নতুন ধাঁধা
মার্চ ৩০, ২০১৫
বহুদিন অবসর-এর ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা বিভাগে নতুন ধাঁধা যোগ করা হয় নি। কিছু কিছু আগ্রহী পাঠক নতুন ধাঁধার কথা মাঝে মাঝেই আমাদের বলছিলেন। সম্প্রতি সুমিত রায় বেশ কয়েকটি ধাঁধা খুঁজে পেতে, বাংলায় লিখে, সাজিয়ে গুছিয়ে এনে দিয়েছেন, সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। বারোটি ধাঁধা আগের দুটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।। এবার দেওয়া হল আরও তিনটি। ('নতুন ধাঁধা'র আগেরগুলি এইখানে পাবেন - ধাঁধা ১ - ৩ ; ধাঁধা ৪ - ৬ ; ধাঁধা ৭ - ৯); ধাঁধা ১০ - ১২)
ধাঁধা ১৩
পোনু, পার্থ আর পুষ্পেন্দুসুন্দরের মধ্যে জমির দখল নিয়ে অনেকদিনের তকরার, তারা ঠিক করেছে বন্দুকের ডুয়েল লড়ে তার নিষ্পত্তি করবে। তারা যথাক্রমে গুলি ছুঁড়ে যাবে, প্রথমে পোনু, তারপর পার্থ, শেষে পুষ্পেন্দুসুন্দর, আবার পোনু, পার্থ ইত্যাদি। পোনুর তাক গড়ে তিনবারে একবার লাগে, পার্থর তিনবারে দুবার আর পুষ্পেন্দুসুন্দরের লক্ষ্য অব্যর্থ। বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা বাড়াবার জন্য পোনু কি কিছু করতে পারে?
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
ধাঁধা ১৪
শিবঠাকুরের আপন দেশে সারদাকাণ্ড চালানোর জন্য বড়দি সমেত বোয়াল, কাতলা থেকে খলসে অবধি সব ধরা পড়েছে, মোট সংখ্যা ধরা যাক 'ক'। একুশে আইনের অদ্ভুত সাজা। মামার বাড়ীতে একবার ঢুকে গেলে তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা তো দূরে থাক, কে কোথায় আছে, কার কী হয়েছে, তার কোনো হদিশ পাবে না। এদিকে সেখানে এক বাসরঘর আছে যেখানে একজন একজন করে কয়েদীকে নিয়ে গিয়ে পুলিস ধীরে সুস্থে তত্ত্বতাবাস করতে পারে, যাকে খুসি, যতোবার খুসি। কোন কয়েদী গেলো, কবার গেলো, কে গেলো না, কখন গেলো -- এসব নন্দী জেলারের মর্জিমতো, কেউ জানতে পারবে না। তবে দেশে কন্স্টিটিউশন আছে, নাগরিক অধিকার বলেও কিছু আছে, সেটা এইরকম। ওই বাসরঘরে একটামাত্র আলো আছে, কুশলবিনিময়ের শেষে কয়েদী সেটা তার খুসিমতো জ্বালিয়ে বা নিভিয়ে আসতে পারবে, জেলের লোকেরা কোনো বাধা দেবে না বা আলোর এদিকওদিক করবে না। এই বাসরবাস অনন্তকাল ধরে চলতে পারে যদি না বন্দীদের কেউ কখনো ঠিকমতো বলতে পারে যে আমাদের সবাইকে অন্তত একবার করে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তখন তাদের মুক্তি দিতে হবে।
জেলে যাবার আগে শেষ জমায়েতে এরা কি মুক্তি পাবার কোনো মতলব ছকে সবাই জেনে আবার ফিরে দেশসেবা করার আশা নিয়ে জেলে যেতে পারবে?
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
ধাঁধা ১৫
হত্যারহস্যে সন্দেহভাজন হচ্ছে আটজন, তারা সবাই একটা গুণ্ডা দলের। দেবেন্দ্রবিজয় আর দীপক চ্যাটার্জি দুজনকেই সরকার রহস্যভেদের কাজে লাগিয়েছেন। সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে তদন্ত করে তাঁরা দুজনেই দুটি করে নাম ঠিক করেছেন তার মধ্যে একজন নিশ্চিত খুনি। তাঁরা একে অন্যের তালিকা জানেন না। ছ্যাকড়া গাড়ীর হরতাল চলছে, আবার পুকুরের সাবমেরিনে তেল ফুরিয়েছে তাই এই দুই প্রবাদপ্রতিম গোয়েন্দার ফোন করা ছাড়া যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। এখন ফোনে কথা বলে দুজনের তালিকা থেকে যদি মাত্র একটি সাধারণ নাম পান তাহলে প্রশ্নাতীতভাবে জানা যাবে যে সেই ব্যাটাই খুনি। তবে হ্যাঁ, দুই গোয়েন্দাকেই নাম জেনে খাতায় সই করতে হবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করে গণধোলাই দেবার পর বিচারের ব্যবস্থা করা যাবে। মুস্কিল হচ্ছে এই যে গুণ্ডার দল টেলিফোন ট্যাপ করে রেখেছে। তারা খুনির নাম জানতে চায়, জানতে পারলেই দলের কীর্তিকলাপ ফাঁস হবার আগে তাকে তারাই খতম করে দেবে। গণধোলাই হবে না আর না হলে ভোটাররা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হতে পারে।
দেবেন্দ্রবিজয় আর দীপক চ্যাটার্জি বলে কথা, ওঁরা কোনো একটা উপায়ে দুজনের তালিকায় একটাই সাধারণ নাম আছে কিনা আর থাকলে সেটা কী তা বার করবেনই। মনে রাখতে হবে যে ওঁরা এবিষয়ে আগে আলোচনা করার কোনো সুযোগ পাননি। তারপর কোথা হইতে কী হইয়া যাবে, দীপক চ্যাটার্জি একহাতে জ্বলন্ত টর্চ আর একহাতে পিস্তল নিয়ে পাইপ বেয়ে দোতলার থেকে খুনিকে গ্রেপ্তার করে আনবেন। যতোই লাইন ট্যাপ করুক, গুণ্ডার দল জানতেই পারবে না। চেষ্টা করে দেখুন, মতলবটা বার করতে পারলে, কে জানে, রতনলালকে পিঁজরাপোলে পাঠিয়ে তার পোস্টে বাহাল হয়েও যেতে পারেন।
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
আপনারা বলবেন, এর মধ্যে এমন কি কঠিন ব্যাপার আছে মশায়, দেবেন্দ্রবিজয় যদি দীপক চ্যাটার্জিকে তাঁর তালিকা জানিয়ে দেন, তাহলেই তো দীপক চ্যাটার্জি খুনির নাম জেনে যাবেন! তা বটে কিন্তু সেই কথা দীপক চ্যাটার্জি দেবেন্দ্রবিজয়কে কী ভাবে জানাবেন? মনে থাকে যেন, দুজনেই খাতায় সই না করলে চলবে না। দেবেন্দ্রবিজয় আর দীপক চ্যাটার্জি, দুজনের মধ্যে যদি একটা গোপন কথা আগে থেকে ঠিক করা থাকতো, তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে সাঙ্কেতিক ভাবে তা জানানো যেতো, কিন্তু তা যখন নেই তখন দেখা যাক তাঁরা একটা গুপ্ত সঙ্কেত সৃষ্টি করতে পারেন কিনা।
আটটা সম্ভাব্য খুনি -- নাম দেওয়া যাক ১,২, ..., ৭, ৮ -- তাদের আটাশটা জুড়িতে ভাগ করা যায়। দুই গোয়েন্দার প্রথম কাজ হবে তার একটা টেব্ল বানিয়ে পরস্পরকে জানানো। গুণ্ডারা জানলে ক্ষতি নেই। অনেকভাবে টেব্ল করা যায়, যেমন এই চার রো আর সাত কলামের টেব্ল:
(১,২) (১,৩) (১,৪) (১,৫) (১,৬) (১,৭) (১,৮)
(৩,৪) (২,৪) (২,৩) (২,৬) (২,৫) (২,৮) (২,৭)
(৫,৬) (৫,৭) (৫,৮) (৩,৭) (৩,৮) (৩,৫) (৩,৬)
লক্ষ্য রাখতে হবে যে প্রতিটি কলামে এক থেকে আট পর্যন্ত সব সংখ্যা যেন শুধু একবার করে থাকে। এবার দেবেন্দ্রবিজয়কে বার করতে হবে কোন কলামে তাঁর জুড়িটি আছে, তিনি সেটি দীপক চ্যাটার্জিকে জানাবেন। ধরা যাক দেবেন্দ্রবিজয়ের জুড়ি (১,২), তাহলে দেবেন্দ্রবিজয় বলবেন আমার জুড়িটি আছে ১নং কলামে।
এখন দীপক চ্যাটার্জির জুড়িটিও যদি ১নং কলামে থাকে তাহলে ঘুচে গেলো কেননা তাহলে আর মাত্র একজনকে খুনি বলে সনাক্ত করা যাবেনা। তা যদি না হয় -- ধরা যাক দীপক চ্যাটার্জির জুড়িটি হলো (২,৫) -- তাহলে দীপক চ্যাটার্জি বুঝবেন যে দেবেন্দ্রবিজয়ের জুড়ি হয় (১,২) নয় (৫,৬)। তখন দীপক চ্যাটার্জি এই দুটো জুড়ে একটা আর এই দুটো বাদ দিয়ে একটা তালিকা বানাবেন, অর্থাৎ (১,২,৫,৬) আর (৩,৪,৭,৮), আর তা দেবেন্দ্রবিজয়কে পাঠিয়ে বলবেন যে আমার জুড়ি দেখতে পাবেন হয় প্রথমটায় নয় দ্বিতীয়টায়।
এই খবর পাবার সঙ্গে সঙ্গে দেবেন্দ্রবিজয় জানতে পারবেন কোনটায় -- এক্ষেত্রে প্রথমটা -- কেননা তাঁর জুড়ি সেখানে দেখতে পাবেন। এই হলো গোপন সঙ্কেত যা তাঁরা দুজনে ছাড়া আর কেউ জানেনা।
দেবেন্দ্রবিজয় তখন জানাতে পারেন যে তাঁর জুড়ি হচ্ছে হয় (১,২) নয় (৩,৪) [বা আপনার দুটো তালিকার প্রথম দুটো করে নাম]। দীপক চ্যাটার্জি জানালেন হ্যাঁ ওই দ্বিতীয় বাঁদরটি [বা হ্যাঁ হয় ১ নয় ৪]।
এই যে দুজনে মিলে একটা সঙ্কেত সৃষ্টি করে খোলাখুলি ভাবে গোপন তথ্য চালাচালি করার উপায় দেখানো হলো, ব্রিজ খেলাতে এর প্রয়োগ আছে। একজন খেলোয়াড় তার নিজের হাত দেখে জানে যে তার পার্টনারের হাতে কী তাস নেই। আবার তার পার্টনারের ক্ষেত্রেও তাই। এই জানা ভিত্তি করে তারা একটা সঙ্কেত সৃষ্টি করে খেলায় ডাকের মারফৎ খবর চালাচালি করতে পারে (এবং ভালো খেলাতে করেও থাকে)।
সুমিত রায়ের সৌজন্যে
উৎস - Mathematical Puzzles: A Connoissueur's Collection" - Peter Winkler, A.K.Peters, MA, 2004
লেখক পরিচিতি: পাঁচ দশক হোলো আমেরিকাবাসী। চাকরীজীবনে তথ্য- ও সংযোগপ্রযুক্তি বিপ্লবী, যদিও পদাতিকমাত্র। অবসর নেবার পর কিছু লেখালেখি করে থাকেন। ঘোর রবীন্দ্রপ্রেমী, নিউ জার্সিতে এক রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার স্কুল ও তিনটি সফল রবীন্দ্রমেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গীতবিতান.নেট রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর জ্ঞানকোষ মাত্রার এক বিস্ময়কর ওয়েবসাইট, সার্ধশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি। "অবসরের" সঙ্গে জন্মকাল থেকে নানাভাবে যুক্ত।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।