সাম্য-
পঞ্চম পরিচ্ছেদ- (১)
(২)
(৩)

স্ত্রীপুরুষে
যে সকল বৈষম্য প্রায় সর্বসমাজে প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে পৈত্রিক
সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্বন্ধীয় বিধিগুলি অতি ভয়ানক ও শোচনীয়।
পুত্র পৈত্রিক সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ অধিকারী, কন্যা কেহই নহে।
পুত্র কন্যা, উভয়েরই একই ঔরসে, এক গর্ভে জন্ম; উভয়েরই প্রতি
পিতামাতার একপ্রকার যত্ন, একপ্রকার কর্ত্তব্য কর্ম্ম; কিন্ত্তু
পুত্র পিতৃমৃত্যুর পর কোটি মুদ্রা সুরাপানাদিতে ভস্মসাত্ করুক,
কন্যা বিশেষ প্রয়োজনের জন্যও তন্মধ্যে এক কপর্দ্দক পাইতে পারে
না। এই নীতির কারণ হিন্দুশাস্ত্রে নির্দ্দিষ্ট হইয়া থাকে যে,
যেই শ্রাদ্ধাধিকারী, সেই উত্তরাধিকারী; সেটি এরূপ অসঙ্গত এবং
অযথার্থ যে, তাহার অযৌক্তিকতা নির্ব্বাচন করাই নিস্প্রয়োজন।
দেখা যাউক, এরূপ নিয়মের স্বভাবসঙ্গত অন্য কোন মূল আছে কি না।
ইহা কথিত হইতে পারে যে, স্ত্রী স্বামীর ধনে স্বামীর ন্যায়ই অধিকারিণী;
এবং তিনি স্বামিগৃহে গৃহিণী, স্বামীর ধনৈশ্বর্যে কর্ত্রী, অতএব
তাঁহার আর পৈত্রিক ধনে অধিকারিণী হইবার প্রয়োজন নাই। যদি ইহাই
এই ব্যবস্থানীতির মূলস্বরূপ হয়, তাহা হইলে জিজ্ঞাস্য হইতে পারে
যে, বিধবা কন্যা বিষয়াধিকারিণী হয় না কেন? যে কন্যা দরিদ্রে
সমর্পিত হইয়াছে, সে উত্তরাধিকারিণী হয় না কেন? কিন্ত্তু আমরা
এ সকল ক্ষুদ্রতর আপত্তি উপস্থিত করতে ইচ্ছুক নহি। স্ত্রীকে স্বামী
বা পুত্র বা এবম্বিধ কোন পুরুষের আশ্রিতা হইয়াই ধনভাগিনী হইতে
হইবে, ইহাতেই আমাদের আপত্তি। অন্যের ধনে নহিলে স্ত্রীজাতি ধনাধিকারিণী
হইতে পারিবে না-- পরের দাসী হইয়া ধনী হইবে-- নচেত্ ধনী হইবে
না, ইহাতেই আপত্তি। পতির পদসেবা কর, পতি দুষ্ট হউক, কুভাষী,
কদাচারী হউক, সকল সহ্য কর-- অবাধ্য, দুর্মুখ, কৃতঘ্ন, পাপাত্মা
পুত্রের বাধ্য হইয়া থাক-- নচেত্ ধনের সঙ্গে স্ত্রীজাতির কোন
সম্বন্ধ নাই। পতি পুত্র তাড়াইয়া দিল ত সব ঘুচিল। স্বাতন্ত্র্য
অবলম্বন করিবার উপায় নাই-- সহিষ্ণুতা ভিন্ন অন্য গতিই নাই। এদিকে
পুরুষ, সর্ব্বাধিকারী-- স্ত্রীর ধনও তাঁর ধন। ইচ্ছা করিলেই স্ত্রীকে
সর্ব্বস্বচ্যুত করতে পারেন। তাঁহার স্বাতন্ত্র্য অবলম্বনে কোন
বাধা নাই। এ বৈষম্য গুরুতর, ন্যায়বিরুদ্ধ, এবং নীতিবিরুদ্ধ।
অনেকে বলিবেন,
এ অতি উত্তম ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা প্রভাবে স্ত্রী স্বামীর বশবর্ত্তিনী
থাকে বটে, পুরুষকৃত ব্যবস্থাবলির উদ্দেশ্যই তাই; যত প্রকার বন্ধন
আছে, সকল প্রকার বন্ধনে স্ত্রীগণের হস্তপদ বাঁধিয়া পুরুষপদমূলে
স্থাপিত কর-- পুরুষগণ স্বেচ্ছাক্রমে পদাঘাত করুক, অধম নারীগণ
বাঙনিস্পত্তি করিতে পারে না। জিজ্ঞাসা করি, স্ত্রীগণ পুরুষের
বশবর্ত্তিনী হয়, ইহা বড় বাঞ্ছনীয়; পুরুষগণ স্ত্রীজাতির বশবর্ত্তী
হয়, ইহা বাঞ্ছনীয় নহে কেন? যত বন্ধন আছে, সকল বন্ধনে স্ত্রীগণকে
বাঁধিয়াছ, পুরুষজাতির জন্য একটি বন্ধনও নাই কেন? স্ত্রীগণ কি
পুরুষাপেক্ষা অধিকতর স্বভাবতঃ দুশ্চরিত্র? না রজ্জুটি পুরুষের
হাতে বলিয়া এত দৃঢ় বন্ধন? ইহা যদি অধর্ম না হয়, তবে অধর্ম কাহাকে
বলে, বলিতে পারি না।
হিন্দুশাস্ত্রানুসারে
কদাচিত্ স্ত্রী বিষায়াধিকারিণী হয়, যথা-- পতি অপুত্রক মরিলে।
এইটুকু হিন্দুশাস্ত্রের গৌরব। এইরূপ বিধি দুই একটা থাকাতেই আমরা
প্রাচীন আর্যব্যবস্থাশাস্ত্রকে কোন কোন অংশে ইউরোপীয় ব্যবস্থাশাস্ত্রাপেক্ষাও
উত্কৃষ্ট বলিয়া গৌরব করি। কিন্ত্তু এইটুকু মন্দের ভাল মাত্র।
স্ত্রী বিষয়াধিকারিণী বটে, কিন্ত্তু দানবিক্রয়াদির অধিকারিণী
নহে। এ অধিকার কতটুকু? আপনার ভরণপোষণ মাত্র পাইবেন, আর তাঁহার
জীবনকালমধ্যে আর কাহাকেও কিছু দিবেন না, এই পর্য্যন্ত তাঁহার
অধিকার। পাপাত্মা পুত্র সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া ইন্দ্রিয়সুখ
ভোগ করুক, কিন্ত্তু মহারাণী স্বর্ণময়ীর ন্যায় ধর্ম্মনিষ্ঠা স্ত্রী
কাহারও প্রাণরক্ষার্থেও এক বিঘা হস্তান্তর করিতে সমর্থ নহেন।
এ বৈষম্য কেন? তাহার উত্তরেরও অভাব নাই-- স্ত্রীগণ অল্পবুদ্ধি,
অস্থিরমতি, বিষয়রক্ষণে অশক্ত। হঠাত্ সর্ব্বস্ব হস্তান্তর করিবে,
উত্তরাধিকারীর ক্ষতি হইবে, এ জন্য তাহারা বিষয় হস্তান্তর করিতে
অশক্ত হওয়াই উচিত। আমরা এ কথা স্বীকার করি না। স্ত্রীগণ বুদ্ধি,
স্থৈর্য্য, চতুরতায় পুরুষাপেক্ষা কোন অংশে ন্যূন নহে। বিষয়রক্ষার
জন্য যে বৈষয়িক শিক্ষা তাহাতে তাহারা নিকৃষ্ট বটে, কিন্ত্তু
সে পুরুষেরই দোষ। তোমরা তাহাদিগকে পুরমধ্যে আবদ্ধ রাখিয়া, বিষয়কর্ম্মে
নির্লিপ্ত রাখ, সুতরাং তাহাদিগের বৈষয়িক শিক্ষা হয় না। আগে বৈষয়িক
ব্যাপারে লিপ্ত হইতে দাও, পরে বৈষয়িক শিক্ষার প্রত্যাশা করিও।
আগে মুড়ি রাখিয়া পরে পাঁটা কাটা যায় না। পুরুষের অপরাধে স্ত্রী
অশিক্ষিতা-- কিন্ত্তু সেই অপরাধের দণ্ড স্ত্রীগণের উপরেই বর্ত্তাইতেছে।
বিচার মন্দ নয়!
স্ত্রীগণের
বিষয়াধিকার সম্বন্ধে একটি কৌতুকাবহ ব্যাপার মনে পড়িল। কয় বত্সর
পূর্বে হাইকোর্টে একটি মোকদ্দমা হইয়া গিয়াছে। বিচার্য্য বিষয়
এই-- অসতী স্ত্রী, বিষয়াধিকারিণী হইতে পারে কি না। বিচারক অনুমতি
করিলেন, পারে। শুনিয়া দেশে হুলুস্থুল পড়িয়া গেল। যা! এতকাল পরে
হিন্দুস্ত্রীর সতীত্বধর্ম্ম লুপ্ত হইল। আর কেহ সতীত্বধর্ম্ম
রক্ষা করিবে না। বাঙ্গালী সমাজ পয়সা খরচ করতে চাহে না-- রাজাজ্ঞা
নহিলে চাঁদায় সহি করে না, কিন্ত্তু এ লাঠি এমনি মর্ম্মস্থানে
বাজিয়াছিল যে, হিন্দুগণ আপনা হইতেই চাঁদাতে সহি করিয়া প্রিবিকৌন্সিলে
আপীল করতে উদ্যত! "হা সতীত্ব! কোথায় গেলি" বলিয়া ইংরেজী
বাঙ্গালা সুরে রোদন করিয়া 'ওরে চাঁদা দে" বলিয়া ডাকিতে
লাগিলেন। শেষটা কি হইয়াছে জানি না: কেন না দেশী সম্বাদপত্র পাঠসুখে
আমরা ইচ্ছাক্রমে বঞ্চিত। কিন্ত্তু যাহাই হউক, যাঁহারা এই বিচার
অতি ভয়ঙ্কর ব্যাপার মনে করিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে আমাদিগের একটি
কথা জিজ্ঞাস্য আছে। স্বীকার করি, অসতী স্ত্রী বিষয়ে বঞ্চিত হওয়াই
বিধেয়, তাহা হইলে অসতীত্ব পাপ বড় শাসিত থাকে; কিন্ত্তু সেই সঙ্গে
আর একটি বিধান হইলে ভাল হয় না, যে লম্পট পুরুষ অথবা যে পুরুষ
পত্নী ভিন্ন অন্য নারীর সংসর্গ করিয়াছে, সেও বিষয়াধিকারে অক্ষম
হইবে? বিষয়ে বঞ্চিত হইবার ভয় দেখাইয়া স্ত্রীদিগের সতী করিতে
চাও-- সেই ভয় দেখাইয়া পুরুষগণকে সত্পথে রাখিতে চাও না কেন?
ধর্ম্মভ্রষ্টা স্ত্রী বিষয় পাইবে না; ধর্ম্মভ্রষ্ট পুরুষ বিষয়
পাইবে কেন? ধর্ম্মভ্রষ্ট পুরুষ,-- যে লম্পট, যে চোর, যে মিথ্যাবাদী,
যে মদ্যপায়ী, যে কৃতঘ্ন, সে সকলেই বিষয় পাইবে; কেন না, সে পুরুষ;
কেবল অসতী বিষয় পাইবে না; কেন না, সে স্ত্রী। ইহা যদি ধর্ম্মশাস্ত্র,
তবে অধর্ম্মশাস্ত্র কি? ইহা যদি আইন, তবে বে-আইন কি? এই আইন
রক্ষার্থ চাঁদা তোলা যদি দেশবাত্সল্য, তবে মহাপাতক কেমনতর?
স্ত্রীজাতির
সতীত্বধর্ম সর্ব্বতোভাবে রক্ষণীয়, তাহার রক্ষার্থ যত বাঁধন বাঁধিতে
পার, ততই ভাল, কাহারও আপত্তি নাই। কিন্ত্তু পুরুষের উপর কোন
কথা নাই কেন? পুরুষ বারস্ত্রীগমন করুক, পরদারনিরত হউক, তাহার
কোন শাসন নাই কেন? শাস্ত্রে ভুরি ভুরি নিষেধ আছে; সকলেই বলিবে
পুরুষের পক্ষেও এ অত্যন্ত মন্দ কর্ম্ম; লোকেও একটু একটু নিন্দা
করিবে (ক) -- কিন্ত্তু এই পর্যন্ত। স্ত্রীলোকদিগের উপর যেরূপ
কঠিন শাসন, পুরুষদিগের উপর সেরূপ কিছুই নাই। কথায় কিছু হয় না;
ভ্রষ্ট পুরুষের কোন সামাজিক দণ্ড নাই। একজন স্ত্রী সতীত্ব সম্বন্ধে
কোন দোষ করিলে সে আর মুখ দেখাইতে পারে না; হয়ত আত্মীয়স্বজন তাহাকে
বিষ প্রদান করেন; আর একজন পুরুষ প্রকাশ্যে সেইরূপ কার্য্য করিয়া
রোশনাই করিয়া, জুড়ি হাকাইয়া, রাত্রিশেষে পত্নীকে চরণরেণু স্পর্শ
করাইতে আসেন; পত্নী পুলকিত হয়েন; লোকে কেহ কষ্ট করিয়া অসাধুবাদ
করে না; লোকসমাজে তিনি যেরূপ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, সেইরূপ প্রতিষ্ঠিত
থাকেন, কেহ তাঁহার সহিত কোন প্রকার ব্যবহারে সঙ্কুচিত হয না;
এবং তাঁহার কোন প্রকার দাবি দাওয়া থাকিলে স্বচ্ছন্দে তিনি দেশের
চূড়া বলিয়া প্রতিভাত হইতে পারেন। এই আর একটি গুরুতর বৈষম্য।
আর একটি
অনুচিত বৈষম্য এই যে, সর্ব্বনিম্নশ্রেণীর স্ত্রীলোক ভিন্ন, এ
দেশীয় স্ত্রীগণ উপার্জ্জন করতে পারে না। সত্য বটে, উপার্জ্জনকারী
পুরুষেরা আপন আপন পরিবারস্থা স্ত্রীগণকে প্রতিপালন করিয়া থাকে।
কিন্ত্তু এমন স্ত্রী অনেক এ দেশে আছে যে, তাহাদিগকে প্রতিপালন
করে, এমন কেহই নাই। বাঙ্গালার বিধবা স্ত্রীগণকে বিষেশতঃ লক্ষ্য
করিয়াই আমরা লিখিতেছি। অনাথা বঙ্গবিধবাদিগের অন্নকষ্ট লোকবিখ্যাত,
তাহার বিস্তারে কোন প্রয়োজন নাই। তাহারা উপার্জ্জন করিয়া দিনপাত
করিতে পারে না, ইহা সমাজের নিতান্ত নিষ্ঠুরতা। সত্য বটে, দাসীত্ব
বা পাচিকাবৃত্তি করিবার পক্ষে কোন বাধা নাই; কিন্ত্তু ভদ্রলোকের
স্ত্রী কন্যা এ সকল বৃত্তি করিতে সক্ষম নয়-- তদপেক্ষা মৃত্যুতে
যন্ত্রণা অল্প। অন্য কোন প্রকারে ইহারা যে উপার্জ্জন করিতে পারে
না, তাহার তিনটি কারণ আছে। প্রথমতঃ তাহারা দেশী সমাজের রীত্যনুসারে
গৃহের বাহির হইতে পারে না। গৃহের বাহির না হইলে উপার্জ্জন করার
অল্প সম্ভাবনা। দ্বিতীয়, এ দেশীয় স্ত্রীগণ লেখাপড়া বা শিল্পাদিতে
সুশিক্ষিতা নহে; কোন প্রকার বিদ্যায় সুশিক্ষিত না হইলে কেহ উপার্জ্জন
করিতে পারে না। তৃতীয়, বিদেশী উমেদওয়ার এবং বিদেশী শিল্পীরা
প্রতিযোগী; এ দেশী পুরুষেই চাকরি, ব্যবসায়, শিল্প বা বাণিজ্যে
অন্ন সঙ্কুলান করিয়া উঠিতে পারিতেছে না, তাহার উপর স্ত্রীলোক
প্রবেশ করিয়া কি করিবে?
এই তিনটি
বিঘ্ন নিরাকরণের একই উপায়-- শিক্ষা। লোকে সুশিক্ষিত হইলে, বিশেষতঃ
স্ত্রীগণ সুশিক্ষিতা হইলে, তাহারা অনায়াসেই গৃহমধ্যে গুপ্ত থাকার
পদ্ধতি অতিক্রম করিতে পারিবে। শিক্ষা থাকিলেই, অর্থোপার্জ্জনে
নারীগণের ক্ষমতা জন্মিবে। এবং এ দেশী স্ত্রী পুরুষ সকল প্রকার
বিদ্যায় সুশিক্ষিত হইলে, বিদেশী ব্যবসায়ী, বিদেশী শিল্পী বা
বিদেশী বণিক, তাহাদিগের অন্ন কাড়িয়া লইতে পারিবে না। শিক্ষাই
সকল প্রকার সামাজিক অমঙ্গল নিবারণের উপায়।
আমরা যে সকল কথা এই প্রবন্ধে বলিয়াছি, তাহা যদি সত্য হয়, তবে
আমাদিগের দেশীয় স্ত্রীগণের দশা বড়ই শোচনীয়া। ইহার প্রতিকারে
জন্য কে কি করিয়াছেন? পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ও ব্রাহ্মসম্প্রদায় অনেক যত্ন করিয়াছেন-- তাঁহাদিগের যশঃ অক্ষয়
হউক; কিন্ত্তু এই কয় জন ভিন্ন সমাজ হইতে কিছুই হয় নাই। দেশে
অনেক এসোসিয়েশন, লীগ, সোসাইটি, সভা, ক্লাব ইত্যাদি আছে-- কাহারও
উদ্দেশ্য রাজনীতি, কাহারও উদ্দেশ্য সমাজনীতি, কাহারও উদ্দেশ্য
ধর্ম্ম, কাহারও উদ্দেশ্য দুর্নীতি, কিন্ত্তু স্ত্রীজাতির উন্নতির
জন্য কেহ নাই। পশুগণকে কেহ প্রহার না করে, এ জন্যও একটি সভা
আছে, কিন্ত্তু বাঙ্গালার অর্দ্ধেক অধিবাসী, স্ত্রীজাতি-- তাহাদিগের
উপকারার্থ কেহ নাই। আমরা কয় দিনের ভিতর অনেক পাঠশালা, চিকিত্সাশালা
এবং পশুশালার জন্য বিস্তর অর্থব্যায় দেখিলাম, কিন্ত্তু এই বঙ্গসংসাররূপ
পশুশালার সংস্করাণার্থ কিছু করা যায় না কি?
যায় না;
কেন না, তাহাতে রঙ্ তামাসা কিছু নাই। কিছু করা যায় না; কেন না
তাহাতে রায় বাহাদুরি, রাজা বাহাদুরি, ষ্টার অফ ইণ্ডিয়া প্রভৃতি
কিছু নাই। আছে কেবল মুর্খের করতালি। কে অগ্রসর হইবে?
বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়
(সমাপ্ত)
_____________________________________________________________
(ক) সে যুগে বা, তার আগে
থেকেও যে এ ব্যাপারে লোকনিন্দার ভয় ছিল তা বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর
'ব্যাঘ্রাচার্য্য বৃহল্লাঙ্গুল' (ব্যাঙ্গাত্মক রচনাবলী লোকরহস্যের
অন্তর্গত) দেখিয়েছেন। -- পুষ্পেন্দু
সুন্দর মুখোপাধ্যায়
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)