বাংলাদেশে
দু সপ্তাহ

৪।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া -- ভাষা ও রাজনীতি
বাংলাদেশী
স্বত্বার দুটি প্রধান অঙ্গ -- ধর্ম ও ভাষা। সত্যি বলতে কি
বলা যেতেই পারে যে অধুনা বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে মুখ্যত:
ভাষা।
ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয় ভারতবর্ষ
এবং পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্রে। সেই সময় অধুনা বাংলাদেশের
তৎকালীন অধিবাসীদের অধিকাংশরাই ধর্মীয় সত্ত্বাকে প্রাধান্য
দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পাকিস্তানে যোগ দেয়। তখন ভাষাভিত্তিক
সত্ত্বাটা সাময়িকভাবে গৌণ হয়ে গেলেও খুব শীগগিরই সেটা মাথা
চাড়া দিতে শুরু করে। ১৯৪৮-এর ফেব্রুয়ারিতে ঘটে এক ঐতিহাসিক
ঘটনা। করাচীতে পাকিস্তানের কনস্টিটিউয়েন্ট এসেমব্লির সভায়
সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বক্তৃতা দিতে উঠে প্রস্তাব রাখেন
যেন উর্দুর সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া
হয়। সে প্রস্তাব সেখানে গ্রাহ্য না হলেও পূর্ব পাকিস্তানে
ভাষা আন্দোলন ক্রমশ: জোরদার হতে থাকে, যার চূড়ান্ত পরিণতি
হয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসে। সেইদিন ভাষা
আন্দোলনের সমর্থক কিছু ছাত্রর মৃত্যু হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটির
চত্বরে পুলিশের গুলিতে। ওই শহীদদের জীবনদান বাংলাদেশে প্রতি
একুশে ফেব্রুয়ারি সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করা হয় ভাষা দিবস হিসেবে।
বাংলাভাষাকে উপযুক্ত মর্যাদা এবং স্বীকৃতি দেবার দাবীতে যে
আন্দোলন, তার স্ফুলিঙ্গ থেকে শুরু হয় দাবানল -- যার ফলশ্রুতি
হল পাকিস্তানের বিভাজন ও বাংলাদেশের সৃষ্টি। রাষ্ট্রসঙ্ঘ কয়েক
বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” বলে
অভিহিত করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
একটি পার্ক এখন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
এ বছর ভাষা
দিবসের দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। সেদিনের শুরুতে মধ্যরাত্রে প্রবল
নিরাপত্তার ভেতর ঢাকা ইউনিভার্সিটির কাছে শহীদ মিনারে সে দেশের
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা
মৃতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অর্ঘ্য স্থাপন করলেন।
বিশেষ প্রবেশানুমতির টিকিট না থাকলে সামনে যাওয়া অসম্ভব বলে
আমি ব্যাপারটা টেলিভিশনে দেখাটাই মনস্থ করলাম। আর সেদিন বিকেলে
গেলাম তিতাস নদীর ধারের ছোট শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। (অদ্বৈত
মল্লবর্মণ এবং পরে ঋত্বিক ঘটক অবশ্যই তিতাসকে বিখ্যাত করে
দিয়েছেন।

বিখ্যাত
তিতাস নদী ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
নদীতে দেখলাম
শুষ্ক বালুরাশি নয়, বেশ জল রয়েছে। একটা মন্দিরের পেছনে পাথুরে
বাঁধের ওপর খানিক হাঁটাচলাও করা গেল।) যাত্রার উপলক্ষ ছিল
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে একটি পার্ক উৎসর্গ করার কারণে
যে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে সেটিতে যোগদান করা। (ধীরেন বাবু ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলার লোক ছিলেন এবং সেখানেই প্রয়াত বা শহীদ হন বাংলাদেশ যুদ্ধের
সময় খান সেনাদের হাতে।) যে পার্কটি ধীরেন বাবুর নামে চিহ্নিত
হল, সেটিতে সেসময় বইমেলাও চলছিল। সভায় স্থানীয় গণ্যমান্যরা
অনেকেই এসেছিলেন। তাদের বক্তৃতা থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে
ভাষার প্রতি বাংলাদেশীদের আনুগত্য ও ভালবাসা সম্পূর্ণ নির্ভেজাল।
বাংলাদেশীরা যেভাবে অনেকাংশে ইংরেজি শব্দ বিবর্জিত শুদ্ধ বাংলায়
কথা বলে, সে দৃষ্টান্ত পশ্চিমবঙ্গে বিরল। মনে হল তারা যেন
ভাষাকে আরো সমৃদ্ধিশালী করে তুলেছে অনেক আধুনিক যুগ ও ভাবধারা
ব্যক্ত করার পক্ষে প্রয়োজনীয় বিদেশী শব্দের প্রতিশব্দ তৈরি
করে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়ত বাড়াবাড়িতে গিয়ে ঠেকেছে
– যেমন ধরুন সমস্ত গাড়ী, লরি ও অটোরিক্সার লাইসেন্স প্লেটে
বাংলা সংখ্যার ব্যবহার – যেটা বিদেশী পর্যটকের পক্ষে অবশ্যই
অসুবিধাজনক। তবু সব দেখে ও শুনে মনে হল যেন তাদের প্রিয় বাংলাভাষার
ব্যাপারে বাংলাদেশীরা কোন আপোষে আসতে রাজি নয়।

শহীদ
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর উদবোধনের উপলক্ষে সভা ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

শহীদ
দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস বইমেলা ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
৫। চট্টগ্রাম ও কক্সের বাজার – বিপ্লব
এবং বিশ্রাম
বাংলাদেশ
ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে আমি গিয়ে পৌঁছলাম প্রথমে সেদেশের দক্ষিণ-পূর্ব
প্রান্তের শহর চট্টগ্রামে এবং তারপর সেখান থেকে আরো দক্ষিণে
দেশের শেষপ্রান্তে বঙ্গোপসাগরের উপকূলস্থ ছুটি কাটানোর শহর
কক্সের বাজারে।

চট্টগ্রাম
যাবার পথে ... ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

চট্টগ্রাম
শহরের একটি দৃশ্য ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং মুখ্য নৌবন্দর। কিছুদিন
আগে পর্যন্ত এটি ছিল বাংলাদেশের নৌবাহিনীর সদর দপ্তর; কিন্তু
কয়েক বছর আগে পলিটিকাল কারণে সদর দপ্তর সরিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া
হয়। শহরটির অবস্থান অতি চমৎকার – একদিকে ঢালু পাহাড় ও অন্যদিকে
বঙ্গোপসাগরের জল। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে পথে পড়ে বন্দর
অঞ্চলে পুরনো জাহাজের ভগ্নাবশেষ স্তূপ করে রাখা। সেগুলো ব্যবহার
করা হয় লোহা-লক্কড়ের (স্ক্র্যাপ মেটালের) নানাবিধ কারখানায়।
পথে অন্যান্য কল-কারখানাও চোখে পড়ল; মনে হল যেন তাঁতশিল্প
ও সি এন জি বাদ দিলে ওই এলাকাটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং
গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল।

চট্টগ্রামে
মেয়েদের একটি বিখ্যাত স্কুল ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
চট্টগ্রাম
অনেক ব্যাপারেই একটু অন্য ধরণের ও বিশেষত্বময়। তার মধ্যে একটি
হল কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের
ইতিহাস। অধুনাকালে তার সবচেয়ে বিখ্যাত নজির হল ব্রিটিশ আমলে
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামীরা (বা ইংরেজদের ভাষায় সন্ত্রাসবাদীরা) শহরের দুটো
অস্ত্রাগারকে আক্রমণ করে কিছু সময়ের জন্য তাদের করায়ত্ত করে।
তার দুবছর পরে এক তেজস্বী বঙ্গবালা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রামের
তৎকালীন ইউরোপীয়ান ক্লাবে একজন ইংরেজকে গুলি করে মেরে নিজে
পাশের মাঠে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সে ঘটনার স্মৃতি আজো
বহন করে তার নামে করা ছোট পার্ক ও স্মৃতিফলক। (ইউরোপীয়ান ক্লাব
এখন একটি গভর্নমেন্ট অফিসে পর্যবসিত হয়েছে।) সে সব ঘটনার প্রায়
চল্লিশ বছর পরে ১৯৭১ সালে সেই চট্টগ্রাম থেকেই জিয়া-উর-রহমান
শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসনের কবল থেকে। সেই ঘোষণাস্থলে একটি স্মৃতিসৌধ
গড়ে দেওয়া হয়েছে ইতিহাস মনে রাখার জন্যে।

চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশগ্রহণকারী স্বাধীনতাসংগ্রামী
বিনোদবিহারী চৌধুরী (১০০+) ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
চট্টগ্রামের
অন্য লক্ষণীয় বিষয় বিভিন্ন ধর্মের সমাবেশ এবং সহাবস্থান। ইসলাম
অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম। যে আউলিয়ারা ওখানে ধর্মপ্রচার
করতে এসেছিলেন – যেমন হজরত গরিবুল্লাহ শাহ – তাদের মাজার বিশেষ
দ্রষ্টব্য স্থান। অনেক বড়রাস্তার মোড়ে তাদের দিকনির্ণয় চিহ্ন
দেওয়া আছে। কিন্তু এই শহরেই একটি ছোট পাহাড়ের ওপরে আছে স্থানীয়
হিন্দুদের পরমারাধ্যা দেবী চট্টেশ্বরীর মন্দির। আর শহরের মধ্যে
রয়েছে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহার। ১৮৮৯-এ তৈরি এই বিহারটি চাকমা
উপজাতি এবং অন্যান্য বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন মেটাতে অপরিসীম
সাহায্য করে।

চট্টগ্রাম
বৌদ্ধবিহারের প্রবেশদ্বার ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
ভাষার সাথে সাথে জাতিগত সংমিশ্রণও ঘটেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রর পার্শ্ববর্তী সমতলভূমির বাঙ্গালীরা এখানে
এসে পাশাপাশি বাস করছে রাঙ্গামাটির পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন
উপজাতির সঙ্গে। আরো রয়েছে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব এলাকা (ত্রিপুরা,
মণিপুর) থেকে আগত উপজাতিরা। এছাড়া গত কয়েক শতাব্দী আগে এখানে
জলদস্যুর প্রকোপ ছিল মারাত্মক। প্রধানত: পর্তুগীজদের ও বর্মার
(অধুনা মায়ানমারের) আরাকান প্রদেশী মগদের। এই নানাবিধ সংমিশ্রণ
থেকেই উদ্ভূত হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা, যা বুঝতে পারা
বাংলার অন্যান্য প্রান্তের লোকের পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

কক্সের
বাজারের কাছে জলাজমিতে লোকে মাছ ধরছে ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

কক্সের
বাজারের সমুদ্রতট ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

কক্সের
বাজারের সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
আমার বাংলাদেশ
ভ্রমণ শেষ হল কক্সের বাজারে গিয়ে। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ
প্রান্তের কাছে সমুদ্র উপকূলের ওপর একটি বিশ্রামের ও অবসর
কাটানোর জায়গা। কক্সের বাজারের চওড়া আর শ্বেতশুভ্র বালুর তটদেশ
প্রকৃতই দেখবার মত। শহরটা মনে হল ক্রমশই টুরিস্টদের কাছে আকর্ষণীয়
হয়ে উঠছে, যার প্রমাণ চারিধারে বহুতল হোটেল তৈরির ঘনঘটা। ওখানে
যত ব্যবসায়িক জায়গায় “এখানে আমেরিকান এক্সপ্রেস নেওয়া হয়”
লেখা আছে, সারা বাংলাদেশ ঘুরে অন্যত্র কোথাও সেরকমটি দেখেছি
বলে মনে পড়ল না। পরিষ্কার বোঝা গেল যে কক্সের বাজার বিশেষ
করে বিত্তশালী এবং বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায়। শহরটির
একটি বিশেষ আকর্ষণ “বীচে”র পাশের রেস্টুরেন্টগুলোয় জিভে জল
ঝরানো রান্না করা নানারকম সামুদ্রিক মাছের পদ।

“বীচে”র
পাশের রেস্টুরেন্টগুলো ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

ডিনার খেতে গেলাম একটি সমুদ্রতটস্থ রেস্টুরেন্টে
ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
বিকেল গড়ালে
আমি ও আমার স্ত্রী বাংলাদেশী আশী টাকা দিয়ে দুটি বড় ছাতা (বীচ
আম্ব্রেলা) ভাড়া করলাম। তার তলায় ফোমের আরাম কেদারায় শুয়ে
দেখা গেল এক অনবদ্য সূর্যাস্ত। সে রাত্তিরটা ছিল পূর্ণিমার।
কিছু ঘোরাঘুরির পর আমরা ডিনার খেতে গেলাম একটি সমুদ্রতটস্থ
রেস্টুরেন্টে, যেটি কাঠের পায়ের ওপর দাঁড় করানো কাঠের পাটাতনের
বা ডেকের ওপর তৈরি। পাটাতনটা তীর থেকে শুরু করে সমুদ্রের দিকে
এগিয়ে গেছে; তার ওপর বেঞ্চি আর টেবিল পাতা।। তখন ছিল পুরো
জোয়ার। উঁচু উঁচু ঢেউগুলো নীচে কাঠের থামের ওপর আছড়ে পড়ে সশব্দে
ভাঙ্গছিল। তার জলকণার ছিটে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিল মানুষ ও খাবার
উভয়কেই। পূর্ণচন্দ্রের নীচে। সে এক অতিবাস্তব ও অনির্বচনীয়
অভিজ্ঞতা।
৬। পরিশিষ্ট
বাংলাদেশ
ঘোরার ফলে আমি যেসব ধারণা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম তার কিছু
কিছু অংশ বদলাতে এবং শোধরাতে বাধ্য হলাম। বিশেষ করে দুটি ব্যাপারে।
প্রথম ভ্রান্ত
ধারণাটির সূত্রপাত ১৯৭১ সালে হেনরি কিসিঞ্জারের একটি নৈরাশ্যব্যাঞ্জক
মন্তব্য থেকে। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ সব সময়েই হতদরিদ্র ও
বিদেশী সাহায্যের মুখাপেক্ষী (“বাস্কেট কেস”) হয়ে থাকবে। মন্তব্যটি
অনেক সময় স্মরণ করা হয় ঠিকই, কিন্তু তার সমর্থনে তেমন কিছু
ছবি আমার ভ্রমণকালে চোখে পড়ল না। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে খুবই
দরিদ্র; কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকে দেখলাম দেশটি অনেক
বেশী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও কোথাও কোথাও ঝকঝকে। রাস্তায় অধিকসংখ্যায়
ভিখারি দেখি নি। হাট-বাট বা দোকান-বাজার মোটামুটি খাদ্যদ্রব্যে
বা পসরায় ভরা ছিল (যদিও প্রাচুর্যের আধিক্য বলে মনে হয়নি)।
এমনকি কক্সের বাজারে সমুদ্র সৈকতে যেসব ছেলেরা সেদ্ধ ডিম বিক্রি
করছিল, তাদের স্বাস্থ্যও বেশ ভাল বলেই মনে হল। পরিবেশ দূষণের
ব্যাপারেও বাংলাদেশ অগ্রসর হয়েছে পেট্রলের পরিবর্তে সি এন
জি, ডাবের খোলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যাবহার, ইত্যাদি নানা বিষয়ে
প্রগতিশীল পন্থা অনুসরণ করে। কাজে কাজেই পূর্ণ হতাশার কোন
কারণ নেই।

পুরনোর
সঙ্গে নতুন – কম্পিটার ইন্সটিটিউটের ওপর মসজিদ ছবিঃ
ধৃতি বাগচী

চোখে
পড়ল বড় বড় শালুতে হিন্দুদের উৎসবের ঘোষণা ছবিঃ
ধৃতি বাগচী
দ্বিতীয়
ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে অনেক বছরের ধর্মভিত্তিক দাঙ্গা-হাঙ্গামার
ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের প্রকাশ্যে দেখাই যাবে না।
এটা দেখলাম সম্পূর্ণ ভুল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও তার পারিপার্শ্বিক
অঞ্চলে। ওখানে অনেক জায়গাতেই দেখা গেল বড় বড় শালুতে লেখা হিন্দু
বা বৌদ্ধদের মিলনসভায় যোগদানের আবেদন। ঢাকায় আমার সাথে পরিচয়
হল ময়মনসিংহের গারো হিলস থেকে আসা এক খৃষ্টান মহিলার। তিনি
তাঁর বাগদত্তের সাথে চার্চে গিয়ে খৃষ্টানমতে বিবাহ করার পরিকল্পনা
করছিলেন। ওখানে লোকমুখে শুনলাম যে সাম্প্রদায়িক শান্তির সময়
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদারচেতা মানুষেরা একে অন্যের ধর্মীয়
অনুষ্ঠানে যোগদান করে থাকেন – যেমন ধরুন ঈদ, দুর্গা পূজা,
খৃষ্টমাস, বুদ্ধ পূর্ণিমা, ইত্যাদি উপলক্ষে। আমার স্ত্রী দেখালেন
ও আমরাও ঢাকার শাঁখারীপাড়ায় গিয়ে দেখলাম অনেক মুসলমান মহিলারা
শাঁখার বালা অথবা শাঁখায় কারুকার্য করা গহনা পরেন – আগে যেটা
শুধু হিন্দু মহিলারাই পরতেন। এই অবস্থার পেছনে নিশ্চয়ই বর্তমান
সরকারের সাম্প্রদায়িক ঐক্যভাবাপন্ন রাজনীতির হাত রয়েছে। আমি
বাংলাদেশ থাকাকালে লক্ষ্য করলাম – লোকের কথা শুনে বা খবরের
কাগজ পড়ে – যে চিন্তাশীল বাংলাদেশীরা চেষ্টা করছেন কিভাবে
ইসলামি কাঠামোর মধ্যেও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান তৈরি করা যায়।
জামাত বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও মানতে শুরু করেছেন যে বাংলাদেশের
সর্বাধুনিক সংবিধানের আরম্ভে থাকবে পবিত্র কোরানের প্রথম বাণী
– "বিসমিল্লাহ ইর-রহমান ইর-রহিম"। আশা করা যায় যে এই
জাতীয় সমঝোতার মাধ্যমেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক মৈত্রীভাব
ও শান্তি বজায় থাকবে।
(আগের
অংশ)
অমিতাভ
বাগচী