প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বদরীনাথ

মাণায় ঢোকার মুখেই তখন এক আর্মি ব্যারাক ও চেক পোস্ট ছিল। সেখানে আমার ক্যামেরা নিয়ে রেখে দিল বলে ভীম-পুল ও বসুধারার ছবি নিতে পারিনি। পরবর্তী কালে অবশ্য ব্যারাক ও চেক পোস্ট উঠে গেছে, ভীম-পুল অঞ্চলে অনেকবার গেছি ও অনেক ছবি নিয়েছি কিন্তু বসুধারায় যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি তাই ছবিও নেই।
প্রায় মাণার বিপরীতে অলকনন্দার অপর পারে বদরীনাথের মাতার, “মাতা মূর্তি।” ছোট্ট এক মন্দির আছে। মন্দির দ্বার বছরে এক দিনই খোলা হয়, আর সেই দিনই বদরীনারায়ণ তাঁর মাতার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, সশরীরে। সেই বিশেষ দিন হলো ভাদ্র মাসের বামন (শুক্লা)-দ্বাদশী। এই দিন বদরীনাথ মন্দিরে ওনার পূজাদি হয় না। সেই একটি মাত্র দিন মাতা তাঁর সন্তানকে কাছে পেয়ে আনন্দ উপভোগ পাথেয় করে বছরের বাকি দিন গুলো কাটিয়ে দেন পরের সেই দিনের অপেক্ষায়।
*
যাঁরা জানেন না, তাঁরা চিন্তা করতে পারেন যে শীত কালে যখন চারি দিক বরফে ঢেকে যায় এবং মানুষ-জন নিচে অপেক্ষাকৃত গরম জায়গায় চলে যান, বদরীনাথের পূজার কি ব্যবস্থা হয়। বদরীনাথের পূজা কখনও বন্ধ হয় না, মন্দির বন্ধহয়ে গেলেও। ওই সময় বদরীনাথের প্রতিনিধি হিসাবে বদরীনাথের অগ্রজ উদ্ধবের প্রতিমূর্তি আর কুবেরের মূর্তি মন্দির থেকে নিচে এক মন্দিরে স্থাপন করা হয় এবং সেই মন্দির থেকেই বদরীনাথের পূজা হয়। কোথাকার এবং কোন মন্দির থেকে এই পূজা হয়ে থাকে? বহু আগে থেকেই শুনেছিলাম যে যোশিমঠের নৃসিংহদেবের মন্দিরে মূর্তিগুলি স্থাপিত ও বদরীনাথের শীতকালীন পূজা হয়ে থাকে। সেই মন্দিরেও এই কথা লেখা আছে। কয়েক বছর আগে বদরীনাথধামের ২৪কিমি. নিচে পাণ্ডুকেশ্বরে পঞ্চ-বদরীর এক বদরী, যোগ ধ্যান-বদরীর মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম। দেখি সেখানে এক বোর্ডে লেখা যে ওই পূজা ওখান থেকেই হয় (চিত্র-২৬ ও ২৭)।

আমি পূজারিকে প্রশ্ন করি যে যোশিমঠে নৃসিংহদেবের মন্দিরে যে একই কথা লেখা আছে। এখানকার পূজারী বলেন যে যোগ ধ্যান-বদরী মন্দিরেই এই পূজা হয়ে থাকে। এও শুনেছি যে কোনও মন্দিরেই বদরীনাথ থেকে উদ্ধব বা কুবেরের মূর্তি নিয়ে আসাই হয় না, যোগ ধ্যান বদরী বা নৃসিংহদেব মন্দিরে এঁদের অন্য মূর্তি আগে থেকেই রাখা থাকে, তাঁদেরই বদরীনাথের প্রতিনিধি হিসাবে পরিগণিত হয়। কে জানে কোনটা সত্যি?

কি করে যাবেন: আকাশ পথে বদরীনাথ আসতে গেলে দেরাদুনের কাছে জলি-গ্রান্ট বিমান বন্দরেই আসতে হবে। তার পর বাস বা নিজের গাড়িতে বদরীনাথের পথে এগোতে হবে হৃষীকেশ হয়ে। আবার হৃষীকেশ উত্তর রেলের শেষ রেলস্টেশন হলেও, বেশিরভাগ যাত্রী হরিদ্বার-হৃষীকেশ-দেব-প্রয়াগ-শ্রীনগর - রুদ্রপ্রয়াগ- কর্ণপ্রয়াগ- চামোলি (৯৯৫মি.)-হেলং-যোশিমঠ (১৯৯০মি.)-বিষ্ণুপ্রয়াগ-পাণ্ডুকেশ্বর-হনুমানচটি পথ হয়ে ৩২৪কিমি. দূরে বদরীনাথ (৩১৩৩মি.) আসেন। যাত্রী বাসে প্রায় ১২ ঘণ্টা আর নিজেদের ছোট গাড়িতে ১০ ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লাগে। যাঁরা কেদারনাথের দিক থেকে আসেন, বিকল্প আর একটি রাস্তা হয়ে তাঁরা আসতে পারেন। এক্ষেত্রে সময় কিছুটা কম লাগে। উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি রাস্তায় অবশ্য সময়ের পূর্ব নির্ধারিত নির্ঘণ্ট বজায় রাখা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না, রাস্তায় ধস জনিত কারণে। বিশেষ করে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে বদরীনাথের রাস্তা এখন যদিও অনেক চওড়া ও ভাল হয়েছে, কিন্তু ভূমির গঠনের কারণে ভীষণ ধস প্রবণ। মনে আছে ২০০৯ সালে একাদিক্রমে এক ক্ষেপে চার দিন আর পরে, তিন দিন এই রাস্তা বন্ধ ছিল। পরের বছর ২০১০ সালেও প্রায় একই অবস্থা হয়েছিল দেরিতে বৃষ্টি হবার কারণে।
যাই হোক, মাত্র কয়েক মাস আগে হৃষীকেশ/দেরাদুন হয়ে আপাতত কর্ণপ্রয়াগ পর্যন্ত রেল লাইন পত্তনের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। ফলপ্রসু হলে বদরীনাথ যাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

থাকার জায়গা: মন্দির কমিটির গেস্ট হাউসে প্রচুর ঘর, বেশ কম খরচ। অসংখ্য ধর্মশালা, তবে প্রত্যেকেই ডোনেশন নিয়ে থাকে। যার যা ইচ্ছা নয়, অবস্থান ও ঘরের মানের উপর নির্ভর করে দানের পরিমাণ। বাস টার্মিনাস থেকে আরম্ভ এবং মন্দিরের পিছন পর্যন্ত এই সমস্ত আবাস স্থলের অবস্থান। অক্ষয় তৃতীয়ায় মন্দির খোলার দিন থেকে জুন মাসের প্রথম পক্ষ পর্যন্ত বেশ ভিড় থাকে, সেই সময় সারা ভারতের তীর্থযাত্রীরা এখানে এসে থাকেন। তখন ঘর পেতে কিছুটা অসুবিধে হতে পারে। আবার দুর্গা পূজা থেকে কালী পূজা পর্যন্ত বাঙালী যাত্রীর ভিড়। এই সময়-কালের শেষের দিকে অনেক ধর্মশালা বন্ধ হয়ে যায়। তবে থাকার জায়গার অভাব হয় না। ইদানীং কালী পূজার পরেও বেশ কয়েক দিন মন্দির খোলা থাকছে। তবে আগে থেকে না জেনে কালী পূজার পর যাওয়া উচিত নয়। সব কিছুর জন্যে শ্রীবদরীনাথ-শ্রীকেদারনাথ মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ( www.badarikedar.org, E-mail: admin@badarikedar.org, ফোন, হৃষীকেশ-০১৩৫-২৪৩৫৮০২, যোশিমঠ-০১৩৮৯-২২২০৮৩)

আমরা জুলাই-অগাষ্ট মাসে দু-বার বদরীনাথ গেছি এবং দুবারই মন্দিরের বিপরীত পারে, অলকানন্দার পারে “মানব-কল্যাণ আশ্রমে” জায়গা পেয়েছিলাম (চিত্র-২৮), আগে থেকে ব্যবস্থা না করা সত্ত্বেও। তবে একবার কালীপূজার দুদিন আগে গিয়ে দেখি আশ্রমে তালা দেওয়া, বেশি যাত্রী নেই বলে মহারাজ আশ্রম বন্ধ করে চলে গেছেন। সেবারে কালী পূজা ছিল ৩ নভেম্বর, তবে মন্দির বন্ধ হবার নির্ধারিত দিন ছিল ১৭ নভেম্বর।

ড. শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

শেষ

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।