কায়রো
, মিশর
- পর্ব - ২
কায়রোর আশে পাশে এবং
তাহেরির স্কোয়ার
আগেরবার কায়রো শহর
নিয়ে লিখে ছিলাম। এবার শহরতলীর কিছু জায়গা এবং
সেই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে তোলপাড় করা কায়রোর
তাহেরির স্কোয়ার নিয়ে কিছু বলবো।
কায়রো শহরের থেকে
একটু বাইরে বেরিয়ে এলে মরুভূমির আভাস পাওয়া
যায় (১ নং ছবি)। চার দিকে এবং রাস্তার ধারে
প্রচুর খেজুর গাছ আছে (২ ও ৩ নং ছবি)। এখানে
খেজুর একটা প্রধান এবং সুস্বাদু ফল। নানান রকম
ও নানান মাপের খেজুর এখানে হয়। এখানকার পাকা
ও শুকনো খেজুর রপ্তানিও হয়। মিশরে সামান্য পরিমাণ
আমও হয় (৪ নং ছবি)।
নীল নদের অপর দিকে
কিছু কল কারখানা আছে। সেখান থেকে দেখা যায় চওড়া
নীল নদের ওপারে কায়রো শহর। ৫ নং ছবিতে নীল নদ
আর কায়রো শহর দুটোকেই সুন্দর লাগছে – বিশেষ
করে নীল নদের নীল জল। কায়রোর শহরতলীতে ঘুরতে
ঘুরতে হঠাৎ দেখলাম ভারতে তৈরি বাজাজ অটো রিকশা।
ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না (৬ নং ছবি)।
শুনলাম ভারত থেকে অনেক অটো রিকশা এখানে রপ্তানি
হয়। ভারত থেকে এক সময় প্রচুর ট্রাক মিশরে আমদানি
হত।
এবার আসি তাহেরির
স্কোয়ারে যাবার পথে সালাহ সালেম রোডে দেখলাম
একটি “আধুনিক” মসজিদ (৭ নং ছবি)। মাত্র ২০ বছর
আগে তৈরি মসজিদটি পুলিশ মসজিদ নামে পরিচিত।
কারণ জায়গাটা স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ দপ্তরের অওতায়
পরে। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি ডোমের আকারে
মসজিদটি এখনও ঝকঝকে সুন্দর নতুনের মত আছে।
তাহেরির স্কোয়ার
আগে ইসমাইলীয়া স্কোয়ার হিসাবে পরিচিত ছিল। এই
স্কোয়ারটি ১৯১৯ সালে মিশরীয় বিপ্লবের পর লোক
মুখে তাহেরির (স্বাধীনতা) স্কোয়ার নামে পরিচিত
হয়। ১৯৫২ সালের মিশরীয় বিপ্লবের পর যখন মিশর
গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতান্ত্রিক
রাষ্ট্রে পরিণত হয় তখন সরকারি ভাবে তাহেরির
স্কোয়ার নামকরণ হয়। তাহেরির স্কোয়ার চিরকালই
বিপ্লব, বিক্ষোভ প্রদর্শন, প্রতিবাদ মিছিল ইত্যাদির
কেন্দ্র বিন্দু। ১৯৭৭ সালে মিশর খাদ্য দাঙ্গা
এখানেই শুরু হয়। আবার ২০০৩ সালের মার্চ মাসে
ইরাকের যুদ্ধের প্রতিবাদে বড় আকারের বিক্ষোভ
প্রদর্শন এখানেই হয়।
২০১১ সালের মিশরীয়
বিপ্লবের সময় তাহেরির স্কোয়ার আবার সারা বিশ্বের
আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি
হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে ২৫ সে জানুয়ারি তাহেরির
স্কোয়ারে ৫০,০০০ লোক হয়। ১ লা ফেব্রুয়ারির মধ্যে
বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীর সংখ্যা ৩০০,০০০ তে পৌঁছে
যায়। ২ সরা ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে
ওঠে। ১১ ই ফেব্রুয়ারি সামরিক কর্তৃপক্ষের উপদেশ
অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারক সমস্ত ক্ষমতা
সামরিক কাউন্সিল এবং সহ-রাষ্ট্রপতি ওমর সোলেমনের
হাতে তুলে দেন। ১৮ দিন পর বিক্ষোভকারিদের জয়
হয়।
আমরা ২০১২ সালের
মে মাসে যখন কায়রো যাই তখন বিক্ষোভের কোন চিহ্ন
ছিলনা। তবে নির্বাচন নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল।
(এর পর নীলনদ দিয়ে
অনেক জল বয়ে যাওয়ার আগেই রাজনৈতিক ডামাডোল আবার
শুরু হয়ে যায়। অবশেষে গত ২৯ শে জুন আবার তাহেরির
স্কোয়ারে জনতা রাষ্ট্রপতি মোহাম্মেদ মোরশির
বিরুদ্ধে জমায়েত শুরু হয়। এর পরদিনই বিক্ষোভ
প্রদর্শনকারীর সংখ্যা ১০০,০০০ হয়ে যায়। ৩ রা
জুলাই জেনারেল আব্দুল ফাতহ আল-সিসি রাষ্ট্রপতি
মোহাম্মেদ মোরশিকে অপসরণ করেন।)
বিশাল তাহেরির স্কোয়ারের
মাঝে আছে ট্রাফিক সার্কেল। এর চার দিকে আছে
বড় বড় অট্টালিকা, সরকারি ও বেসরকারি অফিস বাড়ী,
মিউজিয়াম, ধর্মীয় স্থান,হোটেল এবং কিছু দোকান
পাট (৮ নং ছবি)। প্রধান আকর্ষণের মধ্যে আছে
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কায়রো (৯ নং ছবি),
আরব লীগ অফিস – মোগাম্মা (১০ নং ছবি), আমেরিকান
ইউনিভার্সিটি (১১ নং ছবি)। এটা অনেক রাস্তার
সংযোগ স্থান যেমন – কাছার আল আয়নি, তালাত হার্ব
স্ট্রিট, কাছার আল নীল স্ট্রিট ইত্যাদি। লে-মেরিডিয়েন
হোটেলও (১২ নং ছবি) বেশী দূরে নয়।
খুব ব্যস্ত এই
স্কোয়ারের লোকজনের ব্যস্ত আনাগোনা লেগেই থাকে
(১৩ নং ছবি)। আবার এর মাঝেও শান্ত পরিবেশে অনেকে
চায়ের কাপ হাতে আড্ডা বসান (১০ নং ছবি)। আনেকে
আবার চটজলদি পাশ্চাত্য খাবারের জন্যে ভীর করেন
“কে এফ সি” তে (১৪ নং ছবি)। কায়রোতে ভবঘুরে
এবং ভিখারি প্রায় চোখেই পড়েনা। নোংরা যায়গাও
এখানে খুব কমই আছে।
নং
১ বালি আর মাটির পাহাড়
নং
২ খেজুর গাছের বন
নং ৩ রাস্তার ধারে খেজুর গাছের সারি
নং
৪ আম গাছে একটা ছোট্ট আম। মে মাসের গরমে মুকুল
ও গুটি ঝরে গেছে, একটাই কোন ক্রমে বেচে আছে।
নং
৫ নীল নদের ওপারে কায়রো শহর। নীল নদের নীল জল
দু চোখ ভরে দেখার মত।
নং
৬ ভারতে তৈরি অটো কায়রোর শহরতলীতে অনেক দেখা
জায়।
নং ৭ পুলিশ মসজিদ – আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আছে।
নং ৮ বিশাল এবং অসাধারণ তাহেরির স্কোয়ারের একটি
সাধারণ দৃশ্য
নং
৯ আকর্ষণীয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাইরো
নং
১০ আরব লীগ অফিস – মোগাম্মা। সামনে চায়ের সাথে
চলছে সান্ধ্য আড্ডা
নং
১১ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি। যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে
কাজ করে যাচ্ছে।
নং
১২ আধুনিক হোটেল লে-মেরিডিয়েন
নং ১৩ সন্ধ্যাবেলা ঘড়ে ফেরার লোকজনের ব্যস্ত
আনাগোনা।
নং ১৪ পাশ্চাত্য খাবারের আকর্ষণ “কে এফ সি”
বিমল
কুমার বসাক
আগের
অংশের জন্যে ক্লিক করুন...
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।