক্রের অভিজ্ঞতা সকলের ক্ষেত্রে একেবারে একরকম হয় না। এ অভিজ্ঞতা বিভিন্ন ধরনের, আলাদা আলাদা, এবং একেবারে নতুন হতে পারে।


নারী শরীরে ঋতুচক্রের আরম্ভ ও শেষ

কিশোরীদের প্রথমবার ঋতুমতী হওয়ার (মেনার্কি) অভিজ্ঞতা হরেক রকম, আবার মহিলাদের রজোঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) অভিজ্ঞতাও বহুবিধ। এই ভিন্নতার পেছনে প্রধান ভূমিকা জীব-বিজ্ঞানের। অবশ্য এক্ষেত্রে যেখানে আমরা থাকি সেই স্থান-কাল ও সংস্কৃতি, এগুলির ভূমিকাও অনস্বীকার্য। ঋতুমতী হওয়া আমাদের শিশু অবস্থা থেকে শারীরিক পূর্ণাঙ্গতা পাওয়ার দিকে একটি ধাপ। মেয়েদের শরীরে ঋতুমতী হওয়ার সমসাময়িক আরও কয়েকটি ঘটনা হল স্তনের উদ্ভেদ, যৌনকেশ ও বগলের তলায় কেশের আগমন, এবং হঠাত্ উচ্চতা এবং ওজন বৃদ্ধি। এ সময়ে শরীরে হাড়ের শক্তি এবং পরিমাপ বাড়া বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু বয়স বিশের কোঠা পার না হওয়া পর্যন্ত হাড়ের ভিতরের বৃদ্ধি অব্যহত থাকে।

মেয়েদের শরীরের প্রজনন প্রক্রিয়া হর্মোন নিয়ন্ত্রণ করে। হর্মোন হল রক্তধারায় এবং মস্তিষ্কে অবস্থিত রাসায়নিক যা আমাদের শরীরের এক অংশ থেকে অপর অংশে সংকেত পৌঁছে দেয়। শরীরে যৌন হর্মোন গুলির পরিমাণ শৈশবে কম থাকে, প্রজননক্ষম বয়সে ভীষণ বৃদ্ধি পায়। তারপর এগুলি ক্রমশ কমতে থাকে ও রজোঃনিবৃত্তির পরে এগুলির অনুপাত বদলে যায়। প্রথম ঋতুস্রাবের দিন থেকে রজোঃনিবৃত্তি পর্যন্ত জীবনে আমরা যে সমস্ত পরিবর্তন অনুভব করি, সেগুলি এই হর্মোনগুলির উপস্থিতির আনুপাতিক হার, কমা-বাড়ার জন্যেই হয়।

ডিম্বাণুর জন্ম এবং ঋতুস্রাব মেয়েদের গড়ে সড়ে বারো বছর বয়সে শুরু হয়। তবে নয় থেকে আঠারো যে কোন বয়সেই এগুলি শুরু হওয়া স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার বয়স অনেকগুলি কারণে ভিন্ন হয়। এর মধ্যে কতকগুলি কারণ বৈজ্ঞানিক। যেমন একটি মেয়ের শরীরের স্নেহ বা চর্বির (ফ্যাট) ওজন তার শরীরের ওজনের এক চতুর্থাংশ হলে তবেই সে ঋতুমতী হবে। তাই ঋতুচক্রের সঠিক বিবর্তনের জন্যে আমাদের খাদ্যতালিকায় সঠিক অনুপাতে স্নেহ জাতীয় পদার্থ (ফ্যাট), কার্বোহাইড্রেট, এবং প্রোটিন থাকা জরুরী। আবার কতকগুলি কারণ আবহাওয়াজনিত। বিভিন্ন সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা মেয়েরা বিভিন্ন সময়ে প্রথম ঋতুমতী হতে পারেন। যেমন তাইওয়ানের মেয়েদের প্রথম ঋতুমতী হওয়ার গড় বয়স এবং আমেরিকার মেয়েদের প্রথম ঋতুমতী হওয়ার গড় বয়স আলাদা। আবার তাদের খাদ্যাভ্যাস, ওজন, জাতি, আবহ, এবং পারিবারিক ইতিহাসের ভিন্নতার ভিত্তিতে একই দেশের মেয়েদের প্রথম ঋতুমতী হওয়ার গড় বয়স বিভিন্ন হতে পারে।

সনকা ও কল্পনার অভিজ্ঞতা

আমার মাসিক হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। এ রকম যে কিছু হয় আমি জানতাম না। মা কোনদিন কিছু বলেই নি! আমি ঠাকুরমার সঙ্গে পুজো দিতে গিয়েছিলাম - তখন হঠাত্ রক্তে আমার জামা ভেসে যায়। সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। ঠাকুরমা তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে আসার পর আমার বৌদি দেখিয়ে দেয় কি করে প্যাড পরতে হয়। আমাদের তো প্যাড কেনার পয়সা ছিল না, তাই পরিষ্কার ধোয়া কাপড় মাসিকের সময় ব্যবহার করতাম। আমার মেয়েকেও আমি কিছু বলতে পারি নি। ওর স্কুলের দিদিমণিরাই ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আমার মেয়েকে আমি প্যাড পরতেই বলেছি। তাতে ও পরিষ্কার থাকে।

আমি ছোটবেলা থেকেই লোকের বাড়িতে থাকি, কাজ করি। সে রকম এক বাড়িতেই আমার মাসিক আরম্ভ হয়। আমাকে কেউই এ ব্যাপারে কিছু জানায় নি। বয়সে বড় অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে মিশে আমি সব কিছু জেনে গিয়েছিলাম। তাই যখন প্রথম মাসিক হল, কাউকে জানাই নি, কারোর সাহায্য নিতে হয় নি। কেমন করে কাপড় দিয়ে প্যাড বানাতে হয় তাও নিজের থেকেই শিখে নিয়েছিলাম। অত কাপড় তো ছিল না, তাই ব্যবহার করা কাপড়ই ভাল করে ধুয়ে নিতে হত। এ নিয়ে কারোর সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ হয় নি। এখন আমার মাসিক আর হয় না - কেন জানি না। বোধহয় তাড়াতাড়িই মাসিক শেষ হয়ে গেল।

 

প্রজননক্ষম বয়সে ডিম্বাণুর জন্ম ও ঋতুচক্র হর্মোন চক্রের ছন্দের ওপর নির্ভর করে। এই ঋতুচক্র মেয়েদের শরীরে সন্তান জন্ম দেবার উর্বরতা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রত্যেক মাসে মাত্র কয়েকদিন আমাদের শরীর গর্ভাধানের সম্ভাবনার জন্যে তৈরী হয়। অনেক মহিলার ক্ষেত্রে এই বিশেষ সময়ে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন আবেগ-অনুভূতির পরিবর্তন, স্তনে তীক্ষ্ণ সংবেদনশীলতা ও আরও কিছু পরিবর্তন, বিশেষ বিশেষ খাবার খাওয়ার ইচ্ছে ইত্যাদি। মেয়েদের শরীরে ঋতুচক্র ও ডিম্বাণুর জন্ম গড়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত চলে। তবে চল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন বছর বয়সের মধ্যে যে কোনও সময়ে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেলে রজোঃনিবৃত্তি (মেনোপজ) হয়েছে বলা হয়। মেয়েদের শরীরে প্রজননের ক্ষমতা থাকাকালীন অবস্থা এবং তার পরবর্তী কালে যে সমস্ত পরিবর্তন দেখা দেয় সেগুলি প্রায় পনেরো বছর ধরে চলতে পারে। ডিম্বাণু এবং রক্তস্রাব ঋতুচক্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকলে ঋতুকালীন সমস্যাগুলি, যেমন খিল ধরার ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে কি করতে হবে তা বুঝতে সুবিধা হবে। এ বিষয়ে আগের সারণী, ছবি ইত্যাদি মনে রাখুন। সেখানে শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গগুলি এবং সেগুলির ভূমিকা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।


মাসিক ও ডিম্বাণু সম্পর্কে কিছু কথা

স্ত্রী-গ্রন্থিদ্বয় (ওভারি)

একটি মেয়ের জন্মের সময়ে তার দুটি স্ত্রী-গ্রন্থিতে প্রায় বিশ লক্ষ ক্ষুদ্র থলি বা ফলিকল থাকে। এই থলি ফাঁপা বলের মত কোষসমষ্টি এবং প্রত্যেকটির কেন্দ্রে একটি অপরিণত ডিম্বাণু থাকে। একটি মেয়ের শৈশবাবস্থায় স্ত্রী-গ্রন্থিদুটি প্রায় অর্ধেক সংখ্যক থলিগুলিকে আত্মভূত করে নেয়। ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সময়ে ও প্রজননক্ষম বয়সে স্ত্রী-গ্রন্থিদ্বয়ে অবস্থিত প্রায় চার লক্ষ থলি থেকে তিনশ থেকে পাঁচশয়ের কাছাকাছি পরিণত ডিম্বাণু তৈরী হয়।

দীর্ঘকাল ধরে প্রজনন-বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে এসেছেন যে সব স্তন্যপায়ী স্ত্রীপ্রাণী জন্মের সময়েই যথেষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু-উত্পাদক থলি নিয়ে জন্মায় এবং জীবিতাবস্থায় তাদের শরীরে আর নতুন কোন ডিম্বাণু জন্মায় না। কিন্তু ইদানীং কালে নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে স্ত্রী-ইঁদুরের শরীরে এরকম বহু থলি মজুত থাকে এবং তার থেকে তাদের জীবদ্দশায় নতুন ডিম্বাণু জন্মায়। এটি মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা সে বিষয়ে আরও সমীক্ষার প্রয়োজন আছে।

মেয়েদের প্রজননক্ষম বয়সকালে, প্রত্যেক মাসে, শরীরে প্রবাহিত হর্মোনগুলির প্রভাবে দশ থেকে কুড়িটি থলি (ফলিকল) পরিণত হতে শুরু করে। সাধারণত, একটিমাত্র থলিই সম্পূর্ণরূপে পরিণত হয়। বাকিগুলি পরিণত হওয়ার আগেই আবার আমাদের শরীরে মিশে যায়। ঐ থলির মধ্যেকার কোন কোন কোষ থেকে এস্ট্রোজেন নামে হর্মোনের ক্ষরণ হয়। ডিম্বাণুসহ পরিণত থলিটি স্ত্রী-গ্রন্থির ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ডিম্বাণু জন্মের সময়ে (ওভ্যুলেশন) থলি এবং স্ত্রীগ্রন্থির মুখ খুলে যায় ও ক্ষুদ্রকায় ডিম্বাণু ভেসে বেরিয়ে আসে। এই সময়ে অনেক মহিলা তাঁদের তলপেটের নীচের দিকে বা পিঠে ক্ষণস্থায়ী তীব্র যন্দ্রণা ও খিল ধরা ভাব অনুভব করেন। এর সঙ্গে জরায়ু-গ্রীবা (সারভিক্স) থেকে রসনিঃসৃত হয়, এবং তার সাথে কোন কোন সময়ে রক্তও থাকে। এই সময়ে কোন কোন মহিলার মাথা ধরে, পাকস্থলীতে (গ্যাসট্রিক) যন্ত্রণা হয়, শরীর ছেড়ে দেয়, ও আলস্য বোধ হয়। আবার কেউ কেউ এই সময়ে খুবই সুস্থ বোধ করেন।

ডিম্বাণু জন্মের ঠিক আগে ঐ থলির মধ্যে থাকা হর্মোন উৎপাদনকারী কোষগুলি থেকে এস্ট্রোজেন ছাড়াও প্রোজেস্টেরোন নামক রস নিঃসৃত হয়। ডিম্বাণু বের হয়ে যাওয়ার পরে খালি থলিটিকে কর্পাস লু্যটিয়াম বলে। এই চক্র চলাকালীন কোন মহিলা গর্ভবতী হলে কর্পাস ল্যুটিয়াম থেকে উৎপাদিত কিছু হর্মোন সেই গর্ভকে স্থায়িত্ব দিতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থা না হলে কর্পাস ল্যুটিয়াম আবার শরীরে মিশে যায়।

ডিম্বাণু জন্মের পরে নির্গত ডিম্বাণুটি একটি নলের (ফ্যালোপিয়ান টিউব) ছড়ানো শেষাংশে প্রবেশ করে তার কয়েকদিন ব্যাপী জরায়ু-মুখী যাত্রা শুরু করে। নলের ভেতরের পেশীগুলি ঢেউয়ের মত সংকোচন ও প্রসারণ করে ডিম্বাণুটিকে এই যাত্রায় সাহায্য করে। প্রত্যেকটি ডিম্বাণুবাহী নলের ভেতরের দেওয়ালে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রোম আছে যেগুলি ক্রমান্বয়ে ওঠানামা করে। যোনিপথে পুরুষ শুক্রাণু প্রবেশ করলে তা জরায়ু-গ্রীবা হয়ে জরায়ু পথে ডিম্বাণুবাহীনলে প্রবেশ করে। এই রোমরাজি শুক্রানুকে স্ত্রী গ্রন্থির দিকে ডিম্বাণুর কাছে ঠেলে দিতে সাহায্য করে।

গর্ভাধান (ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন) হলে তা সাধারণত ডিম্বাণুবাহী নলের শেষের দিকে (স্ত্রী-গ্রন্থির কাছে) ডিম্বাণু জন্মের একদিনের মধ্যে হয়। একটি গর্ভাধান হওয়া ডিম্বাণু আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয়দিনের মধ্যে জরায়ুতে পৌঁছায়। ডিম্বাণুটির গর্ভাধান না হলে সেটি ঋতুস্রাবের আগে যোনিপথে অন্যান্য ক্ষরণের সাথে বেরিয়ে যায়। এই নির্গমণ বোঝা যায় না। এই চক্র চলাকালে বিভিন্ন হর্মোনের প্রবহনে জরায়ু-গ্রীবায় উৎপাদিত শ্লেষ্মা ও তরল বেরিয়ে যাওয়ার একটি সাধারণ ধরণ আছে। তবুও নিজের ক্ষরণের ধরণ চেনা যায়। ডিম্বাণু জন্মের আগের অবস্থায় জরায়ু গ্রীবা থেকে ক্ষরিত তরলকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের (মাইক্রোস্কোপ) তলায় দেখলে জট পাকানো তন্তুজালের মত লাগে। কিন্তু হর্মোনের প্রভাবে ডিম্বাণুর জন্মের সময় যত এগিয়ে আসবে ঐ ক্ষরণের গঠন বদলে গিয়ে অপেক্ষাকৃত লম্বা সরলরেখার মত বা ক্ষীণ সুতোর মত দেখতে তন্তু তৈরী হবে। এই সুতোই শুক্রাণুকে জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। অর্থাত্ এই তরলটি জরায়ুর দ্বাররক্ষীর ভূমিকা পালন করে। ডিম্বাণুর জন্মের সময়ে এই তরল মসৃণ ও ঘন হয়ে যোনির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে আবরণের সৃষ্টি করে এবং শুক্রাণুকে যোনির অম্ল-ক্ষরণ জনিত সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে। শুক্রাণু জরায়ু-গ্রীবা নিসৃত উর্বর ক্ষরণের মধ্যে পাঁচদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ডিম্বাণু জন্মের পরে প্রোজেস্টেরন হর্মোনের সঙ্গে এস্ট্রোজেনের বিক্রিয়ার ফলে এই ক্ষরণ আরও ঘন হয় এবং ক্রমশ যোনিতে শুকিয়ে যায়।


জরায়ু-ঝিল্লী (এনডোমেট্রিয়ম) ও জরায়ু (ইউটেরাস)

পরিণত হতে থাকা থলিগুলি (ফলিকল) থেকে উত্পাদিত এস্ট্রোজেন জরায়ু ঝিল্লির দেওয়ালে লেগে থাকা গ্রন্থিগুলিকে (গ্ল্যাণ্ডস) বেড়ে উঠতে ও চওড়া হতে সাহায্য করে এবং এই গ্রন্থিগুলিতে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। জরায়ু-ঝিল্লির এই অবস্থাকে ঋতুচক্রের বিস্তার পর্যায় (প্রলিফরেটিভ ফেজ) বলে এবং তা ছয় থেকে কুড়ি দিন পর্যন্ত চলতে পারে। থলি থেকে ডিম্বাণু বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রোজেস্টেরন উৎপাদিত হয় এবং তা জরায়ু-ঝিল্লির গ্রন্থিগুলিকে ভ্রুণের পুষ্টি সাধক পদার্থ ক্ষরণের শক্তি যোগায়। এই অবস্থাকে ঋতুচক্রের ক্ষরণ পর্যায় (সিক্রেটারি ফেজ) বলে। গর্ভাধান হওয়া ডিম্বাণু এই ক্ষরণ পর্যায়েই স্থাপিত হতে পারে, বিস্তার পর্যায়ে নয়। গর্ভাধান না হলে ডিম্বাণুহীন থলি (ফলিকল) প্রায় বার দিন ধরে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন উৎপাদন করে এবং এই সময়ের শেষের দিকে হর্মোনগুলি ক্রমহ্রাসমান হারে তৈরী হয়। এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকলে জরায়ুর মধ্যেকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিরা উপশিরাগুলি বন্ধ হয়ে যায়।
জরায়ু-ঝিল্লির দেওয়ালগুলি আর পুষ্ট থাকে না এবং ক্ষরণ হয়। এই অবস্থাকে ঋতুস্রাব হওয়া বলে।

ঋতুচক্র বিষয়টি মহিলাদের প্রায়শই এমনভাবে বোঝানো হয় যেন সেটি গর্ভাধান না হওয়ার দরুণ একটি দুর্ঘটনাজনিত প্রক্রিয়া। কিন্তু আসলে ঋতুস্রাব হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ এবং আমাদের শরীরের অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়াগুলিকে পরিষ্কার রাখার উপায়।

(ক্রমশ)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।