লীলার মা সে যাত্রা
রক্ষা পাইলেন না । তাঁহার পবিত্র আত্মা পরলোকগত স্বামীর উদ্দেশ্যে
চলিয়া গেল । দুইমাস পরে পিতৃমাতৃহীনা লীলা স্বামীগৃহে উপস্থিত
হইল , এবং পূর্ব্বের ন্যায় এবারেও দুর্ভাগিনী , কাণ্ডজ্ঞানহীন
মদ্যপ স্বামীর নিকটে উৎপীড়িত হইতে লাগিল ।
ক্রমে আমি ধৈর্য্য
হারাইলাম , যেমন করিয়া পারি , লীলার কষ্ট দূর করিতে হইবে । কি
উপায় করি ? অনেক চিন্তার পর স্থির করিলাম , পূর্ব্বে শশিভুষণের
সহিত আমার খুব বন্ধুত্ব ছিল - আবার তাহার সহিত সেই বন্ধুত্ব
গাঢ় করিয়া তুলিতে হইবে । যদি তাহার সহিত মিলিয়া মিশিয়া ক্রমে
তাহার সেই হেয়তম ঘৃণ্য চরিত্রের কিছুমাত্র সংশোধন করিতে পারি
।
কার্য্যে তাহাই
ঘটিল । আমি মধ্যে মধ্যে - তাহার পর প্রত্যহ শশিভূষণের সহিত সাক্ষাৎ
করিতে আরম্ভ করিলাম । উভয়ের মধ্যে আবার ঘনিষ্ঠতা নামক পদার্থটি
অত্যন্ত নিবিড় হইয়া আসিতে লাগিল । এখন তাহাদের বাড়ীতে গেলে শশিভূষণ
আমাকে যথেষ্ট খাতির যত্ন করিত ।
দুই-চারিদিনের মধ্যে
মধ্যে কথায় কথায় বুঝিতে পারিলাম , শশিভূষণ লীলাকে অত্যন্ত ভালবাসে
। শুনিয়া সুখী হইলাম বটে , কিন্তু এ অত্যন্ত ভালবাসার উপরে ,
এ অত্যন্ত অত্যাচারের কারণ কিছুতেই নির্দ্ধারণ করিতে পারিলাম
না ।
যাহাই হউক , তাহার
সেই মনোভাবে আমার মনে অনেকটা আশার সঞ্চার হইল । মনে করিলাম ,
আমার প্রচুর উপদেশ-বৃষ্টিবর্ষণে তাহার প্রেমতৃষ্ণার্ত্ত মরুহৃদয়ে
এক সময়ে-না এক সময়ে সৎ প্রবৃত্তির বীজ উপ্ত হইবার যথেষ্ট সম্ভাবনা
আছে । আমি বহু শাস্ত্রবচন উদ্ধৃত করিয়া এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর
ফুটনোট করিয়া বুঝাইতাম যে , ধর্ম্মপত্নীর উপর দুর্ব্ব্যবহার
করা শাস্ত্রবিগর্হিত কাজ ; এবং তজ্জন্য অধঃপতন অনিবার্য্য ।
নরেন্দ্রের সহিত একান্ত হৃদ্যতায় আমার যে এই অযাচিতভাবে উপদেশ
প্রয়োগে কিছু অধিকার আছে , তাহা শশিভূষণ বুঝিত ; এবং ভবিষ্যতে
যাহাতে আমার উপদেশ রক্ষা করিয়া কাজ করিতে পারে , সেজন্য যথেষ্ট
আন্তরিকতা প্রকাশ করিত ।
এইরূপে তাহাকে অনেকটা
প্রকৃতিস্থ করিলাম । কিছুদিন সে আমার কথা রক্ষা করিয়াছিল ; পরে
আবার যে-কে-সেই । যেদিন বেশি মদ খাইত , সেদিন লীলার প্রতি দুর্বৃত্তের
অত্যাচার একেবারে সীমাতিক্রম করিয়া উঠিত । তখন আমি উপদেশের পরিবর্ত্তে
রুষ্ট হৃদয়ে তাহাকে যথোচিত তিরস্কার করিতাম । কখন সে মৌন থাকিত
এবং কখনও বা অসন্তোষ প্রকাশ করিত ।
একদিন শশিভূষণ মদের
মুখে - অসদ্ভাবে নয় , সরল প্রাণে কলুষিত বদনে এইরূপ আত্ম-পরিচয
আমাকে দিতে লাগিল , " ভাই যোগেশ , আমার মতিগতি যাহাতে ভিন্ন
পথে চালিত হয় , সেজন্য তুমি যে যথেষ্ট চেষ্টা করিতেছ , তাহা
যে আমি বুঝিতে পারি নাই , তাহা নহে । যদিও আমি মাতাল , কাণ্ডজ্ঞানহীন
; তথাপি আমি তোমার মনের ভাব বেশ বুঝিতে পারি । তুমি আমাকে অনেক
বুঝাইয়াছ , বুঝি নাই , ভার্ৎসনা করিয়াছ - আমারই ভালর জন্য ।
সব বুঝিতে পারি , বুঝিলে হইবে কি , বেশী মদ খাইলে আর আমার কিছুই
মনে থাকে না । বাঁচিয়া থাকিতে যে মদ ছাড়িতে পারিব - কখনই না
। যদিও পারিতাম , এখন আর তাহা পারিব না । আমার মনের ভিতর কি
বিষের হল্কা বহিতেছে , কে জানিবে ? মদ খাইয়া অনেকটা ভাল থাকি
। ইহার ভিতরে অনেক কথা আছে । কথাটা শুনিয়া যাও , এ পৃথিবীতে
আমার মত তোমার ঘোরতর শত্রু আর কেহ নাই । আমি জানি , তুমি লীলাকে
ভালবাসিতে , এবং লীলার সহিত তোমার বিবাহ হইবে ; কিন্তু -"
শুনিয়া আমি আপাদমস্তক
শিহরিয়া উঠিলাম । শশিভূষণ সেদিকে লক্ষ্য না করিয়া বলিতে লাগিল
, - "লীলা যে তোমাকে ভালবাসে , আমি সে কথা অনুভব করিতে
একবারও চেষ্টা করি নাই । যেদিন আমি সৌন্দর্য্য-মণ্ডিতা লীলাকে
দেখিলাম , সেইদিন হইতে তাহার একটা অদম্য আকাঙ্খায় আমার সমগ্র
হৃদয় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল ।
স্নেহ , মমতা, প্রেম
প্রভৃতির অস্তিত্ব যে আমার হৃদয়ে আছে , সে সম্বন্ধে আমার নিজেরই
কিছুমাত্র বিশ্বাস ছিল না ; কিন্তু যেদিন দেবী-প্রতিমার ন্যায়
অশেষমহিমাময়ী লীলাকে দেখিলাম , শত সৎপ্রবৃত্তিও যেন হৃদয়দ্বার
উদঘাটন করিয়া , সেই দেবী-প্রতিমার অর্চ্চনার জন্য সহস্র ব্যগ্র-বাহু
প্রসারণ করিয়া একেবারে আকুল করিয়া উঠিল । সন্ধান লইয়া জানিলাম
, তোমার সহিত লীলার বিবাহ হইবে । সেজন্য লীলার মা আর নরেন্দ্রনাথের
যথেষ্ট আগ্রহ আছে । আর তোমার আর্থিক অবস্থা যেমনই হউক , তোমার
সচ্চরিত্রতার উপর তাঁহাদের এক বিশ্বাস । স্থির করিলাম নিজের
অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য তাঁহাদের সেই অনন্ত বিশ্বাস দ্রুত ভাঙিতে
হইবে ।"
আমি স্তম্ভিত হৃদয়ে
, সংযতশ্বাসে তাহার হৃদয়হীনতার ও পাষণ্ডপনার ঘৃণ্যকাহিনী শুনিতে
লাগিলাম ।
" তাহার পর
তোমার রুগ্না মাতাকে লইয়া তুমি বৈদ্যনাথে চলিয়া গেলে । আমি সুযোগ
অনুসন্ধান করিতে লাগিলাম । তুমি যেদিন যাও , তাহার দুইদিন পূর্ব্বে
বোধ হয় শুনিয়া গিয়াছিলে , হরিহর মুখোপাধ্যায়ের বিধবা কন্যাটি
সহসা অন্তর্হিত হইয়াছে ; সে কাজ আমারই । আমিই সেই ব্রাহ্মণকন্যা
মোক্ষদাকে গ্রামের বাহিরে - কেহ না সন্ধান করিতে পারে - এমন
একটি গুপ্তস্থানে রাখিয়াছিলাম । সমাজের চক্ষে মোক্ষদা যতই দোষী
হউক না কেন , সে তাহার দোষ নহে , তাহাদিগের কৌলীন্য-প্রথার দোষ
। তোমার বৈদ্যনাথ যাইবার ছয় মাস পূর্ব্বে মোক্ষদার সহিত আমার
পরিচয় হয় । মোক্ষদা আমাকে খুব ভালবাসিত - এখনও তাহার সেই ভাব
। হায় , যদি তাহারই সেই নিঃস্বার্থ ভালবাসায় চিরমুগ্ধ থাকিতাম
- যদি রূপৈশ্বর্য্যময়ী লীলা আমার চোখে না পড়িত ; এবং সেই একবার
দর্শনে আমার হৃদয় মোহময় করিয়া না তুলিত , তাহা হইলে বোধহয় ,
পাপেই হউক , আর পুণ্যেই হউক , মোক্ষদাকে লইয়াই এ জীবনে এক রকম
সুখী হইতে পারিতাম । সেকথা যাক্ , তাহার পর আমি গ্রামের মধ্যে
রটনা করিয়া দিলাম , মোক্ষদার অপহণটি তোমার দ্বারাই হইয়াছে -"
কি নৃশংস !
"- তুমি মোক্ষদাকে
আগে বৈদ্যনাথে পাঠাইয়া দিয়াছ , সেখানে তাহাকে কোন স্বতন্ত্র
বাটীতে রাখিয়া , অপর একখানি বাটী ভাড়া করিয়া মাতাপুত্রে থাকিবে
, এইরূপ অভিপ্রায়ে তুমি মাতার পীড়া উপলক্ষ করিয়া বৈদ্যনাথে গিয়াছ
। তাহার পর কতকগুলা মিথ্যা প্রমাণ ঠিক করিয়া এখানকার সকলেরই
নিকটে কথাটি খুব বিশ্বাস্য করিয়া তুলিলাম । নরেন্দ্র আর লীলার
মা তোমাকে ভাল রকমে জানিতেন - তাঁহারা কথাটা প্রথমে অত্যন্ত
বিস্ময়ের সঙ্গে শুনিয়াছিলেন বটে ; কিন্তু বিশ্বাস করেন নাই ।
তাহাতে আমার অভীষ্ট সিদ্ধির কোন ব্যাঘাত ঘটিল না । কেননা , লীলার
পিতা ইহাতে বিস্ময়ের কিছুই দেখিলেন না , এবং সহজেই বিশ্বাস করিলেন
। তাহার পর দহ্যমান্ হস্তে একটি ক্ষুদ্র যূথিকাকে বৃন্তচ্যুত
করিলাম । সেইদিন স্বহস্তে একটা অক্ষয় চিতা রচনা করিয়া নিজের
- শুধু নিজের নহে - লীলার আর তোমার - এক সঙ্গে তিন জনের হৃদ্পিণ্ড
ছিন্ন করিয়া সেই চিতানলে নিক্ষেপ করিলাম ।"
শুনিয়া অনিবার্য্য
ক্রোধে আমার শ্বাসরুদ্ধ হইল । মনে করিলাম , তখনই পদতলে দলিত
করিয়া তাহার পাপ প্রাণটা এ পৃথিবী হইতে বাহির করিয়া দিই ; কিন্তু
তখনই লীলাকে মনে পড়িল - সেই লীলা । এই দানব সেই দেবীরই স্বামী
। আর সেই প্রবোধচাঁদ - তাহাকে কোন অপরাধে পিতৃহীন করিব ?
ঈশ্বর যেন কখনও
আমার এমন মতি না দেন । শশিভূষণকে হত্যা করিয়া কোন লাভ নাই ;
কিন্তু সেইদিন হইতে প্রতিজ্ঞা করিলাম , সদুপায়ে হউক আর অসদুপায়ে
হউক , যেমন করিয়া হউক , এই পাষণ্ডের পীড়ন হইতে লীলাকে মুক্ত
রাখিবার জন্য প্রানপণ করিব ; এবং সেজন্য হিতাহিত বিবেচনাশূন্য
হইব ।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
সপ্তাহ শেষে একদিন
সন্ধ্যার কিছু পরে আমি শশিভূষণের সঙ্গে দেখা করিলাম । তখন
সে একাকী তাহার একতল বৈঠকখানার উন্মুক্ত ছাদে বসিয়া মদ খাইতেছিল
। এবং এক একবার এক একটা বিরাট রাগিণী ভাঁজিয়া সেই নির্জ্জন
ছাদ এবং নীরব আকাশ প্রতিধ্বনিত করিতেছিল । কি জানি , কেন সেদিন
শশিভূষণ আমার সহিত ভাল করিয়া কথা কহিল না । তাহার সেই অপ্রসন্ন
ভাব দেখিয়া বুঝিলাম , তাহার মনের অবস্থা আজ বড় ভাল নহে ।
ক্রমে রাত দশটা
বাজিয়া গেল । তখন আমি উঠিলাম । আমাকে উঠিতে দেখিয়া শশিভূষণ গলিল
, " চল , আমিও নীচে যাইব ।" বলিয়া উঠিল ।
বাড়ীর সম্মুখে একখানি
ছোট সুন্দর বাগান । চারিদিকে ফলের গাছ , সম্মুখে নানাবিধ ফুলের
গাছ , এবং রঞ্জিতপল্লব ক্রোটনশ্রেণীতে বাগানবাড়ী বেশ একরকম সুন্দর
সাজান । ছাদের সোপান হইতে নামিয়াই আমরা সেই বাগানে আসিযা পড়িলাম
।
তখন শশিভূষণ আমাকে
বলিল , " যোগেশ , তোমার সঙ্গে আমার একটা কথা আছে ।"
আমি বিস্মিত হইয়া
ফিরিয়া দাঁড়াইলাম ।
শশিভূষণ বলিল ,
" কাল হইতে তুমি আর এখানে আসিয়ো না , তুমি যে মৎলবে যাওয়া-আসা
করিতেছ , আমি মাতাল বলে তাহা কি বুঝিতে পারি না ? আমি তেমন মাতাল
নই । সহজ লোক নও তুমি - চোরের উপর বাটপাড়ী করিতে চাও ?"
কথাগুলি বজ্রাঘাতের
ন্যায় আমার বুকে আঘাত করিল । সেদিন তাহারই মুখে তাহার নীচাশয়তার
কথা শুনিয়া আমি ক্রোধে আত্মহারা হইয়াছিলাম । কেবল লীলার জন্য
আমি দ্বিরুক্তি করি নাই - করিতে পারি নাই । আজ সহসা শশিভূষণের
এই কটূক্তি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় সবেগে আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ
করিল । আজ ক্রোধ সম্বরণ আমার পক্ষে একান্ত অসাধ্য হইয়া উঠিল
। আমি বলিলাম , " শশিভূষণ , তুমি পশু অপেক্ষা অধম , তোমার
মন যেমন কলুষিত , তাহাতে তুমি এইরূপ না বুঝিয়া ইহার অধিক আর
কি বুঝিবে ? আমার মনের ভাব বুঝিতে তোমার মত নারকীর অনেক বিলম্ব
আছে ; কেবল লীলার মুখ চাহিয়াই আমি তোমার অমার্জ্জনীয় অপরাধ সকল
উপেক্ষা করিয়াছি ।"
শশিভূষণ বিকৃত কণ্ঠে
কহিল , " লীলা , লীলা তোমার কে ? তুমিই বা লীলার কে - তাহার
কথা লইয়া তোমারই বা এত আন্তরিকতা প্রকাশ কেন ? আমি আমার স্ত্রীকে
যাহা খুসী তাহাই করিব , তাহাতে তোমার এত মাথাব্যাথা কেন হে ?
আমি কি কিছু বুঝি না বটে ? যাও যাও , তোমার মত ভণ্ড তপস্বী আমি
অনেক দেখিয়াছি । মারের চোটে গন্ধর্ব্ব ছুটিয়া যায় , তাহাতে আর
আমি তোমার চিন্তাটি লীলার মাথার ভিতর হইতে বাহির করিয়া ফেলিতে
পারিব না ?"
আমি অনিবার্য্য
ক্রোধে আত্মসম্ভ্রমবোধশূণ্য হইলাম । কহিলাম , " শোন শশিভূষণ
, আমি জীবিত থাকিতে তুমি লীলার একটি মাত্র কেশের অপচয় করিতে
পারিবে না । ইহার পর লীলার প্রতি যদি কখনও তোমার কোন অত্যাচারের
কথা শুনি , সেই দণ্ডে আমি তোমাকে খুন করিব । তাহাতে যদি আমাকে
ফাঁসীর দড়ীতে ঝুলিতে হয় , তাহাও শ্রেয়ঃ - আমি আর কখনই তোমাকে
ক্ষমা করিব না ।"
শশিভূষণ অত্যন্ত
রোষাবিষ্ট হইয়া , মস্তকান্দোলন করিয়া কহিল , " বেশ বেশ
, কে কাহাকে খুন করে দেখা যাবে । আগে আমি লীলাকে খুন কর্ব -
তারপর তোকে খুন কর্ব - 'কি স্পর্ধা , লীলার একটা কেশের অপচয়
কর্লে আমাকে খুন কর্বে ! আমি যদি আজ লীলার রক্ত-দর্শন না করি
, তাহলে আমার নাম শশিভূষণ নয় ; দেখি , তুই আমার কি করিস্ ।"
দুর্বৃত্ত তখন অত্যন্ত
মাতাল হইয়াছিল ; তাহার সহিত আর কোন কথা কহা যুক্তি-সঙ্গত নহে
মনে করিয়া , আমি তাহার বাগান হইতে বাহির হইয়া আসিলাম । সে চলিয়া
গেল , কি দাঁড়াইয়া রহিল , একবার ফিরিয়া দেখিলাম না ।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
রাস্তায় আসিয়া মনটা
বড়ই খারাপ হইয়া গেল । নিজেকে বারংবার ধিক্কার দিতে লাগিলাম
। কেন আমি শশিভূষণকে এমন রাগাইয়া দিলাম ? এই রাগের মুখে হয়
ত আজ মদোন্মত্ত পিশাচ অভাগিনী লীলাকে কতই না যন্ত্রণা দিবে
? এতদিন এত সহিয়াছি - আজ কেন আমি এমন করিলাম ? কি কুক্ষণে
কোন্ দুর্ম্মুখের মুখ দেখিয়া আজ আমি শশিভূষণের সহিত দেখা
করিতে , বাটীর বাহির হইয়াছিলাম । কেন আমি এমন সর্ব্বনাশ করিলাম
! হায় হায় ! আমি লীলার ভাল করিতে গিয়া অগ্রেই তাহার মন্দ করিয়া
ফেলিলাম ! মনুষ্য যা মনে করে - নির্দ্দয় বিধাতা এমনই তাহার
বিপরীত ঘটাইয়া দেয় ।
আমার মানসিক প্রবৃত্তি
সমূহে তখন কেমন একটা গোলমাল পড়িয়া গেল । কি ভাবিতেছি - কি ভাবিতে
হইবে - কি হইল , এইসব তোলাপাড়া করিতে করিতে যেন আমি কতকটা আত্মহারা
হইয়া গেলাম । অশেষ সদ্গুণাভরণা , সৌম্যশ্রী লীলার সুখ দুঃখ
যে এখন এমন একটা দয়াশূণ্য , ক্ষমাশূণ্য , নিষ্ঠুরতম বর্ব্বরের
হাতে নির্ভর করিতেছে , এ চিন্তা প্রতিক্ষণে আমার হৃদয়ে সহস্র
বৃশ্চিক দংশনের জ্বালা অনুভব করাইতে লাগিল । কি করিব ? কোন উপায়
নাই । নিজের বুকে বিষাক্ত দীর্ঘ ছুরিকা শতবার আমুল বিদ্ধ করিতে
পারি ; কিন্তু মুঢ় শশিভূষণের গায়ে একবার একটা আঁচড় দিই , এমন
ক্ষমতা আমার নাই ।
নির্জ্জন পথিমধ্যে
প্রতিমুহূর্ত্তে আমার বেশ স্পষ্ট অনুভব হইতে লাগিল যে , নির্ব্বিঘ্নে
চিন্তারাক্ষসী আমার হৃদ্পিণ্ড শোষণ করিয়া রক্তশোষণ করিতেছে
। আমি মুমূর্ষের ন্যায় গৃহে ফিরিলাম । তাহার পর - হে সর্ব্বজ্ঞ
! সর্ব্বশক্তিমান ! তুমি জান প্রভো ! তাহার পর যাহা ঘটিয়াছিল
।
( ক্রমশঃ
)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)