হ্যারি বেলাফন্টেঃ প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে যিনি ধরায় এসেছিলেন

হ্যারি বেলাফন্টেঃ প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে যিনি ধরায় এসেছিলেন

জন হেনরি (John Henry) বা জামাইকা ফেয়ারওয়েল (Jamaica Farewell) এই গানগুলো কি শুধুই গান? নাকি এরা অস্তিত্বের অংশ! কোকোনাট ওম্যান (Coconut Woman) বা ডে ও (Day O)র মতো জীবনীশক্তিতে ভরপুর গান শোনেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে সত্যিই বিরল!  

দেশ কাল পাত্রকে এমন সব গানের মালা গেঁথে বেঁধেছিলেন যে গায়ক-নায়ক, সেই মানুষটি হলেন হ্যারি বেলাফন্টে। 

তবে আকাশছোঁয়া প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি শুধু আপনারে লয়ে আপনার পরিচয় রচেননি। তাঁর অন্তরের আনন্দ নিকেতনে ঠাঁই দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে, বিশেষত তাঁরই মতো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষগুলিকে যাঁদের অপরাধ শুধু কালো বলে বঞ্চিত, অপমানিত, নিপীড়িত। 

সুদীর্ঘ জীবন হ্যারির। সাতানব্বই বছরের জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময় – সাফল্য আর লড়াইয়ের প্রামাণ্য দলিল। 

হ্যারি জন্মেছিলেন নিউ ইয়র্কের হারলেমে, এক ক্যারিবিয়ান পরিবারে। ‘তারে জমিন পরে’র সেই ইশান অবস্তিকে মনে আছে নিশ্চয়ই সবার! তার মতো হ্যারিরও ছিল ডিসলেক্সিয়া। তাই সতেরো বছর বয়েসে হাইস্কুলের পাট চুকিয়ে হ্যারি যোগ দিলেন ইউ এস নেভিতে। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন। ফিরে এসে কাজ পেলেন ঝাড়ুদারের। 

কিন্তু জীবন? সে যে বড় অঘটন-ঘটন-পটিয়সী। কখন যে সে কোন খেলা খেলে!

তাই হ্যারি তাঁর কাজের জন্য একদিন এক মালিকের কাছ থেকে কী টিপস পেলেন জানেন? দুটো থিয়েটারের টিকিট। 

সপ্তাহের শেষে একঘেয়ে জীবনে একটু আনন্দের স্বাদ নিতে হ্যারি গেলেন থিয়েটার দেখতে আমেরিকান নিগ্রো থিয়েটারে।  

সে রাতের কথা অনেকবার ফিরে এসেছে হ্যারির ইন্টারভিউতে। সে রাতেই যে গানের পাখি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ভেতর থেকে কে যেন বলছে এই পথেই যেতে হবে…এ পথেই পাবে তোমার আরাধ্য!

সিডনি পইটারের সঙ্গে

যে সময় প্রেমে পড়লেন থিয়েটারের, তখনই বন্ধু হলেন একজন যিনিও পরবর্তীকালে খ্যাতির শিখরে উঠবেন, বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক অস্কারবিজয়ী (প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা, Lilies of the Field সিনেমার জন্য) সিডনি পইটার। তবে সেই ১৯৪০ সালে দুজনেরই হাঁড়ির হাল। কিন্তু সপ্তাহান্তে থিয়েটার না দেখলে জীবন রাখার মানে কী? তাই যে করেই হোক একটামাত্র  টিকিট কেটেই থিয়েটার দেখা। একজন দেখেন কয়েকটা সিন, আর একজন বাকিগুলো। তারপর বেরিয়ে এসে দুজনেই দুজনকে জানিয়ে দেন না দেখা অংশগুলো।

চল্লিশ সালের শেষে হ্যারি আর সিডনি নিউইয়র্ক শহরে ড্রামাটিক ওয়ার্কশপ অফ দ্য নিউ স্কুলে অভিনয় শিখতে শুরু করলেন। নামকরা মানুষের ভিড় তখন সে স্কুলে। কে নেই? বড় বড় অভিনেতা, পরিচালক যার মধ্যে ছিলেন মারলন ব্র্যান্ডোও। অভিনয় শেখার সঙ্গে সঙ্গে নিউ ইয়র্কের ক্লাবে হ্যারি গাইছেন গান, অভিনয় শেখার খরচা তো চালাতে হবে। 

প্রথম মঞ্চে নামলেন হ্যারি বিখ্যাত জ্যাজ গায়ক চার্লি পার্কারের গ্রুপের সঙ্গে। পপ সিঙ্গার হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল কিছু দিনের মধ্যেই। কিন্তু হ্যারির আগ্রহ তৈরি হল ফোক মিউজিক বা লোক সঙ্গীতে। গুরু মানলেন পল রোবসনকে। 

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলল বেলাফন্টের সঙ্গীত রথ। প্রথম একক অ্যলবাম বেরোল ১৯৫৩ সালের ২৭শে এপ্রিল, নাম মাতিলদা। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল হ্যারির গান।  

এরপর প্রকাশিত হল সেই যুগান্তকারী লং প্লেয়িং রেকর্ড পৃথিবীতে প্রথম বছরে দশ লক্ষ কপি যার বিক্রি হল। বিখ্যাত Calypso! শুধু আমেরিকাতেই নয়, ইংল্যান্ডেও এর আগে কোনো গানের অ্যালবামেরই বছরে দশ লক্ষ কপি বিক্রি হয়নি। মাসের পর মাস ধরে আমেরিকায় এই অ্যালবাম এক নম্বরে পাকাপাকি বসেছিল। Billboardএর টপ ১০০ অ্যালবামের মধ্যে চার নন্বরে আছে এই ক্যালিপসো। সারা আমেরিকাবাসী তখন গাইছে আর নাচছে ক্যালিপসোর সুরে সুর মিলিয়ে। ক্যালিপসোর সুর তারা আগে শোনেনি। 

ক্যালিপসো লোকসঙ্গীত উনবিংশ শতাব্দীতে ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ত্রিনিদাদ আর টোবাগো অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়। সেই সুরেই গান বাঁধেন বেলাফন্টে। Day O আর Jamaica Farewell লোকের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। 

অজস্র জনপ্রিয় অ্যালবাম এরপর বেলাফন্টের আর পুরস্কারের ওপর পুরস্কার। তিনিই প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান যিনি পেলেন Emme পুরস্কার। তারপর একের পর এক! পুরস্কারের তালিকা দিয়ে এ লেখাকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না, সে তো গুগল করলেই পাওয়া যাবে। 

চলচ্চিত্রের অভিনেতা, ডরোথি ডানব্রিজের সঙ্গে

শুধু গান নয় চলচ্চিত্রেও অভিনেতা হিসেবে নাম করলেন হ্যারি। প্রথম সিনেমা ১৯৫৩ সালে ডরোথি ডানব্রিজের সঙ্গে।। তারপর একের পর এক বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয়। সাফল্যের শীর্ষে এই গায়ক নায়ক। মজার কথা এই যে প্রথম সিনেমায় কিন্তু হ্যারির লিপে গান গেয়েছিলেন অন্য এক শিল্পী। 

একজন অনন্য শিল্পীই শুধু বেলাফন্টে নন, তিনি একজন মানবদরদী লড়াকু চরিত্রের মানুষ। আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন তিনি। পল রোবসন যার গান শুনে এখনও আমাদের বুকের রক্ত ছলাত করে ওঠে তিনিই মেন্টর ছিলেন হ্যারির। নিপীড়িত শোষিত মানুষের জন্য সারা জীবন লড়াই করে গেছেন হ্যারি বেলাফন্টে। 

“Belafonte is said to have married politics and pop culture…”

যে সময়ে হ্যারির আত্মপ্রকাশ ঘটছে শিল্পী হিসেবে তখন গোটা আমেরিকা উত্তাল সিভিল রাইটস মুভমেন্টে- কালো মানুষদের ন্যায্যঅধিকার পাবার জন্য সে লড়াই। 

সালটা ১৯৫৫। রোজা পার্কস নামে এক তেজোদীপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বাসে নিজেদের চারটি সিট সিট এক শ্বেতাঙ্গিনীর জন্য খালি করে দিতে অস্বীকার করেছেন। মন্টগোমারি অঞ্চলে চলছে বিরাট আন্দোলন। এই ঘটনার ছয় মাস পরে হ্যারি পেলেন একটি টেলিফোন। 

কার জানেন? মার্টিন লুথার কিং ২ এর। 

মার্টিন লুথার কিং ২ এর সঙ্গে

সেই রাতে যে টেলিফোন এল তাতে হ্যারিই কথা বলেছিলেন বেশি। একথা হ্যারি তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। কিং একটি দুটি কথা বলছিলেন আর হ্যারি উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি যে কিং এর আন্দোলনে যোগ দিতে কত আগ্রহী তা বলেই যাচ্ছিলেন। কিং একটি দুটি কথায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁদের আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে যাচ্ছে রেডিও, টেলিভিশন, বেশ কিছু সংবাদপত্রে, সেই আন্দোলনে সাড়াও দিচ্ছেন আমেরিকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ, দলমতবর্ণ নির্বিশেষে,  কিন্তু হলিউডে কিছুতেই তেমন সাড়া জাগাতে পারছে না!

দীর্ঘ আলোচনার সেই টেলিফোন কলটি দুটি মানুষকে বেঁধে দিয়েছিল নিবিড় বন্ধুত্বে। 

Ossie Davis, Ruby Dee, Sammy Davis Jr., Dick Gregory র মতো সেলিব্রিটিদের নিয়ে আন্দোলনে নামলেন হ্যারি। এই সমস্ত শিল্পীরা তাদের কেরিয়ারের ঝুঁকি নিয়েও এসে দাঁড়ালেন নিপীড়িত কালো মানুষের পাশে, গর্জে উঠলেন বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নেতৃত্বে হ্যারি। 

সেই টেলিফোন দুটি মানুষকে শুধুমাত্র অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধেনি বদলে দিয়েছিল দুটি মানুষের জীবন। হ্যারির উচ্ছলতা স্বস্তি দিয়েছিল আপাত গম্ভীর স্বল্পবাক মানুষটিকে। তাই হ্যারির অ্যাপার্টমেন্টে আছে সেই বিরল ছবি যেখানে কিং ফেটে পড়েছেন প্রাণখোলা হাসিতে। 

জীবনের সর্বক্ষেত্রে কিং পাশে পেয়েছেন হ্যারিকে। আন্দোলনের জন্যে টাকা তুলতে হবে – হ্যারি, কিং এর বিয়েতে পাশে হ্যারি। গোপনে লুকিয়ে থাকতে হবে কিংকে অতি বিশ্বস্ত সহচরও জানবে না সেই জায়গা- কোথায়? হ্যারির একুশ কামরার অ্যাপার্টমেন্টের ক্লোজেটে। 

কিং এর মৃত্যুর পরও হ্যারি বয়ে নিয়ে চলেছেন সেই আন্দোলনের দীপ্ত মশাল। হ্যারি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন সাংবাদিকদের কাছে,  “Paul Robeson had been my first great formative influence; you might say he gave me my backbone. Martin King was the second; he nourished my soul!”

মার্টিন নিহত হবার পরও আজীবন তাঁর পরিবারের পাশে থেকেছেন হ্যারি। 

আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন এই মানুষটি, সে সিভিল রাইটস মুভমেন্টে বা ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদে। জোবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমেরিকার বৈদেশিক নীতির সমালোচনায় মুখর ছিলেন হ্যারি। 

সারা জীবন  সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, পাশে থেকেছেন হাজার হাজার মানুষের। আফ্রিকার মানুষের জন্যে তাঁর Grammy award পাওয়া গান “We are the World” অজস্র শিল্পীদের দিয়ে গাইয়ে বিশাল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন। UNICEF তাঁকে goodwill ambassador হিসেবে সম্মানিত করেন। 

এই মানুষটির কথা লিখতে বসলে শেষ করা মুশকিল। 

সিভিল ওয়ার মুভমেন্টের একটি কাহিনি দিয়েই এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষ করব। 

হ্যারি তো কত সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন, কিন্তু জীবনমঞ্চে যে অভিনয় করেছিলেন ১৯৬৪ সালে ওহাইও স্টেটের মিসিসিপিতে, তার মতো রোমাঞ্চকর ঘটনা বোধহয় রুপোলি পর্দাতেও করেননি। 

সিভিল রাইট মুভমেন্ট তখন তুঙ্গে। মিসিসিপিতে কৃষাঙ্গ মানুষেরা অহিংস আন্দোলন করছেন সাংবিধানিক অধিকার, ভোটাধিকারের উদ্দেশ্যে। স্বাধীন মানুষের মর্যাদা পাবার, সমানাধিকার পাবার জন্যে এই লড়াই। আন্দোলনের পুরোধায় আছে ছাত্রছাত্রীরা। ১৯৬৪ সালে Freedom Summer Project নামে একটি প্রোজেক্টের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা গোটা  দেশকে জানাতে চেয়েছিল যে কী ধরণের অমানুষিক অত্যাচারের মুখোমুখি তাদের প্রতি মুহূর্তে হতে হচ্ছে। 

এ বছরেরই জুন মাসে হাজার খানেক ছাত্রছাত্রী ওহাইও র অক্সফোর্ডে এল ট্রেনিং নিতে কীভাবে তারা সুষ্ঠুভাবে এই আন্দোলন চালাতে পারে। এই দলে বেশির ভাগই ছিল শ্বেতাঙ্গ। 

ঠিক এক সপ্তাহ পরেই তিনজন ভলান্টিয়র নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তাঁদের দুজন শ্বেতাঙ্গ, একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁরা গেছিলেন একটা পুড়ে যাওয়া চার্চের ব্যাপারে তদন্ত করতে। 

তিনজন জলজ্যান্ত মানুষের এমন নিখোঁজ হওয়াতে আন্দোলনকারীদের মনে যে একটু ভয় হয়নি তা নয়,  কিন্তু তবু তাঁদের কাজ চলছে জোর কদমে। হাজারে হাজারে ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ চালাচ্ছেন তাঁরা, ভোটাধিকার পেতেই হবে! 

শুধুমাত্র সিভিল রাইট মুভমেন্ট নয় পাশাপাশি চলছে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার শেখানোর কাজও । লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা জানছে কী এই সিভিল রাইটস আন্দোলন, কেন সেই আন্দোলন। 

মার্টিন লুথার কিং এলেন সেই আন্দোলনকারীদের উজ্জীবিত করতে। তাঁর আসার তিনসপ্তার মধ্যে সেই নিখোঁজ তিন  আন্দোলনকারীর মৃতদেহ পাওয়া গেল। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের। 

এই ঘটনা নিয়ে একটি বিখ্যাত সিনেমা আছে, “The Mississippi Burning!”

কিন্তু হ্যারির জীবনের রোমাঞ্চকর ঘটনা যা এই মিসিসিপিতেই ঘটেছিল তা কোনো অংশেই সিনেমার চেয়ে কিছু কম নয়!

ঘটনায় আসি। 

তিন ভলান্টিয়রের মৃত্যুতে জনরোষ ফেটে পড়ল। আরো আরো মানুষ এসে যোগ দিলেন আন্দোলনে। কিন্তু আন্দোলন চালাতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। 

কে দেবে এই অর্থের যোগান? 

হ্যারি ঠিক করলেন দেবেন সত্তর হাজার ডলার। কিন্তু পাঠাবেন কী ভাবে সেই উত্তপ্ত রণক্ষেত্রে? 

ডাক পাঠালেন বহুদিনের প্রাণের বন্ধু সিডনি পয়টারকে। 

মোটামুটিভাবে নিজেরা যা আলোচনা করলেন তা হচ্ছে এই। 

“বুঝলে সিডনি, টাকা পাঠানো কোনমতেই চলবে না, ক্যাশ নিয়ে গিয়ে ভলান্টিয়রদের হাতে দিতে হবে!”

“কে যাবে সেই মৃত্যুগুহায়!” বিস্মিত সিডনি।

“কেন আমরা!”

“আমরা! মাথা টাথা খারাপ হয়েছে না কি!”

একগাল হেসে হ্যারি বললেন, “আরে আমরা তো স্টার, তুমি তো চারমাস আগেই অস্কার জিতেছ, আর আমারও মোটামুটি নাম হয়েছে…” 

হ্যারির কথা শুনে হাসি ফুটল সিডনির মুখেও, বাঁকা হাসি, তাতে মাখানো ক্ষোভ। 

“তুমি তো হায়েস্ট পেড সিঙ্গার, বছরের পর বছর তোমার অ্যালবাম বেস্ট সেলার, কিন্তু তা সত্বেও ভুলে যেও না বন্ধু, আমরা স্টার হলেও সে তারার রং কালো!”

 যাই হোক গেলেন দুজনে। 

সে এক বিরাট অ্যাডভেঞ্চার। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পিছু নিয়েছে শত্রুপক্ষ। বিভিন্ন জায়গায় বিরাট ট্রাক এসে ধাক্কা মারার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবারই একটুর জন্যে বেঁচে যাচ্ছে তাঁদের গাড়ি। এইভাবে অনেকটা পথ যাবার পর দলের ভলান্টিয়ররা তাঁদের উদ্ধার করেন এবং পরে তাঁদের সম্বর্ধনা দেন। 

দুই সেলিব্রিটিকে পাশে পেয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে আন্দোলনকারীরা। 

Susanne Rostock এর ২০১১ সালের documentary ‘Sing Your Song’ এ হ্যারি আর সিডনি দুই বন্ধু তাঁদের মিসিসিপি অভিযানের কথা জানিয়েছেন। 

পয়েটার সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেছেন, “আমি তখন সাঁইতিরিশ, জীবনে সাফল্য পেয়েছি অনেক, কিন্তু ভালবাসা পাইনি।  সে রাতে যে ভালবাসা আর আনন্দ আমি পেয়েছি তার জন্য আমার এই বন্ধুটির কাছে চিরকৃতজ্ঞ। মজার কথা কী জানেন এত উত্তেজনার পরও সে তখন আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে গাইছে, Day O, গানের লাইনগুলোর (Day, is a day, is a day, is a day, is a day, is a day-o) বদলে গাইছে ‘freedom, freedom. Freedom come, and it won’t be long!’ আর শয়ে শয়ে মানুষ সেই সুরে সুর মিলিয়ে গাইছে। গানের শেষে হাতের কালো ব্যাগ উলটেছে হ্যারি, টেবিল ভরে উঠেছে এক ডলার, দু ডলার, পাঁচ ডলারের নোটে মোট সত্তর হাজার ডলারে!”

এক অনন্যসাধারণ মানুষ হ্যারি বেলাফন্টে। চলে গেলেন ছিয়ানব্বই বছর বয়েসে গত এপ্রিলে। অসীম শ্রদ্ধা জানাই এই বিরাট ব্যক্তিত্বকে! 

 
অদিতি পেশায় গণিতের অধ্যাপক। নেশা লেখালেখি। বাস আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা, বাংলা লাইভ, অপার বাংলা, বাতায়ন, শব্দের মিছিল, ও কলকাতা, ড্যাশ পত্রিকা সহ পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত 'অভিব্যক্তি নিউ জার্সি' পত্রিকার সম্পাদক।

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • কল্যানী মিত্র ঘোষ , July 18, 2023 @ 5:30 am

    অপূর্ব লাগলো প্রিয় গায়ক নায়ক সম্পর্কে এতো তথ্য বহুল একটি অনবদ্য লেখা পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *