বিপ্লবী-দার্শনিক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবনের সূচনাপর্ব হরিনাভি স্কুল, সহযোগীরা বন্ধুরা

বিপ্লবী-দার্শনিক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবনের সূচনাপর্ব হরিনাভি স্কুল, সহযোগীরা বন্ধুরা

 

ইংরেজি শব্দ ‘Enlightenment’-এর এক অপূর্ব বাংলা প্রতিশব্দ নির্মাণ করেছিলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত: ‘সন্দীপনকাল’ (অলোকরঞ্জন ৬)। যদিও আমরা ‘Enlightenment’-এর বঙ্গীয় রূপ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছি ‘আলোকায়ন’ বা ‘আলোকপ্রাপ্তি’-র মতো শব্দকে, তবু নিকষ অন্ধকারে সুষ্পষ্ট প্রদীপশিখা জ্বলে ওঠার ব্যঞ্জনাটি যেন মূর্ত হয় একমাত্র ‘সন্দীপনকাল’-এই।  

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে আঠারো-উনিশ শতক হল এই সন্দীপনকাল। অন্ধকার থেকে আলোর অভিমুখে যাত্রা। বহুলপ্রচলিত ও অসংখ্যবার ব্যবহৃত এই উপমাটিকে যদি সরিয়েও রাখতে চাই, তবু এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সে-সময় বাংলায় ঘটেছিল এক অভূতপূর্ব সামাজিক-সাংস্কৃতিক-বৌদ্ধিক বিপ্লব। আর ‘ভারতীয় আধুনিকতা’ নির্মাণের পাকা সড়কটির অভিমুখ নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল সেই বিপ্লবের শক্তি ও দুর্বলতার দ্বারা।

বাংলার ইতিহাসের সেই সন্ধিমুহূর্তে, ১৮৬৬ সালে, কলকাতার অনতিদূরে রাজপুর-নরেন্দ্রপুরের কাছে হরিনাভি গ্রামে এক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। লোকমুখে স্কুলটির পরিচয়: হরিনাভি স্কুল। স্কুলের প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত আমাদের বর্তমান আলোচ্য নয়, তবে এটুকু জনে রাখা দরকার যে, এই বিদ্যালয়-স্থাপনের পটভূমিতে একদিকে সনাতনী হিন্দু ধর্ম এবং উদারনৈতিক ব্রাহ্মবাদ, অন্যদিকে গ্রাম্য জমিদারের রক্ষণশীলতা এবং নব্যশিক্ষিত যুবসম্প্রদায়ের মুক্তচিন্তা—ইত্যাদি পরস্পরবিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে এক তীব্র দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল ছিল। এ-কথারও উল্লেখ প্রয়োজন: শিবনাথ শাস্ত্রী, বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ব্রাহ্মনেতা উমেশচন্দ্র দত্ত, রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষক জ্ঞানচন্দ্র ভট্টাচার্য (যিনি বালক রবিকে পড়িয়েছিলেন কুমারসম্ভব ও ম্যাকবেথ) এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি এই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের দায়িত্বপালন করেছেন। বিধানচন্দ্র রায়ের পিতা প্রকাশচন্দ্র ছিলেন অন্যতম শিক্ষক। পরবর্তীকালে, ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত, এখানে পড়িয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়; তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনাও এই স্কুলেই। হরিনাভি স্কুলের ছাত্ররা—যাঁদের মধ্যে অন্যতম নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পিতা জানকীনাথ বসু, কিংবা পরবর্তীকালে সংগীতস্রষ্টা সলিল চৌধুরী—প্রথম থেকেই বাংলার শিক্ষাসংস্কৃতিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। (দ্র.হরিনাভি স্কুল: ইতিহাসে ও স্মৃতিকথায় দেড়শো বছর)।

সোমপ্রকাশ পত্রিকা
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
হরিনাভি স্কুল

উনিশ শতকে সন্দীপনকালের আভায় যে-প্রতিষ্ঠানের জন্ম, বিশ শতকের সূচনায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সেখানকার ছাত্ররা যে সহজেই আলোড়িত হবে, এতে আশ্চর্য কী! সেই সময়ের ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির চেতনার যে ‘প্রসার’ ঘটেছিল, সেই প্রসারিত পথেই প্রথমে জাতীয়তাবোধ, এবং পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদের, বিস্তার।

বিংশ শতকের একেবারে প্রথমেই লর্ড কার্জনের পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ গ্রহণ করল ব্রিটিশ সরকার। এই প্রয়াস বাংলায় এক অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়ায় ‘স্বদেশী আন্দোলন’-এর জন্ম দিল। আসলে এই আন্দোলনের আগের কুড়ি-তিরিশ বছর ধরে, অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষের দশকগুলিতে, ভারতের নানান প্রান্তে নীরবে চলেছিল জাতি-নির্মাণের কাজ। সেই সময় প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে ক্রমে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল, ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বেড়ে উঠছিল, জাতীয়তাবাদী ও সম্প্রদায়ভিত্তিক জাতিচেতনার বিস্তারের পাশাপাশি বাংলায় সাহিত্যের মাধ্যমে ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছিল দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের ধারণা। পটভূমি ছিল প্রস্তুত; কার্জনের ঘোষণা শুধু অগ্নিসংযোগ করেছিল জমে-ওঠা বারুদের স্তূপে।          

রাজপুর-হরিনাভি-কোদালিয়া অঞ্চলে স্বদেশী আন্দোলনের প্রবাহকে প্রসারিত করতে হরিনাভি স্কুলের যে-সকল বেপরোয়া ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, বিপ্লবী-দার্শনিক মানবেন্দ্রনাথ রায় তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। জীবনের প্রথম পর্বে ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিপ্লববাদে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে অবশ্য বাংলা তথা ভারতের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে, চারটি মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল মানবেন্দ্রনাথ রায়ের কর্মকাণ্ড: এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। রাজনৈতিক বিশ্বাস, দার্শনিক দৃষ্টি ও মননে এসেছিল গভীর পরিবর্তন। জাতীয়তাবাদ থেকে আন্তর্জাতিকতাবাদ, মার্কসবাদ থেকে নব-মানবতাবাদে তাঁর উত্তরণ। একদিকে ভারত ও চিনের মতো এশিয়-উপনিবেশগুলির রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যদিকে পুঁজিবাদী শোষণ-জাল থেকে সারা পৃথিবীর শ্রমিক ও কৃষকের  মুক্তি—এই দুই লক্ষ্যকে একই সূচীমুখে স্থাপন করার উদ্দেশ্যে তিনি ব্যয় করেছিলেন তাঁর যাবতীয় চিন্তা ও জীবনীশক্তি।

বিপুল ও বিচিত্র কর্মধারায় চালিত মানবেন্দ্রনাথের সাতষট্টি [১৮৮৭—১৯৫৪] বছরের জীবনকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করা দুরূহ কাজ। তবে তাঁর চিন্তাধারার বিবর্তনকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে তাঁর জীবনসংক্রান্ত কিছু নির্বাচিত তথ্যকে কালক্রমে সাজিয়ে তুলতে পারলে পাঠকের কাছে মানবেন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মোদ্যোগের অভিমুখ কিছুটা অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবনের একেবারে সূচনাপর্বের ঘটনাবলী ফিরে দেখার প্রয়াস নেব। 

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১৮৮৭ সালের ২১ মার্চ অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার আড়বেলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। নরেন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মেদিনীপুরের খেপুত গ্রামের খেপুতেশ্বরী মন্দিরের পূজারী। তাঁর পিতা দীনবন্ধু প্রথমজীবনে ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরে তিনি পৈতৃক গ্রাম ও পূজকের বৃত্তি ছেড়ে কলকাতার কাছে আড়বেলিয়ায় একটি স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষকতার চাকরি গ্রহণ করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বসন্তকুমারীর সন্তান নরেন্দ্রনাথ। ১৮৯৯ সালে, চাকরি থেকে অবসর-গ্রহণের পর, দীনবন্ধু চলে আসেন বসন্তকুমারীর পৈতৃক গ্রাম চাংড়িপোতায় (রাজপুর-হরিনাভির পার্শ্ববর্তী)। এর আগেই অবশ্য নরেন্দ্রনাথকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই কোদালিয়া-চাংড়িপোতা গ্রামেই কিশোর নরেন্দ্রনাথের বেড়ে-ওঠা। উল্লেখ্য, এই গ্রামেই রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক গৃহ। এ-অঞ্চলের বর্তমান নাম: সুভাষগ্রাম।

আড়বেলিয়ায় থাকার সময় পিতার স্কুলে নরেন্দ্রনাথের ছাত্রজীবনের সূচনা হয়েছিল। মামার বাড়িতে আসার পর পাশের গ্রাম হরিনাভিতে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ-প্রতিষ্ঠিত অ্যাংলো-সংস্কৃত স্কুলটিতে ভর্তি হলেন তিনি। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ-সম্পাদিত সোমপ্রকাশ পত্রিকায় যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ভারতে ইংরেজ-শাসনের অর্থনৈতিক শোষণের দিকটি নিয়মিত আলোচিত হত। দ্বারকানাথের ভাগিনেয় শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন বাংলার প্রথম বিপ্লবী দলের সংগঠক। হরিনাভির অনতিদূরে বোড়ালগ্রামে জন্ম হয়েছিল রাজনারায়ণ বসুর, যাঁকে আমারা ‘ভারতের জাতীয়তাবাদের পিতামহ’ হিসেবে চিনি। আবার হরিনাভি স্কুলের ঠিক পাশেই ব্রাহ্মসমাজ, স্কুলের মাস্টারমশাই ও ব্রাহ্মনেতা উমেশচন্দ্র দত্ত ছিলেন যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জাতীয়তাবোধ ও স্বদেশব্রতের এই আবহ নরেন্দ্রনাথের কিশোরমনকে দেশপ্রেমে দীক্ষিত করেছিল। বিশেষ করে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ও শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন তাঁর মায়ের আত্মীয়, এবং তাঁদের পরিবারের কম-বয়সী সদস্যদের উপর ছিল শিবনাথের গভীর প্রভাব।

দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের স্মৃতিতে উমেশচন্দ্র দত্ত একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বালকবয়সে উৎসাহভরে সেটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছিলেন নরেন্দ্রনাথ। সেই সময়েই তিনি স্কুলের বন্ধু ও আত্মীয় হরিকুমার চক্রবর্তী [১৮৮২-১৯৬৩]-র সঙ্গে মেতে উঠেছিলেন দেশের মুক্তির পথ-অনুসন্ধানে। একদিকে, নরেন্দ্রনাথ নিরন্তর খুঁজে চলেছিলেন দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার পথ, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছিলেন বিপ্লবীগোষ্ঠীর সঙ্গে, এমনকি বন্ধু হরিকুমার ও শৈলেশ্বর বসুকে নিয়ে গড়ে তুলছিলেন নিজস্ব বিপ্লবীগোষ্ঠী। অন্যদিকে, তিনি আধ্যাত্মিক সত্যের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মঠে-আশ্রমে, দীক্ষিত হচ্ছিলেন একাধিক গুরুর কাছে। বলা যায়, পিতার কাছে সংস্কৃত-শিক্ষা ও শাস্ত্র-পাঠ তাঁর কিশোরমনে প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ও আধ্যাত্মবাদের প্রতি যে-আকর্ষণ তৈরি করেছিল, ভারতীয় সভ্যতার যে-সমৃদ্ধশালী ছবি তাঁর মনে ফুটে উঠেছিল, তার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের অধীন ভারতের দুর্দশাময় পরিস্থিতির কঠোর বৈপরীত্যই তাঁকে বিপ্লবের পথে উদ্বুদ্ধ করে।

এ-কথা সকলেই জানেন, ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ-বিষয়ক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সারা বাংলায় যে-অভূতপূর্ব প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে, তাতে বাংলার বিভিন্নপ্রান্তের স্কুল-কলেজের ছাত্র-যুবকের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। সে-সময় নরেন্দ্রনাথ হরিনাভি স্কুলের ছাত্র। তাঁর জীবনীকার লিখেছেন, কিশোর নরেন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়প্রাঙ্গণে একটি সভা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানশিক্ষক ছাত্র নরেন্দ্রনাথের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সাহসী ও অদম্য এই কিশোর বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর রাজপুরে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ফলস্বরূপ, নরেন্দ্রনাথ—তাঁর বন্ধু বিপ্লবী হরিকুমার চক্রবর্তী এবং শৈলেশ্বর বসু সমেত মোট আট জন—স্কুল থেকে বিতাড়িত হন (Samaren Roy 3-4)।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

যদিও মানবেন্দ্রনাথের জীবনীকার সমীরণ রায় আটজন ছাত্রের বিতাড়িত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন, মানবেন্দ্রনাথের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ও সহযোগী হরিকুমার চক্রবর্তী জনিয়েছেন, রাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা জানানো, এবং উৎসাহভরে তাঁর ঘোড়ার গাড়ি থেকে ঘোড়া খুলে নিজেরা সেই গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়ার ফলে “রাজভক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ নরেন ভট্টাচার্য, সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় (সাতুদা, দেউলি জেলে এঁর মৃত্যু ১৯৩৭) প্রভৃতি ১৩ জন ছেলেকে রাস্টিকেট করেন” (উদ্ধৃতি, ড. প্রসিত রায়চৌধুরী ৪১৭-৪১৮)। ইতিহাসের অধ্যাপক জীবন মুখোপাধ্যায়-প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, সে-সময় হরিনাভি স্কুল থেকে দশজন ছাত্র বিতাড়িত হয়েছিলেন। এই দশজনের মধ্যে সাতজনের পরিচয় চিহ্নিত করেছেন অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়: নরেন্দ্রনাথ, হরিকুমার, শৈলেশ্বর বসু, ভূষণ মিত্র, ধীরেন্দ্র বসু, ননীলাল ভট্টাচার্য এবং শৈলেন বসু (জীবন মুখোপাধ্যায় ৪৩০)। হরিনাভি স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় এঁরা সকলেই কৈশোরকাল অতিক্রম করে প্রায় যুবক হয়ে উঠছেন। হরিকুমারের জন্ম ১৮৮২ সালে,  শৈলেশ্বরের ১৮৮৬ সালে, নরেন্দ্রনাথের জন্মসাল ১৮৮৭, এবং সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে। একেবারে সমবয়সী না-হলেও, এঁরা ছিলেন সমপ্রজন্মের। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর উদ্যম ও সাহসই এই প্রজন্মের বিপ্লবীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

যে-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে সক্রিয় ছিল নব্যশিক্ষার প্রেরণা, যে-বিদ্যায়তনের প্রধানশিক্ষক ছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী—যিনি ১৮৭৭ সালে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে এক বৈপ্লবিক সমিতি গঠন করেছিলেন, এবং সেই গুপ্ত সমিতির সদস্য ছিলেন আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়—সেই বিদ্যালয় ঠিক কোন সমাজবাস্তবতার নিগড়ে বিপ্লববাদী ছাত্রদের স্কুল থেকে বিতাড়িত করতে বাধ্য হয়েছিল? আসলে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই নিজস্ব শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে দেশীয় বিদ্যালয়গুলিকে অনুদান (Grants-in-aid) প্রদানের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে ক্রমে জড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও প্রাথমিকভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিসাধন এবং তার মধ্যে শৃঙ্খলাস্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই অনুদানের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে সরকারের আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভরতার এই নীতির মাধ্যমে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনুমোদনই স্কুলগুলির টিকে থাকার একমাত্র শর্ত হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ শতকের সূচনায় লর্ড কার্জন বুঝতে পারলেন, ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতি এই দেশে প্রত্যাশিত ‘নিরীহ মুরগি’-র বদলে তৈরি করেছে ‘লড়াইবাজ মোরগ’; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে উৎপন্ন হয়েছে “a discontented horde of office seekers” (Suresh Chandra 107)। বিদ্যালয়গুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেল তখন থেকেই। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় যখন দলে-দলে স্কুল-কলেজের ছাত্র সামিল হল এই আন্দোলনে, তখন নানান সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ নিশ্ছিদ্র করা হল। ১৯০৫ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত হয় ‘কার্লাইল সার্কুলার’: যে-সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার ছাত্রদের সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার প্রয়াস থেকে বিরত রাখতে অক্ষম হবে, তার সরকারি অনুদান ও অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষিত হল এই নির্দেশনামায়। পরে, আরও কিছু সরকারি নির্দেশে, সরকারের নীতি অমান্য-করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাশ-করা ছাত্রদের জন্য সরকারি চাকরির রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় (Sumit Sarkar 137-140)। 

সুতরাং, সরকারের ক্রমবর্ধমান চাপে এবং স্কুলের অনুমোদন টিকিয়ে রাখতে হরিনাভি স্কুলের তৎকালীন কর্তৃপক্ষকে নরেন্দ্রনাথসহ অন্যান্য বিপ্লবীছাত্রদের উপর দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করতে হয়েছিল, সে-বিষয়ে নিঃসন্দেহ থাকা চলে। তবে এঁদের প্রতি সেই সময়ের প্রধানশিক্ষক উপেন্দ্রনাথ মিত্র, কিংবা তৎকালীন সম্পাদক বা সভাপতির ব্যক্তিগত মনোভাব ঠিক কীরকম ছিল, তা আজ আর জানার কোনও উপায় নেই।

যাই হোক, হরিনাভি স্কুল থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নরেন্দ্রনাথ ‘জাতীয় বিদ্যাবিদ্যালয়’-এ ভর্তি হলেন। উল্লেখ্য, সরকারি বা সরকার-সাহায্যকৃত স্কুল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে এক বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। রবীন্দ্রনাথসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমর্থন ছিল এই উদ্যোগে; অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান (Suresh Chandra 137)। ১৯০৬ সালে এই বিদ্যালয় থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাদবপুরে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন নরেন্দ্রনাথ। ততদিনে অবশ্য নরেন্দ্রনাথ-হরিকুমার ও অন্যান্যরা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা স্থির করে নিয়েছিলেন: আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে নষ্ট করার মতো সময় এখন আর নেই, দেশের স্বাধীনতাই এখন মূল লক্ষ্য। হরিকুমার লিখেছেন, এখন থেকে বিবেকানন্দের পথই তাঁদের পথ, দেশমাতৃকাই একমাত্র পূজ্য (উদ্ধৃতি, Samaren Roy 4)।
বেলুড়মঠে স্বামী সারদানন্দের মাধ্যমে নরেন্দ্রনাথ ও হরিকুমারের সঙ্গে তৎকালীন বিপ্লবী সংগঠন ‘অনুশীলন সমিতি’-র সম্পাদক সতীশ বসুর যোগাযোগ হয়। এর পর থেকেই তাঁরা সমিতির সক্রিয় সদস্যরূপে কাজ শুরু করেন। তাঁদের উদ্যোগে চাংড়িপোতায় অনুশীলন সমিতির একটি শাখা স্থাপিত হয়। সমিতির সদস্য হিসেবে নরেন্দ্রনাথ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ও রাজ্যের বাইরে বিবিধ কর্মধারায় জড়িয়ে পড়েন; লেখালেখি শুরু করেন বিপ্লবী মতাদর্শে নিবেদিত পত্র-পত্রিকায়। এভাবেই বারীন ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও অবিনাশ ভট্টাচার্য্য-প্রতিষ্ঠিত ‘যুগান্তর’ বিপ্লবী গোষ্ঠী ও পত্রিকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ।

 

১৯০৭ সালে নরেন্দ্রনাথের জীবনে এলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা বাঘাযতীন, যাঁর অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের বিস্তারে তিনি আজীবন প্রভাবিত ছিলেন। বাঘাযতীনের নেতৃত্বে নরেন্দ্রনাথ-হরিকুমার বোমা বানাতে আর রাইফেল চালাতে শিখলেন। চাংড়িপোতায় নরেন্দ্রনাথসহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সংগঠিত দলটি সরকারি ভাষ্যে “অতি পরিচিত ও বাংলায় সব থেকে ভয়ংকর” বিপ্লবী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল (সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ১: ৮৪৪)। এই দলের সদস্যরা অস্ত্র-ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ‘রাজনৈতিক ডাকাতি’-র পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর চাংড়িপোতা (এখনকার সুভাষগ্রাম) স্টেশনে নরেন্দ্রনাথ-হরিকুমারের উদ্যোগে সংঘটিত হল দুঃসাহসিক ডাকাতি। ভারতের জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসে এটিই প্রথম রাজনৈতিক ডাকাতি (“first political decoity in Bengal”, Amiya Bhusan Mondal 5)।

নরেন্দ্রনাথের জীবনে এলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা বাঘাযতীন


এই ডাকাতির পর প্রথমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, পরে অসুস্থ মা-কে দেখতে এলে নরেন্দ্রনাথ ধরা পড়েন। ইতিমধ্যে মুজফফ্‌রপুরে সস্ত্রীক কেনেডি হত্যার দায়ে ক্ষুদিরাম বসু গ্রেফতার হন। ক্ষুদিরামকে বন্দী করার ‘অপরাধ’-এ ১৯০৮ সালের নভেম্বরে নন্দলাল ব্যানার্জি নামের বেঙ্গল পুলিশের এক অফিসার বিপ্লবীদের হাতে খুন হন; এই বিপ্লবীদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যতম। পরবর্তীকালে ‘আলিপুর বোমা মামলা’য় বারীন ঘোষের দীর্ঘদিনের বন্দিত্ব, অরবিন্দ ঘোষের সক্রিয় রাজনীতি-পরিত্যাগ ও অনুশীলন সমিতির উপর ব্রিটিশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় নরেন্দ্রনাথের বিপ্লবী সমিতির সংগ্রামী কার্যকলাপে ছেদ পড়ে। তবে তাঁর বিপ্লবী কার্যক্রম থেমে থাকেনি। বলা যায়, নরেন্দ্রনাথের বিপ্লবীজীবনের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা ঘটল এর পরেই।

এই পর্বে নরেন্দ্রনাথের নেতা বাঘাযতীন বা যতীন্দ্রনাথ। তাঁর নির্দেশেই নরেন্দ্রনাথের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডাকাতি, বিপ্লবীদের অস্ত্র-প্রশিক্ষণ, তাদের নিয়ে মজবুত সংগঠন গড়ে-তোলায় আত্মনিয়োগ। ১৯১০ সালে ‘হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা’-এ বাঘাযতীন ও অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথ ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। প্রায় এক বছর বাদে উপযুক্ত প্রমাণাভাবে বন্দীরা ছাড়া পান। বাঘাযতীনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিপ্লবীদলের কার্যকলাপ তাঁদের পূর্বসূরি অনুশীলন সমিতির নেতা-কর্মীদের থেকে পরিকল্পনাগত ও কার্যগতভাবে ছিল বিস্তৃততর: এই গোষ্ঠীর সদস্যরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনির অন্তর্গত ভারতীয় সেনাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেন, এমনকি দেশের বাইরেও গড়ে-ওঠা বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের ছিল নিয়মিত সংযোগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নরেন্দ্রনাথ ও যতীন্দ্রনাথের সঙ্গে তৎকালীন জার্মান কাউনসেল জেনারেলের যোগাযোগ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্-মুহূর্তে জার্মান-সহযোগিতায় সারা ভারতব্যাপী সশস্ত্র সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন যতীন্দ্রনাথ ও তাঁর সহযোগীরা। এই সময় নরেন্দ্রনাথ একের পর এক দুঃসাহসী ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেন। ১৯১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সংগঠিত গার্ডেনরিচ ডাকাতি-কাণ্ডে ধরা পড়েন, আবার জামিনে মুক্তও হন।

জার্মানের সঙ্গে সামরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে ১৯১৫ সালের এপ্রিলে যতীন্দ্রনাথ তাঁর সর্বাধিক বিশ্বস্ত সহযোগী নরেন্দ্রনাথকে ডাচ্‌ কলোনি বাটাভিয়ায় (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা) পাঠান। রেভারেন্ড চার্লস মার্টিন ছদ্মনামে, হ্যারি অ্যান্ড সন্‌স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে—আদতে যা ছিল হরিকুমার চক্রবর্তী-পরিচালিত বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের একটি আখড়া—নরেন্দ্রনাথের এই প্রথম বিদেশযাত্রা।

সেই বছরই জুন মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন এই খবর নিয়ে যে, সুন্দরবনের রায়মঙ্গলে এস এস ম্যাভেরিক নামের একটি জাহাজ প্রচুর অস্ত্র নিয়ে পৌঁছবে। কিন্তু সাগরতীরে বিপ্লবীদের অপেক্ষা ব্যর্থ হয়, জাহাজ এসে পৌঁছয় না। অগাস্ট মাসে নরেন্দ্রনাথ আবার বাটাভিয়া যাত্রা করেন। দ্বিতীয়বার রওনার আগে যতীন্দ্রনাথের কাছে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এবারে আর অস্ত্র না-নিয়ে তিনি ফিরবেন না। যাত্রাপথে খবর পেলেন, ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে বাঘাযতীনের মৃত্যু হয়েছে। প্রিয় নেতার হত্যার প্রতিশোধের স্পৃহায় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে অস্ত্র-সংগ্রহের চেষ্টা করেন। অবশেষে, ১৯১৬ সালে পৌঁছন আমেরিকার সান ফ্রান্সিস্‌কোয়। ব্রিটিশ পুলিশের নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ছিল তাঁর উপর। তাঁর সান ফ্রান্সিস্‌কোয় পৌঁছানোর ঠিক পরের দিন সকালে সেখানকার খবরের কাগজে বেরল: “Mysterious Alien Reaches America, Famous Brahmin Revolutionary or Dangerous German Spy” (দেবীপ্রসাদ ৩২)।

নরেন্দ্রনাথ বুঝলেন, এদেশে থাকতে গেলে তাঁর প্রয়োজন নতুন কোনো পরিচয়ের, দরকার নতুন একটি নামের। নরেন্দ্রনাথ কেমন করে হয়ে উঠলেন ‘এম এন রায়’ বা মানবেন্দ্রনাথ রায়, বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন রাজনৈতিক সংগ্রাম ও দার্শনিক চর্চায়, সে-কাহিনি আলোচিত হবে পরের পর্বে। 

প্রান্তটীকা – উদ্ধৃতির উৎস (উদ্ধৃতির ক্রম অনুযায়ী)

১। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। শতবার্ষিকীর আলোছায়ায়। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০০।

২। হরিনাভি স্কুল: ইতিহাসে ও স্মৃতিকথায় দেড়শো বছর। মির্জা রফিউদ্দিন বেগ, রাজকুমার চক্রবর্তী ও সৌমিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পা.। কলকাতা: হরিনাভি ডি ভি এ এস হাইস্কুল এবং অনুষ্টুপ, ২০১৮।

৩। Smaren Roy. M. N. Roy: A Political Biography. Hyderabad: Orient Blackswan, 1997.

৪। ড. প্রসিত রায়চৌধুরী। ‘হ্যারি অ্যান্ড সন্সের ‘হরিদা’—হরিকুমার চক্রবর্তী’ (৪১৫-৪২২)। জীবন মুখোপাধ্যায়, সম্পা., রাজপুর-সোনারপুর: অতীত ও ঐতিহ্য, দ্বিতীয় খণ্ড। সোনারপুর শ্রেষ্ঠ শারদ সম্মান, ২০১৪।

৫। জীবন মুখোপাধ্যায়। ‘শৈলেশ্বর বসু ও তাঁর ভাইয়েরা’ (৪২৯-৪৩৩)। রাজপুর-সোনারপুর: অতীত ও ঐতিহ্য, দ্বিতীয় খণ্ড। 

৬। Suresh Chandra Ghosh. The History of Education in Modern India: 1757-2012. Hyderabad: Orient Blackswan, 2013.

৭। Sumit Sarkar. Modern India: 1885-1947. Delhi: Macmillan Publishers India Ltd., 1983.

৮। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খন্ড। কলকাতা: শিশু সাহিত্য সংসদ প্রা. লি., ২০১০।

৯। Amiya Bhusan Mondal. Harikumar Ckakraborty. প্রকাশক ও প্রকাশস্থান অনুল্লেখিত। [প্রসিত রায়চৌধুরীর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে]। 

১০। দেবীপ্রসাদ রায়। প্রসঙ্গত মানবেন্দ্রনাথ রায় । কলকাতা: প্রিটোনিয়া, ২০১৭।

তথ্যসূচী

দ্রষ্টব্য: বর্তমান প্রবন্ধে উপরে-উল্লিখিত বইগুলি ছাড়াও আরও কিছু গ্রন্থ থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে, যেমন:

দেবীপ্রসাদ রায়, প্রসঙ্গত মানবেন্দ্রনাথ রায় (কলকাতা: প্রিটোনিয়া, ২০১৭),

A. K. Hindi, M .N. Roy: A Man Who Looked Ahead, Vol. 1 (Ahmedabad: The Modern Publishing House, 1938);

G. P. Bhattacharjee, Evolution of Political Philosophy of M. N. Roy (Kolkata: The Minerva Associates, 1959);

Sobhanlal Dutta Gupta, ‘M. N. Roy: An Intellectual with a Difference’ (The Bengali Intellectual Tradition:

From Rammohun Roy to Dhirendranath Sen, Edited by Amal Kumar Mukhopadhyay, Kolkata: K P Bagchi & Co., 2015) 

 চিত্রসূচী  

সব চিত্রই অন্তর্জাল (Internet) থেকে সংগৃহীত

জন্ম ১৯৮৬। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন। পেশায় একটি সরকার-পোষিত কলেজের অধ্যাপক। এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নাল, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি জার্নাল, অনুষ্টপ ইত্যাদি নানান পত্রপত্রিকায় ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ-গ্রন্থ: যুগান্তরের চিঠি: ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্য (২০১৫)। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী। এই বিষয়ে বেশ কিছু মৌলিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের লেখক ও একটি গ্রন্থের সহ-সম্পাদক। সম্পাদিত গ্রন্থ: বিগত যাপন: একটি পারিবারিক আখ্যান (২০২১)। গত কয়েক বছর ধরে সত্যজিৎ রায়ের ঐতিহাসিক ছবিগুলি নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। সদ্যপ্রকাশিত গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের বাংলা প্রবন্ধ ও বক্তৃতার সংকলন (অপর: লেখা ও কথার সংকলন, অনুষ্টুপ, ২০২২)-এর প্রস্তুতি ও প্রকাশনা সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *