আমার
স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

হার্পিস রোগ
নিয়ে জীবন কাটানো
অনেকেই হার্পিস বাবদে তাড়াতাড়ি
চেতবনী পেয়েছেন। হার্পিসের লক্ষণ হল চুলকানি, ব্যথা,
জ্বালা, বা সংক্রামিত জায়গাটিতে চাপা ঘা যা পরে ফুটে
ওঠে। প্রথমে লাল ফোলা ফোলা হয় এবং এক থেকে দুদিনের মধ্যে
জলভরা ফোস্কার রূপ নেয়। কিছুদিন পর ঘা সেরে যায়। ভীষণরকম
সংক্রমণ হলে কোন কোন মহিলার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
সব অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সংক্রমণের প্রাথমিক
অবস্থা সব থেকে দীর্ঘমেয়াদী এবং যন্ত্রণাদায়ক।
হার্পিস আপনার জীবনের সঙ্গী
হবে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। হার্পিস হয়েছে এবং তা কখনও
সারবে না জানলে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে যান। অনেকে ভয় পান
যে তিনি একঘরে হয়ে যাবেন। প্রেমিক বা স্বামী ছেড়ে চলে
যাবে এ ভয় সকলেই পান। কিন্তু অনেকে হার্পিস নিয়েও ভালভাবে
বেঁচে থাকেন এবং অন্যকে সংক্রামিত করবেন না বলে সাবধানতা
অবলম্বন করেন।
হার্পিস সংক্রমণ ঋতুকালে
মানসিক ও শারীরিক চাপে, যৌন সংসর্গে, সূর্যালোকের সংস্পর্শে
বেড়ে যায়। তবে তা কেন বাড়ল ভাল করে বোঝা যায় না। এ ব্যাপারে
স্বচ্ছন্দভাবে কথা বলতে পারলে আপনার কষ্ট লাঘব হবে।
আর কিসের থেকে সংক্রমণ বাড়ছে তা চিহ্নিত করতে পারলে ও
দুশ্চিন্তা কমাতে পারলে আপনার কষ্ট আরও কম হবে।
হার্পিস ছড়িয়ে পড়া রুখতে বিশেষ সুরক্ষা
হার্পিস সারে না এবং প্রতিষেধক
আবিষ্কারের চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয় নি। সুরক্ষিত
যৌন আচরণ ছাড়াও কাঁচা ঘা (মুখে বা জননাঙ্গে) বা সেগুলি
শুকিয়ে যাওয়ার পরে সেই জায়গার সাথে কোনরকম ছোঁয়াচ এড়িয়ে
চলুন। কাঁচা ঘায়ের স্পর্শ ছাড়াও আপনার যৌনসঙ্গী সংক্রামিত
হতে পারেন। আপনার মুখে জ্বরঠোসা হলে বা ঠোঁটে ঘা হলে
মুখ-সঙ্গম পরিহার করুন। ঘায়ে হাত লাগলে সাবধানে হাত
ধুয়ে নিন, বিশেষ করে যৌনাঙ্গে হাত দেওয়ার সময়ে বা চোখে
কন্ট্যাক্ট লেন্স পরার সময়ে। হার্পিস সংক্রামিত হলে
রক্ত অথবা শুক্রদান করা চলবে না।
বাড়ীতে বসে হার্পিসের চিকিৎসা
যেগুলি লাগবে:
হুইট
গ্রাস: বাড়িতে হুইটগ্রাস (গমের ঘাস) উৎপাদন করতে পারেন
একটি ছোট পাত্রে এক মুঠো কাঁচা গমের দানা ছড়িয়ে জলের
ছিটে দিন। প্রত্যেক দিনই একটু জল ছিটিয়ে দেবেন। বেশি
জল দেবেন না যেন। সাত দিনের মধ্যে সবুজ ঘাসের চারা বেরিয়ে
যাবে। ওপর থেকে কচি নরম অংশ কেটে নিন।


হিউম্যান প্যাপিলোমা
ভাইরাস (এইচ পি ভি) ও জননাঙ্গে আঁচিল (জেনিটাল ওয়ার্টস)
এই সংক্রমণের ১০০টি ধরণের
মধ্যে ৩০টি যৌন-সংসর্গে সংক্রামিত হয়। জননাঙ্গে আঁচিল
হওয়ার সাথে জরায়ু গ্রীবায় ক্যান্সারের যোগ নেই। যদিও
একটি এইচ পি ভি সংক্রমণ হলে অন্যগুলিও হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে। এই সংক্রমণ কখনোই সারে না এবং এই সংক্রমণ নিয়ে
জীবন কাটানো শক্ত হতে পারে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিয়ে নিয়মিত প্যাপ পরীক্ষা করান যাতে জরায়ু-গ্রীবায়
অস্বাভাবিক কোষ জন্মালে তা তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা যায়।
হার্পিসের বিকল্প চিকিৎসা

আপনি ও আপনার সঙ্গী সুরক্ষিত
যৌন আচরণ করুন। চিকিত্সার পরেও নতুন করে আঁচিল জন্মাতে
পারে, সেগুলিকে আবার নির্মূল করতে হবে। প্রথমে সংক্রামিত
জায়গায় আঁচিল নির্মূল হয়ে যাওয়ার পরেও আবার ভাইরাস জন্মাতে
পারে।
অন্যান্য যৌন রোগ সংক্রমণ
উপরোক্ত সংক্রমণ ছাড়াও হেপাটাইটিস
সি, সাইটোমেগালোভাইরাস, এবং মোলাস্কাম কন্টাজিওসাম ইত্যাদি
সংক্রমণ হয়। কোন কোন সংক্রমণ পায়ু-সঙ্গমের মাধ্যমে সহজেই
ছড়ায়। গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, এইচ আই ভি, সিফিলিস, বা
হার্পিস পায়ুতে সংক্রামিত হয়। অন্য জৈব সংক্রমণ, যেমন
শিগেলার উপস্থিতির ফলে পেট খারাপ ও খিঁচ ধরা ইত্যাদি
হয়। মুখের সঙ্গে মলের সংযোগ ঘটলে হেপাটাইটিস এ এবং জিয়ার্ডিয়া
হয়। অনেক মহিলা মুখ- এবং পায়ু-সংগমে লিপ্ত হন কিন্তু
চিকিত্সকেরা তাঁদের এ-বিষয়ে প্রশ্নই করেন না।
গনোরিয়াহীন মূত্রনালীর সংক্রমণ
বা ননগনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস (এন জি ইউ) গনোরিয়াজনিত
ক্ষরণ ছাড়া মূত্রনালী থেকে নির্গত অন্য যে কোন ক্ষরণকে
এন জি ইউ বলে। এই সংক্রমণ সাধারণত পুরুষের হয়। এন জি
ইউ কোন বিশেষ রোগ নয়। বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ এন জি ইউ-এর
কারণ হতে পারে, যেমন ক্ল্যামিডিয়া, ইউরেয়প্লাসমা ইউরেয়লাইটিকাম,
বা মাইকোপ্লাসমা জেনিটেলিয়াম এর মধ্যে ইউরেয়প্লাসমা
ইউরেয়লাইটিকাম সংক্রমণে কোন লক্ষণ নেই। এই সব সংক্রমণের
জন্যে জরায়ু মুখের সংক্রমণ বা সার্ভিসাইটিস, যোনি প্রণালীর
সংক্রমণ বা পি আই ডি, অনুর্বরতা, গর্ভপাত, এবং নির্ধারিত
সময়ের আগে সন্তানের জন্ম ইত্যাদি হতে পারে। তাই যে মহিলাদের
গর্ভাধান হচ্ছে না বা বারবার গর্ভপাত হয়ে যাচ্ছে তাঁদের
এই সংক্রমণ হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা উচিত্।
সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা
সংক্রমণ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ
জরুরী, কারণ ভাইরাল ও দুরারোগ্য সংক্রমণ বাড়ছে। এমনকি
চিকিত্সায় সেরে যায় তেমন সংক্রমণগুলিও যথাসময়ে চিহ্নিত
না হলে সমস্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু যৌন-সংক্রমণ রোগটির
গায়ে 'খারাপ' বদনাম থাকার দরুণ রোগী যথাযথ যত্ন পায়
না। অনেকেই এখনো মনে করেন যৌন রোগ সংক্রমণ হল অনৈতিক
যৌন আচরণের শাস্তি। এর সঙ্গে যোগ হয় লিঙ্গ বৈষম্য। ভারতে
বহু পুরুষ তাঁদের স্ত্রীদের এইচ আই ভি যৌন রোগে সংক্রামিত
করলেও পরিবারের কোপ পড়ে মেয়েদের ওপর। বহু মহিলা এইচ
আই ভি রোগ নির্ণয়ের পর পরিবার থেকে বহ্রিকৃত হন। কিছুদিন
আগে পর্যন্ত ডাক্তারী শিক্ষাকেন্দ্রগুলি যৌন সংক্রমণ
বিষয়টি এড়িয়ে যেত। এমনকি আজকেও বেশির ভাগ চিকিত্সকদের
এ-বাবদে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নেই।
আমাদের আরও সুরক্ষা প্রয়োজন
প্রত্যেক মহিলারই জন্মনিয়ন্ত্রণ
ও যৌন-সংক্রমণ সংক্রান্ত উপাদানগুলি সহজেই পাওয়া উচিত্।
সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ও জৈবিক কারণে পুরুষের চেয়ে
মহিলাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই যৌন রোগ সংক্রমণ থেকে
সুরক্ষার ব্যপারে মহিলাদেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত্।
মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক কাজ হচ্ছে কিন্তু
বিভিন্ন কারণে সেগুলির সুফল পশ্চিমবঙ্গে এসে পৌঁছচ্ছে
না। তাই আমাদের ব্যবহারিক জ্ঞান আরো বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে
বারবার বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে।
যৌন-সংক্রমণ বিষয়ে প্রথাগত শিক্ষা
প্রয়োজন
নানারকম সামাজিক,
সাংস্কৃতিক, বা ধর্মীয় অনুশাসনের জন্যে 'যৌন আচরণ' বিষয়টি
মূলস্রোতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক আলোচনার টেবিলে ব্রাত্য
থেকে গিয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনা সভাতেও যৌন
ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য উহ্য রাখা হয়। অথচ প্রায় প্রত্যেক
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই কোন না কোন ধরণের যৌনাচরণে অভ্যস্ত।
যৌনতা মানুষের জীবনের অত্যন্ত প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক
অংশ। তাই সমস্ত সঙ্কোচ সরিয়ে রেখে সকলকে এ বিষয়ে আরো
বেশি জানতে হবে। যৌন জীবন সুস্থ হলে তবেই হয়তো শিশু-মৃত্যু
ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যু সংখ্যার তালিকায় আমাদের দেশের
নাম আর প্রথমেই দেখা যাবে না।