ফোনের ওপারে সুজনদা
এই বছরের শেষাশেষি আমার বিয়ে। দূরভাষে একথা জানাতেই সুজনদা বলে উঠলেন, “সেকি? তাহলে তোমার সেই দীর্ঘদিনের বান্ধবী ফ্র্যাঞ্চেসকার কী হবে?”
এক মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়েছিলাম সুজনদার এই উক্তিতে। তারপরেই ওঁর প্রাণখোলা হাসিতে বুঝতে পারলাম উনি ওঁর কল্পকাহিনির নায়ক ‘একেনবাবু’র বন্ধু ‘প্রমথ’র বান্ধবী ফ্র্যাঞ্চেসকার কথা বলছেন।
এমনই রসিক মানুষ ছিলেন সুজন দাশগুপ্ত। ২০১৮তে একেনবাবুর গল্পের ‘প্রমথ’ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সুজনদার সঙ্গে আমার আলাপ। আমি চাকরি সূত্রে মাঝে মাঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছি এবং এখনও থাকি। তাই সুজনদার সঙ্গে আমার দেখা না হলেও ফোনে কথা ঠিকই হত।
ওঁর নানান অভিজ্ঞতার গল্প শুনে মনটা ভালো হয়ে যেত। তার কারণ হয়তো যে প্রত্যেক গল্পের মধ্যেই একটা কোন না কোন রসিকতা জড়িয়ে থাকত। সুজনদার সঙ্গে মাত্র কয়েকমিনিট বাক্যালাপ করলেই মনে হত যেন উনি আমার কত নিজের, কত কাছের মানুষ! এমনভাবেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন সুজনদা আমার সঙ্গে মাত্র কয়েকদিনের আলাপে।
এখনও মনে হচ্ছে, ফোনে সুজনদার নাম যেখানে লেখা আছে সেখানে টিপে দিলেই সুজনদার গলা আর হাসি শুনতে পাব। ‘তোমার স্মরণে কিছু লিখছি সুজনদা’ – এটা শুনে ওঁর সুচতুর প্রত্যুত্তর যে কী হতে পারে বারবার সেটাই ভেবে চলেছি।
আমি নিশ্চিত যে এর মধ্যেও উনি রসিকতা খুঁজে পেতেন। কারণ ওঁর নাম ‘সুজন’ এর মর্যাদা রেখেই উনি ভালো মানুষ। ভালো মানুষের কখনো মৃত্যু হয়না! ভালো মানুষেরা যেরকম হাসতে পারে, ঠিক তেমনই তারা নিজের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। তাই, সুজনদা, আমার কাছে সবসময় জীবিত।