প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ফুলের উপত্যকা (ভ্যালি অব্‌ ফ্লাওয়ার্স)

-৫-

প্রথমেই একেবারে হাড়-পাঁজড়া বের হওয়া রাস্তায় হাঁটা আরম্ভ হলো। দিন দুয়েক আগেকার, যেটা আমরা হৃষীকেশে পেয়েছিলাম এবং গত কালকের বর্ষার কারণে রাস্তার এই হাল, বেশ কয়েক জায়গায় ছোট ছোট ধস নেমেছে। বেশি বড় ধস নামেনি, তাই রাস্তা বন্ধ হয়নি। এগিয়ে পিছিয়ে রাস্তা ক্রমশ: বেশ তাড়াতাড়িই উঁচুতে উঠে যাচ্ছে আর তার সঙ্গে আমাদের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাচ্ছে এবং চলার গতি কমে আসছে। তবে আমাদের তাড়া নেই। তাই প্রায়ই থেমে গিয়ে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করছি। মাত্র ১০০মিটারের মত পথ আমরা অলকানন্দার গতি পথের দিকে এগোচ্ছিলাম, কিন্তু তার পরেই লক্ষ্মণ গঙ্গাকে সাথি করলাম। নদীর এই নাম ইদানীং দেওয়া হয়েছে, কিছুকাল আগেও নাম ছিল এর ভুইন্দর গঙ্গা। অনেকে আবার এই নদীকে আর এক নামে পরিচয় দিতে ভালবাসে, ‘হেম গঙ্গা।‘ এই গঙ্গা গোবিন্দঘাটে অলকনন্দার সঙ্গে লম্ব ভাবে এসে মিশেছে। এখন প্রায় ভরা বর্ষা, তাই দুই পাহাড়ি নদীরই বাড়-বাড়ন্ত। তবে অলকনন্দার শতোপন্থ হিমবাহে জন্ম নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০কিমি পথ অতিক্রম করে আসবার পথে বেশ কিছু নদীর সর্বস্ব সম্পদ আহরণ করা হয়ে গেছে কিন্তু লক্ষ্মণ গঙ্গা মাত্র একটি নদীর সম্পদ আহরণ করতে পেরেছে, লোকপাল হ্রদের থেকে জন্ম নিয়ে মোটে প্রায় ২০কিমি পথ নামার কালে। এই নদীর কথা যথা সময়ে বলা যাবে। তাই অলকনন্দা বেশ ‘মেদ-বহুলা’ কিন্তু তুলনায় লক্ষ্মণ গঙ্গা তন্বী। একই কারণে লক্ষ্মণ গঙ্গা তরুণী ও সাহসী। পাহাড়ের বেশ উঁচু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে কিন্তু তুলনায় যুবতি সুলভ সাবধানী, ‘যৌবন মদে মক্তা’ নয়, সুশীলা অলকনন্দা, অল্প উচ্চতা থেকে লাফাচ্ছে, লাজুক অথচ ত্রস্ত পদক্ষেপে চলে যাচ্ছে অনেক নিচে দেবপ্রয়াগে ভাগীরথীর কোলে।

কিছুটা এগোতেই আমরা রাস্তার ধারে কাছাকাছি দুটি বোর্ড দেখতে পেলাম। ‘লোক নির্মাণ বিভাগ’, গোপেশ্বর, এক বোর্ডে হিন্দিতে যাত্রীদের হেমকুণ্ড সাহেব আর ফুলোঁ কী ঘাটিতে আসার জন্যে স্বাগত জানাচ্ছে আর দ্বিতীয়টিতে Eco Development Committee, Gobindghat যাত্রীদের কাছে অনুরোধ করছে যে Please keep Himalaya Green & Clean। এই ইকো ডেভেলপমেন্ট কমিটির কথা আপনাদের পরে জানাবো ।

লক্ষ্মণ গঙ্গার তট থেকে আমরা অনেক উপর দিয়ে এগোচ্ছি, নদী আর আমাদের পথের মাঝে দূরত্ব বাড়ছে কমছে তবে মাঝে ঘন সবুজ বন, বর্ষার দৌলতে বড় গাছের নিচেও ঘন ঝোপ। প্রাচীন সব গাছ তবে মহীরুহ নয়, অনেক রডোডেন্ড্রন গাছ, কিছু ওক চিনতে পারলাম, বেশ অল্প সংখ্যক পাইন আর দেওদার, আর সব নাম না জানা। এখানে রাস্তা থেকে নদীর তট এত তাড়াতাড়ি নেমে গেছে যে আমরা প্রায় সমগ্র গাছপালার মাথা উপর থেকে দেখছি। এই কারণেই নদী হঠাৎ হঠাৎই দেখা যাচ্ছে। এখানেই দেখতে পেলাম পুরো নদীটাই কিছুটা উঁচু থেকেই আছাড় খেয়ে পড়তে পড়তে নামছে। এ সমস্তই যাবার পথে ডান দিকে, আর বাঁ দিকে পাহাড়ের প্রাচীর, তবে এখানে খুব একটা উঁচু নয়।
সকাল ৭টার সময় গেস্ট হাউসের বারান্দা থেকে দেখেছিলাম যাত্রীর মিছিল, তা এখন দেখতে পাচ্ছি না, মাত্র কয়েক জনই উপরে যাচ্ছে। তবে এখন ১০টা বাজেনি, এরই মধ্যে বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ যাত্রী ফিরে আসছেন হেঁটে ১৩কিমি দূর থেকে। কত ভোরে হাঁটা আরম্ভ করেছেন কে জানে। আমাদেরই মতো দেরিতে চলেছেন এক শিখ মধ্যবয়সী ভদ্রলোক, তাঁর দুই কিশোরী কন্যাদ্বয় সঙ্গে নিয়ে। আমরা কোথা থেকে আসছি জানতে চাইলেন। কিশোরীদের মাতা সঙ্গে ছিলেন কি না দেখতে পেলাম না। । হঠাৎ দেখতে পেলাম বেশ সুন্দর চেহারার এক কুকুর, যদিও পাহাড়ের, তা হলেও অনেকটা আমরা যেগুলোকে দিশি কুকুর বলে থাকি, খয়েরি রং-এর, কিছুটা হেঁটে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে খাদের দিকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে গেল। দেখলাম এক শিখ যাত্রী খালি পায়েই হেঁটে উঠছেন, অবশ্য বেশ কিছু যাত্রীই চোখে পড়েছে খালি পায়ে হাঁটছে। তবে আমার অনেক সময় মনে হয়েছে সব ক্ষেত্রেই যে ভক্তিতে তা নয়, জুতো পায়ে ঠিক মাপ মতো না হবার কারণে পায়ে কষ্ট, তাই খালি পায়ে। এইখানেই দেখলাম পথে ধস নামা জায়গা মোটামুটি পরিষ্কার করা হয়েছে, তা হলেও কাদা ও পাথরের টুকরো প্রচুর পরিমাণে থাকার জন্যে হাঁটা কষ্টকর হচ্ছে।
এক শিখ যুবক নিচে থেকে দৌড়ে দৌড়ে আমাদের পার করে ওপর দিকে চলে গেল। জানি না কত দূর থেকে এমন দৌড়ে আসছে আর কত দূর পর্যন্তই বা এমন দৌড়তে দৌড়তে যাবে।

রাস্তার পাশে কিছু দূরে দূরে লোহার গার্ডেন-বেঞ্চ পাতা, তাতে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবুজ রং করা। প্রায় ১০:৩৫ মিনিটের সময় এই রকম এক বেঞ্চের পাশে পাহাড়ের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘গোবিন্দঘাট ২কিমি, ঘাঙরিয়া ১১কিমি’ দেখলাম। অর্থাৎ প্রায় সওয়া দু ঘণ্টায় আমরা ২কিমি পথ আসতে পেরেছি। আমাদের ক্ষমতা হিসাবে খারাপ নয়। আমরা মানে আমার স্ত্রী ভারতী ও আমি, সুজু অর্থাৎ সুজিত ঘোষ ও সুজুর স্ত্রী রূপা, আমার ভ্রাতুষ্পুত্রীসমা স্নিগ্ধা মণ্ডল ও তার ভাই অনির্বাণ। অনির্বাণ অবশ্য আমাদের সঙ্গ দেবার জন্যেই আমাদের গতিতে হাঁটছে। পরবর্তী সময় এর থেকে কঠিন পাহাড়ে সে তার হাঁটার গতি দেখিয়ে আমাদের স্তম্ভিত করেছিল। তবে আমার থেকেও প্রায় ৩মাসের বড় ও আমার প্রাক্তন সহকর্মী ড. হীরামোহন সুর, প্রায় ৪০ বছরের অচিন্ত্য আর আমার ভাই ৫০ বছরের কল্যাণ আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে এর মধ্যেই। এই সময়েই দেখতে পেলাম আমাদের ডান দিকে নদী ছাড়িয়ে অনেক দূরে পাহাড়ের মাঝা-মাঝি থেকে নিচের দিকে নেমে আসছে এক ঝর্ণা। ঝর্ণার শেষাংশ দেখা যাচ্ছে না, গভীর জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে গেছে।

পিছনে তাকালে ক্রমশ: দূরে চলে যাওয়া গোবিন্দঘাটের কংক্রিটের জঙ্গল অনেক ক্ষণ দৃষ্টিপথে ছিল, তার মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে গুরদ্বারার উচ্চ দেশলাই খোলের মতো বাড়ি একেবারে নদীর পারেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। বদরীনাথের রাস্তা কিছুটা উপরে পাহাড়ের বুকে (কাঁধে নয়) জড়ানো যজ্ঞোপবীতের মতো মনে হচ্ছিল। তবে সময় সময় সেই যজ্ঞোপবীতের উপর দিয়ে পোকার মতো বাস ও গাড়ি চলা দেখতে পাচ্ছিলাম বলে আমার অপটু কবি ভাবকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনছিল ।

চিত্র-৬, বদরীনাথের রাস্তা এবং লক্ষ্মণগঙ্গা ও অলকনন্দার সঙ্গম-১

চিত্র-৭, বদরীনাথের রাস্তা এবং লক্ষ্মণগঙ্গা ও অলকনন্দার সঙ্গম-২

দুটি ছবিতেই অবশ্য গুরদ্বারা দেখা যাচ্ছে না। ছবি দুটিতে পরস্পর নিচের দিক আর বাঁদিক থেকে লক্ষ্মণগঙ্গা অলকনন্দাতে গিয়ে মিশছে।

প্রায় পৌনে ১১টা, সকাল বেলা হাঁটা আরম্ভের আগে আমার স্ত্রী, ভারতী চা ছাড়া কিছুই খাবার সুযোগ করে উঠতে পারেনি, এখন তাই শরীর জানান দিচ্ছে। রাস্তার ধারে দোকান, সেখানে কাঠের উনান জ্বলছে। টু-মিনিটস নুড্‌ল, ম্যাগি ১ প্লেট ২০ টাকা দাম। ওর ওটাই খেতে সবথেকে ভাল লাগে, সহজ পাচ্যও বটে। তাই খাওয়া গেল, আমারও খাওয়া হলো। আবার দেখা গেল গর্জনরতা ও খরস্রোতা লক্ষণগঙ্গাকে গাছের ফাঁক দিয়ে।

আগেই বলেছি, যাত্রী ৯৯% এর বেশি হেমকুণ্ডের উদ্দেশ্যে যায়। ১% এরও কম যাত্রী যারা ফুলের উপত্যকায় যায় তাদের মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি যাত্রী থাকে। জাপানি মহিলাদের একটি দল ঘোড়ায় করে আমাদের ছেড়ে এগিয়ে গেল। তাদের মধ্যে একজন পথের ধারে কোনও কারণে কিছুটা নিচে নামতে দেখলাম। আমার মনে হলো এরা নিশ্চয় ফুলের উপত্যকায় যাবে। অবশ্য হেমকুণ্ডও দেখার মতো, সেখানে যে যাবে না তা বলা যায় না।

কিছুটা এগোবার পর জঙ্গলের মধ্যে ও রাস্তার ধারে এক জায়গায় গম বা যবের চাষ করা হয়েছে। গাছগুলো খুবই তেজাল এবং শস্যের শীষ ধরেছে। আলু ও ভুট্টার চাষও হয়েছে। পাহাড়ে অনেক জায়গায় আলু গাছে ফুল ফোটা দেখেছি। এখানেও তার অন্যথা নেই। আমাদের সমতলে আলু গাছে ফুল ফোটা কশ্চিৎ কখনো দেখতে পাওয়া যায়। আমরা চাষের জমি দেখেই ধারণা করলাম যে কাছেই নিশ্চয় মানুষের বসতি আছে। ২কিমির জায়গার কিছুটা আগে থেকে রাস্তা অনেকটা সমতল, তাই পরবর্তী প্রায় ১কিমি. পথ আমরা মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই আসতে পারলাম। হঠাৎ দেখি পথের ধারে ডান দিকে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে কয়েকটা পাথরের সিঁড়ি আর তারই ৫/৬ ধাপের পরে সিঁড়ির খাঁজে স্নেক-লিলি ফুটে আছে। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে সেই গাছের কাছে গেলাম ছবি নেবার জন্যে। তারপর দেখি রাস্তার অন্য ধারেও গোটা দুয়েক সেই লিলি। গাছের পাতা এক বৃন্তে তিনটি। একটা ডাঁটির উপর ফিকে সবুজ ১০/১২সেমি দৈর্ঘ্যের ডাঁটিতে ক্রমশ: বড় হয়ে প্রায় ৩/৪সেমি ব্যাসার্ধের গোলাকার মুখ এবং সেই গোলাকার ক্ষেত্রের এক প্রান্ত থেকে জিভের মতো ঢাকনা মুখ ঢেকেও আরও এগিয়ে গেছে। জিভের প্রান্ত কালো মোটা শিকের আকার নিয়ে প্রায় ২০/২২সেমি উপরে খাড়া হয়ে আছে। দেখবার মতো (চিত্র-৮, নাগফণী-১, চিত্র-৯, নাগফণী-২, চিত্র-১০, নাগফণী-৩)।

চিত্র-৮, নাগফণী-১

চিত্র-৯, নাগফণী-২

চিত্র-১০, নাগফণী-৩

এর বৈজ্ঞানিক নাম Arisaema jacquemontii । এই Arisaema প্রজাতির গাছের ফুলের রং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, তবে আমরা এই পথে পরে আরও দেখেছি, প্রায় সবগুলিই এখন যা দেখলাম তেমনই। শুনেছি বিভিন্ন রং ও আকারের Arisaema বিভিন্ন উচ্চতায় ও বিভিন্ন সময়ে ফুটে থাকে ।

কিছু পরেই দূর থেকে রাস্তার আর নদীর মাঝে নিচু জায়গায় প্রচুর বাড়ি দেখা গেল। দেখতে দেখতে আমরা সেই গ্রামের এক প্রান্তে হাজির হলাম। সামনেই এক তোরণ, আমাদের রাস্তা থেকে কিছুটা নিচের দিকে নেমে গেছে গ্রামে যাবার সিমেন্টের পথ। নতুন নির্মাণ বোঝা যাচ্ছিল সিমেন্টের রং দেখে। উপর থেকেই দেখা যাচ্ছে গ্রামের মাঝে এক ঘেরা চত্বর, মাঝে বেশ বড় এক বাড়ি, নিশ্চয় স্কুল ।

কিন্তু বেশ আশ্চর্য লাগল, মনে হলো গ্রামে যেন কোনও মানুষের বাস নেই। মনে পড়ল যে এই গ্রামের নাম পুল্‌না (১৯২০মি.) বা পুলেনা (চিত্র-১১, পুল্‌না-১ ও চিত্র-১২, পুল্‌না-২)।

চিত্র-১১, পুল্‌না-১

চিত্র-১২, পুল্‌না-২

যাত্রার মরশুমে অর্থাৎ জুনের প্রথম থেকে অক্টোবরের প্রথম পর্যন্ত প্রায় সকল অধিবাসী যাত্রী পরিসেবার জন্যে উপরে, ঘাঁঙরিয়ায় অথবা ভুইন্দর গ্রামে চলে যায়, এখানকার বাস তুলে দিয়ে। কেবল মাত্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আর রোগি ও অসমর্থ মানুষেরাই এখানে তখন থাকেন।

উমাপ্রসাদবাবু এই গ্রামের নাম পুণ্‌গাঁও বা পুণ্য-গ্রাম বলেছেন। আমি অবশ্য আর কোথাও এই নামের উল্লেখ পাইনি। এই গ্রাম আর এক কারণের জন্যে আর পাঁচটা গ্রাম থেকে ভিন্ন। বহু শতাব্দ আগে, সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে রাজস্থানি মানুষ, অর্থাৎ রাজপুত, রাজস্থান থেকে এখানে চলে এসে বসবাস করতে আরম্ভ করেন। ক্রমে তাঁরা স্থানীয় মানুষ হয়ে পড়েন। এই পাহাড়ের কঠিন জীবনে তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে চাষ-বাস আরম্ভ করেন। খুবই আশ্চর্যের কথা রাজস্থানের সমতল মরু থেকে এসে এই রকম পাহাড়ি, বর্ষণস্নাত ও প্রচণ্ড শীতের কষ্ট সহ্য করে তাঁরা স্থায়ী বসবাস করতে পারলেন। এনাদের সকলকারই পদবী চৌহান। গতবার যখন এই পথে এসেছিলাম, ঘাঁঙরিয়ায় এখানকারই এক যুবক, কনৈহা চৌহানের গেস্ট হাউসে (কৃষ্ণা প্যালেস ট্যুরিস্ট গেস্ট হাউস) উঠেছিলাম। এবারও তার গেস্ট হাউসে থাকবো বলে তার খোঁজ করি। তার খোঁজ পেলাম। তবে সে আর নেই। জানতে পারি যে সে গত বছর বিষ্ণুপ্রয়াগের ব্রিজ পার হয়ে যোশিমঠে যাবার সময় নিজেই জিপ সহ খাদে পড়েগিয়ে মারা গেছে। এই শুনে আমাদের সকলকার খুবই দুঃখ হয়েছিল, কারণ তার গেস্ট হাউসে থাকার সময় সে তার ভদ্র অমায়িক ও সহায়ক ব্যবহারে আমাদের মুগ্ধ করেছিল।
এখানে রাস্তা বেশ ভাল, বিশেষ উঁচুতে উঠছেনা, তা ছাড়া কংক্রিটের। গ্রাম, রাস্তার ডান দিকে আর নিচুতে। গ্রাম দেখতে দেখতে আমরা এগোতে থাকলাম। গ্রামের মধ্যে প্রায় সবই বাড়ি পাকা এবং দোতলা, এককালের সেই স্লেট পাথরের টালি ছাওয়া বাড়ি আর নেই। আজকাল অবশ্য এই অঞ্চলের কোনও পাহাড়ি গ্রামে তেমন বাড়ি দেখতে পাওয়া আশ্চর্যের কথা। হ্যাঁ, বাঁদিকে পাহাড় অনেকটা দূরে। রাস্তা আর সেই পাহাড়ের মাঝেও চাষের জমি, যেমন আমরা কিছুক্ষণ আগে দেখেছি। যদিও গ্রামে এখন মানুষের দেখা নেই তবে জমিতে গম বা যবের ফসল রয়েছে, আর আছে শিম, বরবটি, বেগুন ইত্যাদির চাষ। এই সব ফলেছেও প্রচুর।

পরের পাতা আগের পাতা

(চলবে)

ড. শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।