বিভিন্ন
ধরনের যৌন আচরণ ও সুরক্ষা
যোনি-সঙ্গম:
এই ধরণের সঙ্গমে সর্বশ্রেষ্ঠ সুরক্ষা হল পুরুষের লেটেক্স
বা পলিইউরেথিন কণ্ডোম ব্যবহার করা। আজকাল পাশ্চাত্যে
মেয়েদের কণ্ডোম চালু হয়েছে যা যোনির অভ্যন্তরে ব্যবহার
করা হয় এবং যোনিপথকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। এতেও সংক্রমণের
সম্ভাবনা কমে। লেটেক্স কণ্ডোমের সঙ্গে জল দিয়ে তৈরী
পিচ্ছিলিকারক (যেমন কে ওয়াই জেলি) ব্যবহার করা চলবে
কিন্তু তৈলাক্ত পিচ্ছিলিকারক (যেমন ভেসলিন বা লোশন)
ব্যবহার করলে কণ্ডোমের ক্ষতি হবে।
যৌনক্রিয়া চলাকালে আপনি কণ্ডোমের ওপরের অংশটি (তলপেটের
দিকে) ধরে রাখতে পারেন। ঐ ভাবে কণ্ডোমটি ঠিক আছে কিনা
সে দিকে নজর রাখতে পারবেন। যৌনক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে
বা সঙ্গমের আসন বদলালে কণ্ডোম পাল্টে নেবেন। যোনি-সঙ্গম
করার পরে পায়ু বা মুখ সঙ্গমে লিপ্ত হতে গেলে যৌনাঙ্গ
ধুয়ে কণ্ডোম পাল্টে নিন। যৌনক্রিয়া চলাকালীন কণ্ডোমের
আয়ু দশ মিনিটের মত হয়। নিজের সংগ্রহ করা, সুরক্ষিতভাবে
রাখা কণ্ডোম ব্যবহার করুন।
পায়ু-সঙ্গম:
এই ধরনের সঙ্গম যোনি-সঙ্গমের চাইতে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
পায়ুর নরম তন্তু সহজেই ছিঁড়ে যায় ফলে এইচ আই ভি ও অন্যান্য
সংক্রমণ সরাসরি রক্তের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পায়ুতে কোন স্বাভাবিক পিচ্ছিলিকারক পদার্থ না থাকায়
সেখানের তন্তু ছিঁড়ে বা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত
বেশি। যথেষ্ট সুরক্ষার জন্যে আপনার পুরুষ-সঙ্গীকে শক্ত
কণ্ডোম এবং প্রচুর পরিমাণে পিচ্ছিলিকারক ব্যবহার করতে
বলুন। পায়ু সঙ্গমে কণ্ডোম ব্যবহার করা যায় কিন্তু সমীক্ষায়
দেখা গেছে সঙ্গমকালে এগুলি সহজেই ছিঁড়ে যেতে পারে। আঙ্গুল
বা অন্য কোন যৌন খেলনা দিয়ে পায়ু-মর্দন পায়ু-সঙ্গমের
আগে সুখকর হয় আর পায়ুর পেশীগুলি শিথিল হয়ে গিয়ে সঙ্গম
চলাকালে কণ্ডোম ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
মুখ-সঙ্গম:
পুরুষের সঙ্গে: এই ধরনের রতিক্রিয়া যোনি- বা পায়ু-সঙ্গমের
মত ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে আপনার পুরুষসঙ্গী মুখগহবরে বীর্যপাত
করলে ঝুঁকি
যথেষ্ট
বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে যৌন সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
এ ধরণের রতিক্রিয়ার সময়ে সুরক্ষার জন্যে সঙ্গীর শিশ্ন
দৃঢ় হওয়ামাত্র পিচ্ছিলিকারক পদার্থ ছাড়া কণ্ডোম ব্যবহার
করুন। বীর্যপাত হওয়ার আগে যে ক্ষরণ হয়, তার মাধ্যমেও
এইচ আই ভি সংক্রমণ হতে পারে। প্রত্যেকবার নতুন কণ্ডোম
ব্যবহার করুন। সাধারণ কণ্ডোম মুখে দিতে অসুবিধা হলে
সুগন্ধী বা সুস্বাদু কণ্ডোম ব্যবহার করুন। এ গুলি বাজারে
পাওয়া যায়।
মুখ-সঙ্গম
- নারীর সঙ্গে:
এই ধরনের রতিক্রিয়ায় ঝুঁকি আছে, বিশেষ করে ঐ মহিলা যদি
সেই সময়ে ঋতুমতী হন বা তাঁর যৌন সংক্রমণজনিত কোন ঘা
বা ক্ষত থাকে। সুরক্ষার জন্যে আপনার যৌন-সঙ্গীর যোনিপ্রদেশ
ও পায়ুদেশে কণ্ডোম বা এক টুকরো লেটেক্স পর্দা (ডেণ্টাল
ড্যাম) রেখে পায়ু কামে লিপ্ত হতে পারেন। তার শরীর থেকে
নির্গত কোন ক্ষরণ স্পর্শ করবেন না।
রতিক্রিয়ায়
মুষ্টি বা আঙ্গুলের ব্যবহার:
এ ক্ষেত্রে সুরক্ষার জন্যে লেটেক্সের বানানো দস্তানা
ব্যবহার করুন এবং প্রত্যেক বার বদলে নিন। একে অপরের
শরীর থেকে নির্গত কোন ক্ষরণ স্পর্শ না করেও রতিক্রিয়া
সম্ভব এবং এভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানো যায়।
যৌন
খেলনা ব্যবহার:
রতিক্রিয়ায় ডিলডো (পুরুষ যৌনাঙ্গের অনুকরণে তৈরী), ভাইব্রেটর,
বা অন্যান্য যৌন খেলনা ব্যবহারের সঙ্গেও কণ্ডোম ব্যবহার
করা উচিত। এ সব যৌন খেলনা ব্যবহারের আগে গরম সাবান জলে
ধুয়ে এবং মুছে নেওয়া দরকার।
কণ্ডোমের
সঠিক ব্যবহার
কোন পুরুষের সঙ্গে রতিক্রিয়ার সময়ে (যোনি-সঙ্গম, পায়ু-
সঙ্গম, ও মুখ সঙ্গমের ক্ষেত্রে) তার শিশ্ন দৃঢ় হওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে এবং আপনার শরীর স্পর্শ করার আগে কণ্ডোম
পরিয়ে নিন। কণ্ডোম কোন দিকে গুটিয়ে থাকে বোঝার জন্যে
তা আঙ্গুলে পরিয়ে পরীক্ষা করে নিন। যদি ভুল করে কণ্ডোমের
বাইরের দিকে শিশ্নের ছোঁয়া লেগে যায়, সেটি বাতিল করে
নতুন কণ্ডোম ব্যবহার করুন। কণ্ডোমটি যেন আংটি বা নখের
খোঁচায় কেটে না যায়। এ ব্যাপারে সাবধান হবেন। বেশির
ভাগ কণ্ডোমের অগ্রভাগে বীর্য ধরে রাখার জন্যে একটি ছোটো
থলি থাকে। কণ্ডোমটি পরানোর সময়ে অন্য হাত দিয়ে ঐ থলিটি
টিপে ভেতরের বাতাস বের করে দিন। এর ফলে বীর্যপাতের সময়ে
কণ্ডোম ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। কণ্ডোম খোলার সময়ে,
নীচের দিকে ধরে থাকবেন যাতে একবিন্দু শুক্রও যোনির ভেতরে
বা বাইরে না পড়ে।

প্রত্যেকবার রতিক্রিয়ার
সময়ে নতুন কণ্ডোম ব্যবহার করুন। সেইমতো বেশ কিছু কণ্ডোম
হাতের কাছে মজুত রাখুন। কণ্ডোমে শুক্রাণুনাশক রাসায়নিক
থাকলে আপনার সঙ্গীর যদি অসুবিধা হয় শুক্রাণুনাশক নেই
এমন কণ্ডোম ব্যবহার করুন। কণ্ডোম ব্যবহারের ফলে যদি
চুলকানি, ফুসকুড়ি ওঠা, যোনি শুকিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি উপসর্গ
দেখা দেয়, অন্য ধরণের কণ্ডোম ব্যবহার করুন। কোন অবস্থাতেই
কণ্ডোমের ব্যবহার বন্ধ করবেন না।
সুগন্ধিত কণ্ডোমে
শর্করা জাতীয় পদার্থ থাকে, যার ফলে যোনিতে বীজাণু সংক্রমণ
হতে পারে। তাই এই কণ্ডোম কেবলমাত্র মুখ- সঙ্গমের জন্যে
ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া যৌন অনুভূতি তীক্ষ্ণ হওয়ার
জন্যে খাঁজকাটা কণ্ডোম ব্যবহার করা যায়।
আপনার যোনি শুষ্ক
মনে হলে পিচ্ছিলিকারক ব্যবহার করুন। যোনির শুষ্কতার
দরুন কণ্ডোম ফেটে যেতে পারে। পিচ্ছিলিকারক সরাসরি যোনিতে
দেওয়া যায়, আবার কণ্ডোমের অগ্রভাগেও কয়েক ফোঁটা দেওয়া
চলে। আপনার সঙ্গীর কাছে যা সুখপ্রদ হবে এবং যাতে তিনি
কণ্ডোম ব্যবহারে আগ্রহী হবেন তাই করুন। কণ্ডোমের দু
ধারে পিচ্ছিলিকারক লাগালে কণ্ডোম ঢিলে হয়ে গিয়ে খুলে
পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র জলে দ্রব পিচ্ছিলিকারক
ব্যবহার করুন। তৈলজ পিচ্ছিলিকারক, যেমন ভেসলিন, বেবী-অয়েল,
বা লোশন কণ্ডোমের ক্ষতি করে। পিচ্ছিলিকারক হিসেবে শুক্রাণুনাশক
ব্যবহার করা উচিত নয়।
সুরক্ষার
জন্যে আমি কি ডায়াফ্রাম বা গর্ভনিরোধক বড়ির ওপর ভরসা
করতে
পারি?
না। বিভিন্ন গর্ভ-নিরোধক প্রক্রিয়া যেমন, জন্ম নিয়ন্ত্রক
বড়ি, নরপ্ল্যান্ট, ডায়াফ্রাম, বা জরায়ুর অভ্যন্তরে
প্রতিস্থাপিত আই ইউ ডি (যেমন কপারটি বা কয়েল) - এ
গুলির কোনটিই আপনাকে যৌন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখবে
না।
জরায়ুর অভ্যন্তরে
কোন গর্ভনিরোধক যন্ত্র (আই ইউ ডি বা কয়েল) প্রতিস্থাপনের
সময়ে জরায়ুর সংক্রমণের (পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিস)
ভয় থাকে। কিন্তু সেই সময়ে যৌন-সংক্রমণের পরীক্ষা ও চিকিৎসা
করলে সেই ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া একটি সমীক্ষায় দেখা
গেছে আই ইউ ডি ব্যবহারে বীজাণুগত ভ্যাজাইনোসিস (যোনিতে
এক রকমের সংক্রমণ) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গর্ভনিরোধক বড়ির
ব্যবহারে জরায়ু গ্রীবার অবস্থান বদলে যায় এবং তার ফলে
যৌন সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
মহিলাদের পুরুষ-সঙ্গীর
সাথে যৌন সঙ্গমে শুক্রাণুনাশক রাসায়নিক ও কণ্ডোমের ব্যবহার
একাধারে গর্ভনিরোধক এবং সংক্রমণ প্রতিরোধকের কাজ করে।
বেশির ভাগ শুক্রাণুনাশক রাসায়নিকের উপাদান হল ননক্সিনল-৯
যা গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এগুলির ব্যবহার
অস্বস্তিদায়ক এবং যৌন সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়
না। শুক্রাণুনাশক ছাড়া কণ্ডোম ব্যবহার করা উচিত।
বিশ্বজুড়ে যৌন
সংক্রমণ প্রতিরোধে যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতে
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্যে
কণ্ডোমের কথা জানানো হচ্ছে। এছাড়া
গর্ভ-নিরোধক ও এইচ আই ভি প্রতিরোধ উদ্যোগে পুরুষদের
আরও বেশি করে শামিল করা হচ্ছে।
(ক্রমশ)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)