পোনুর
চিঠি - ফ্লোরেন্সে পোনু
(১) (২)
(৩)

উফ্ফিৎসি ছাড়ার
আগে আর দুয়েকটা ছবির কথা অন্তত মাঝারী করে না বললেই
নয়।

1. Michelangelo,
Doni Madonna, Oil on Canvas, 1507 । ছবিটি বড়ো মাপে
দেখতে হলে এইখানে
ক্লিক করুন।
প্রথমটি কাঠের
ওপর তেলরঙের ছবি, মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা, নাম "ডোনি
মাদোন্না", ১৫০৭। ডোনি অর্থ গোল, ছবিটিও গোল,
প্রায় চার ফুট ব্যাস। মাইকেলেঞ্জেলো ছবিই আঁকতেন কম,
বিশেষ করে যা ফ্রেস্কো নয়, আঁকলেও অন্যদের দিতেন খুচখাচ
কাজ করে শেষ করার জন্য। কিন্তু এই ছবিটি পুরোপুরি
তাঁরই আঁকা, এবং ফ্রেস্কোর বাইরে তাঁর আঁকা সবচয়ে
নামকরা ছবি। উফ্ফিত্সিতে তাঁর আঁকা এই একটাই ছবি আছে।
বিষয়: পবিত্র পরিবার-- হোলি ফ্যামিলি। অন্তর্লীন দূরত্ব
দিয়ে হিসেব করলে ছবিটিকে চারটি স্তরে ভাগ করা যায়।
সবচয়ে সামনে মা মেরী, মাটিতে বসে আছেন, পিছনে উবু
হয়ে পিতা জোসেফ, শিশু যীশু দুজনের মধ্যে। মনে হয় যেন
জোসেফ যীশুকে মেরীর কাছে দিচ্ছেন, আবার বিপরীতটাও
হতে পারে। তার পিছনের স্তরে সন্ত জন, তারও পিছনে নানা
ভঙ্গীতে একদল নগ্ন পুরুষ, আর সব পিছনে অবশ্যই দিগন্ত।
প্রথমেই যা নজর কাড়ে সেটি হোলো ছবিটি যেন ত্রিমাত্রিক,
ক্যানভাসের বাঁধন ভেঙে বাইরে চলে আসতে চায়। দ্বিতীয়,
ছবির মানুষগুলি মসৃণ, পেশীবহুল-- দেখায় সমতল ছবির
চেয়ে বেশী মার্বেল ভাস্কর্যের মতো। তৃতীয়, রঙের খেলা
আর রঙের ঘনত্ব বাড়িয়ে কমিয়ে আলো ছায়ার খেলা-- জোত্তোর
পদ্ধতির চরম প্রয়োগ। পোষাকের ভাঁজগুলো লক্ষ্য করুন।
চতুর্থ, একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে যে যতো ছবির
ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে, ততো যেন ফোকাস কমে অল্প
অল্প করে একটু একটু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এই দুই, তিন
আর চার নম্বরের কৌশল একসঙ্গে হয়েই সৃষ্টি করেছে ঐ
একনম্বরের মায়াটির। যাঁরা রোমে সিস্টিন চ্যাপেলের
ছাদে মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা ফ্রেস্কো দেখেছেন তাঁরা
তার অনেক পূর্বাভাস দেখতে পাবেন এই ছবিতে-- রঙের বর্ণালী,
ভাস্কর্য প্রতিম প্রতিচ্ছবি, নগ্নমূর্তির ব্যবহার
ইত্যাদি। ছবির বিবরণ পড়ে জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক
এক্সরে বিশ্লেষণ বলছে যে মাইকেলেঞ্জেলোর কালে যতোরকম
রঙ পাওয়া যেতো, সব রঙই বিভিন্ন মিশ্রণে তিনি এই ছবিতে
ব্যবহার করেছেন। এ ছবির অন্তর্নিহিত তত্বকথা নিয়ে
অনেক লেখালেখি হয়েছে, সেসব এখানে লিখলে গুরুভার হয়ে
যাবে।

2.
Caravaggio, Medusa, Oil on Wood-backed Canvas, 1595-98।
এইখানে
ক্লিক করে বড়ো ছবিটি দেখে নিতে পারেন।
ত্রিমাত্রিক
বলতেই উফ্ফিত্সি গ্যালারীর অন্য যে ছবিটির কথা মনে
আসে, সেটি হোলো কারাভাজ্জিওর ক্যানভাসে-মোড়া কাঠে
তেলরঙ দিয়ে আঁকা ছবি, "মেডুসা", ১৫৯৫-৯৮।
কারাভাজ্জিওর নামও মাইকেলেঞ্জেলো, তবে মানুষ হিসেবে
ইনি ছিলেন একটি চীজ। চিত্রকর হিসেবে যশ ছিল, কিন্তু
মত্ততা, গুণ্ডামি, কলহপ্রিয়তা-- এসব নানা কারণে বেশ
কয়েকবার জেল খেটে শেষে খুনের দায়ে পোপের রোষভাজন হয়ে
রোম থেকে পালাতে হয়েছিল। সেখানেও কাজিয়া করে সাঙঘাতিক
আহত হন, শেষে রোমে ফেরার পথে মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে
মারা যান। মেডুসার গ্রীক গল্প প্রায় সবায়েরই জানা,
তাও মনে করিয়ে দিই, মেডুসা ছিলেন পাতালবাসিনী দানবকন্যা।
তারপর সেকালে যা হোতো, তিনি কোন দ্যাবের কামানলে দগ্ধ
হলেন আর দ্যাবের দ্যাব্যা মেডুসা বেচারীকেই শাপ দিয়ে
তার চুল করে দিলেন সাপ, তার দৃষ্টি হোলো অভিশপ্ত--
সে নজর পড়লে মানুষ পাথর হয়ে যায়। এক ডাকাবুকো গ্রীক
যুবক, পার্সিয়ুস নাম, সে ওই হিংসুটি দেবীর দয়ায় পাওয়া
এক আয়না লাগানো ঢাল নিয়ে এলো, এসে গর্ভিণী মেডুসারই
নয়নবাণ তাকে ফিরিয়ে দিয়ে তার শিরশ্ছেদ করলো। তা সেকালে
তো দেবতারা ছিল দেবতা, মানব-দানবেরা ছিল সামান্য মানুষ
বা দুর্বিনীত দৈত্য। তাঁদের বেলায় লীলাখেলা, আমাদের
বেলায় পাপ, সব একেবারে সাফসুতরো সাদা-কালোর ব্যাপার,
এমন ঘটনা ঘটেই থাকতো। কারাভাজ্জিওর এই ছবিটিতে মেডুসার
ছিন্নমস্তক দর্পণে প্রতিফলিত দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটার
ত্রিমাত্রিকতা বিশেষ প্রকট, সেটার একটা কারণ হয়তো
কাঠের প্যানেলটির উত্তল ( কনভেক্স) ঢালের আকার (একসময়
এ ছবিটি ঢালের ওপরেই আঁকা বলা হোতো), কিন্তু মুখ্য
কারণ নয়। কারাভাজ্জিওর আঁকার গুণই মুখ্য। সিনেমার
থ্রী-ডির কাছাকাছি-- সতর্ক না হলে সাপ আমাদের কামড়ে
দিতে পারে, আর রক্তের ফোঁটা তো এই মাটিতে পড়লো বলে।
মেডুসার মুখের অভিব্যক্তি কীসের-- মরণযন্ত্রণা, ক্রোধ
না নিজের জীবনের ঘৃণ্যতার আর্ত উপলব্ধি?

3.
Caravaggio, Bacco, Oil on Canvas, 1595 । এইখানে
ক্লিক করে বড়ো করে দেখে নিতে পারেন।
রেনেসাঁ শিল্পকৃতিতে
কারাভাজ্জিওর অবদান কিন্তু বেশ বিস্তৃত। এই আলোছায়ার
খেলাটাকে (চিয়ারোস্ক্যুরো) কারাভাজ্জিও খুব মুন্সিয়ানার
সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। তখন হাই রেনেসাঁ তার নিখুঁত
মানব-মানবী আর স্বর্গীয় কিন্তু অবাস্তব নিসর্গের ছবি
নিয়ে অস্তমিত, তার জায়গায় এসেছে আরো বাস্তব-ঘেঁষা
চিত্রকলা, যাকে বলা হয় ম্যানারিজম। মানুষগুলো আর পাথরে
কোঁদা নয়, বলিরেখা আছে, আছে কুশ্রীতা, সাধারণ দৈনন্দিন
জীবনের কথা আছে, আর পারিপাশ্র্বিকও বাস্তব। কিন্তু
তখন ম্যানারিজমের দিনও শেষ হয়ে আসছে, আস্তে আস্তে
যে শৈলীর জন্ম হচ্ছে তাকে বলে ব্যারোক-- যাতে আছে
প্রচুর নাটক, রঙের বর্ণালী আর গভীর সমারোহ, আলোছায়ার
চোখ-ধাঁধানো খেলা। এ শৈলীর উদ্দেশ্যই হোলো মনের শান্তি
বিঘ্নিত করা, চেতনাকে করা উত্তাল। কারাভাজ্জিও হলেন
পরবর্তী এই স্বর্ণযুগের একজন পথিকৃত্। কারাভাজ্জিওর
এই ছবিটি -- ব্যাক্কাস, ক্যানভাসে তেল রঙ, ১৫৯৫,--
এই ম্যানারিজম আর ব্যারোকের মধ্যে গাঁথা সেতু। ব্যাক্কাস
ছিলেন আঙুর আর মদের রোমান দেবতা। কারাভাজ্জিও তাঁর
ছবিতে কিন্তু তার দেবত্ব দেখাচ্ছেন না। এটি আহলাদে
বিস্রস্তবাস এক কিশোর-তরুণের ছবি, মাথায় আঙুরপাতার
পাগড়ী, টেবিলে ফলের ঝুড়ির সামনে বসে বাঁহাতে আলতো
করে মদের গেলাস ধরে দর্শককে আহবান জানাচ্ছে। নখের
তলায় নোংরা, মুচকি হাসি আর চোখের চাহনিতে কি আর কিছুর
ইঙ্গিত? ডানহাতটা লক্ষ্য করবেন। এদিকে আবার ঝুড়ির
ফল হয় পচা নয় পোকা-ধরা, গভীরতর দর্শনের ইঙ্গিত-- সেকালে
এসব ছিল জীবন ও সংসারের অনিত্যতার প্রতীক। ছবিটির
মধ্যে আরো দুয়েকটা লক্ষ্যণীয় আছে, তবে তা সামনে থেকে
না দেখলে বোঝা বা বোঝানো যায় না।
কারাজ্জিও প্রসঙ্গে
ম্যানারিজমের কথা উঠেছিলো। হাই রেনেসাঁ মোটামুটি নিভে
এলো ১৫৫০ সাল নাগাদ, ব্যারোকের যুগান্তর আসবে ১৬০০
সাল বরাবর। মধ্যের এই পঞ্চাশ বছর ম্যানারিজমের রাজত্ব
আর ইটালীতে তার সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্পী হলেন টিশ্যাঁ,
টিজিয়ানো ভেচেল্লিও। ভেনিসের লোক, সব ধরণের ছবি আঁকাতে
দক্ষ-- প্রতিকৃতি, নিসর্গ, ধর্মীয়, পৌরাণিক। রঙের
যাদুকর, আর তাছাড়াও তাঁর প্রবর্তিত বহু শৈলী পরের
যুগের শিল্পীদের পথনির্দেশক। ১৫৩৮ সালে টিশ্যাঁ আঁকলেন
ভেনাস অফ উর্বিনো, চার ফুট x সাড়ে পাঁচ ফুট ক্যানভাসে
তেলরঙ দিয়ে, ডিউক অফ উর্বিনোর অনুরোধে। ডিউক সম্প্রতি
এক খুব কমবয়সী দারপরিগ্রহণ করলেন, সেই উপলক্ষ্যে।

4.
Titian, Venus of Urbino, Oil on Canvas, 1538 । এইখানে
ক্লিক করে বড়ো ছবি দেখে নিতে পারবেন।
বত্তিচেল্লির
ভেনাস দিয়ে আমার উফ্ফিত্সি বিবরণ শুরু, টিশ্যাঁর ভেনাস
দিয়ে তা শেষ করা কেন সবচেয়ে মানানসই তা নিশ্চয় বুঝিয়ে
বলতে হবে না। বত্তিচেল্লি ছিলেন হাই রেনেসাঁর শিল্পী,
সেই শিল্পীরা ছবির জগতকে অবাস্তব পুণ্যধাম করতে চেয়েছিলেন।
টিশ্যাঁ ছিলেন ম্যানারিজমের লোক, তাঁরা চেয়েছিলেন
ছবি আঁকাকে মর্ত্যে ফিরিয়ে আনতে। বত্তিচেল্লির ভেনাসকে
শান্ত নিসর্গ থেকে টিশ্যাঁ এনে রাখলেন ধনীর প্রাসাদে।
সেখানে সুন্দরীর নাগাল পেলেও পাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই
নগ্নিকা, কিন্তু বত্তিচেল্লির ভেনাসের মতো ব্রীড়াকুণ্ঠিতা
নন, তাঁর ভঙ্গিমাতে আছে আহবান, যে আহবানে "অকস্মাত্
পুরুষের বক্ষোমাঝে চিত্ত আত্মহারা, নাচে রক্তধারা
"। অথচ খেয়াল করে দেখুন, নগ্নিকার চাহনি অপাপবিদ্ধ,
পিছনে দাসীদের কোনো ত্বরা নেই বিবসনার লজ্জা ঢাকা
দিতে, বিছানার উপরে কুকুরছানাটি স্থিরতা আর বিশ্বাসের
প্রতীক। ভেনাস সুন্দরী এবং এ জন্য তিনি লজ্জিতা নন,
তিনি জানেন তিনি নিষ্কলঙ্ক, তিনি নির্দোষ। প্রথম রিপু
কিছুক্ষণের জন্য দমন করে ছবিটি দেখা কঠিন হলেও অসাধ্য
নয়, দেখলে বুঝবেন যে ছবিটি ব্যেপে আছে এক শান্ত নিস্তরঙ্গ
দৈনন্দিন পারিপাশ্র্বিক। এই উত্তেজনা আর এই প্রশান্তিকে
টিশ্যাঁ একই ছবিতে সুসমঞ্জসভাবে মিলিয়ে দিলেন, এই
জন্যই তিনি টিশ্যাঁ।
এ ছবি নিয়ে সমালোচনার
ঝড় বয়েছে, একথা বলাই বাহুল্য। ইন্টারনেট থেকে মার্ক
টোয়েনের বক্তব্য উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না,:
"... the vilest, the foulest, the obscenest
picture ... Titian's beast ... In truth, it [the
painting] is a trifle too strong for any place but
a public art gallery." -- (Tramps Abroad) ছবির
টেকনিক নিয়ে আর কিছু লিখলাম না, ও কেউ পড়বে না। তবে
একটা কথা-- ভেনাসের কানে টিশ্যাঁ একটি হীরের দুল পরিয়েছেন,
তাতে আলো ঠিকরায়। "হুইন্যা গুরায় হাসবো",
কিন্তু তা সত্বেও বলি যে আমি কিন্তু কাছে গিয়ে সেটা
যে শুধুই রঙের ফোঁটা তা দেখে এসেছি।
ফ্লোরেন্সে আর
কী দেখার আছে? আছে অনেক কিছু। মারাত্মক সব প্রাসাদ
(প্যালাজো ভেচ্চিও, প্যালাজো পিট্টি), তার লাগোয়া
উদ্যান (বোবোলি গার্ডেন্স্)। অর্নো নদীর ওপরে একটা
ঢাকা সেতু (পণ্টে ভেচ্চিও, পুরনো সেতু), ভেতরে গয়নার
দোকানে ভর্তি, আর ভর্তি বন্ধ তালায়। এক ধুরন্ধর তালাচাবির
দোকানদার একটা কিংবদন্তী চালু করেছিলো যে এই সেতুর
উপরে "প্রেম"-কে তালা লাগিয়ে আটকে রাখা
যায়। তো নগরকর্তারা সেই চাবির পঙ্গপাল-তাড়ুয়া চাবিওয়ালার
বেতন দিয়ে দিয়ে বিরক্ত হয়ে সম্প্রতি তালা লাগানো বেআইনি
করেছেন। কমেছে, কিন্তু বন্ধ হয়নি। আরো কিছু মিউজিয়ামও
আছে, আর আছে গির্জা। অবশ্যই, কেননা সেকালের রাজাগজারা
ছিলেন প্রমাণ সাইজের পাপীতাপী লোক, আর সে হিসেবে মেদিচিরাও
কিছু ধোয়া তুলসীপাতা নয়। পাদ্রীরা তো ততদিনে "মূল্য
ধরে দেওয়া"-র ব্যাপারটাকে আর্টের পর্যায়ে তুলে
ফেলেছেন। অতএব। গির্জার স্থাপত্য সব অবশ্যই দেখবার
মতো, ভেতরে অনেকসময় সুন্দর সুব্দর ছবিও থাকে, যদিও
ধর্মীয়, কিন্তু আমি দেখেছি গির্জার অনেক কুকীর্তির
সঙ্গে তারাও সাধারণত অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকে। তাই
ওদিকে আর যাওয়া হয়নি; ঠিক বলা হোলোনা, যাইই নি।


5a and
b. Florence: Basilica di Santa Maria del Fiore (Basilica
of Saint Mary of the Flower) -- দিনে ও রাত্রে। এরই
গম্বুজটিকে ডুয়োমো বলে (ডুয়োমো মানে গির্জাও হয়),
ফ্লোরেন্সবাসীদের কাছে এটি চব্বিশ ঘণ্টার বাতিঘর।
এরই প্রবেশদ্বার "স্বর্গদ্বার" নামে খ্যাত।
শহরের যে কোনো
কোণ থেকেই যা দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, সেটি সান্তা মারিয়া
দেল ফিয়োরে গির্জার গম্বুজটি, আদর করে যাকে সবাই বলে
ডুয়োমো, ধেওমও। ব্রুনেলেশ্কি, যাঁর কথা আগেই লিখেছি,
কিছু অংশের স্থপতি। এই ডুয়োমোর সংলগ্ন বাড়ীটিতে (যাকে
এরা ব্যাপ্টিস্ট্রি বলে) ঢোকার তিনটি সদর দরজা ব্রোঞ্জের
তৈরি। একটি (দক্ষিণের দরজা) করেছিলেন ভাস্কর পিসানো,
সাত বছর ধরে। তার পরেরটি (উত্তরের দরজা) করার প্রতিযোগিতায়
জিতে বিশ বছর ধরে দরজা বানালেন ঘিবার্টি। ফ্লোরেন্সের
লোকেরা সেটিকে এতোই ভালোবেসে ফেললো যে আবার একটা দরজা
(পূর্বের দরজা, আমার দোখ্নো দিদিমা হলে বলতেন "পুবির
দোর", হঠাত্ মনে এলো, বলার লোভ সামলাতে পারলাম
না) বানাবার বরাত দিল ঘিবার্টিকেই। ঘিবার্টি এটা শেষ
করতে সময় নিলেন সাতাশ বছর, স্বয়ং মাইকেলেঞ্জেলো বললেন
হ্যাঁ, স্বর্গে যাবার উপযুক্তই হয়েছে বটে। তাই থেকে
তার নামই হয়ে গেলো স্বর্গের দরজা, ঘঅতএস ওফ অরঅদসেএ।
প্রসঙ্গত, ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দরজার
আসল প্যানেল সব রাখা আছে মিউজিয়ামে, বাইরে যা আছে
তা অনুকরণ। আমার এসব ব্যাপারে কাককাঁকুড় জ্ঞান নেই,
আসল-নকল বুঝি না, দেখলাম, দেখে মজা পেলাম।

6
. Ghiberti - The Gates of Paradise, bronze, 1425-52
। ব্যাপটিস্ট্রির পূর্বের দরজা, দশটি প্যানেলে বাইবেলের
নানা কাহিনী দেখানো হয়েছে। জলহাওয়ার ক্ষতি থেকে আসল
শিল্পকীর্তি বাঁচাবার জন্য এটির প্যানেলগুলি নকল ।
বড়ো ছবির জন্য
এইখানে ক্লিক করুন।

7
. Ghiberti - The Gates of Paradise, bronze, 1425-52
। ব্যাপটিস্ট্রির পূর্বের দরজার একটি (চার নং বলা
হয়) আসল প্যনেল, ভিতরে মিউজিয়ামে যত্ন করে রাখা আছে।
বাইবেল থেকে আব্রাহাম ও তাঁর পুত্র আইজাকের কাহিনী,
মধ্যযুগীয় রীতি অনুসারে একই প্যানেলে একাধিক ঘটনার
সমাহার। এইখানে
ক্লিক করলে বড়ো ছবি দেখে নিতে পারবেন।
দুটো ছবি দিলাম,
একটি পুরো দরজাটির, আর একটি আসল প্যানেলের। এইখানে
ক্লিক করলে যে সাইটে যাওযা যাবে সেখানে প্রতিটি
প্যানেলের ছবি ও কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।
আর আছে পিয়াত্জা--
এর জুত্সই বাংলা প্রতিশব্দ পাচ্ছি না। অঙ্গনটা বড়ো
ব্যক্তিগত, চণ্ডীমণ্ডপ বা বটতলা আখ্যাটা প্রয়োগে কাছাকাছি
এলেও মাপে খাটো। স্পেনে দেখেছি, সেখানে বলে প্লাজা।
এক একটি পাঁচ তো বটেই , ছ-সাত মাথার মোড়, রাস্তা প্রায়
কাশীর গলি, সায়েবদের অহং ধরাবার জন্য আরেকটু চওড়া
কিন্তু সেই একই গোলকধাঁধা। সেখানে ঘুরে হঠাত্ দেখবেন
আমড়াতলার মোড়, চা-কফি বা আরো উত্তেজক পানীয়ের ব্যবস্থা
আছে, বাসিন্দারা কোনোদিকে দৃকপাত না করে চলে যাচ্ছে,
আপনি ধুঁকতে ধুঁকতে আরেক গোলকধাঁধায় ঢোকার আগে বিশ্রাম
নিতে পারেন। তবে ওই যে বললাম, ডুয়োমোটা দেখতে পাবেন
ঠিকই, মরীচিকার মতোই যেখানে ছিল, সেখানেই। একটা দুঃখের
কথা না বললেই নয়। অর্নো নদীর ধারে আলো-ঝলমল এক রেস্টুরেণ্টে
খেতে গেলাম, দেখি দশ পাতা জুড়ে পিত্জার মেনু। খুঁজে
পেতে অর্ডার দিলাম, খেয়ে দেখি আমাদের পিত্জা হাট কিছু
কম যায় না। স্বদেশের গর্বে বুক ফুলে ওঠার কথা কিন্তু
চোখের জল মুছে তাই খেয়ে চলে এলাম। বিদায় ফ্লোরেন্স।