ঋতুস্রাবজনিত
ক্ষরণ
ঋতুস্রাবের সময়ে
কেবল নীচের দিকের এক তৃতীয়াংশ ছাড়া জরায়ু ঝিল্লির বেশিরভাগ
অংশই ক্ষরিত হয় এবং নূতন আস্তরণ তৈরী হয়। তারপর নূতন
থলি (ফলিকল) তৈরী হওয়া শুরু ও এস্ট্রোজেনের ক্ষরণ শুরু
হয় ও সেই সঙ্গে জরায়ুর ঝিল্লিগুলি পুষ্ট হতে থাকে এবং
নতুন ঋতুচক্র আরম্ভ হয়। স্ত্রী ডিম্বাণু নির্গমন (অভ্যুলেশন)
না হওয়া সত্বেও রক্তস্রাব হতে পারে। এই অবস্থাকে অসময়ের
ঋতুস্রাব বলে মনে করা হয়। রজোঃনিবৃত্তির সময় যত এগিয়ে
আসে ততই এই ধরণের স্রাব বাড়ে। ঋতুস্রাবের সময়ে যোনি
থেকে কেবলমাত্র রক্তই নির্গত হয় না, রক্ত (অনেক সময়
ডেলা পাকানো বা টুকরো) ছাড়াও জরায়ু গ্রীবা থেকে নির্গত
তরল, যোনিদেশের ক্ষরণ, নানারকম কোষ, জরায়ু ঝিল্লির তন্তু,
সবই ঋতুস্রাবের সঙ্গে বের হয়। সাধারণত এই উপাদানগুলি
চোখে দেখা যায় না কারণ রক্তের উপস্থিতির জন্যে স্রাবের
তরল লাল অথবা খয়েরী রঙের হয়।
মহিলাদের ঋতুচক্রের
সময় একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকমের হয় এবং চক্রকাল কুড়ি
থেকে ছত্রিশদিন পর্যন্ত হতে পারে। আমরা অনেকেই অবশ্য
মনে করি মাসে একবারই ঋতুচক্রের যথার্থ সময়। মেনসট্রুয়েশন
শব্দটি লাটিন শব্দ মেনসিস অর্থাৎ মাস থেকে এসেছে।
যোনির
অভ্যন্তর ধোয়ার (ডুশ) প্রয়োজন আছে কি?
না। নারী শরীরের
গন্ধ আর ক্ষরণ স্বাভাবিক ব্যাপার। সে সব ধুয়ে ফেলার
কোন স্বাস্থ্যসম্মত কারণ নেই। যোনির ভেতরে নিঃসৃত
তরল বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়। ডুশ
দিয়ে যোনির অভ্যন্তর ধুয়ে ফেললে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা
বেড়ে যায়। বাইরে থেকে পরিষ্কার সাবান জল দিয়ে ধুয়ে
ফেলাই স্বাস্থ্যরক্ষার পক্ষে যথেষ্ট। যোনিতে ডিওডোরান্ট
ব্যবহার করাও স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ। এতে যোনির
অভ্যন্তরের স্বাভাবিক ক্ষার এবং অম্লের পরিমাপ পাল্টে
যেতে পারে, তাছাড়া যোনিতে অ্যালার্জিও হতে পারে।
বহু মহিলার প্রত্যেক
মাসেই ঋতুস্রাব হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দুটিঋতুস্রাবের
মধ্যেকার সময় একমাসের বেশি অথবা কমও হয়। কারও ঋতুস্রাবনিয়মমাফিক
ভাবে প্রত্যেক আঠাশ অথবা চল্লিশ দিন অন্তর হয়। আবার
অনেকেরক্ষেত্রে এই সময়ের ব্যবধান বাড়ে বা কমে। কখনও
বা এই পরিবর্তন তাৎক্ষণিকও সামান্য। আবার কেউ যদি ভীষণ
মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন বা তাঁর শরীরেস্নেহ-জাতীয়
(ফ্যাট) পদার্থ বিশেষ রকম কমে যায় এই পরিবর্তন বড় রকমেরহতে
পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা সন্তানের জন্ম দেবার
পরে এই ব্যবধানলক্ষণীয় ভাবে পাল্টে যায়।
ঋতুস্রাব কদিন
ধরে চলবে তাও সব মহিলার ক্ষেত্রে এক নয়। এই প্রক্রিয়াদুই
থেকে আটদিন পর্যন্ত চলতে পারে, তবে গড় হল চার থেকে ছয়
দিন। এসময়ে ঋতুস্রাবের ধারা বন্ধ হয়ে গিয়ে আবার শুরু
হতে পারে, তবে তা সবসময়ে বোঝা যায় না। সাধারণত ঋতুস্রাবের
পরিমাণ চার থেকে ছয় টেবিল চামচ (এক কাপের চতুর্থাংশ)
বা দুই/তিন আউন্স।অনেক মহিলা ঋতুস্রাবের এই তথ্যটি শুনে
আশ্চর্য হয়ে যান কারণ তাঁদের ধারণা যে ঐ পরিমাণ আরও
অনেক বেশি।
ঋতুচক্র: একটি জরুরী বিষয়
আপনার ঋতুচক্র
কি স্বাভাবিক? ঋতুচক্রে কি কি স্বাভাবিক তা জেনে নিলে
স্বাস্থ্য বিষয়ে আপনার দৃঢ় জ্ঞান জন্মাবে। ঋতুচক্র হঠাৎ
বন্ধ হয়ে গেলে, বেশিরক্তস্রাব হলে, বা ঋতুকাল ছাড়াও
অন্তর্বাসে দাগ নিয়মিত নজরে এলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিন। এই সমস্ত লক্ষণগুলি ওজন-কমা বাড়া, মানসিক চাপ,
অন্তঃসত্বা হওয়া, রজোঃনিবৃত্তি, থাইরয়েডের অসুখ, বা
ক্যানসারের পূর্বাভাস হতে পারে।
মাসিকের
সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া
ইদানিং মাসিকের
সংখ্যা কমানোর জন্যে ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। দেখা গেছে
হর্মোন জাতীয় ওষুধ দিয়ে মেয়েদের মাসিক প্রত্যেক মাস
থেকে তিন চার মাস অন্তর অন্তর করে দেওয়া যায়। জন্ম
নিরোধক বড়ির মত এই ওষুধগুলি খেলে মাসিকের সংখ্যা কমে
গিয়ে বছরে মাত্র চারবারে দাঁড়ায়। অবশ্য যে মহিলাদের
মাসিক অত্যন্ত কষ্টের, ডাক্তারেরা ওষুধ দিয়ে তাঁদের
মাসিক বন্ধ করে চিকিৎসা করছেন বহুদিন ধরে। কিন্তু
মেয়েদের জীবনে মাসিকের সংখ্যা কমানোর কোন প্রয়োজন
আছে কি? নাকি মাসিকের ব্যাপারে সামাজিকলজ্জার সুযোগ
নিয়ে ওষুধ কোম্পানীগুলো মুনাফা জড়ো করছে?
বেশির ভাগ মহিলাই
নিজেদের ঋতুচক্রের বা গর্ভাধানের সম্ভাব্য সময়ের তারিখ
এবং সে সম্পর্কে তথ্য ক্যালেণ্ডারে নিয়মিত লিখে রাখেন
না। কিন্তু আমরা সকলেই আমাদের ঋতুস্রাবের দিন, যোনি
থেকে কোন ক্ষরণের দিন, বা এ-বিষয়ে কোন শারীরিক বা মানসিক
অভিজ্ঞতার দিন তারিখ ডায়রীতে লিখে রাখতে পারি। যেমন
ঋতুকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, ব্যথা বা খিঁচ ধরা,
বেশি বা কম ঋতুস্রাব, যৌন-ইচ্ছা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য
সংক্রান্ত বিষয় লিখে রাখলে এ সম্পর্কে আমাদের সম্যক
বোধ এবং জ্ঞান বাড়বে। এই তালিকা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিজেদের শরীর সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি জানতে সাহায্য
করবে। কোন উপসর্গ স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক তা আমরা বুঝতে
পারব। এতে নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ
ও সঠিক ধারণা জন্মাবে।
সন্তান-ধারণ ও গর্ভাধানের উর্বরতা
সম্পর্কে সচেতনতা
গর্ভাধান বিষয়ে
তালিকা রাখার একটি ভালো উপায় হল উর্বরতা সচেতন প্রক্রিয়া
বা ফার্টিলিটি অ্যাওয়ারনেস মেথড (এফ এ এম) ব্যবহার করা।
শরীর এবং গাইনোকলজিকাল স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর
এ এক উৎকৃষ্ট উপায়। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ
এবং গর্ভধারণের উপায় হিসেবে বিজ্ঞান স্বীকৃত। এই পদ্ধতি
যিনি ব্যবহার করবেন তাঁকে বিশেষ দিনের বিশেষ লক্ষণ নজরে
রাখতে ও তালিকাভুক্ত করতে হবে, যাতে বোঝা যায় যে সেই
বিশেষ দিনে শরীরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে কি না। এই
বিষয় সম্পর্কে বিশদ জেনে নিয়ে তবেই এই প্রক্রিয়া কাজে
লাগানো উচিৎ।
মেয়েদের ঋতুচক্রকে
মূলতঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায়: স্ত্রী-গ্রন্থি থেকে ডিম্বাণু
জন্মানোর আগের অনুর্বর অবস্থা, উর্বর অবস্থা, এবং গর্ভাধান
না হওয়া ডিম্বাণু যোনি ক্ষরণের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার
পরের অনুর্বর অবস্থা। আপনার শরীর এই তিন পর্যায়ের মধ্যে
কোন অবস্থায় আছে তা বুঝতে গেলে আপনাকে উর্বরতা সম্পর্কিত
তিনটি প্রাথমিক লক্ষণের দিকে নজর রাখতে হবে: (১) ঋতুচক্র
আরম্ভের সময়কার শারীরিক তাপমাত্রা (সকালে ঘুম থেকে জেগে
উঠে); (২) জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত তরল; এবং (৩) জরায়ু গ্রীবার
অবস্থান।
উর্বরতা
সচেতনতা প্রক্রিয়ার (ফার্টিলিটি অ্যাওয়ারনেস মেথড বা
এফ এ এম) বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
- ত্রস্ট্রোজেন
এবং প্রোজেস্টেরনের সরাসরি প্রভাবে ঋতুচক্র চালিত
হয় এবং নারী শরীরে এই হর্মোনগুলির দৈনিক অবস্থান বিভিন্ন
সূচকের মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। চক্রের প্রথম অংশ
এস্ট্রোজেন দ্বারা প্রভাবিত হয় আর শেষের অংশে প্রোজেস্টেরন
প্রধান হয়ে ওঠে। স্ত্রী গ্রন্থির মধ্যে থেকে ডিম্বাণু
বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় ল্যুটেনাইজিং হর্মোন অনুঘটকের
কাজ করে।
- নারী শরীরের
তিনটি অনুধাবনযোগ্য লক্ষণ দিয়ে বোঝা যায় যে ডিম্বাণু
জন্মের সময় হয়েছে বা জন্মে গিয়েছে। (ক) ঋতুচক্রের
আরম্ভের সময়কার শরীরিক তাপমাত্রা, (খ) জরায়ু-গ্রীবা
নিঃসৃত তরল, এবং (গ) জরায়ু-গ্রীবার অবস্থান।
- নারী শরীরে
ডিম্বাণুর জন্ম প্রত্যেক ঋতুচক্রে একবারই হয়। ঐ সময়ে
চব্বিশঘন্টার মধ্যে এক বা একাধিক ডিম্বাণুর জন্ম হয়।
একটি ডিম্বাণু বারো থেকে চব্বিশঘন্টা পর্যন্ত বাঁচে।
একই ঋতুচক্রে দ্বিতীয় ডিম্বাণু প্রথমটি জন্মানোর চব্বিশঘন্টার
মধ্যে জন্মায়।
- ঋতুস্রাবের
সময় থেকে তার পরবর্তী ডিম্বাণু জন্মের ব্যবধানে হেরফের
হতে পারে, কিন্তু ডিম্বাণুর জন্মের সময় থেকে ঋতুস্রাবের
সময়ের ব্যবধান সাধারণতদুই সপ্তাহ হয়।
- উর্বরগুণ সম্পন্ন
জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত তরলে পুরুষের শুক্রাণু পাঁচদিন
পর্যন্ত বাঁচতে পারে। সাধারণত এই সময়সীমা দুই দিন
হয়।
- ডিম্বাণু থলির
অবশিষ্টাংশ (কর্পাস ল্যুটিয়াম) প্রোজেস্টেরন উৎপাদন
করে, ফলে পরবর্তী ঋতুচক্র পর্যন্ত নতুন ডিম্বাণু উৎপাদন
বন্ধ থাকে।
নারী
উর্বরতার প্রাথমিক লক্ষণ
- ঋতুচক্র আরম্ভের
সময় শরীরের তাপমাত্রা (সকালে ঘুম ভাঙার পরে শরীরের
তাপমাত্রা নিতে হবে। একে প্রাথমিক বা বেসাল শারীরিক
তাপমাত্রা বলে)।
- কোন মহিলার
ডিম্বাণু জন্মের আগে শরীরের তাপমাত্র ৯৭ থেকে ৯৭.৫
ডিগ্রী ফারেনহাইটের (৩৬.১১ থেকে ৩৬.৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস)
মধ্যে থাকে। ডিম্বাণুর জন্মের পরে ঐ তাপমাত্রা বেড়ে
৯৭.৬ থেকে ৯৮.৬ ফারেনহাইট (৩৬.৪৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস)
হয়। পরবর্তী ঋতুস্রাব পর্যন্ত (অর্থাৎ প্রায় দুই সপ্তাহ)
এই তাপমাত্রা একই রকম বজায় থাকবে। কিন্তু অন্তঃসত্বা
হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ঐ বর্দ্ধিত তাপমাত্রা ডিম্বাণু
জন্মের পরে আঠেরো দিনের বেশি সময় পর্যন্ত বজায় থাকবে।
এ ক্ষেত্রে জরুরী
হল শরীরের তাপমাত্রা বাড়া ও কমার ধরণগুলি বোঝা। দেখা
যাবে ডিম্বাণু জন্মের আগে শরীরের তাপমাত্রা বাড়া কমার
ব্যবধান কম, আবার ডিম্বাণু জন্মের পরে ঐ তাপমাত্রা বাড়া
কমার ব্যবধান বেশি। তাপমাত্রার দৈনিক পরিবর্তনের দিকে
নজর না রাখলেও চলে কারণ ডিম্বাণু জন্মালে তাপমাত্রা
একদিনের মধ্যেই বেড়ে যায়। এই বর্ধিত তাপমাত্রা বজায়
থাকার মানেই হল ডিম্বাণুর জন্ম হয়েছে।
শরীরের উর্বরতার
অন্যদুটি সূচক, যথা জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত তরল ও জরায়ুগ্রীবার
অবস্থান ডিম্বাণু জন্মের আসন্নতা বোঝায়। সাধারণত ধরে
নেওয়া হয় যে বেশিরভাগ মহিলার শরীরের তাপমাত্রা সবথেকে
কম থাকার সময়েই ডিম্বাণুর জন্ম হয়। কিন্তু এই ঘটনা খুব
কম সংখ্যক মহিলার ক্ষেত্রেই ঘটে। এই তাপমাত্রা পরিমাপের
জন্যে ডিজিটাল থার্মোমিটার, যাতে এক ডিগ্রীর এক দশমাংশ
পর্যন্তমাপা যায়, তা ব্যবহার করা উচিৎ।
নিম্নলিখিত
অবস্থায় তাপমাত্রা সঠিকভাবে মাপা সম্ভব নয়
- জ্বর
- আগের
দিন বা রাত্রে মদ্যপান
- তাপমাত্রা
মাপার আগে তিন ঘন্টা জেগে থাকা
- সাধারণত
যে সময়ে তাপমাত্রা মাপা হয়েছে তা বাদ দিয়ে
অসময়ে তাপ মাপা
- মোটা
কম্বল (যা সাধারণত ব্যবহার করেন না) ব্যবহার
করার পরে তাপ মাপা
|
জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত তরল (সার্ভিকাল
ফ্ল্যুইড)
জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত
তরলের ক্ষরণ ডিম্বাণু জন্মের আগে হয় এবং এই তরল শুক্রাণুকে
ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ জরায়ু
গ্রীবা নিঃসৃত এই উর্বর তরল ক্ষারজাতীয় (অ্যালকালাইন)
এবং শুক্রাণুকে যোনির মধ্যেকার অম্লজাতীয় (অ্যাসিডিক)
আবহে সুরক্ষিত রাখে। তা ছাড়া এই তরল শুক্রাণুকে পুষ্টি
যোগায়, ছাঁকনির কাজ করে, এবং শুক্রাণু চলাচলের মাধ্যম
হয়।
ঋতুস্রাবের পরে
ক্রমবর্ধমান এস্ট্রোজেনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জরায়ু-গ্রীবা
নিঃসৃত তরল ডিম্বাণু জন্মের আগে পর্যন্ত ক্রমশ সিক্ত
হতে থাকে। ঋতুস্রাবের পরের কয়েকদিন হয়তো কিছুই হয় না,
তারপরে ধীরে ধীরে ঐ ক্ষরণ আঠার মত থেকে ঘন ক্রিমের মত
হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছ, পিচ্ছিল, এবং সম্প্রসারণশীল
হয়। তখন এর রূপ অনেকটা কাঁচা ডিমের সাদা অংশের মত দেখতে
হয়।
এই অত্যন্ত উর্বর
তরলের সব থেকে জরুরী গুণ এর মসৃণতা ও পিচ্ছিলতা। এস্ট্রোজেন
উৎপাদন শেষ হয়ে গেলে এই তরল তৎক্ষণাৎ শুকিয়ে যায়, কয়েক
ঘন্টার মধ্যে তো নিশ্চয়ই। এর কারণ হল ডিম্বাণুর জন্মের
পরে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন। এই উর্বর তরলের অভাব ঋতুচক্র
শেষ হওয়া পর্যন্ত চলে।
তাপমাত্রা ছাড়াও
আরও কতগুলি কারণ এই ক্ষরণকে প্রভাবিত করে।
যেমন,
- যোনিদেশে রোগ
সংক্রমণ
- শুক্রাণুবাহী
তরলের উপস্থিতি
- যৌন উত্তেজক
তরলের উপস্থিতি
- শুক্রাণু-ঘাতক
ও পিচ্ছিলিকারক (লুব্রিকান্ট) পদার্থের উপস্থিতি
- অ্যালার্জির
ওষুধ ব্যবহার (অ্যালার্জির ওষুধ ঐ তরল শুকিয়ে দেয়)
- কাশির ওষুধ
ব্যবহার (ঐ তরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়)।
এছাড়া আপনি যদি
সম্প্রতি গর্ভ-নিরোধক বড়ি খাওয়া বন্ধ করে থাকেন তাহলে
দুটি ভিন্ন ধরনের উপসর্গ লক্ষ্য করতে পারেন। হয় আপনার
জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত ক্ষরণ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে অথবা
কয়েকমাস ধরে অবিরত ঘন ক্রিমের মত ক্ষরণ চলবে। এছাড়া
হয়তো ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়ে রক্তস্রাব শুরু হতে পারে।
জরায়ু-গ্রীবার অবস্থান
জরায়ুর তলার অংশে
অবস্থিত ও যোনিদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত জরায়ু-গ্রীবা ঋতুচক্রকালে
বিভিন্ন রকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই পরিবর্তন
আঙ্গুল দিয়ে অনুভব করা যায়, অর্থাৎ শরীরের উর্বরতা সংক্রান্ত
তথ্য আপনি হাতের কাছেই পাবেন।
জরায়ু-গ্রীবা নিঃসৃত
তরলের মত জরায়ু-গ্রীবা প্রত্যেক ঋতুচক্রে গর্ভাধানের
জন্যে প্রস্তুত হয়। ডিম্বাণু জন্মের সময়ে জরায়ু-গ্রীবা
নরম, উন্মুক্ত, এবং উঁচু হয়ে যায় যাতে শুক্রাণু জরায়ুর
মধ্য দিয়ে ডিম্বাণু-বাহী নলে প্রবেশ করতে পারে ।
সাধারণত জরায়ু-গ্রীবা
বেশ দৃঢ় হয়, ছুঁলে অনেকটা নাকের ডগায় আঙ্গুল দেওয়ার
মত অনুভূতি হয়। কিন্তু যতই ডিম্বাণু জন্মের সময় এগিয়ে
আসে, জরায়ু-গ্রীবা ততই নরম হতে থাকে। তখন তার স্পর্শ
হয় অনেকটা ঠোঁটের মত। এই সময় বাদ দিয়ে জরায়ু-গ্রীবা
সাধারণত নীচু এবং বন্ধ থাকে, অনেকটা গোলাপের কুঁড়ির
মত। কিন্তু ডিম্বাণু জন্মের সময়ে বেশি পরিমাণ এস্ট্রোজেন
উৎপাদনের প্রভাবে জরায়ু-গ্রীবা উঁচুতে উঠে আসে এবং খুলে
যায়। এই সময়ে কৌণিক অবস্থান বদলে জরায়ু-গ্রীবা সোজা
হয়ে যায়। ডিম্বাণু জন্মের ঠিক আগে জরায়ু গ্রীবা নিঃসৃত
ক্ষরণ উর্বর হয়ে যায়।
উর্বরতার আনুষঙ্গিক লক্ষণ
উর্বরতা সম্পর্কে
স্বচ্ছ ধারণা থাকলে প্রাকৃতিক উপায়েই জন্ম নিয়ন্ত্রণ
বা গর্ভধারণ সম্ভব হতে পারে।
অনেক
মহিলাই নীচের উপসর্গগুলি অনুভব করেন
- দুই
ঋতুচক্রের মাঝে অন্তর্বাসে ছিটে ছিটে দাগ
- স্ত্রীগ্রন্থির
আশে পাশে ব্যথার অনুভূতি
- বর্ধিত
যৌন ইচ্ছা
- যোনিপ্রদেশ
(ভালভা) ফুলে যাওয়া
- তলপেট
ফুলে যাওয়া
- শরীরে
জল জমা
- শক্তি
ও উদ্যম বেড়ে যাওয়া
- দৃষ্টি,
ঘ্রাণ, ও আস্বাদন ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া
- স্তন
ও ত্বকের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যাওয়া
- স্তনের
সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া
|
(ক্রমশ)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)