চিত্রনাট্যের নেপথ্য কাহিনি

চিত্রনাট্যের নেপথ্য কাহিনি

“গল্প লেখক হিসেবে নাম যদি আশা করেন, তা হলে বম্বে আপনার জায়গা নয়। এখানে গল্প লেখা হয় না, গল্প তৈরি হয়, ম্যানুফ্যাকচার হয় – যেমন বাজারের আর পাঁচটা জিনিস ম্যানুফ্যাকচার হয়। লাক্স সাবান কে তৈরি করেছে, তার নাম কি কেউ জানে?”

ফেলুদা বলেছিল লালমোহনবাবু ওরফে জটায়ুকে, বোম্বাইয়ের বোম্বেটে উপন্যাসে। শুনে জটায়ু যে রীতিমত ব্যোমকে গিয়েছিলেন, সে তো বলাই বাহুল্য।

বোম্বাইয়ের বোম্বেটে প্রকাশিত হয় শারদীয়া দেশে, ১৯৭৬ সালে।আমার বয়স তখন সাত বছর। বলিউডে নির্মিত হিন্দি ছবি সম্পর্কে ফেলুদার বক্তব্য নিয়ে আমার মনে সেই বয়সে যে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি, তাও নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া সেই বয়সে ফেলুদার কথা ছিল বেদবাক্য, একশোভাগ খাঁটি সত্যি। হনুমান, টারজান, অরণ্যদেব, ক্যাপ্টেন স্পার্ক যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি সত্যি। বিশ্বাস না করার কোনো কারণই ছিল না তখন। বোম্বাইয়ের বোম্বেটে কাহিনির উপরোক্ত ওই বিশেষ জায়গাটাকে আলাদাভাবে ইন্টারেস্টিং মনে হতে শুরু করে আরো অনেক বছর পরে। ফেলুদার কথাটা কি পুরোপুরি সত্যি? বম্বের ছবিতে গল্প কি সত্যিই সর্বক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচার্ড হয় বা হত – লাক্স সাবানের মত? নাকি কথাটা ফেলুদার সৃষ্টিকর্তার নিজের মনের কথা, ফেলুদার মুখ দিয়ে বলিয়ে নেওয়া শুধু? গল্প ম্যানুফ্যাকচারিং করার জন্য যে মাল-মশলার প্রয়োজন, সেগুলোই বা আসত কোথা থেকে?

এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বিষয়টিকে নিয়ে আরেকটু কাটা-ছেঁড়া করা আবশ্যক। শুরুতেই একটা প্রশ্নোত্তর হয়ে যাক। বলুন তো, ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মালয়ালম ছবি ‘মিন্দা পুচাক্কু কল্যাণম’ আর ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি ‘উল্লাম কাভার্নতা কালভন’-এর মধ্যে যোগসূত্রটা কোথায়? উত্তরটাও বলে দিই – এই দুই দক্ষিণ ভারতীয় ছবিই ১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলেগু ছবি ‘আম্মায়ি মানাসু’-র রিমেক। ‘আম্নায়ি মানাসু’ সিনেমাটি কিন্তু আবার ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোম্যান্টিক প্রেমের ছবি ‘চিতচোর’-এর থেকে অনুপ্রাণিত বা অনুকৃত। এখানেই শেষ নয়। বাসু চ্যাটার্জী পরিচালিত সুপারহিট মিউজিকাল ছবি ‘চিতচোর’-এর চিত্রনাট্যকে পরবর্তীকালে ফের ব্যাবহার করা হয় বাংলা ছবি ‘সেদিন চৈত্রমাস’ এবং ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজশ্রী প্রোডাকশনসের ছবি ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু’র কাহিনিতে। অর্থাৎ এই সবকটি ছবিকেই ‘চিতচোর’-এর রিমেক বা পুনর্নির্মাণ বলা চলে। ‘চিতচোর’ সিনেমার কাহিনি বা চিত্রনাট্যটি কিন্ত আবার প্রসিদ্ধ বাঙালি সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘চিত্তচকোর’ গল্পটি অবলম্বনে রচিত হয়েছিল। সুতরাং, একথা বলাই চলে যে দুটি হিন্দি, একটি বাংলা এবং তিনটি দক্ষিণ ভারতীয় ছবির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি মৌলিক ও আদ্যন্ত বাংলাভাষায় রচিত গল্প, যার রচয়িতা সুলেখক শ্রী সুবোধ ঘোষ।

আসলে, মোদ্দা কথাটা গোটা দেশের সব ভাষার ছবির ক্ষেত্রেই মোটামুটি এক। যদি কখনো হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কন্নাড়া, মারাঠি, গুজরাটি ইত্যাদি সব ভারতীয় ভাষার ছবিকে একজোট করে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোসের স্টাইলে প্রশ্ন করা হয়, “হে চলচ্চিত্র, তোমার কাহিনি কোথা হইতে আসিয়াছে?”, তাহলে এর প্রাথমিক উত্তর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত নিম্নলিখিত তিনটি সম্ভাবনার একটি:
এক) সামাজিক, রোম্যান্টিক, ভৌতিক, কমেডি, রাগী যুবক, প্রতিবাদী যুবতী, থ্রিলার, দেশপ্রেম, টিনেজ প্রেম ইত্যাদি থিম-নির্ভর, সিনেমার জন্য বিশেষভাবে লেখা চিত্রনাট্যের থেকে। খুব সম্ভবত এই গোত্রের ছবির গল্পকেই লেখক সত্যজিৎ ম্যানুফাকচার্ড আখ্যা দিয়েছিলেন তাঁর ফেলুকাহিনিতে।
দুই) অন্য কোনো দেশি বা বিদেশি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। বহু ক্ষেত্রেই এই ধরণের ছবিকে রিমেক হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেমন, কুরোসাওয়ার ‘সেভেন সামুরাই’ থেকে ইংরেজি ছবি ‘দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ আর তার থেকে তৈরি হিন্দি ছবি শোলে, হিচককের ‘রেবেকা’র থেকে অনুপ্রাণিত হিন্দি ছবি কোহরা, বাংলা ছবি ‘নিশিপদ্ম’ থেকে হিন্দি ছবি ‘অমর প্রেম’, তামিল ছবি ‘মুন্ডরম পিরাই’ থেকে রিমেড হিন্দি ছবি ‘সদমা’, তেলেগু ছবি ‘মারো চরিত্রা’ থেকে রিমেড হিন্দি ছবি ‘এক দুজে কে লিয়ে’, ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিন) প্রসিদ্ধ কোনো লেখক বা সাহিত্যিকের লেখা গল্প বা উপন্যাসকে অবলম্বন করে। যেমন, চেতন ভগতের লেখা নভেল ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’ থেকে নির্মিত ছবি থ্রি ইডিয়টস,’ রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ অবলম্বনে তৈরি গুলজারের হিন্দি ছবি ‘লেকিন’, শরৎচন্দ্র রচিত উপন্যাস দেবদাস বা পরিণীতা থেকে তৈরি একাধিক বাংলা ও হিন্দি ছবি, হিন্দি নভেল রচয়িতা কমলেশ্বরের ‘কালি আন্ধী’ থেকে তৈরি ছবি ‘আন্ধী’, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি, সে ও সখা’ থেকে তৈরি হৃষীকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি ‘বেমিসাল’, ইত্যাদি ইত্যাদি।

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ফর মোশানস পিকচার্স, যার পোশাকি নাম হচ্ছে অস্কার, সেখানেও চলচ্চিত্রের জন্য দুই প্রকারের কাহিনি-নির্মাণকে পৃথকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অরিজিনাল স্ক্রিন-প্লে অর্থাৎ মৌলিক চিত্রনাট্য, এবং অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিন-প্লে বা অভিযোজিত চিত্রনাট্য। ইন্টারনেট থেকে অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিন-প্লে’র যে সংজ্ঞাটি পাওয়া যাচ্ছে, সেটি হল এইরকম: “An adapted screenplay is a screenplay that is based on pre-existing materials. The most frequently adapted media are novels, but other adapted narrative formats include stage plays, musicals, short stories, TV series, and even other films.” অতএব, অন্য কোনো দেশি বা বিদেশি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি ছবি এবং প্রসিদ্ধ কোনো লেখক বা সাহিত্যিকের লেখা গল্প বা উপন্যাসকে অবলম্বন করে নির্মিত ছবি, উভয়েই অভিযোজিত বা অ্যাডাপ্টেড চিত্রনাট্যের পর্যায়ে পড়ছে। 

পাশাপাশি অরিজিনাল স্ক্রিন-প্লে বা মৌলিক চিত্রনাট্যের সংজ্ঞাটি তুলনায় কম জটিল: “Original Screenplay refers to a film script that is wholly based on the screenwriter’s own, unique imagination and not adapted from outside material.”

সংজ্ঞা শুনে পার্থক্যটা যত সহজ আর পরিষ্কার মনে হচ্ছে, বাস্তব ক্ষেত্রে কিন্ত প্রায়শই কাজটা এত সহজ হয় না। ২০১৬ সালে ‘স্পটলাইট’ নামের যে সিনেমাটি মৌলিক চিত্রনাট্য হিসেবে অস্কার লাভ করে, সেটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। কিন্তু যেহেতু এই ছবির চিত্রনাট্যকারদ্বয় জোশ সিঙ্গার এবং টম ম্যাককার্থি বহু গবেষণা করে এই কাহিনির চিত্ররূপ তৈরি করেন, তাই একে মৌলিক কাজ হিসেবেই গণ্য করা হয়। অপরদিকে সেই বছরই সেরা অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিন-প্লে’র জন্য অস্কার লাভ করে ‘দ্য বিগ শর্ট’ ছবিটি, কারণ তার প্রাথমিক উৎস ছিল লেখক মাইকেল লিউয়িসের লেখা ‘দ্য বিগ শর্ট: ইনসাইড দ্য ডুমসডে মেশিন’ নামক নন-ফিকশন বইটি। তেমনি ২০১৫ সালে ‘হুইপল্যাশ’ এবং ২০১৭ সালে ‘মুনলাইট’ ছবি দুটি বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিন-প্লে’র জন্য মনোনীত হলে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়, কারণ বহু চিত্রানুরাগী এবং রাইটার্স গিল্ডের মতে এই ছবিদুটির চিত্রনাট্যকে মৌলিক চিত্রনাট্য হিসেবে গণ্য করাই উচিত ছিল।

স্বয়ং সত্যজিৎ রায় তাঁর বানানো দুটি হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন মুনশি প্রেমচাঁদের লেখা গল্পকে অবলম্বন করে। এমনকি তাঁর বানানো বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও তিনি হয় স্বরচিত, নয়ত বিখ্যাত কোনো লেখক বা ঔপন্যাসিকের লেখা গল্প বা উপন্যাসের সাহায্যই নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ,তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, শঙ্কর, শরদিন্দু, রাজশেখর বসু প্রমুখ বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লেখা কাহিনিকে চিত্ররূপদান করে বিশ্বের দরবারে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তাদের উপস্থাপনা করেছিলেন সত্যজিৎ। এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল শুধু নায়ক, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর শাখা-প্রশাখা সিনেমা তিনটির ক্ষেত্রে – যেখানে গল্পগুলোকে পরিচালক লিখেছিলেন শুধুমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাণের খাতিরেই। শুধু সত্যজিৎই নন, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা থেকে শুরু করে তরুণ মজুমদার, অজয় কর, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ঋতুপর্ণ ঘোষ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ বাঙালী পরিচালকেরাও কখনো প্রতিষ্ঠিত লেখকের পূর্বপ্রকাশিত কাহিনি থেকে ছবি করেছেন, আবার কখনো সিনেমার জন্য মৌলিক চিত্রনাট্য নিজেরা তৈরি করেছেন বা করিয়ে নিয়েছেন।

ভারতীয় চলচ্চিত্রে রোমান্স, থ্রিলার, হরর, দেশপ্রেম, পারিবারিক মূল্যবোধ ইত্যাদি মূল থিমের ছাঁচে ফেলে ম্যানুফ্যাকচার্ড গল্প তৈরি করার প্রবণতা দেখা গিয়েছে মনমোহন দেশাই, প্রকাশ মেহরা, রমেশ সিপ্পি, যশ চোপড়া, সুভাষ ঘাই, করণ জোহর, অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহা, রাজ চক্রবর্তী প্রমুখ মূলধারার পরিচালকদের ছবিতে, যারা নাচ-গান-অ্যাকশন-মেলোড্রামা’কে প্রাধান্য দিয়ে ছবি বানিয়েছেন। ছাঁচে ফেলে তৈরি করা এইসব কাহিনি বা চিত্রনাট্যকেই যে সত্যজিৎ লাক্স সাবানের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। অপরদিকে গুলজার, বাসু চ্যাটার্জি, হৃষীকেশ মুখার্জি, শক্তি সামন্ত, বিধু বিনোদ চোপড়া, সঞ্জয় লীলা বনশালি, দিবাকর ব্যানার্জি, সুজয় ঘোষ প্রমুখ পরিচালকেরা জোরালো ও মনোজ্ঞ কাহিনি সংগ্রহ করে তাকে নিজেদের মত করে অ্যাডাপ্ট করে নিয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের বিপুল ভান্ডার বাংলা সিনেমাকে চলচ্চিত্রোপযোগী কাহিনির যোগান দিয়ে চলেছে বিগত বহু দশক ধরে। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম, তারাশঙ্কর বা দুই বিভূতিভূষণ ছাড়াও সিনেমা হয়েছে বনফুল, জরাসন্ধ, কালকূট, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্কর, রমাপদ চৌধুরী, সুবোধ ঘোষ, বিমল কর, বিমল মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বহু বিশিষ্ট বাঙালী সাহিত্যিকের লেখা কাহিনিকে অবলম্বন করে। এই প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে এইরকমই কিছু কাহিনির নাম উল্লেখ করা হল।
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, ওরফে বনফুল – হাটে বাজারে, অগ্নীশ্বর, ভুবন সোম, আলোর পিপাসা।
সমরেশ বসু, ওরফে কালকূট – নির্জন সৈকতে, বিকেলে ভোরের ফুল, বিবর, অমৃত কুম্ভের সন্ধানে, মৌচাক।
রমাপদ চৌধুরী – খারিজ, দ্বীপের নাম টিয়ারঙ, এখনই, বনপলাশির পদাবলী, পিকনিক।
বিমল কর – বসন্তবিলাপ, বালিকা বধু, যদুবংশ, খড়কুটো (ছবির নাম ছুটি), কালিদাস ও কেমিস্ট্রি (ছবির নাম দিল্লাগি)।
সুবোধ ঘোষ – অযান্ত্রিক, ত্রিযামা, জতুগৃহ, ঠগিনী, সুজাতা।

বাংলা কাহিনিকে সিনেমার মাধ্যমে সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়ার কাজটি মূলত করে গেছেন হিন্দি চলচ্চিত্র-জগতে কর্মরত বাঙালী পরিচালকেরা, কিম্বা সেইসব পরিচালকেরা, যাদের বাংলা শিল্পকলা ও সাহিত্যের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচয় ছিল, যেমন গুলজার। নমকিন, কিতাব, এক ডক্টর কি মওত, সফেদ ঝুট, অর্জুন পণ্ডিত, বাবুর্চি, সত্যকাম, ইজাজত ইত্যাদি বলিউডের মূলধারার ছবির তুলনায় ব্যতিক্রমী হিন্দি ছবির মূল রচয়িতা আমাদের বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকরাই। হিন্দি ভাষায় লেখা গল্প বা নভেল থেকে বানানো ছবির সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুনশি প্রেমচাঁদ, পদ্মভূষণ ও সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক কমলেশ্বর, গুলশন নন্দা, মোহন রাকেশ ইত্যাদি হিন্দিভাষী সাহিত্যিকদের লেখা কাহিনি বা নভেল, যেমন ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ী’, ‘সদ্গতি’, ‘আন্ধী’, ‘মৌসম’, ‘কটি পতঙ্গ’, ‘উসকি রোটি’ ইত্যাদি। জোরালো কাহিনির ভিতের উপর নির্মিত এইসব ছবি দর্শক আর সমালোচকদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসিতও হয়েছে। ভারতীয় ভাষা’র বাইরে বম্বে’র ফিল্ম জগতে ছবি তৈরি হয়েছে প্রধানত ইংরেজি ভাষায় রচিত কাহিনি বা উপন্যাসকে অবলম্বন করে। শেক্সপীয়ার, রাস্কিন বন্ড তো আছেনই, সঙ্গে রয়েছেন চেতন ভগত বা আর কে নারায়ণের মত প্রসিদ্ধ লেখকও, যাদের রচনা থেকে জন্ম হয়েছে বহু সফল ও জনপ্রিয় চিত্রনাট্যের, যেমন ওমকারা, মকবুল, হায়দার, সাত খুন মাফ, টু স্টেটস, কাই পো চে, হাফ গার্লফ্রেন্ড, গাইড, টেলিফিল্ম সিরিজ মালগুডি ডেজ ইত্যাদি।

পূর্বোক্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, অভিযোজিত চিত্রনাট্য বা অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিন-প্লে’র ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশি বা বিদেশি ভাষায় পূর্বনির্মিত ছবির কাহিনিও একটি অন্যতম মুখ্য সোর্স বা উৎস। হিন্দি ও বাংলা সহ প্রায় সমস্ত ভারতীয় ভাষার ছবিতে ব্রিটিশ বা আমেরিকান ছবির ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই ভারতীয় ছবি ইংরেজি ছবিকে অনুসরণ করে আসছে। তবে ইদানীংকালে হিন্দি, তামিল বা তেলেগু ছবির পরিচালকদের নন-ইংলিশ ভাষার ছবির থেকেও কাহিনি ধার করতে দেখা যাচ্ছে। এই বদলটা বিশেষভাবে লক্ষণীয় সাসপেন্স বা থ্রিলার ছবির ক্ষেত্রে; যেমন, ২০১৯ সালে নির্মিত, অমিতাভ বচ্চন অভিনীত এবং সুজয় ঘোষ পরিচালিত রহস্য-থ্রিলার ‘বদলা’ সিনেমাটি ছিল একটি জনপ্রিয় স্প্যানিশ-ভাষার ছবি ‘দ্য ইনভিসিবল গেস্ট’-এর রিমেক। খুব সাম্প্রতিককালের আরেকটি প্রবণতা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান ছবির ভারতীয় রিমেক তৈরি করা। এই বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে নেটফ্লিক্সে রিলিজ হতে চলেছে কার্তিক আরিয়ান অভিনীত থ্রিলার ছবি ‘ধমাকা’, যেটি ২০১৩ সালে তৈরি দক্ষিণ কোরিয়ান ছবি ‘দ্য টেরর লাইভ’-এর রিমেক। সলমন খান অভিনীত এবং ২০১৯ সালে নির্মিত ছবি ‘ভারত’, কোরিয়ান ছবি ‘অ্যান ওড টু মাই ফাদার’-এর রিমেক। এছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান ছবি ‘দ্য ওনলি ইউ’ থেকে অনুপ্রাণিত ছবি ‘দো লফজো কি কাহানি’, ‘দ্য ম্যান ফ্রম নোহোয়ার’ ছবির রিমেক জন আব্রাহাম অভিনীত ছবি ‘রকি হ্যান্ডসাম’ এবং ‘সেভেন ডেজ’-এর অনুকরণে তৈরি ঐশ্বর্য রাই অভিনীত ছবি ‘যজবা’। এই তিনটি ছবির নির্মাণকালও ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে। হাল আমলের এই নতুন প্রবণতার কারণ খুব সম্ভবত একটাই – হলিউডের ইংরেজি ছবির বদলে স্প্যানিশ বা দক্ষিণ কোরিয়ান ছবির থেকে গল্প ধার করলে ব্যাপারটা ধরা অত সহজ হবে না।

ভারতীয় ভাষায় নির্মিত ছবি, মূলত হিন্দি, বাংলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় ছবির চিত্রনাট্য কি তাহলে প্রায় সবই কোনো না কোনো ভাবে অ্যাডাপ্টেড? তাহলে মৌলিক চিত্রনাট্য কাকে বলা হবে? সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে কাহিনি বা চিত্রনাট্য পরিচালকের বা পরিচালক ও প্রযোজক নিয়োজিত চিত্রনাট্যকারের মৌলিক চিন্তার ফসল, অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্সের পরিভাষায় যাকে বলা হয় “screenplay written directly for the screen”, তাই হল গিয়ে অরিজিনাল স্ক্রিন-প্লে বা মৌলিক চিত্রনাট্য। এই সংজ্ঞার ভিত্তিতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসেও মৌলিক চিত্রনাট্যের বহু সফল নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘শাখা-প্রশাখা’, ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘খেলা’ বা ‘চিত্রাঙ্গদা’। এছাড়াও মৃণাল সেনের ‘পদাতিক’, ‘আকাশ কুসুম’ বা ‘ইন্টারভিউ’ ছবির চিত্রনাট্য, যার রচয়িতা ছিলেন আশিস বর্মণ, অথবা তপন সিনহার লেখা ‘আপনজন’ ছবির চিত্রনাট্যকেও মৌলিক চিত্রনাট্য হিসেবে গণ্য করা চলে। পাশাপাশি হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে শ্যাম বেনেগালের ‘অঙ্কুর’, ‘ভূমিকা’, ‘মন্থন’, আশুতোষ গাওয়ারিকারের ‘লগান’ বা ‘স্বদেশ’, অঙ্কুর বাটরা’র ‘দ্য লাঞ্চবক্স’, আনন্দ গান্ধীর ‘শিপ অফ থিসিয়াস’ মৌলিক চিত্রনাট্যের যথার্থ উদাহরণ। ভারত সরকারের চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর সর্বোত্তম চিত্রনাট্যের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দিয়ে আসছে ১৯৭৩ সাল থেকে। শুরুর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মৌলিক চিত্রনাট্য পুরস্কৃত হয়েছে ৬৫ বার, এবং অ্যাডাপ্টেড চিত্রনাট্য পুরস্কৃত হয়েছে ১৭ বার। সুতরাং জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণে মৌলিক চিত্রনাট্যর প্রাধান্যই বেশি।

ভারতীয় ফিল্মের দুনিয়ায় চিত্রনাট্যকার হিসেবে অর্থোপার্জন করা গেলেও সাহিত্যিকের সমতুল্য খ্যাতি আর সম্মান পাওয়া সম্ভব নয়, এরকম একটি ধারণা চলে আসছে বহু বছর ধরে। হলিউডের ছবির ক্ষেত্রে স্ক্রিনপ্লে বা চিত্রনাট্যের জন্য ছবির বাজেটের আনুমানিক এক থেকে তিন শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ডেভিড কেপ, যিনি চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘স্পাইডার ম্যান’, ‘মিশন ইমপসিবল’ ইত্যাদি বাণিজ্যিকভাবে চুড়ান্ত সফল সিনেমার, টেরি রোসিও, যিনি লিখেছেন ‘আলাদিন’, ‘দ্য মাস্ক অফ জোরো’ বা ‘মেন ইন ব্ল্যাক’ ছবির চিত্রনাট্য, বা ব্রায়ান হেলগেল্যান্ড, যিনি খ্যাতিলাভ করেছেন ‘এল.এ কনফিডেন্সিয়াল’ এবং ‘মিস্টিক রিভার’ ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্য – এরা প্রত্যেকেই ছবি-প্রতি পেয়ে থাকেন দুই থেকে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় পনেরো থেকে পয়ত্রিশ কোটি টাকায়। অংকটা যুগপৎ বাক ও শ্বাসরুদ্ধ করে দেওয়ার মতই বিশাল। অর্থোপার্জনের রাস্তাটা সুগম বলেই হয়ত হলিউড বা ইংরেজি ছবির ক্ষেত্রে বহু খ্যাতনামা লেখক ও ঔপন্যাসিক গল্প বা নভেল লেখার পাশাপাশি সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লিখেছেন বা লিখে চলেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ইওয়ান ডিডিয়ন, যিনি লিখেছেন ‘এ স্টার ইজ বর্ন’, ‘ট্রু কনফেশনস’, বা নিজেরই লেখা নভেল অবলম্বনে রচিত চিত্রনাট্য ‘প্লে ইট অ্যাজ ইট লে’জ’, ‘দ্য গডফাদার’ উপন্যাসের লেখক মারিও পুজো এবং ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’, জুরাসিক পার্ক’, ‘দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি’, ‘দ্য লস্ট ওয়ার্লড’ ইত্যাদি নভেল এবং পরবর্তীকালে চিত্রনাট্যের সফল রূপকার মাইকেল ক্রাইটেন। একই সঙ্গে উল্লেখ করা চলে বুকার প্রাইজ এবং দু-দু’বার অস্কার বিজয়ী নভেলিস্ট ও চিত্রনাট্যকার রুথ প্রাওয়ার জাবভালার নাম, যিনি মার্চেন্ট-আইভরি প্রোডাকশনের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রায় পাঁচ দশক ধরে তৈরি করে গেছেন বহু বিখ্যাত সিনেমার কাহিনি ও চিত্রনাট্য, যেমন ‘দ্য হাউজহোল্ডার’, ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’, ‘রোজল্যান্ড’, ‘শেক্সপিয়ারওয়ালা’, ‘বম্বে টকি’, ‘হাওয়ার্ডস এন্ড,’ ‘এ রুম উইথ এ ভিউ’ ইত্যাদি।

এই চিত্রটি কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা। মূলধারার ভারতীয় চলচ্চিত্রে মৌলিক চিত্রনাট্য’র এই চিরকালীন দৈন্যদশার পিছনে যে প্রযোজক বা প্রোডাকশন হাউসের ঔদাসীন্যই প্রধানত দায়ী, একথাও নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৬০ সালে হিন্দি ছবির সঙ্গে সংযুক্ত গীতিকার ও চিত্রনাট্যকারেরা একজোট হয়ে ‘ফিল্ম রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত সৃজনশীল ব্যক্তি ও কলাকুশলীদের স্বার্থরক্ষা করা। এই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ছিলেন কে এ আব্বাস, রাজিন্দার সিং বেদী, মজরুহ সুলতানপুরী, সাহির লুধিয়ানভি, নবেন্দু ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। লেখক, গীতিকার বা চিত্রনাট্যকারেরা যাতে অর্থ, যশ আর খ্যাতির থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত না হন, তা সুরক্ষিত করাই ছিল এই অ্যাসোসিয়েশনের মূল লক্ষ্য। দুর্ভাগ্যবশত, এর প্রায় ষাট দশক পরেও, কয়েকটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস বাদ দিলে, সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি।

 

বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর শ্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করে এই প্রবন্ধ শেষ করছি। একথা অনেকেই জানেন যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত ছিলেন ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রথম তিনটি বছর তিনি হিমাংশু রায়-দেবিকা রাণী প্রতিষ্ঠিত বম্বে টকিজে চিত্রকাহিনিকারের পদে নিযুক্ত ছিলেন এবং সেযুগে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বম্বে টকিজের মূল লেখক হিসেবে সর্বমোট সাতটা ছবির জন্য গল্প ও সিনারিও লিখেছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পূর্বলিখিত উপন্যাস ‘বিষের ধোঁয়া’ অবলম্বনে রচিত চিত্রকাহিনি ‘ভাবী’, ‘বচন’, ‘আজাদ’, ‘দুর্গা’, ‘পুনর্মিলন’ ইত্যাদি ছায়াছবি। ১৯৪১ সালে বম্বে টকিজের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে শরদিন্দু ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন আচারিয়া আর্ট প্রোডাকশনের সঙ্গে। শরদিন্দুর বম্বে ফিল্ম জগতের সঙ্গে বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এর মূল কারণ, গল্প রচনায় প্রযোজক-পরিচালকের অত্যধিক হস্তক্ষেপ, যা শরদিন্দুর একেবারেই পছন্দ হয়নি। সিনেমার জগত থেকে সাহিত্যের জগতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ফের গল্প ও উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন, যার ফলে গোটা বাংলার অগুনতি সাহিত্যানুরাগী পাঠক-পাঠিকা আবার ফিরে পায় তাদের প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীকে। শুধু ব্যোমকেশ কাহিনিই নয়, প্রত্যাবর্তনের পর বেশ কিছু কালজয়ী ঐতিহাসিক উপন্যাসও রচনা করেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গৌড়মল্লার, তুমি সন্ধ্যার মেঘ, কুমারসম্ভবের কবি এবং তুঙ্গভদ্রার তীরে।

 

“তাহলে মান হল গিয়ে বেঙ্গলে, আর বম্বেতে হচ্ছে মানি?” লালমোহনবাবুর মুখ দিয়ে এই কথাটা বলিয়ে নিয়েছিলেন লেখক সত্যজিৎ রায়, তাঁর বোম্বাইয়ের বোম্বেটে উপন্যাসে। এর প্রায় তিন দশক আগে, এই সত্যিটা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করে বম্বের ফিল্ম-জগতকে চিরতরে ত্যাগ করেছিলেন সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন ভাবতে বসলে মনে হয়, ভাগ্যিস তিনি ফিরে এসেছিলেন!

অরিন্দম মজুমদারের জন্ম কলকাতায়। জন্ম, পড়াশুনা আর চাকরি জীবনের প্রথম পর্ব কেটেছে কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, বিষয় ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং। কর্মজীবনের শুরু একটি ভারতীয় সংস্থার সেলস বিভাগে, ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে। পরবর্তী তিরিশ বছর ব্যাপী কর্মজীবনে চাকরি করেছেন একাধিক দেশি এবং বিদেশি সংস্থায়। বর্তমানে একটি বিদেশি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত, সংস্থার ভারতীয় শাখার মুখ্য আধিকারিক হিসেবে। চাকরিসূত্রে থেকেছেন বিভিন্ন শহরে, বর্তমান নিবাস দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙালুরু শহরে। অবসর সময়ে লেখালেখি করেন, গান শোনেন, সিনেমা দেখেন। প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় নবকল্লোল পত্রিকায়। এরপর লেখা একাধিক গল্প এবং ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হয়েছে দেব সাহিত্য কুটির কর্তৃক সম্পাদিত ও মুদ্রিত নবকল্লোল আর শুকতারা পত্রিকায়। ঌরিকাল বুকস কর্তৃক প্রকাশিত রহস্যোপন্যাস ‘কালসর্প’ লেখক-রচিত প্রথম বই। রহস্য, থ্রিলার, হাসির গল্প, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিচারণ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন। লেখেন কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক, সব বয়সের পাঠকের জন্য। তবে নিজের লেখার থেকেও পড়তে, ঘুরে বেড়াতে আর খেতে ভালোবাসেন।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Suprabhat Mukhopadhyay , May 23, 2022 @ 4:06 pm

    খুবই তথ্য সমৃদ্ধ অথচ প্রাঞ্জল রচনা, পড়ে খুব ভালো লেগেছে। শুধু বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটা উল্লেখ করলে ভালো হতো- তাঁর ” পদ্মা নদীর মাঝি” অবলম্বনে সিনেমাটি এখনও সবার মনে অম্লান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *