তাঞ্জিন – চীনের শিল্প নগরী (দ্বিতীয় ভাগ) (প্রথম
ভাগ)
দেশটা
চীন বলেই আমরা যে কারখানায় গিয়েছিলাম তার সম্বন্ধে
কিছু বলব। এটি একটি ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) ঢালাই
কারখানা (ফাউন্ড্রি)- ২০ একরের ওপর জায়গা নিয়ে
তৈরি। তাঞ্জিন থেকে গাড়ীতে এক ঘণ্টার রাস্তা।
মালিক ৬৫ বছর বয়সে এই কারখানাটি শুরু করেন। ইদানীং
চীনে ব্যক্তিগত মালিকানার সংস্থাগুলিকে সরকার
উৎসাহ দিচ্ছে। এখানে কয়েক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী
কাজ করেন – ৩ শিফটে কাজ হয়। হাজারের ওপর শ্রমিক
কারখানার মধ্যেই থাকেন এবং সপ্তাহান্তে বাড়ী যান।
তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কারখানা থেকেই করা
হয়। এদের যে সমস্যার ব্যাপারে আমাদের যাওয়া সেটা
হল বায়ু দূষণ যা লোহা গলাবার সময় হয়ে থাকে।
লোহা
কিউপোলাতে গলাবার জন্যে কোক ব্যবহার করা হয় ।
ফলে প্রচুর ধোয়া এবং বায়ু দূষণ হয় যা থেকে শ্রমিকদের
স্বাস্থ্য হানি এবং অন্যান্য অসুবিধা দেখা দেয়।
আমাদের যাওয়ার কারণ ছিল সেখানে কোক বিহীন কিউপোলার
ব্যাপারে আলোচনা করা। এই কোক বিহীন কিউপোলা কোকের
বদলে প্রাকৃতিক গ্যাসে চলে তাই এতে ধোয়া হয়না
এবং বায়ু দূষণের পরিমাণ খুব খুব কম হয়। শ্রমিকদের
স্বাস্থ্যের কারণেই মালিক এই ব্যবস্থার কথা ভাবছিলেন
কোন সরকারি অনুশাসনের জন নয়।
ওদের
জেনারেল ম্যানেজার আমাদের যখন ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন
তখন একজন ছুটতে ছুটতে এসে কি একটা জিজ্ঞেস করলেন।
পরে বুঝলাম উনি ওখানকার সেফ এবং জানতে চাইলেন
আমরা সব খাই নাকি খালি নিরামিষ খাই। আমরা আমিষ
নিরামিষ সব খাই উনি আস্বস্ত হয়ে চলে গেলেন (ছবি
নং ১২)।

ছবি নং ১২ সুন্দর
চকচকে ঢালাই কারখানা, সেফ খাবারের কথা জিগ্যেস
করে চলে গেলেন
পরে খাওয়ার সময় বুঝলাম উনি খুব ভাল সেফ। দুপুরে
খাওয়ার সময় আমাদের দেয়া হল একটি সুন্দর বাক্স
– যাকে বলে বেন্টো বক্স। তার উপর সুন্দর চীনামাটির
ঘটি ভর্তি সুপ। পাশে চপ স্টিক ও কাঁটা চামচ দুইই
ছিল। আর ছিল হাল্কা চা আর শুধু আমাদের জন্যে ঠাণ্ডা
মিনারেল ওয়াটার। চীনারা ঠাণ্ডা জলের বদলে হাল্কা
গরম চা খান যা নাকি হজমে সাহায্য করে। বেন্টো
বক্সে খোপে খোপে নানা রকম খাবার সাজান ছিল (ছবি
নং ১৩)।

ছবি
নং ১৩ বেন্টো বক্সে- খোপে খোপে নানা রকম খাবার
সাজান
অনেক রকম খাবারের মধ্যে ছিল দলা ভাত, সুষির মত
কিছু, টফু, খুব পাতলা করে কাটা মাছ (খুব সম্ভবত
কাঁচা ও ম্যারিনেট করা) যা খেতে ভালই লাগল।
দুদিন
খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটল। শেষদিন সকালে দু-তিন
ঘণ্টা সময় হাতে পেলাম। সকালে হোটেলের এক তলায়
রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে রাস্তার লোকজনের
ব্যস্ততা দেখছিলাম। (ছবি নং ১৪)।

ছবি
নং ১৪ সকালে অফিসের সময় রাস্তায় লোকজনের ব্যস্ততা
কেউ কেউ ট্যাক্সি ধরছিলেন। এখানকার ট্যাক্সি গুলো
লাল রঙের। (ছবি নং ১৫)।

ছবি নং ১৫ চীনের লাল রঙের ট্যাক্সি
লক্ষ্য করে দেখলাম ফুটপাথে ট্রলিতে গাড়ী সারানোর
যন্ত্রপাতি নিয়ে একজন রেডি হয়ে আছে সম্ভবত ট্যাক্সি
ওয়ালাদের জন্যে। ব্রেকফাস্টের পর পায়ে হেটেই বেরিয়ে
পরলাম। হোটেলের একজন বললেন কাছেই এশিয়ান মার্কেটে
যেতে। তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রির আশে পাশে ছিল, কাজেই
হাটতে কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। যাওয়ার পথে দেখা
গেল একটা ছোট মন্দির যেখানে অনেক লোক যাতায়াত
করছিলেন। (ছবি নং ১৬)।

ছবি নং ১৬ একটা ছোট্ট মন্দির
এশিয়ান
মার্কেট অনেকটা আমাদের গড়িয়াহাটের মত। এখানে অনেক
ছোট সুন্দর দোকান আছে। (ছবি নং ১৭)।

ছবি নং ১৭ এশিয়ান মার্কেটে ছোট সুন্দর দোকানের
সারি
একটা
দোকান তখনো খোলেনি -দেখা গেল সুন্দর নকসা আর রঙ
করা প্রবেশ পথ। (ছবি নং ১৮)।

ছবি
নং ১৮ একটি দোকানের প্রবেশ পথ - সুন্দর নকসা কাটা
আর রঙ করা
এখানে
দেখা গেল ফুটপাথে একজন দোকান সাজিয়েছে চীনের পুরনো
নকশা কাটা পিতলের ছোট খাট জিনিষ দিয়ে। (ছবি নং
১৯)। আমি

ছবি নং ১৯ ফুটপাথের দোকান- চীনের পুরনো নকশা কাটা
পিতলের ছোট খাট জিনিষ
একটা
চীনের পুরানো ফুটো ওয়ালা চৌকো মুদ্রা কিনলাম।
এটা নাকি সৌভাগ্য ডেকে আনবে।
রাস্তায়
দেখা গেল সাইকেলের জন্য বেশ চওড়া আলাদা লেন করা
আছে যেখানে গাড়ী ইত্যাদি চলা বারণ। (ছবি নং ২০)।

ছবি
নং ২০ রাস্তায় সাইকেলের জন্য বেশ চওড়া আলাদা লেন
এটা খুব ভাল ব্যবস্থা। কাছাকাছি একটা বাড়ী দেখে
চমকে উঠলাম। বাড়ীটি জাহাজের পালের আকৃতিতে তৈরি
দুবাইয়ের বিখ্যাত হোটেলের হুবহু নকল। (ছবি নং
২১)। যাহোক দেখতে বেশ লাগলো।

ছবি নং ২১ জাহাজের পালের আকৃতিতে তৈরি দুবাইয়ের
বিখ্যাত হোটেলের মত একটা বাড়ী
পৃথিবীর
অনেক দেশের মত চীনেও কে এফ সি (KFC) বেশ জনপ্রিয়।
(ছবি নং ২২)।

ছবি
নং ২২ KFC – র খাবার দোকান তাঞ্জিনেও আছে
ঢোকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হাতে সময় ছিলনা। কে এফ
সি -র সামনের ফুটপাথে অনেক দোকান ছিল ঠিক আমাদের
দেশের মত। দোকানদাররা অনেকেই ইংরেজি জানেনা কিন্তু
অদ্ভুত কায়দায় বিদেশিদের সঙ্গে দরাদরি করে। মোবাইল
ফোন বা ক্যালকুলেটরে দামটা (বারিয়ে) লিখে খদ্দেরের
হাতে দেয় তার মতামতের জন্যে। খদ্দের আবার দামটা
কমিয়ে লিখে দোকানদারের হাতে ফেরত দেয়। এই ভাবে
অনেকবার নো নো হতে হতে শেষে ইয়েস হয়। এই মজার
খেলাটা আমিও একবার খেললাম।
দেখতে
দেখতে ফেরার সময় হয়ে এলো। আমাদের হোস্টের পাঠান
গাড়ীতে আমরা বেইজিং পৌঁছে গেলাম। যদিও বেইজিং
এর প্রবেশ পথে একটু যানজট হয়েছিল(ছবি নং ২৩) কিন্তু
আমরা যথেষ্ট সময় থাকতেই বেইজিং বিমান বন্দরে এসে
পৌঁছলাম।

ছবি
নং ২৩ বেইজিং এর প্রবেশ পথে যানজট
আপসোস
রয়ে গেল – সময়ের অভাবে বেইজিং ও চীনের প্রাচীর
দেখা হলনা।
বিমল
কুমার বসাক