পরিবেশ
নভেম্বর ১৫, ২০১৪
রাষ্ট্রপুঞ্জের শতাব্দীব্যাপী উন্নয়নকর্মসূচীর মূল্যায়ন, ২০১৩
শঙ্কর সেন
ভূমিকা
[ অবসরের 'পরিবেশ'-বিভাগে দেখুন- রাষ্ট্রপুঞ্জের শতাব্দীব্যাপী
উন্নয়নকর্মসূচীর মূল্যায়ন, (১),(২),(৩) ]
শতাব্দীব্যাপী উন্নয়ন সীমা-স্তম্ভগুলি (Goals) হল আটটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সীমাস্তম্ভ, যেগুলি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপুঞ্জের শতাব্দীব্যপী ঘোষণা বলে গৃহীত হয়েছিল । সে সময়ের রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৮৯টি সদস্য-রাষ্ট্র ( বর্তমানে ১৯৩টি ) এবং অন্তত: ২৩টি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যুক্তভাবে ২০১৫ সালের মধ্যে নীচের ৮টি সংকল্পে সহায়তা করার অঙ্গীকার করেছিল :
১. চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল করতে হবে ।
২. সবার জন্য ন্যূনতম শিক্ষা-ব্যবস্থা থাকবে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত ।
৩. নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে; সুনিশ্চিত করতে হবে নারীর অধিকার ।
৪. শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হবে; পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মৃত্যুর হার কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশে আনতে হবে ।
৫. মায়েদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে হবে । গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসবের পর ৪২ দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নারীর স্বাস্থ্য উন্নত করে এদের মৃত্যুর হার তিন-চতুর্থাংশ কমাতে হবে ।
৬. এইচ-আই-ভি, এইডস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে তৎপর হতে হবে ।
৭. পরিবেশের সুষ্ঠু প্রতিপালন (environmental sustainability) নিশ্চিত করতে হবে ।
৮. উন্নয়নে বিশ্ব অংশিত্বের ব্যবস্থা করতে হবে ।
প্রতিটি সীমা-স্তম্ভের জন্য আছে টার্গেট এবং টার্গেট-রক্ষায় দিন । গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য G8 দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা ২০০৫ সালের জুন মাসে সম্মত হলেন বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ-ভাণ্ডার (IMF), আফ্রিকা উন্নয়ন ফাণ্ডকে (AIDB) প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে, ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ যা' নিয়েছে গুরুতর রূপে ঋণী গরিব দেশগুলি, তা' মকুব করতে, যাতে তারা পুরো সঙ্গতি ব্যয় করতে পারে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রোগ্রামের পিছনে ।
মূল্যায়ন, ২০১৩
রিপোর্টটি রাষ্ট্রপুঞ্জের শতাব্দীব্যাপী উন্নয়নের সর্বাধুনিক অগ্রগতির ফল, যা' নীচে সংক্ষেপে দেওয়া হল । বিভিন্ন জাতীয় সরকারগুলি, আন্তর্জাতিক কমিউনিটি, নাগরিক সোসাইটি এবং প্রাইভেট সেক্টরগুলির সংযুক্ত প্রচেষ্টা বিশ্বের মানুষজনের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সাহায্য করেছে । কিন্তু, কাজ বাকী আছে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার । যে সব ক্ষেত্রে ফাঁক ও বৈষম্য আছে সেগুলির দিকে আরও সাহসী এবং দৃঢ় কর্ম করা প্রয়োজন ।
সীমাস্তম্ভ ১
চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল কর
এর টার্গেট রক্ষা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়েছে ; কিন্তু এখনও ১.২ বিলিয়ন মানুষ রয়েছে চরম দারিদ্র্যে ।
চাকুরীক্ষেত্রে বড় লিঙ্গ-বিভেদ রয়েছে এবং সেটি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে কোনও কোনও অঞ্চলে বিশ্ব-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য ।
২০০০ ও ২০১২ সালের মধ্যে নারীদের চাকুরী/ জনসংখ্যা অনুপাত সারা পৃথিবীকে ধরলে কমেছে ৪৮.৫ শতাংশ থেকে ৪৭.১ ( তুলনায় পুরুষদের ৭৩.৯ এবং ৭২.২ শতাংশ ) ।
নারীরা চাকুরীতে বিশেষভাবে বঞ্চিত লিঙ্গ-বিভেদের জন্য উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায়, বিভেদ যথাক্রমে ৫০.০, ৪৮.৯ ও ৪৮.৩ শতাংশ পয়েন্ট । বিপর্যয়ের আগে ( ২০০০-২০০৭ সাল ) এই অনুপাত কমেছিল মাত্র ০.১ শতাংশ পয়েন্ট ( তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে ০.৮ ) ; ২০০৭ থেকে ২০১২-র মধ্যে এই অনুপাত দাঁড়ায় নারী- ১.৩ ও পুরুষ- ০.৯ শতাংশ পয়েন্ট ।
সারা বিশ্বে অহননীয় কর্মে নারীদের অনুপাত কমেছে ৫৫.৩-শতাংশ ( ২০০০ সাল ) থেকে ৪৯.৩ ( ২০১২ সাল ), তুলনায় পুরুষ- ৫০.৫ এবং ৪৭.১ শতাংশ । সাহারা-নিম্নবর্তী আফ্রিকা-( সুদান ব্যতীত), দক্ষিণ এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়া হল সর্বোচ্চ অহননীয় কর্মের জন্য স্থান যেখানে নারী ও পুরুষের অনুপাত হল যথাক্রমে ৮০ ও ৭০ শতাংশ । সবথেকে বেশি লিঙ্গ-প্রভেদ পাওয়া যাবে উত্তর আফ্রিকা ও সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকায়, যথাক্রমে ২০.৬ ও ১৫.৬ শতাংশ পয়েন্ট- সহ ।
বৃত্তিমূলক কর্মে স্বাতন্ত্র্য থাকায় নারীদের সংখ্যা বেশি যেখানে কাজগুলি অল্প-আয়ের- বিশেষত: পুরুষদের তুলনায়, এবং যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কম । নারীদের চাকুরীতে সুযোগ আরও কম যদি অনুপাতে অবৈতনিক নিয়োগের কথা ধরা হয় ।
সীমাস্তম্ভ ২
সবার জন্য ন্যূনতম শিক্ষার ব্যবস্থা কর
প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত ।
দশকের শুরুতে বিশেষ সুফল পাওয়া গেলেও পরবর্তীকালে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া অনেক শিথিল হয়ে যায় ।
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে প্রাথমিক ও নিম্ন-মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের তালিকাভুক্তি বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । ২০০০ ও ২০১১ সালের মধ্যে নিট তালিকাভুক্তি বেড়েছে প্রাথমিকে ৭৯ থেকে ৮৯ শতাংশ এবং নিম্ন-মাধ্যমিকে ৬৭ থেকে ৭৯ শতাংশ ।
দক্ষিণ এশিয়া ও সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকা মেয়েদের সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষায় সবথেকে বেশি উন্নতি করেছে- নিট তালিকাভুক্তি বৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২০ এবং ১৯ শতাংশ পয়েন্ট । তবে, দেশগুলি নিম্ন-মাধ্যমিক শিক্ষায় পূর্ণ তালিকাভুক্তি থেকে অনেক দূরে । বালিকা ও বালকদের বিদ্যালয়ে যোগদানে মূল অন্তরায়স্বরূপ হল দারিদ্র্য ; তবে লিঙ্গ এবং বিদ্যালয়ের অবস্থানকে বিশেষ কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় ।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সার্বিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গ-সমতা হয়েছে স্থূলভাবে ; পুরোপুরি স্থূল তালিকাভুক্তি হয়েছে ২০১১ সালে, ২০০০ সালের ৯৮- শতাংশ থেকে । পশ্চিম এশিয়া, সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকা ও উত্তর আফ্রিকায় অগ্রগতি হয়েছে কম প্রাণিধেয় তবে তিনটি এলাকাই পৌঁছে যাচ্ছে সমতার দিকে ।
উন্নয়নশীল অঞ্চলে, মাধ্যমিক শিক্ষায় স্থূল লিঙ্গ সমতা সূচক (GPI) বেড়েছে ০.৮৯ থেকে ০.৯৬- ২০০০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে । তবে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিশেষ অসমতা আছে ; ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানে GPI উচ্চ ১.০৭ থেকে ( যাতে দেখাচ্ছে বালিকাদের উন্নত সুযোগ ) ০.৮৩- সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকায় ।
যদিও তালিকাভুক্তির হারে অগ্রগতি আনন্দজনক, শিক্ষার উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন বাধা থেকে উত্তরণ যথা, বাল্য-বিবাহ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বালিকাদের উপর জুলুম হল কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ।
সীমাস্তম্ভ ৩
নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে; সুনিশ্চিত করতে হবে নারীর অধিকার ।
বিশ্বের নানা রাষ্ট্রের পার্লামেন্টে কোটা-সিস্টেমের দৌলতে নারীরা সদস্য হওয়াতে নারীদের হাতে এসেছে অনেক শক্তি ।
২০০০- ও ২০১৩- সালের মধ্যে কোনও কোনও অঞ্চলের জাতীয় পার্লামেন্টে নারীদের যোগদান ( উত্তর আফ্রিকা ⤒ ৩ থেকে ১৮ শতাংশ, পশ্চিম এশিয়া- ৪ থেকে ১২ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়া ৭ থেকে ১৯ শতাংশ ) হয়েছে বেশ হৃদয়গ্রাহী । অবশ্য সারা বিশ্বকে ধরলে, নারীদের সিদ্ধান্ত-গ্রহণ সংস্থায় অংশগ্রহণ এখনও বিশেষ হয়নি । ২০১৩-তে একক বা নিম্ন হাউসে ছিল ২১-শতাংশ পার্লামেন্ট-সদস্য, ২০০০-সালের ১৪-শতাংশ থেকে । লিঙ্গ-বিভেদ রয়েছে কিছু কিছু বিষয়ে যেগুলি MDG-র আওতায় পড়ে না ; যেমন, জুন, ২০১৩-য় ৮ জন নারী ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং ১৩জন ছিলেন সরকারের প্রধান ।
জানুয়ারি ২০১২-তে মাত্র ১৭-শতাংশ সরকারী মন্ত্রী ছিলেন নারীরা । নারীদের সিদ্ধান্ত-গ্রহণ শক্তি শুধুমাত্র পার্লামেন্ট বা সরকারে কমিটিগুলিতে থাকলেই প্রতিফলিত হয়না । তা' সে সরকারী বা বেসরকারি মণ্ডলেই হোক না, নারীরা এখনও বঞ্চিত হচ্ছেন সিদ্ধান্ত-গ্রহণ ক্ষমতা থেকে এমন সব ক্ষেত্রে যা' তাদের জীবনকে সোজাসুজি ব্যহত করে । অন্তত: গৃহাভ্যন্তরে সন্তানদের পুষ্টি বিধানে, উদ্বর্তন-হারে(survival rate ), এবং শিক্ষায় নারীদের বক্তব্য গ্রহণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নতিবিধান করেছে । কিন্তু নিরীক্ষণ (survey) থেকে দেখা যাচ্ছে যে এমনকি গৃহের অভ্যন্তরে নারীদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা পুরুষদের থেকে অনেক কম, এমনকি নিজের স্বাস্থ্য-বিষয়ে, গৃহের জন্য ক্রয়, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের গৃহে যাওয়া ইত্যাদিতেও ।
[ উৎস : WHO, ২০১৩ ( নারীদের উপর জুলুম- বিশ্ব- ও অঞ্চল ভিত্তিক অনুমান ) ]
সীমাস্তম্ভ ৪
শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হবে
যদিও নানা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, বিশ্ব এখনও শতাব্দীব্যাপী উন্নয়নের নিরিখে শিশু- মৃত্যুতে আছে অনেক পিছিয়ে ।
১৯৯০-সাল থেকে বিশ্বে শিশু-মৃত্যুর হার কমেছে অনেক- পাঁচ বৎসরের কম বয়সের জন্মকালে-জীবন্ত শিশুদের মৃত্যু প্রতি হাজারে ৯০ থেকে ৪৮ । অবশ্য অগ্রগতি সর্বত্র সমান নয় ; ২০১২ সালে পাঁচ বৎসরের কম বয়সের শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ৮২ শতাংশ সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়, বেড়েছে ১৯৯০ সালের ৬৭-শতাংশ থেকে ।
বেশিরভাগ দেশে ( যেখানে ডাটা পাওয়া যাচ্ছে ) শিশুদের বেঁচে থাকার হারে বালিকাদের সুযোগ বালকদের থেকে বেশি, বোধ করি বালিকাদের শারীরবৃত্তীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বালকদের তুলনায় । তবে এর অন্যথাও আছে । যেমন, দক্ষিণ এশিয়া যেখানে পাঁচ-বৎসর বয়সের কম বালিকাদের মৃত্যু বালকদের থেকে বেশি । এর কারণ হিসাবে দেখানো হয় পুত্রসন্তানের প্রতি অহেতুক ঝোঁক ।
শিশু-মৃত্যুর হার বিশেষভাবে কমানো সম্ভব নারী ও বালিকারা শিক্ষিত হলে । প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিতা মায়েদের সন্তানদের বাঁচার সম্ভাবনা অশিক্ষিতা মায়েদের সন্তানদের থেকে দ্বিগুণ ।
একইভাবে, মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিতা মায়েদের সন্তানদের বাঁচার সম্ভাবনা অশিক্ষিতা মায়েদের সন্তানদের থেকে ৩-গুণেরও বেশি ।
সংসারের আয় হল আর একটি নির্দেশক অসমতা নির্ণয়ে । সকল এলাকাতেই বিত্তহীন বাড়ীতে শিশু-মৃত্যু হয় বেশি, বিত্তশালী গৃহের তুলনায়, যদিও এই ধরণের প্রভেদ কমে আসছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ।
[ উৎস : রাষ্ট্রপুঞ্জ, ২০১২ (MDG রিপোর্ট) ]
সীমাস্তম্ভ ৫
মায়েদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে হবে ।
মায়েদের মৃত্যুর বেশিরভাগই রোধন-যোগ্য ।
২০১০-সালে সারা বিশ্বে আনুমানিক ২৮৭,০০০ মায়েদের মৃত্যু হয়েছে । এটি ১৯৯০-সালের তুলনায় ৪৭- শতাংশ কম, তবে MDG-র ২০১৫-সালের টার্গেট (মায়েদের মৃত্যুর হার ৭৫-শতাংশ কমাতে হবে ) তার থেকে কম । ২০১০-সালের মোট মৃত্যুর ৮৫-শতাংশ হয়েছে সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকা- ও দক্ষিণ এশিয়া-তে ।
৮০-শতাংশ মৃত্যু পরিহার করা সম্ভব হত যদি নারীদের সান্নিধ্য থাকত অতি-প্রয়োজনীয় মাতৃত্ব ও মৌল স্বাস্থ্য-সুরক্ষা কার্যক্রমে । এটা ঠিক যে, মাতৃত্বে মৃত্যুহার বাড়ে-কমে অঞ্চল অনুযায়ী, তবে সাধারণত: দায়ী করা যায়- হঠাৎ-প্রয়োজনীয় ধাত্রী-সুরক্ষার অভাব, প্রসবকালে দক্ষ সাহায্য না-পাওয়া ( বিশেষত:, বিত্তহীন ও গরীব মহিলাদের জন্য ), এবং ( অনেক দেশে ) নারী ও বালিকাদের স্থায়ীভাবে বঞ্চিত করে রাখা হয়- যৌন ও সংলগ্ন স্বাস্থ্য ও অধিকার থেকে ।
সীমাস্তম্ভ ৬
এইচ-আই-ভি, এইডস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে তৎপর হও
১৫ থেকে ২৪ বৎসর বয়সের নারীরা অনেক সহজেই HIV-র দ্বারা সংক্রমিত হয় পুরুষদের তুলনায় । অবশ্য সংক্রমণ কম-বেশি হয় এলাকা অনুযায়ী ।
২০১২ সালে সাহারা- নিম্নবর্তী আফ্রিকার যুবক-যুবতীদের ৭২ শতাংশ ( ৫৬০,০০০ জন ) নূতন করে সংক্রমিত হয়েছে এই মড়কে । সারা বিশ্বের নিরিখে ১৫ থেকে ২৪ বৎসর বয়সের নারীদের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি পুরুষদের থেকে ( যথা, ২০১২-তে সংক্রমণ হয়েছিল ৩৮০,০০০-এর বেশি নারী এবং ১৮০,০০০ পুরুষ ) । এর অর্থ-HIV-তে নারীরা অনেক বেশি শারীরবৃত্তিয় ক্ষতির অধীন ; তা'ছাড়া, অঙ্গবিন্যাসে লিঙ্গ-অসাম্য ( নারী ও মেয়েদের উপর বলপ্রয়োগ ও জুলুম ), শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় অগম্যতা তো আছেই ।
উদাহরণস্বরূপ, HIV-নিবারণে ও কণ্ডোম-ব্যবহারে নারীদের বিশেষত: যুবতীদের জ্ঞান বেশ কম পুরুষ ও যুবকদের তুলনায় ( যুবক ৩৬- ও যুবতী ২৮- শতাংশ ) ।HIV-সংক্রমণে এখনও নূতন নূতন রোগী আসছে ।
সীমাস্তম্ভ ৭
পরিবেশের সুষ্ঠু প্রতিপালন নিশ্চিত কর
প্রতি বছরেই বনভূমি হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর, ক্ষতি হচ্ছে মূল্যবান সম্পত্তি । গ্রিনহাউস-গ্যাস নিঃসরণ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বে ।
সুষ্ঠু পানীয় জলের প্রাপ্তির ব্যবস্থা হয়েছে ১৯৯০-সাল থেকে, কিন্তু অনেক অঞ্চল পাইপ-বাহিত জল থেকে বঞ্চিত, যার ফল হল নারী ও বালিকাদের গুরুতর বিবক্ষা ।
বিশুদ্ধ পানীয় জল-প্রাপ্তির সান্নিধ্য বেড়েছে ৭৬-শতাংশ ( ১৯৯০ সাল ) থেকে MDG-টার্গেট ৮৯-শতাংশ ( ২০১১ সাল ) । এখনও ( ২০১১ সালে ) ৭৬৮ মিলিয়ন মানুষজন জল নেয় অনুন্নত উৎস থেকে । সবথেকে কম বিশুদ্ধ জলের প্রাপ্তি রয়েছে ওশিয়ানিয়া ও সাহারা-নিম্নবর্তী আফ্রিকায় । ২৫-টি সাহার-নিম্নবর্তী রাষ্ট্রে এক নিরীক্ষণ থেকে জানা যাচ্ছে যে, ৭১-শতাংশ ভিটেতে জল আসে না, যার জন্য ফল ভোগ করে নারী ও বালিকারা ।
অনাময়-ব্যবস্থায় সান্নিধ্য নারী ও বালিকাদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও সুস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । পায়খানা ব্যবহারে নারী ও বালিকাদের বিশেষ গোপনীয়তা ও সময় প্রয়োজন পুরুষদের অপেক্ষা ; তাদের যত্নে ছোট শিশু থাকতে পারে, বাইরের পায়খানা ব্যবহারে অনেক বেশি সুরক্ষা, এবং ঋতু-কালে দিনে একাধিক বার যাওয়া-আসার প্রয়োজন হওয়া স্বাভাবিক ।
সীমাস্তম্ভ ৮
উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অংশীদার
বিগত কয়েক বছরে লিঙ্গসাম্যকে কেন্দ্র করে সাহায্য যদিও বৃদ্ধি পেয়েছে তা' লিঙ্গসাম্য সিদ্ধিতে যথেষ্ট নয় ।
OECD উন্নয়ন সহায়তা কমিটি(DAC)লিঙ্গসাম্য ও নারীদের অধিকার বিষয়ে সাহায্যের মান স্থির করার জন্য কিছু পলিসি নির্দেশক স্থির করেছেন । ২০১১ সালে এই সহায়তার মোট মূল্য হয়েছে মার্কিন ডলার ২২ বিলিয়ন । ২০০২ সালে লিঙ্গসাম্যে দ্বিপার্শ্বিক সংস্থান ছিল ২৭ শতাংশ, তা' বাড়ল ৩৫ শতাংশে ২০১১ সালে । তবে ২০১১ সালে লিঙ্গসাম্যকে ⤛ মূল ⤛ অভিলক্ষ্য করার প্রোগ্রামে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ ।
লিঙ্গসাম্যকে ফোকাস করে যে সহায়তা তা' কেন্দ্রীভূত হয়েছে সামাজিক স্তরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে । অর্থনৈতিক ও উৎপাদী সেক্টরে ( যথা, ব্যাঙ্ক, ব্যবসায়, কৃষি ও পরিবহন ) যা' লিঙ্গসাম্যকে মূল অভিলক্ষ্য করেছে সেখানে গেছে সাহায্যের মাত্র ২ শতাংশ । যদিও জনসংখ্যা পলিসি/প্রোগ্রামে এবং সংযোজনী স্বাস্থ্যে DAC- সদস্যদের দান ২০১১ সালে প্রসারিত হয়েছে মার্কিন ডলার ৮ বিলিয়নে, পরিবার-প্ল্যানে ডোনারদের দান রয়েছে মাত্র মার্কিন ডলার ৬৫০ মিলিয়নে ।
[ সূত্র: OECD, ২০১৪ ]
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪
লেখক পরিচিতি - শিক্ষাবিদ। বি.ই. কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর। এক সময় পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। অবসর-এর যুক্ত প্রায় জন্মকাল থেকেই। অবসর-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।