প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ

চেন্নাই থেকে উড়োজাহাজে চেপে পৌঁছে গেলাম রাবণ রাজার লঙ্কাপুরীর আজকের রাজধানী কলম্বোতে। এই সময়ে পর্যটকদের ভিড় একটু কম থাকে। মাসটা মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ। কলম্বো এয়ারপোর্ট থেকে ভোর হতেই আমাদের যাত্রা হল শুরু। গন্তব্য স্থান পিনাওয়ালা হাতির অনাথ আশ্রমের দিকে। দূরত্ব সব মিলিয়ে ৫৫-মাইল। হাওয়াই আড্ডা থেকে বেরিয়ে পথের দুপাশে একটানা নারকেল ও কলার বাগান। হাতির অনাথ আশ্রমটি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে আহত হাতিদের ও অনাথ যূথ-শাবকদের রাখার ও পরিচর্যা করে পালন করা হয়। সব মিলিয়ে ৬৫-টি বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্ক হাতির বাস। প্রায় ২৩-টি বাচ্চা এই আশ্রমে জন্মগ্রহণ করেছে। ওখানে হাতিদের দেখার সব থেকে ভাল সময় হল সকাল সাড়ে নটার থেকে দশটার মধ্যে। তখন ওদের খাওয়ার সময়। দশটা থেকে সাড়ে দশটা হল ওদের নদীতে স্নানের সময়, এবং দুপরে দুটো থেকে আড়াইটায় সবাই কাছের নদীতে স্নান সারতে যায়। সে দৃশ্য সত্যি দেখার মতন। নদীর পাড়ে পান্থশালা এবং খাবার জায়গা আছে। তবে এ সব ইউরোপ, আমেরিকান পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছে লঙ্কার টুরিজম সংস্থা।

 

ডামবুল গুম্ফা মন্দির (Dambulla Cave Temples) : এই জায়গার অপর নাম হল, “গোল্ডেন টেম্পলস ডামবুলের”। জায়গাটি কলম্বোর থেকে ১৪৮ কিঃমিঃ। ১৯৯১ সালে জায়গাটিকে World Heritage sight হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। Kandy-র থেকে ৭২ কিঃমিঃ উত্তরে। শ্রীলঙ্কার মধ্য ভাগে এই জায়গাটি। সমস্ত লঙ্কার মধ্যে এই মন্দিরগুলো ভীষণ ভালভাবে সংরক্ষিত। পাহাড়ের ১৬০-মিঃ ওপরে এই গুহা মন্দিরের অবস্থান। আজকে পর্যন্ত ৮০-টি গুহা মন্দির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখনকার সমস্ত মূর্তি ও দেয়ালে অঙ্কিত ছবি গৌতম বুদ্ধের জীবন এবং জীবনী অবলম্বনে। মোট ১৫৩-টি বুদ্ধের মূর্তি, ৩-টি শ্রীলংকার রাজাদের এবং ৪-টি ভাস্কর হিন্দু দেব-দেবীদের। এই সব ভাস্কর্য মোট ২,১০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে ছড়ান। এখানকার গুহা চিত্রগুলিতে গৌতম বুদ্ধকে ডাকিনী “মারা” যে ছলনা ও ষড়রিপুর লোভ দেখিয়ে তাঁর বোধিত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল সেই চিত্র অঙ্কিত আছে। বুদ্ধের সর্ব প্রথম বাণীর চিত্রও আছে।





অনুরাধাপুরা(Anuradhapura) :
পঞ্চম শতাব্দীর(বি/সি) থেকে দশম শতাব্দী(এ/ডি) পর্যন্ত এই শহরটি শ্রীলংকার সব থেকে উল্লেখনীয় রাজধানী ছিল। শহরটির উল্লেখনীয় দ্রষ্টব্য হল ডোগাবস(Dogabas), সেই যুগে এই ডোগাবাসগুলি ইট দিয়ে তৈরি, অর্ধগোলাকার বা বৃত্তাকার ভাবে তৈরি। ইহাদের মধ্যে রূবাণভিলিসিয়া(Ruvanveliseya) উল্লেখনীয়। স্থাপন করা হয়ে ছিল দ্বিতীয় শতাব্দীতে, ব্যাস ৩০০ ফুট। জেটাওয়ানারামা(Jetawanarama) ডোগবার ব্যাস ৩৭০ ফুট। থুপারামা ডোগবাটি গৌতম বুদ্ধের গলার হাড় বহন করে(Collarbone). বিখ্যাত বো-গাছ(বোধিসত্ত্ব গাছ), যার তলায় স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছিলেন, সেটিও এই শহরে আছে। গাছটি ২২৫০-বছর আগে রোপণ করা হয়েছিল, ভারতবর্ষ থেকে এটিকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর সব থেকে পুরাতন গাছ বলে এটিকে মান্যতা দেওয়া হয়।





লংকায় যে হিন্দু ধর্ম ছিল তার প্রমাণ, বুদ্ধ স্তূপের মধ্যে হিন্দু দেব-দেবীর মন্দিরও সহাবস্থান করছে। ধর্মের নামে বজ্জাতি এইখানে চোখে পড়ল না।


পোলোনারুয়া (Polonnaruwa)
: এটিও আর একটি World heritage site declared by UNESCO. এইটি শ্রীলংকার রাজধানী ছিল, ১১ থেকে ১৩ শতাব্দী পর্যন্ত। লঙ্কাতিলকে(Lankatilake), তিভাংকা(Tivanka) ও থুপারামা(Thuparama), এই তিনটি বৌদ্ধ স্তূপগুলি জগৎ বিখ্যাত তাদের ফ্রেসকো ও বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসাবে। এগুলি পোলোনারুওয়া(Polonnaruwa) রাজত্বকালে শ্রেষ্ঠ শিল্প নিদর্শন। রাণকোট বিহারা(Rankoth) এবং কিরীবিহারা(Kirivehera), হল সেই যুগে নির্মিত ও সংরক্ষিত দুটি বিশাল বৌদ্ধ স্তূপ। গল বিহার(Gal Vihare), একটি পাথরের মন্দির, যেখানে বোধিসত্ত্বকে চারটি রূপে পাওয়া যায়। এগুলি হল; দুটো পদ্মাসনে, একটি বিশ্রাম মুদ্রায় ও শেষটি মহানির্বাণ(শয়নে)। এখানে রাজা পরাক্রমবাহুর অপূর্ব একটি পাথরের মূর্তি আছে যেটা সেই যুগের স্থাপত্যর উৎকর্ষতাকে প্রমাণ করে। ভাতা-ডা-গে(vata-da-ge) অপর একটি সেই সময়ের লংকার স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এই রাজধানীটি বাহির এবং অন্দর পরিখার(Inner & Outer mote) দ্বারা পরিবেষ্টিত। রাজপ্রাসাদ, সভাগৃহ ও অন্যান্য গৃহগুলি আর একটি দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত করা ছিল।




 

সিগীরিয়া (Sigiriya) : এটি আর একটি Unesco World heritage Site. এটার আপর একটি নাম হল, ”Fortress in the Sky”. এটিকে অনায়াসে পৃথিবীর একটি অত্যাশ্চর্য স্থান বলা যেতে পারে। এটিকে আবার সিংহ চাটান (Lion Rock) ও বলা হয়। এই পাথরের চাটানটি ভূপৃষ্ঠের থেকে ৬০০ ফুট ওপরে। ইতিহাস বলে; তখনকার রাজা---------- তাঁর সৎ ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে নিজের রাজধানীটি এই অগম্য পাহাড়ের মাথায় তৈরি করিয়ে ছিলেন। ভূপৃষ্ঠের থেকে ডুলীতে করে হাতে টানা দড়ির কপিকলের সাহায্যে রাজধানী বাসিদের ওপরে তোলা হত। এর দেয়ালগুলি এতই খাড়া যে সেই দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠা প্রায় দুঃসাধ্য। এখন পরিভ্রমণ কারিদের জন্য স্থানে স্থানে ঝুলন্ত দড়ি ও লোহার সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪২২ সিঁড়ি পেরিয়ে তবেই আকাশের রাজধানীতে পা রাখা যায়। ব্যাপারটি অল্প বিস্তর কঠিন ও কষ্ট সাপেক্ষ। নিচের যাদুঘরে এই দ্রষ্টব্য স্থানটির মডেল রাখা আছে জনসাধারণের জন্য। সেই সময়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার সম্যক জ্ঞান ছিল। সেই ভাবেই পাহাড়ের মাথায় বৃষ্টির জল ধরে রেখে সমস্ত রাজ্যবাসীকে ব্যবহারের জল সরবরাহ করার জ্ঞানও সেই সময়ে ছিল। পাহাড়ের মাথায়, জাতি-ধর্ম সমন্বয়ের উদাহরণ সরূপ সিংহলী ফ্রেসকোর মধ্যে ২১-টি অপ্সরা, কিন্নরীদের দেখতে পাওয়া যায়।



ক্যান্ডি (Kandy)
: শ্রীলংকার এই পর্বত কন্যাটি অপর একটি “World Heritage Site”. ওলন্দাজ, ইংরাজ এবং পর্তুগীজ উপনিবেশের সময়ে এই শহরটি ছিল শেষ স্বাধীন দুর্গ সিংহলী রাজাদের। ১৮১৫ খৃষ্টাব্দে এই শহর ইংরাজরা কৌশল করে দখল নেয়। পৃথিবীর সমস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই শহর বিশেষ ভাবে পূজিত। কারণ, এই শহরের “দালাদা মালিগাওয়া” (Dalada Maligawa) মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের দাঁত সংরক্ষিত আছে। এখানকার স্নান গেহটি(Ulpenga) হ্রদের তীরে স্থাপিত। হ্রদের মধ্যের দ্বীপটিকে দুধ সাগর, “Kiri samudraya”( Milk white ocean) বলা হয়। গ্রীষ্মকালে রাজা-মহারাজারা এটাকে গ্রীষ্মাবাস হিসাবে ব্যাবহার করতেন। বর্তমানে শহরটি সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত।

 

ক্যান্ডির হোটেল


দালাদা মালীগাওয়া (Temple of Sacred Tooth Relic of Lord Buddha) :
চতুর্থ দশক(এ/ডি), যে সময়ে গৌতম বুদ্ধের মহা প্রয়াণের পর কলিঙ্গ রাজকন্যা বুদ্ধের একটি দাঁত চুলের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে আসেন এই শহরে এবং এই মন্দিরে তার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে বৌদ্ধদের মধ্যে সব থেকে পবিত্র পীঠস্থান এই মন্দির। প্রতি বছর এটিকে নিয়ে বিরাট শোভাযাত্রা বের হয়। দেশ-বিদেশ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দলে-দলে আসেন এই শোভাযাত্রায় যোগ দিতে।




নুওয়ারা এলিয়া (Nuwara Eliya) : এই শহরের অপর নাম Little England. আবহাওয়া চমৎকার। শ্রীলঙ্কার শৈলাবাস এটি। চারিদিকে চা-বাগান, ঝোরা, ছোট-ছোট পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই শহর। বিলেতের বসন্তের ঠাণ্ডা থাকে এখানে সারা বছর।



সুবীন দাশ

(পরের পাতা)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।