প্রথম পাতা


পরিবেশ


বিজ্ঞান


স্বাস্থ্য


ছোটদের বই

ছোটদের ছড়া

ছোটদের গল্প

নিজেদের পাতা


 


আমার বন্ধু লিকি () (২) ()

যাদু করা মদ খেয়ে আবার কী গোলমালে পড়ে যাই, তাই লেমনেডেই রফা করা গেলো। অলিভার এক শুঁড়ে আমাদের পানীয় এনে দিয়ে বাকী শুঁড়ে টেবিল সাজাতে লেগে গেলো। ইতিমধ্যে লিকি দেখি কখন এক চোঙামার্কা টুপি পরে ফেলেছেন, তাই খুলে তার থেকে দু প্লেট সুপ বার করে টেবিলে নামিয়ে রাখলেন, তখনও তা ধোঁয়াচ্ছে।

"একেবারে খাঁটি মল্লিগট্‌নী। এর ওপর এক দলা ক্রীম হলেই বাজি মাত্‍‌, কী বলেন," বলেই লিকি মৃদু শিস দিয়ে কাকে ডাকলেন, "ফিলিস, ও ফিলিস, আমাদের একটু ক্রীম দিয়ে যাও তো মা। একটু নেচে নেচে এসো, তাহলেই হুইপ্‌ড ক্রীম হয়ে যাবে।"

ওমা, দেখি টেবিলের পাশে এক খোপর থেকে নাচতে নাচতে একটা সবুজ রঙের গরু এসে উপস্থিত, মাপে এই একটা খরগোসের মতো হবে। দুধের পাত্র নিয়ে লিকি চাঁইচুঁই করে দুইতে সত্যিকার হুইপ্‌ড ক্রীম বেরিয়ে এলো। আমরা সুপে তাই ঢাললাম আর ফিলিসও আবার তার গোয়ালে চলে গেলো। সুপ যেন অমৃত।

 

"আমার সব কিছু একেবারে খাঁটি না হলে চলে না, তাই এই ব্যবস্থা। তা এর পরে কী খাবেন?" লিকি বললেন।

"সুপ যা খাওয়ালেন তার পর আপনি যা দেবেন তাই খাবো," আমি বললাম।

"তাহলে মাছের গ্রিল আর টার্কির রোস্ট হোক। অলিভার, টাটকা মাছের ব্যবস্থা করো আর পম্পিকে বোলাও," লিকির অর্ডার।

ছাদ থেকে নানারকম ঝোড়া ঝুড়ি ঝুলছিলো, তার কোনোটার থেকে অলিভার চারটে মাছধরার ছিপ বার করে হাওয়ায় ছিপ ফেলে চারহাতে মাছ ধরতে লেগে গেলো। এদিকে পর্দার পেছনে একটা ফায়ারপ্লেস আছে আগে খেয়াল করিনি-- বা হয়তো এখুনি লিকি ম্যাজিক করে তৈরী করলেন, কে বলতে পারে-- পম্পি বেরোলেন, ল্যাজটা বাদ দিলে পম্পি ফুটখানেক লম্বা একটি বাচ্চা ড্র্যাগন। জ্বলন্ত কাঠকয়লার মতো টকটকে লাল, একটু দূরে বসেও আমরা আঁচ পেলাম। ফায়ারপ্লেস থেকে বেরোবার আগেই পম্পি একজোড়া অ্যাসবেস্‌টসের জুতো পরে নিয়েছিলো, এই রক্ষে।

 

"এই যে পম্পি সায়েব," লিকি বললেন, "তোমার ল্যাজটি এবারে সামলে রেখো বাপু। গত হপ্তার মতো কার্পেটে আগুন লাগালে আমি কিন্তু গায়ে এক বালতি ঠাণ্ডা জল ঢেলে দেবো।" তারপর ফিসফিস করে আমায় বললেন, "আরে সত্যিই কি দেবো। ওকে ভয় দেখাবার জন্য বললাম। এখন বড়ো হচ্ছে, এখন ওর সাবধানে চলাফেরা করতে শেখা দরকার।"

পম্পি কিন্তু সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে ফোঁত্‍‌ ফোঁত্‍‌ করতে লাগলো, তাতে আবার তার নাক দিয়ে আগুন বেরোয়। তার পর ল্যাজ উঁচিয়ে দুপায়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে-- ড্র্যাগনরা হাঁটতে গেলে সাধারণত চার পায়ে চলে-- যতক্ষণে অলিভারের কাছাকাছি পৌঁছলো অলিভার ততক্ষণে বেশ ভালো সাইজের গোটা দুই টার্বো মাছ ধরে আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ফেলেছে। ওই ঘরের মধ্যে কী করে মাছটা ধরলো, পম্পিকে দেখতে গিয়ে তা আর দেখা হোলো না। এইবার আজকে সন্ধ্যের নাটকে পম্পির রোল কী বোঝা গেলো। পম্পি দুহাত দিয়ে মাছ ধরে লোফালুফি করলো কয়েকবার, তাতে মাছ গ্রিল হয়ে গেলো, একেবারে রান্নার বইতে যেমন ছবি দেখা যায়। প্লেট হাতে থুড়ি শুঁড়ে অলিভার তৈরীই ছিলো, মশলাপাতি ছড়িয়ে লেবুর রস ছিটিয়ে ধরে দিলো আমাদের সামনে আর লিকির হ্যাট থেকে বেরোলো সস। আহা, তার যেমন গন্ধ, তেমন স্বাদ, এমন সুস্বাদু মাছ আমি জীবনে খাই নি। লিকির ভোজনপর্বটা সাধারণের তুলনায় গোলমেলে বটে কিন্তু তার মেনু এবং খাদ্যগুণ যে রাজারাজড়ার পাতে দেবার যোগ্য এটা মনে মনে মেনে নিলাম। ডিনার শেষ হতে তখনও কিছু বাকী আছে।

আমরা মাছ শেষ করার আগেই দেখি ঠাণ্ডায় পম্পির দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। লিকি তাকে আবার ফায়ারপ্লেসে ফেরত্‍‌ পাঠিয়ে বললেন, "কেউ কেউ বলে যে বাচ্চা ড্র্যাগনদের বুকে সর্দি বসার ভয় থাকে, তাদের একেবারে বাইরে না আনা উচিত। আমি কিন্তু একমত নয়, আস্তে আস্তে অভ্যেস করানো ভালো, নয়তো বড়ো হয়ে উনুনের বাইরে বেরোবে না। আর হ্যাঁ, বেশ ভালো করে খাঁটি গন্ধক খাইয়ে যেতে হবে। মুস্কিল হচ্ছে যে একবার ঠাণ্ডা লেগে হাঁচতে আরম্ভ করলে বিশ্রী অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। আমি তো একটা ড্র্যাগন দেখেছি, সে হাঁচতো একটা ফুটবল মাঠের এধার থেকে ওধার অবধি আগুন ছিটিয়ে। অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক। চীনসম্রাটের একটা বাড়ী এভাবে পুড়ে যাবার কথা শুনেছি। তাহলেও, সাবধানের মার নেই। তবে পম্পিকে দিয়ে নানা রকম কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। এই তো, এই বাড়ীর দরজাটা আবার রঙ করাবার আগে পম্পি একবার নিঃশ্বাস ফেলে পুরনো রঙ সব ঝরিয়ে দিলো। আমি ওর ল্যাজ দিয়ে চিপ-টিপ ঝালাই করি, ওই সল্‌ডারিং আয়রন যাকে বলে আর কি। তাছাড়া চোরডাকাত তাড়াতে যে কোনো কুকুরের থেকে পম্পি অনেক বেশী চৌকশ, ওকে দেখেই বাবাজীদের দাঁতকপাটি লেগে যায়। আমি বলি কী ড্র্যাগন যদি পুষতে হয় তাহলে তাকে কাজে লাগাতে হবে, কেবল ঘর সাজাবার জন্য ড্র্যাগন পোষার কোনো মানেই হয় না। আপনার কী মনে হয়?"

বোঝো ব্যাপার, ড্র্যাগন পোষাই যেন আমার ব্যবসা। "তা তো বটেই, তা তো বটেই। তবে কিনা আমার এই ড্র্যাগনের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একেবারেই শূন্য," আমি বললাম, আর কীই বা বলতে পারি

"না, না আমারই ভুল, আসলে লাইনের লোক ছাড়া অন্য কারুর সঙ্গে তেমন মেলামেশা নেই তো আমার," লিকি বললে। "অলিভার তুমি বাকী মাছটা শেষ করে দিও, বীয়ারও নিতে পারো এক বোতল যদি ইচ্ছে হয়।"

অলিভার বেজায় খুসী, তার চোখ মটকানো দেখেই বোঝা গেলো। এও বোঝা গেলো যে সে এক কালে মানুষই ছিলো নয়তো কোনো অক্টোপাস অমন করে চোখ মটকাতে পারে না। ছাদে টাঙানো ঝোপের আড়াল থেকে তিন সেকেণ্ডে খাওয়া শেষ করে অলিভার ফিরে এলো। তখন লিকি বললেন, "যেভাবে মাছ ধরে রান্না করা হোলো, টার্কিটা কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না, কাটাকুটি, ছালছাড়ানোর ব্যাপার আছে, সে সব দেখে আপনার খাওয়ার রুচি চলে যেতে পারে। সেসব কাজ অলিভার কাল করে রেখেছে। পাখীর মাংস দুয়েকদিন রেখে দিলে আবার জমেও ভালো। অলিভার প্লেট লাগাও।"

অলিভার একটা হট প্লেটের ওপর বসানো এক বিরাট গোল ঢাকা বাসন বার করে টেবিলের মধ্যে লাগাবার পর লিকি ছাতা রাখার বালতি থেকে খুঁজে পেতে একটা লাঠির মতো বার করলেন। বুঝলাম ওটা লিকির যাদুকাঠি। লিকি ওই কাঠি ঢাকনার ওপর ঘুরিয়ে অং বং করে কিছু বলার পর অলিভার যখন বাসনের ঢাকা সরালো তখন দেখি এক ভদ্রস্থ সাইজের টার্কি রোস্ট, তার সঙ্গে নানা রকম শাকসবজী। এদিকে লিকি কোটের পকেট থেকে একটা নল বার করে ফেলে তাতে ফুঁ দিতে আরম্ভ করেছেন। লম্বা লম্বা বেলুন যেমন হয় তেমনি একটা কী ফুলে উঠলো, ফুট দুয়েক লম্বা হতেই অলিভার সেটা খুলে ছুরি বার করে চটপট ছটা টুকরো করে ফেললো। তখন বুঝলাম ওটা হচ্ছে সসেজ। তারপর অলিভারের শুঁড়ের খেলা দেখবার মতো-- এদিকে টার্কির মাংস ছাড়িয়ে পাতলা পাতলা করে কাটছে, ওদিকে সবজী সাজিয়ে সস ঢালছে আবার তার মধ্যেই সসেজ ভাজছে, আবার মুখটা একটু আড়াল করে টুক করে একটু বীয়ারপানও চলছে। দুতিন মিনিটের মধ্যে টার্কির প্লেট রেডি। সেই টার্কির কথা ভেবে এতো বচ্ছর পরেও জিভে জল এসে যাচ্ছে, এমন তার টেস্ট।

এতোক্ষণ পর্যন্ত লিকির ঘরে এতো যে ঘটনা ঘটছে তার মধ্যে কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। পম্পির নাক দিয়ে একটু আগুন বেরিয়েছিলো বটে, কিন্তু তাতে ক্ষতি হয়নি কিছুরই। ও বলতে ভুলে গেছি, পম্পি যখন ফোঁপাচ্ছিলো তখন অলিভার দুই শুঁড়ে দুটো ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে তৈরী ছিলো। লিকি সায়েবের ট্রেনিং খুব ভালো। এই বারে ছোটোখাটো একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে একটা রামধনু রঙের গুবরে পোকা তার থেকে দশগুণ বড়ো একটা নুনের বাটি টেবিলের ওপর দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে আসছিলো। নিশ্চয় আমাদের জন্য, কিন্তু আসছিলো বড়ো আস্তে আস্তে। এদিকে আমাদের খাওয়া প্রায় শেষ হতে চলেছে দেখে যেই সে তাড়াতাড়ি আসতে গেছে তখন বাটিসমেত সে পড়েছে উল্‌টে। বাটির নুন টেবিলের ওপর ছড়াছড়ি আর পোকা টেবিলের ওপর চিত্‍‌ হয়ে পড়ে আকাশে ঠ্যাং ছুঁড়ছে, তার সোজা হবার ক্ষমতা নেই।

অনুবাদ - সুমিত রায়

(চলবে)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।


Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।