প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ধাঁধাবিদ্ স্যাম লয়েড

ধাঁধাজগতের একটা বৈশিষ্ট্য হল ধাঁধাসৃষ্টিকারদের খবর বিশেষ কেউ রাখে না। গল্প-কবিতার সঙ্গে লেখকদের নাম যুক্ত থাকে, কিন্তু ধাঁধার ক্ষেত্রে সে প্রচলন নেই। কিছু বিখ্যাত সমস্যার উদ্ভব কোথা থেকে হয়েছিল ধাঁধারসিকরা সেগুলো অবশ্য জানেন। কিন্তু ধাঁধাসাগরে এগুলো হল কয়েকটা মাত্র বিন্দু! এর প্রধান কারণ জোক্স বা প্রবাদের মত ধাঁধার প্রচারও প্রধানতঃ হয়েছে মুখেমুখে। ধাঁধার বিষয়বস্তুটাই সেখানে বড় কথা, রচয়িতা নয়। ধাঁধার বইয়ের লেখকরা অনেক সময়েই ধাঁধাগুলি নিজেরা বানান না; প্রচলিত ধাঁধার কাঠামোগুলোকে নিয়ে তাতে মালমশলা জুড়ে নতুন ভাবে সমস্যাটাকে পরিবেশন করেন মাত্র। তাই বিভিন্ন বইয়ে একই ধাঁধার নানান রূপভেদ প্রায়ই চোখে পড়ে। তার মানে এই নয় যে, নতুন ধাঁধা আর তৈরি হচ্ছে না। গত একশো বছরে বহু নতুন ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কিছু কিছু বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে। নতুন জনপ্রিয় ধাঁধার সৃষ্টিকার হিসেবে স্বল্প যেকজন ধাঁধাজগতে স্বীকৃতি পেয়েছেন তাঁদের মত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন আমেরিকার স্যাম লয়েড (Sam Loyd)।

স্যাম লয়েডের জন্ম হয় ১৮৪১ সালে। উনি পড়াশুনো করেছিলেন মাত্র হাই স্কুল পর্যন্ত। স্কুল শেষ করার আগেই ওঁর দাবা খেলায় নেশা ধরে গিয়েছিলো। সেই সময়ে আমেরিকাতে দাবা ছিলো খুব জনপ্রিয় খেলা। অনেক পত্রপত্রিকায় দাবার জন্য একটা আলাদা বিভাগ থাকতো। স্যাম লয়েড সেইসব বিভাগে লিখতেন। সাঁয়ত্রিশ বছর বয়সে দাবার বিভিন্ন চালের ওপর তিনি একটি বই লেখেন। বইটা বাজারে তখন খুব চলেছিল। আজকাল সেটি আর পাওয়া যায় না। দাবা খেলার ফাঁকে ফাঁকে স্যাম লয়েড ধাঁধা নিয়েও মাথা ঘামাতেন। তাঁর একটা ধাঁধার খেলা এক সময়ে খুব চলেছিল। লয়েড সেটি সৃষ্টি করেন কুড়ি বছরেরও কম বয়সে। এই ধাঁধার খেলা বিক্রি করে উনি নাকি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দশ হাজার ডলার রোজগার করেছিলেন! ধাঁধাটা কিন্তু খুবই সহজ, বলতে গেলে প্রায় ছেলেমানুষী! ছবিতে ধাঁধাটা দেখানো হয়েছে। তিনটে ছিন্ন লাইনের চৌকো বর্ডারের মধ্যে দুটো গাধা আর দুজন সওয়ার রয়েছে। বর্ডারগুলি যদি কাটা যায়, তাহলে তিনটি চতুর্ভুজ পাওয়া যাবে। এই তিনটে চতুর্ভজকে এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে দুজন সওয়ার দুটো গাধার উপর বসে। এর উত্তরটা এখানে আর দিলাম না। পাঠক নিজেরা চেষ্টা করে নিশ্চয় সেটা বার করতে পারবেন।

লয়েডের যে ধাঁধাটি গণিতজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, সেটি 'চোদ্দ-পনেরো' (১৪-১৫) বা 'বস' (Boss) নামে খ্যাত। ধাঁধাটি নিচে দেখানো হল। চারিদিক ঘেরা একটা বোর্ডে নম্বর লাগানো পনেরোটি চৌকো ঘুঁটি রাখা। চৌকোগুলি বোর্ডের ওপর পাশাপাশি সরানো চলে। খেলার প্রথমে সব নম্বরগুলিই পরপর সাজানো থাকে শুধু চোদ্দ আর পনেরো ছাড়া। সমস্যাটা হচ্ছে কী ভাবে চৌকোগুলো বোর্ড থেকে না তুলে, শুধু সরিয়ে সরিয়ে সব নম্বরগুলোকে পরপর আনা যাবে। লয়েড ঘোষণা করেছিলেন, কেউ ধাঁধাটা সমাধান করতে পারলে তাকে ১০০০ ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। টাকার লোভেই হোক বা নিছক আনন্দের খাতিরেই হোক, সে যুগে বহু লোক এর পেছনে বহু সময় ব্যয় করেছিল। স্যাম লয়েডের তাতে লাভ বই ক্ষতি হয় নি। বহু লোক ধাঁধার খেলনাটা কিনেছিলো, কিন্তু কেউই এটা সমাধান করতে পারে নি। পরে গণিতজ্ঞরা প্রমাণ করেছিলেন যে, এর সমাধান অসম্ভব! স্যাম লয়েড সেটা জানতেন কিনা, এবং জেনে থাকলে নিতান্ত চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে দুপয়সা কামানোর উদ্দেশ্যে পুরস্কারটা ঘোষণা করেছিলেন কিনা, ইতিহাস সে ব্যাপারে নীরব। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এই সমস্যার সমাধান সম্ভব কিনা সেটা নির্ভর করছে প্রথমে চৌকোগুলোর কি অবস্থান ছিলো তার ওপরে।

স্যাম লয়েড বোধহয় সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন 'গেট অফ্ফ দ্য আর্থ' (Get Off the Earth) প্যারাডক্সটি সৃষ্টি করে। এর পরপরই একই সূত্র ধরে তিনি 'টেডি এণ্ড দ্য লায়ন্স' (Teddy and the Lions) প্যারাডক্সটি তৈরী করেন। দুটোই সৃষ্টি করা হয়েছিলো একটা কার্ডবোর্ডের ভেতর গোল করে কেটে - সেখানে একটা চাকতি বসিয়ে। চাকতিটা এমন ভাবে বসানো হত যে, সেটা কার্ডবোর্ডের মধ্যে ঘুরতে পারে। গেট অফ্ফ দ্য আর্থ-এ স্যাম লয়েড চাকতি আর বোর্ডের উপর এঁকেছিলেন তলোয়ার হাতে টিকি-অলা কয়েকটি চৈনিক বীরদের ছবি। টেডি এণ্ড দ্য লায়ন-এ ছিল কয়েকটা সিংহ ও শিকারীর ছবি। ছবি হিসেবে সেগুলো আহামরি কিছু নয়, কিন্তু তাদের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। ছবিতে কজন চৈনিক বীর বা কটা শিকারী আর সিংহ আছে সেটা নির্ভর করবে চাকতি আর বোর্ডের পারস্পরিক অবস্থানের উপরে! গেট অফ্ফ দ্য আর্থ পাজ্ল-এ এক অবস্থায় দেখা যাবে বারোজন চৈনিক বীর (উপরের ছবি), কিন্তু চাকতিটা একটু ঘুরিয়ে দিলেই সেটা বেড়ে হয়ে যাবে তেরোজন (নিচের ছবি)! সেইরকম টেডি এণ্ড দ্য লায়ন-এ সাতটা সিংহ-সাতটা শিকারী চাকতি ঘুরে হয়ে যাবে আটটা সিংহ-ছটা শিকারী!

লয়েড নিতান্ত সাধারণ সমস্যাকেও আকর্ষণীয় গল্পের মোড়কে বেঁধে পরিবেশন করতে পারতেন। নিচের উদাহরণে দেখা যাবে যে, সাধারণ একটা অঙ্কের সমস্যাও লয়েডের হাতে পড়ে কেমন মজার হয়ে উঠতো! (স্থানাভাবের জন্য অনুবাদে অনেক স্বাধীনতা নেওয়া হয়েছে):

যুগ যুগ ধরে একটা বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে, শিক্ষার দুটো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অঙ্ক আর ইতিহাস। ছেলেবেলায় এইজন্যেই আমাকে হিউমের লেখা নয় ভল্যুমের ইংল্যাণ্ডের ইতিহাস দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল যে, বইগুলো পড়ে ফেললে পুরস্কার হিসেবে বন্দুক, ঘোড়া ও নানান খেলনা আমাকে দেওয়া হবে। আশাকরি ধাঁধারসিকরা ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করে আমাকে অপ্রস্তুত করবেন না, কারণ ও বিষয়ে আমার অজ্ঞতা অপরিসীম! কিন্তু একথা ঠিক যে, ইতিহাসের ঐ বিশাল খণ্ডগুলির ভিতর থেকে আমি কতগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য আবিষ্কার করেছিলাম। যেমন, যদি আমি বুক শেলফের ওপরের তাকে চারটি খণ্ড ও নিচের তাকে পাঁচটি খণ্ড রাখি, অর্থাত্ ৬৭২৯/১৩৪৫৮ হিসেবে সাজাই, তাহলে কাটাকুটি করে লেখা যায় ১/২। এইভাবে, প্রতিবারই সবকটা খণ্ডকে ব্যবহার করে যদি আমি তাক দুটোতে খণ্ডগুলি বিভিন্ন ভাবে সাজাই, তাহলে আমি ১/৩,১/৪, ১/৫, ১/৬, ১/৭, ১/৮, ১/৯ সংখ্যাগুলো পেতে পারি।

প্রশ্ন হল, কী ভাবে এটা সজানো সম্ভব? উত্তরের জন্য এখানে ক্লিক করুন।

সুজন দাশগুপ্ত

সূত্রঃ 'সত্য মিথ্যের গোলকধাঁধা' - সুজন দাশগুপ্ত(আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৮৯)

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।