প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্তরায়

কণ্ডোম, দস্তানা,ইত্যাদি ব্যবহার করলে এইচ আই ভি ও অন্যান্য যৌনসংক্রমণের থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। তবুও আমরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখি না কেন?


দায়ী আমাদের নিজেদের মানসিকতা

কে, আমি? আমি সমকামী বা মাদকাসক্ত নই ... আমি এখনো খুব ছোট ... কার এইচ আই ভি সংক্রমণ হয়েছে আমি দেখেই বুঝতে পারি ... আমি ওকে এত ভালোবাসি, আমার ক্ষতি হয় এমন কাজ ও কখনো করবে না ... আমি কণ্ডোম নিয়ে এলে ও আমাকে অসৎ মনে করবে ... আমি সমকামী, আমার সুরক্ষার দরকার নেই ... আমার ভয় হয় আমার সঙ্গী রাজী হবে না ... আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি, এ সব জিজ্ঞেস করে ওকে হারাতে পারব না ... আমার মাদকের দরকার, বেশি ঝামেলা করলে ও আমাকে সেসব দেবে না ... আমি কণ্ডোম নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারি না, মা দেখে ফেলবে ... ও ভীষণ রেগে যাবে ... আমি অত কিছু দামী নই যে সুরক্ষিত থাকতে হবে... যৌন-মিলন নিয়ে কথা বলা অস্বস্তিকর ... আমি এসব ঠিক পারি না।

শারীরিক প্রেমের মূহুর্তে অনেকেই মনে করেন কণ্ডোম একেবারেই ঠাণ্ডা জল ঢেলে দেয়। তাঁরা কণ্ডোম ব্যবহার না করার পক্ষে বহু যুক্তি দেন । অনেকে কণ্ডোম দেখলেই মনে করেন তাঁকে অবিশ্বাস করা হচ্ছে।


দায়ী প্রেমিক বা সঙ্গীর মানসিকতা

কোন কোন মহিলা ও পুরুষ অনুযোগ করেন যে যৌন-মিলনে কণ্ডোম ব্যবহার করলে পূর্ণ আনন্দ হয় না। কোন কোন পুরুষ মনে করেন যে কণ্ডোম ব্যবহার করলে তাঁর শিশ্নের দৃঢ়তা বজায় থাকবে না। কেবলমাত্র পুরুষই যদি রতিক্রিয়ায় এগিয়ে আসেন ও পরিচালনা করেন, তাহলে মহিলা সঙ্গী সুরক্ষা নিয়ে কথা বললে তাঁরা পছন্দ নাও করতে পারেন। লালবাতি এলাকায় যৌনকর্মীদের খদ্দেররা পয়সা খরচ করে যৌন সঙ্গমের জন্যে। সুরক্ষিত রতিক্রিয়ায় যোগ দিতে তাঁরা বিরক্ত হন। কণ্ডোম বিহীন রতিক্রিয়ায় বেশি পয়সা খরচ করতেও তাঁরা রাজি থাকেন।

একজন মহিলা সমকামী (লেসবিয়ান) মনে করেন তাঁর এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। অনেক সময়ে আমাদের প্রেমিক, সঙ্গী, বা স্বামীকে সুরক্ষার কথা বললে তাঁরা মনে করেন যে আমরা সন্দেহ করছি যে তাঁদের অন্য যৌনসঙ্গী আছে বা তাঁরা মাদক সেবন করেন।

সুরক্ষিত যৌন আচরণের পরামর্শে অনেক সময়ে এমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় যা আশাই করা যায় না। এক পুরুষ তাঁর মনোভাব বোঝানোর জন্যে তাঁর মহিলা সঙ্গীর আনা ছয়টি কণ্ডোম পেন্সিল দিয়ে ফুটো করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ যৌন আচরণ সুরক্ষিত হবে কি না তা নির্ভর করে আপনার এবং আপনার যৌন সঙ্গীর ওপর।

মাদক ও অ্যালকোহল সেবনের পর আমাদের স্বাভাবিক বিচার ক্ষমতা বিপর্যস্ত হয় এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখার বোধশক্তি কমে যায়। এই রকম অবস্থায় সুরক্ষিত যৌনাচার সম্ভব নয়।


দায়ী তথ্য এবং জ্ঞানের অভাব

যদি সুরক্ষিত যৌন আচরণ সম্পর্কে জানার সুযোগ না থাকে তাহলে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়,ফলে যৌন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের বন্ধু,পরিবার,এমনকি চিকিৎসকদের কাছ থেকেও আমরা সঠিক তথ্য পাই না।

আপনার যদি যৌন-রোগ সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে মনে হতে পারে যে নিজের সঙ্গীর সাথে আপনার সুরক্ষিত যৌন আচরণের আর প্রয়োজন নেই, কারণ তিনিও তো সংক্রামিত হয়েছেন। কিন্তু আপনার ধারণা সঠিক নাও হতে পারে। তাই সব সময়েই সুরক্ষিত যৌন আচরণ করাই সঙ্গত। আর আপনার সঙ্গী যদি এখনো সংক্রামিত না হয়ে থাকেন, তবে তিনিও সুরক্ষিত থাকবেন।

আপনি এবং আপনার যৌন সঙ্গী দুজনে এইচ আই ভি সংক্রমিত হলেও সুরক্ষিত যৌনাচরণের প্রয়োজন আছে যাতে আপনি এইচ আই ভির পার্শ্ব সংক্রমণের (যা কয়েকটি রেট্রোভাইরাল ওষুধকে কার্যকরী হতে দেয় না) হাত থেকে রক্ষা পান।


দায়ী অন্যান্য কারণ

অনেকে গর্ভধারণের জন্যে কণ্ডোম ব্যবহার করেন না। আবার অনেকে দেখেন সুরক্ষিত যৌন আচরণের জন্যে উপকরণ দুর্মূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য। ফলে তাঁরা সুরক্ষিত যৌন আচরণ এড়িয়ে যান।


অসুরক্ষিত যৌন আচরণের পর আপনার কর্তব্য

যৌন সংক্রমণ নির্ধারণ ও চিকিৎসা

আপনি যদি ধর্ষিত হন, রতিক্রিয়াকালে যদি কণ্ডোম ফেটে গিয়ে থাকে, বা এমন কারোর সঙ্গে যৌন-সংসর্গ হয়েছে যিনি এইচ আই ভি সংক্রামিত বলে আপনার বিশ্বাস, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ যাতে বেড়ে না যায়, সে জন্যে চিকিৎসকের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে পারেন।

যদি সন্দেহ করেন আপনার কোন যৌন-রোগ সংক্রমণ হয়েছে, যত শীঘ্র পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গর্ভনিরোধক বড়ি
অসুরক্ষিত যৌন আচরণের পর গর্ভবতী হওয়ার ভয় থাকলে, বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে একটি গর্ভনিরোধক বড়ি খান। আজকাল ওষুধের দোকানে এগুলি সহজেই পাওয়া যায়। ভারতে এ ধরণের বেশ কিছু এমার্জেন্সি গর্ভনিরোধক বড়ি পাওয়া যায়, যেমন আই পিল, ই পিল, টি পিল ৭২, এবং ই সি ২।

যৌন আচরণ ও রতিক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরণের আলোচনা একটু আশ্চর্য লাগতেই পারে। কিন্তু বাস্তব জীবনে আপনি ও আপনার সঙ্গী একে অপরকে ভালবাসেন, তাই একে অপরের সুস্বাস্থ্য রক্ষার উদ্দেশ্যে অবশ্যই যত্নবান হবেন। যথার্থ জ্ঞান, যোগাযোগ, এবং ঠিক সময়ে যথাযথ সুরক্ষা আমাদের সুস্থ রাখবে এবং আমাদের যৌন জীবন আরও বেশি আনন্দময় করে তুলবে।


যৌন-সংক্রমণজনিত ব্যাধি

প্রত্যেক মহিলারই অধিকার রয়েছে রোগ ভয়মুক্ত ভাবে তাঁর যৌনজীবন উপভোগ করার। এর অর্থ হল আমাদের সকলকেই যৌন সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়গুলি জানতে হবে; আর যদি সংক্রমণ হয় তাহলে তার চিকিৎসা কি হবে সেও জেনে নিতে হবে। এছাড়া নিজের যৌনজীবনে দাঁড়ি না টেনে কিভাবে সঙ্গীকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারি সে উপায়ও জানা দরকার।

এইডস মহামারীর জন্যে জনমানসে যৌন রোগ সম্পর্কে চেতনা বাড়ছে। সকলেই এই মারণ-রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্যে কণ্ডোম বা অন্যান্য প্রতিরোধের উপায়গুলি নিয়ে ভাবছেন, আলোচনা করছেন। কিন্তু এ বাবদে ঝুঁকির সম্পর্কে আলোচনা এবং নিজের সঙ্গীকে সুরক্ষিত যৌনাচরণে রাজী করানো এখনো বেশ দুরূহ কাজ।

অনেক মানুষই যৌন-সংক্রমণের বিপদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কিন্তু তাঁরা কণ্ডোম বা অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করেন না। যৌন-সংক্রমণ বেশ কিছু ক্ষেত্রেই এত উপসর্গ বা লক্ষণহীন হয় যে অনেকে জানতেই পারেন না যে সংক্রমণ ঘটেছে। আবার যৌনাচরণ সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী এমনই কঠোর যে এই ধরণের কোন রোগ হলে মানুষ অস্বস্তি, লজ্জা, রাগ এবং হতাশায় ভোগে। অনেক রোগীই অকারণে অপরাধবোধে ভোগেন এবং লজ্জায় চিকিৎসা এড়িয়ে যান। এতে তাঁর এবং তাঁর যৌন সঙ্গীর স্বাস্থ্যের অপরিমেয় ক্ষতি হয়। মনে রাখতে হবে যে যৌন-সংক্রমণ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার মতই একটি সাধারণ ব্যাধি। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং সামাজিক নৈতিকতা ওপর ভর করে এই রোগের বিচার করলে শুধু ব্যক্তিবিশেষের নয়, সমাজের প্রচুর ক্ষতি হবে।


যৌন-সংক্রমণ কি ?

মূলত যোনি-সঙ্গম, মুখ-সঙ্গম, বা পায়ু-সঙ্গমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ (রোগ) এক ব্যক্তির শরীর থেকে আরেক ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে - এগুলিকে যৌন সংক্রমণ বা যৌন সংক্রমণ-জনিত রোগ বলে। এইচ আই ভি ছাড়াও নানান ধরণের যৌন সংক্রমণ আছে, যেমন ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস, জেনিটাল হার্পিস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি), হেপাটাইটিস বি, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, এবং জীবাণুজনিত ভ্যাজিনোসিস।


যৌন-সংক্রমণ কি ভাবে ছড়ায়?

এই সংক্রমণ সাধারণত রক্ত, শুক্র, যোনি-জাত ক্ষরণ, এবং সংক্রমণজনিত ঘা থেকে নির্গত রসের মাধ্যমে ছড়ায়। যৌন সংক্রমণ সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের (যোনি-সঙ্গম, মুখ-সঙ্গম, বা পায়ু-সঙ্গম) কারণে হয়। এই সংক্রমণ কোন ব্যক্তির শরীরের ঘা থেকে,অথবা একজনের ব্যবহৃত ক্ষুর (রেজার),ছুঁচ,বা যৌন খেলনা অন্য কেউ ব্যবহার করলে ছড়াতে পারে। আবার কিছু সংক্রমণ যেমন হার্পিস, ত্বকের স্পর্শের মাধ্যমে এক ব্যক্তির থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে। তবে একই তোয়ালে বা বাথরুম (স্নানাগার ও শৌচাগার) থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। রক্ত দান (ব্লাড ট্রান্সফিউশান) বা হারানো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়েও সংক্রমণ হতে পারে। সেই জন্যে আগে থেকে রক্ত বা প্রতিস্থাপনের অঙ্গ সংক্রমণ মুক্ত কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার।


এইচ আই ভি ও অন্যান্য সংক্রমণের মধ্যে সম্পর্ক

শরীরে অন্য কোন যৌন সংক্রমণ হয়ে থাকলে এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যৌন রোগ সংক্রমণের ফলে অনেক সময়ে ত্বক ফেটে যায়, ঘা ও অঙ্গ-বিকৃতি হয়, এবং ঐ সংক্রামিত প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে এইচ আই ভি রক্তে মিশে যেতে পারে। এইচ আই ভি সংক্রমণ রক্তের শ্বেতকণিকাগুলিকে (যেগুলির কাজ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা) আক্রমণ করে। শরীরে কোন সংক্রমণ হলে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই একটি সংক্রমণের পরে এইচ আই ভি সংক্রমণ হলে সাধারণের চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্বেতকণিকা আক্রান্ত হয়। যে সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে এক ধরণের যৌন রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, সেখানে অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকিও থেকে যায়। নিজের যৌনসঙ্গীর ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা একই রকম। তাই অন্যান্য যৌন রোগ সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার অভ্যাস প্রকারান্তরে এইচ আই ভি সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া জোরদার করবে।

কল্পনা না বাস্তব?
মুখ-সঙ্গমের মাধ্যমে যৌন সংক্রমণ হতে পারে
বাস্তব। মুখ-সঙ্গমের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির শরীর নির্গত ক্ষরণ আরেক ব্যক্তির শরীরে যাচ্ছে, ফলে সংক্রমণ হতে পারে। যদি আপনার যৌন সঙ্গী আপনার যৌনাঙ্গে মুখ দেন বা আপনি আপনার মহিলা সঙ্গীর যৌনাঙ্গে মুখ দেন সেক্ষেত্রে ডেন্টাল ড্যাম (পাতলা লেটেক্সের পর্দা) ব্যবহার করা উচিত। আর যদি পুরুষ-সঙ্গীর শিশ্নে মুখ দেন, সেক্ষেত্রে তাঁর কণ্ডোম ব্যবহার করা উচিত। একমাত্র এভাবেই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।

যৌন সংক্রমণ হলে ওষুধে সেরে যাবে
কল্পনা। ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে (যেমন হার্পিস, হেপাটাইটিস বি,
হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস, এবং এইচ আই ভি) চিকিৎসা করে লক্ষণগুলি কমানো যায় বা সংক্রমণের গতি কমানো যায়, কিন্তু সংক্রমণ সারানো যায় না। আবার ক্ল্যামিডিয়া, সিফিলিস, বা গনোরিয়া, অর্থাৎ যে সংক্রমণগুলি ব্যাক্টিরিয়া, প্রোটোজোয়া, বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জীবাণু বাহিত, সেগুলি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং ক্রিম/লোশন ব্যবহারে সেরে যায়। এখানে সেরে যাওয়া মানে সংক্রমণ বাড়বে না; কিন্তু শরীরের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।


যৌন-সংক্রমণের কি কি লক্ষণ?

সব চাইতে সাধারণ লক্ষণ হল:

  • প্রস্রাবের সময়ে ব্যাথা বা জ্বালা করা
  • যোনি, শিশ্ন, বা পায়ুতে চুলকানি এবং সেখান থেকে কোন ক্ষরণ বা দুর্গন্ধ নির্গত হওয়া
  • মহিলাদের তলপেটে তীক্ষ্ণ ব্যাথা
  • জননাঙ্গ এবং পায়ুর আশেপাশে ফোলা, ঘা, বা ফুস্কুড়ি জন্মানো। সংক্রমণের লক্ষণগুলি সাধারণত জননাঙ্গের আশেপাশেই দেখা যায়। তবে এগুলি জঙঘায়, গলায়, চোখে (গনোরিয়ার ক্ষেত্রে), মুখে (হার্পিস ও সিফিলিসের ক্ষেত্রে), এবং কখনো কখনো নাকে বা হাতেও দেখা দেয়। সিফিলিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বেদনাহীন (ঘা) এবং সুনির্দিষ্ট নয় (যেমন ফুস্কুড়ি, যা দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা যায়)। লক্ষণগুলি যন্ত্রণাহীন এবং স্বল্পস্থায়ী বলে অনেকেই এগুলি সম্পর্কে সচেতন হন না। বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার আগেই হয়তো এই লক্ষণগুলি আপনা থেকে মিলিয়ে যায়। অবশ্য তার মানে এই নয় যে সংক্রমণ দূর হয়েছে। লক্ষণ চলে গেলেও আমাদের শরীরের ভেতরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।


কোন যৌনরোগ লক্ষণ বা উপসর্গহীন হয়?

ক্ল্যামিডিয়া সংক্রামিত অধিকাংশ মহিলা কিছু হয়েছে বলে বুঝতেই পারেন না। আবার গনোরিয়া হলে প্রায়শই কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। কিন্তু চিকিৎসা না হলে এই দুই সংক্রমণের ফলে প্রজনন প্রক্রিয়ায় ভয়ানক সংক্রমণ হয় যার ডাক্তারী নাম পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিস (পি আই ডি)। এতে মহিলাদের জননাঙ্গের অভ্যন্তরে জোরদার সংক্রমণ ঘটে ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে এই জীবাণু (ব্যাক্টিরিয়া) সংক্রমণ পুরোপুরি সারিয়ে ফেলা যায় এবং শরীরের ক্ষতিও আটকানো যায়।


শরীরে যদি ঐ রকম কোন উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে কি ধরে নেব সংক্রমণ হয়েছে?

সবসময়ে নয়। যদিও কি কারণে উপসর্গগুলি দেখা দিয়েছে তা জানা দরকার। অন্য কোন কারণে হলেও এ ধরণের লক্ষণ উপেক্ষা করা যায় না। এই সংক্রমণগুলির পরীক্ষা এবং চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।

ভালভো-ভ্যাজিনাইটিস বা যোনি ও যোনিপ্রদেশ ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে একটি হল যোনির অভ্যন্তরে পিএইচ ভারসাম্যের পরিবর্তন, অর্থাৎ অম্ল ও ক্ষারের সঠিক পরিমাপ রদবদল। এই অবস্থা কয়েকটি কারণে হতে পারে -

  • শুক্রাণুর উপস্থিতি (যা যোনির ভেতরে অম্ল কমিয়ে দেয়)
  • যোনির অভ্যন্তর জল বা বীজঘ্ন দিয়ে পরিষ্কার করা
  • ঋতুস্রাব হওয়া
  • কোন সংক্রমণ হওয়া।
এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরের প্রয়োজনীয় কতোগুলি জৈবকে ধবংস করে ঈস্ট জাতীয় জৈবের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা
দেয়।

কিছু মহিলার আবার অজ্ঞাত কারণে যোনি থেকে ক্ষরণ হয়। ঘনঘন যৌনসঙ্গমে ভ্যাজিনাইটিস বেড়ে যেতে পারে কারণ সংক্রমণের জায়গা থেকে জীবাণুগুলি ক্রমশ যোনির অভ্যন্তরে চলে যায়। এ ধরণের সংক্রমণ হলে ক্রিম, স্প্রে ইত্যাদির রাসায়নিক শরীরে অস্বস্তি ঘটায়। অত্যাধিক সংবেদনশীলতার জন্যে পোষাক পরলেও শরীরে অসুবিধে হতে পারে।

অনেক সময়ে মূত্রনালীতে সংক্রমণের (সিস্টাইটিস সহ) বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। মূত্রনালীর সংক্রমণ যৌন সংসর্গের জন্যে বা অন্যান্য কারণেও হতে পারে। পায়ু সঙ্গমের পরে যোনিতে লিঙ্গ স্থাপন করলে বা পায়ু থেকে যোনির দিকে মুছলে (যাঁরা টয়লেট পেপার ব্যবহার করেন) মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে। অর্থাৎ পায়ুর জীবাণু যখন মূত্রনালীর দিকে যায় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। যৌন মিলনের সময়ে পায়ুর জীবাণু মূত্রদ্বারের দিকে উঠে গেলে সংক্রমণ হয়। একে 'হনিমুন সিস্টাইটিস' বলে।


যৌন-সংক্রমণ কি সেরে যায়?

অনেক যৌন সংক্রমণই সেরে যায়। ব্যাক্টিরিয়া (জীবাণু), প্রোটোজোয়া, বা অন্যান্য জীবাণু-জনিত সংক্রমণ অ্যান্টি-বায়োটিক ক্রিম বা লোশনের সাহায্যে সারানো যায়। এই ধরণের সংক্রমণের মধ্যে সিফিলিস, ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিস পড়ে। এছাড়া মাইটস, র্ক্যাবস, এবং স্ক্যাবিস জাতীয় ত্বকের ক্রিমিও (প্যারাসাইট) এই তালিকায় পড়ে। এই সব ক্রিমিগুলিতে চুলকানি ও ফুস্কুড়ি হয় এবং যৌন-সংসর্গের সময় একজনের শরীর থেকে অন্যজনের দেহে সংক্রামিত হয়।

যৌন সংক্রমণ সেরে যাওয়ার অর্থ হল সংক্রামক জীবাণুগুলি ধবংস হয়েছে ও সংক্রমণ আর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তবে শরীরের যে ক্ষতি হয়ে গেছে সেগুলি পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। সংক্রমণ উপেক্ষা করে কোন চিকিৎসা না করলে শরীরের ভীষণ ক্ষতি হতে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি নেওয়ার চাইতে আগে থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। তা সত্বেও কোন উপসর্গ দেখা দিলে, তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ভাইরাস-জনিত সংক্রমণের চিকিৎসা হয় কিন্তু তা সারে না। এই তালিকায় হার্পিস, হেপাটাইটিস বি, এইচ আই ভি, ও হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) পড়ে। এইচ পি ভির ফলে জননাঙ্গে উদগম এবং জরায়ু-গ্রীবার কোষে পরিবর্তন হয়। এইচ আই ভির জন্যে এইডস রোগ হয়। চিকিৎসার ফলে এ সব রোগের উপসর্গগুলি কমে এবং সংক্রমণ বৃদ্ধির গতি কমে, কিন্তু নিরাময় হয় না। ইদানিং পাশ্চাত্যে এইচ পি ভির টিকা বেরিয়েছে এবং চোদ্দ বছরের কম মেয়েদের ভবিষৎ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে এটি দেওয়া হচ্ছে।


আমার যৌন-সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা?

যৌন রোগ সংক্রমণ সবচেয়ে ছোঁয়াচে রোগগুলির মধ্যে অন্যতম। আপনার যদি সংক্রামিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন-সংসর্গ হয় অথবা আপনার নিজেরই যদি কোন যৌন রোগ সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার অন্য সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনি আপনার যৌন সঙ্গীকেও সংক্রামিত করতে পারেন। এই সংক্রমণের তালিকায় এইচ আই ভিও আছে।

(ক্রমশ)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

 

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।