প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
আমার
স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

এইচ
আই ভি সংক্রমণ
এক ব্যাক্তি থেকে
অপর ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ হতে গেলে নীচের দুটি অবস্থা
থাকতে হবে -
১)
পাঁচটি শরীরজাত ক্ষরণে যথেষ্ট পরিমানে এইচ আই ভি ভাইরাস
উপস্থিত থাকতে হবে। রক্ত, বীর্যপাতের পূর্বে শিশ্নজাত
ক্ষরণ, শুক্র, যোনিজাত ক্ষরণ, এবং মাতৃদুগ্ধ - এই পাঁচটি
ক্ষরণে সংক্রমণ হওয়ার মত পর্যাপ্ত ভাইরাস থাকে। লালা,
চোখের জল, ঘাম, মূত্র, মল, এবং বমি (যদি না তাতে রক্ত
মিশে থাকে) সংক্রমণ ঘটানোর জন্যে প্রয়োজনীয় ভাইরাস যথেষ্ট
পরিমাণে বহন করে না।
২) ভাইরাস অসংক্রামিত ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে মিশে যাওয়ার
উপায় থাকতে হবে। এইচ আই ভি পায়ু বা যোনির দেওয়ালের আদ্র্র
তন্তু ঝিল্লির (মিউকাস মেমব্রেন) মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ
করতে পারে; শিরায় মাদক ইঞ্জেকশন (ইন্ট্রাভেনাস) বা উল্কি
আঁকার জন্যে ব্যবহৃত ছুঁচের মাধ্যমে সরাসরি রক্তে মিশে
যেতে পারে; শরীরে কোন খোলা ক্ষত, ঘা বা আঁচড়, বা চোখ,
নাক, অথবা পুরুষের শিশ্নের অগ্রভাগের আদ্র্র তন্তু-ঝিল্লির
(মিউকাস মেমব্রেন) মাধ্যমে শরীর সংক্রামিত করতে পারে।
মুখ-সঙ্গম, আঙ্গুল-কাম, বা গভীর চুম্বন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায়
রক্তপাতের কোন প্রশ্ন থাকে না, ফলে এইচ আই ভি সংক্রমণের
ঝুঁকি কম।
শরীরে যদি যৌন-সংক্রমণজনিত
কাঁচা ঘা, বা যোনিতে চিকিত্সা করা হয় নি এমন সংক্রমণ
থাকে, তাহলে এইচ আই ভি ভাইরাস মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে
রক্তে সহজেই মিশে যেতে পারে। তাই কোন যৌন সংক্রমণ হয়ে
থাকলে এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এইচ আই ভি সংক্রমণের
বিভিন্ন পথ
-
শিরায়
(ইন্ট্রাভেনাস) মাদক ইঞ্জেকশন (হেরোইন, কোকেন, স্পীড
ইত্যাদি) নেওয়া বা উল্কি আঁকার জন্যে একজনের ব্যবহৃত
ছুঁচ অন্যজন ব্যবহার করলে সংক্রমণ হতে পারে।
-
অসুরক্ষিত
যোনি- ও পায়ু-সঙ্গমের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
-
সংক্রামিত
মায়ের গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মের সময়ে, বা মাতৃদুগ্ধ
থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
-
সংক্রামিত
রক্ত বা রক্তজাতীয় পদার্থ শরীরে নিলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
কোন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ
ছাড়া এইচ আই ভি সংক্রামিত মানুষ অনেক বছর বাঁচেন। বাইরে
থেকে কিছু বোঝা না গেলেও তাঁরা অন্যকে সংক্রামিত করতে
পারেন। তাই প্রত্যেকবার যৌন-মিলনের সময়ে কণ্ডোম ব্যবহার
করা আবশ্যিক। এর ফলে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়
এবং নিজের সংক্রমণ থাকলে তা থেকে সঙ্গীকে রক্ষা করা
যায়। সংক্রমণ সম্বন্ধে যৌন সঙ্গীদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা
করা জরুরী কারণ আপনার অজ্ঞাতসারেই হয়তো আপনার সঙ্গীর
অন্য যৌনসঙ্গী আছে বা তিনি মাদক ইঞ্জেকশন নেন। হয়তো
বা আপনার সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগেই তাঁর এইচ আই ভি সংক্রমণ
ঘটেছিল।
কোন দম্পতির দুজনেরই এইচ আই ভি সংক্রমণ থাকলেও চিকিৎসকেরা
সুরক্ষিত যৌনাচারের উপদেশ দেন, কারণ এইচ আই ভি সংক্রমণ
থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং একজনের শরীর
থেকে অপরের শরীরে এইচ আই ভি ছাড়াও অন্য সংক্রমণ ছড়াতে
পারে। কণ্ডোম ব্যবহারে সেই সম্ভাবনা কমে যায়। দুজনের
মধ্যে একজন সংক্রামিত না থাকলে কণ্ডোমের ব্যবহার তাঁকে
বিভিন্ন যৌন সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।
সংক্রামিতের
সংস্পর্শে আসার পরবর্তী প্রতিরোধক (নন-অকুপেশনাল পোস্টএ
ক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস) (এন পি পি)
যদি মনে হয় কোন
কারণে আপনার এইচ আই ভি সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে
পরীক্ষার রিপোর্টের জন্যে অপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা
আরম্ভ করে দিতে পারেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে
স্বাস্থ্যকর্মী বা অন্য কারোর যদি আকস্মিক ভাবে এইচ
আই ভি সংক্রামিত ছুঁচ ফুটে যায়, তিনি তত্ক্ষণাত্ চিকিত্সা
শুরু করতে পারেন। এই চিকিৎসাকে পি ই পি বলা হয়। এইচ
আই ভি সংক্রমণ নিশ্চিত হলে যা চিকিত্সা পদ্ধতি হয়, সেই
চিকিত্সাই এখানে করা হবে। ধরে নেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে সেই
চিকিৎসা প্রতিষেধকের কাজ করবে। এই ধরণের সংক্রমণের আশঙ্কা
থাকলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে (অথবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব) চিকিত্সা
শুরু করতে হবে। আঠাশ দিন ব্যাপী এই চিকিৎসা ব্যয় সাপেক্ষ
এবং এর গুরুতর পাশ্র্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, কিন্তু
তা সাধারণত এইচ আই ভি প্রতিষেধকের কাজ করে।
এইচ আই ভি সুরক্ষিত ছুঁচের ব্যবহার
একের ব্যবহৃত ছুঁচ
আরেকজন ব্যবহার করলে সব সময়েই যে এইচ আই ভি সংক্রমণ
ঘটাবে তা নয়। কিন্তু এতে নিশ্চয়ই ঝুঁকি থাকে এবং সেই
ঝুঁকি নির্ধারিত হয় সেই ব্যক্তির যৌনাচরণের পরিপ্রেক্ষিতে।
যদি কোন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তাঁর একগামী যৌন সঙ্গীর ছুঁচ
ব্যবহার করেন এবং তাঁরা দুজনেই সব রকম সংক্রমণ মুক্ত
হন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কোন ঝুঁকি নেই। কিন্তু কোন মাদকাসক্ত
ব্যক্তি, যাঁর সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না কিন্তু
তাঁর ব্যবহৃত ছুঁচ নিজের শরীরে ঢোকাচ্ছেন, তাহলে আপনার
এইচ আই ভি, হেপাটাইটিস-বি ও সি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
মাদকাসক্তি থাকলে এইচ আই ভি বা অন্য সংক্রমণের সম্ভাবনা
খুবই বেশি। তাই যে ভাবেই হোক না কেন মাদক ছাড়ার জন্যে
চিকিত্সা করান। কিন্তু যদি ভাবেন যে এ ব্যপারে আপনি
অনড়, তাহলে অন্তত পরিষ্কার ছুঁচ ব্যবহার করুন। নিজের
হলেও ব্যবহৃত ছুঁচ অথবা সিরিঞ্জ দুবার ব্যবহার করবেন
না। করলেও ব্লীচ দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নেবার বন্দোবস্ত
রাখুন।
এইচ আই ভি - লক্ষণ ও পরীক্ষা
অনেক মানুষই এইচ
আই ভি আক্রান্ত হয়েও বুঝতে পারেন না যে তাঁদের ঐ সংক্রমণ
হয়েছে। তাই পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরী।
পরীক্ষা করাতে একটু ভয় করতে পারে, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি
সম্ভব এইচ আই ভি চিহ্নিত করে চিকিত্সা শুরু করা প্রয়োজন।
দ্রুত চিকিত্সার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে
বড়োসড়ো ক্ষতির হাতে থেকে বাঁচানো যায় এবং জীবত্কাল অনেক
বছর বেড়ে যায়।
এইচ আই ভি সংক্রমণের পর অনেকের ফ্লুর মত লক্ষণ দেখা
দেয়, যেমন জ্বর, গলা ধরা, গ্রন্থি ফোলা, ভীষণ ক্লান্তি
লাগা, এবং ত্বকে ফুস্কুড়ি। সংক্রমণের মাসখানেকের মধ্যেই
এই লক্ষণগুলি দেখা যায়। এ সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পেলে যদি
মনে হয় এইচ আই ভি সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে খুব
শীঘ্র পরীক্ষা করানো জরুরী। অনেক হাসপাতালে পরীক্ষামূলক
চিকিত্সায় এমন সব ওষুধ আজকাল দেওয়া হয় যাতে সংক্রমণ
প্রক্রিয়ার গতি কমে যায়।
এইচ আই ভি সংক্রমণের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার (অ্যাক্যুট
সেরোকনভার্সন) পরে বেশির ভাগ রোগী বেশ কয়েক বছর ভালো
থাকেন এবং কোন অস্বস্তি বোধ করেন না। কিন্তু যেই রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া শুরু হয়, এইডসের লক্ষণগুলি
ফুটে উঠতে থাকে। যেমন ওজন কমে যায়, ক্লান্তি বাড়ে, গ্রন্থি
ফোলে (গলা, বগল, ও কুঁচকিতে মাংসপিণ্ড হয়), এবং ত্বকে
ফুস্কুড়ি বেরোয়। রাত্রে ঘাম হওয়া, জ্বর হওয়া, ভীষণ মাথা
ধরা, পেট খারাপ হওয়া, এবং ক্ষিদে কমে যাওয়া - সবই এইডসের
লক্ষণ। যোনিতে বারবার ঈস্ট সংক্রমণ, মেয়েদের জননেন্দ্রিয়ের
দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (পেলভিক ইনফ্যামাটরি ডিজিস), বারবার
জননাঙ্গে হার্পিস হওয়া, বা হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস
(এইচ পি ভি) সংক্রমণ হওয়াও এইডস হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। সংক্রামিত
রোগীর যখন সুযোগসন্ধানী অসুখ (যেমন মুখে গলায় নিউমোসিস্টিস
ক্যারিনাই নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, জননাঙ্গে ঈস্ট সংক্রমণ,
বা লিম্ফোসা আই) হতে আরম্ভ করে, তখন বুঝতে হবে এইচ আই
ভির জন্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ রকম কমে গেছে।
এইচ আই ভি সংক্রমণ ঘটেছে জানতে পারলে মানুষের জীবন বদলে
যায়। সংশ্লিষ্ট আশঙ্কা এবং লজ্জা কাটিয়ে ওঠার জন্যে
নিজের এলাকায় সাপোর্টগ্রুপ বা কাউন্সেলরের খোঁজ করুন।
তাঁরা আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। বহু বেসরকারী
সংগঠনও এ বিষয়ে কাজ করছে।
সমকামী মহিলাদের সংক্রমণের ঝুঁকি
যে
মহিলারা সমকামী, ধরে নেওয়া হয় তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি
নেই। কিন্তু সমকামী মহিলাদের মধ্যে অনেকেই পুরুষের সঙ্গে
সঙ্গম করেন অথবা এক সময়ে করেছেন; কেউবা মাদকাসক্ত -
শিরায় মাদক ইঞ্জেকশন নেন; কেউ যৌন ব্যবসায় লিপ্ত; কেউ
ধর্ষিত হয়েছেন; আর কেউ ঝুঁকিপূর্ণ যৌনাচরণ করেন, যেমন
নিশ্চিত না হয়েই অজানা ব্যক্তির ব্যবহৃত যৌন খেলনা (সেক্স
টয়) ব্যবহার করা ইত্যাদি। এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি
নির্ভর করে আমাদের যৌন আচরণের ওপর, নিজেদের আমরা কি
ভাবে চিহ্নিত করি তার ওপর নয়। গোষ্ঠী হিসেবে ঝুঁকির
পরিমাণ নির্ধারণ না করে সেই পরিমাপ ব্যক্তির আচরণ ভিত্তিক
হওয়া উচিৎ।
এইচ আই ভি সংক্রামিত মহিলাদের জন্যে বিভিন্ন প্রকল্প
ও পরিষেবার সঙ্গে মহিলা সমকামীদের মধ্যেও ঝুঁকি ও পরিষেবা
সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করতে পারা যায়।
এইচ আই ভি সংক্রমণে কাদের ঝুঁকি
বেশি?
ভারতে সংক্রমণের
ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি পনেরো থেকে উনপঞ্চাশ বছর বর্ষীয়দের
মধ্যে। সংক্রামিতদের মধ্যে ৮৮.৭ শতাংশই এই বয়ঃগোষ্ঠীর
মধ্যে পড়েন। বিশ্ব জুড়ে পঁচিশ বছরের কম বয়সীদের এইচ
আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচাইতে বেশি। আন্দাজ করা হয়
সারা বিশ্বে সমস্ত সংক্রামিত মানুষের অর্ধেক সংখ্যকই
পঁচিশ অনূধর্ব । ২০০৩ সালের তথ্য অনুসারে বিশ্ব জুড়ে
প্রত্যেক দিন প্রায় ২০০০ পনেরো বছর অনূধর্ব শিশু এবং
পনেরো থেকে চব্বিশ বছরের মধ্যে প্রায় ৬০০০ মানুষের এইচ
আই ভি সংক্রমণ ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নত দেশে, তেরো
বছরের অনূধর্ব শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের প্রাথমিক কারণ
হল, মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ। কিন্তু মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে অন্তঃসত্বা মহিলাদের রুটিন করে এইচ আই
ভি পরীক্ষা ও চিকিৎসা হওয়ার দরুন এই হার অপেক্ষাকৃত
কম। কিন্তু সেদেশে বয়ঃসন্ধিক্ষণের কিশোর/কিশোরীদের মধ্যে
এ রোগ এখন বেড়ে চলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ এইচ আই ভি আক্রান্ত মহিলাই
অসুরক্ষিত বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল) যৌন সংসর্গের
মাধ্যমে সংক্রামিত হয়েছেন। দুর্ভাগ্য যে গোঁড়া ধর্মীয়
এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলি সংযম ও মিতাচারের শিক্ষা দিয়ে
চলেছে কিন্তু যৌনতা এবং এইডস প্রতিরোধ সম্পর্কে শিক্ষা
দিতে তারা অনিচ্ছুক। এইচ আই ভি বিষয়ে জ্ঞানের অভাব এবং
সুরক্ষিত যৌনাচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হওয়ার ফলে অল্পবয়সীদের
মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গর্ভাধান এড়ানোর জন্যে
এবং কুমারীত্ব বজায় রাখার জন্যে অনেক কমবয়সী মেয়েরা
অসুরক্ষিত মুখ- বা পায়ু-সঙ্গমে সায় দেন। কিন্তু এ দুইভাবেই
এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়ে যায়।
যে মাদকাসক্তেরা শিরায় মাদক ইঞ্জেকশন
(ইন্ট্রাভেনাস) নেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ট্রাভেনাস মাদক ব্যবহারের
মাধ্যমে এইচ আই ভি আক্রান্তদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা
বেশি। এই মহামারীর শুরু থেকে এইডস আক্রান্ত মার্কিন
মহিলাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ইন্ট্রাভেনাস মাদক ব্যবহারের
মাধ্যমে বা যে পুরুষ ইন্ট্রাভেনাস মাদক ব্যবহার করেন
তাদের সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের ফলে সংক্রামিত হয়েছেন।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩১ শতাংশ। আমাদের দেশে
এই ধরণের পরিসংখ্যান এখনও দুর্লভ।
-
আমাদের
দেশে মহিলাদের এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা আর্থসামাজিক
কারণের ওপর নির্ভর করে। সেই সব কারণের মধ্যে বাল্য
বিবাহ, শারীরিক আগ্রাসন, ও যৌন অত্যাচার প্রধান। অর্থাত্
কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে তাঁরা যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে
কিছুই জানেন না এবং যৌন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন
না। এছাড়া মেয়েরা নিজেদের বাড়িতে এবং বাইরে শারীরিক
নির্যাতন এবং যৌন অত্যাচারের শিকার হন বলে তাঁদের
সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আরও কয়েকটি কারণ নীচে
বিশদ করে দেওয়া হল।
-
যৌন
সঙ্গমে লিপ্ত হতে আপত্তি করা বা সঙ্গী কণ্ডোম ব্যবহার
করুক দাবী করা মহিলাদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব
নয়। সামাজিক রীতি অনুযায়ী 'ভাল' মেয়েদের যৌন জ্ঞান না
থাকার কথা; ফলে যৌনাচরণ বা কণ্ডোম সম্পর্কে তাঁদের কিছু
মতামত প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই মানসিকতার ফলে
তাঁরা স্বামী বা সঙ্গীকে বলতে পারেন না যে কণ্ডোম ছাড়া
সঙ্গম করতে তাঁরা নারাজ।
-
আমাদের
সমাজে গভীর লিঙ্গ বৈষম্যের দরুণ নিজেদের বিয়ে বা যৌনতা
- কোন কিছুর ওপরই মেয়েদের অধিকার নেই। তাই মেয়েরা যৌনাচরণের
ব্যাপারে সঙ্গীর সাথে স্বাধীনভাবে কোন সমঝোতায় আসতে
পারেন না।
-
এইচ
আই ভি সংক্রমণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং শিক্ষা মেয়েরা
পান না। অথচ এইচ আই ভি/এইডস মহামারী ঠেকানোর একমাত্র
উপায় যৌনাচরণ পরিবর্তন করা। তথ্য বা শিক্ষা না পেয়ে
মহিলারা এ ব্যাপারে কিছুই নির্ধারণ
করতে পারেন না। এই সমস্যা স্বল্প বিত্ত গোষ্ঠীর মধ্যে
খুবই প্রকট।
-
নারী
নির্যাতন এবং এইচ আই ভি/এইডস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
ধর্ষণ, ছোটবেলায় আত্মীয় দ্বারা ধর্ষণ (ইনসেস্ট), নারী
পাচার, যৌন ব্যবসায় - প্রত্যেক ধরণের অত্যাচারই মেয়েদের
মধ্যে এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
-
মেয়েদের
অসুখ বিসুখ সমাজে খুব একটা গুরুত্ব পায় না বলে তাঁদের
জন্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা কম। তাছাড়া মহিলাদের
স্বাধীন চলাফেরায় বাধা থাকে বলে তাঁরা দূরে গিয়ে স্বাস্থ্য
সংক্রান্ত পরিষেবা নিতে পারেন না। ফলে
সংক্রমণ হলেও তাঁরা জানেন অনেক দেরীতে।
দেখা গেছে এইডস
আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে যাঁদের শিরায় মাদক ইঞ্জেকশন
করে এইচ আই ভি সংক্রমণ হয়েছিল, তাঁরা অন্য ভাবে সংক্রামিত
মহিলাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা গিয়েছেন। আই ভি মাদকের
মাধ্যমে এইচ আই ভি
সংক্রমণের প্রধান উপায় হল একে অপরের সংক্রামিত ছুঁচ
ব্যবহার করা এবং মহিলারা সংক্রামিত পুরুষ সঙ্গীর সাথে
অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গে লিপ্ত হওয়া। মাদক আমাদের বিচারবোধকে
নষ্ট করে দেয়, ফলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আমরা
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি না। নিজেরা আই ভি মাদকে
আসক্ত না হলেও যে পুরুষ আই ভি মাদক সেবন করেন বা ইঞ্জেকশন
নেন, তাঁর সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন-সংসর্গ করলে আমাদের সংক্রমণের
ঝুঁকি বেড়ে যায়। পুরুষ সঙ্গী মাদকাসক্ত হলে এইচ আই ভি
সংক্রমণের সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় রয়ে যায়।
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|

অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|