শিবরামের বিজ্ঞাপনটা আমি দেখেছিলাম, কেন
লেখার সময় অমন চমৎকার লাইনটা মনে পড়ে নি
- কে জানে! পরশুরামের লেখাটা আগে দেখেছি বলে
মনে পড়ছে না, তবে 'কালি' ছাড়া কালো রঙের প্রতি
আমাদের মনোভাব বেশ ঠাট্টার ছলে তুলে ধরেছেন।
এ দুটোই খোঁজ করে দেখার উপযুক্ত বিজ্ঞাপন।
স্বপন মাইতি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন -
বাথগেটের ক্যাস্টর অয়েল, সাধনা ঔষধালয়, সেন্ট
অগরু ও কান্তা, পলসনের মাখন, ম্যাকলীনের টুথপেস্ট,
টিনোপোল, টাটা-র ৫৫৫ সাবান, ডেবসনের মারফি
রেডিও, টস-এর চা ইত্যাদির কথা। এইসব বিজ্ঞাপন
সত্যিই এখন আর দেখা যায় না। সাধনা ঔষধালয়ের
বিজ্ঞাপন কিছু কিছু দেখা গেলেও প্রতিষ্ঠানটির
সেই রমরমা আর নেই। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের
সময় সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা যোগেশচন্দ্র
ঘোষ ৮৪ বছর বয়সে ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাদের
হাতে প্রাণ হারান। যোগেশচন্দ্র এক সময়ে জগন্নাথ
কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। রয়্যাল সোসাইটি অফ
কেমিস্ট্রির ফেলো এবং আমেরিক্যান কেমিক্যাল
সোসাইটির এই সদস্য পরে আয়ুর্বেদে আগ্রহী হন।
বিখ্যাত টুথ পাউডার সাধনা দশন থেকে শুরু করে
যৌনশক্তি বৃদ্ধিকারক (?) 'শ্রী গোপাল তেল''
এদেরই সৃষ্টি। সাধনা দশন এখনো বাংলা দেশে
ভালোই বিক্রি হয় বলে শুনেছি।
ঊষা
ফ্যানের নীচের বিজ্ঞাপনটি হয়তো এখনো কারো
কারো মনে থাকবে। বিজ্ঞাপনটি ঠিক কবে বার হয়েছিল
বলা মুশকিল । নিশ্চিত ভাবে শুধু এটুকু বলা
যায় ২১ বছরেরও আগে। ঊষা ফ্যান এখনো আছে, শুধু
১৮০-এ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড-এ দ্য জয় ইঞ্জিনিয়ারিং
ওয়ার্কস লিমিটেড-কে খুঁজতে গেলে হতাশ
হতে হবে। সেখানে গড়ে উঠেছে সাউথ সিটি মল।।
১৯৯৩ সালে কলকাতায় একের পর এক ফ্যক্টরি যখন
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে – তখন এটিও পাততাড়ি গোটায়।
২০০৩ সালে জায়গাটি হস্তান্তরিত করা হয় এবং
সাউথ সিটি গড়ে ওঠে। দ্য জয় ইঞ্জিনিয়্যারিং
ওয়ার্কস নিজের অস্তিত্ব হারায় ২০০৮ সালে
যখন শ্রীরাম গ্রুপের অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে
মিলিত হয়ে উষা ইণ্টারন্যাশেনাল লিমিটেড নাম
নেয়।
দ্বারকানাথ ঘোষ তাঁর বাদ্যযন্ত্রের
ব্যবসা শুরু করেছিলেন ১৮৭৫ সালে। বিদেশী কোম্পানি
টমাস ডোয়ার্কিন্স-এর কাছ থেকে প্যাডেল হারমোনিয়াম
ও অন্যান্য বাদ্য যন্ত্র এনে বিক্রি করতেন।
ওঁর কোম্পানির নাম প্রথমে ছিল ঘোষ এণ্ড কোং।
পরে সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্র কিশোর রায়
চৌধুরীর কথা মত দ্বারকানাথ কোম্পানির নাম
রেখেছিলেন ডোয়ার্কন এণ্ড সন। সাহেবী নামের
প্রতি দেশী লোকদের একটা মোহ আছে, বিক্রি হবে
ভাল।
১৮৮৪
সালে দ্বারকানাথ প্যাডেল হারমনিয়ামের সংস্কার
করে এ যুগের বক্স হারমোনিয়াম তৈরি করেন। সে
কালে আমাদের দেশে লোকেরা খাওয়াদাওয়া গানবাজনা
সব কিছুই করত হাঁটু মুড়ে বসে – চেয়ারে বসার
চল তেমন ছিল না । সুতরাং পায়ের প্যাডেলের
বদলে হাতে বেলো টিপে হারমোনিয়াম বাজাতে পারলে
গায়কদের যে সুবিধা হবে সেটা উনি বুঝতে পেরেছিলেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের দেশে লঘু সঙ্গীতের
জগতে বক্স বা হাত হারমনিয়ামের স্থান পাকা
হয়ে যায়। ডোয়ার্কিন এণ্ড সন-এর পদানুসরণ করে
আরও অনেক হারমোনিয়াম নির্মাতা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত
করেছেন। তাদের মধ্যে মেলোডি, পাকড়াশী এণ্ড
কোং এবং শরৎ সর্দার এণ্ড সন্স উল্লেখযোগ্য।
প্রসঙ্গত, বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ
ঘোষ ছিলেন দ্বারকানাথের পৌত্র।
কবেকার
বিজ্ঞাপন এটা? শুধু বলা যায় খুবই পুরনো। -
১৯৫৭ সালের আগে ।* সেই সময়ে স্কেল-চেঞ্জিং
হারমনিয়াম উদ্ভাবিত হয় নি।
(*১৯৫৭ সালে
ভারতে দশমিক পদ্ধতি চালু হয়। এক আনা সিকি
ইত্যাদি উঠে গিয়ে ‘নয়া’ পয়সা চালু হয়। ১০০
নয়া পয়সায় এক টাকা । ১৯৬৪ থেকে আর 'নয়া' কথাটা
ব্যবহার করা হত না । )
যে
কারণে দ্বারকানাথ নিজের কোম্পানির নাম দ্বারকানাথ
এণ্ড সন না রেখে ডোয়ার্কিন এণ্ড সন রেখেছিলেন,
সেই একই কারণে আশুতোষ ঘোষ নিজের চায়ের ব্যবসার
নাম রেখেছিলেন এ. টশ এণ্ড সন্স (ইণ্ডিয়া) লিমিটেড
। ছেলেবেলায় যখন টশের চা খেতাম - ভাবতাম বিলিতি
কোনও চা খাচ্ছি!