সংগীত
অগাস্ট ৩০, ২০১৬
গানের ভুবন, প্রাণের ভুবন
ঈশানী রায়চৌধুরী
গানবিজ্ঞান
সঙ্গীত আর পদার্থবিদ্যা? ভাবলেই হৃদকম্প? সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান? এই দুই শাখার মধ্যে কিন্তু অদ্ভুত একটা পারস্পরিক সম্পর্ক, বোঝাপড়া আর আঁতাত রয়েছে, পদার্থবিদ্যা আর সঙ্গীত নির্ভাবনায় হাত ধরাধরি করে চলে।
একদিকে রাখছি পদার্থবিদ্যাকে। বিভিন্ন মাধ্যমে তরঙ্গ কীভাবে বয়ে যায়। আর অন্যদিকে সাধারণ বাদ্যযন্ত্রগুলি কীভাবে কাজ করে, তারের যন্ত্রগুলিতে কীভাবে সুর বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে কোথাও অসঙ্গতি না লাগে।
সঙ্গীত বা সুর তো কিছুই নয় ... বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ মাধ্যমবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট নকশায় আমাদের কানে এসে পৌঁছনো। বাদ্যযন্ত্রগুলি এই শব্দতরঙ্গের গতি, কম্পাঙ্ক, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, প্রতিফলন, অনুরণন ... এই সব বিষয়গুলি মাথায় রেখে এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে আমাদের কানে সুরের অভিঘাত ঠিকঠাক মাত্রায় এসে পৌঁছতে পারে।
পদার্থবিদ্যার কিন্তু সুরের মতোই নিজস্ব সৌন্দর্য আছে এই যেমন "অনুরণন "। আমরা কথায় কথায় বলি, “দু'টি মনের মধ্যে কী মিল দেখেছ?” সেখানেও কিন্তু ওই অনুরণন। একটু সহজ ভাষায় বলা যাক। বাচ্চাদের দোলনা। এটির একটি নিজস্ব নির্দিষ্ট দোলনের কম্পাঙ্ক আছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে এটি কতবার নিজস্ব নিয়মে কোনো বাইরের বলপ্রয়োগ ছাড়া দুলতে পারে। এটি হল দোলনার স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক। এখন আমরা যদি দোলনাটিকে এই স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি বা কম কম্পাঙ্কে ধাক্কা মারি, খুব বেশি ইতরবিশেষ হবে না। কিন্তু যদি এটির স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের সমান কম্পাঙ্কে ধাক্কা মারি, তাহলে ওই যে ... দোলনার সঙ্গে আমার হাতের "মনের মিল" হবে ... অর্থাৎ অনুরণন। সেক্ষেত্রে সামান্য পরিশ্রমে অনেক বেশি দুলুনি দেখতে পাব। অর্থাৎ পদার্থবিদ্যা বলে যে, যখন বাইরের কোনো উৎস কোনো বস্তুকে তার নিজস্ব কম্পাঙ্কে কম্পিত করতে পারে, তখনই হয় অনুরণন। একই ভাবে বাইরে থেকে জোরে শব্দ করে ঠিকঠাক কম্পাঙ্কে পৌঁছলে কাচের গ্লাসে ফাটল ধরে। এখানে শব্দ খুব জোরালো কিনা তা জরুরি নয়। জরুরি হল, বাইরের শব্দের উৎস যেটি, তার কম্পাঙ্ক আর কাচের গ্লাসের স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের অনুরণন। একটি ওয়াইন গ্লাসের স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক ৭৯১ Hz। যদি লাউডস্পীকার বাজে ৭৯০ বা ৭৯২ Hz -এ, কিছুই হবে না. কিন্তু ৭৯১ তে বাজলে যে অনুরণন হবে, তা এতই বিশাল যে গ্লাসে চিড় ধরবে।
যে কোনো একটি তারযন্ত্রকে নেওয়া যাক। গীটার। যে কোনো তারযন্ত্রের স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক নির্ভর করে "standing waves " -এর ওপর। কল্পনা করা যাক, দাঁড়িয়ে আছি একটি সমুদ্র -প্রাচীরের ঠিক সামনে। আছড়ে পড়ছে ঢেউ, ধাক্কা খাচ্ছে প্রাচীরে , আবার ফিরে যাচ্ছে সাগরে। এখন যদি যে ঢেউটি প্রাচীরে প্রতিহত ( প্রতিফলিত) হয়ে ফিরে যাচ্ছে, সেটির সংঘর্ষ হয় আর একটি ঢেউয়ের সঙ্গে, যেটি প্রাচীরে ধাক্কা দিতে আসছে, তাহলে এই দুটি ঢেউ পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হবে এবং তৈরী করবে এক আশ্চর্য বিশাল জলস্তম্ভ ... আমরা দেখব standing wave। এই
তত্ত্বটির ওপর ভিত্তি করেই বাদ্যযন্ত্রের বিজ্ঞান। তা তারের যন্ত্র, বাঁশি, ড্রাম, অর্গ্যান ... যাই হোক ! সবক'টিতেই তরঙ্গের খেলা ! গীটারের তারের standing wave -এর ক্ষেত্রে তারের দুই প্রান্তে কোনো কম্পন থাকে না। সবচেয়ে বেশি কম্পন থাকে মাঝখানে। এই কম্পনের নকশা সর্বাধিক এবং সর্বনিম্ন ... এইভাবে ওঠাপড়া করে এবং নকশাটির পুনরাবৃত্তি হয়। তারের কম্পাঙ্ক নির্ভর করে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর। কম দৈর্ঘ্যের তারের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, কম্পাঙ্ক বেশি। বেশি দৈর্ঘ্যের তারের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি, কম্পাঙ্ক কম।
এই একই তত্ত্ব কাজ করে অর্গ্যান পাইপেও। এখানে আছে বায়ুস্তম্ভ। নল যখন খুব দীর্ঘ, তখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বেশি আর কম্পাঙ্ক খুব কম ; কারণ নলের দৈর্ঘ্যের ওপর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ভরশীল। আর যখন নলের দৈর্ঘ্য অনেক কম, তখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব কম, কম্পাঙ্ক খুব বেশি। নলের অনুরণন কম্পাঙ্ক নির্ভর করে নলের দৈর্ঘ্যের ওপর।
যখন এমন নল নেওয়া হয়, যেটির একটি দিক বন্ধ আর অন্যদিকটি খোলা, তখন খোলা দিকে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ তরঙ্গ বিস্তার। সেটি আসলে ঘটে এক চতুর্থাংশ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে।
আমরা যখন মুখ খুলে গান করি, তখন তখন আসলে যেটি পাই, তা হলো বায়ুস্তম্ভ, যা মুখের দিকে খোলা আর গলার দিকে বন্ধ নলে আটকে থাকার মতোই। আমাদের মুখ থেকে গলার ভাঁজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১৭ সে. মি. সুতরাং পেয়ে যাই ১৭ সে. মি দীর্ঘ এক চতুর্থাংশ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অনুনাদক।
একটি বাদ্যযন্ত্র থেকে অন্য বাদ্যযন্ত্রকে আলাদা করা যায় স্বর-সমন্বয় ( harmonics ) বিচার করে। সাধারণত বাদ্যযন্ত্রগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই harmonic oscillator -এর ওপর ভিত্তি করে তৈরী। তা তার হতে পারে অথবা বাযুস্তম্ভ , যা একই সঙ্গে একাধিক কম্পাঙ্কে কম্পিত হতে পারে। অনুরণন কম্পাঙ্কগুলিতে সাধারণত শব্দতরঙ্গ তার বা বাযুস্তম্ভ বাহিত হয়ে standing wave সৃষ্টি করে। পারিপার্শ্বিক বায়ুস্তম্ভের সঙ্গে এদের যখন সংঘর্ষ হয়, তখন সেই শব্দ আমাদের শ্রুতিগোচর হয়। এই শব্দতরঙ্গ যন্ত্র থেকে উদ্ভূত হয়ে বাইরের দিকে ছড়িয়ে যায়. এই অনুরণন কম্পাঙ্কগুলি পূর্ণসংখ্যার গুণিতকে হয় এবং এগুলিকেই বলা হয় Harmonics। যে কোনো note -এর ন্যুনতম কম্পাঙ্কের musical pitch নির্ণয় করা হয় প্রাথমিক কম্পাঙ্কটির হিসেবে ... ..যেটি সম্পূর্ণ তারের দৈর্ঘ্য অথবা বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী সৃষ্টি হতে পারে, অথবা অথবা আরও বেশি গুণিতকের হিসেবে বাদক নিজেও সৃষ্টি করতে পারেন। প্রতিটি harmonic -এর আপেক্ষিক তীব্রতার ওপর বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনির বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। এখানে harmonic শব্দটির পরিভাষা হিসেবে আমি “স্বর-সমন্বয়”ব্যবহার করেছি। এটি না থাকলে যখন একই কম্পাঙ্কে একাধিক বাদ্যযন্ত্র বাজবে, তাদের এই রকম শুনতে লাগবে। সুরসংগতির জন্য শুধু যে একটি একটি করে সুর ( note ) লাগে, তাই নয় ; কী পদ্ধতিতে বা কীভাবে বাদক এই সুরগুলিকে সঞ্চারিত করছেন এবং বাদ্যযন্ত্রটি কোন উপাদাননির্ভর ... তা অত্যন্ত জরুরী। গীটারের তারে টুং টাং, বা বেহালায় ছড় টানা, বাঁশিতে ঠোঁট চেপে ফুঁ দেওয়া অথবা ড্রামের চামড়ার আস্তরণে আঘাত করা ... ..প্রতিটি একে অন্যের থেকে আলাদা। সুর সৃষ্টির শুরুতে যেভাবে যন্ত্রটির বুকে প্রথম আঘাত করে কম্পাঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে ( এবং প্রতিটি যন্ত্রের নিজস্বতা আছে ), স্বর-সমন্বয়ের শেষে যেভাবে কম্পাঙ্ক লয় পাচ্ছে,এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে যেভাবে কম্পাঙ্কের ওঠাপড়া চলছে, যন্ত্রের উপাদান ও গঠন প্রকৃতি, মাধ্যম যদি বাইরে থাকে(যেমন গীটার, ড্রাম ইত্যাদি), অথবা যখন মাধ্যমটি যন্ত্রের ভেতরে ( যেমন বাঁশি, শিঙ্গা ইত্যাদি ) ... প্রতিটি আঙ্গিক স্বর-সমন্বয়ে সম মাত্রায় প্রয়োজনীয়। সুরের জগত যেমন জটিল, ঠিক তেমনটিই মোহময় !
অধরা মাধুরী
আজকাল দেখা যায়, বেশিরভাগ শ্রোতা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙিনায় আর নতুন করে কিছু খুঁজতে আসেন না। সবাই প্রায় লঘু সঙ্গীতের ভক্ত। কেন এই বিমাতৃসুলভ আচরণ? তাহলে কি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুধু বিশেষ কিছু বিদগ্ধ সঙ্গীতপ্রেমীর জন্যই? সকলের জন্য নয়? এর পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে?
-- খুব জটিল সঙ্গীততত্ত্ব
-- ঠিকঠাক উপস্থাপনার অভাব
-- যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার অক্ষমতা
-- এতই পুরোনো, যে একেবারে বস্তাপচা হয়ে গেছে
যদি ভারতবর্ষে সঙ্গীতের ইতিহাসের সূত্র ধরে পিছিয়ে যাওয়া যায়, আমরা দেখব ... বরাবরই তা ছিল দু'টি অংশে ভাগ করা। লোকসঙ্গীত আর মার্গসঙ্গীত।
সামবেদ থেকে শুরু করে নাট্যশাস্ত্র ... এই একই গল্প। লোকগীতি ছিল আমজনতার ব্যক্তিগত স্তরে। ছোট ছোট শ্রেণীতে, নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জন-অরণ্যে তার আনাগোনা ছিল কম। আর মার্গসঙ্গীত জনপ্রিয় ছিল রাজদরবারে, মন্দিরে দেবদেবীর আরাধনায় অথবা বড় বড় নাটমঞ্চে। অর্থাৎ মার্গসঙ্গীতের প্রেক্ষাপটটি ছিল বিশাল. উৎসবে ব্যসনে সাধারণ মানুষ কিন্তু তার রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত ছিল না। সাধারণ মানুষের কাছে মার্গসঙ্গীতের জনপ্রিয়তা ছিল পূজাপাঠে, যাগযজ্ঞে, নানা আচার অনুষ্ঠানে আর বড় বড় মজলিশে। পরবর্তীকালে যখন সঙ্গীত ভক্তিবাদ আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়, তখনও কিন্তু সাধারণ মানুষ নিজেদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গুণগ্রাহী হিসেবেই বিবেচনা করত।
পুরন্দরদাস যখন কর্ণাটকী ধারা প্রচলন করেন, তিনি কিন্তু মঞ্চে উঠে আপ্লুত হয়ে গান গাইতেন না। বিজয়নগরের পথে পথে ঘুরতেন, কন্ঠে সঙ্গীত আর পেছনে বিশাল জনস্রোত নিয়ে। অনুরাগী ভক্তরা তাঁর গান অক্লেশে মুখে মুখে তুলে নিত। একইভাবে জনমানসে প্রিয় হয়ে ওঠে সুফী গান।
তখন নাট্যশাস্ত্র চর্চাতেও মার্গসঙ্গীত নিজের জায়গা করে নিয়েছিল। কাজেই এই যে আমরা ভাবি দৈনন্দিন জীবনে মার্গসঙ্গীত ব্রাত্য, তা কিন্তু নয়। তাহলে বলুন না, পাশ্চাত্য সঙ্গীত বা ফিল্মি গান আসার আগে আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম কোন সম্পদ নিয়ে?
এখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি কেমন পাল্টে গেছে. আগে যে যে আঙ্গিকে বিচার করে গানের আবেদন ও জনপ্রিয়তা যাচাই করা হত, আজকাল সেই মাপকাঠিটাই বদলে গেছে ! তাই হয়ত বর্তমান প্রজন্ম মনে করে, " যা বুঝি কম, যা উপভোগ করি কম, তা বরং ঠেলে সরিয়ে রাখা যাক একপাশে !"
তাই হয়ত আজকাল বেশিরভাগ মানুষ আনন্দ আর রোমাঞ্চটুকুই খোঁজে। আর অনুধাবনের চেষ্টাও করে না যে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অন্য এক স্বর্গসুখের স্বাদ এনে দেয় আমাদের, যা হয়ত হাতের মুঠিতে ধরা কঠিন, কিন্তু একবার ধরে রাখতে পারলে চিরদিনের জন্য কাছেই রয়ে যায় !
সাধারণ বোধবুদ্ধি দিয়ে মানুষ যে " আপাত " আনন্দ খুঁজে ফেরে, তা ঠিক " পরম" আনন্দ তো নয় ! তার থেকে হয়ত খানিক নীচে রয়েছে। একে " মন্দ " বলি না আমি, অতবড় বুকের পাটা নেই আমার, তবে স্বর্গীয় আনন্দ তো সবসময়েই কাঙ্ক্ষিত, তাই না?
ধরুন, একটি বাচ্চার হাতে একটা চকোলেট আছে। সে কিছুতেই তা হাতছাড়া করতে চাইছে না কেন? কারণ চকোলেট খেতে কী ভীষণ ভালো ! তার বাড়িতে দুই বন্ধু এল. এমনই বিপত্তি, যে ভাগ করতেই হবে চকোলেট। ফল কী দাঁড়াল? একা একা চকোলেট খেতে পারলে যতটা আনন্দ হত, এখন এই ভাগ হয়ে গিয়ে খানিক বিমর্ষতা ! কিন্তু যদি প্রথম শিশুটির চরিত্র এমন হয়, যে, ভাগ করে খেতে শিখেছে আর তা থেকে আনন্দটুকুও নিংড়ে নিতে জেনেছে, অন্য দুই বন্ধুর হাসিমুখ তাকে বিপুল সন্তুষ্টি দেয়। তখন সেই চকোলেট খাবার মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক অন্যরকম প্রাপ্তির আনন্দ। সেই প্রাপ্তিই পরম প্রাপ্তি !
পরম তৃপ্তিবোধ এমনই, যা ভাগ করে নিলে ভাগে কখনোই কম পড়ে না, বরং বাড়তি হয়। আর আপাত সুখ এমনই, যা ভাগ করে নেবার পর মনটা কেমন যেন খুঁতখুঁত করে ! মনে হয়, কম পড়ে গেল ! শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রসাস্বাদন তাই অন্যরকম এক আনন্দবোধ, আর চটুল লঘুসঙ্গীত চটজলদি কিছু রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ মাত্র।
নাট্য বা সঙ্গীতশাস্ত্রে তাই শ্রোতাদের ভাগ করা হয় তিনটি স্তরে :
১. অধম স্তর : যারা হইচই করে, জান্তব উল্লাসে অধীর হয়
২. মধ্যম স্তর : যারা আলাপ আলোচনা করে, হাততালি দেয়
৩. উত্তম স্তর : সূচ পতনের শব্দও শোনা যাবে। চরম নিস্তব্ধতা। দর্শক/শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ। চোখে জল, মুখে তৃপ্তির আলো
এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে কোনো স্তরের মানুষ কোনো অংশের মানুষদের তুলনায় হীন। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখা ভালো, আমি ঠিক কোন স্তরের আনন্দের অংশীদার হতে চাই !
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এমনই এক শিল্পমাধ্যম যা আমাদের পার্থিব অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা থেকে হাত ধরে নিয়ে যায় আনন্দের কল্পলোকে। যে আধ্যাত্মিক মানসিকতার, সে আত্মোপলব্ধি করে। যে ভক্ত ... সে নিজেকে মিলিয়ে দেয় ঈশ্বরের সঙ্গে, যে শিক্ষার্থী ... সে খুঁজে পায় মন:সংযোগ, যে অসুস্থ ... তার মেলে প্রাণের আরাম !
আসলে আপাতসুখ সহজেই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হতে পারে। তাই সাধারণভাবে এটির আবেদন অনেকই বেশি। আমরা বরং অনুভূতি আর অনুভবের পার্থক্য বিচার করে দেখি। পাঁচটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা ... তাইই অনুভূতি। আর যখন এই পঞ্চেন্দ্রিয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় মনন, তখন সেই অনুভূতির উত্তরণ হয় অনুভবে।
খুব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করলে এ আমাদেরই অক্ষমতা, যে, আমরা বর্তমান প্রজন্মকে পরিচয় করাতে পারছি না মার্গসঙ্গীতের অফুরন্ত রত্নভাণ্ডারের সঙ্গে। আমরা বোঝাতেই পারছি না, জনপ্রিয় হালকা চালের গানগুলিও কোনো না কোনো রাগ/ রাগিণী নির্ভর। আমরা মনমাতানো সুরে অর্থবহ কথা বসাতে পারছি না সব সময়। ফলে যত সুন্দরই সুর হোক, দুর্বল কথার জন্য তা অনেক সময়েই খেলো হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সচেতনভাবে সঙ্গীতে আনতে হবে রঙবাহার। শ্রোতার মনের সঙ্গে গায়কের গানের, বাদকের বাজনার যথাযথ মেলবন্ধন ও অনুরণন ঘটাতে হবে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা এই যে যাই যাই করেও রয়ে গেছে, এবং এখনো অনেকটাই শক্তপোক্ত মাটির ওপরেই, এই সত্যটিই কি যথেষ্ট নয় একথা বোঝাতে, যে, কখনো না কখনো অধরা মাধুরী ধরা দেবেই দেবে আপামর জনতার কাছে?
এবং আলোর রকমফের …
অনেক তত্ত্বতালাশ, নীরস কচকচি, গানের ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞান শুনি, পড়ি, বুঝতে চেষ্টা করি এবং ভুলেও যাই। কিন্তু আসল কথাটা লুকিয়ে আছে মনের গোপন কোণে। গান কেন আমাদের সকলেরই প্রাণভোমরা ! গান বলতে আমি কিন্তু সুর আর সুরে গাঁথা কথামালা ... দুই-ই বলতে চেয়েছি।
রোজই নিয়ম মেনে ভোর হয়। কোনদিন ঘোড়ায় জিন দিয়ে আবার কোনদিন বা গড়িমসি করে হেঁটে তা পৌঁছে যায় দুপুরে, সন্ধেয় আর রাতে। আমাদের জীবনও সেই ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা। অজস্র অভ্যেস, কাজের ব্যস্ততা আর দমচাপা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কতটুকু সময় আমরা নিজের জন্য বা নিজের ভালো লাগার জন্য দিই? হিসেব করে দেখিনি, ভয় করে ! হিসেব করতে গেলেই হতাশা এসে দরজায় কড়া নাড়বে অস্থির হাতে।
প্রত্যেক মানুষেরই নিজের নিজের মনের মধ্যে একটা দু'টো খোলা জানালা আছে, যেখান দিয়ে সময়ে অসময়ে একফালি রোদ্দুর এসে আঁকিবুকি কাটে। গান, বই, ফুল, আকাশ ... এমনই কিছু কিছু দক্ষিণের জানলা। গান, তা যে গানই হোক, তার সুর, তাল, লয়, কথা আমাদের ওই খোলা জানালা দিয়ে যখন ঝিরঝির করে বয়ে যায়, তখন ভুলে যাই রোজের নিক্তির হিসেবে কতটা গরমিল, কতটা কারচুপি। কেউ ভালবাসে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, কেউ বা লোকগীতি, লঘুসঙ্গীত অথবা ব্যান্ড. রুচি এক এক জনের এক এক রকম। কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রটা এক। গান। সব গানই তো সেই সরগম ভিত্তিক। কোনো না কোনো রাগ রাগিণী নির্ভর। mix n match -ও আছে। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি শর্তহীন আনুগত্যে আমরা সকলেই প্রায় বিকিয়ে বসে আছি।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জানি না, শিখিনি। যা কিছু জ্ঞান ... সবটুকুই ভাসা ভাসা। কিন্তু তার জন্য সামগ্রিকভাবে গান ভালোলাগা তো আটকায়নি ! গান মিশে গেছে রোজের জীবনে, সকাল থেকে সন্ধে, চেতনায়, অবচেতনে। অহনার আলো থেকে রাতের ঘন নীল অন্ধকার ... আলোর কী আশ্চর্য রকমফের, অনুভবের রকমফের, সুর আর গানের রকমফের, রাগ- রাগিণীর রকমফের।
ভোরের গোলাপী মায়াবী আলো যখন বন্ধ চোখের পাতায় আলতো করে আঙুল বুলিয়ে বলে, "ওঠো, বাইরে এসে দেখো”, তখন যে গানটি মনের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে, তা হলো " প্রাণের প্রাণ জাগিছে " ( ললিত )। ভোর হচ্ছে খুব ধীরে ধীরে। দিগন্তের রং ঝিনুকের ভেতরের মতো ফিকে গোলাপী, একটু একটু সোনালী ছিটছিট ... এই সময়ে সব কিছু কেমন শ্বাস রোধ করে থাকে, নিশ্চুপে। সব কিছু স্থির,শুধু আলো বহমান। বিচিত্র এক তরল ধূসর মায়াবী রঙে জেগে থাকে শুকতারা। পাখিরা ডাক দিল কি? আমাকে? ঘাসের শীষগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, শিশিরবিন্দু শুকিয়ে যাচ্ছে মন্দলয়ে, চাঁদ ডুবে যায় দিগন্তে ... আর " রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে, তোমায় আমায় দেখা হল সেই মোহনার ধারে. "( ভৈরব )।
এবারে ভোরবেলা একটি একটি করে পাপড়ি মেলে গোলাপফুলের মতো। আমার দৃষ্টি হতে থাকে স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছতর। এই ভোর থেকে প্রথম সকাল, প্রথম আলো, অপ্রকাশ যা যা ছিল, যেন সূর্যের বিভায় এক লহমায় উন্মোচিত। সব অস্পষ্টতা সরে গেছে, প্রকৃতি অকৃপণ হাতে বিলিয়ে দিচ্ছে যা কিছু বৈভব। রোজ ঘুম ভাঙে, একই ভাবে জাগি, একই ভাবে বাইরে এসে দাঁড়াই ... এই গান ঘুরেফিরে চেতনার বৃত্ত সম্পূর্ণ করে ... "আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান "( রামকেলি) । আমায় দু'হাত ছড়িয়ে দিই সানন্দ উচ্ছলতায়, তিরতির করে খুশির ঢেউ বয়ে যায় আমার শরীরে, মনে ... "প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে"( ভৈরবী-রামকেলি)। ভুলে যাই, কত কত জটিলতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে আমাকে। আমার কেমন পরীর মতো দুটো ফিনফিনে রুপোলি পাখা গজায় পিঠে, প্রণতা হই জীবনের কাছে। রোজ রাতে ভাবি, সকাল মানেই সমস্যাজর্জর নতুন একটা দিন, রোজ সকালে দেখার চোখদুটো কেমন পাল্টে যায় !" আমি কেমন করিয়া জানাবো আমার জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো /আমার জুড়ালো হৃদয় প্রভাতে"( আশাবরী-ভৈরবী)। আমার হৃদয় জুড়ে একটি কথায় বেজে যায় ... " কত যে তুমি মনোহর, মনই তাহা জানে"(টোড়ি)।
এবার কেমন খানিকটা আকাশ হলুদ কুসুমরঙা, আবার কিছুটা জায়গা নরম নীলাভ। ঠিক যেন এলোমেলো রং বিছানো ক্যানভাস। প্রতিদিন, একটিবার, অন্তত একটিবার অবাক হয়ে ভাবি, আমার হৃদপিন্ডে এই যে লাবডুব লাবডুব, এই যে খুব সুখে অথবা দু:খে চোখে উপচে আসে জল, এই যে প্রতিদিন নতুন করে জন্মানো, নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া ... আকাশে যদি মেঘেদের আসা যাওয়া ... তখন এই গানটি ... " হৃদয়ে ছিলে জেগে "( আলাহিয়া বিলাওল). সত্যিই তো ... হৃদয়ে তো জেগেই থাকে অনুভব, আমরা তা সবসময় বুঝতে পারি না ... এই যা ! এক এক সময় এই বিশাল আকাশের পটভূমিতে খুব একা, নি:স্ব লাগে নিজেকে ... তখন এক অন্য আর্তি জাগে "ওগো কাঙাল, আমায় কাঙাল করেছ " (ভৈরবী )। আলো আর অন্ধকারকে এই ছুঁয়ে থাকার কাঙালপনা আমায় অস্থির করে দেয়। কখনো মনে হয়, নিজেকে চিনি, কখনো বা নিজের ছায়াটিকেও অচেনা লাগে ... " আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না !"( ভৈরবী-বাউল )। আর ঠিক তখনই তখন ইচ্ছে হয় ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে হয়ে চলে যাই সেই দিকশূন্যপুরে।
বেলা বাড়ে। আমি মনে মনে নিজের হাত ধরে চলে যাই দিকশূন্যপুরে, খুব দু:খী নীলচে সবুজ মন নিয়ে। এখানে সবজেটে সাদা জলে শালুক ফুল, দোয়েল,ফিঙে আর বুলবুলির মেলা, এখানে গাছের পাতার জাফরিকাটা জানলা দিয়ে রোদ্দুর আর ছায়ার খেলা। আকাশে গোলাপী মেঘ, হালকা রামধনু, বড় বড় ঝুপসি কৃষ্ণচূড়া, পলাশ ... আর ... ওই গাছের নিচে দাঁড়ালেই দমকা ধুলোর ঝড় ... আর মাথা, মুখ, বুক ... শরীর, মন ... ভরে যায় ঝুরো ফুলে ... যেন বারোমাসই বসন্ত, যেন আকাশে বারোমাসই পুষ্পবৃষ্টি ! এখন সূর্য মাথার ওপর। আমার দেখা হয়ে যায় " দূরদেশী সেই রাখাল ছেলে"-র সঙ্গে ( বৃন্দাবনী সারং)।
"মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে "( গৌড়ীয় সারং ) নিজেকে নিজের কাছেই মেলে ধরে আমি ঠিক করি, চেনা গণ্ডির বাইরে চলে যাব। দুপুর এখন একটু যেন আলসেমি মাখা। শীতকালে কমলালেবুর রং রোদ্দুরে যেমন ঝিমঝিম ভাব, তেমনটি। আমার মনে হয় ... বেলা বয়ে যায় কত অনায়াসে. আমার আর ছুটি হয় না, নিজের মনকে ফিসফিসিয়ে বলি ... " তুমি আমায় ডেকেছিলে, ছুটির নিমন্ত্রণে"( মুলতানী-ভীমপলশ্রী )। এত সহজে রোজের অভ্যেস থেকে, কর্তব্যের দায় থেকে ছুটি মেলে কই ! সময় আসে, গড়িয়ে যায় আপন খেয়ালে, আমার আঁজলার ফাঁক দিয়ে ঝুরঝুরিয়ে পড়ে যায় ভালোবাসা আর ভালো লাগার ধুলোবালি ... " তুমি তো সেই যাবেই চলে, কিছু তো না রবে বাকি ... "( পূরবী )।
গোধূলি এক দৃষ্টিবিভ্রমও বটে। কারণ কখনো সূর্যকে মনে হয় দিগন্তরেখার ওপরে, আবার কখনো বা নীচে। রাত নামেনি এখনো। আকাশ কমলা ঘেঁষা গোলাপী, যেন মসৃণ রেশমি শাড়ি, তাতে অগুন্তি ছোট্ট ছোট্ট জরির ফুলকি তারা। গাছের পাতারা চুপটি করে, পাখিদের ডানায় ঘরে ফেরার নেশা আর ক্লান্তি মাখানো। বাতাস বইছে নি:সাড়ে। আমিও স্থির, নিষ্কম্প। এই স্তব্ধতা আপন, গোপন, একা একা চিনে নেবার। আমার কানে তখন আর বাইরের শব্দ, সম্পর্কের হাহুতাশ বাজে না ... উদাসীন তাচ্ছিল্যে মূক দৃষ্টিতে আত্মজনেদের বলি, " কেন তোমরা আমায় ডাক, আমার মন না মানে, পাই নে সময় গানে গানে "( হাম্বীর )।
বলি তো ... এতবার বলি. কিন্তু শোনে কে? কেউ না, শুধু আমি, একা আমি অন্ধের স্পর্শের মত, নীলচে বিদ্যুৎবল্লরীর আভায় দীপ্তিময়ী হয়ে খুব নীচু গলায় গেয়ে উঠি, "চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে "( ইমন)।
আমার মনে সন্ধে গড়িয়ে রাত নেমে আসতে থাকে। সব কিছু, সব বন্ধন কেমন আলগা হয়ে আসে ... এক বিচিত্র নিরাসক্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে যাই। কিছুই আর টানে না আমাকে, খেলাঘরে কী ইচ্ছেপুতুল জীবন আমার ! দু'হাতের মুঠি বন্ধ করি অসহায় আক্রোশে, অনুনয়ে দীর্ণ হই ... "খেলার সাথী, বিদায় দ্বার খোলো, গেল যে খেলার বেলা"( পিলু-বারোয়াঁ- ঠুংরী )।
এভাবেই শেষ হয়ে যাব ধীরে ধীরে, যেভাবে দিনের শেষ আসে রাতে, আমি অঞ্জলিবদ্ধ দু'টি হাত বাড়িয়ে দিই অন্ধকারের দেবতাকে, নি:শর্ত নিবেদনে, কারণ ... জানি তো ... " আমার যে সব দিতে হবে, সে তো আমি জানি, আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী " (দেশ)।
রাত বাড়ছে। আমার অস্থিরতা, আমার ক্লান্তিও। শরীর যেন ভেঙে আসতে থাকে. কিছুই হিসেব মেলেনি জীবনের। যত ভাবি, সব ঠিক, বারেবারেই জমে ওঠে ভুলের পাহাড়। আমার কাঠকুটো দিয়ে ঠোঁটে করে বয়ে আনা চড়ুইপাখির পলকা ঘরে অন্ধকারের ছায়ায় ভর করে এগিয়ে আসে একঘেয়ে রাত, আর আমার দু'কান বধির হয়ে যায় ... কার অপেক্ষায় থাকি? কে আসবে? " যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে. জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে ... "( বাগেশ্রী )।
এলে কি? তুমি কি সত্যিই এলে? প্রেম আর বিরহের এক অনন্ত হিরণ্ময় অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে আমি আঁকড়ে ধরি নিজেরই ছায়াকে, শেষ আশ্রয় হিসেবে আর আহ্বান করি,
" ঘুমের ঘন গহন হতে যেমন আসে স্বপ্ন
তেমনই উঠে এসো এসো।
শমীশাখার বক্ষ হতে যেমন জ্বলে অগ্নি
তেমনই তুমি এসো এসো ... "( সোহিনী -পরজ )
[ রাগ রাগিণী বুঝিনি, আলোর রকমফেরে শুধু মন বদলেছে, বদলেছে গান। সময় যেমন যেমন গড়িয়েছে উষা থেকে ঘন কালচে নীল রাতের অন্ধকারে, বদলে গেছে রাগ- রাগিণী আর কী আশ্চর্য ... এমনভাবে, যে নিজেরই অজান্তে সেই রাগ- রাগিণীরই আশ্রয় খুঁজে ফিরেছি, বড় প্রিয় আর খুব চেনা রবিগানে। ]
লেখক পরিচিতি - বিজ্ঞানের ছাত্রী । কিন্তু
প্রথম ভালোবাসা সাহিত্য । তিন দশক ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত ।
বেশ কিছু অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য অকাদেমি, ন্যাশনাল
বুক ট্রাস্ট ইত্যাদি বিখ্যাত সংস্থা থেকে । ভাষান্তরের পাশাপাশি
নিজস্ব লেখালেখির ঝোঁক । তবে খুব নিয়মিত নয় । ভালোবাসেন টুকরো
গদ্য, পদ্য লিখতে । নানা স্বাদের লেখা নিয়ে গত বছর প্রকাশিত হয়েছে
ওঁর আরেকটি বই 'ম্যাজিক লণ্ঠন। এ বছর প্রকাশিত হচ্ছে আরও তিনটি
বই।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।