প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)

যৌন সংক্রমণ এবং আইন

আমাদের দেশে সংক্রামক রোগ বাবদ কিছু প্রাগৈতিহাসিক আইন আছে, যেমন ১৮৯৭ সালে পাশ হওয়া এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট (মহামারী সম্পর্কীত আইন)। এই আইনে কিছু সংক্রামক রোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য আধিকারিকদের বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যা তাঁরা সংক্রামিত ব্যক্তির ওপর অনেক সময় যথেচ্ছ প্রয়োগ করতে পারেন। বাধ্যতামূলক ভাবে সূচিতকরণ, পরীক্ষা এবং চিকিত্সা, অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখা, বাসস্থানে তল্লাশী চালানো, ইত্যাদির অধিকার জনস্বাস্থ্য আধিকারিকদের আইনগত ভাবে দেওয়া হয়েছে।

সমলিঙ্গ যৌন সংসর্গ ও আইন
২০০৯ সালের জুলাই মাস অবধি ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও সমকামী যৌন আচরণ অপরাধ বলে গণ্য করা হত। ঐ সালের ৯ই জুলাই এই আইনটি বৈষম্যমূলক বলে ভারতের প্রধান আদালত (সুপ্রীম কোর্ট) বাতিল করেছে। এই সমস্ত পুরনো আইন আধুনিকীকরণের কথা বারবারই বিভিন্ন স্তরে আলোচিত হয়েছে এবং আইন প্রণয়নে সংবেদনশীলতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে খুব কিছু পরিবর্তন হয় নি। তবে এইচ আই ভি আক্রান্তদের জন্যে ৩৭৭ ধারার মত কোন রকম আইন না থাকা সত্বেও মানবিক অধিকার সুরক্ষার জন্যে কয়েকটি হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রীম-কোর্ট বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছে।

যৌন সংক্রমণ রোধে যথাযথ কোন আইন হলে তা নিশ্চয়ই মানা উচিত্, তবে তার প্রয়োগ-ব্যবস্থা হতে হবে সংবেদনশীল। সংক্রামিত ব্যক্তির সামাজিক অধিকারের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সংক্রমণ ফৌজদারী অপরাধ নয় - তাই আইন থাকলেও তার প্রয়োগের মুখ হওয়া উচিত্ মানবিক আর দৃষ্টিভঙ্গী সমাজ কল্যাণমূলক। তবে সব চেয়ে ভাল হয় নিজে সচেতন হলে এবং অপরকে সচেতন হতে সাহায্য করলে। যৌন-সংক্রমণ প্রতিরোধে যে কোন সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সামিল হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যৌন-স্বাস্থ্য ভালো থাকা মানে শরীর ভালো থাকা। নির্বিঘ্ন সুরক্ষিত যৌনজীবন আনন্দময়।


অন্তঃসত্বা হওয়া ও যৌন-সংক্রমণ

যৌন-সংক্রমণ আমাদের অন্তঃসত্বা হওয়ার সম্ভাবনা শুধু কমিয়েই দেয় না
সমস্যাবহুলও করে তোলে। যৌন রোগ সংক্রমণের ফলে গর্ভে থাকা ভ্রুণ সংক্রামিত হতে পারে।

সন্তান জন্মের আগের পরীক্ষাগুলি

কোন উপসর্গ না থাকলেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রত্যেক অন্তঃসত্বা মহিলার এইচ আই ভি, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, ক্ল্যামিডিয়া, এবং গনোরিয়ার পরীক্ষা করানো উচিৎ। যে মহিলারা ইন্ট্রাভেনাস(শিরার মধ্যে) ওষুধ, রক্ত, বা রক্তজাতীয় জিনিষ নিয়েছেন, বা যাঁদের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে, তাঁদের হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা করা জরুরী। গর্ভাবস্থায় গোড়ার দিকেই ব্যাক্টিরিয়াল ভ্যাজিনোসিস এবং প্যাপ পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। গর্ভাবস্থায় যৌনসংসর্গ হলে আপনার নতুন সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে এবং গর্ভস্থ সন্তানেরও সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্যে কণ্ডোম ও অন্যান্য প্রতিরোধক ব্যবহার করতে ভুলবেন না।


বীজাণু (ব্যাক্টিরিয়া) জনিত সংক্রমণ
(ঠিক সময়ে ধরা পড়লে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা নিরাময় সম্ভব)

সংক্রমণ: ক্ল্যামিডিয়া

কিভাবে ছড়ায়: যোনি-সঙ্গম, মুখ-সঙ্গম (সম্ভাবনা কম), পায়ু-সংগম দ্বারা; সংক্রামিত ক্ষরণ হাতের মাধ্যমে চোখে গেলে; মায়ের থেকে সন্তানের শরীরে ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: ৭ থেকে ১৪ দিন।

লক্ষণ: আশি শতাংশ মহিলার দেখা দেয় না। জরায়ু-গ্রীবার সংক্রমণ হলে; যোনি থেকে ক্ষরণ, প্রস্রাবে কষ্ট, যোনি থেকে অসময়ে রক্তক্ষরণ; যৌনসংসর্গের পরে রক্তপাত । যোনি প্রণালীর সংক্রমণ হলে: রক্তস্রাব ও তলপেটে ব্যাথা; জরায়ু গ্রীবা ও পায়ু ফুলে যাওয়া ও রক্তিম ভাব। পুরুষের ক্ষেত্রে জ্বালা, শিশ্ন থেকে ক্ষরণ, মূত্রথলি ফুলে যাওয়া, রক্তিম ভাব।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: মহিলার বস্তিদেশ পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা। পুরুষের মূত্রথলি পরীক্ষা, মূত্র-পরীক্ষা। গনোরিয়ার সঙ্গে ভুল হয় বলে দুটি রোগের জন্যেই পরীক্ষা করা উচিত।

ওষুধ: ট্যাবলেট ।

জটিলতা: মহিলাদের দীর্ঘদিন ধরে বস্তিদেশে ব্যথা, অনুর্বরতা, গর্ভাবস্থায় জটিলতা। পুরুষের এপিডিডাইমিস, টেস্টিকল ও প্রস্টেট গ্রন্থি ফুলে যাওয়া/ রক্তিম ভাব।শিশু জন্মানোর পরে চোখে সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া।


সংক্রমণ: গনোরিয়া

কিভাবে ছড়ায়: যোনি-, পায়ু- ও মুখ-সঙ্গম হলে; সংক্রামিত ক্ষরণ হাতের মাধ্যমে চোখে গেলে; মায়ের থেকে সন্তানের শরীরে গেলে।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: ২ থেকে ৩০ দিন (গড়ে ৩ থেকে ৭ দিন) ।

লক্ষণ: মহিলাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা যায় না; জরায়ু-গ্রীবায় সংক্রমণ হলে যোনি থেকে থকথকে পুঁজ ও রক্তস্রাব হয়; গলা ধরে যায়, প্রস্রাবে কষ্ট হয়; জননাঙ্গের আশেপাশের গ্রন্থি ফুলে যায়; পায়ুতে ব্যাথা হয়; পায়ু থেকে ক্ষরণ হয়। চোখের সংক্রমণে বড়/ছোট সকলেই অন্ধ হয়ে যেতে পরে। পুরুষের শিশ্ন দিয়ে পুঁজ ক্ষরণ হয়; ঘনঘন জ্বালা করা প্রস্রাব হয়; অন্য উপসর্গ মহিলাদের মতই ।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: মহিলার বস্তিদেশ পরীক্ষা; মূত্র-পরীক্ষা। পুরুষের মূত্রথলির পরীক্ষা; মূত্র-পরীক্ষা; ক্ল্যমিডিয়ার সাথে ভুল হতে পরে বলে দুটোরই পরীক্ষা করা উচিত।

ওষুধ: ট্যাবলেট এবং ইঞ্জেকশন ।

জটিলতা: মহিলার বস্তিদেশের সংক্রমণ- বিশদ আগের কলমে দেখুন। পুরুষের টেস্টিকাল, প্রস্টেট ফুলে যাওয়া; রক্তিম ভাব; বন্ধ্যাত্ব (সম্ভাবনা কম)। মহিলা ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই চিকিত্সা না হলে পরে সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে ব্যক্টিরিয়া রক্তে মিশে যায় (সম্ভাবনা কম হলেও ফল ভয়ানক)। এর ফলে ত্বকে পুঁজপূর্ণ ফুস্কুড়ি; হাড়ের জোড়ে ব্যাথা ও ফুলে যাওয়া; খুব কম ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের ভালবে সংক্রমণ; আথ্র্রাইটিস ও মেনিনজাইটিস হতে পারে; নবজাত শিশু সংক্রামিত হতে পারে ও প্রতিরোধক না দিলে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

সংক্রমণ: সিফিলিস

কিভাবে ছড়ায়: সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ত্বক-স্পর্শ ও যৌন-সম্পর্ক; সারা গায়ের কাঁচা ঘা বা ফুস্কুড়ির মাধ্যমে ছড়ায়। মায়ের থেকে সন্তানের;প্রথম কয়েক বছর লীন অবস্থার পরে অতটা ছোঁয়াচে নয় ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: প্রাথমিক অবস্থা ১০-৯০ দিন (গড়ে ৩ সপ্তাহ); পরের অবস্থা ১-৬ মাস ।

লক্ষণ: মহিলা পুরুষ প্রাথমিক পর্যায়ে যোনি (ভেতরে /বাইরে), শিশ্নে, মুখে, ও পায়ুতে বেদনাহীন ঘা; এছাড়াও শরীরের যেখানে বীজাণু প্রবেশ করেছে ঘা (আঙ্গুলের ডগায়, ঠোঁটে, বুকে)। ১-৫ সপ্তাহে ঘা সেরে যায় কিন্তু বীজাণু শরীরে থেকে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে মুখে, গায়ে, হাতের তালুতে, পায়ের তলায় ফুস্কুড়ি (চুলকানিহীন); ফ্লু-র মত লক্ষণ; গ্ল্যাণ্ড (গ্রন্থি) ফোলা; চুল পড়া; আঁচিলের মত ফোলা; লক্ষণগুলি মাসখানেক চিকিত্সার পর আর থাকে না। লক্ষণ কোন বহিঃপ্রকাশ ছাড়া প্রায় ২০ বছর চাপা থাকতে পারে। বীজাণু হাত ও মস্তিষ্ক সহ অন্য প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করে ।

পরীক্ষা/চিকিৎসাঃ রক্ত-পরীক্ষা; ইঞ্জেকশন ।

জটিলতা: মহিলা ও পুরুষের চিকিত্সা না হলে অন্ধ হয়ে যাওয়া; মস্তিষ্কের ক্ষতি; হৃদরোগ; প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার মত জোরালো আথ্র্রাইটিস; পঙ্গুত্ব; প্যারালিসিস। শিশুদের হাড়, চোখ, ত্বক, দাঁত ও যকৃতের ক্ষতি; এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা আছে ।

ভাইরাস ও যৌন সংক্রমণ
(সম্পূর্ণ না সারলেও চিকিত্সা হয়)

সংক্রমণ: হার্পিস-১ ও ২

ধরণ-১ সাধারণত মুখে হয়; তবে দুটি ধরণই জননাঙ্গে সংক্রামিত হয়। ধরণ-২ জননাঙ্গের হার্পিস নামে পরিচিত ও বেশি ভয়ানক ।

কিভাবে ছড়ায়: লক্ষণ না থাকা অবস্থায় যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যক্তি হয়তো নিজের অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন নন। যেখানে প্রথম সংক্রমণ হয়েছে সেখান থেকেই ভাইরাস ছড়ায় ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: প্রথম সংক্রমণ সাধারণত ২-১০ দিন। তারপরে আবার ৩-১২ মাসের মধ্যে পুনঃসংক্রমণ হতে পারে ।

লক্ষণ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ নেই। জননাঙ্গে আশেপাশে যন্ত্রণাদায়ক ফোস্কা হয়। প্রস্রাবে কষ্ট, ক্ষরণ, গ্রন্থি ফুলে জ্বর, গায়ে ব্যাথা। একই জায়গায় আবার হতে পারে, বিশেষ করে প্রথমটি যদি বেশি এবং এইচ এস ভি ২ জনিত হয়ে থাকে। পরের বার অত বেশি হয় না। সাধারণত মানসিক চাপের সময় বা প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবে হয়। কারো কারোর দ্বিতীয়বার হয় না ।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: চোখে দেখে এবং ফোস্কাগুলির রাসায়নিক পরীক্ষা করে; নতুন রক্ত পরীক্ষায় ধরণ-১ ও ২ চিEþত করা যায়। অzান্টিভাইরাল ওষুধে উপসর্গ কমে যায় এবং আবার হওয়ার সম্ভাবনা কমে। সিজারিয়ান প্রসবের ক্ষেত্রে শিশুকে ফোস্কার স্পর্শ থেকে বাঁচাতে হয় ।

জটিলতা: সারাজীবন সংক্রামিত থাকা,মানসিক ও শারীরিক চাপ । মানুষে মানুষে উপসর্গের তফাত্ হয়। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ এটি কাটিয়ে উঠতে পারেনা। শিশুর জন্মের সময় সংক্রমণ হতে পরে। জন্মের ঠিক আগে মায়ের সংক্রমণ হলে শিশুর সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। মায়ের দ্বিতীয় সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিশুর সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা ।


জন্মসংক্রমণ:

১০০ ধরণের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস-এর (এইচ পি ভি) মধ্যে ৩০-টি যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায়; জননাঙ্গে আঁচিল (এইচ পি ভি জনিত যৌন সংক্রমণ) ।

কিভাবে ছড়ায়: সংসর্গ; আঁচিলের স্পর্শ (যোনির ভিতরেও হতে পারে); আঁচিল সরিয়ে নিলেও ঐ জায়গা ভাইরাস থাকবে ও ছড়াবে।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: জরায়ু গ্রীবায় ক্ষতের ক্ষেত্রে কয়েক মাস এমন কি এক বছর; আঁচিলের ক্ষেত্রে তিনসপ্তাহ থেকে কয়েক মাস ।

লক্ষণ: ভাইরাস দেখা যায় না। জরায়ু গ্রীবায় ছোট বেদনাহীন ক্ষত আঁচিলের মত; কখনো কখনো চুলকানি, অস্বস্তি, রক্তপাত হয়; অন্তঃসত্বা অবস্থায় দেখা দিতে পারে; বৃদ্ধি পেলে ফুলকপির মত দেখতে হয়। পায়ুর কাছে হলে অর্শ বলে ভুল হতে পারে; চিকিত্সার পরে আবারও জন্মাতে পারে ।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: এইচ পি ভি সংক্রমণ নির্ণয় করতে জরায়ু গ্রীবায় অস্বাভাবিক কোষের সন্ধানে বার্ষিক প্যাপ পরীক্ষা; কল্পোস্কোপি (আতস কাঁচ দিয়ে বেদনাহীন পরীক্ষা);জরায়ু গ্রীবার ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বায়প্সি; আঁচিল চোখে দেখে বোঝা যায়; সংক্রমণের জায়গায় দ্রবণ,শীতল রাসায়ন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া(ফ্রিজিং),লেসার বা অস্ত্রোপচারের সাহায্যে নির্মূল করা যায়।

জটিলতা: কোন কোন এইচ পি ভি জরায়ু গ্রীবার ক্যান্সারের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত; আঁচিল যোনি, শিশ্ন এবং পায়ুর মুখ বন্ধ করে দিতে পারে;অন্তঃসত্বা অবস্থায় যোনির ভিতরে আঁচিল বড় হয়ে গিয়ে যোনির দেওয়ালের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দেয়; প্রসবে কষ্ট হয়; আঁচিল নির্মূল হওয়া সত্বেও কিছু মহিলা যৌন মিলনের সময়ে যোনিতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ।


সংক্রমণ: এইচ আই ভি

কিভাবে ছড়ায়: সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক; রক্ত, বীর্য, ও শরীরের অন্যান্য ক্ষরণের সংস্পর্শ; অন্যের ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের ছুঁচ ব্যবহার; মায়ের স্তন্য দুগ্ধ থেকে শিশুর জন্মের আগে বা পরে সংক্রমণ হতে পারে ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: সাধারণত ৬ সপ্তাহ থেকে তিনমাসের মধ্যে রক্দ পরীক্ষায় এইচ আই ভি বোঝা যায়; এইচ আই ভির এইডস রোগে পূর্ণ প্রকাশ হতে দশ বছর বা তারও বেশি সময় লাগে ।

লক্ষণ: সাধারণত কোন লক্ষণই থাকে না বা হাÅা কিছু লক্ষণ হয়, যেমন গ্রন্থি ফোলা, গলা ধরে যাওয়া ইত্যাদি; এছাড়া রাত্রে ঘাম হয়, ওজন কমে যায়, মুখে ঘা হতে পারে ।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: অন্তঃসত্বা মহিলাদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিত্সা করা হয় যাতে গর্ভজ শিশু সংক্রামিত না হয়। একাধিক ওষুধপত্র ।

জটিলতা: এই ভাইরাস থেকে এইডস হয়, ফলে অন্যান্য সংক্রমণ সহজেই ঘটে, যেমন নিউমোনিয়া, টিউমার; যদিও এইচ আই ভি মায়েদের জন্যে ওষুধ আছে, মায়েদের থেকে সন্তানের হতে পারে। কিছু ওষুধের ভীষণ রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে ।

দুর্বার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংঘের (WHO) উৎসাহে ১৯৯২ সালে অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিট্যুট অফ হাইজিন এণ্ড পাব্লিক হেলথ কলকাতার বিখ্যাত লালবাতি অঞ্চল সোনাগাছিতে এইচ আই ভি রোধের উদ্দেশ্যে 'সোনাগাছি প্রকল্প' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। পিয়ার (বন্ধì বা সখি) শিক্ষকদের সাহায্যে সোনাগাছি প্রকল্প কণ্ডোম ব্যবহারের জন্যে একটি অত্যন্ত সফল প্রচেষ্টা গড়ে তুলেছে। এই সংগঠনটি থেকেই তৈরী হয়েছে আজকের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান 'দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি'। দুর্বার শুধু কণ্ডোম ব্যবহার প্রচার করেই ক্ষান্ত হয় নি, যৌন কর্মীদের স্বাস্থ্য, কাজে শোষণ, পড়াশোনা,এবং তাদের ওপর অত্যাচার ইত্যাদি বহু বিষয় নিয়েই আন্দোলন করে চলেছে। প্রধানতঃ দুর্বারের প্রচেষ্টায়, কলকাতার যৌন ব্যবসায়ের অঞ্চলে এইচ আই ভি সংক্রমণ ১১ শতাংশে আটকে থেকেছে। তুলনীয় মুম্বাইয়ে যৌন কর্মিদের মধ্যে এই সংক্রমণের হার ৫৬ শতাংশ।

সংক্রমণ: ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস

কিভাবে ছড়ায়: যৌন সংসর্গ; যৌন ক্ষরণের সংস্পর্শ (ভাইরাস শরীরের বাইরে উষ্ণ, আদ্র্র আবহে বেঁচে থাকে) ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: ৬ মাসের মধ্যে, কখনো আরো আগে ।

লক্ষণ: মহিলার ক্ষেত্রে ফেনা ফেনা দুর্গন্ধযুক্ত, সবুজ হলুদ স্রাব; যোনিতে চুলকানি ও অস্বস্তি, লালভাব; যৌনমিলনে কষ্ট, তলপেটে অস্বস্তি এবং ঘনঘন প্রস্রাবের ইচ্ছা হতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে সাধারণত কোন লক্ষণ নেই; কখনো প্রস্রাবে পুঁজ, ঘনঘন যন্ত্রণাসহ প্রস্রাব ।

পরীক্ষা/চিকিত্সা: যোনি ও শিশ্ন নির্গত ক্ষরণের পরীক্ষা; ওষুধ - ট্যাবলেট। অ্যালকোহল (মদ) পরিত্যাগ করুন ।

জটিলতা: গর্ভাবস্থায় সংক্রামিত হলে গর্ভধারণের সমস্যা হতে পারে।


সংক্রমণ: ব্যাক্টিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ঈস্ট সংক্রমণ (ক্যানডিডা, মোনিলা)

কিভাবে ছড়ায়: যৌন সংসর্গে হতেও পারে নাও হতে পারে (এমনকি সমকামী মহিলাদের মধ্যে যৌন মিলনেও) ।

লক্ষণ কতদিনে দেখা যাবে: ঋতুস্রাবের আগের পরিবর্তনে; ঋতুস্রাব, জন্ম
নয়ন্ত্রণ, যৌন-মিলন, যোনির অভ্যন্তর ধোয়া, অন্যান্য রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক বা সংক্রমণের কারণে যখন যোনির অভ্যন্তরের পি এইচ ভারসাম্য এবং যোনির আবহ (ফ্লোরা) বদলে যায় ।

লক্ষণ: ৫০ শতাংশ মহিলার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। কারো যোনিস্রাব দুর্গন্ধযুক্ত হয়; কখনো চুলকানি হয়। ঈস্ট সংক্রমণের জন্যে থকথকে, গন্ধযুক্ত (পাঁউরুটি কারখানার আশেপাশে যা পাওয়া যায়) স্রাব হয়। চুলকায়, কখনো যোনি লাল হয়, ফুলে যায়। যৌন-মিলনের পরে দুর্গন্ধ হয় ।

পরীক্ষা/চিকিৎসা: যোনির স্যাম্পেলের পরীক্ষা; পি এইচ ভারসাম্য এবং গন্ধ
পরীক্ষা। ওষুধ - ট্যাবলেট বা যোনিতে লাগানোর ক্রিম ।

জটিলতা: গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাড়াতাড়ি গর্ভের জল ভেঙ্গে যাওয়া; আগে ব্যাথা ওঠা; সময়ের আগে সন্তানজন্ম; যৌন প্রণালীর সংক্রমণ বা অস্ত্রোপচারে পরে সমস্যা হতে পারে; চিকিত্সায় মহিলাদের উপকার হয় ।


সিফিলিস ও গর্ভাবস্থা

সিফিলিস সংক্রামিত মায়ের থেকে তাঁর গর্ভজ ভ্রুণে সংক্রমণ হতে পারে,
বিশেষ করে মায়ের সংক্রমণের প্রথম কয়েক বছরে। গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে চিকিৎসা করলে শিশুটির সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে। পরে ওষুধ খেলে সংক্রমণ থেমে যাবে কিন্তু শরীরের যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা যাবে না (শিশু বিকলাঙ্গ বা মৃত জন্মাতে পারে)। অন্তঃসত্বা হলে প্রত্যেক মহিলার সিফিলিসের জন্যে রক্ত পরীক্ষা করা উচিত (প্রসবের আগে এবং যে সময়ে তাঁর সংক্রমণ হয়েছিল)।


হার্পিস এবং গর্ভাবস্থা

নবজাত শিশুর শরীরে হার্পিস ভয়াবহ রোগ। যে মহিলার হার্পিস নেই তাঁদের হার্পিস-সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক করা উচিত্ নয়। আপনার হার্পিস সংক্রমণ হলে চিকিত্সককে জানান। প্রসবের সময়ে কাঁচা ঘা থাকলে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সাহায্যে জন্মদান বাÐনীয়। জন্মের পরে শিশুটিকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে সাবধান হতে হবে। ঘাগুলিকে স্পর্শ করবেন না এবং শিশুকে স্পর্শ করার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।