প্রথম পাতা


পরিবেশ


বিজ্ঞান


স্বাস্থ্য


ছোটদের বই

ছোটদের ছড়া

ছোটদের গল্প

নিজেদের পাতা


 


আমার বন্ধু লিকি () () (৩)


হঠাত্‍‌ দেখি লিকি বেজায় রেগে গেলেন। একটু গলা চড়িয়ে বললেন, "লিওপোল্ড, সময় মতো কাজ শুরু করো না কেন? তোমার ভাগ্য খুব ভালো যে আমার কুসংস্কার নেই, নুন পড়ে যাওয়া নিয়েও নয়, থাকলে তোমার অবস্থা খুব খারাপ হোতো। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে যে তোমাকে এই মোড়ের থানায় নিয়ে গিয়ে আবার মানুষ বানিয়ে দিই। সেখানে দারোগা যখন জিগ্‌গ্যেস করবে এতোদিন কোথায় লুকিয়ে বসেছিলে তখন গুবরেপোকার গল্প বলে দেখো কী হয়। তুমি বাপু অতি বেয়াক্কেল! এখন যা ফেলেছো সব একটি একটি করে তোলো।"

এই বলে লিকি পোকাটিকে সোজা করে দিলেন। তারপর আমাকে বললেন, "মানুষ লিওপোল্ড ছিলো একটি অতি পাজী জোচ্চোর, বহু লোককে ভোগা দিয়েছিলো। তারপর পুলিশও পেছনে লাগলো আর আমারও কাজ পড়লো ওকে ঠাণ্ডা করবার। আমি ওকে বললাম যে পুলিশে ধরলে নির্ঘাত্‍‌ দশ বছর ঘানি টানতে হবে। আর আমি পোকা করে রেখে দিতে পারি পাঁচ বছরের জন্য। তারপর পোকাত্বের শেষে মানুষ করার সময় চেহারা বদলে দেবো, পুলিশে আর চিনতে পারবে না। তবে তার আগে সব টাকা ফেরত্‍‌ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। লিওপোল্ড রাজী হওয়াতে এখন এই গুবরে পোকা হয়ে আছে।" তারপর লিওপোল্ডকে একবার দেখে নিয়ে বললেন, "নুন ফেলার জন্য বাবুর একটু অনুতাপ হয়েছে দেখছি।"

লিওপোল্ড তো একটা একটা করে নুনের দানা তুলতে লেগে গেলো। প্রথম দফায় সে দাড়ায় ধরে একটা একটা দানা নেয় আর এসে দুপায়ে খাড়া হয়ে বাটিতে তা ফেলে। সেটা খুব সুবিধের হোলো না, ভীষণ সময় লাগছে, আর পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরছে বোধহয়। তারপর সে তার শুঁড়গুলো পাখার মতো ছড়িয়ে তাই দিয়ে ঝাঁট দিয়ে নুন তোলার চেষ্টা করলো। তাও খুব জুতের হোলো না, নুন লেগে লেগে শুঁড় জ্বালা করতে লাগলো। সবশেষে দেখি একটুকরো কাগজ খুঁজে এনে সেটা কোদালের মতো ব্যবহার করে নুন তুলতে আরম্ভ করেছে। এবার বেশ চটপট কাজ এগোতে লাগলো, কিন্তু পুরো বাটির নুন তুলতে লিওপোল্ড সময় নিলো এক ঘণ্টার মতো।

" একজন পোকার পক্ষে এই বুদ্ধি করা বেশ কঠিন। আসলে লিওপোল্ডের বুদ্ধিসুদ্ধি বরাবরই বেশ ভালোই ছিলো, কেবল তা লাগাতো রাজ্যের বদ কাজে। এই পাঁচ বছর পোকাগিরি করে আশাকরি বদবুদ্ধিটা দূর হয়ে ভালোটাই থেকে যাবে, তাহলে মানুষ হয়ে যাবার পর সত্‍‌পথে থাকতে পারবে। আইনের ভাষায় যাকে রিহ্যাবিলিটেট বলে," বললেন লিকি।

সবচেয়ে তাজ্জব হবার মতো ব্যাপারটা তখনও বাকী। আমরা টার্কি খেতে আরম্ভ করা সময় থেকেই লিকি একটু উসখুস করছিলেন এবার আর থাকতে না পেরে বলেই ফেললেন, "আরে এতো দেরী হয়ে গেলো, আবদুল মক্কারের দেখা নেই কেন? তাকে যে স্ট্রবেরী আনতে পাঠালাম।"

"স্ট্রবেরী?" আমার আবার হাঁ হবার পালা। তখন জানুয়ারী মাস।

"হ্যাঁ, নিউজিল্যাণ্ডে পাঠিয়েছি, সেখানে তো এখন ভর গ্রীষ্ম, " বললেন লিকি। আমার হাঁ আর বন্ধ হয় না দেখে যোগ করলেন, "আবদুল মক্কার হচ্ছে একজন আরবী জিন, আমার কাছেই থাকে, ফাইফরমাস খাটে। লোক ভালো, তবে সব জিনদের যেমন, মাঝে মধ্যে মনটা এদিক ওদিক চলে যায় আর কী। এই দূরের পাড়ি দিতে হলে ওদের অনেক অনেক ওপরে উঠতে হয়, আর অতোটা উঠলে পরই স্বর্গের দেবদূতেরা কী বলাবলি করছে তাই আড়ি পেতে শুনতে শুনতে আর হুঁস থাকে না। ধরতে পারলে দেবদূতেরা উল্কা ছুঁড়ে তাড়ায়, তখন পালাতে যায় আর হয় যা আনতে পাঠানো হয়েছিলো তা ফেলে আসে বা গায়ে ফোস্‌কা নিয়ে এসে উপস্থিত হয়। দেখি খুব যদি দেরী হয় তাহলে একটা মেসেজ পাঠাবো। এখন তাহলে আমাদের ডেসার্টের অন্য কিছু ব্যবস্থা করতে হয়।"

এই বলে লিকি সেই জাদুকাঠি দিয়ে টেবিলের চারকোণায় আঘাত করলেন। টেবিলের চারটে কোণাই ফেঁপে উঠে ফেটে গেলো আর সেখান থেকে সবুজ সবুজ কলি বার হতে লাগলো। ওমা, কয়েক মিনিট পরেই কলি বাড়তে বাড়তে ফুটখানেক লম্বা হয়ে গেলো, তখন তাদের গাছ বলে চেনা যাচ্ছে-- চেরী, আপেল, পীচ,আর ওরে বাবা, আম গাছ।

অলিভারের টেবিল পরিষ্কার শেষ হবার আগেই ছাত ফুটো করে আবদুল মক্কারের আবির্ভাব। ঠিক ফুটো বলবো না, অলিম্পিক গেম্‌স্‌ যখন টিভিতে দেখায় তখন ডাইভ দিয়ে জলে ঢোকবার সময় জলের তলার ক্যামেরায় সাঁতারুদের যেমন দেখায়, তেমন করে আবদুলের প্রবেশ। যেন ছাতটা কঠিন কাঠের তৈরী নয়, জলের তৈরী। অলিভারের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগছিলো কিন্তু আবদুল দেখি খুব কৌশলে তা বাঁচিয়ে নিলো। মাটিতে নেমেই লিকিকে এক বিরাট কুর্ণিশ। আবদুলের চেহারা মানুষের মতোই, গায়ের রঙ বাদামী আর নাকটা টিয়াপাখীর নাকের মতো। মাথায় জরীর পাড় দেওয়া চুমকি বসানো বাহারী পাগড়ী আর গায়ে সবুজ সিল্কের পাজামা আর কুর্তা। পিঠে ভাঁজ করা দুটি চামড়ার পাখনা, বাদুড়ের পাখার মতো। গা থেকে কড়া তামাকের গন্ধ বার হচ্ছে।

কুর্ণিশ শেষ করে আবদুল বললে, "হে বিশ্বকেকা, হে জগতের সব অবিচারের বিচারক, হে জগদ্বন্ধু, আপনার অতি অধম দাসানুদাস আপনার আদেশ মতো এই স্বর্গীয় ফলের উপঢৌকন লইয়া এইক্ষণে আপনার সম্মুখে উপস্থিত।"

লিকি: "হে আফ্রিদিশ্রেষ্ঠ, তোমার এই উপস্থিতিই তো তোমার অতুলনীয় কর্মক্ষমতার পরিচায়ক।"

আবদুল: "হে মহানুভব, শেবাদেশের রানী বিল্‌কিস বেগম দর্শনে সম্রাট দায়ুদের যোগ্য পুত্র সোলেমান (তাঁহার উপর শান্তিবারি বর্ষিত হউক) যেরূপ আহ্লাদিত হইয়াছিলেন, আপনার তুচ্ছাতিতুচ্ছ ক্রীতদাসের প্রাণও তেমনি এইক্ষণে আনন্দে আপ্লুত হইতেছে। হে গুণনিধি, সকল বন্ধুত্ববিধ্বংসী এবং আনন্দ অপহারক অশুভতা যেন আপনার এই শান্তিময় আবাস হইতে শতযোজন দূরে থাকে।"

লিকি: "জিনকেশরী, তোমার শুভেচ্ছা যেন বীজমন্ত্র হইয়া আমাদের রক্ষা করে।"

আবদুল: "হে দৈত্যদলন মায়াসম্রাট, আজ কোন ছদ্মবেশী মহাপুরুষের উপস্থিতি আমাদের কক্ষ উজ্জ্বল করিয়াছে?"

লিকি: "ওহে আবদুল মক্কার, নবী শোয়াইবের সুসমাচার পুস্তকে ইহা লিপিবদ্ধ হইয়াছে যে অত্যধিক ও অহেতুক কৌতূহলই মিশরের ফারাওয়ের মার্জারের মৃত্যু ঘটাইয়াছিলো!"

অবদুল: "ইহা নিঃসন্দেহে ধ্রুবক!"

দুজনের এই চতুর্দশ শতাব্দীর সংলাপ শুনিয়া, থুড়ি দুজনের এই কচ্‌কচি শুনে আমার মাথা ঘুরতে আরম্ভ করেছে, লিকি সেটা বুঝতে পেরে বললেন, "আবদুল, এখন মণ্ট্রিল থেকে আমার দাড়ি কামাবার ব্লেড এনে দিয়ে শুতে যাও, কাল সকালে আমাকে ঠিক সময়ে ডেকে দিতে ভুলোনা।"

হঠাত্‍‌ কথাবার্তার মোড় এমন ঘুরে যাওয়ায় আবদুল হতচকিত হয়ে বারদুয়েক ঢোঁক গিলে বিশাল সেলাম বাজিয়ে চলে গেলো, এবার আর ছাত দিয়ে নয়, মেঝে দিয়ে, ঠিক যেন টুপ করে জলে ডুবে। লিকি বললেন, "এই জিনদের নিয়ে কারবার করার কিছু ঝামেলা আছে। এই যেমন মাঝে মাঝেই দাঁতভাঙা সাধুভাষায় অত্যন্ত খেজুরে আলাপ চালানো। এটি ঠিকমতো না করতে পারলে ওরা আর আপনাকে পাত্তা দেবে না, পেয়ে বসবে একেবারে। আবার কী করে এদের সময়মতো বিদেয় করা যায় সে কৌশলটাও জানা থাকা দরকার। নয়তো যেখানে সেখানে যাতা কেলেঙ্কারী বাধিয়ে বসবে, উদ্দেশ্য যদিও সত্‍‌। এই তো আমার একটু ক্রিকেট খেলা দেখার সখ আছে, মানে ছিলো। তা সেবার ইংল্যাণ্ড-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ দেখতে গেছি, ওদের এক ফাস্ট বোলার থেকে থেকে বাউণ্ডার ছেড়ে আমাদের ব্যাটস্‌ম্যানদের খুব বেগ দিচ্ছে। আর আমি একটু একটু করে চটছি। হঠাত্‍‌ আবদুলের আবির্ভাব, অন্যরা দেখতে পাচ্ছে না যদিও। এসেই আমাকে বলে কী, 'হে দুষ্টসূদন, হে ত্রিযষ্টিশাসক, এই মুহূর্তে এই দাসানুদাস আপনার মানসিক ক্লেশ দূর করিতে চেষ্টিত হইতেছে।' আমি 'আরে না, না, থামো, থামো' করে ওকে বিদেয় করার আগেই ফাস্ট বোলারের পেট কামড়ে উঠলো, সে মাঠ থেকে চলে গেলো, 'রিটায়ার্ড হার্ট', আর ফেরত্‍‌ এলো না। আচ্ছা এভাবে কি ক্রিকেট খেলা হয়, কী কেচ্ছা। তাও খুব বেঁচে গেছি, বোলারকে আবদুল তো ছাগলও বানিয়ে দিতে পারতো। সেই থেকে আমার ক্রিকেট খেলা দেখা মাথায় উঠে গেছে॥ তবে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে ওরা খুব কাজের লোক এবং সত্‍‌। কেবল আমাদের মানুষদের বিচারে কাণ্ডজ্ঞানটা কম।"

ফিলিসের হুইপ্‌ড্‌ ক্রীম দিয়ে স্ট্রবেরী জমলো ভালোই। টেবিলের চারকোণার চারটে গাছ দেখার পর থেকে আমার মন কিন্তু পড়ে আছে আমের দিকে, চারপাঁচ বছর খাইনি, কখন একটু আম খেতে পাবো তার অপেক্ষায়। আমি আর কোনো ফল চাই না। এই বারে সাহস করে লিকি সায়েবকে সেটা বললাম।

"অতি অবশ্যই," লিকি বললেন। "আমি আপনার পোষাকে মায়া বর্ম লাগিয়ে দিচ্ছি যাতে আমের রস লেগে জামাকাপড় নষ্ট না হয়।"

"না, না আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে ব্যাপকভাবে আম খাওয়া হয়, তাই আমার গায়ে রস না ফেলে আম খাবার অভ্যেস আছে," আমি বললাম।

"হ্যাঁ হ্যাঁ, তা বটে, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। তাহলেও মন্ত্রটা যখন ভেবে রেখেছি, যাদুটা লাগিয়ে দিই, থাকলে কোনো ক্ষতি তো নেই," এই বলে লিকি তাঁর যাদুকাঠি ঘুরিয়ে দিলেন আমার চারধারে। যাদুর দৌড় পরখ করার জন্য ইচ্ছে করে গায়ে আমের রস ফেলার চেষ্টা করলাম, রস সড়াত্‍‌ করে হয় আমার মুখে চলে এলো নয় আমেই ফেরত্‍‌ গেলো। লিকি দেখি মুচকে মুচকে হাসছেন। সায়েবীমতে অসভ্যতা হচ্ছে জেনেও চারটে আম খেয়ে ফেললাম। লিকি খেলেন আপেল। সেই আমের স্বাদ আর গন্ধের বর্ণনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই। আমার আম আক্রমণ দেখে লিকি সস্নেহ হেসে বললেন, "অলিভার, এই সায়েবের জন্য গাছ থেকে বাকী আম তুলে ভালো করে প্যাক করে দাও, উনি বাড়ী নিয়ে যাবেন। যখন খাবেন তখন আমাদের মনে পড়বে।"

"কী যে বলেন," আমি বললাম, "এই সন্ধ্যের সব অভিজ্ঞতা মিলিয়ে একটা বই লেখা যায়, আমি তা কোনোদিন লিখে ফেলতে পারি। এই সন্ধ্যে আমি জীবনে কখনো ভুলবো না।"

"ভাগ্যিস ওই দুর্ঘটনাটা ঘটতে চলেছিলো, নয়তো আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় হোতো না।" লিকি বললেন। আমি ভাবলাম, এই রে আবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন শুরু হোলো বুঝি, কিন্তু লিকি আর কথা বাড়ালেন না।

লিকির টুপি থেকে কফি বার হোলো, যাকে বলে গোর্মে কফি। অলিভার কিছু চীজ নিয়ে এলো, নিশ্চয় ফিলিসের দান, পম্পি জুতো পরে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এসে চীজ গালিয়ে সস্‌ বানিয়ে দিয়ে গেলো, আমরা ক্র্যাকার ডুবিয়ে খেলাম। আমরা যখন কফি খাচ্ছি তখন লিকি কাঠি ঘুরিয়ে টেবিলের গাছ সরিয়ে ফেললেন আর একদিক সুন্দর সবুজ ঘাসে ভরে গেলো। তারপর লিকি ডাক দিতে ফিলিস বেরিয়ে এসে সেই ঘাস খেতে লাগলো। চমত্‍‌কার শান্ত গরম পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, চোখে ঘুম এসে যায়।

খাওয়া দাওয়ার মধ্যে লিকির সঙ্গে নানা বিষয়ে বেশ গভীর আলোচনা চলেছে। একটা বিষয় নিয়ে আমার তখনো কৌতূহল ছিলো, সেটা হোলো লিকি সায়েবের নিজের নামটা, বা ডাকনাম, কী। সেটা জিজ্ঞাসা করা হয় নি

একটু ইতস্তত করে এবার লিকিকে জিগ্যেস করে ফেললাম।

লিকি বললেন, "এ ব্যাপারে একটু গোলমাল আছে। সেটা হোলো যে আমরা নিজেরা মন্ত্র-টন্ত্র নিয়ে তুকতাক করি, আমাদের অনেক শত্রু আছে, তারাও তাই করে। অর্থাত্‍‌ আমাদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে আমাদের ওপর মন্ত্র খাটিয়ে আমাদের কাবু করার সুযোগ খোঁজে। কিন্তু কাউকে তুক করতে গেলে তার নাম এবং সেই মন্ত্র, সবটা একদমে বলতে হয়, এই নিয়ম। সেই ভেবে আমাদের বিশাল লম্বা নাম দেওয়া হয় আর পারতপক্ষে তা অন্যদের জানতে দেওয়া হয় না। রাজা-রাজড়াদের ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটতে পারে তাই তাদেরও দেড়গজী নাম রাখা হয়। একজন সম্রাটের নামের একটা উদাহরণ দিই:

"অগস্টাস বেনহাদ শার্লেমান দাগোবার্ট ইথেলউল্‌ফ ফ্রেদেরিক জেনসেরিক হার্ডিক্যানিউট ইক্সট্‌ল্‌কোচিট্‌ল্‌ জেহিওয়াকিম কামেহামেহা লিওনিডাস ম্যাক্সিমিলিয়ান নেপোলিয়ান ওবাদিয়া পলিক্রেটেস কিউরিনিউস রেহোবোম সুবিউলিউমা টারাস্‌সিকোদিস্‌সা উম্‌স্লিকিকাসি ভ্যালেন্‌টিনিয়ান ওয়েনেস্লাউস শের ইয়োশিহিতো জেডেকি একশো সতেরো [প্রসঙ্গত এর প্রতিটি নামই হয় কোনো প্রসিদ্ধ রাজার বা বাইবেলের কোনো চরিত্রের]।

"আমাদের যাদুকরদের নামও ওইরকম ধরণের কিছু রাখতে হয়, তবে আরো গড়বড়ে। তা সে তোমার না জানাই ভালো। লিকি বলেই আমকে মনে রেখো।"

আপত্তি করার কিছু নেই। আমার কৌতূহলও মিটেছে।

"চলো তোমায় বাড়ী পৌঁছে দিই। এরপর একসময় ছুটি নিয়ে চলে এসো, সারাদিন আমার সঙ্গে কাটাবে। আমার কাজের কিছু নমুনা দেখাবো, তারপর পৃথিবী ঘুরতে যাবো। এখন এই কার্পেটের ওপর পা মুড়ে বসে পড়ো। এটা ছাত ফুঁড়ে যখন বার হবে, তখন চোখ বন্ধ করে থেকো নয়তো মাথা ঘুরে যেতে পারে। অলিভার, সায়েবের আমের ঝোড়াটা তুলে দাও কার্পেটে।"

এবার আমার দান লিকিকে গুছিয়ে ধন্যবাদ দেবার। অনেকক্ষণ ধরে কী বলবো ঠিক করে রেখেছিলাম, কোনো অসুবিধে হোলো না। আর তাছাড়া কিছু তো আর বানাতে হোলো না, ধন্যবাদ এলো একেবারে অন্তর থেকে। আমার মনে হয় না আমার চেনাজানার মধ্যে কারুর এই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বা কখনো হবে। কার্পেটে উঠে লিকির ঘরের দিকে শেষবার তাকালাম, দেখি অলিভার এর মধ্যে একটা রুমাল জোগাড় করে নাড়ছে, লিওপোল্ড তার কাজ সবে শেষ করে হাত ঝাড়ছে, ফিলিস পরম প্রশান্তিতে জাবর কাটছে। ফায়ারপ্লেসের মধ্যে থেকে ছোট্টো একটা হাঁচির আওয়াজ পেলাম কি?

কার্পেটে উঠে লিকি আমার ঠিকানা বলে দিলেন, আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম, মাথাটা একটু ঘুরলো, তারপর একটু ঠাণ্ডা হাওয়া, তারপরেই বেশ গরম, কার্পেট ঠিক আমার বসার ঘরে পৌঁছে গেছে। ঘরটা একেই খুব ছোটো, তারপর মেঝেতে বই খাতা ছড়ানো, যা আমার অগোছালো স্বভাব। কার্পেট তাই মাটিতে ঠেকতে পারলো না, এক ফুট মতো ওপরে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি আমের ঝুড়িটা ধরে ঝুপ করে নেমে গেলাম। ফিরে তাকিয়ে দেখি কার্পেট লিকিকে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে, লিকি হাত নাড়িয়ে বাইবাই করছেন।

লিকির দেওয়া আম আর কাউকে খাওয়াতে আমার মন সরলো না, নিজেই রইয়ে সইয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেলাম। শেষ হতে প্রায় একমাস লাগলো কিন্তু সব আমের রঙ-স্বাদ-গন্ধত সেই প্রথম দিনের মতোই রইলো, এতোটুকু পরিবর্তন দেখা গেলো না। লিকি সায়েব আমের রপ্তানী ব্যবসাতে উত্‍‌সাহী কিনা জেনে আসা উচিত ছিলো। দেখা যাক পরের বার যখন দেখা হবে তখন জেনে নেবো।

অনুবাদ - সুমিত রায়

(শেষ)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।


Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।