আপিস কথা (৩)
মৃগাঙ্ক মজুমদার
৫
(আগের অংশ) প্রেম ব্যাপারটা ভালো। কিন্তু প্রেমের সাথে সাথে যা যা আনুষাঙ্গিক আসে, তাতেই অনেক বীরপুঙ্গবের আগুন ফুলকিতেও বেঁচে থাকে না, পোড়া ছাইয়ের খোলার মত এদিক সেদিক ভাসতে থাকে। তা প্রেম ভেস্তে গেলে ভাসা ছাড়া তো উপায় নেই। আর ভাসতে ভাসতে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তাও জানা নেই। ঠিক একইভাবে নকুড়ের জানা নেই বসের খ্যাঁকানি থেকে কী করে বাঁচতে হয়। সকালে আপিসে এসে নকুড় কোথায় ভেবেছিল দুটো প্রেমের গসিপের হালহকিকত রসিয়ে রসিয়ে শুনবে! গসিপ হল সফটওয়্যার আপডেটের মতো, সমানে নিজের ভালোর জন্য তৈরি রেখে দিতে হয়। ছোট থেকে বড়, যাই প্যাচ আসুক না কেন ছাড়া কিছুই উচিত না। তা না হলেই আউটডেটেড বলে সোজা একঘরে বিতাড়িত। অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কা তো সঙ্গে আছেই।
মদনের মেহেরবানিতে তার সেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার আর গসিপ গেলার আশা এখন নির্বাসিত আর অন্তর্হিত। মদনমোহন মেহেরার সাথে অনেকবার নকুড় দস্যু মোহন আর মোহনভোগের তুলনা করতে চেয়েছে। কিন্তু, অন্তে একটাই কথা বিড়বিড়িয়ে বেরিয়ে আসে মুখ থেকে “মদনা”। বস হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। বিশেষ করে তারই হাতে যখন তোমার অ্যাপ্রাইজাল, তখন তো তার অধিকার যে সে তোমাকে তুর্কিনাচন নাচাবে কাজের নামে। তার চেয়েও বড় কথা, প্রত্যেক আপিসের বস কিছু ‘খোঁচড়’ পোষে, যাদের কাজ মূলতঃ বসের তাঁবেদারি করা আর খবর পাচার করা। আপিসে হাজার সিসিটিভি লাগানো থাক বা না থাক, বসের এইসব পেয়ারের পেয়াদারা একটা সুযোগও ছাড়ে না নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার। তেনারা থাকেন বসের কান ভারী করার জন্য। তাছাড়া বসের কাছে প্রমাণ করাও যে তাদের থেকে বিশ্বস্ত সারা আপিস জুড়ে কেউ নেই।
অবিশ্যি এদের মধ্যেও দলবাজি আছে , কে কতটা বসের কাছে সেটা প্রমাণ করার জন্য, সারাক্ষণ প্রতিযোগিতা লেগে আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার খোলাখুলি জাহির করে বসের প্রতি আনুগত্যের কথা বলে বেড়ায়, আবার কেউ গোপনে কাজ সারে। কাকপক্ষী টের পায় না। এদের দেখে মাঝে মধ্যে নকুড় ভাবে, এদের চাকরিটা কিসের যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছিল? সেটা কি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত কিছু ব্যাপার নাকি এরা যেকোনও সফরে নিজের সিটের থেকে (আসন বললে যদি আবার লোকজন ঠাকুর-ভগবানের পর্যায়ে চলে যায় !) পাদানিটাই বেশি পছন্দের বলে ভাবে? এদের জীবনে আপিসের কাজ তো আছে ঠিকই, তবে তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বসের জন্য খবর যোগাড় করে আনা। সেই চামচাদের লাফালাফিতে কাজের অনেক সময় ব্যাঘাত ঘটে। তাও খামোখা খামচা খামচির ভয়ে নকুড় একটা সাধারণ দূরত্ব রেখে চলে। কখন কোথাও কিছু ঘটে গেলে কে তার দায় সামলাবে! এই চামচাদের গতিবিধি সর্বত্র, মানে তাদের নিজেদের দপ্তর ছাড়াও বাকি দপ্তরে যাতে অনায়াসে বিচরণ করতে পারে তার ব্যাবস্থা নানাভাবে পাকা করে রেখেছে।
মদনারও আছে প্রচুর এরকম, আবার কেউ কেউ মদনাকেই চুক্কি দিয়ে তার উপরে খবর চালান দেয় মদনাকে নিয়ে। এদের উচ্চাশা আর ইচ্ছা দুটোই বেশি। সাপ আর ব্যাঙ একসাথে দু’মুখেই চুমু খেতে এরা সিদ্ধহস্ত। এদের শিল্পকর্মের বাহবা না দিয়ে পারা যায় না। মাঝে মাঝে নকুড়ের মনে হয়, এরা যদি রাজনীতি তে নামতো তাহলে এদের উন্নতি ঠেকানো প্রায় মুশকিল হয়ে যেত। তবে এরা নেতা সেইভাবে কোনদিনই হতে পারত না। কারণ, অভ্যেসই নেই। মাথার ওপরে গডফাদার জাতীয় কেউ না থাকলে এরা আবার ঠিক মতো করে এদের কাজগুলো করার ভরসা পায় না। তাই তাদের পেয়ারের বস যদি কোনো সময়ে বদলি হয়ে যান তা হলেই তারা পড়েন পাঁকে। তাদের হালি পানি দেওয়ার মতো কেউ থাকে না তখন। নতুন আমদানীকে বাগে আর বগলে পেলে আপিসের সবার আগে নিজের দিকে করে নেওয়াটাই এদের মহতী উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে।
তাদেরই একজন সক্কাল থেকে চোখের সামনে ভনভনিয়ে নানা ছুতোনাতায় নকুড়ের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যাটার কাছে পাক্কা খবর আছে যে মদনার ঘরে নকুড়ের ডাক পড়েছে। জবাই হবার আগে ছাগলের যা হাল হয় সেটা দেখে আনন্দ নেবার চেষ্টা করছে। আর তা না হলে নকুড়ের হাবভাব বুঝে মদনাকে একদম গ্রাউন্ড জিরো থেকে রিপোর্ট করবে।
নকুড়ের কম্পিউটারের মনিটারে যা যা ফুটে উঠছে, সঙ্গে সঙ্গে তার নোট নেওয়া হয়ে যাচ্ছে। এতে নকুড়ের যে খুব একটা হেলদোল হচ্ছে তা না। তবে কি না এই সময়টা ওই বাথরুম মানে যাকে বলে ওয়াশরুমের আশে পাশে একটা ছোটখাট জটলা হয়। আপিসে এসে মোটামুটি টেবিলটা সামলে, পঁয়তাল্লিশ মিনিট কি এক ঘন্টার মধ্যে এই জটলাটা হবেই যদি একটু কাজের চাপ কম থাকে। প্রথম প্রথম নকুড় ভাবত, সারা আপিসের ঠিক এই সময়েই কেন বেগ চাপে ? যত দিন গেছে নকুড় বুঝেছে এটা যত না বেগ, তার চেয়ে বেশি আবেগ। মানে গসিপের আবেগ আর কী। কেউ ফোঁকে আবার কেউ, ফ্লাশের নবটা ঘুরিয়ে এসে দলে যোগ দেয়। কেউ টান মেরে হালকা, কেউ নামিয়ে দিয়ে হালকা, আর বাকিটা তো সেই মুচমুচে রোজকার খাস্তা খবর। সেইসব আকর্ষণীয় মাধ্যাকর্ষণের টান বাধ্য হয়ে ভুলে থেকে কাজে মন দিচ্ছে নকুড়। হাজার হলেও বস বলে কথা!
বেশিরভাগ সময়ে বসেদের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ আর না-তে না মেলানোটা যে কোনো আপিসের গীতা, বাইবেল, কুরআন , ত্রিপিটক ইত্যাদি বা সংবিধানের প্রথম কি দ্বিতীয় অধ্যায়ে থাকেই থাকে। সেটা যে পালন না করে তার ভাগ্যে এই ধরাধামের সবচেয়ে লম্বা ঘাসের আগা আর গোড়া দুই অপেক্ষা করে থাকে। আড়ালে এবং ‘খোঁচড়’দের চোখ, কান বাঁচিয়ে প্রাণপণে বসকে গালাগাল করা যেতেই পারে। তবে সামনে তখনি করা যায়, যখন চাকরি ছেড়ে হয় আউল বাউল সন্ন্যেসী হবার মতলব থাকে, না হলে নিজের ব্যবসা খোলার ইচ্ছে। মানে নিজের মত কিছু করার ইচ্ছে না থাকলে চাকরি বাকরিতে বসকে গাল দেওয়া মানে নিজের পায়ে না শুধু, হাতে গলায় সর্বত্রে সেই কুড়ুল দিয়ে নিজেকে কোপানো।
নকুড় এও দেখেছে, এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে ঢুকলেও আগের বসকে গালি দেওয়া, যাকে বলে নৈব নৈব চ। কারণরিলিজ লেটার আর ওই কাগজে লেখা শংসাপত্র, যাতে কি না হলফ করে বলা থাকে যে আমাদের কোম্পানি থেকে যে স্যাম্পেলটি তোমাদের কোম্পানিতে যাচ্ছে তাকে সামলানোর দায় একান্তই তোমাদের। আমরা আমাদের হ্যাপা সামলেছি আমাদের মতো করে। এর পর তোমাদের যা মনে হয় কোরো। এটুকু জানিয়ে রাখি, আমাদের এখানে ভাল হয়ে ছিল (কারণ ত্যাঁদড়ামি করতে দেওয়া হয়নি ) ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সব দেখে নতুন কোম্পানি তাদের যুদ্ধনীতি তৈরী করে। তা জীবনের পেত্থম চাকরীর শুরু থেকেই নকুড়ের এইরকম কোন ইচ্ছে নেই। তার চেয়ে কাজটা ভালো করে করতে পারলে ‘ইনক্রিমেন্ট’ এর গন্ধটা যদি ভালো করে আর বেশি করে টেনে নেওয়া যায়, তা হলে চাপটা কম থাকবে জীবনে।
যেসব নারীকুলের কাহিনী নিয়ে মাতার কথা ভাবছিল নকুড়, তা মাথায় উঠে যাওয়ায়, এক্সেল শিটটা ভালো করে দেখে নিয়ে, পাশে রাখা চা এর কাগজের কাপটাতে শেষ চুমুকটা মেরে হালকা টোকায় চেয়ারের পাশের ডাস্টবিন মানে ওয়েস্টবক্সে ফেলল। মেইল বক্সটা খুলে মদনাকে মেইল করল ফাইলটা অ্যাটাচ করে। হাত ঘুরিয়ে কবজির ঘড়িটা দেখল, এবারে হাঁটা দিতে হবে, নইলে সে নিজেই গসিপ না হয়ে পুরো গল্প হয়ে যাবে। গসিপটা কেবিন থেকে বেরিয়েই না হয় যোগাড় করা যাবে...
৬
সারাক্ষণই যদি কেউ গসিপ করে, তবে কি তার জন্য তাকে আপিস বসিয়ে রেখে বেতন দেয়? এই প্রশ্নটা নকুড়ের মনে অনেকদিনই ঘোরাফেরা করছিল। কিছু পাবলিক আছে আপিসে এসে খালি গাবজাল দেয় আর অন্যের ঘাড়ের উপরে সব কাজের ভার ফেলে নিজেরা ল্যাজ নেড়ে বেড়ায়। আপিসে প্রেম হওয়াটা এমন কিছু চাপের ব্যাপার না। মানে ওই আর কী , যদি খাপে খাপ লেগে যায় তো ব্যাপারই আলাদা। তবে কিনা, এখন তো এমনতে কেউই খালি থাকে না চট করে, এক যদি না কারো কোনরকম ভাবে পরকীয়া নেশা থাকে। নকুড় দেখেছে সেইসব লোকেদের যারা পরকীয়াতে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের মধ্যে একটা নিষিদ্ধ উত্তেজনা অনুভব করে। অ্যাড্রিনালিন না কী- ওই জাতীয় হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। সারাক্ষণ কীরকম গুলিখোর গাঁজাখোরের মত ঘোরের মধ্যে থাকে। তবে কি না, চট করে আপিসের কাজে ভুল করে না। আরে বাবা, আপিসে ভুল করলে যদি চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে! আর সাধের চাকরি কেউ টেনে ছিঁড়ে খেয়ে নিলে তখন প্রেমের প্রয়োজনের ১০৮ বার নামাবলী, পাঁচালি তো হবেই আর তার সাথে আপিসে রোজ দেখা, লুকিয়ে বা চোখের সামনে নানাভাবে কথা বলার সুযোগটাও ফস্কে যাবে। এমন সুযোগ কেই বা হারাতে চায়। তাই এদের একটাই মূলমন্ত্র নকুড় দেখেছে,’ পরকীয়াতে নেই লাজ / যদি সাথে করো আপিসের কাজ’।
তবে এই মুহুর্তে নকুড়ের নিজের ল্যাজ আর লাজ দুটোই বাঁচানোর সময়। মদনা ওরফে নকুড়ের বড়বাবু ডাক দিয়েছেন । অতএব নকুড়কে সশরীরের হাজির হতে হবে। বড়বাবু গোত্রের লোকগুলোরও অনেক খেয়ালখুশি আর মর্জি থাকে, যা বুঝে বুঝে গা বাঁচিয়ে চলতে হয়।
আপিসের ঢোকার দিন থেকে নকুড় তার পাড়ার আড্ডাখানার ইয়ারদের থেকে শুনে এসেছিল – বস ইজ অলওয়েজ রাইট। তা সেই থেকে ডানপন্থী হয়েই আপিসে থাকে । তবে মাঝে মাঝে বিদ্রোহী বামপন্থী হতে চায় না এমনটা নয়। কিন্তু তার বাঙালি মধ্যবিত্ত মানসিকতা তাকে ভিতর থেকে চোখ রাঙিয়ে চুপ করতে বলে। তাই শুনে সাধারণত গুটিয়ে থাকা মন আরো গুটিয়ে কেঁচোর মতন হয়ে যায়। কে আর সাধের চাকরিকে চ্যালঞ্জ জানাতে চায়! বিশেষ করে চারিদিকে আজকাল সে চাকরির বাজার হোক বা আপিসে উন্নতির ইচ্ছার আর ব্যাজারমুখের ভিড়। এই ব্যাজার মুখের জয় আজকাল প্রায় সর্বত্র তা সে ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মচারী । এর মধ্যে সদ্য সদ্য আপিসে গিয়েছে অ্যাপ্রাইজালের ঝড় ঝঞ্ঝাট তাই নিয়ে ভিতরে ভিতরে অনেকি চটে কাঁই। গোমড়া মুখে সুযোগ পেলেই গজগজ করে চলেছে, তাদের প্রতিভা আর খাটনির কোনোই দাম দিল না এই আপিস। নকুড়ের কিছু তেমন বলার নেই। কারণ সে সদ্য ঢুকেছে তার পর স্রোতের বিপক্ষে গা ভাসানোর পক্ষপাতী নয়। তবে এটা শুনে বুঝেছে কর্মচারী আর ম্যানেজমেন্টের লড়াই চিরন্তন আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দুপক্ষের কেউই একে অন্যের উপর খুশি থাকে না। একটা আপাত সহাবস্থান চলে, যাতে দু’পক্ষের কারোরই পিছনে আগুন না লাগে। তবে কি না আপিস বলে কথা এখানে ব্যক্তিগত উন্নতি আর স্বার্থসিদ্ধিতে সিদ্ধহস্ত বহু মহান ব্যক্তির দেখা পাওয়া যায় যারা সব ঝড় সামলেও নিজের বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে নিজেদের অস্তিত্ব সারা আপিস জুড়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেন। এদের আপাতদৃষ্টিতে চক্ষুলজ্জার বোধটা কম। তবে ভান করে থাকেন লজ্জার। এখানে বলে নেওয়া আবশ্যিক যে এই ভান একশ শতাংশ বিশুদ্ধ। এতে কেউ কোন ভাবে যেন ভেজাল না খোঁজেন।
এই অ্যাপ্রাইজালের ব্যাপারটা নকুড়ের কাছে সেই স্কুলের পরীক্ষার খাতা দেখার মত, যে শিক্ষকের কাছে যে ছাত্র যত প্রিয় তার নম্বরটাও ঠিক একইভাবে বাড়তে থাকে। এই আপিসেও কাজ ছাড়াও যার যার মধ্যপ্রাচ্যে তেলের খনি আছে বা ‘ওপেক’ দেশগুলির সঙ্গে সরাসরি তেল যোগানের চুক্তি আছে তারাই এন্তারে নিজেদের বড়বাবু বা বসেদের তেল দিয়ে থাকেন। সারা বিশ্বে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম যাই থাকুক না কেন, দেশের মধ্যে তেলের দাম যতই বাড়ুক না কেন , এদের কাছে দেবার মত তেলের ঘাটতি কোনদিনও হয় না। এরা বিজ্ঞান কতটা মানেন তাই নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকতেই পারে। তার সঙ্গে এদের ডারউইনের ‘সারভ্যাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’ এর থিয়োরি মানা নিয়ে সন্দেহের লেশমাত্র যে থাকতে নেই সেটা সবাই কিছুদিনের মধ্যে বুঝে যান।
নকুড় এদের প্রতিভার তারিফ না করে পারে না। সাধারণত এদের সবার সঙ্গে হাসিমুখের সম্পর্ক থাকে। সেটা ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ এরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করেন। দরকার পড়লে সেই হাসিমুখেই অন্যের গলায় ছুরি বা যথাস্থানে বাঁশ দিতে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ করেন না। তবে ছুরি দিয়ে প্রাণহানি না করে এরা মানহানি বা অন্যের কর্মহানিতেই নিয়োজিত করেন নিজদের আর তা তখনই করেন, ঐ যে একটু আগেই বলা হল - নিজেদে র ক্ষতির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকলে তবেই তেনাদের দাঁত নখ সব বেরিয়ে পড়ে।
দাঁত নখের কথা মাথায় আসতেই নকুড়ের মাথায় মদনার ছবিটা ঝিলিক মারে। কাজে ভুল হলেই মদনার ভিতর থেকে একটা শ্বাপদ রূপ ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে। তখন ঠিক থাকে হায়েনা না নেকড়ে - কী যে বলা যাবে সেটা ঠিক করার সময়ই থাকে না ক্রমাগত আক্রমণ আর হুঙ্কারে। বাঘও মনে হয় খালি একটা জায়গায় এসেই হোঁচট খায়। টেকো আর ভুঁড়িওয়ালা বাঘ তো দুরের কথা নকুড় হায়েনা, নেকড়ে নিদেন পক্ষে শেয়ালও দেখেনি। তাই কী রকম গুলিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে ভাবে, বিবর্তনের কোন ধারায় এইরকম নমুনা পয়দা হয়? এইরকম একটা লোকের কেবিনে যাবার নাম শুনলেই পেটের ভিতরটা গুড়গুড় করতে থাকে। আজকের চা তে কি কিছু মেশানো ছিল? একটু ওয়াশরুম গেলে ভালো হত কিন্তু হাতে একেবারে সময় নেই, ধুত্তোর ...
(পরের অংশ)
লেখক পরিচিতি: মৃগাঙ্ক একটি যাযাবর বোহেমিয়ান পাখির উড়ান জীবন। বিজ্ঞাপনী ভাষা লিখে আর বলে তার পেট ভরে। আর্ন্তজালের রাজ্যে হানা তার ট্যাঁক ভরানোর জন্য। হাওয়ার প্রবল টানে গতিপথ বহুবার বদলালেও লক্ষ্য স্থির। একদা ভারতের রাজধানী বঙ্গদেশের কলকাতাতে হলেও প্রবাসী তকমাতেই জীবন কেটেছে আর কাটছে। লেখালিখি ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক বহু বছর ধরে। আগ্রহ নাটক, সিনেমা, কবিতা, সাহিত্য, রান্না, ছবি তোলা, বিনা প্রস্তুতিতে বেরিয়ে পড়া মন চাইলে, বই পড়া আর প্রিয় পরিবার এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো।
(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।
Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.