প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে ভ্রমণ

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬

 

বিজয়নগর-রাজধানী হাম্পি

শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

পঞ্চম অংশ


চিত্র- ৪০ , রঙ্গ মণ্ডপের একটি স্তম্ভ ১

(আগের অংশ) বিরূপাক্ষ মন্দিরের মহা-মণ্ডপের লাগোয়াই মন্দিরের গর্ভ গৃহ। তবে এখান থেকে সোজাসুজি সেখানে যাওয়া যায় না , মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেতে হয় , মাঝে লোহার গ্রিলের দরজায় বিরাট তালা দেওয়া আছে। আমি বেশ কয়েকবার এখান থেকেই ক্যামেরা জুম করে গর্ভ গৃহের মধ্যে বিরূপাক্ষের ছবি তুলবার চেষ্টা করেছিলাম , কিন্তু একবারও সামনেটা দুই - তিন সেকেন্ডের জন্যেও ফাঁকা পাচ্ছিলাম না , তাই পরিষ্কার ছবি হলো না।  সামনে থেকে কেন এখান থেকেও দেবতার ছবি তোলা মানা , কাজেই সুযোগ থাকা সত্যেও সামনে হ্যান্ডিক্যাম নিয়ে যাবার সাহস করিনি।

চিত্র-৪২, রঙ্গ-মণ্ডপের সামনে থেকে

আগেই যেমন বলেছি , এই মণ্ডপে অনেকগুলো স্তম্ভ আছে (চিত্র- ৪০ , রঙ্গ মণ্ডপের একটি স্তম্ভ ১)। আমার স্ত্রী , ভারতীর ইচ্ছা হলো পরীক্ষা করা যে এগুলোও বাজানো যায় কি না। ভিডিওতে সেই পরীক্ষা আমি দেখিয়েছি। যদিও মন চাইছিল না , তাও শেষ পর্যন্ত রঙ্গ মণ্ডপের বাঁধন কাটিয়ে বাইরে বেরিয়ে সামনে থেকে ছবি তুললাম (চিত্র-৪২, রঙ্গ-মণ্ডপের সামনে থেকে) ।

মনে হলো বৃষ্টি ইতিমধ্যে কিছু কমেছে , তা ছাড়া আজ বেশ কয়েকটা দর্শনীয় স্থানে যেতে হবে এবং আজ বিকালেই এখান থেকে চলে যাবার ট্রেন ধরতে হবে। তাই মন্দিরের দর্শন সম্পূর্ণ না করেই বাইরের পথ ধরলাম। মন্দির থেকে বেরোবার মুখে দেখতে পেলাম ডান দিকে কাঠের সিঁড়ি উঠে যাচ্ছে একটা বড় ঘরে আর সেখানে দাঁড়িয়ে এক হাতি শুঁড় ঠেকিয়ে দিলো মাথা নিচু করা এক মহিলার মাথায়। বুঝতে পারলাম এ হচ্ছে পম্পাপতি মন্দিরের হাতি আর সে আশীর্বাদ করছে ভক্তদের। অবশ্য তাদেরই করছে যারা অন্তত দশ টাকার নোট প্রণামী দিচ্ছে। কি করে জানলাম ? ভারতীর ইচ্ছা হলো সেও আশীর্বাদ পাবে। একটা পাঁচ টাকার কয়েন প্রণামী দিল , কিন্তু আশীর্বাদ পেল না , অথচ ঠিক তার আগেই দশ টাকা দিয়ে এক ভক্ত তা পেয়েছে। তবে হাতি নিজে থেকে এই বিভাজন করছে না , পাশ থেকে  মাহুত তাকে নির্দেশ দিচ্ছে। অনেক বারই আমার তোলা ভিডিওর কথা বলেছি , এইবার  সেই ভিডিও ক্লিপটা দিলাম।।



“Further Visuals of Mahamandapa, Vitthala Mandir, Hampi.mpg”

পম্পাপতি বা বিরূপাক্ষ মন্দির পরিসর থেকে বেরিয়ে আসলাম মাত্র ১ ঘণ্টা পরেই , প্রায় ৯টার সময়। আমার মনে হয় ঠিক মতো দেখতে গেলে ঘণ্টা চার পাঁচ লাগতেই পারে।  বেরিয়েই ডান দিকে লম্বা পাথরের পাটা বিছানো সিঁড়ির রাস্তা ক্রমশ অল্প উঁচুতে উঠে গেছে আর সামনে একটা বোর্ড দেখতে পেলাম (চিত্র-৪৩ , পম্পাপতি মন্দিরের সামনে দিকনির্দেশক , 522.JPG)। তাতে দিক নির্দেশ দেওয়া তিনটি দ্রষ্টব্যের , হেমকূট পাহাড়ের মন্দির সমূহ , কদলে কালু গণেশ  ও সাসিভেকালু গণেশ।

চিত্র-৪৩ , পম্পাপতি মন্দিরের সামনে দিকনির্দেশক

এই পথে কিছু দূর পর্যন্ত এগিয়ে মনে হলো যে পূর্বোক্ত দ্রষ্টব্যগুলো এদিক থেকে গেলে পরবর্তী দ্রষ্টব্যের জন্যে হয় এদিকে ফিরে আসতে হবে অথবা গঙ্গাধর , অর্থাৎ আমাদের ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলতে হবে। তা ছাড়া আমাদের দলের বেশ কয়েকজন এইদিকে আমাদের সঙ্গে আসেননি। তাই আমরা নিচের দিকে নেমে আসলাম।

আসবার পথে দুটো দৃশ্য ভাল লাগলো (চিত্র-৪৪ , অনামা আশ্রয়) ও (চিত্র- ৪৫, হেমকূট পর্বত থেকে বিরূপাক্ষ মন্দির)।

চিত্র-৪৪ , অনামা আশ্রয়

চিত্র- ৪৫, হেমকূট পর্বত থেকে বিরূপাক্ষ মন্দির

ওপর দিকে ওঠবার সময় লক্ষ করিনি , এবার দেখলাম মন্দিরে আসবার রাস্তার ধারে যে প্রাচীন বাজার এলাকার কথা বলেছিলাম , তার কিছু অংশের ধ্বংসাবশেষ (চিত্র-৪৬ , বিরূপাক্ষ মন্দিরের পথে প্রাচীন বাজার এলাকার ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ , 525.JPG)। এবার বাজার এলাকার পাশ দিয়ে মন্দিরের বিপরীত দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলাম। কিছুটা এগোবার পর পথের ধারে টিন দিয়ে ঢাকার মধ্যে পম্পাপতির রথ দেখতে পেলাম। কাঠের রথ। পাথরেই যখন ওই ধরনের উচ্চ মানের ভাস্কর্য , কাঠে তো অপূর্ব ও সূক্ষ্মতর ভাস্কর্য হবেই। ছবি নিলাম (চিত্র-৪৭ , পম্পাপতির রথে ভাস্কর্য )।

চিত্র-৪৬ , বিরূপাক্ষ মন্দিরের পথে প্রাচীন বাজার এলাকার ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ

চিত্র - ৪৭ , পম্পাপতির রথে ভাস্কর্য ২

এবার আধুনিক বাজার এলাকা যেখানে যত্র - তত্র ঠেলা গাড়ি , গুমটি ইত্যাদিতে খাবার, ফলের আর সস্তা প্লাস্টিক পুতুলের অস্থায়ী দোকান বসেছে, সেখানে এসে বেশি করে জলখাবার খেয়ে নিলাম। এখানেই দেখা হয়ে গেল ভিঠঠলদেবের মন্দিরের গাইড, গিরিরাজের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ের পর তাকে জানালাম যে তার অভাব অনুভব করছিলাম বিরূপাক্ষ মন্দিরে। এখানেই আমাদের গাড়ি নিয়ে গঙ্গাধর অপেক্ষা করছিল। এবার চললাম গাড়ি করে পরবর্তী লক্ষ্যে।              

চিত্র-৪৯, ‘কদলে কালু গণেশ।’

অল্পক্ষণ  চলার পর রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড়ালো। লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গায় জল-কাদা বাঁচিয়ে কিছুটা উঁচুতে বেশ কয়েকটা উচ্চ স্তম্ভের ওপর ছাদ এবং একদিকে বন্ধ এক মণ্ডপে উঠে পড়লাম। স্তম্ভগুলোতে মানুষের ও দেব-দেবীর মূর্তি খোদাই করা। ঘেরা অংশে আমাদের এখানকার দুর্গা মণ্ডপের মতো মণ্ডপে চতুর্ভুজ বিশিষ্ট প্রায় ৪.৫মিটার উচ্চতার গণেশের মূর্তি। এই মূর্তি একটি গ্রানাইট পাথরে (monolithic) খোদিত। এমনিতেই এই দেবতার মধ্যদেশ স্ফীত হয়, তা হলেও এনার এটি চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় কন্নড় ভাষায় এনার নাম, মধ্যদেশের আকারের নামানুসারে ‘কদলে কালু গণেশ।’ কদলে কালুর বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘ছোলা।’ ছবি দেখতে পাবেন চিত্র-৪৯-এ)। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই মূর্তি নির্মিত হয়েছিল মনে করা হয়, অবশ্য নির্মাণকারীর নাম জানা নেই।

এখান থেকে অল্প দূরেই আরও এক গণেশের মূর্তি, যার নাম ‘সসিভেকালু গণেশ’ রয়েছে ঘেরা এক বাগানের মধ্যে, অল্প উঁচুতে। আসলে পুরো হাম্পি জায়গাটাই গ্রানাইট পাথরের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই গণেশের ছোট দালানও এক চাটালো গ্রানাইট চাঁই-এর ওপর নির্মিত। দালান মানে অনেকগুলো স্তম্ভের ওপর ছাদ, আর চারিদিক খোলা । কদলে কালু গণেশের মতো দালানের এক প্রান্তে ঢাকা মণ্ডপের মধ্যে এই গণেশ অধিষ্ঠিত নন, ইনি খোলা দালানের মাঝে উচ্চাসনে বসে আছেন। এনারও হাতের সংখ্যা চার। অজানা প্রতিষ্ঠাতা দ্বারা ষোড়শ শতাব্দীতে, একটি গ্রানাইট ব্লকে এই ২.৪মিটার উচ্চতার সরিষা দানার আকারের মধ্যদেশ নিয়ে খোদিত ।  (স্থানাভাবে লেখকের পাঠানো সব ছবি দেওয়া গেল না)

 

(পরের অংশ)


লেখক পরিচিত - শিক্ষাবিদ। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন বহু বছর। নেশা হচ্ছে ভ্রমণ। অবসর-এর একজন নিয়মিত লেখক।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।