২) আপনি যৌন-সংসর্গ
চাইলে সুরক্ষিত থাকার জন্য তৈরী থাকুন। সুরক্ষার উপাদানগুলি
হাতের কাছে রাখুন। রতিক্রিয়ার আগে সেগুলি ব্যবহার করুন
কারণ উত্তেজনার মুহূর্তে সে সব খোঁজা মুস্কিল হবে।
৩) যদি দেখেন যে
আপনার সঙ্গীর সাথে সুরক্ষিত যৌনাচার নিয়ে কথা বলা কঠিন
হচ্ছে, তাহলে আপনি কি বলবেন, কিভাবে বলবেন তা কোন বন্ধু
বা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের কাউন্সেলরের সঙ্গে প্র্যাক্টিস
করুন।
৪) যদি মনে করেন
যে আপনার সঙ্গীর কোন সংক্রমণের আশঙ্কা হয়েছে, সেক্ষেত্রে
দেরী না করে তৎক্ষণাৎ নিজের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করান।
মনে রাখবেন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা না দিলেও সংক্রমণ হতে
পারে।
৫) উপসর্গ বা লক্ষণ
না দেখলেও সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে ডাক্তারী
পরীক্ষা করান। কোন নুতন যৌন-সম্পর্ক শুরু করার আগে বা
আপনি বা আপনার সঙ্গীর অন্য যৌন-সঙ্গী থাকলে পরে এই পরীক্ষা
খুবই সময়োচিত হবে। কোন সংক্রমণের জন্যে আপনার কী পরীক্ষা
হল তা ভালো করে জেনে নিন, কারণ কতগুলি সংক্রমণের খুব
বিশ্বাসযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি নেই। যে মহিলাদের যৌন সম্পর্ক
রয়েছে তাঁরা প্রতি বছর ক্ল্যামিডিয়ার জন্যে পরীক্ষা
করাতে পারেন। এটি খুব সাধারণ একটি যৌন-সংক্রমণ, কিন্তু
চিকিৎসা না হলে ভয়ানক আকার ধারণ করে।
৬) আপনার সঙ্গীর
যদি কোন সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে যতক্ষণ না আপনার, আপনার
সঙ্গীর বা সঙ্গীদের, ও তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের পরীক্ষা
করে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয় ততদিন যৌন-সংসর্গ না হওয়াই
বাঞ্ছনীয়। কতদিন অপেক্ষা করবেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ নিন।
৭) চিকিৎসায় রাজি
হওয়ার আগে, কি ওষুধ খাচ্ছেন, তা কতদিন চলবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি
কি, পরবর্তী কালে কি করতে হবে, ইত্যাদি ভালো করে জেনে
নিন। প্রশ্ন করতে লজ্জা পাবেন না।
৮) হেপাটাইটিস
বি টীকা নেওয়া যায় কিনা আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা
করুন।
৯) নিয়মিত ভাবে
আপনার শরীরের, বিশেষ করে জননাঙ্গের পরীক্ষা করান। সবকিছু
স্বাভাবিক আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন। কোন অস্বাভাবিক
পরিবর্তন দেখলে বা দুর্গন্ধ পেলে চিকিৎসকের কাছে যান।
কোন ঘা সেরে গেলে পরেও সংক্রমণ থেকে যেতে পারে, এ বিষয়ে
সচেতন হোন।
১০) সম্ভব হলে
বস্তিদেশের পরীক্ষা, প্যাপ পরীক্ষা, এবং সংক্রমণের পরীক্ষা
নিয়মিত করান।
১১) এমন একজন চিকিৎসক
খুঁজে নিন যিনি আপনার সঙ্গে স্বচ্ছন্দে যৌন-স্বাস্থ্য
নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তিনি যেন আপনাকে সম্পূর্ণ এবং
বোধগম্য তথ্য দিতে পারেন। এছাড়া তিনি যেন আপনার প্রশ্নের
জবাব দেন এবং আপনার যৌনতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেন।
কবে এসব প্রসঙ্গ তিনি উত্থাপন করবেন বলে বসে থাকবেন
না। প্রয়োজনে আপনি তাঁর সাহায্য চান।
সংক্রমণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
কারণ
পনেরো থেকে চব্বিশ
বছর বয়সের মেয়েরা, যাঁরা শহরে থাকেন, যেখানে সংক্রামিত
মানুষের সংখ্যা অনেক, এবং যাঁদের একাধিক যৌন সঙ্গী রয়েছে,
তাঁদের সকলেরই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে
দারিদ্র সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যথেষ্ট টাকাপয়সা
না থাকার ফলে হয়তো সুরক্ষা ও চিকিৎসার সুবিধে আমরা নিতে
পারি না। সঙ্গীর ওপর যদি আপনি অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল
হন, তাহলে আপনার পক্ষে সংক্রমণ ও সুরক্ষা নিয়ে কথা বলা
হয়তো কঠিন হবে। তিনিই হয়তো আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে
দিচ্ছেন। অথবা প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার জন্যে লড়াই করতে
করতে হয়তো এ বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব দিতে পারছেন না! শৈশবে
মানসিক ও যৌন-অত্যাচারের স্মৃতিও বর্তমানের যৌন-সংক্রমণের
ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আমাদের সমাজে যদি মেয়েদের নিষ্কৃয়
এবং অসহায় ভাবকেই বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করা হয়, তাহলে
সুরক্ষা নিয়ে কথা বলা তাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়। যে
সমাজ এবং সংস্কৃতিতে আমরা বাস করি সেখানে যদি জননাঙ্গের
দিকে তাকানো বা স্পর্শ করাকে নোংরামী ভাবা হয় এবং মেয়েদের
যৌন ব্যাপারে নিরুৎসাহ করা হয়, তাহলে যৌন-সংক্রমণের
প্রাথমিক উপসর্গ বা লক্ষণগুলি আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে।
যৌন-সংক্রমণ এবং মহিলাদের জননাঙ্গ
কর্তন (সারকামসিশন)
মেয়েদের ভগাঙ্কুর
কেটে দেওয়ার রেওয়াজ আমাদের দেশে খুবই কম, তবে একেবারে
নেই বললে ভুল হবে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বোহরা মুসলমান
সমাজে এ ধরণের কর্তনের চল রয়েছে। যে সব সম্প্রদায় ছোট
মেয়েদের শরীরে এই ধরণের কর্তন করে থাকেন, তাঁদের ধারণা
এটি প্রাচীন সংস্কৃতি ও ধর্মের অঙ্গ। কিন্তু ইসলাম ধর্মের
কোথাও এই ধরণের কর্তনের কথা লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে নারী যৌনাঙ্গ কর্তনের বিরুদ্ধে আইন পাশ হয়েছে,
কিন্তু ভারতে সেই রকম কোন আইন নেই।
যে মহিলাদের জননাঙ্গ
কাটা হয়েছে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সংক্রামিত
যৌন সঙ্গীর মাধ্যমে তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি সংক্রামিত হতে
পারেন। তাঁদের জননাঙ্গে কাঁচা ঘা বা আলসার থেকে যায়,
যোনি-প্রদেশের পর্দাগুলি স্ফীত হয়, বা যৌন-সংসর্গে ছোট
ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে চট করে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
এই মহিলাদের যোনিমুখে কর্তন বা সারকামসিশনের জন্যে ক্ষতচিহ্ন
থাকে এবং চিকিৎসা সত্বেও অনেক সময় তাঁদের সংক্রমণ সারতে
চায় না। অনেকের ক্ষেত্রে যোনি থেকে ক্রমাগত ক্ষরণ হতে
থাকে। কখনও কখনও চিকিৎসার জন্যে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন
হতে পারে। এই সমস্যা লাঘবের জন্যে প্রতিষ্ঠিত সহায়তা
সঙঘ, সখী সমিতি, বা বিশেষজ্ঞেরা সংক্রামিত মহিলাদের
সাহায্য করতে পারেন।