পুরাণের কথা
মে ৩০, ২০১৬
শিবরাত্রির নেপথ্যে।।
পল্লব চট্টোপাধ্যায়
(১)
শাস্ত্রে আছে-
"কন্যা বরয়তে রূপম্, মাতা বিত্তম্ পিতা শ্রুতম্।
বান্ধবাঃ কুলমিচ্ছন্তি, মিষ্টান্নম্ ইতরেজনাঃ।।"
এর সরল অর্থ হল- কন্যা চায় রূপবান পুরুষকে বরণ করতে, মাতা চায় তার জামাতা ধনবান হোক। পিতা চায় শিক্ষা ও সম্মান, বন্ধুরা বংশমর্যাদা আর ইতর(সামান্য) জনে মিষ্টান্ন পেলেই খুশি। সেই হিসেবে প্রজাপতি দক্ষের ত পিতা হিসেবে খুশি হবারই কথা ছিল। জামাই রূপে বা অর্থে তেমন কিছু নন, স্বয়ম্ভু, সুতরাং বংশের বালাই নেই। তবে সৃষ্টি-স্থিতি-লয়কারী ত্রিদেবের অন্যতম তিনি, নামেই তাঁর পরিচয়। তবু তিনি খুশি নন, কারণ অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা ইত্যাদি তাঁর অন্য সাতাশটি কন্যা আকাশে প্রতিভাত গৌরবে দীপ্যমান চন্দ্রদেবের স্ত্রী, সে হিসেবে শিব কি লোকসমাজে পরিচয় দেবার যোগ্য? হলেই বা তিনি যজ্ঞেশ, শিবহীন যজ্ঞের বিধান শাস্ত্রসম্মত নয়, কিন্তু বেদজ্ঞ ঋষিরা ঋক বা সামবেদে যে এমন বিধান দেন নি তা তাঁর চেয়ে ভাল আর কে জানে। একটা নেশায় ধুত হয়ে থাকা আধপাগল ভিখারি, যে সারাটা দিন ছাইভস্ম মেখে শ্মশানে-মশানে ঘুরে বেড়ায় তাকে যখন অন্য ঋষিরা যজ্ঞেশ্বর বানাতে চাইল, চাপে পড়ে প্রজাপতি হিসেবে তিনি মৌন সম্মতি দিয়েছিলেন মাত্র, মন থেকে মোটেই মেনে নেন নি। তাই ত তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা সতী যখন সেই শিবকেই বরণ করল, তিনি তাকে মানা না করলেও বিয়ের পরে আর পিতৃগৃহের সাথে আর কোনও সম্পর্ক না রাখতে আদেশ করেন।
এই বিবাহের কিছুকাল পরে নৈমিষারণ্যে বিশ্ব স্রষ্টাদের এক বিশাল যজ্ঞের সূচনা হলো। দক্ষের পিতা ব্রহ্মা দক্ষকে সকল প্রজাপতিদের অধিপতি করায় গর্বিত দক্ষ রাজসূয় যজ্ঞ সম্পন্ন করে ‘বৃহস্পতি’ নামের এক বিশেষ যজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই যজ্ঞে তিনি সকল দেবর্ষি, বৃক্ষর্ষি, পিতৃপুরুষের ও দেবগণের পূজা করেন কিন্তু ইচ্ছে করেই শিবকে ডাকেন না। সতী কিন্তু সেই যজ্ঞে অনাহুতভাবেই যেতে চান। শিব মত না দেওয়ায় সতী তাঁর দৈবসত্বা স্বামীকে দেখাবার জন্যে দশটি ভিন্নভিন্ন রূপ ধারণ করলেন যা দশ মহাবিদ্যা নামে পরিচিত। সতী পরে পিতৃগৃহে উপস্থিত হলেও তাঁকে যোগ্য সমাদর করা হয় না। মাতা প্রসূতি আর ভগ্নীরা হৃষ্টচিত্তে সতীকে আলিঙ্গন করেন, কিন্তু দক্ষ মহাদেবের নিন্দায় সরব হয়ে ওঠেন। পিতার কাছে স্বামীর নিন্দা সইতে না পেরে সতী প্রথমে দক্ষকে শাপ দেন যাতে তাঁর মুখ ছাগলের মত হয়ে যায়, আর তারপরই প্রাণত্যাগ করেন।মতান্তরে, সতীকে মৃত দেখে শিবের অনুচর বীরভদ্র দক্ষের মুণ্ড ছিঁড়ে নেন, পরে দক্ষজায়া প্রসূতির অনুরোধে সেই স্থলে ছাগমুণ্ড প্রোথিত করে তাঁকে পুনর্জীবিত করে তোলা হয়।
এই কথা শিব জানতে পারা মাত্র উল্কাবেগে ছুটে আসেন। তাঁর নির্দেশে ভূতাধিপতি বীরভদ্র ও অন্য অনুচর ভুতেরা যজ্ঞস্থল লণ্ডভণ্ড করে দেয়। উন্মত্ত মহাদেব সতীর শবদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে প্রলয়-নাচনে বিশ্ব তোলপাড় করতে থাকেন। চারিদিকে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত হতে থাকে, ভূ-লোকে মানুষ ও জীবজন্তু আর দ্যুলোকে দেবতারা ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করতে থাকেন। নটরাজের নাচ কিন্তু থামে না। শেষে দেবতারা গোলোকে গিয়ে বিষ্ণুর দ্বারস্থ হন।
(২)
অন্নদামঙ্গলে কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় দক্ষালয়ে শিবের এই তাণ্ডবের রূপটি ভুজঙ্গপ্রয়াত ছন্দে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা এখানে পুরোটা তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না।
"মহারুদ্ররূপে মহাদেব সাজে। ভভম্ভম ভভম্বম শিঙ্গা ঘোর বাজে।।
লটাপট জটাজুট সংঘট্ট গঙ্গা। ছলচ্ছল টলট্টল কলক্কল তরঙ্গা।।
ফণাফণ্ ফণাফণ্ ফণিফণ্ণ গাজে। দিনেশপ্রতাপে নিশানাথ সাজে।।
ধকধ্ধক্ ধকধ্ধক্ জ্বলে বহ্নি ভালে। ববম্বম্ ববম্বম্ মহাশব্দ গালে।।
দলমল দলমল গলে মুণ্ডমালা। কটি কট্ট সদ্যোমরা হস্তিছালা।।
পচা চর্ম্মঝুলি করে লোল ঝুলে। মহাঘোর আভা পিনাকে ত্রিশূলে।।
ধিয়া তাধিয়া তাধিয়া ভূত নাচে। উলঙ্গী উলঙ্গে পিশাচী পিশাচে।।
সহস্র সহস্র চলে ভূত দানা। হুহুঙ্কারে হাঁকে উড়ে সর্পবীণা।।
চলে ভৈরব ভৈরবী নন্দী ভৃঙ্গী। মহাকাল বেতাল তাল ত্রিশৃঙ্গী।।
চলে ডাকিনী যোগিনী ঘোর বেশে। চলে শাঁকিনী প্রেতিনী মুক্তকেশে।।
গিয়া দক্ষযজ্ঞে সবে যজ্ঞ নাশে। কথা না সরে দক্ষরাজে তরাসে।।
অদূরে মহারুদ্র ডাকে গভীরে। অরে রে অরে দক্ষ দে রে সতীরে।।
ভুজঙ্গপ্রয়াতে কহে ভারতী দে। সতী দে সতী দে সতী দে সতী দে।।"
এদিকে সতীর শবদেহ কাঁধে নিয়ে নেচে চলেছেন নটরাজ, তাঁর আর থামার নাম নেই, সসাগরা পৃথিবী বুঝি রাসাতলেই তলিয়ে যায়। তখন অনন্যোপায় হয়ে বিষ্ণু চললেন সুদর্শন চক্র হাতে শিবের পেছনে ও তাঁর অলক্ষ্যে চক্র দিয়ে টুকরো করতে থাকলেন সতীর দেহ। সম্পূর্ণ দেহটি একান্নটি খণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল বিভিন্ন স্থানে, পরবর্তীকালে যেগুলো পীঠস্থান নামে খ্যাত হয়।
"তথায় সতীর দেহ গিয়া চক্রপাণি।
কাটিলেন চক্রধারে করি খানি খানি।।
যেখানে যেখানে অঙ্গ পরিল সতীর।
মহাপীঠ সেই স্থান পূজিত বিধির।।
করিয়া একান্ন খণ্ড কাটিলা কেশব।
বিধাতা পূজিলা ভব হইলা বৈভব।।"
অন্নদামঙ্গলে আছে সে পীঠমালার বিস্তারিত বিবরণ। সমস্তখানা পড়তে অনাবশ্যক মনে হতে পারে, তাছাড়া এই পরিসরের পক্ষে তা বিশাল হয়ে যাবে, তাই দু-চার পঙ্ক্তি তুলে দিচ্ছি দৃষ্টান্ত হিসেবে-
"হিঙ্গুলায় ব্রহ্মরন্ধ্র ফেলিলা কেশব।
দেবতা কোট্টবী ভীমলোচন ভৈরব।।১
শর্করারে তিন চক্ষু ত্রিগুণ বৈভব।
মহিষমর্দিনী দেবী ক্রোধীশ ভৈরব।।২
সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা।
ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা।।৩
জ্বালামুখে জিহ্বা তাহে অগ্নি অনুভব।
দেবীর অম্বিকা নাম উন্মত্ত ভৈরব।।৪"
যাক্, কাঁধের ভার লাঘব হওয়াতে চমকে শিব নৃত্য থামালেন বটে, তবে এতক্ষণে যেন তিনি সত্যিকারের শোক উপলব্ধি করতে পারলেন। আর একমুহূর্ত না থেমে কৈলাশ পর্বতের উপত্যকা ছাড়িয়ে চিরতুষারের দেশে গিয়ে তিনি কঠিন তপস্যায় মগ্ন করে ফেললেন নিজেকে।
(৩)
সতী দেহত্যাগ করার আগে দক্ষকে জানিয়ে যান- ‘হে পিতা, এ জীবনে আমার মনের কোনও বাসনাই পূর্ণ হল না। মনোমত পতি পেয়েও সুখে সংসার করতে পারলাম না। পিতার কোলে কন্যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শোভা, আমার ভাগ্যে সেই পিতার স্নেহও জুটল না। তবে আমি হরপ্রিয়া হয়ে আবার ফিরব, শুধু যদি একজন স্নেহময় পিতা পাই যাঁকে আমি মনেপ্রাণে ভক্তি করতে পারি।‘
যুগের পর যুগ কেটে যায়। শক্তিহীন শিবকে নিয়ে দেবতারা চিন্তিত, শিব-শক্তির মিলিত উদ্যমেই তো সৃষ্টির রক্ষা হয়, এখন সে সৃষ্টি বিনাশের মুখে। এদিকে পাতালে অসুররা ক্রমশঃই শক্তিবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। তাদের একজন অধিপতি, নাম তারকাসুর, সে তো তপস্যায় ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে অমরত্বের বর চেয়ে বসল। ভাগ্যিস ব্রহ্মা তা না দিয়ে অন্য যে কোনও বর চাইতে বললেন। অসুর ভেবে দেখল শিবের যা অবস্থা আর তিনি সংসার করবেন বলে মনে হয় না। তাই এই সুযোগে সে বলে বসল, ‘প্রভু তাহলে আমাকে এমন বর দিন যেন শিবের সন্তান ছাড়া কেউ আমাকে বধ না করতে পারে।‘ ব্রহ্মা বললেন-‘তথাস্তু’। দেবতাদের পড়ল মাথায় হাত। তাঁরা উপায় খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।
এদিকে হিমালয়ের অধিপতি পর্বতরাজের প্রাসাদে আজ মহোৎসব, তাঁর দেববন্দিতা সুন্দরী রানী মেনকার কোল আলো করে এসেছে একটি কন্যাসন্তান। তাঁদের পুত্র মৈনাক অল্পবয়সেই অনেক বীরত্বের কাজ করে দেখিয়েছেন, কিন্তু তিনি ইন্দ্রের ভয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দক্ষিণ সমুদ্রের গভীরে, রাজপুরী এতদিন ছিল শূন্য। গৌরবর্ণা বলে হিমালয় তার নাম রাখলেন গৌরী, আর পর্বতের কন্যা হিসেবে লোকে নাম দিল পার্বতী। এমন সময় দৈববাণী হল যে এই কন্যা শিবের গতজন্মের স্ত্রী মহামায়া সতীরই পুনর্জন্ম, শিবের সাথে মিলিত হতেই তাঁর জন্ম। তখন মেনকা তাঁর নাম রাখেন উমা, উ অর্থে শিব, আর মা-অর্থে তার সৌন্দর্য-*
“হৈল আকাশবাণী সকলে শুনিলা।
মহামায়া হিমালয় আলয়ে জন্মিলা।।
উ শব্দে বুঝহ শিব মা শব্দে শ্রী তাঁর।
বুঝিয়া মেনকা উমা নাম কৈলা সার।।“ (অন্নদামঙ্গল)
দিনে দিনে কন্যা বড় হয়ে ওঠেন আর চন্দ্রকলার মত তাঁর সৌন্দর্য বাড়তে থাকে। দেবতাদের কানে পৌঁছয় সে সংবাদ কারণ তাঁরাতো তারকাসুরকে বধ করার জন্যে এই উমারই অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা সূচনা দেবার জন্যে নারদকে অবিলম্বে পর্বতরাজের কাছে পাঠান।
দেবর্ষি নারদের যতই দুর্নাম থাক স্বর্গ-মর্তের বাজারে, তিনি উমাকে দেখে আর চোখ ফেরাতে পারেন না, তাঁর মনে হল বিশ্বস্রষ্টা যেন বিশ্বের সব সৌন্দর্যকে একত্রিত করে উমাকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন-
“Surely the Maker's care had been to cull
From all that's lovely the most beautiful,
As if the world's Creator would behold
All beauty centred in a single mould.”
(কালিদাসকৃত কুমারসম্ভবের অনুবাদ- Ralph Griffith)
নারদ বুঝলেন, এই সেই শক্তি যার অভাবে শিব আজ নির্জীব, দেবকুল অসুরের ভয়ে তটস্থ। তিনি ভক্তিভরে সেই মহাশক্তি মহামায়াকে প্রণাম করলেন।
*‘উমা’ কথার আর একটি অর্থ কুমারসম্ভব(১/২৬)ও শিবপুরাণে(উত্তরখণ্ড) দেওয়া আছে। উ(ও)+মা(না – ঘোর তপশ্চর্যার থেকে বিরত হবার জন্যে মেনকা পার্বতীকে এই নাম দিয়েছিলেন।
(৪)
হিমালয় রাজগৃহে আজ কারোর খুশির শেষ নেই। দেবর্ষি নারদ যে আজ সম্মিলিত দেবতাদের পক্ষ থেকে গৌরীর সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন, তাও আবার ত্রিলোকপূজ্য মহেশ্বর শিবের সাথে। নারদকে ত গৌরী চেনেন না, তিনি অবাক, বয়স্ক মানুষটি তাঁকে প্রণাম করায়। নারদ রহস্য করে বললেন, ‘কি গো, তুমি আমায় বুড়ো বলছ, তুমি নিজে ত আমার বাবার জননী! থাম, তোমার জন্যে আমি এক থুত্থুরে বুড়োর সম্বন্ধ এনেছি- এবার বুঝবে’। বিয়ের কথায় পার্বতী লজ্জা পেয়ে মায়ের কাছে পালিয়ে গিয়ে তাঁকে সব বললেন-
“কোথা হৈতে এক বুড়া ডোকরা বামন।
প্রণাম করিল মোরে এ কি অলক্ষণ।।
নিষেধ করিনু তারে প্রণাম করিতে।
কত কথা কহে বুড়া না পারি কহিতে।।
দুটা লাউ বান্ধা কান্ধে কাঠ একখান।
বাজাইয়া নাচিয়া নাচিয়া করে গান।।
ভাবে বুঝি সে বামন বড় কন্দলিয়া।
দেখিবে যদ্যপি চল বাপারে লইয়া।।“ (অন্নদামঙ্গল)
পর্বতরাজ ত বর্ণনা শুনেই নারদকে চিনেছেন। তিনি ব্যস্তসমস্ত হয়ে ঋষিকে খাতির করে এনে বসালেন। নারদ বললেন, ‘মহারাজ, সময় হয়েছে। শোকার্ত মহাদেব আপনারই রাজত্বে তপস্বীর বেশে বাস করছেন, ভয়ানক কৃচ্ছ্রসাধনে তাঁর শরীর ভেঙ্গে পড়ছে। দেবতাদের অনুরোধ, গৌরীকে শিবের সেবার দায়িত্ব দিন, বাকি কাজ আমরা দেখে নেব।‘ হিমালয় কন্যার সৌভাগ্যে খুশি হয়ে উমাকে শিবসেবার দায়িত্ব অর্পণ করতে ডেকে পাঠালেন।
‘মা পার্বতী, জান কতবড় একজন সন্ন্যাসী আমাদের রাজ্যে বাস করছেন? আমি ভেবে দেখলাম তাঁর দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করারও কেউ নেই। এরকম একজনের সেবায় যে পুণ্য পাওয়া যায় তার কোনও ইয়ত্তা নেই। তুমি কি তাঁর জন্যে নিষ্কাম সেবার ভার নিতে চাও?’
মমতাময় পিতার এই আদেশ না মানার কোনও প্রশ্নই নেই, উমা এককথায় রাজী হয়ে গেলেন। তারপর থেকে উনি প্রাসাদের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে শিবের তপোবনে গিয়ে তাঁর ধ্যানের স্থান পরিষ্কার করা, ফুল-বেলপাতা তুলে আনা এসব কাজ সানন্দে ও নিরলসভাবে করতে লাগলেন। ব্যাপারটা শিবের চোখে পড়ায় তিনি বরং খুশীই হলেন। পার্বতীকে তিনি আশীর্বাদ করলেন যেন তিনি মনের মত স্বামী ও চিরজীবন তাঁর একান্ত ভালবাসা পান।
এদিকে স্বর্গে তারকাসুরের উৎপাত ক্রমশঃই বেড়ে চলেছে। দেবতাদের ধরে ধরে হেনস্থা করা, অপ্সরাদের জ্বালাতন, গন্ধর্ব-কিন্নরদের উপর অত্যাচার, সব কিছুই যেন সীমা ছাড়িয়ে চলেছে। নারদ খবর দিয়েছেন যে হিমালয়ে পার্বতীর সেবায় মহাদেব খুশি, কিন্তু তার ওপরে ভিত্তি করে কোনও সম্পর্ক এখনই গড়ে ওঠার আশা কম। কিন্তু দেবতাদের কাছে সময় কোথায়? ইন্দ্র পদচ্যুত, দেবতারা বিতাড়িত- শেষে কামদেবের শরণাপন্ন হলেন দেবতারা।
এখানে কামদেবের একটা প্রাথমিক পরিচয় দিয়ে রাখা যাক। তিনি বিশ্বের প্রেমের দেবতা। হাতে একটি ফুলের তৈরি শর-ধনু নিয়ে মকর-চিহ্ন আঁকা ধ্বজা উড়িয়ে ঘুরে বেড়ান, বসন্ত, কোকিল আর ভ্রমরকে সঙ্গী করে। নেপথ্যে থাকেন তাঁর স্ত্রী রতি। তাঁর একটি তীরের ঘা খেলে যে কোনও মানুষের মনে উন্মত্তের মত প্রেম-ভাব জেগে উঠবে। সৃষ্টি-রক্ষার জন্যে তাই কামদেবের যখন তখন প্রয়োজন পড়ে দেবতাদের কাছে। তাঁর নামের শেষ নেই। মদন, পুষ্পধনু, মকরধ্বজ, মকরকেতন, রতিকান্ত, রতীশ, কন্দর্প, মন্মথ, মনসিজ, পঞ্চশর - এসব নাম ত আগেই ছিল, পরে আরো কিছু নাম যোগ হয়, সে কথাতেই এবার আসছি।
(শেষাংশ )
লেখক পরিচিতি - জন্ম ও বেড়ে ওঠা বিহার (অধুনা ঝাড়খন্ডের) ধানবাদ কয়লাখনি ও শিল্পাঞ্চলে, সেখানে 'নানা জাতি, নানা মত, নানা পরিধান' হলেও বাংলা ও বাঙালিদের প্রাধান্য ছিল একসময়। ১৯৮২ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং পাস করে পেট্রোলিয়াম লাইনে চাকুরী, বর্তমানে কুয়েত অয়েল কোম্পানিতে কর্মরত। শখ-গান-বাজনা আর একটু-আধটু বাংলাতে লেখালেখি। কিছু লেখা ওয়েব ম্যাগাজিনে (ইচ্ছামতী, আদরের নৌকো ও অবসর) প্রকাশিত ।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।