সলিল সফর

সলিল সফর

এক বাঁও মেলে না, দুই বাঁও মেলে না…সেদিনও কি স্টিমারের মাঝি দাঁড়িরা এভাবেই জল মাপছিল? হয়তো মেপেছিল। দেখেছিল সেই বছর ছয়েকের বালক। যেভাবে সেদিন সে দেখছিল গাঁয়ের বধূদের কলসি ডুবিয়ে জল ভরা, কাঁখে সেই কলসি নিয়ে ঘোমটা টেনে তাদের চলে যাওয়া। বহুপরে আমরা পেয়েছিলাম ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো!’ 

আসামের একড়াজানের বাগান থেকে হাঁটা, তারপর ট্রেন, তারওপর গোয়ালন্দ থেকে স্টিমারে করে কলকাতা। উৎসুক সে বালক অতি উৎসাহী ছিল রোয়াকে বসে কলকাতা দেখার জন্য। ভোরের রাস্তায় হোসপাইপের থেকে সশব্দে জল আছড়ে পড়া, রাস্তা ধোয়ানর গল্প সে হয়তো শুনেছিল তার বাবা ডাক্তার জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরীর কাছে। যাঁর নিজের কমবয়সের বেশ কিছু সময় কেটেছিল ওই বাড়িতে। সুকিয়া স্ট্রিটের এই বাড়িটি ছিল জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরীর সেজদার। 

খানিক বড় হয়ে সেই গাঁয়ের বধূ, পাল্কির গান লিখে সুর দিয়েছিলেন যা আজ পর্যন্ত কিংবদন্তি গান হয়েই রয়ে গেছে আধুনিক বাংলা গানের জগতে।  

একড়াজান থেকে আসার সময় আসামের জঙ্গল, আকাশ, খোলা মেলা প্রকৃতির জন্য দুঃখ মোটেই ছিল না। সমস্যা হল কলকাতার জানালাবিহীন রঙচটা দেওয়ালের একখানা ঘর, আলো আসে না, হাওয়া আসে না সে ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসে। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখে ঝড়ে বেসামাল স্টিমারে দাদা আর বাবার কাছ থেকে প্রবল ঝড় তাকে আলাদা করে দিচ্ছে। সে গড়াতে, গড়াতে চলেছে ডেকের ওপর দিয়ে। 

দু’চারদিনের মধ্যেই কলকাতার স্নেহরস বিহীন জীবনে থেকে মন কেমন করা শুরু হয়। এর সঙ্গেই শুরু হয় স্কুল। স্কুল ক্যালকাটা একাডেমিতে ক্লাস, স্কুলের পর হয় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, নাহলে বন্ধুদের সঙ্গে গুলি খেলা, সন্ধেবেলা সুকিয়া স্ট্রীটের সেই নিষ্প্রাণ বাড়িতে ফিরে মাস্টারমশায়ের কাছে পড়তে বসা। স্নেহ, আদরবিহীন সেই জীবনে সেই বালকের খানিক অকারণ শাসন জুটত, পেট ভরার জন্য যা হোক কিছু খাদ্য মিলত, কিন্তু সেই ইঁটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় আদর, আবদার, ভালবাসা ছিল একেবারেই দুর্লভ। 

এরকমই এক ধোঁয়াটে সন্ধেবেলা দোতলার বারান্দায় মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়ছে সে আর তার দাদা, হঠাৎ ঝম, ঝম, ঝম সূরের মুর্ছনায় যেন ভরে গেল সেই বাড়ির আনাচ কানাচ। দোতলার বারান্দা থেকে কিছুতেই বুঝতে পারে না এত সুন্দর আওয়াজ আসছে কোথা থেকে?  সিঁড়ি দিয়ে সন্ধেবেলা নীচে নামলেই আছে শাসনের দণ্ড তাই সেদিন জানা হয় না কে বাজাচ্ছেন আর কে গাইছেন। 

এরপর থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে চলে খোঁজ। আস্তে আস্তে পর্দা সরে, সেই বালক, বাচ্চু যার নাম  সে জানতে পারে সেই  বাজনার সেই ঘরের নাম ক্লাবঘর। মিলন পরিষদ অর্কেস্ট্রা ক্লাব। সে ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে কত রকমের যে বাজনা। সে ঘরে যে গৌরবর্ণ মানুষটি ধ্যানস্থ ঋষির মত কখনো বেহালা, কখনো ক্ল্যারিওনেট কিংবা পিয়ানো বাজান, তিনি সেই বাড়িরই ছোট ছেলে। অর্কেস্ট্রা দলের তিনিই প্রধান। যে ছোড়দাকে সে কখনো দেখেনি শুধু নাম শুনেছিল, তাঁর হাত ধরেই যে সুরের জগতের দরজা খুলবে তখনও তা সে জানে না। তবে লুকিয়ে সে সব বাজনা শোনে আর গলায় ধরার চেষ্টা করে সেই সব সুর। এভাবেই একদিন তার সুর ধরার চেষ্টা ধরা পড়ে যায় সেই ছোড়দার কাছেই। আর সেই ধরা পড়াই বুঝি ছিল মাহেন্দ্রক্ষণ।  

ছোড়দা নিখিল চৌধুরী মুহূর্তে চিনে নেন বালক বাচ্চুর প্রতিভা। শুরু হয় শিক্ষানবিশি। পিয়ানো থেকে বাঁশি বেশ কয়েকটি যন্ত্র শিক্ষা সব আলাদা, আলাদা শিক্ষকের কাছে। তিনি নিজে শেখান বেহালা। বাঁশির হাতখড়ি হয়েছিল তার আসামের চা বাগানে, সেই বাঁশিতে শুরু হল এবার সুরের সাধনা বিখ্যাত ক্ল্যারিওনেট বাদক গোপাল লাহিড়ির কাছে।

মিলন পরিষদে ছ’বছরের সেই বালক দেখে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র ঘোষের মত শিল্পীদের। শোনে সঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয়ে বিদগ্ধ আলোচনা। এসব আলোচনা অবশ্যই সে বোঝে না। তার তখন তা বোঝার বয়স হয়নি, তবু হয়তো রয়ে যায় মনের কিনারায় কোনো একলা ঘরে যা ভবিষ্যতে অনেক নতুন কিছু ভাবতে শেখায় তাঁকে। 

স্রষ্টাকে যে অনেক নতুন ভাবে ভাবতে হবেই নাহলে সে হারিয়ে যাবে কালের অন্ধকারে এ জিনিস তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সঙ্গীত সৃষ্টির শুরু থেকেই। তখন বার বার এ সমস্ত ছোটোবেলার দিন আর স্মৃতি ফিরে ফিরে আসত তাঁর মনে। তাঁর বিভিন্ন লেখায় ফিরে ফিরে এসেছে সেসব কথা।

বিভিন্ন বাজনার শিক্ষানবিশি চলছে এরকম সময়ে ছোড়দার অর্কেস্ট্রা ক্লাব মিলন পরিষদ কন্ট্রাক্ট পেল মানিকতলার ছায়া সিনেমায়। নির্বাক সিনেমার সে যুগে সিনেমার আগে, বিরতিতে তো বটেই সিনেমা চলাকালীনও মিউজিক বাজান হত ছায়াছবি দেখে। মাইনে করা অর্কেস্ট্রা পার্টি থাকত সব সিনেমাহলের। নিখিল চৌধুরী বালক বাচ্চুকে বসিয়ে দিলেন পিয়ানো বাজানোর জন্য। সে তখন রীতিমত পিয়ানো বাজায় তাদের অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গে। একদিন সিনেমা শুরুর আগে তাকে পিয়ানোয় বসিয়ে দিতেই সব দর্শক সিট ছেড়ে সামনে চলে এল তাকে দেখতে। পিয়ানোর স্টুলে বসা এক ছোট্ট মানুষ, যার পা দুটো ঝুলছে শূন্যে; হাত পিয়ানোর রিডে। এভাবে এক শিশুকে পিয়ানো বাজাতে দেখে সবাই হৈ হৈ করে উঠেছিলেন সেদিন। সেদিনই সম্ভবত সুরের জাদুকর সলিল চৌধুরীর সুরের সমাবেশের অভিষেক হয়েছিল।

স্কুল, পড়া আর বাজনা শেখা এর সঙ্গে সঙ্গে জুটে যেত বেশ কিছু অকারণ শাসন আর মারধোরের মত অত্যাচার। বাজনা শিখে ভবিষ্যৎ ঝরঝরে হয়ে যাচ্ছে এই মর্মে সম্ভবত চিঠিও যায় আসামের চা বাগানে তার বাবার কাছে। সেই ডাক্তার ভদ্রলোক বুঝে উঠতে পারেন না কী ব্যবস্থা করবেন। 

এর কিছুদিন পরেই হঠাৎ একদিন কলকাতা থেকে বাচ্চু এবং তার দাদা খোকনের বাসস্থান বদল হয় সোনারপুরের কোদালিয়া গ্রামে তাদের মামার বাড়িতে। সে বাড়িতে খাওয়া, খেলা, আমোদ আহ্লাদ, দিদিমার স্নেহচ্ছায়া সব মেলে কিন্তু সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। সঙ্গীত সে বাড়িতে ব্রাত্যজন। সঙ্গীতের সেখানে প্রবেশ নিষেধ। শিশু, কিশোরদের জন্য সঙ্গীত শিক্ষা একেবারে কঠিন ‘না!’

সুর আর সঙ্গীত যার রক্তে ঢেউ তোলে, তার পক্ষে সঙ্গীতকে এভাবে ভুলে থাকা এক দুরূহ কাজ। কলকাতার সেই মিলন পরিষদ ক্লাবঘর আর অশেষ প্রতিভাধর ছোড়দা বার বার ফিরে আসেন মনে। মনে পড়ে বিখ্যাত ক্ল্যারিওনেট বাদক গোপাল লাহিড়ীর কাছে শেখা বাঁশির কথা। মামাবাড়িতে আসার সময় বাচ্চু বই, জামাকাপড় ছাড়া সঙ্গে আনতে পারেনি কিছুই, শুধুমাত্র একখানা বাঁশি ছাড়া। সে বাঁশিকে হাতে নিয়ে দেখে কিন্তু বাজানোর সাহস পায় না। দিদিমা কিংবা মামাদের কারুর কানে গেলে সর্বনাশ। যে বাড়িতে গুন গুন করে গান গাওয়া পর্যন্ত অপরাধ সেখানে মনে মনেই চলতে থাকে সুরের খেলা। 

একদিন স্কুল থেকে ফিরে পেটপুরে খেয়ে, শার্টের পকেট ভর্তি মুড়ি আর নারকেল নাড়ু নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। যদি পাওয়া যায় এমন জায়গা যেখানে বসে বাঁশিখানা বাজালে মামাবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাবে না। পাওয়া গেল রেললাইনের ধারে এক পুল। সেখানেই রোজ স্কুল থেকে ফিরে চলল বাঁশি বাজান। কখনো হয়তো সঙ্গে থাকে সমবয়সী মামা বুড়ো, কখনো দাদা, কখনো বা একাই। গ্রামের প্রান্তে বসে এভাবেই রোজ চলে সুরের সাধনা।

লুকিয়ে সুরের সাধনার সঙ্গে চলল মামাবাড়ির নিয়ম মেনে নিয়মিত শরীর চর্চা। কুস্তি, সাঁতার আর পড়াশুনা। হরিনাভির দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ অ্যাংলো সংস্কৃত স্কুলে ভর্তি হল দুই ভাই। এর সঙ্গে সঙ্গে গৃহশিক্ষক সন্তোষ কুমার ঘোষ ছিলেন সলিল চৌধুরীর শব্দে ‘গ্রামারে এডিক্ট।’ তিনি পরিচয় করালেন ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে। মামাবাড়িতে ছিল মামা কিংবা দাদুদের কারুর রেখে যাওয়া এক আলমারি ইংরেজি বইয়ের সংগ্রহ। সেসব পড়ে ফেলল সে ছেলে। মিল্টনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ তার মধ্যে ছিল তার অত্যান্ত প্রিয় কাব্যগ্রন্থ। 

কোদালিয়ায় থাকাকালীনই দেখল, মামাবাড়ির সেই কঠিন নিয়ম ভেঙে কিভাবে যেন একদিন ঢুকে পড়ল গান বাজনা। ছড়িয়ে পড়ল বাচ্চু বা সলিলের বাঁশি বাজানোর কথাও। ততদিনে সে ছাদে বসে বাঁশি বাজায় মামাবাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে। বাঁশির সুর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। আশে পাশের চারখানা গ্রামের লোক জানে যে রাত্রে বাঁশিওলা বাঁশি বাজাবে। বাঁশিওলা কে তাও তারা জানতে পারে। বাঁশি একদিন না বাজালেই শুনতে হয়- আগের রাতে বাঁশি কেন বাজায়নি সে!  

বাচ্চুকে সাদরে ডেকে নিয়ে যায় মাসিরা- মায়েদের সব বোনেদের মজলিসে তার নিমন্ত্রণ। সে বাঁশি বাজায়, গান করে। অ-সুরের অন্দরমহলে সুরের প্রবেশ ঘটে। জীবন গ্রামেই কাটতে থাকে, হয়তো বছরে একবার আসামে চা বাগানে যায় মা বাবার কাছে।

ওই মামাবাড়ির গ্রামের আশে পাশেই ছিল কামারপাড়া, কলুপাড়া, কৈবর্তপাড়া, যুগিপাড়া, মেথরপাড়া। ব্রাহ্মণ কায়স্থরা লেখাপড়া শিখত। অন্য পাড়াগুলি মূলত ছিল পেশা নির্ভর, বিশেষত মেথরদের ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্য কোনো স্কুল ছিল না, অথচ এই মেথররা না থাকলে সে সময়ের কোদালিয়া বা রাজপুর মিউনিসিপালিটি অচল। প্রতিটি বাড়ির খাটা পায়খানা প্রতিদিন সকালে এরা পরিষ্কার করে। না আছে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা না শিক্ষা অথবা কোনো ভাতা। এদের প্রথম আন্দোলন সলিল দেখলেন একেবারে কাছ থেকে। মনে মনে মন্ত্রশিক্ষা হল কমিউনিস্ট শিক্ষার। 

১৯৩৯ সালে অ্যাংলো সংস্কৃত স্কুল থেকে সলিল চৌধুরী ম্যাট্রিক পাশ করলেন। 

এর পরের জীবনে কলকাতা এবং বঙ্গবাসী কলেজ। অতঃপর অত্যন্ত কাছ থেকে দেখলেন বিশ্বযুদ্ধ আর তার অভাব। শ’য়ে শ’য়ে কৃষক পুরুষ ও রমণীকে দেখলেন ভিক্ষাপাত্র হাতে। মুখে আর্তনাদ ‘ফ্যান দাও গো মা!’ ফুটপাতে অসাবধানে হাঁটলেই তখন ঠোক্কর খেতে হয় অজস্র মৃতদেহের কোনো না কোনোটির সঙ্গে।  

ততদিনে তিনি ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। লিখে চলেছেন একের পর এক গান। গানগুলি গেয়ে কখনো দুর্ভিক্ষের জন্য টাকা তুলেছেন কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে, কখনো সেই গানগুলিই গাইতেন পার্টির মিটিং-এ, কৃষক সভায়। বহু সময় কৃষক সভায় যে গানগুলি তাৎক্ষণিক বানিয়ে গেয়েছেন তা হারিয়েও গেছে প্রচুর। 

এই সময়ই তাঁর অনেক গান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করল, স্বাধীনতার আগে এবং পরে। তবুও গাইতেন দলের সঙ্গে মিলে। পুলিশ দেখলে পালাতেন। অদ্ভুতভাবে বেশ কিছু গান পার্টিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। তাঁর জন্য নিয়ম করা হল তাঁকে পার্টিতে পাশ করিয়ে নিতে হবে গান। তবে সে গান গাওয়া যাবে। সুর সম্রাটের আঁতে ঘা লাগল এইবার। যে কমিউনিস্ট পার্টি করার জন্য বাবার সঙ্গে মতভেদ হয়েছিল, যে পার্টির জন্য দিনের পর দিন পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে; গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন কৃষকদের একত্রিত করতে, সেখান থেকে এমন কথা তাঁকে সত্যিই খুব বড় আঘাত দিয়েছিল। 

এরপর ধীরে ধীরে তিনি বোধহয় দু’পা পিছোলেন। কিছুদিন পর ‘দো বিঘা জমিন’ এর স্ক্রিপ্ট নিয়ে গেলেন বম্বে। এই বম্বে যাওয়া নিয়েও তাঁকে শুনতে হয়েছিল সুবিধাবাদীর তকমা। তবু ছিলেন কিছু সুধীজন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেই, যাঁরা তাকে উৎসাহ দিতেন নতুন সৃষ্টির।

কসবাতে বাড়ি নিয়েছিলেন। আসাম থেকে মা বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন কসবার সেই বাড়িতে।

বাবা ডাক্তার জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরীর কাছেই তাঁর প্রথম শিক্ষা হয়েছিল সাম্যবাদের এবং সংগীতের। আসামের চা বাগানের বাংলোয় দেখেছেন অজস্র সিম্ফনির রেকর্ড, যা বাবা বাজাতেন তাঁর অবসর সময়ে। সেই সব সিম্ফনি সুরের আলো হয়ে শিশু সলিলের মাথায় ঘোরাফেরা করত যা সারাজীবন বিভিন্ন সৃষ্টিতে তাঁর সামনে আলোর বর্তিকা হয়েছে।

আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন সলিল চৌধুরী। 

অতি ছোট থেকে বাবাকে দেখেছেন চা বাগানের ব্রিটিশ মালিক আর ম্যানেজারদের সঙ্গে লড়াই করে শ্রমিকদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে। সেই বাবাকেই দেখেছেন চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে নাটক করতে। জীবন সায়াহ্নে বাবাকে কাজ থেকে ছুটি দিতে চেয়েছিলেন সলিল কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি। কসবার বাড়িতে খুব অল্পদিনের মধ্যেই তিনি চলে গেলেন কলেরায়। 

এরপর গঙ্গা ভোলগা দিয়ে অনেক জল বইল। কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হল। কেউ তাঁকে ভাল বলল, কেউ খারাপ বা সুবিধাবাদী। তিনি মেতে রইলেন সৃষ্টির আনন্দে। গান লিখলেন অনেকগুলি ভাষায়। তাঁর লেখা গান গাইলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্রের মত গায়কেরা। 

সুরের রানার পিঠেতে সুরের বোঝা নিয়ে সুর ছড়িয়ে দিতে থাকলেন দেশের পশ্চিম থেকে পূর্ব, দক্ষিণ থেকে উত্তর। দেশের আপামর সাধারন মানুষ তখন গুন গুন করে তাঁর গান।

এরপর ‘দো বিঘা জমিনে’র পরের জীবন এক কিংবদন্তি সুরকারের জীবন। তার বেশিরভাগ বেরিয়েছে কোনো না কোনো পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে। সে সবের পুনরাবৃত্তি আর করলাম না। 

তথ্যসূত্রঃ 

জীবন উজ্জীবন এবং সলিল চৌধুরী (দেজ) 

সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান 

সলিল চৌধুরী উইকিপিডিয়া

 
বাসবদত্তার প্রথাগত পড়াশোনা কলকাতায়। ছোট থেকেই অতিরিক্ত অসুস্থ থাকার কারণে খেলাধুলোয় অংশগ্রহণ খুব একটা সম্ভব হত না। মা বাবা এনে দিতেন বই। বই গিলত মেয়েটা। সেই নেশাটাই রয়ে গেল। পরবর্তীকালে কলকাতা ছেড়ে অন্য শহরে বছর দশেক সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং এর কাজ করেছেন। বর্তমানে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী গৃহবধূ। মাথায় অনেক কথা, যা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তা খুঁজতেই আঙুল আর ল্যাপটপের সহাবস্থান হল একদিন। আর চেষ্টা শুরু হল না বলা কথাগুলো লেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *