উটি - দ্বিতীয়
ভাগ
(আগের
অংশ) ঊটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত অনেক
কিছু আছে। আগের বার অল্প কিছু জায়গার কথা লিখেছি।
এবার আরও কিছু জায়গার বিবরণ দিচ্ছি।
উটি
লেক - যে জল ধারা উঁচু পাহাড়ের
থেকে উটি ভ্যালিতে নামে তা বাঁধ দিয়ে ধরে রেখে
এই উটি লেক তৈরি করা হয়েছে। উটির প্রথম কালেক্টর
জন সুল্লিভান ১৮২৪ সালে এই লেকটি তৈরি করান। তখন
উদ্দেশ্য ছিল মাছের চাষ। ১৯৭৩ সালে তামিলনাড়ু
পর্যটন বিভাগ এটি হাতে নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ
করার জন্যে বোটিং¬ –এর ব্যবস্থা করেন এবং এখানে
একটি বোট হাউস বানান হয় (ছবি নং ১২)।
নং
১২ – বোট হাউস - এখানে নানান রকম বোট ভাড়া পাওয়া
যায়।
এখানে
প্যাডেল বোট, রোঁ বোট এবং মোটর বোট ভাড়া পাওয়া
যায়। (ছবি নং ১৩ ও ১৪)।
নং
১৩ - প্যাডেল বোট নিয়ে পর্যটকরা লেকের জলে ঘোরা
ফেরা করছেন
নং
১৪ - এখানে চলছে দ্রুত গতির মোটর বোট
লেকের
চার দিকে আছে ইউক্যালিপটাস গাছের সারি। তার মধ্যে
চলছে মিনি ট্রেন। আরও আছে অ্যামিউসমেন্ট পার্ক
ও সুন্দর ক্যান্টিন। সব মিলিয়ে ছুটি কাটাতে আসা
পর্যটকদের কাছে এটি একটি সুন্দর আকর্ষণ।
সিমস
পার্ক - এটা বলতে গেলে পার্ক
ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের মিশ্রণ। উটির উপকণ্ঠে
কুন্নুরে প্রাকৃতিক ভূ-গঠন কাজে লাগিয়ে এটা তৈরি
করা হয়। ১৮৭৪ সালে জে ডি সিমস এবং মেজর মুড়য় এটি
তৈরি করান। প্রাকৃতিক ভাবে জন্মান গাছ, লতা, ঝোপ
ঝাড় ইত্যাদি অপরিবর্তিত রেখে এই বাগানের পরিকল্পনা
করা হয়েছে। পায়ে চলা রাস্তা ঘুরে ঘুরে অনেক নিচে
চলে গেছে অনেক সুন্দর সুন্দর গাছের পাশ দিয়ে।
পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান গাছ গাছড়া এনে এখানে
লাগান হয়েছে। এই সব গাছের মধ্যে আছে রুদ্রাক্ষ,
দারুচিনি, কাড়রই পাইন। দৃষ্টি নন্দন গাছের মধ্যে
আছে অরকেরিয়া, কোয়েরকাস, ফনিক্স, ম্যাগ্নোলিয়া,
পাইন, তার্পিন, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি (ছবি নং ১৫)।
নং
১৫ - সুন্দর করে সাজান সিমস পার্ক – পেছনে দেখা
যাচ্ছে অরকেরিয়া গাছ
আর
আছে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল গাছের বেড। তাতে আছে
বিভিন্ন প্রজাতির নানান রঙের সুন্দর ফুল (ছবি
নং ১৬, ১৭)। তবে এই পার্কের প্রধান ইভেন্ট হল
মে মাসে বার্ষিক সবজী ও ফলের প্রদর্শনী।
নং
১৬ - সুন্দর ফুলে মধু খেতে এসেছে মৌমাছি
নং
১৭ - অসাধারণ রঙের সুন্দর ফুল
বোটানিক্যাল
গার্ডেন - ২২ একর জমির ওপর উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন
তৈরি হয়েছিল ১৮৪৭ সালে। এখানেও মে মাসেই হয় বার্ষিক
ফুল ও দুষ্প্রাপ্য গাছের প্রদর্শনী। এখানে হাজার
রকম গাছের সংগ্রহ আছে। এর মধ্যে আছে বেশ কিছু
বনসাই। অবশ্য ২০ মিলিয়ন বছরের ফসিল হয়ে যাওয়া
গাছই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। তবে দুঃখের বিষয়
হল দুবার উটি গিয়েও আমার উটি বোটানিক্যাল গার্ডেনে
ঢোকা হয়নি। গেট (ছবি নং ১৮) থেকেই কোন বিশেষ কারণে
দুবারই ফিরে যেতে হয়েছে।
নং
১৮ - বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেট। এর ভিতরেই আছে
২০ মিলিয়ন বছরের গাছের ফসিল
অবশ্য
বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছাকাছি বাজারে এবং প্রধান
রাস্তায় অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। এখানে একটি সুন্দর
মজার ট্র্যাফিক আইল্যান্ড (ছবি নং ১৯) আছে।
নং
১৯ - অদ্ভুত দর্শন মজার ট্র্যাফিক আইল্যান্ড
এই
রাস্তায় অনেক ভাল ভাল খাবার হোটেল আছে। বাজার
এলাকায় এবং উটির অনেক জায়গায় হাতে তৈরি চকোলেট
পাওয়া যায় (ছবি নং ২০)। এগুলো যেমন নানান রকমের
হয়, খেতেও খুব সুস্বাদু।
নং
২০ - জিভে জল আনা হাতে তৈরি চকোলেট
রোজ
গার্ডেন – ভারতের সব থেকে
বড় রোজ গার্ডেন আছে উটিতেই। (ছবি নং ২১)।
নং
২১ - উটিতেই আছে ভারতের সব থেকে বড় রোজ গার্ডেন
এই
রোজ গার্ডেনটি ১৯৯৫ সালে ইনটার ন্যাশনাল পুষ্প
প্রদর্শনীর শত বর্ষ উপলক্ষে সরকারি রোজ গার্ডেন
হিসাবে ঘোষণা করা হয়। অবশ্য উটির ভিজয়নগরম এল্ক
হিলের ঢালে এই রোজ গার্ডেনটি অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা
করা হয় – ১৯১৯ সালে। এই স্থানটি সমুদ্র পৃষ্ঠ
থেকে উচ্চতা ২২০০ মিঃ। আগে কিছু দিন এটির নাম
ছিল জয়ললিথা রোজ গার্ডেন।
উটির
জল বায়ু গোলাপ চাষের খুব উপযুক্ত। তাই এখানে নানান
রকম গোলাপের চাষ হয়। এখানে ২০,০০০ বিভিন্ন রকমের
গোলাপ আছে, যার মধ্যে ২,৮০০ গোলাপ মানুষের তৈরি।
বিশেষ গোলাপের মধ্যে আছে টি রোজ, মিনিয়েচার রোজ,
পলিয়ান্থাস, পাপা-জেনা, ফ্লরিবুন্দা, রামব্লেয়ার,
ইয়াকিমউর ইত্যাদি। এছাড়া সবুজ ও কালো রঙের গোলাপও
আছে।
রোজ
গার্ডেনটি পাহাড়ের ঢালে ধাপে ধাপে বানান হয়েছে।
(ছবি নং ২২)।
নং
২২ - ধাপে ধাপে তৈরি গোলাপ বাগান
তা
ছাড়া আছে রোজ টানেল। গার্ডেনের ওপরে এক জাগায়
দাড়িয়ে সব ধাপ গুলো দেখা যায়। শেষের ধাপে দাড়িয়ে
উটি শহর টিও খুব সুন্দর দেখায়। (ছবি নং ২৩)।
নং
২৩ - গোলাপ বাগান শেষের ধাপে দাড়িয়ে দেখা সুন্দর
উটি শহর
দি
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ রোজ সোসাইটিজ ২০০৬ সালে
জাপানের ওসাকা শহরে এই গার্ডেনটিকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ
রোজ গার্ডেন হিসাবে “গার্ডেন অফ এক্সেলেন্স” পুরস্কারে
ভূষিত করেন। পৃথিবীর ৩৫ টি রোজ গার্ডেনর মধ্যে
এটি অন্যতম। তাই উটি এলে রোজ গার্ডেন দেখতে ভুলবেন
না যেন।
বিমল
কুমার বসাক