প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
আমার
স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

এইচ
আই ভি সংক্রমণ এবং এইডস
এইচ আই ভি/এইডস
মহামারী সারা বিশ্বের সমস্যা। যাঁরা এইচ আই ভি সংক্রামিত
নন, তাঁদের এই সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকা জরুরী।
যাঁরা আক্রান্ত এবং সংক্রমণ নিয়ে বেঁচে আছেন, তাঁদের
প্রয়োজন যত্ন ও সক্রিয় সুরক্ষা বলয়, আরো কার্যকরী চিকিৎসা
ব্যবস্থা, এবং রাষ্ট্রের সাহায্য। এই সাহায্য শুধু রোগীদের
বাঁচিয়ে রাখার জন্যে নয়, তাঁদের সঙ্গী ও সন্তানদের সংক্রমণের
হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে। তাই আমাদের সকলেরই জন-স্বাস্থ্য
উদ্যোগ, গবেষণা, ও সমীক্ষার জন্যে ব্যয়-বরাদ্দ বাড়ানো
এবং আরো ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্যে তদ্বির করা উচিত।
এইচ আই ভি/এইডস
সংক্রান্ত তথ্য ক্রমাগত বদলাচ্ছে। এখানে এই সংক্রমণের
বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হল।
এইচ
আই ভি/এইডস মহামারী
১৯৮০ সালের গোড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা
এইডস (অ্যাকোয়ার্ডইম্যুনোডিফিসিয়ান্সি সিনড্রোম) সংক্রমণ
চিহ্নিত করেন। আজকে এই সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে। এইচ আই ভি
সংক্রমণ শরীরের রোগ-প্রতিরোধক টি কোষগুলিকে (সি ডি ৪
লিম্ফোসাইট) আক্রমণ করে, ফলে এইডস হয়। এইচ আই ভি সংক্রমণ
থেকে এইডসে পূর্ণ প্রকাশ প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হয় বলে
অনেকের শরীরে আট থেকে দশ বছর পর্যন্ত সংক্রমণ সুপ্ত
অবস্থায় থাকে। এইডস যে হয়েছে তার লক্ষণ হল বিভিন্ন সুযোগ-সন্ধানী
রোগের আক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি) এবং
রক্তে টি কোষের সংখ্যা ২০০ বা তার নীচে নেমে যাওয়া।
সংক্রমণের
কারণ
বিভিন্ন কারণে
এইচ আই ভি এবং এইডস মহামারী ভারতে ভীষণ আকার ধারণ করতে
চলেছে। আমাদের দেশে সংক্রমণের ঝুঁকির কিছু কারণ নীচে
দেওয়া হল।
-
অসুরক্ষিত
যৌন সঙ্গমের প্রচলন এবং কণ্ডোম ব্যবহারে অনীহা। ভারতে
৮৪ শতাংশ এইচ আই ভি সংক্রমণ ঘটে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে।
যৌনকর্মী ও তাঁদের খদ্দের, শিরায় ইঞ্জেকশন নেয় যে
মাদকাসক্তেরা, এবং যে পুরুষেরা অন্য পুরুষের সঙ্গে
যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হন - তাঁদের মধ্যেই সংক্রমণের হার
সব চেয়ে বেশি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভারতের
যৌন কর্মীরা কণ্ডোম ব্যবহার করেন না কারণ তাঁদের খদ্দেররা
কণ্ডোম ব্যবহার করতে আপত্তি করেন।
-
অনেক
পুরুষ কাজের জন্যে পরিবারের থেকে দূরে দীর্ঘ সময় কাটান।
ফলে সমাজের অনুশাসনগুলো তাঁদের জন্যে ভেঙ্গে যায় এবং
তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন ব্যবহারে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
-
সমীক্ষায়
দেখা গেছে যে ভারতের মাদকাসক্ত গোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই
এখন মাদক সরাসরি শিরায় ইঞ্জেকশন করেন। এ ধরণের মাদকাসক্তি
উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলির মধ্যে বেশি প্রচলিত হলেও ধীরে
ধীরে তা সমস্ত ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ৪১ শতাংশ মাদকাসক্তেরা
স্বীকার করেন যে নেশা করার সময়ে অন্যের ব্যবহৃত ছুঁচ
তাঁরা নিজের শরীরে ব্যবহার করেন।
যে মাদকাসক্তেরা
অন্যের ব্যবহৃত ছুঁচ পরিষ্কার করে ব্যবহার করেন, তাঁদের
মধ্যেও মাত্র ৩ শতাংশ অ্যালকোহল, ব্লীচ, বা ফুটন্ত জল
ব্যবহার করেন। ফলে ছুঁচ পরিষ্কার করা বা না করা একই
হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া এঁরা যৌন সম্পর্কে অসাবধানী হয়ে
পড়েন এবং অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন। গত কয়েক বছরে
এইচ আই ভি চিকিত্সার প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল
ওষুধের জন্যে সংক্রামিত মানুষ বেশি দিন বেঁচে থাকছেন।
যাঁরা ঐ চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারছেন তাঁদের মধ্যে মৃত্যুহার
কমছে এবং এইচ আই ভি সংক্রমণ ক্রমে আয়ত্তাধীন দীর্ঘমেয়াদী
ব্যাধি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুঃখের বিষয় বহু গবেষণার পরেও
এ রোগের কোন প্রতিষেধক বা আরোগ্য আজ অবধি আবিষ্কার করা
যায় নি।
এইচ আই ভি/এইডস
বাবদে চেতনা বাড়ার দরুণ কিছু জায়গায় এর প্রাদুর্ভাব
কমেছে। কিন্তু এখনও সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। কেবলমাত্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রত্যেক বছরে প্রায় চল্লিশ
হাজার মানুষ সংক্রামিত হচ্ছেন। উন্নত দেশগুলিতে কিছুটা
কমলেও এই মারণ রোগ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সংঘাতিক ভাবে
ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে, দক্ষিণ
পূর্ব এশিয়ায়, পূর্ব ইউরোপ, এবং ক্যারিবিয়ান সাগরের
দ্বীপগুলিতে এইচ আই ভি সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
২০০৬ সালের সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে প্রায় ২৫
লক্ষ মানুষ এইচ আই ভি সংক্রমণ নিয়ে বেঁচে আছেন। আবার
ঐ একই বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউ এন এইডস) তথ্য অনুসারে
ভারতে এইচ আই ভি সংক্রামিতের সংখ্যা হল ৫৭ লক্ষ।
২০০৮ সালের হিসেব
অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্ত মানুষের
সংখ্যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১ কোটি থেকে বেড়ে ৩ কোটি
৩৪ লক্ষ এবং শিশুদের মধ্যে ১০ লক্ষ থেকে বেড়ে ২১ লক্ষ
হয়েছে। ২০০৯ সালের সরকারী তথ্য অনুসারে ভারতীয় শিশুদের
মধ্যে এইচ আই ভি সংক্রমণ ২০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৮১ থেকে ২০০৮ অবধি বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ
মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ২০০৩ সালের
শেষ অবধি প্রায় দেড় কোটি শিশু এই রোগে তাদের বাবা ও
মায়ের মধ্যে একজনকে অথবা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে।
বহু উন্নয়নশীল দেশে এই মহামারী স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থাকে
বেহাল করে দিয়েছে। সেখানে সামাজিক পরিকাঠামো ও অর্থনীতি
এমন ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে যে এই রোগ মোকাবিলার কোন পথ খুঁজে
পাওয়া যাচ্ছে না।
নারী এবং এইচ আই ভি/এইডস
২০০৮ সালের ডিসেম্বর
মাসে সারা পৃথিবীর এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্ত মানুষের
পঞ্চাশ শতাংশই ছিলেন মহিলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ
আই ভি/এইডস আক্রান্ত মানুষের পঁচিশ শতাংশ এখন মহিলা।
১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে এই রোগ সংক্রমণের হার মহিলাদের
মধ্যে বিশ্বজুড়ে সাত শতাংশ বেড়েছিল অথচ পুরুষদের মধ্যে
কমেছিল পাঁচ শতাংশ। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যানে বিশ্বজুড়ে
১ কোটি ৫৭ লক্ষ মহিলা এইচ আই ভি সংক্রামিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ও অন্যান্য দেশে অধিকাংশ মহিলাই বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল)
যৌন সংসর্গের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়েছেন। সমাজের প্রান্তিক
গোষ্ঠীর মহিলাদের মধ্যে সংক্রামিতের সংখ্যা খুবই বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের সংখ্যা ১২
শতাংশ হলেও সংক্রামিতদের মধ্যে তাঁরা হলেন ৫০ শতাংশ।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলাদের
মৃত্যুহার পৃথিবীতে কমেছে কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের
মধ্যে এই হার এখনও খুবই বেশি। ২০০৬ সালের পরিসংখ্যানে
দেখা গেছে ভারতে ১০ লক্ষের বেশি মহিলা এইচ আই ভি সংক্রামিত।
ভারতের এইচ আই
ভি আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৯১ শতাংশই বিষমকামী যৌন
সঙ্গমের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়েছেন। তবু ভারতে এখনও নারীর
চেয়ে পুরুষই বেশি সংখ্যায় সংক্রামিত । ২০০৬ সালে পুরুষদের
মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ০.৪৩ শতাংশ আর মহিলাদের মধ্যে
সেই হার ছিল ০.২৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ জন এইচ আই ভি সংক্রামিত
ভারতীয়ের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ এবং ৩৯ জন মহিলা। সব মিলিয়ে
ভারতীয় সমাজে এইচ আই ভি সংক্রমণের হার হল ০.৩৬ শতাংশ।
অবশ্য যাঁরা শিরায় মাদক ইঞ্জেকশান নেন, যে পুরুষেরা
সমকামী, এবং যাঁরা যৌন কর্মী, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের
হার ৫.৩ থেকে ৮ শতাংশের বেশি।
সংক্রমণের
হার
২০০৭ সালের তথ্য অনুসারে পশ্চিম বঙ্গে যে মাদকাসক্তেরা
শিরায় ইঞ্জেকশন নেন তাঁদের মধ্যে এইচ আই ভি সংক্রমণের
হার হল ৭.৭৬ শতাংশ; যে পুরুষেরা অন্য পুরুষের সঙ্গে
যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার
৫.৬১ শতাংশ; এবং যৌন কর্মীদের মধ্যে সেই হার ৫.৯২ শতাংশ।
এইডস রোগের চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, এবং আন্দোলনকারীরা এখন
মহিলাদের মধ্যে এইচ আই ভি/এইডসের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
মহিলাদের বেশি করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বহু চিকিৎসকই এইচ
আই ভি/এইডসের গাইনোকলজিক্যাল (মহিলাদের জননেন্দ্রিয় সংক্রান্ত)
লক্ষণগুলি চেনার দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং জরায়ু গ্রীবার
ক্যান্সার (যা মেয়েদের এইডস হলে হতে পারে) রোধে নিয়মিত
প্যাপ, কল্পোস্কোপি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
নতুন ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে এইচ আই ভি
আক্রান্ত নবজাতকের সংখ্যাও কমছে। অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে
এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলারা একে অন্যকে সাহায্য করছেন,
আরও অনেক মহিলার কাছে এইডস সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছোচ্ছেন,
সংক্রমণ প্রতিরোধ শেখাচ্ছেন, এবং মাদক বা নেশা ছাড়তে সাহায্য
করছেন। শরীরতত্ব অনুসারে বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল) যৌন
সংসর্গের মাধ্যমে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের এইচ আই ভি সংক্রমণের
সম্ভাবনা বেশি কারণ সংক্রামিত শুক্রাণু যোনির দেওয়ালে
বা জরায়ু গ্রীবার সংস্পর্শে বেশিক্ষণ লেগে থাকে। সেই তুলনায়
যোনির ক্ষরণ শিশ্নের সংস্পর্শে অনেক কম সময় থাকে। কোন
মহিলার একজনমাত্র পুরুষ যৌনসঙ্গী থাকলেও এইচ আই ভি সংক্রমণের
ঝুঁকি থেকে যায়। পুরুষেরা অনেক সময় মহিলাদের অসুরক্ষিত
যৌনাচারে বাধ্য করেন; কখনো বা মহিলারা দুঃখ পাওয়া বা পরিত্যক্ত
হওয়ার ভয়ে পুরুষ সঙ্গীর সাথে সুরক্ষিত যৌনাচার সম্পর্কে
কথা বলতে পারেন না। আবার যৌন আগ্রাসনের ভয়ে বা অর্থনৈতিক
নির্ভরশীলতার জন্যে মেয়েরা যৌন-সংসর্গকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত
করতে পারেন না।
সমীক্ষায় দেখা
গেছে স্ত্রী যদি স্বামীর ওপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল
হন তাহলে কণ্ডোম ব্যবহার কমে যায়। তাছাড়া আমাদের দেশে
মাদকাসক্তদের মধ্যে অসুরক্ষিত যৌন-সংসর্গ মহিলাদের সংক্রমণের
ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও মাদকাসক্তদের মধ্যে একে অপরের
ছুঁচ ব্যবহারের ফলেও এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
২০০২ সালে দেখা গেছে যে এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্ত মহিলাদের
মধ্যে ২৬ শতাংশ পুরুষ সঙ্গীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জে মাদক
নেওয়ার ফলে সংক্রামিত হয়েছেন। বাকি ৭২ শতাংশ সংক্রামিত
হয়েছে অসুরক্ষিত বিষমকামী যৌন সংসর্গের মাধ্যমে। দেখা
গেছে এই মহিলাদের পুরুষ সঙ্গীদের মধ্যে একটা বড় অংশ
শিরায় মাদক ইঞ্জেকশন নিতে অভ্যস্ত ছিলেন।
আমাদের সমাজে যাঁরা
পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র পরিবারভুক্ত, যাঁরা অন্তঃসত্বা,
বা যাঁদের ছোটো ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নিতে হয়, তাঁরা ভালো
ভালো চিকিৎসার উদ্যোগগুলির সুবিধা নিতে পারেন না। যদি
বা সে সুযোগ নেওয়া গেল, সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাদ্যের
অভাব এবং ওষুধের পাশ্র্ব প্রতিক্রিয়া সুচিকিৎসার পথে
অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তবে ইদানিংকালে চিকিত্সা পদ্ধতির
অগ্রগতি এইচ আই ভি চিকিৎসা সহজ করে দিয়েছে। অবশ্য মহিলারা
প্রায়শই জানতে পারেন না তাঁদের পুরুষ সঙ্গীর অন্য কোন
পুরুষ যৌনসঙ্গী আছে কিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ
আই ভি আক্রান্ত কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে একটি সমীক্ষায়
দেখা গেছে তাঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পুরুষদের
মহিলা ও পুরুষ উভয় যৌনসঙ্গী রয়েছে। অথচ ঐ গোষ্ঠীর এইচ
আই ভি আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই তাঁদের
পুরুষসঙ্গীদের এই যৌনাচার সম্পর্কে জানেন।
কল্পনা না বাস্তব
অধিকাংশ মহিলাই শিরায় মাদক ইঞ্জেকশানের (ইন্ট্রাভেনাস
ড্রাগ) মাধ্যমেএইচ আই ভি সংক্রামিত হন।
কল্পনা। বেশির ভাগ মহিলার যৌন সংক্রমণের কারণ অসুরক্ষিত
বিষমকামী(হেটেরোসেক্সুয়াল) যৌন-সংসর্গ।
নিজেদের যত্ন নেওয়া
বিভিন্ন কারণে
নিজেদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব মেয়েদের কর্তব্য তালিকার
শেষের দিকে পড়ে। আবার কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মহিলা,
বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রতি
সংবেদনশীলতার অভাব তাঁদের মধ্যে চিকিত্সার প্রতি অনীহা
সৃষ্টি করে। কিন্তু যাঁরা যৌন-সংক্রমণ বা যোনিতে অস্বস্তি
হলেও চিকিৎসা না করে চলেছেন, তাঁরা এইচ আই ভি সংক্রমণের
ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন। চিকিৎসা না করার অবশ্য একটি আর্থিক
দিকও আছে। পুরুষদের তুলনায় গড়ে মহিলাদের আর্থিক সঙ্গতি
কম। আবার অনেক মহিলারই হয়তো স্বামী নেই কিন্তু সন্তান
পালন করছেন ও অসুস্থ বাবা-মায়ের দেখাশুনো করছেন। তাঁরা
নিজের জন্যে টাকা খরচ করতে চান না, সে যত অসুখই হোক
না কেন। তাই মেয়েদের মধ্যে অনেকেরই চিকিৎসা হয় যখন তাঁদের
সন্তানদের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
তবু নিজেদের যত্ন
নেওয়া মেয়েদের পক্ষে জরুরী এবং এ বাবদে অন্তরায়গুলি
দূর করা প্রয়োজন। মহিলাদের এইচ আই ভি সংক্রান্ত সমস্যার
সমাধান নির্ভর করে দারিদ্র, জাত-পাত, লিঙ্গ-বৈষম্য ইত্যাদি
সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের ওপর। আমাদের সমাজে অনেক সময়েই
বাসস্থানের অভাব, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিশুদের
যত্ন ইত্যদি বিষয়গুলি অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু আমাদের
সকলেরই কোন রকম ঝুঁকি ছাড়া সুস্থ যৌন-জীবন যাপনের ও
নিজেদের এবং অপরের যত্ন নেওয়ার এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা
পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এইচ আই ভি/ এইডস বিষয়ে আন্দোলনকারীরা
এই অধিকার যাতে সব মহিলারা পান তা সুনিশ্চিত
করতে চেষ্টা করছেন।
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|

অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|