প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

লালবাতি এলাকার মহিলা

পৃথিবীর বেশির ভাগ অঞ্চলে সাধারণ মানুষ, প্রচার মাধ্যম, পুলিশ এবং আদালত, এইচ আই ভি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্যে যৌন ব্যবসায়ে লিপ্ত মহিলাদের দায়ী করে থাকেন। তাঁদের কাছে যে পুরুষ খদ্দেররা যাচ্ছেন তাঁদের কিন্তু এই দায় থেকে বাদ দেওয়া হয়। এইচ আই ভি সাধারণত লালবাতি অঞ্চলের মহিলা এবং মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রামিত হয় বাইরে থেকে। সেখান থেকে এই সংক্রমণ যায় ব্রীজ বা সেতু জনসংখ্যার মধ্যে, যেমন কম বয়সী ছেলে, ট্রাক ড্রাইভার, ও পরিবার থেকে দূরে অবস্থিত কর্মীদের (মাইগ্রান্ট) মধ্যে। তারপর তা ছড়িয়ে যায় সম্পূর্ণ জনসংখ্যায়। নারী শরীরের গঠনের কারণে সংক্রামিত পুরুষ খদ্দেরের কাছ থেকে সংক্রমণ মুক্ত মহিলার এইচ আই ভি সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। একজন সংক্রামিত মহিলার কাছ থেকে সংক্রমণ হয়নি এমন পুরুষ খদ্দেরের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু অনেক পুরুষ খদ্দেরই অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের জন্যে বেশি টাকা খরচ করতে রাজী থাকেন। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে সংক্রমণহীন অল্পবয়সী কুমারী মেয়েদের সঙ্গে যৌন-সংসর্গ হলে তাঁদের নিজেদের যৌন-সংক্রমণ সেরে যাবে। এই ধরণার বশে ব্যবসায়িক যৌন সংসর্গের জন্যে তাঁরা কমবয়সী মেয়ে চান। পুরুষের এই চাহিদা মেটাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে পাচার বেড়ে চলেছে।

অনেক দেশে লালবাতি এলাকার মহিলারা গ্রেপ্তার হলে বাধ্যতামূলক ভাবে এইচ আই ভি পরীক্ষা করা হয়। অথচ তাঁদের খদ্দেরদের পরীক্ষার জন্যে কোন আইন নেই। এ ধরণের বৈষম্যমূলক আইন মানবাধিকার লঙঘন করে এবং তার বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে প্রতিবাদ জোরদার হয়ে উঠছে। লালবাতি এলাকার মহিলাদের দরকার আইনি সহায়তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বাস্থ্য পরিষেবা যেখানে এইচ আই ভি ও অন্যান্য যৌন সংক্রমণ পরীক্ষা ও চিকিত্সার সুযোগ থাকবে। তবে এই পরিষেবা বাধ্যতামূলক করে মহিলাদের হয়রানি করলে চলবে না।

বুলাদির সঙ্গে সবাই ২০০৪ সালের ১লা ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবসে পশ্চিম বঙ্গের এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সোসাইটির উদ্যোগে 'বুলাদি' আত্মপ্রকাশ করেন। বুলাদির কাজ ঝুঁকিহীন যৌন আচরণ এবং এইডস প্রতিরোধ সম্পর্কে জন স্বাস্থ্য বিষায়ক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। শাড়ি পরিহিতা এই দিদিটি এইচ আই ভি এবং এইডস নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় জন সাধারণের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেন আর উপদেশ দেন। রাজ্যে বুলাদির সাফল্যও যথেষ্ট। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পশ্চিম বঙ্গের ৭৯ শতংশ অধিবাসীর কাছে বুলাদিই প্রথম এইডস সম্বন্ধে তথ্য এনে দিয়েছে। বুলাদি আসার আগে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ এইচ আই ভি ও এইডসকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে ভাবতেন। বুলাদির আবির্ভাবের মাত্র এক বছর পরে ৮৩ শতাংশ লোক জানান যে এইডস সম্পর্কে তাঁদের মতামত পাল্টেছে আর ৯০ শতাংশ বলেন এইডস কি ভাবে সংক্রামিত হয় তা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন।

কারাগারে বন্দী মহিলা

বিচারাধীন বন্দী অবস্থায় বা জেলে বন্দী মহিলাদের মধ্যে এইচ আই ভি সংক্রমণের সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কোন সমীক্ষা এখনও হয় নি। ২০০৯ সালে মুম্বাইয়ের উচ্চ আদালত (হাই কোর্ট) মহারাষ্ট্র সরকারকে জেল বন্দীদের জন্যে স্বেচ্ছায় এইচ আই ভি পরীক্ষা এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্যে সব সুযোগ দিতে আদেশ দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গে এখনও তেমন কোন নীতি গৃহীত হয় নি। নিজেদের দেশের পরিসংখ্যানের অভাবে মার্কিন দেশের তথ্য থেকে আমরা এই সমস্যা হয়ত কিছুটা বুঝতে পারব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এইচ আই ভি সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় তিনগুণ বেশি। জেলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে এবং সেখানের অপ্রতুল স্বাস্থ্য পরিষেবার দরুণ অনেক এইচ আই ভি আক্রান্ত মহিলাদের শরীরে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁদের যদি অন্য সংক্রমণ থাকে তাহলে সেই উপসর্গও বেড়ে যায়। জেলের মধ্যে চিকিত্সার সুবিধে প্রায় নেই বললেও চলে; তাছাড়া জানাজানি হয়ে গেলে বৈষম্যমূলক ব্যবহার এবং সরাসরি আগ্রাসনের শিকারও হতে পারেন সংক্রামিত মহিলারা।


এইচ আই ভি প্রতিরোধক কোষ (অ্যান্টিবডি) পরীক্ষা কি ?

এইচ আই ভি নির্ণয়ের জন্যে অনেক রকমের পরীক্ষা আছে। দ্রুত পরীক্ষা হল রক্ত বা মাড়ি ও গালের ভিতর থেকে সংগৃহীত আদ্র্র কোষ (মিউকোসাল সেল) পরীক্ষা করা অথবা মূত্র পরীক্ষা করা। শরীরে এইচ আই ভি ঢুকলে পরে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা যে সমস্ত প্রতিরোধক কোষের (অ্যান্টিবডি) জন্ম দেয় সেগুলি এই পরীক্ষা চিহ্নিতকরণ করে। এই অ্যান্টিবডির উপস্থিতি জানিয়ে দেয় যে এইচ আই ভি সংক্রমণ ঘটেছে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ব্লট নামে একটি পরীক্ষায় আরও সুনির্দিষ্ট ফল পাওয়া যায় এবং সংক্রমণ সুনিশ্চিত করা যায়।

কখন পরীক্ষা করা উচিত্?

সংক্রমণের সম্ভাব্য ঝুঁকি ঘটার তিন মাস পরে পরীক্ষা করা উচিত্। মাঝের এই সময়কে 'উইণ্ডো পিরিয়ড' বলা হয় কারণ এই সময়ে সংক্রমণ যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরী করে। এই অ্যান্টিবডিগুলিই পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। সংক্রমণের পর খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করলে অনেক সময় ভ্রান্ত নেতিবাচক (ফলস নেগেটিভ) রিপোর্ট পাওয়া যায়। সাধারণত সংক্রমণের প্রায় বারো সপ্তাহ বাদে পরীক্ষায় করলে সঠিক ফল আশা করা যায়। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যে শরীরে অ্যাক্যুট সেরোকনভার্সন-এর (সংক্রমণের জন্যে রক্তে পরিবর্তন) উপসর্গ দেখা দিয়েছে ও চিকিত্সার প্রয়োজন, তাহলে আপনি ঐ তিনমাসের মেয়াদ পার হওয়ার আগেই পরীক্ষা করাতে পারেন।

কি ধরণের পরীক্ষা করাবো?

রক্ত পরীক্ষা । এই হল সবচাইতে সাধারণ ও প্রচলিত পরীক্ষা যাতে আঙ্গুল অথবা শিরা থেকে রক্ত নিয়ে এইচ আই ভি সংক্রমণের অ্যান্টিবডি আছে কিনা দেখা হয়। পরীক্ষার পর এক সপ্তাহ থেকে দশদিনের পরে ফল জানা যাবে। একই রক্তের নমুনা থেকে হেপাটাইটিস-সি, এইচ আই ভি-২ (কম ক্ষতিকর সংক্রমণ যা পশ্চিম আফ্রিকা, ব্রাজিল, এবং ইউরোপের কিছু অংশে দেখা যায়), ইত্যাদির পরীক্ষা করা যায়।

মুখের অভ্যন্তর (ওরাল) বা মূত্র পরীক্ষা । রক্ত পরীক্ষার মত ওরাল এবং মূত্র পরীক্ষাও তাড়াতাড়ি এবং বেদনাহীন হয় ও নিখুঁত ফল পাওয়া যায়। ওরাল পরীক্ষায় আপনার গাল বা মাড়ি থেকে আদ্র্র কোষ (মিউকোসাল সেল) সংগ্রহ করা হয়। প্রায় এক সপ্তাহ পরে ফল জানা যায়। মূত্র পরীক্ষার প্রচলন কম এবং এই পরীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলেও রক্ত পরীক্ষা করে সে সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হতে হয়।

র‍্যাপিড (ওরাকুইক বা রিভিল)। এই পরীক্ষার জন্যে এক ফোঁটা রক্ত বা লালার প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষার দুটি প্রণালীই আমেরিকায় ২০০৩ ও ২০০৪ সালে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাধারণত এই পরীক্ষার ফল নিখুঁত এবং নমুনা সংগ্রহের কুড়ি মিনিটের মধ্যেই জানা যায়। তবে অন্য পরীক্ষার মতই এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত প্রাথমিক ইতিবাচক ফল অন্য ধরণের পরীক্ষা করে সুনিশ্চিত হতে হয়। তবুও র‍্যাপিড পরীক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে যে সমস্ত অন্তঃসত্বা মেয়েদের গর্ভাধানের আগে এইচ আই ভি পরীক্ষা করা হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে মায়ের থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ রোধে এর গুরুত্ব অনেক।

সূত্রঃ আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।