মানব শরীরের কোষের মালিকানা কার - রোগীর না চিকিৎসক, গবেষকের?
আজ এমন একটা বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চলেছি, বাস্তবিকই সেটা একটা চলমান সমস্যা, কোথায় যে তার সত্যিকারের শুরু সেটা যেমন বেশ অস্পষ্ট, তেমনই কোথায় তার শেষ হবে, তাও সম্ভবতঃ কেউ জানে না। যাইহোক, যদি কোথাও একটা শুরু করতেই হয়, তাহলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ১৯৭৬ সালের ৫ অক্টোবর, যেদিন সিয়াটলের ব্যবসায়ী, ৩১ বছর বয়সী জন মুর প্রায় মরমর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস মেডিকেল সেন্টার ওরফে ইউসিএলএর প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ডেভিড ডাব্লিউ গোল্ডের দ্বারস্থ হন। মুরের রক্ত, অস্থি-মজ্জা এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের নমুনা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে ডক্টর গোল্ডে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করেন – হেয়ারি-সেল লিউকেমিয়া বাসা বেঁধেছে মুরের শরীরে।
জানি আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন খচখচ করছে যে, এটা আবার কী রকমের লিউকেমিয়া? সচরাচর তো এরকম নাম শোনা যায় না। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, এ এক বিরল ধরণের ক্যান্সার এবং খুবই মারাত্মক রূপ ধারণে সক্ষম এটি।
ব্যাপারটা তাহলে খোলসা করেই বলা যাক। মানব শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো প্লীহা। অনেক কাজের মধ্যে প্লীহার একটি দ্বায়িত্ব হল আমাদের রক্তে আক্রমণকারী জীবাণুর সাথে লড়াই করে শরীরকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো। প্লীহার যে বিশেষ প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকা এই কাজের জন্য নিযুক্ত হয় তাদের বলা হয় লিম্ফোসাইট। হেয়ারি-সেল লিউকেমিয়ায়, একজন ব্যক্তির প্লীহা সুস্থ সবল লিম্ফোসাইটের বদলে ত্রুটিপূর্ণ ম্যালিগন্যান্ট লিম্ফোসাইটে ভরে যায়। প্লীহা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এই ত্রুটিপূর্ণ কোষগুলোকে মেরে ফেলতে শুরু করে, কিন্তু একইসঙ্গে শরীরের সুস্থ কোষগুলোকেও সে তখন মেরে ফেলে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে এই লিম্ফোসাইটগুলোকে লক্ষ করলে দেখা যাবে ওরা চুলের মতো অভিক্ষেপ তৈরি করে এবং তাই জন্য ওদের চেহারা দেখতে লাগে লোমশ– সেই থেকে রোগটির এমন নাম হয়েছে।
মুরের প্লীহার অবস্থা দেখে তো গোল্ডে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন– স্বাভাবিক অবস্থায় যেটা এক পাউন্ড মতো থাকার কথা, ফুলেফেঁপে সেটা ১৪ পাউন্ডে এসে দাঁড়িয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তেই ফেটে যেতে পারে, গোল্ডে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে চাইলেন না, তড়িঘড়ি করে তিনি মুরের স্প্লেনেকটমি বা প্লীহার অপসারণের সুপারিশ করলেন, ইউসিএল-এর শল্যচিকিৎসকরা সেইমতো ২০ অক্টোবর, ১৯৭৬ মুরের অস্ত্রপ্রচার করেন এবং তা ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো , মুরের জীবনও রক্ষা পেল। শল্যচিকিৎসার মাত্র কয়েক দিন পরেই মুরের রক্তের প্রোফাইলও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন – যাক, মুরের ক্যান্সারকে ঠেকানো সম্ভব হয়েছে তাহলে!
অস্ত্রোপচারের পর ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ফিরে গেলেন মুর আর ওদিকে স্প্লেনেকটমি থেকে পাওয়া মুরের প্লীহার এক টুকরো নিয়ে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা শুরু করলেন গোল্ডে। দারুণ আশ্চর্য্য হয়ে গোল্ডে দেখেন যে, মুরের ত্রুটিপূর্ণ টি-লিম্ফোসাইটগুলো কিন্তু অনন্য।
আসুন, এই বেলা চট করে টি-লিম্ফোসাইট সম্বন্ধে একটু জেনে নিই। টি-লিম্ফোসাইট হ’ল একধরণের শ্বেত রক্ত কোষ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সদাব্যস্ত। শরীরের কোনো ভালো কোষ নিজেরাই যদি বাইরে থেকে অনুপ্রবেশকারী ভাইরাসের দখলে চলে আসে কিংবা ক্যান্সারে পরিণত হয় তখন সেই অসুস্থ, খারাপ কোষগুলোকে ধ্বংস করার কাজে টি-লিম্ফোসাইটের জুড়ি মেলা ভার। টি কোষগুলো জিএম-সিএসএফ (গ্রানুলোসাইট ম্যাক্রোফেজ কলোনী-স্টিমুলেটিং ফ্যাক্টর) নামে বিশেষ এক ধরনের রক্তের প্রোটিন বা লিম্ফোকাইন তৈরি করে যেটি ব্যাকটেরিয়া এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম এমন দুই ধরণের শ্বেত রক্তকণিকার বৃদ্ধি ঘটায় এবং তার ফলে রোগ বীজাণুৰ সংক্রমণ থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকে।
গোল্ডে লক্ষ করলেন যে মুরের টি-লিম্ফোসাইট অনেক অনেক বেশি মাত্রায় ওই নির্দিষ্ট লিম্ফোকাইনগুলো তৈরি করতে সক্ষম। দারুণ চমকে ওঠেন গোল্ডে, বুঝতে পারেন যে কী অসামান্য গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছেন তিনি। যদি একবার এই লিম্ফোকাইনগুলোর অতিরিক্ত উত্পাদনের কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেন, তবে এটাকে মেডিকেল প্রযুক্তির জন্য ব্যবহার করা কোনো ব্যাপারই না! একেবারে আদা জল খেয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন গোল্ডে। কিন্তু মুশকিল হলো, এই কাজের জন্য স্যাম্পল চাই– অনেক, অনেক স্যাম্পল চাই। অবশ্য তাতে আর অসুবিধে কিসের? মুর তো আছেই হাতের কাছে, ফলো-আপ ভিজিটের জন্য ওঁকে ডেকে পাঠালেই চলবে! যেমন ভাবা তেমন কাজ! গোল্ডের অনুরোধে, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারে হাজিরা দিতে আসেন মুর এবং প্রতিবারই তাঁর অস্থি-মজ্জা, রক্ত, ত্বক এবং বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করেন গোল্ডে।
কিন্তু সিয়াটল আর লস এঞ্জেলেসের মধ্যে এই যাতায়াত কি চাট্টিখানি কথা? শুধু যে সময় সাপেক্ষ তাতো নয়, অর্থবহুলও বটে। সুতরাং মুর তার চেক-আপ-এর ব্যাপারটা বাড়ির কাছের একজন ডাক্তারের কাছে স্থানান্তর করার বিষয়ে গোল্ডেকে জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে গোল্ডে একেবারে হাঁহাঁ করে ওঠেন, না, না তা কী করে হয়? এইসব পরীক্ষানিরীক্ষা অন্য কোথায়ও নয়,একমাত্র ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারেই হওয়া সম্ভব, আর অন্য কোনো হেঁজিপেঁজি ডাক্তারকে দিয়েও এসব হবে না, শুধুমাত্র গোল্ডেরই নির্দেশে এইসব করা যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, বিমান ভাড়া এবং লস এঞ্জেলেসের আবাসন বাবদ মুরের যা খরচাপাতি লাগবে, সে সবই খুশিমনে বহন করতে প্রস্তুত গোল্ডে।
আপনারাই বলুন, এরকম একটা সরেস প্রস্তাব পেলে কে না রাজি হয়? অতএব সাধাসিধে মুরও গোল্ডের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যেতে সোৎসাহে সম্মতি দিয়ে দিলেন।
এবার যেন হাতে স্বর্গ পেলেন গোল্ডে! অমূল্য টিস্যু নমুনা ইচ্ছেমতো পাওয়া যাচ্ছে, আর চিন্তা কীসের? রাত দিন গবেষণা করে মুরের টি-কোষগুলোকে ক্রমাগত উৎপাদনের উপায় বের করে ফেললেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো, এই সারাটা সময় ধরে গোল্ডের অনুরোধে মুর যখন তাঁর শরীর থেকে আরও রক্ত, আরও ত্বক, আরও অস্থি-মজ্জা এবং আরও শুক্রাণু দিয়ে যাচ্ছেন, গোল্ডে কিন্তু ভুলেও নিজের গবেষণার ব্যাপারে মুরের কাছে বিন্দুবিসর্গ উল্লেখ করেননি। ওদিকে মুর ধরেই নিয়েছিলেন, মানে গোল্ডের কথাবার্তা থেকে মুরের বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এই তাঁর শরীর থেকে বারবার টিস্যু নমুনা নেওয়া, এতসব পরীক্ষানিরীক্ষা করা, এসব তাঁর চিকিৎসারই অঙ্গ, মুরের ভালোর জন্যই সদাশয় ডাক্তার গোল্ডের এত অক্লান্ত প্রচেষ্টা; সে বেচারা জানবে কী করে যে এসবের পিছনে গোল্ডের আসল উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র নিজের গবেষণাকে আরও আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
হ্যাঁ, গোল্ডের গবেষণা তো তরতরিয়েই এগিয়ে চলল। সহকারী, শার্লি জি কোয়ানের সাথে মিলে মুরের ক্যান্সারাস টি-লিম্ফোসাইট থেকে গোল্ডে একটি সেল লাইন তৈরি করে ফেললেন; ৩০শে জানুয়ারী, ১৯৮১ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস মারফত একটি পেটেন্টের জন্য আবেদনও করলেন তিনি। এই পেটেন্টের নাম দিলেন তাঁরা ‘মো’ সেল লাইন এবং তার প্রোডাক্টস”, সংক্ষেপে ‘মো’। এই পেটেন্ট গ্রাহ্য হলে, রিজেন্টস, গোল্ড এবং কোয়ান মুরের কোষগুলোর ব্যবহার থেকে উদ্ভূত লাভের অংশ রাখতে সক্ষম হবে–কী বুঝছেন? যাকে বলে, একেবারে ফাটাফাটি পরিকল্পনা!
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে স্প্লেনেক্টমির আগে ইউসিএলএ থেকে মুরকে একটা লিখিত সম্মতি পত্র দেওয়া হয় এবং মুর ওই অস্ত্রপ্রচার পদ্ধতি অনুমোদন করে সেই কগজটিতে স্বাক্ষরও করেন। তবে, যদিও তিনি তাঁর প্লীহার অস্ত্রোপচারে সম্মতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি গোল্ড এবং কোয়ানের গবেষণা পরিকল্পনার কোনো ‘অবহিত সম্মতি’দেননি। এখানে হয়তো একটু বাড়তি কথা এসে যাচ্ছে, কিন্তু অবহিত সম্মতির ব্যাপারটা খোলসা না করলেই চলছে না। মানুষ যেখানে চিকিৎসা বা গবেষণার বিষয় বস্তু, সেইসব ক্ষেত্রে এই ‘অবহিত সম্মতির’ গুরুত্ব অপরিসীম। এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে ডাক্তার বা গবেষকরা তাঁদের চিকিৎসা পদ্ধতি, জেনেটিক পরীক্ষা, বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল ইত্যাদির উদ্দেশ্য, সুবিধা, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং বিকল্প এই সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রোগীদেরকে নিশ্চিত করে বোঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। এটা রোগীদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যে তাঁরা চিকিৎসা, পরীক্ষা বা ট্রায়ালে অংশ নিতে চান কিনা। এত কিছুর পর যখন রোগীর অনুমোদন মেলে, তখনই সমস্ত ব্যাপারটা স্বচ্ছ এবং আইনসঙ্গত হয়ে ওঠে।
সুধীগণ, এটা নিশ্চয় এখন আপনাদের কাছে জলের মতো পরিষ্কার যে, গবেষণার জন্য মুরের প্লীহা কোষ ব্যবহার করার কোনো সরাসরি অনুমোদন গোল্ডেদের কাছে ছিল না।
জানি, আপনাদের মনে এই মুহূর্তে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার ছবি ভেসে উঠছে–হেনরিয়েটা ল্যাকসের ‘হেলা সেল’। হ্যাঁ, সেটিও চিকিৎসা-বিজ্ঞান জগতের আরেক জটিলকুটিল কাহিনী। হেনরিয়েটা ল্যাকস–এর জীবনী রচয়িতা বিজ্ঞান লেখিকা রেবেকা স্কুলট তাঁর ২০১০ সালের বই, ”দ্য ইমর্টাল লাইফ অফ হেনরিয়েটা ল্যাকস”-এ লিখেছেন যে, হেলা কোষের সাথে জড়িত ১০,০০০টিরও বেশি পেটেন্ট দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু হেনরিয়েটা এটা জেনে যাবার সুযোগ পাননি যে তাঁর জরায়ুর ক্যান্সার কোষ চিকিৎসা গবেষণায় তুমুল আলোড়ন তুলেছে। জানবেনই বা কী করে? যে বছর ক্যান্সার ধরা পড়ে, সে বছরই তো তিনি মারা যান। এমনকি তাঁর মৃত্যুর কয়েক দশক পর পর্যন্ত তাঁর পরিবারও হেলা কোষের কথা শোনেননি। হেনরিয়েটা বা তাঁর আত্মীয়দের কাউকেই বায়োপসি সম্পর্কে কিচ্ছু বলাও হয়নি। সেই ১৯৫১ সালে, এটা যদিও অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ অবহিত সম্মতির ব্যাপারটা তেমন চালুই হয়নি তখন।
তো মোদ্দা কথাটা হলো, হেনরিয়েটা এবং মুর, এই দুজনেরই, কোষের বাণিজ্যিকীকরণ করেছিলেন চিকিৎসক এবং গবেষকরা, এবং তাঁদের সম্মতি ছাড়াই।
এদিকে ১৯৮৩ সালে, মুরকে একটি নতুন সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলা হলো। সেখানে লেখা ছিল যে, “আমার কাছ থেকে প্রাপ্ত রক্ত এবং/অথবা অস্থি-মজ্জা থেকে তৈরি করা হতে পারে এমন যে কোনো সেল লাইন বা অন্যান্য সম্ভাব্য পণ্যের উপর আমার, বা আমার উত্তরাধিকারীদের যে অধিকার থাকতে পারে, সেই দাবি আমি স্বেচ্ছায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ছেড়ে দিচ্ছি”। যদিও মুর প্রথমে সম্মতি ফর্মে স্বাক্ষর করেছিলেন, কিন্তু তাঁর অধিকারগুলি মওকুফ করে পুনরায় দস্তখত করার ব্যাপারে তিনি অস্বীকার করলেন। মুর তাঁর অধিকার বাতিল করেননি দেখে গোল্ডে তাঁকে ইউসিএলএ-তে ফিরে আসতে বলেন, কারণ হিসাবে গোল্ড জানান যে একটা ‘ভুল’ হয়েছে, সেটা ঠিক করার জন্য, মুরকে সম্মতি ফর্মে পুনরায় দস্তখত করতে হবে। শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকার মতে, মুর এবার সন্দিহান হয়ে ওঠেন এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রের আইন বিশেষজ্ঞ বেভারলি হিলসের অ্যাটর্নি সানফোর্ড এম গেজকে তিনি ফর্মটি দেন এবং গেজের কাছ থেকে আইনি পরামর্শ চান। মুরের অন্যান্য অ্যাটর্নি যাঁরা গেজের সাথে সহযোগিতা করেছিলেন তাঁরা হলেন ক্রিস্টোফার. ই. অ্যাঞ্জেলো এবং জোনাথন. টি. জ্যাকি।
তো মুরের অ্যাটর্নিরা খোঁজ খবর করে দেখেন, ১৯৮৪ সালের ২০ মার্চ, মার্কিন পেটেন্ট অফিস ইউসিএলএ রিজেন্টের কৃতিত্বে “মো’’ সেল লাইনের পেটেন্ট জারি করেছে; গোল্ডে এবং কোয়ানকে এই সেল লাইনের উদ্ভাবক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাটর্নিদের অনুসন্ধানে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। “মো’’সেল লাইনকে একটি বাণিজ্যিক জিএম-সিএসএফ পণ্য হিসাবে বিকশিত করার জন্য, ম্যাসাচুসেটস স্থিত কেমব্রিজের জেনেটিক্স ইনস্টিটিউট, ইনকর্পোরেটেড এবং নিউ জার্সির ইস্ট হ্যানোভারের স্যান্ডোজ ফার্মাসিউটিক্যালস কর্পোরেশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন গোল্ডে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, কেমোথেরাপির ফলে যাদের শ্বেত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেইসব ক্যান্সার রোগীদের রক্ত তৈরিতে “মো’’ সেল উদ্ভূত জিএম-সিএসএফ লিম্ফোকাইনটি প্রতিষেধক হিসাবে দুর্দান্ত চিকিৎসাগত মূল্য পাবে। এমনকি, নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটিকে প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং এইডস রোগীদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতেও এই লিম্ফোকাইনটি প্রচুর সহায়তা করতে পারে।
জেনেটিক্স ইনস্টিটিউটের সাথে একটি চুক্তির অধীনে, গোল্ডে ওই কোম্পানির পেইড পরামর্শদাতা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং এই পেটেন্টের সাধারণ স্টকের ৭৫,০০০ শেয়ারের অধিকার অর্জন করেছিলেন। শুনলে আঁতকে উঠবেন যে, আজকের হিসেবে এর মূল্য ২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এখানেই শেষ নয়, এই “মো’’ সেল লাইন, তার থেকে প্রাপ্ত সমস্ত পণ্য সমূহ এবং তা দিয়ে যেসব গবেষণা করা হয়েছে সে সব সঞ্চিত উপকরণের উপর একচেটিয়া অধিকারের বিনিময়ে জেনেটিক্স ইনস্টিটিউট তিন বছর ধরে গোল্ড এবং ইউসিএলএ রিজেন্টদের কমপক্ষে ৩০০,০০০ ডলার দিতে সম্মত হয়েছিল।
স্যান্ডোজ ফার্মাসিউটিক্যালসও এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকেনি, উপরিউক্ত একচেটিয়া অধিকারের চুক্তিতে তারাও যোগদান করে এবং চুক্তির অংশীদার হিসাবে তাদের প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ১১০,০০০ ডলার।
মুর যখন জানতে পারলেন তাঁর শরীরের কোষ নিয়ে গোল্ডে কী করছেন, তিনি অবহিত সম্মতির অভাব, জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভিযোগে গোল্ডে, ইউসিএলএ রিজেন্টস, কোয়ান, জেনেটিক্স ইনস্টিটিউট ইনকর্পোরেটেড এবং স্যান্ডোজ ফার্মাসিউটিক্যালস কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ একটি মামলা দায়ের করেন।
মুর এবং তাঁর অ্যাটর্নি গেজ, অ্যাঞ্জেলো এবং জ্যাকি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মুরের বাণিজ্যিকীকৃত কোষ থেকে লাইসেন্স-প্রাপ্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো যে বিপুল অর্থ কামিয়েছে, সেই লাভের কিছু অংশ তো মুরেরও প্রাপ্য ছিল। এক্কেবারে হক কথা! আইনি দল আরও দাবি করলেন যে, গোল্ডে এবং তাঁর দল নিয়ম না মেনে, ভুলভাবে, যা রূপান্তর করেছে তা আসলে মুরের সম্পত্তি, গোল্ডে চুরি করেছেন মুরের সেই সম্পত্তি –মুরেরই প্লীহা কোষ।
১৯ মার্চ ১৯৮৬, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপিরিয়র কোর্ট ইউসিএলএ রিজেন্টদের পক্ষে রায় দেয়। লস এঞ্জেলেস কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক ওয়ারেন এইচ. ডিরিং এবং জন এল. কোল মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার কারণে মামলাটি আর বিচারেই যায়নি। ডিরিং এবং কোলের যুক্তি ছিল যে মুরের কোনও মামলাই ছিল না কারণ তাঁর কোষে তাঁর কোনও সম্পত্তির অধিকার ছিল না।
কাউন্টি কোর্টের এইরূপ সিদ্ধান্তে যারপরনাই অসন্তুষ্ট হন মুরের উকিলরা, তাই ২১ জুলাই, ১৯৮৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া কোর্ট অফ আপিলের কাছে তাঁরা মামলাটির আপিল করেন। এইবার নিম্ন আদালতের রায়কে উল্টে দিল আপিল কোর্টের বিচার। বিচারপতি অ্যালেন ই. ব্রুসার্ড এবং স্ট্যানলি মস্ক বললেন যে, নিজের শরীরের উপর মুরের সম্পত্তির অধিকার আলবাত রয়েছে। একজন রোগীর রক্ত এবং টিস্যু তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, গবেষকরা রোগী এবং রোগীদের কোষ থেকে জেনেটিক্যালি যেসব বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি করবেন তার লাভের অংশীদার হওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে রোগীদের। আদালত এও বলল যে, মুর তাঁর স্প্লেনেকটমির জন্য সম্মতি জানিয়ে ফর্মে স্বাক্ষর করার সময় তাঁর প্লীহার সেই অধিকারগুলি মোটেই মকুব করেননি এবং অস্ত্রোপচার বা পরবর্তী চিকিৎসা গবেষণায় সম্মতি দিয়ে তাঁর কোষের বাণিজ্যিক বিকাশেও সম্মত হননি।
আপিল কোর্টের রায় শুনে হৈহৈ পড়ে যায় চারদিকে। মুরের অন্যতম আইনজীবী জোনাথন জ্যাকি উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রতিবেদকদের বলেন, আমরা স্পষ্টতঃই, আপিল আদালতের সাথে একমত, প্লীহা কোষের সম্পত্তির অধিকার কার বেশি হওয়া উচিত-যার প্লীহা তাঁর মানে মুরের না কি গোল্ডে এবং কোয়ান-এর? অবশ্যই মুরের, কারণ তিনিই তো ওই উৎস প্লীহার মালিক। গোল্ডে এবং কোয়ান তো মুরের কোষ উদ্ভাবন করেননি। তাঁরা শুধু কোষ খুঁজে পেয়েছেন, ল্যাবরেটরিতে সংখ্যায় বাড়িয়ে তুলেছেন আর পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এহেন যুক্তি শুনে খেপে লাল হয়ে যায় গোল্ডে এবং ইউসিএলএর তরফের অ্যাটর্নি অ্যালেন বি ওয়াগনার। তিনি বলেন, যত সব অর্থহীন কথাবার্তা, মুর সমাজে কোন অবদান রাখেননি। গোল্ড এবং কোয়ানই সব কাজ করেছেন। যেই মুহূর্তে রোগাক্রান্ত প্লীহা মুরের শরীর থেকে বের হয়ে গেছে তখন থেকেই সেটার উপর মুরের আর কোনো অধিকার নেই। অ্যাটর্নিরা আরও যুক্তি দেন, ‘মো’ সেল লাইনে এখন আর মুরের কোনো কোষ নেই; গবেষকরা সেই কোষগুলির জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে সেল লাইনটা শুধু চালিয়ে যাচ্ছেন। আপিল কোর্টের এই বিচার আমরা মানি না, আমরা উচ্চতর ন্যায়ালয়ে যাব। অতএব, রেগেমেগে দুমদুম করে তাঁরা এবার ক্যালিফোর্নিয়া সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
চারদিকে তখন সে কী টানটান উত্তেজনা, রংবেরঙের জল্পনা কল্পনা–হবেই তো–নিজের কোষের সম্পত্তির অধিকার কার–এই প্রথম এরকম একটা অভিনব বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোতে চলেছে, এত দিনের আইনি টানাপোড়েনের এইবার হয়তো নিষ্পত্তি হবে।
৯, জুলাই ১৯৯০, মুর বনাম ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস মামলায় ক্যালিফোর্নিয়ার সুপ্রিম কোর্ট ফোর টু থ্রী সিদ্ধান্তে রায় দেয় যে, নিজের শরীর থেকে ফেলে দেওয়া কোষের উপর বা তার থেকে প্রাপ্ত কোন মুনাফার উপর মুরের সম্পত্তিগত অধিকার নেই। আদালত অবশ্য এটা স্বীকার করেছে যে, গোল্ডে এবং কোয়ান মুরকে গ্রহণযোগ্য অবহিত সম্মতি প্রদান করেননি। মুরের শরীর থেকে সংগ্রহ করা জৈব জিনিসপত্রের প্রতি তাঁর আর্থিক আগ্রহ আছে কিনা সে বিষয়ে মুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাধ্যবাধকতা গবেষক চিকিৎসকদের ছিল, যা তাঁরা এক্ষেত্রে করেননি। সুতরাং, চিকিৎসকদের এই ব্যবহারে মুর যদি কোনো আঘাত পেয়ে থাকেন, তার জন্য ক্ষতিপূরণ তিনি দাবি করতেই পারেন।
হ্যাঁ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারে জিততে পারেননি জন মুর, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে, কারণ তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁর নিজের শরীরের টিস্যুতে আইনগতভাবে মালিকানার দাবি তুলে দীর্ঘমেয়াদি মামলা লড়েছেন এবং রোগীদের অধিকারের জন্য এক দশক ধরে প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন।
পুরো ঘটনায় সবথেকে আক্ষেপের ব্যাপার এটাই, মুরকে কখনোই কেউ জানাননি –না গোল্ডে, না ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারের অন্যান্য চিকিৎসকরা যে, তাঁর কোষগুলোর সম্ভাব্য বাণিজ্যিক মূল্য রয়েছে–এবং সেটা অল্পস্বল্প নয়–কয়েক বিলিয়ন ডলার। স্কলুট লিখেছেন, মুর পরে একজন প্রতিবেদককে বলেছিলেন যে, অনেক মেডিকেল রেকর্ডে গোল্ডে তাঁর নাম না লিখে তাঁকে “মো” হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যেটা শুধুই একটা সেল লাইনের নাম, মুর এতে দারুণ আহত হয়েছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল গোল্ডের কাছে তিনি আর কোনো ব্যক্তি বিশেষ ছিলেন না, কেবলই সেল লাইনের উৎসে পরিণত হয়েছিলেন, যেখান থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলারের আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এই যুগান্তকারী রায়ের পরবর্তী জমানায়, যখনই কোনো রোগীর পরিবারের সদস্যরা মৃত রোগীর দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, বেশিরভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতই সেই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রেই তারা মুর বনাম রিজেন্টস-এ ক্যালিফোর্নিয়ার সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের নজির টেনে এনেছে। কী অদ্ভুত নিস্পৃহতা! রোগীর মৃত্যুর পর, তার চিকিৎসার ভারপ্রাপ্ত তদন্তকারী গবেষক চিকিৎসকদের কি একটিবারও মনে হয় না যে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সহায়ক. এই মহামূল্য অবদানের জন্য রোগীর পরিবারের লোকেদের কিছু আর্থিক সুবিধা অন্তত পাওয়া উচিত?
এর মধ্যে আরও ব্যাপার আছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিভঙ্গি হল যে, আজকে যদি প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে প্রত্যেক ব্যক্তির টিস্যুতে সম্পত্তির অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে হয়, যদি সব রোগীকেই তাদের টিস্যুর জন্য অর্থ দিতে হয়, তাহলে চিকিৎসা গবেষণার অগ্রগতিতে বাধা পড়বে, কিন্তু তা বলে কি সমস্ত পরোপকারের বোঝা কেবল রোগীরাই বহন করবে? মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হবে আর রোগীদের বরাতে ঢুঁ ঢুঁ? এটাই বা কেমনতর কথা?
চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মৌলিক ক্যান্সার গবেষণা এবং ওষুধ আবিষ্কারে ইন ভিট্রো মডেল সিস্টেম হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এই সেল লাইনগুলো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক জমানায় অধিকাংশ আর্থিক ও সাম্মানিক পুরষ্কার কার্যত সেইসব চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিকদের বরাতে যায় যারা সেল লাইন রূপান্তর বা পরিবর্তনের গবেষণায় রত আছেন। সেল লাইন ডেভেলপমেন্ট এবং মডিফিকেশনের আজকের এই যে এত বোলবোলা, তা মূলত বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দ্বারা বিকশিত কাজের উপর নির্ভরশীল, এবং এই প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই সাধারণত সরকারীভাবে অর্থায়িত। এই রাজসূয় যজ্ঞের শুরু থেকে শেষ, বড়ো থেকে ছোট ধাপে জড়িয়ে আছেন ছোট বড়ো অনেক মানুষ। অথচ বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের এই দীর্ঘ শৃঙ্খলে কেবলমাত্র শেষ যোগদানকারী ব্যক্তিটি ওরফে চিফ ইনভেস্টিগেটরই লাভ করেন আর্থিক পুরস্কারের সিংহভাগ– – এটা কোনোমতেই ন্যায়সঙ্গত নয়।
এরকমটাই যদি বিজ্ঞান-ব্যবসার দস্তুর হয়ে থাকে, তাহলে তো বলব টেড স্লাভিনই খাঁটি কাজটা করেছিলেন। ভাবছেন সে লোকটি আবার কে?
১৯৫০-এর দশকে হিমোফিলিয়ার চিকিৎসার জন্য টেড স্লাভিনকে যে রক্ত দেওয়া হয়, তা কোনও রোগের জন্য পরীক্ষা করা হয়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সংক্রামিত রক্ত গ্রহণের পর স্লাভিনের শরীরে হেপাটাইটিস বি- এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। পরবর্তীতে স্লাভিন নিজেই তার রক্তকণিকা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে মুনাফা করেছেন। এরপর তিনি এসেনশিয়াল বায়োলজিক্যালস নামে একটি কোম্পানিও গঠন করেন, যা তাঁর মত অন্যদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে যে মুর কেন তবে তাঁর নিজের সেল বিক্রি করলেন না? কারণ সে ক্ষেত্রে তো “গোল্ডের পেটেন্ট” লঙ্ঘিত হত।
তবু একটা কথা থেকেই যায়। আজকে যদি বিরল রোগে আক্রান্ত মানুষেরা স্লাভিনের মতো নিজের শরীরের জৈব উপাদান চড়া দামে বিক্রি করে নিজেরই ঘরে অর্থ ঢোকাবার চেষ্টা করেন, তাহলে ভাবুন তো, এই লোভী ফার্মা কোম্পানিগুলোর কী হাল হবে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, সোজা ভিক্ষের থালা হাতে দোরে দোরে ঘুরে বেড়াবে!
সুতরাং, রোগীদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার না করে, তাদেরকেও এই গবেষণা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করলে, আরও অনেক মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে টিসু স্যাম্পল প্রদান, বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগদান করবে এবং এতে যে শুধু পরীক্ষানিরীক্ষার কাজই ত্বরান্বিত হবে তাই নয়, গবেষণার সুবিধাগুলো আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের মধ্যে –সেটা নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের সকলের মনোযোগী হওয়া দরকার।
তথ্যসূত্র:
Golde, David W., Shirley G. Quan, and Martin J. Cline. “Human T lymphocyte cell line producing colony-stimulating activity.” Blood (1978): 1068–72.
Nott, Rohini, “Moore v. Regents of the University of California (1990)”. Embryo Project Encyclopedia (2020-11-18). ISSN: 1940-5030
Skloot, Rebecca. The Immortal Life of Henrietta Lacks. New York City: Crown Publishers, 2010.