প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)

অনুচ্ছেদ
- ১২
একটি ছকের আংশিক বিশ্লেষণ
এখন পর্যন্ত যা শেখা
হয়েছে সেটা কাজে লাগিয়ে ৪র্থ অনুচ্ছেদের ২(ক) চিত্রে দেখানো
ছকের কিছুটা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। একই জন্মকুণ্ডলীর নবাংশটি
৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে সংযোজিত হয়েছে। বিশ্লেষণের জন্য এটিও প্রয়োজন।
এ দুটি ছবি কাগজে এঁকে নিয়ে সামনে রাখুন। প্রথমে বিভিন্ন
রাশিতে গ্রহের অবস্থান, তাদের দৃষ্টি, তাদের নক্ষত্র বল,
নবাংশ ইত্যাদি দেখে নেওয়া যাক। এটা করতে গিয়ে যে সব নিয়ম
আগে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলিরও একবার
অনুশীলন করা হবে।
(১)
আলোচ্য জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন মীন ও রাশি কর্কট ( যেহেতু চন্দ্র
কর্কট রাশিতে রয়েছে) । লগ্নপতি বৃহস্পতি ৯মে বৃশ্চিক রাশিতে
রয়েছে। বৃশ্চিক রাশির অধিপতি মঙ্গল বৃহস্পতির মিত্র হওয়ায়,
বৃহস্পতি বন্ধুর ঘরে অবস্থিত।
(২) ৯ম ঘর সবচেয়ে শক্তিশালী
ত্রিকোণ (triangular house)। সেখানে বৃহস্পতির অবস্থান বেশ
ভাল। আবার গ্রহটি রয়েছে ১৬ নং অর্থাত্ বিশাখা নক্ষত্রে যার
অধিপতি বৃহস্পতি নিজেই। নবাংশে বৃহস্পতি কর্কটে নিজের তুঙ্গীক্ষেত্রে
(৭ম অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য)
অবস্থান করছে। এগুলি সবই বৃহস্পতির পক্ষে ভাল। কিন্তু লগ্ন
মীন রাশির ১৫ ডিঃ ৮ মিনিটে হওয়ায় ৯ম ভাবের মধ্যবিন্দু পড়েছে
বৃশ্চিক রাশির ১৫ ডিঃ ৮ মিনিটে (৭ম
অনুচ্ছেদ)। যেহেতু বৃহস্পতির অবস্থান ১ ডিঃ ১২ মিঃ অতএব
বৃহস্পতি প্রায় ৮ম ও ৯ম ভাবের সন্ধিতে ( ৮ম
অনুচ্ছেদ ) রয়েছে। আবার তার অবস্থান বৃশ্চিক রাশির ১
ডিঃ ১২ মিঃ হওয়ায় বৃহস্পতি বৃশ্চিক রাশির গোড়ায় বা রাশিসন্ধিতে
রয়েছে। একে বলে গ্রহের শৈশাবস্থা (state of infancy )। এই
শেষের দুই কারণে বৃহস্পতি ঠিক কাঙ্খিত ফল দিতে পারবে না।
(৩)
শনি নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ। মীন লগ্নের পক্ষে শনি ১১শ (আয়ভাব)
ও ১২শ (ব্যয়ভাব) ভাবের অধিপতি। বসে আছে মেষ রাশিতে অর্থাত্
২য় ভাবে। ২য় ভাব পরিবার, সঞ্চয় ইত্যাদির সূচক। মেষরাশি শনির
নীচস্থান হলেও বক্রী হওয়ায় ৭ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে
চেষ্টাবল যুক্ত হয়েছে। এ জন্য শনি তার দুর্বলতা অনেকটাই
কাটাতে পেরেছে। শনি বসে আছে ২নং ভরণী নক্ষত্রে; অধিপতি শুক্র।
শুক্র ৭ম ভাবের বা জায়া ( স্বামী বা স্ত্রী ) ভাবের কারক।
শনি মঙ্গল ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
(৪) ৫ম পতি চন্দ্র
৫ম ঘর কর্কটে রয়েছে। অর্থাত্ চন্দ্র স্বক্ষেত্রে আছে। চন্দ্র
থেকে রবির দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী হওয়ায় চন্দ্র এখানে ক্ষীণচন্দ্র
নয় এবং কোনও অশুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্টও নয়। ৫ম ঘর একটি ত্রিকোণ
এবং ৫ম ভাব থেকে আবেগ, বুদ্ধি ইত্যাদি বিচার করা হয়। আলোচ্য
কোষ্ঠীতে চন্দ্র বৃহস্পতির ৯ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। লগ্ন,
লগ্নপতি বৃহস্পতি ও ৫ম পতি চন্দ্র তিনটি কোণে বসে আছে -
লগ্ন থেকে ৫মে চন্দ্র, চন্দ্র থেকে ৫মে অর্থাত্ লগ্ন থেকে
৯মে বৃহস্পতি।
(৫)
৩য় ও ৮ম পতি শুক্র ৮ম ঘরে তুলারাশিতে নিজের মূলত্রিকোণে
(৭ম অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত। রয়েছে ১৬নং বিশাখা নক্ষত্রে - নক্ষত্রের
অধিপতি বৃহস্পতি। শুক্র শনির দ্বারা দৃষ্ট। ৩য় ও ৮ম ঘর থেকে
আয়ু বিচার হয়। শনিও আয়ুষ্কারক গ্রহ। ৩য় স্থান পরাক্রম, ধৈর্য্য
ইত্যাদিরও কারক। এ ছাড়াও শুক্র ৭ম ভাবের (জায়াভাবের) কারক।
৮ম স্থান, আগেই বলা হয়েছে, দুঃস্থানের মধ্যে নিকৃষ্টতম।
৮ম ভাব বাধা, বিপত্তি, বিঘ্ন ইত্যাদির কারক।
(৬) ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল
৮ম ঘর তুলায় অবস্থিত। কোনও ভাবের অধিপতির সেই ভাবের দ্বাদশে
বসে থাকা সেই ভাবের পক্ষে শুভ নয়। কোনও ভাবের ১২শ স্থান
সেই ভাবের ক্ষতি বা ব্যয় সূচনা করে। ৯ম হ'ল ভাগ্যস্থান এবং
২য় পরিবার, সঞ্চয় ইতাদির স্থান। মঙ্গল রয়েছে ১৫নং স্বাতী
নক্ষত্রে - নক্ষত্রের অধিপতি গ্রহ রাহু। মঙ্গল শনির দ্বারা
দৃষ্ট। রাহুর ৯ম দৃষ্টি ধরলে ( অনেক জ্যোতিষী এটা মানেন
না ) শুক্র ও মঙ্গল রাহুর দ্বারা দৃষ্ট।
(৭)
৬ষ্ঠ পতি রবি ১০মে ধনুরাশিতে আছে (অধিপতি বৃহ্রপতি)। ১০ম
ভাব চাকরী, কর্ম, জীবিকা ইত্যাদি নির্দেশ করে এবং ৬ষ্ঠ ভাব
থেকে প্রতিবন্ধকতা, শত্রু ইত্যাদি বোঝায়। রবি রয়েছে ১৯নং
মূলা নক্ষত্রে - অধিপতি কেতু। কেতু রবির ঘর ৬ষ্ঠেই বসে আছে।
কেতু ও রবি নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ। কেতু ১০নং মঘা নক্ষত্রে
আছে - মঘার অধিপতি কেতু নিজে।
(৮) ৪র্থ পতি ও ৭ম
পতি বুধ ১০ম ভাবে ধনুরাশিতে অবস্থিত। ৬ষ্ঠ পতি রবির সঙ্গে
থাকলেও দু'টি গ্রহের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৯ ডিগ্রি। বুধ
বসে আছে ২০নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে - অধিপতি শুক্র। ৪র্থ
ভাব থেকে মন, মাতা, বিদ্যালাভ, গৃহসুখ ইত্যাদি বিচার্যz।
কেতুর ৫ম দৃষ্টি গ্রাহ্য হ'লে (অনেক জ্যোতিষী মানেন না)
বুধ ও রবি কেতুর দ্বারা দৃষ্ট।
(৯)
রাহু বসে আছে ১২শে ব্যয়ভাবে, কুম্ভরাশিতে। কুম্ভরাশির অধিপতি
শনি ২য় ভাবে মেষে। রাহু আছে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে - অধিপতি
মঙ্গল। অনেক জ্যোতিষীর মতে ১২শ স্থান রাহুর পক্ষে সবচেয়ে
ভাল।
(১০)
নবাংশ চক্রটি পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, রবি, বৃহস্পতি, শনি,
মঙ্গল - এই চারটি গ্রহ নবাংশে তুঙ্গী। অতএব এই গ্রহগুলি
পরোক্ষে বল সঞ্চয় করল। নবাংশ লগ্ন বৃশ্চিক। অধিপতি মঙ্গল
৩য় ঘরে বসে আছে। ৩য় উপচয় স্থান। মঙ্গল তুঙ্গী বৃহস্পতি (কর্কট
রাশিতে রয়েছে) দ্বারা দৃষ্ট।
আলোচ্য কোষ্ঠীটির বিচারের
নিরীখে গ্রহদের অবস্থান, দৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে উপরে যা বলা
হয়েছে, সে সব নিয়ম বা ব্যবহৃত সংজ্ঞা সবই আগে আলোচনা করা
হয়েছে। আরও অনেক কিছুই রয়েছে যা আলোচনা করা হয় নি। তবে উপরের
পর্যালোচনা একেবারে আক্ষরিক অর্থে না ধরে একটু মন দিয়ে বুঝলে,
খুঁটিয়ে দেখলে অনেক ফলাফল বেরিয়ে আসবে। যেমন,
(ক)
বৃহস্পতির (লগ্নপতি) লগ্নে দৃষ্টি থাকায় জাতকের শরীর অত্যন্ত
বলিষ্ঠ ও সুগঠিত। লগ্ন মীন রাশিতে ও লগ্নপতি বৃহস্পতি দুইই
জলরাশিতে ( মীন ও বৃশ্চিক জলরাশি - ৩য় অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত
হওয়ায় শরীরে স্থূলত্বের ভাব রয়েছে। নবাংশ লগ্ন বৃশ্চিকের
অধিপতি মঙ্গল ৩য়ে মকর রাশিতে তুঙ্গী। এতে জাতকের শরীরের
বলিষ্ঠ ভাবই সমর্থিত হয়। ৩য় ভাব থেকে সাহস, পরাক্রম, কোনো
কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা ইত্যাদি বিচার্য। এই জাতক অত্যন্ত
পরিশ্রমী ও সাহসী।
(খ) চন্দ্র মনের কারক।
চন্দ্র কোনো অশুভ গ্রহ দ্বারা দৃষ্ট নয় এবং স্বক্ষেত্র কর্কটে
৫ম ঘরে অবস্থিত। এটা শুক্লপক্ষের চন্দ্র (যেহেতু রবি ও চন্দ্রের
মধ্যে দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী)। এসব কারণে চন্দ্র অত্যন্ত
শুভ ও শক্তিশালী। ৫ম ভাব থেকে আবেগ, উদ্ভাবনী শক্তি, বুদ্ধি
ইত্যাদি বিচার্য। জাতক অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ এবং চরিত্রে
ভণ্ডামীর লেশমাত্র নেই। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
দেয়। তবে চন্দ্রের এ ধরণের অবস্থান অতি সংবেদনশীলতার জন্য
জাতককে কোন কোন সময়ে বাস্তব জ্ঞান বর্জিত করে তুলতে পারে।
(গ) ৪র্থ ভাব অন্যান্য
অনেক বিষয়ের সঙ্গে গৃহসুখও (domestic peace) নির্দেশ করে।
৪র্থে শনির দৃষ্টি থাকায় এবং ৪র্থ পতি বুধ শত্রুর ঘরে (
ধনু রাশিতে ) অবস্থিত হওয়ায় জাতকের গৃহসুখের অভাব থাকবে।
(ঘ)
চন্দ্র আবার আধ্যাত্মিক গ্রহ বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট এবং
বৃহস্পতি ৯মে ( ৯ম থেকে ধর্ম বিচার হয় ) থাকায় এবং ৯ম দৃষ্টিতে
৫মে অবস্থিত চন্দ্রকে দেখায় (৫ম থেকে ভক্তি ভাবও বিচার হয়),
জাতকের মধ্যে সব সময়ে একটা দার্শনিক সুলভ দৃষ্টিভঙ্গী ও
সহনশীলতা কাজ করে। অতি বিপদেও ধীর স্থির থেকে নিজের আদর্শে
অবিচল থাকে।
(ঙ) ১১শ পতি (এবং ১২শ
পতি) শনি ( ১১শ স্থান থেকে আয় ও ১২শ থেকে ব্যয় বিচার হয়
) বক্রী হয়ে ২য় স্থানে (সঞ্চয় স্থান) অবস্থান করছে। আবার
শনিকে ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গলও দৃষ্টি দিচ্ছে (কিন্তু ৮ম ঘর থেকে)।
এর দ্বারা বোঝা যায় আয় ভালই হবে, তবে ব্যয়ও যথেষ্ট। এ ছাড়া
আয় ও সঞ্চয়ের পথে কিছু বাধা ও বিলম্ব হওয়া অসম্ভব নয়।
(চ)
জায়া কারক গ্রহ শুক্র ৮মে (নিকৃষ্টতম দুঃস্থান) অবস্থিত
হয়ে শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটাই
শীতল। এই বিবাহিত জীবনের পরিণতি খুব সুখের না ও হতে পারে।
(ছ) কর্মস্থানের (১০ম
স্থান) অধিপতি বৃহস্পতি ভাগ্যস্থানে সু-অবস্থিত হওয়ায়, জাতক
একটি নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক। তবে বৃহস্পতির
বল কম হওয়ায় ( উপরে আলোচিত হয়েছে ) জাতককে চাকরী পেতে যথেষ্ট
বেগ পেতে হয়েছে। ১০মে ৬ষ্ঠ পতির অবস্থানও এর জন্য দায়ী।
১০মে ৬ষ্ঠপতি রবির অবস্থান কর্মক্ষেত্রে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের
সঙ্গে মতবিরোধ ও শত্রুতা নির্দেশ করে।
বাস্তব ক্ষেত্রে জাতকের
জীবনে এ সব কিছুই ঘটেছে। আরও কিছু নিয়ম যেগুলি এখনও আলোচিত
হয়নি, সেগুলি থেকে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বেড়িয়ে আসতো। কোষ্ঠি
দেখায় সাফল্য অর্জন করা ২/১ দিনের মধ্যে সম্ভব নয়। সব নিয়ম
আয়ত্ব করে অনেক ছক বিশ্লেষণ করতে করতে ধীরে ধীরে এই ক্ষমতা
জন্মায়। এটা চেষ্টা ও পরিশ্রম সাপেক্ষ। তবে অনেক কোষ্ঠিতেই
সাধারণভাবে কিছু ফলাফল বলতে পারা অল্প চেষ্টাতেই সম্ভব।
গভীরে ঢুকে বিচার না করলে কিছু ফল যেমন মিলবে, অনেক ফল নাও
মিলতে পারে।
দীপক
সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১
(চলবে)
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|

অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|