তাঞ্জিন – চীনের শিল্প নগরী (প্রথম ভাগ) 
আমার
অনেক দিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। তাই সুজন বাবুর
তাড়া খাওয়ার ভয়ে (তিনি অবশ্য এখনও তাড়া দেননি)
“ছবিতে ভ্রমণ” কোন জায়গা নিয়ে লিখব তাই ভাবছিলাম।
ফটোর গোছা খুঁজতে গিয়ে পেলাম চীনের শিল্প ও বন্দর
নগরী তিয়াঞ্জিন / তাঞ্জিন ভ্রমণের বেশ কিছু ছবি।
কয়েক বছর আগে কাজের তাগিদে এক বার খুব অল্প সময়ের
জন্যে আমাকে যেতে হয়েছিল এই শিল্প নগরী তিয়াঞ্জিনে।
তাই নিয়েই আজকের লেখা।
আমি
ব্যাংকক হয়ে বেজিং গিয়েছিলাম। ব্যাংককে ভোরে পৌঁছে
চার ঘণ্টার মত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ব্যাংকক বিমান
বন্দরটি বেশ বড় এবং সুন্দর। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
এক জায়গায় একটি বুদ্ধ মন্দির দেখে ফটো তোলার ইচ্ছে
হল – কিন্তু জানিনা ফটো তোলা বারণ কিনা। কিছুক্ষণ
পরে দেখলাম কয়েক জনকে ফটো তুলতে (ছবি নং ১)। আমিও
সাহস করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম। (ছবি
নং ২)।

ছবি
নং ১ - ব্যাংকক বিমান বন্দরের ভিতরে বুদ্ধ মন্দির
– অনেকেই দেখেন আর ছবি তোলেন।

ছবি নং ২ - ব্যাংকক
বিমান বন্দরের বুদ্ধ মন্দিরের ছবি আমিও তুললাম
বেজিং
বিমান বন্দরের কাছে যখন আমাদের বিমান পৌঁছল তখন
সেখানে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল ও রানওয়েতে জল জমে
গিয়েছিল। কাজেই আমাদের বিমান নামার আগে প্রায়
এক ঘণ্টা আকাশে ঘুরপাক খেল। বিমান বন্দরে দেখলাম
ভীষণ ভিড় – বিশেষ করে সুটকেস নেওয়ার জায়গায় ঠেলা
ঠেলি ধাক্কা ধাক্কি। তার উপর মহিলাদের অন্তহীন
তীক্ষ্ণ চিৎকারে কান ঝালা পালা হয়ে গেল।
আমার
ব্রিটিশ বন্ধু / বিশেষজ্ঞ আমার আধা ঘণ্টা আগেই
এসে স্থানীয় লোক (ড্রাইভার) এবং ছাতা নিয়ে অপেক্ষা
করছিলেন। বিমান বন্দর থেকে বেড়িয়ে আমরা সঙ্গে
সঙ্গে গাড়ী করে রওনা হয়ে গেলাম তাঞ্জিনের উদ্দেশে।
বৃষ্টিও থেমে গেল। বেশ চওড়া এবং সুন্দর রাস্তা।
(ছবি নং ৩)।

ছবি
নং ৩ - বেজিং বিমান বন্দর থেকে তাঞ্জিন যাওয়ার
হাইওয়ে
একটা
জিনিষ লক্ষ্য করা গেল যে সাইনবোর্ডের লেখা গুলো
চীনা ভাষায় কিন্তু নম্বর গুলো ইংরেজিতে লেখা।
বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বাঁদিকে দেখলাম একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল
এস্টেট ও ফ্রি ট্রেডিং জোন। (ছবি নং ৪ ও ৫)। আমরা
দু ঘণ্টার মধ্যে তাঞ্জিন পৌঁছে গেলাম।

ছবি
নং ৪ - হাইওয়ে ধরে খানিকটা এগিয়ে গেলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল
এস্টেট ও ফ্রি ট্রেডিং জোন

ছবি
নং ৫ - ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের প্রবেশ পথ
তাঞ্জিন চীনের চতুর্থ বৃহত্তম শহর – সাংহাই, বেজিং
ও গুয়াংযহউর পরেই। তাঞ্জিন থেকে বেজিং উত্তর-পশ্চিমে
মাত্র ১২০ কিঃ মিঃ দূরে। তাঞ্জিন উত্তর চীনে বোহাই
উপসাগরের পশ্চিম পাড়ে হাই নদীর তীরে একটি বন্দর
শহর। পীত সাগরের পশ্চিম দিকে বোহাই উপসাগরের ওপারে
আছে স্যানডং আর লিয়াওনিং। (প্রসঙ্গত বলে রাখি
স্যানডং প্রদেশের একটি বিখ্যাত রেসিপি হল চিলী
অয়েল দিয়ে রান্না করা চিকেন বা পটাটো স্যানডং)।
হাই নদী কয়েকটি নদীর মিলিত স্রোত হিসাবে তাঞ্জিন
থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পরেছে। ৬ নং ছবিতে
যে জলস্রোত দেখা যাচ্ছে তা তাঞ্জিন বন্দরের দিকে
চলে গেছে। দূরে দেখা যাচ্ছে “ইওলো ব্রিজ”। তার
উপর “তাঞ্জিন আই” যা রাত্রি বেলা খুব সুন্দর দেখায়।
(ছবি নং ৭)।

ছবি নং ৬ - হাই নদী

ছবি
নং ৭ - “তাঞ্জিন আই” রাতের আলোতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
(ছবিটা ধার করা)
সুই
রাজ বংশের রাজত্ব কালে যখন “গ্র্যান্ড ক্যানেল”
খুলে যায় তখন থেকেই তাঞ্জিন একটা বাণিজ্য কেন্দ্র।
সাম্প্রতিক কালে পৃথিবীর ‘ফরচুন ৫০০’ কোম্পানির
মধ্যে ২৮৫ কোম্পানি তাঞ্জিন আর তার আশে পাশে তাদের
অফিস বা কারখানা তৈরি করেন। (৮ নং ছবিতে দেখা
যাচ্ছে বন্দরের কিছু অংশ এবং বর বর অফিস বাড়ী)
তাই তাঞ্জিন – শিল্প নগরী ও বন্দর নগরীকে চীনের
রাজধানীর প্রবেশ পথ হিসাবে গণ্য করা হয়।

ছবি নং ৮ - বন্দরের কিছু অংশ এবং বর বর অফিস বাড়ী
প্রথম
দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় বিশেষ কাজ ছিলনা। হোটেলের
কাছেই একটা মার্কেটে গেলাম টুকি টাকি সুভেনির
কিনতে। সেখানে অনেক ছোট ছোট সুন্দর দোকান আছে
এই ধরনের জিনিষ কেনার জন্যে। (ছবি নং ৯)।

ছবি
নং ৯ - সুভেনিরের ছোট সুন্দর দোকান
কিছু দিন পরেই বেজিং অলিম্পিক তাই অলিম্পিকের
ম্যাসকট আঁকা কাগজের পাখা এবং এক সেট ছোট চীনা
পুতুল কিনলাম (ছবি নং ১০)। ফেরার পথে পুলিশ আমাদের
গাড়ী আটকাল। (ছবি নং ১১)। আমি একটু হক চকিয়ে গেছিলাম।
পুলিশ ড্রাইভারের অ্যালকোহল টেস্ট করল এবং কিছু
না পেয়ে ছেড়ে দিল। শুনলাম এখানে অনেকে মদ্যপ অবস্থায়
গাড়ী চালান। তাই এই ব্যবস্থা।

ছবি নং ১০ – অলিম্পিকের ম্যাসকট আঁকা কাগজের পাখা

ছবি
নং ১১ - সন্ধ্যার পর পুলিশ আমাদের গাড়ী আটকে ড্রাইভারের
অ্যালকোহল টেস্ট করল
আমাদের
হোস্ট সন্ধ্যার একটু পরেই হোটেলে ডিনারের জন্য
নিয়ে গেলেন। অনেক মুখরোচক চীনা খাবার খাওয়া হল
যার মধ্যে কিছু চেনা আবার কিছু অচেনা। কুক একটা
জ্যান্ত মাছ, অনেকটা ভেটকি মাছের মত কিন্তু কাল
রঙের, দেখিয়ে নিয়ে গেল এবং মিনিট দশেকের মধ্যেই
রান্না করে পাঠিয়ে দিল। মশলা পাতি কম কিন্তু খেতে
বেশ ভাল।
প্রথম দিনটা বেশ ভালই কাটল। আগের দিন রাতে যেহেতু
ঘুম হয়নি তাই ঘুমও বেশ ভালই হল। পরের দিন গুলো
সম্বন্ধে পরের বার লিখব।
বিমল
কুমার বসাক
তাঞ্জিন
– চীনের শিল্প নগরী (দ্বিতীয় ভাগ)