সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ
গোড়ার কথা
প্রকাশ ঝা পরিচালিত ‘গঙ্গাজল’ ছবিটির শেষদৃশ্য। উন্মত্ত জনতা যখন কুখ্যাত দুই সমাজবিরোধীকে ‘আইন হাতে তুলে নিয়ে’ মেরে ফেলতে উদ্যত, এই যুক্তিতে যে, ‘ওরা প্রভাব’ খাটিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে ঠিক ‘মুক্ত’ হয়ে যাবে, তখন আইনের পথেই ওই দুজনকে শাস্তি দিতে জনতার সামনে ‘ঢাল হয়ে দাঁড়ানো’ পুলিশকর্তা অমিত কুমার একটি সংক্ষিপ্ত ও অনবদ্য ভাষণ দেন, যার সারকথা হ’ল, দেশের সংবিধান, আইন কোনোটাই দুর্বল নয়, দুর্বল হ’ল জনগণ…ইত্যাদি। জনগণ যদি তাদের ‘দুর্বলতা’ কাটিয়ে উঠতে পারে তাহলেই বর্তমান পরিস্থিতির অবসান হবে।
জনপ্রিয় হিন্দি ছবিটি দুই দশক আগে নির্মিত। তারপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অমিত কুমার কথিত ‘দুর্বলতা’ কি জনগণ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? তারা কি সৎ, ন্যায়পরায়ণ, দায়বদ্ধ, মোটকথা কালিমামুক্ত স্বচ্ছ ও মানবিক ‘নেতা’ নির্বাচনে সক্ষম হয়েছে, যাঁরা দেশের সংবিধান, আইন ইত্যাদি অনুযায়ী দেশ শাসন করবেন? নাকি তাদের ‘দুর্বলতা’ এখনও রয়ে গেছে বলেই নিত্যদিনের জনজীবনের সঙ্গে অন্বিত হয়ে বিরাজ করছে সেই এক ও অদ্বিতীয় ‘হতাশা’?
প্রসঙ্গত বলা যাক, ২৬ নভেম্বর দিনটি ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। একদা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু ( ১৯১৪–২০১০ ) একটি কথা বলেছিলেন: ‘বামফ্রন্টকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে।’ আমাদের সংবিধান সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। বামফ্রন্টের অস্তিত্বের বিষয়টি নিতান্তই দলীয়, অতএব সে-নিয়ে কথা বাড়ানো বৃথা। কিন্তু, সংবিধানকে ‘চোখের মণি’র মতো রক্ষা করা দেশ ও নাগরিকের সাপেক্ষে যে খুবই জরুরি সেকথা বলায় নির্লিপ্ততা থাকার প্রশ্নই নেই।
সংবিধান রচনার প্রেক্ষাপট
লিখিত হোক, অথবা অলিখিত–দৃঢ় শাসনতান্ত্রিক কাঠামোয় বেঁধে রাখা ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীন দেশের জন্য কিছু বিধিবিধানকে সংঘবদ্ধ রূপ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যার নাম–সংবিধান। স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও বুঝেছিলেন যে, সবাই মিলে একত্র চলতে গেলে কিছু ‘বিধি-বিধান’ সংকলিত করা প্রয়োজন। অর্জিত প্রজ্ঞার সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতায়ও তাঁরা পূর্ণ ছিলেন। তাঁদের সেই প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার নির্যাস পূর্ণতা পায় একটি বৃহৎ ‘সংবিধান’ রচনার মাধ্যমে। আনুষঙ্গিক আলোচনার আগে ‘সংবিধান’ শব্দটি নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখা যেতে পারে। বিধান – নিয়মকানুন। আর সংবিধান – সমষ্টিভুক্ত যে বিধান, যা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি; যার অনুপ্রেরণা ছিল বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের Constitution। The noun constitution is from Latin, from constitutus, “set up, established,” plus the suffix -ion, meaning “act, state, or condition.” So, think of a constitution as how a body (yours, the government’s) is set up।
বস্তুত, আমাদের সংবিধানের ‘অবদান’ অনেক। সংবিধানই আমাদের দেশের কাঠামোটিকে মজবুত করে ধরে রেখেছে। স্বাধীনতার পর থেকে অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলেও যে ভারতবর্ষ তার বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যকে সগৌরবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তার মূল কৃতিত্ব আমাদের সংবিধানের বরেণ্য প্রণেতাদের।
উল্লেখ্য, তাঁদের অনেক ‘সাংবিধানিক অবদানের’ মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ হ’ল, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে রাষ্ট্রশাসনকার্যের অভিমুখ বা আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করা। ভারতবর্ষ বহু ধর্ম, সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়ের দেশ। এই দেশকে নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ই যে একমাত্র আদর্শ সেকথা আপন প্রজ্ঞায় বুঝেছিলেন আমাদের সংবিধান-প্রণেতারা। সেদিকেই খেয়াল রেখে তাঁরা সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ ধারাতে বিস্তারিতভাবে লিখে রেখেছিলেন কীভাবে রাষ্ট্র এই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে রক্ষা করবে। এই ধারাগুলির মাধ্যমে ভারতের সব নাগরিককে তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে চলার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনও নাগরিক বেআইনি, অস্বাস্থ্যকর বা অনৈতিক কোনও কাজ করছেন। [1]
ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা
বস্তুত, ধর্মের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার কি কোনও দ্বন্দ্ব বা বিরোধ আছে? অনেক ‘ধর্মনিষ্ঠ’ মানুষ মনে করেন যে, আছে। ‘ধর্ম’ বলতে মূলত বোঝায় কতকগুলো ‘বিশ্বাস’-এর সমষ্টি। এবং, বাস্তবতা হ’ল, সমাজে বিশ্বাসের পার্থক্যের জন্যে ধর্মীয় অনুশীলনেও পার্থক্য দেখা যায়। ধর্মের অস্তিত্ব একান্ত নিভৃত ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অপরদিকে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ একটি রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত মতাদর্শ, যার মূল কথা হ’ল, ব্যক্তির ধর্মচর্চায় রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা। অর্থাৎ, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তারপরও কেউ কেউ নিজেকে যে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলেন তার দ্বারা আসলে তারাও ‘ধর্ম’ সম্পর্কে ওই নির্লিপ্ততার অনুসরণ-প্রবণতাটাকেই বোঝাতে চান। বলাই বাহুল্য, এই ‘নির্লিপ্ততা’ যেমন ধর্মের প্রতি, তেমনই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি।
এখন প্রশ্ন হ’ল, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে গেলে কি ‘ধর্মে অনাস্থা’ রাখতে হয়? এর উত্তর একমাত্রিক নয়। ‘আস্থা’ যেমন থাকতে পারে, তেমনই ‘অনাস্থা’ও থাকতে পারে। যেটাই থাকুক, তাতে ‘নির্লিপ্ত’ হওয়া আটকায় না। তাহলে ‘ধর্মে আস্থাশীল’ বা ‘ধর্মনিষ্ঠ’ ব্যক্তিও যে ‘নির্লিপ্ত’ হতে পারে, সেকথা তো বোঝাই যাচ্ছে। কারণ, সেটা তো অন্যের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হচ্ছে। এখানেই নির্লিপ্ততার সঙ্গে সঙ্গে উদারতা বা সহিষ্ণুতার ভাষ্যটিও সংযুক্ত হয়। এই গোটা পর্বে ধর্মের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার দ্বন্দ্বের বা বিরোধের কোনও পরিসর নেই।
সংবিধানের মুখ্য স্থপতি
ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে সংবিধানে ঘোষণা দেওয়ার মুখ্য স্থপতি হিসাবে স্মরণ করা যায় ড. বি আর আম্বেদকরকে (১৮৯১–১৯৫৬)। প্রাজ্ঞ চলচ্চিত্ররসিক ও চলচ্চিত্র-সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় একবার প্রখ্যাত পরিচালক তপন সিংহের ছবি সম্পর্কে বলেছিলেন যে, ব্যক্তির ‘একক সংগ্রাম’-ই তপন সিংহের (১৯২৪–২০০৯) ছবির মূল সুর। আজ যে আম্বেদকরকে আমরা জানি স্বাধীন দেশের মহান সংবিধানের সূত্রে সেই আম্বেদকরের ব্যক্তিগত জীবনও ওই ‘একক সংগ্রামেরই’ প্রতিচ্ছবি। দুঃসহ দারিদ্রের বাধা অতিক্রম করে জীবনকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যাওয়াটা নিশ্চয় ব্যক্তির ‘একক সংগ্রাম’। এবং, সেই উদাহরণ বিস্তর আছে।
কিন্তু, আম্বেদকরের ‘একক সংগ্রাম’-কে সেই গোত্রে ফেলা যায় না; তার সেই সংগ্রামটা বহুমাত্রিক। অস্পৃশ্যতার মতো একটা অভিশাপের বিরুদ্ধেও তাঁকে লড়তে হয়েছে। এবং, সেই লড়াইটা অভাবনীয়।
আম্বেদকর প্রান্তিক মানুষের ভারাক্রান্ত হৃদয়টা নিজের তিক্ত জীবন দিয়ে অনুভব করেছিলেন। উত্তর-স্বাধীন ভারতবর্ষে অজস্রবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। কিন্তু, তাতে তাঁর কৃতিত্ব কমে যায় না। ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বা বহুত্ববাদকে, প্রান্তিক মানুষের অধিকারকে তিনি একটি অনন্য সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। দূরদৃষ্টি, সংবেদনশীলতা, মেধা, ভারতবর্ষের আত্মাকে বোঝা এসব বহুবিধ গুণের যে সমন্বয় তাঁর মধ্যে দেখা গিয়েছিল তা-ও কি তাঁর ওই ব্যক্তিজীবনের ‘একক সংগ্রামের’ নির্যাস থেকে আহরিত নয়?
এখন প্রশ্ন ওঠার উপক্রম হয়েছে যে, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শটি কি যথার্থরূপে অনুশীলিত হয়েছে? যদি সেটাই হ’ত তাহলে আজ তার ‘বিপরীত ঝংকার’টি এত তীব্র কেন? উত্তরে বলা যায়, অবশ্যই অনুশীলিত হয়েছে। বরং জাতীয় স্তরে কংগ্রেস যখন থেকে তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র অনুশীলনে শৈথিল্য প্রদর্শন করতে শুরু করে তখন থেকেই এই আদর্শটিকে সংবিধানসম্মত আঙ্গিকে অনুসরণ না করার পথ প্রশস্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের দীর্ঘদিনের রাজ্যশাসন কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যকেই ধরে রেখেছিল। তাদের ‘পতন’ কিন্তু সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুতিজনিত নয়। একথা অবশ্য ঠিক যে, সাংবিধানিক পরিধির দিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ অনুসৃত হলেও জনমানসে বা জনচেতনায় সেটি খুব বেশি স্বচ্ছ ছিল না। এর কারণ, ধর্ম বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকাটি যে বৌদ্ধিক ব্যাপ্তি দাবি করে তার চেয়ে ধর্ম আঁকড়ে চলার সারল্যে গোটা উপমহাদেশীয় মানুষেরই অগাধ আস্থা। সেজন্যেই ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি’ সমগ্র ভূখণ্ডে যত সহজে পালে হাওয়া পায়, ধর্মনিরপেক্ষতা কিন্তু তা পায় না। সমাজের অভ্যন্তরে এর প্রতি আকর্ষণ বা এর চর্চা বৃদ্ধি না পেলে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ যে ক্রমশ অস্তাচলে যেতে বাধ্য তা খুব স্বাভাবিক। এই সূত্রে কেবল ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে কথিত দলগুলির ‘কাটাছেঁড়া’য় ব্যস্ত থাকা অর্থহীন।
আমাদের সংবিধান-প্রণেতারা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে যে গ্রহণ করেছিলেন তার নেপথ্য প্রণোদনা ছিল দেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির অনুশীলনকে পরিচ্ছন্ন রাখা, যা ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্তর্গত। কিন্তু, তাঁদের ‘প্রজ্ঞা’ বা ‘দূরদৃষ্টি’ অধিকাংশ মানুষই বুঝতে ব্যর্থ। অনেক মানুষেরই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সম্পর্কে যে মূল্যায়ন তা দেখে মনে হয় যে, এটি যেন মায়ামরীচিকা! এই পল্লবগ্রাহিতার জন্যেই সমাজ-পরিসরে এটা নিয়ে কাঙ্ক্ষিত চর্চার আশাবাদ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে!
রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক
ইদানীং হিন্দি ভাষাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার একটা জোর প্রয়াস চলছে। এটা স্পষ্ট সংবিধান বিরোধী।
অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪–২০০২) লিখছেন: “আমাদের সংবিধানে কোনো ভাষাকেই ‘রাষ্ট্রভাষা’ বা ‘জাতীয় ভাষা’ বলে আখ্যাত করা হয়নি। হিন্দিকে বলা হয়েছে ‘সরকারি ভাষা’। সংবিধান যদি সংশোধন করা হয়, তবে ইংরেজিকে বলা হবে ‘সহচর সরকারি ভাষা’। ‘রাষ্ট্রভাষা’, ‘জাতীয় ভাষা’ ইত্যাদি আখ্যা সব ক-টি ভারতীয় ভাষারই পাওনা, কোনো একটি ভাষার নয়। হিন্দি যদি সেরকম একটা আখ্যা পেয়ে থাকে তবে সেটা বিধিসম্মতভাবে নয়, সেটা পাঁচজনের মুখে মুখে। যেমন সুবোধ মল্লিক মহাশয়কে লোকে ‘রাজা’ বলত। যেমন কংগ্রেস সভাপতিকে লোকে ‘রাষ্ট্রপতি’ বলত। রাষ্ট্রভাষা বলে হিন্দির একটা নামডাক হয়েছে। মন্ত্রীরাও তাকে রাষ্ট্রভাষা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সংবিধানে এর কোনো সমর্থন নেই। সুতরাং হিন্দি এমন কিছু হারাচ্ছে না, যা সংবিধান অনুসারে তার প্রাপ্য…।“[2]
‘
ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিল অনুসারে সরকারি কাজের ভাষা দেবনাগরী অক্ষরে হিন্দি এবং ইংরেজি। সংবিধানে ‘জাতীয় ভাষা’ বলে কোনও ভাষা উল্লিখিত হয়নি। ধারা ৩৪৩ থেকে ৩৫১-তে ভারতের ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ‘রাষ্ট্রভাষা’ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি এজন্যেই প্রদত্ত হ’ল যে, এই যদি আমাদের ‘সংবিধান-আনুগত্যের’ নমুনা হয় তাহলে তা নিদারুণ চিন্তার বিষয়!
রক্ষণাবেক্ষণ : সকলের দায়িত্ব
আমাদের সংবিধান ও তার আদর্শগুলিকে ‘চোখের মণি’র মতো আমরা রক্ষা করব, না কি বিসর্জন দেব, সেই ‘সিদ্ধান্ত’ নেওয়া জরুরি। বিসর্জন দেওয়া একেবারেই নির্বুদ্ধিতা। সেটা করার আগে ‘চোখের মণি’র কার্যকারিতাটা কিন্তু মনে রাখা বাঞ্ছনীয়!
রক্ষা করতে না-পারলে যে কী অবস্থা হতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে পৃথিবীর কতিপয় দেশের দিকে লক্ষ রাখা যেতে পারে। এদের মধ্যে বেশ কিছু রাষ্ট্রের জন্ম আমাদের স্বাধীনতা-প্রাপ্তির প্রায় সমসাময়িক হলেও লক্ষণীয় যে, তারা একটি সুসংবদ্ধ, বলিষ্ঠ সংবিধানের অভাবে অথবা আনুগত্য-হীনতায় দূর ও নিকট-অতীতে সংকটে ধুঁকেছে বা ধুঁকছে। সেইসব স্বাধীন দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে দেখেছি আমরা বারংবার। তাই ‘চোখের মণি’-কে খুব সন্তর্পণে বাঁচিয়ে রাখতে না-পারলে আমাদের জন্যেও ভবিষ্যতে পড়ে থাকবে শুধুই ‘গভীর অন্ধকার’! আশা করি, সেই ‘দুর্দিন’ আমাদের দেখতে হবে না!!
তথ্যসূত্র
[1] 25. Freedom of conscience and free profession, practice and propagation of religion. — (1) Subject to public order, morality and health and to the other provisions of this Part, all persons are equally entitled to freedom of conscience and the right freely to profess, practise and propagate religion.
[2] পথে প্রবাসে ও নির্বাচিত প্ৰবন্ধ’: অন্নদাশঙ্কর রায়। পৃষ্ঠা: ২৬০