ব্ল্যাক ফরেস্ট

ব্ল্যাক ফরেস্ট

‘মন রয়না রয়না রয়না ঘরে…’
অগস্ট ১৪, ২০০৭

কোলের সন্তানটি যখন বাসা ছেড়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে যায় নভোনীল অসীমের টানে, আরও বড় পৃথিবীর হাতছানিতে, মায়ের মনে তখন এক উদাস বিষণ্ণতা বাসা বাঁধে। শূন্য নীড়- অসুখ। ইংরেজিতে তার নাম শুনেছি empty nest syndrome. সে অসুখ যে আমাকেও আক্রমণ করতে পারে, স্বপ্নেও ভাবিনি।

নিনা যেদিন উচ্ছল নদীর মত লাফাতে লাফাতে কলেজের হস্টেলে চলে গেল, সেদিন আমার জগৎ শূন্য, বাড়িটা একদম ফাঁকা। ওর গন্ধ, এককোণে টেনিস র‍্যাকেট, দেয়াল জোড়া ছোটবেলার ছবি, বালিশের কোনায় উলটে রাখা বই – Anne of Green Gables… চারদিকে ও, অথচ ও নেই।

মুখ ফেরাই। ওর ঘর থেকে আমার ঘর। টেবিলের ওপর ক্লাস ওয়ানে মাদারস ডের উপহার, ছোটবেলায় বানানো মাটির ডেলার হার্ট, কাঁচা হাতে লেখা – I love my Ma. চোখে পড়ল দেয়ালে শিশু হাতের ছাপ – কত শাসন করেছিলাম সেদিন। আজ মাকড়সার জাল সরিয়ে সেই ঝাপসা শৈশব ছোঁবার চেষ্টা করি।

নিজের ওপরই রাগ হল। পরিবর্তন ই তো জীবনের নিয়ম। আমিই না একদিন এক বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম ‘তোর ছেলে ন্যাপি পরে পায়ে পায়ে চিরকাল ঘুরুক তাই কি চেয়ে ছিলি?’

একহাতে ঝাড়ন আরেক হাতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালিয়ে ঠিক করলাম ঝেঁটিয়ে বিদায় করব এ মন-কেমন করা মুড। এমন সময়ে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ভেদ করে মনে হল ফোন বাজছে। কর্তার গলা- “এই যে তোমার বড় কন্যে, নিউ ইয়র্ক থেকে।”

“তুমি নাকি ডিপ্রেসড, মা?” রিনটির গলা। “কেন, নিনা কলেজে চলে গেছে বলে? আমার বেলায় তো…?”

সেই চিরন্তন সিব্লিং রাইভালরি! অথচ দুই বোনে মিলে আমার পিছনে লাগতে একবারও পিছপা হয়না। বলি,

“তোমার সময় তো ও ছিল বাড়িতে। এখন মনে হচ্ছে আমার মাতৃদায়িত্ব শেষ। এত বছরের একটা ডেডিকেটেড কেরিয়ারের সমাপ্তি। রিটায়ারমেন্ট।”

“না, না, সে ভেবনা। অত সহজে তোমাকে রিটায়ার করতে দিচ্ছিনা। জাস্ট স্টেপ ডাউন।” হি হি হাসির আওয়াজ। আমি চুপ করে থাকি।
“শোন,” ও বলে ওঠে – “আমার সঙ্গে বেড়াতে যাবে, ইউরোপে?” একটু থেমে, “জাস্ট তুমি আর আমি?”

আমি ঢোক গিলি। একরাশ ক্রন্দসী মেঘের মাঝে এক ঝলক আলো।তবু…

“আমার দুটো কনফারেন্স আছে। একটা জার্মানিতে, আর প্যারিসে, আরেকটা।ঠিক উনিশ দিনের গ্যাপে। দুবার আসা যাওয়ার টিকিট দেবেনা।গিয়ে পড়লে ইউরোপে মাঝের দু-হপ্তা কাটান কোন ব্যাপারই নয়। তাই ভাবছিলাম তুমি যদি আমাকে জয়েন কর… দেখ মা, এরকম সুযোগ কিন্তু বার বার আসেনা।”

বলি, “তোমার বাবার তো ছুটি নেই।”

“আরে, বাবার তো অফিস আছে, তোমার তো নেই। চল না। থাকার খরচা লাগবেনা, জাস্ট টিকিট।”

“আচ্ছা ভেবে দেখি।” বলে ফোন ছাড়লাম।

“তাই আবার হয় না কি? লোকে কী বলবে?” বলি আমি। কাগজ থেকে মুখ না তুলে কত্তা বললেন, “লোকের কথা তুমি যে এতো পাত্তা দাও, জানতাম না তো।”

“না, তুমিই বা কী ভাববে,বল? আমাকে ফেলে দিব্যি ড্যাং ড্যাং করে বেড়াতে চলে গেল ইউরোপে।”

হেসে উঠল ও। “না, না, আমি মোটেই তা ভাবব না।” একটু থেমে, “সাহস থাকে তো যাও।”

“সাহস? কীসের সাহস? মেয়েমানুষ বলে?” গায়ে লাগল কথাটা। সাহস তুলে কথা?

“না তো কি? যাও,না। আসলে সাহসেই কুলবে না।”

“কী বললে? সাহসে কুলবে না? আমি একটা শিক্ষিতা মহিলা, একা একা চলাফেরা করতে ভয় পাই ভেবেছ?”

ওর ঠোঁটের কোনার মুচকি হাসি দেখে আরও রাগ ধরে গেল। দেখিয়ে দিতে হবে। সেদিকে বাঁকা চোখে চেয়ে ফোন করলাম রিনটি কে।

“ডিসাইডেড।”
“আসছ?”
“ইয়েস।”
“দারুণ মজা হবে। আমি আইটিনারি পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখ কোন পার্টটা…”

জানালাম জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টের লেগটা আমি তার সঙ্গে কাটাব ঠিক করেছি, দিন সাতেক। ঠিক হল ফ্রাঙ্কফুর্টে নেমে লোকাল ট্রেনে করে রদেনবারগে এসে আমি ওকে মিট করব।

জীবনে কখনো একা একা কোথাও যাইনি। সানফ্রানসিসকো থেকে আমস্টারডাম, সেখান থেকে নড়বড়ে ছোট প্লেনে চেপে এলাম ফ্রাঙ্কফুর্ট। এই বার একটু কেমন যেন লাগতে শুরু করল। ছোট্ট প্লেনে ওঠার কায়দা আগেকার দিনের মত। দোদুল্যমান সিঁড়ি বেয়ে ক্যারি-অনটা একেক ধাপ সিঁড়িতে হেঁচড়ে কোনমতে হাঁপাতে হাঁপাতে খুঁজে পেলাম যখন আমার নির্ধারিত সিট, ধপ করে বসে মনে হল সেই কথাটা – একেবারে মরে না গেলে প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই দামী।

ফ্রাঙ্কফুর্টে নেমে অনেক বেড়া-ডিঙানো- দৌড়। টার্মিনাস দুই থেকে এক এ যেতে হবে। তা নাকি কোন স্কাইট্রেনে চেপে। সে ব্যাপারটা আবার কী তাই বা কে জানে। ‘বানহফ’ একটা ব্যাপার আছে সেটা খুঁজে বার করতে হবে। সময় খুব কম, কাজেই প্রায় ওয়ান্ডার উয়োমানের কায়দায় উড়ে গেলাম টিকিট ঘরের খোঁজে।গিয়ে বলতে হবে প্রথমে, আমি জার্মান বলতে পারিনা – ইক্শ শপ্রেশা কাইন ডয়েশ।তারপর ‘রদেনবারগ’ লেখা চিরকুটটি ধরিয়ে দেব। এই আমার প্ল্যান। বিড়বিড় করে মুখস্থ বলতে বলতে চলেছি, ‘ইক্শ শপ্রেশা কাইন ডয়েশ,ইক্শ শপ্রেশা কাইন ডয়েশ’।

এমন সময় দেখি টিকিট ঘরের মেয়েটি, আমারই মতন বাদামী গায়ের রঙ- পরিষ্কার ইংরেজি তে আমাকে ডাকছে। “মে আই হেল্প ইউ?”

জানতে পারলাম ‘বানহফ’ মানে রেলের ইষ্টিশন। আমাকে যেতে হবে ওয়াজবারগ বলে এক জায়গায়, সেখান থেকে স্তাইনবারগের ট্রেনে করে রদেনবারগে নেমে পড়তে হবে।

“খেয়াল রেখ ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৯ নম্বরে গিয়ে স্তাইনবারগের ট্রেন নিতে হবে কিন্তু। স্তাইনবারগ থেকে রদেনবারগ।” মেয়েটি একমুখ হাসি উপহার দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ডাকলে,
— “নেক্সট!” 

ওয়াজবারগের ট্রেন তো এল, কিন্তু ঢুকি কী করে? এক ভদ্রলোক আমাকে প্রায় ডিঙিয়ে একটা লাল বোতাম টিপলেন। চিচিং ফাঁক। দেখাদেখি উঠে পড়লাম।
চোখটা জ্বালা করছে। বুঝতে পারছি আর খুলে রাখতে পারছিনা। যে কোন মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়ব। হয়ত জানতেও পারবনা। কোথায় যেন পড়েছিলাম মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু না ঘুমিয়ে পারেনা। মাথাটা যেন টলছে। মুখটা একদম তেঁতো। ভীষণ জল তেষ্টা পেয়েছে। ট্রেন চলতে শুরু করল।
রিনটিকে জানাতে হবে। ও বলে দিয়েছিল, “মা, টেকসট করাটা শেখ। ইউরোপে নেহাত এমারজেন্সি ছাড়া ফোন করনা।” আমাদের দু জনের ই নাকি তাতে গচ্ছা যাবে যাকে ইংরেজি থেকে বাংলা করলে দাঁড়ায়, একটি হাত এবং একটি পা।
কিন্তু কী করি? আধুনিকারা যে কি করে পাঁচ আঙ্গুলে ফোনের ঐ ছোট বোতাম অক্ষর টিপে টিপে এত কথা বলে ভেবে পাইনা। অগত্যা চেষ্টা করি। জানিনা পৌঁছল কিনা। আমার নতুন নোকিয়া ফোন, এর ব্যবহার ও ছাই জানিনা। এটা এমারজেন্সি নয়ত কী? ভেবে ফোনই করলাম। টেলিগ্রামের ভাষায় – “রিনটি। মা। ট্রেনে। রদেনবারগ পৌঁছব ৬ঃ৪৯।”

কখন ট্রেনের দুলুনিতে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ শুনলাম – ‘স্তাইন বারগ।’

অ্যাঁ! তাড়াতাড়ি হুড়মুড় করে নেমে পড়লাম। দেখি। দু নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে তের নম্বরে। সব ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল টিকিট ঘরের সুন্দরী। মাঝে সময় মাত্র চার মিনিট, কারণ, এ ট্রেনটা আবার লেটে এসেছে।

ভারি রাগ হল। খালি আমাদেরই বদনাম? অথচ কোলকাতার মেট্রোতে আমি এক মিনিটেরও নড়চড় দেখিনি। জার্মানদের যে এত পাঞ্চুয়ালিটির বড়াই…ফুঃ!

হিড় হিড় করে ক্যারিওন টেনে কোনমতে যথাস্থানে পৌঁছে দেখি ট্রেন ঢুকছে। এবার আর লাল সুইচ টিপতে ভুল হলনা। ঠেকে শিখে গেছি। বেশ খানিক পরে জলদ গম্ভীর স্বরে সুর করে টেনে টেনে কে যেন ঘোষণা করল, ‘র…দেন বারগ অব টবর!’ গাড়িটা গড়িয়ে গড়িয়ে এসে থামল।

ঐ তো রিনটি, গোলাপি টি সার্ট পরা। চোখে প্রায় জল এসে গেল।অনেক ক্ষণ খাবি খেয়ে জলে, যেন এক টুকরো খড় কুটো খুঁজে পেলাম। জড়িয়ে ধরি ওকে।

“দাঁড়াও দাঁড়াও, একটা ছবি নিতে হবে।” বলে উঠল ও। স্মরণীয় মুহূর্ত বৈকি।
“কিছু খাবে, মা? কাছেই স্টেশনের ধারে একটা ষ্টেশনারী দোকান আছে।” বলি, “জল, জল।”

“জল?” রিনটি এদিক ওদিক তাকাল। “এখানে জল বড় একটা কেউ খায়না। এদের বিয়ার খুব ভাল, আর ওয়ার্স্ট- হট ডগের মত।”

মনে পড়ল ছোটমাসির কথা। বালবিধবা, ছোটমাসি নিরামিষাশী, যাচ্ছেন মেয়ের কাছে বিদেশ পাড়ি দিয়ে, সে অনেক দিনের কথা। আমাদের হিংসুক মন, মাসির সরলতার সুযোগ নিয়ে পিছনে লাগতাম —’যাচ্ছ তো মাসি, খাবে কী? খিদে পেলে গরম কুকুর, তেষ্টা পেলে মদ – বিয়ার।’

আপাতত আড়াই ইয়েন গচ্চা দিয়ে এক লিটার জল কিনে ঢগঢগ করে খেয়ে শান্ত হলাম।

‘গ্যাস্তপ জেস্নার’, আমাদের থাকার আস্তানাটি বেশ মনোরম। কটেজ টাইপের বাড়ি, ফুলে ফুলে ভরা।লাল টুকটুকে জিরানিয়াম ফুল জালনার ওপর থেকে, বারান্দায় ঘরে ঢোকার মুখে চার দিক থেকে উপচে মুখ বার করে হাসছে। দেখেই মনটা ভাল হয়ে যায়।দেখি, চেয়ার টেবিল উঠোনে পাতা, ফিস্টি হচ্ছে। ঘটি হাতা জামাপরা, পা অব্ধি লম্বা এপ্রন, ফুটফুটে দুটি মেয়ে পরিবেশন করছে। একজনের আবার বেড়া বিনুনি বাঁধা চুল। যেন গ্রিমস ব্রাদার এর বই থেকে উঠে এসেছে।

এদের পাউরুটির স্বাদ বড় ভাল, অন্য খাবার মামুলি। খাবারের কথায় বলতেই হয় মধুর কথা। অসামান্য স্বাদের মধু খেয়েছিলাম। টোস্টের ওপর বা টক দইয়ের ওপর দিয়ে খায়।গ্রেটা, ঐ বেড়া-বিনুনিবাঁধা মেয়েটি জানাল এ মধু তাদের বাগানে হয়। কোনটা ল্যাভেন্ডারের মধু, কোনটা বা অরেঞ্জ ব্লস্ম হানি।

খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা গেলাম রদেনবারগের টাওয়ার দেখতে। পাথুরে মেঝের গোল চত্বরের মধ্যিখানে এক ভারি উঁচু টাওয়ার। চারপাশে অনেক লোকের জটলা – সবার চোখ ওপরে, ঘুলঘুলির মত এক জালনায়। রিনটি নজর করাল, “একটা লোককে দেখতে পাচ্ছ? হাতে কাপ?”

দেখলাম বটে, হাতে মদিরার পেয়ালা, তারিয়ে তারিয়ে দেখছে ।স্টেজে পর্দার ওপার থেকে দক্ষ অভিনেতা যেমন করে সমবেত দর্শকদের তৌল করেন। এমন সময় ঢংঢং করে আটবার বেজে উঠল ক্লক টাওয়ার।

ঘোরার ক্ষুরের আওয়াজ ভেসে এল পাথরের চত্বরে। চারদিকে চাইলাম। না তো, কোথাও কিচ্ছু নেই। মনে মনে আমাদের সে জগতে নিয়ে যাবার ফন্দি, বুঝলাম। এমন সময় নিচে একটা ছোট দরজা খুলে গেল, যা আগে নজরে আসেনি। ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলেন সেই জানলায় দেখা চরিত্র। হাতে তাঁর লন্ঠন, গায়ের কালো কেপটি ঝাপটা মেরে তিনি যেন নিজেকে লুকোচ্ছেন। আমাদের মধ্যে আশ্রয় খুঁজছেন। দৌড়ে দৌড়ে, পিঠ কুঁজো, মুখে তাঁর শঙ্কা, কে যেন, কারা যেন তাড়া করেছে তাঁকে। খুঁজছে।

ঘোরার ক্ষুরের আওয়াজ মিলিয়ে এল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জানালেন — তিনি হলেন রাতের প্রহরী। হাতের লন্ঠন টি তুলে ধরে,”আমি সব দেখেছি। দেখেছি সে অন্ধকার।ইতিহাস জানে, আমি তার সাক্ষী।” চারপাশে চোখ বুলিয়ে গলা নিচু করে, “বাঁচাও তোমরা আমাকে।বাঁচাও এই রদেনবারগকে।”

একাঙ্ক নাটকের দক্ষ অভিনেতা যেমন গোটা স্টেজটাকে মাতিয়ে, মাড়িয়ে,দাপিয়ে বেড়ান সেই সব কায়দা সাঙ্গ করে তিনি সমবেত জনতাকে আহ্বান জানালেন রদেনবারগকে চেনার অভিযানে। পাইড পাইপার অব হ্যামেলিনের মত তাঁর বাঁশির ডাকে ভুলে আমরা চললাম পিছুপিছু, যুগ যুগান্তর ধরে এ শহরের ওপর যেসব অত্যাচার অবিচার হয়েছে তার ইতিহাস শুনতে শুনতে, অপূর্ব নাটকীয় কায়দায়।সেই সংগে তার ভৌগোলিক দিকটাও দেখা হল। পাহাড় ঘেরা শহরটার আনাচে কানাচে নানান কুলকুল ঝর্নার শব্দ, স্প্রুস আর পাইনের গন্ধভরা বাতাস। দূরে লাল টালি বিশিষ্ট বাড়ির বসতি। সবচেয়ে বড় কথা – শহরটা বেশ ছোটই।

শেষে, একটু আগের মাথায় টপ হ্যাট পরা, মুখে লাল চাপ দাড়ি, হাতে লন্ঠন রাতের প্রহরীর দক্ষ অভিনেতা জানালেন এই আমাদের মত টুরিস্টরাই এ অপূর্ব শহরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। এর নিমজ্জমান অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, রাখবে। কালো কেপ সামলে মাথার টুপিটি যখন মেলে ধরলেন সমুখে তখন তাঁকে কাছের থেকে দেখার সুযোগ হল। সাহেবের বলিরেখার দৈন্য মেকআপের আড়াল ছাপিয়ে প্রকট হল। আমরা সাধ্যমত কাগজ বা ধাতব মুদ্রা ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগলাম। তিনি স্যালুট করে বললেন সেসব কিসসা কাহিনী সাজান আছে এদের মিউজিয়ামে, দেখ।

পরদিন আমাদের প্ল্যান হল মিউজিয়াম দেখা। তারপরই ব্ল্যাক ফরেস্ট যাবার ট্রেনের সময় হয়ে যাবে।

রাস্তা গুলো অনেকটা দার্জিলিং এর রাস্তার মত। পাহাড়ি পথ নিচে নেমে গেছে। দুপাশে নানান রকম দোকান। তবে একটু বেশি সাজান যেন। টুরিস্টদের চমকে দেবার জন্য পোশাকি সাজ।নানান কাঠের ফিলিগরি কাজ, কী সুন্দর। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এদের কু কু ক্লক।

শোনা গেল জার্মানির এই ব্ল্যাক ফরেস্ট হল কুকু ঘড়ির জন্মস্থান। আগে ছিল সান ডায়েল আর বালি ঘড়ি।
ঘড়ির শুরু নাকি চেক দেশের এক শিশি বোতল বিক্রিওলাকে দিয়ে। সে কোথা থেকে এক যন্ত্র আনল, তাতে না আছে আজকের মেকানিজম, না ঘড়ির কাঁটা। কয়টা কাঠের পিস আর নুড়ি পাথর দিয়ে এমন এক সময়যন্ত্র এনে দিল যে তাতে সবার তাক লেগে গেল। তারপর চলল অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা। একশ বছর কেটে গেল ঘড়ির ভেতরকার কল কবজা বানাতে। নানান চেষ্টার পর আঠারোশো শতকে যে যন্ত্র বানান হল তা হল আজকের আধুনিক ঘড়ির প্রপিতামহ। আরো মেজে ঘষে তৈরী হল এমন এক জিনিস যা থেকে দরজা খুলে মুখ বার করবে পাখি আর গেয়ে উঠবে কু কু! এটির জন্য যে কাঠ ব্যবহৃত হয় তা ঐ ব্ল্যাক ফরেস্টের বিশেষ স্প্রুস গাছের ডাল। তাই এ হল কু কু ঘড়ির তীর্থস্থান। জার্মানরা ঘড়ি বড় মূল্যবান মনে করে।

কুকু ঘড়ি

আর ছিল পেস্ট্রি। তার পাশেই চকোলেট। ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় অবশ করা চকোলেট। যা চোখ ধাঁধিয়ে দিল তা হল দামের ছোট্ট মার্কাটি। তাও আমরা লোভ সামলাতে পারলাম না, এবং বাকি দিনটা ঐ খেয়েই চালিয়ে দিলাম।

রদেনবারগ থেকে আমাদের গন্তব্য ফ্রাইবার্গ। এটি ইউনিভার্সিটি টাউন। সেখান থেকেই আমাদের ব্ল্যাক ফরেস্ট হাইক করার প্ল্যান।

ট্রেনের সে অপূর্ব জার্নিটার কথা ভুলবনা। পাহাড়ের কোলে ঘন সবুজ বন। তার কোল ঘেঁসে চলেছে আমাদের রেল গাড়ি। চোখে যা দেখেছিলাম তা তো বটেই কিন্তু আজ বহু বছর পর মনে হয় সবচেয়ে স্মরণীয় হল মা মেয়ের সেই ছুটির অবসরটি। সেটা যে কত দুর্মূল্য পরেকার জীবনে বুঝতে পেরেছি।

ট্রেনের সে অপূর্ব জার্নি
মা মেয়ের সেই ছুটির অবসর

ফ্রাইবার্গে নেমে রিনটি দেখি একটু হকচকিয়ে গেছে। যে ডিরেকশন ওর লেখা আছে তার সংগে মিলছে না। সে যুগের ফোনে আজকের মত জিপিএস পাওয়া যেত না।ফোন কাজও করছে না। আমরা এক গোলাকার চত্তরে এসে পড়েছি যার ছ দিকে ছয় রাস্তা গেছে বেঁকে। পারীর সাঁঝে লিঝের মত। কিংবা মনে করুন নিউ মার্কেটের ভেতরে ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভিতরের ঠিক গলিটা খুঁজছেন।
এক মহিলা এসে থামলেন, সাইকেলে ব্রেক কষে, “ইউ লস্ট?”
আমরা মাথা নাড়ি। চিরকুটে হোটেলের নাম পড়ে বললেন, “খুব কাছে।“ ধাঁ করে এক পাক ঘুরে আঙুল তুলে বললেন -“ঐ রাস্তা ধরে গিয়ে দেখবে ডায়াগোনালি ক্রস করেছে যে রাস্তাটি, নাম বরসঠখোসক সটরাট, (না কী, খটমট নাম) সেখানে লেফট নিলেই দেখবে ঐ হোটেল।”

কীসের কী? সে রকম কোন রাস্তা তো মোটেই এল না। এদের নাম উদ্ভট -অনেক কনসোনেন্ট নো ভাওয়েল আর ওরা যখন উচ্চারণ করে তার সংগে বানানের কোন মিল নেই।

আধঘণ্টা মাল টেনে টেনে হাঁটার পর দেখি এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, মাথায় স্কটিশ টুপি, লাল টুকটুকে মুখ, কোথা থেকে এসে আমাদের জিগ্যেস করছেন কী যেন। ইংলিশ? নাইখ।

খুব ধীরে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে ইলসে গুড়ি। দিনের আলো কমে আসছে। রাত সাড়ে আটটা ।

হোটেলের নাম বলি। রাস্তার নাম। উনি মাথা নাডেন। ভুল রাস্তা ।

এমন সময় দেখি তিন বন্ধু হাসতে হাসতে চলেছেন রাস্তা দিয়ে। এঁদের বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাট। বৃদ্ধ লাঠিটা এগিয়ে এঁদের পথ রোধ করলেন ।কী যেন বললেন। একজন এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলেন আমাদের, “ইউ লস্ট?”

ইনিও টুরিস্ট, ডাচ। ইংরেজি ও জার্মান দুই ই জানেন। চলল তর্জমা। সবচেয়ে কনসার্নড টুপি পরা সেই জার্মান বুড়ো। ভুরুতে গিঁট লাগিয়ে হাঁকলেন, “রাত বিরেতে কোথায় দুজন বিদেশি মহিলা রাস্তা খুঁজে মরছে? ওদের বল না কোথাও একটা চেক ইন করতে। লাঠি তুলে দেখালেন, ওই তো আলো জ্বলছে ঐ হোটেলে।

“আহা বুঝছ না কেন ওঁদের যে অলরেডি রিজার্ভেশন করা আছে।” ডাচ বোঝালেন (বোধহয়)।

এদিকে আর দুই বন্ধু, একজন গ্রিক, আরেক জন ইতালিয়ান অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। পাবে যাবেন শুক্রবার সন্ধ্যেটায়, তা না, মাঝে এই উটকো ফ্যাকড়া।

ডাচ ই একমাত্র সব কটা ভাষায় পারদর্শী। তিনি এক একজনকে একেক ভাষায় আমাদের সমস্যা জানালে এক একজন এক এক রকমের সমাধান দেন। ইতালিয়ান হাতঘড়ির দেখিয়ে বললেন এরপর গেলে যে আর কিছুই পাব না। “নো ল কাপী রো!”

অতঃপর ঠিক হল ডাচ বরং আমাদের কে নিয়ে যে কোন একটা হোটেলে যাক। সে কথা বলাতে সাহায্য করতে পারবে। সেখান থেকে ফোনে ডিরেকশন পেতে অসুবিধা হবে না।

আইডিয়াটা গ্রিকের। আমাদেরকে “কালি নিকতা” (মানে গুড নাইট) জানিয়ে পাব মুখো চললেন, ইতালিয়ান বন্ধুকে নিয়ে।। সত্যি এতে কাজ হল। আমাদের হোটেল থেকে স্বয়ং মালিক গাড়ি পাঠিয়ে যখন আমাদের তুলে নিলেন তাতে সবাই ইম্প্রেসড।

হোটেলের ঘরে নিশ্চিন্তে শুয়ে মনে পড়ল জার্মান বৃদ্ধের মুখ। দুজন ভিন দেশি মহিলার জন্য তাঁর উৎকন্ঠা ভাষার বেড়া ভেদ করে আমার মন ছুঁয়েছিল। কেমন যেন নেগলেকটেড লাগছিল তাঁকে শেষের দিকে। এমন কি তাড়াহুড়োয় তাঁকে ধন্যবাদ টুকু ও জানান হয়নি। ছি ছি।

আজ আমাদের প্ল্যান ব্ল্যাক ফরেস্ট। তার জন্য ফ্রাইবারগ থেকে আমাদের যেতে হবে চারটে স্টেশন পরে কিরচ জারটেনে। ট্রেনের জালনা দিয়ে দেখা যাচ্ছে চৌকো চৌকো বাড়ি, মাথায় লাল টালির ছাদ আর কাছে এলে দেখা যায় সূর্যমুখী ফুল আর লাল টুকটুক জিনিয়া। কিন্তু কোথায় সে গভীর ঘন কৃষ্ণ অরণ্য? ঘুটঘুটে জংগল, মস আর সবুজ সবুজ কালোর লাগা ঝুপঝুপে বন,ঝুড়ি-নামা গাছ, যেখানে হ্যানসেল আর গ্রেটেলের সেই ডাইনির বাড়ি ?

কিরচ জারটেন স্টেশন উত্তরপাড়া বা সাঁতরাগাছি গোছের মফঃস্বল শহর। স্টেশনের সংগে লাগানো সাইকেল স্টল। ষাট বাষট্টি বছর বয়সের এক পাকা মাথা মহিলা, ফুল ফুল স্কার্ট পরা ট্রেন থেকে নেমে সাইকেলের তালা খুলে, তাতে চেপে সোঁ করে কোথায় চলে গেলেন।

এখানে ৭২১৬ নং বাসে করে আমাদের যেতে হবে সেনট পিটার শহরে। স্থানীয় এক মহিলা, ইনিও ষাট – বাষট্টি হবেন আমাদের জার্মান ভাষায় যা বললেন তা বোধহয় – আমিও যাব ঐ বাসে। দেখিয়ে দেব। বাস এল। মহিলার দেখা দেখি আমরাও উঠে বসলাম। নামার পরে উনি হাত নাড়লেন — “চাও!” বলে চুমু ছুঁড়ে দিলেন।

রিনটি হেসে বলল, “আমাদের ইতালিয়ান ভেবেছে বোধ হয়। ইতালির থেকেও দূর থেকে কেউ আবার আসে নাকি এখানে?”

আমার মনে পড়ল বিভূতিভূষণের সেই অসামান্য ছোট গল্পটির কথা।
“কেষ্ট লগর চেন? হুই তারও পরে।” মনে মনে হাসলাম। রিনটিকে এর রস ঠিক অনুবাদ করে বোঝান যাবেনা। যদিও বহু বছর প্রতি রবিবার ওদের টেনে টেনে বাংলা ইসকুলে নিয়ে গেছি।

সেনট পিটার থেকে সেনট মারগেন মাইল চারেক দূর। এর মাঝেই সে কৃষ্ণ অরণ্য। কাছে এসে পড়লাম। জানা গেল এরই চার পাশে লোকে হেঁটে বেড়ায়। মন্দ কী?

রিনটি বলে, “ধ্যুৎ এতো পাড়ার ডাক পণ্ড।” একটু পরে দেখি মেয়ে উধাও। তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি এক পথ এঁকে বেঁকে কোথায় গেছে। পাকা রাস্তা হলেও গাছ গাছালি বেড়েছে বটে। হাঁটতে মন্দ লাগছে না। অনেক দূরে দূরে এক একটা বাড়ি। সুন্দর, কিন্তু কেমন গা ছমছমে। এখুনি যেন রেড রাইডিং হুডের দিদিমা বেরিয়ে আসবে —নাকি সুরে “তোঁকে খাঁব বলে সোনা।”

রিনটি আবার সে রাস্তা ছেড়ে আরেক পাকদণ্ডী পথ ধরল। এবার আমরা একেবারে ‘on the top of the world looking down on creation…’ মখমলের মত পাহাড়ের ঢল গা, মাথার ওপর সোনা গলা চড়চড়ে রোদ। একটা বেঞ্চি পেয়ে বসলাম। দেখি, গাছের গায়ে ক্রুশবিদ্ধ জিশু। বলি, “চল রিনটি, এবার ফিরি।”

“দাঁড়াও না, তোমার একটা ছবি তুলি। ক্যাপশন -Jesus, have mercy on me.” ক্লিক এর পরেই সে আবার অদৃশ্য। খানিক পরে দূরের একটা ঝোপ থেকে মুখ বার করে বলে,  “অসাম, এখানে এস।” 

ঐ কাদা মাড়িয়ে যাব কী করে? পাকদণ্ডী পথে নিচে নেমে দেখি, একদম নিঝুম পথের- পাঁচালী পথ, পাশ দিয়ে এক ঝোরার কুলকুল, গুড়গুড় কত রকম আওয়াজ। নূপুর পরে নুড়ির ওপর নাচতে নাচতে চলেছে যেন শব্দ লহরি।

তারপর মনে হল যেন সাইকেল আসছে। এ পথে সাইকেল আসবে কী করে? পথ যত পাতার ছায়ায় অন্ধকার হতে লাগল, পায়ের নিচে মস আর ফার্নের বনে আমি হারিয়ে যেতে লাগলাম সাইকেলের ঘুণ্টির আওয়াজ ও তত বাড়তেই লাগল। ‘রিনটি, রিনটি’ করে ডাকতে লাগলাম। প্রতিধ্বনি ফিরে এল। বনের চারদিক সব কেমন এক রকম। কোন দিক দিয়ে এসেছিলাম গুলিয়ে ফেলেছি।নিজের চারদিকে এক পাক ঘুরে যত এগোই সেই সাইকেল চলা ঝি ঝি ঝি ঝি কড় কড় কড় কড় শব্দ বাড়তে থাকে।

“ইউ লস্ট?” কে যেন বলে উঠল।
“ইয়েস।” কেঁদে উঠি আমি।
একটু পরে দেখি ঝোপের ওপারে এর বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা হাত ধরাধরি করে আসছেন। তাঁরা আমাকে সে জঙ্গল  থেকে উদ্ধার করলে আমি জিগ্যেস করি, তোমরা কি সাইকেল করে যাচ্ছিলে এর পাশের কোন রাস্তা দিয়ে?

“না, ওটা বনের পোকার আওয়াজ। কত রকম পোকা যে আছে, কেউ কেউ গোটা গাছ চেটে পুটে খেয়ে সাবাড় করে দেয় । খুব সাবধান, মানুষ তো কোন ছাড়। তবে এই সব গাছ যে দেখছ, এদের বয়স একশো বছরের ও বেশি। এদের কোন পোকা কবজা করতে পারে না।”

একটা গ্রাম গোছের জায়গায় এসে পড়লাম। মনে হয় এখান কার মানুষ তেমন ধনী সম্প্রদায়ের নয়। হাঁস মুরগী পালন করে। বেগুনের পাশে গাঁদা, জামা কাপড় শুকোয় দড়িতে মেলে। সেই সংগে দেখলাম অনেক বাড়িতে সোলার প্যানেল লাগান। কুটির টাইপের বাড়িতে সৌখিন পর্দা লেসের। আর প্রতি বাড়ির বাগানে ছোট কাঠের বাক্সে ট্রিনিটি। আমাদের তুলসী মঞ্চের মত।

টং টং টং গরুর গলার ঘন্টা ভ্যালির ঢালে। আর আরেক চুড়োর ওপর থেকে আমার মেয়ের ডাক, “মা!”

“আর যে পারছি না, রিনটি।”
চুড়োয় উঠে দেখি আমরা ঠিক মাঝখানে— দু পাশে দুই চার্চের ক্রস দুদিকে দেখা যাচ্ছে। সেনট পিটার আর সেনট মারগেন দুটোই এখন পাঁচ মাইল হাঁটা পথ – লেখা আছে ফলকে।

সংক্ষেপে — সেদিন সাড়ে বারো মাইল পথ হেঁটেছিলাম। এবং দিনের শেষে বাড়ি বাড়ি মন করছিল।

এরপর অনেক বেড়ান হয়েছিল। ফ্রাইবারগের ইউনিভারসিটি, ফুশন এ পাগলা রাজার প্রাসাদ, ইন্টারল্যাকেন দিয়ে সুইৎসারানড মাড়িয়ে প্যরিস…কিন্তু সে গল্প আরেক দিনের।

এখন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে এসেছি পৃথিবী ঘুরে, অনেক রাতে। ভোরবেলায় উঠে দেখি সব কিছু ঠিক ঠাক ই আছে। তবু আমার সংসার, আমার বাগান যেন আমার গলা জডিয়ে ধরে শুধোল, “কোথায় গেছিলে তুমি এতদিন? কদ্দিন দেখিনি।”
নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।

দেখি, টমেটো গাছটায় চারটে ফুল এসেছে। তিনটি লিলির পাপড়ি খুলেছে,  গন্ধরাজে  বাতাস ম ম। আর ঠিক ঘরে ঢোকার মুখে ঘাসের ওপর একটি শিশির বিন্দু টলমল করছে।

জন্ম ও বড় হওয়া কলকাতায়। এখন ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। বাঙলা ও ইংরিজি দুই ভাষাতেই লেখার চেষ্টা। বাঙলা ছোট গল্প ও উপন্যাসিকা ‘নবকল্লোল', 'শুকতারা', 'উৎসব', 'শঙ্খ'ও আরও নানা পত্রিকায় প্রকাশিত। বাঙলা বই — ‘আমার বাস কোথা যে’ (২০০৩-দেব সাহিত্য কুটির) ইংরাজী লেখা —Shadow Birds—Story of a Young Girl During the Partition of India (Published 2019 available in Amazon) Glass Bangles — awarded --Katha contest 2003, published in India Currents Magazine শখ — দেশ ভ্রমন, বাগান, শিশু-সঙ্গ, আরো অনেক কিছু। সবচেয়ে আনন্দ —আপন মনে লিখতে। লেখক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ —পিতৃদেব শ্রী নারায়ণ সান্যালের শেষ বই রূপমঞ্জরীর শেষ অধ্যায় সম্পূর্ণ করা।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • BIKASH CHANDRA BHATTACHARYYA , October 21, 2022 @ 10:20 am

    কি ভালো যে লাগলো, কি বলবো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দমবন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। অপূর্ব! অনবদ্য! অসাধারণ! অভূতপূর্ব! আর বিশেষণ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সহজ সরল সাবলীল ভাষায় লেখা অথচ শক্ত বাঁধনে বাঁধা এই কাহিনী সব ধরনের পাঠকদেরই ভীষণ ভালো লাগবে। লেখার ধরণ দেখে আমার স্বঘোষিত গুরুদেব মহান সাহিত্যিক ৺নারায়ন সান্যাল মহাশয়ের কথা মনে পড়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *