প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুনর্নবীকরণ শক্তি উৎসের চালচিত্র-

(খ) ২০০৫ থেকে ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দ

সবুজ শক্তি ২০০৪ খ্রী-তে যে স্থানে পৌঁছেছে তা আরও এগিয়ে গেল পরবর্তী সময়ে। ২০০৫ থেকে ২০০৯, এই পাঁচ বৎসরের প্রতি বৎসরেই সবুজ-শক্তির মোটামুটি প্রতিটি উৎসেই বিকাশ ঘটেছে। এই পাঁচ বৎসরে বায়ু শক্তি বেড়েছে গড়ে বৎসরে ২৭ শতাংশ, সৌর পি. ভি. গ্রীড-ছাড়া ও গ্রীড-যুক্ত যথাক্রমে ১০২ ও ৬০ শতাংশ, কেন্দ্রীভূত সৌর ২৫ শতাংশ, সৌর জরম জল ১৯ শতাংশ এবং ইথানল উৎপাদনের বাৎসরিক গড় বৃদ্ধি ২০ শতাংশ। এ ছাড়া শক্তি ও তাপ-এর জন্য বায়োমাস এবং ভূতাপীয় উৎসের বৃদ্ধি হয়েছে দৃঢ়ভাবে। কিন্তু এই বিকাশকে ছাড়িয়ে গেছে ২০০৯ খ্রী-র সবুজ শক্তির বৃদ্ধি [ চিত্র ৫ ]।মনে রাখতে হবে বিশ্বব্যাপী মন্দায় ২০০৯ খ্রী-তে সার্বিক শক্তির চাহিদা কমে গিয়েছিল ১.১ শতাংশ। এ অবস্থায় সবুজ শক্তির এই বিকাশ নিশ্চিতভাবে প্রশংসনীয়। আমরা নীচে সে বিষয়ে আলোচনা করবো।

চিত্র ৫

সবুজ-শক্তিকে সামনে রেখে ২০০৪ খ্রী-র চিত্র যদি পর্যালোচনা করি দেখতে পাওয়া যাবে যে, ছিধ-অঞ্চলের বাইরের এশিয়া ( চীন-সহ ), আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা মহাদেশগুলিতে বায়োমাসের প্রাচুর্য থাকায় এরা সবুজ-শক্তি ব্যবহারে মূখ্য ভূমিকা নিয়েছে [ চিত্র ৬- (ক) ]।বেশির ভাগটাই ব্যবহৃত হচ্ছে রান্নার কাজে ও বাসস্থান গরম রাখার জন্য। এ সময়ে যখন জলবিদ্যুৎ ও 'নূতন' সবুজ শক্তি-উৎসগুলি ( যথা বায়ু, সৌর ইত্যাদি )-র কথা ওঠে, তখন দেখতে পাই ২০০৪ খ্রী-তে OECD-অঞ্চলের অন্তর্গত রাষ্ট্রগুলি সবুজ শক্তি ব্যবহার করেছে [যথাক্রমে জলবিদ্যুৎ ৪৫ ও নূতন সবুজ শক্তি ৬৬ শতাংশ (চিত্র ৬খ)]।

চিত্র ৬- (ক)

চিত্র ৬খ

পরবর্তীকালে, চীন, ভারত ও ব্রাজিল বাদে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলি দেশে সবুজ শক্তির বাজার বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, আর্জেন্টিনা, কষ্টারিকা, ইজিপ্ট, ইন্দোনেশিয়া, কিনিয়া, তানজানিয়া, থাইল্যাণ্ড এবং উরুগুয়ে। বস্তুতঃ এটা বলা যায় যে সবুজ শক্তির বিকাশ ধীরে ধীরে শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলির দিকে প্রসারিত হচ্ছে। আমরা কিছু চিত্র ও সারণীর মাধ্যমে ২০০৫ খ্রী থেকে ২০০৯ খ্রী পর্যন্ত এই বিকাশ বুঝবার চেষ্টা করবো।

প্রাথমিক ও অন্য শক্তি ২০০৪-০৮
চিত্র ৭ এবং ৮-এ দেখানো হয়েছে বিশ্বে প্রাথমিক ও অন্ত্য শক্তির উৎপাদন জ্বালানী অনুযায়ী, ১৯৭১ থেকে ২০০৮ খ্রী পর্যন্ত।

চিত্র ৭

চিত্র ৮

দেখা যাচ্ছে উভয় ক্ষেত্রেই সবুজ শক্তি উৎপাদনের জন্য মোট জ্বালানির প্রয়োজন ঊর্ধমুখী। চিত্র ৭-এ প্রাথমিক স্তরে ২০০০, ২০০৪ ও ২০০৮ খ্রী-তে শুধু সবুজ শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হল প্রায় ২৮৭৫, ৩১৭৫ ও ৩৫৭৫ Mtoe ; অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০০৪ খ্রী পর্যন্ত বৃদ্ধি হল ১০.৪ শতাংশ এবং ২০০৪ থেকে ২০০৮ খ্রী পর্যন্ত হল ১২.৬ শতাংশ। একই ভাবে চিত্র ৮ থেকে দেখা যাচ্ছে ২০০০ থেকে ২০০৪ খ্ররে-তে সবুজ শক্তির জন্য অন্ত্য শক্তির বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪.১ শতাংশ এবং ২০০৪ থেকে ২০০৮ খ্রী পর্যন্ত ১১.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, উভয় ক্ষেত্রেই ২০০৪-২০০৮-এ বৃদ্ধির হার ২০০০- ২০০৪-এর হারের থেকে বেশি। এই থেকে প্রমাণিত হয় যে সবুজ শক্তির বৃদ্ধির হার প্রতি বছরেই বেড়ে চলেছে।

'সবুজ উদ্দীপক' প্রোগ্রাম
২০০৮ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে, যখন বিশ্ব আর্থিক মন্দা চূঁড়ায় পৌঁছেছে, বিশ্বের কিছু প্রধান রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ আর্থিক 'আরোগ্যলাভ'-এর খাতিরে একটি
' সবুজ উদ্দীপক' প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছিলেন। এই প্রোগ্রামে একটি ফাণ্ড আলাদা করে রাখা হল যা 'সবুজ শক্তি' এবং 'শক্তি-কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি'র জন্য ব্যবহৃত হবে। ২০০৯ খ্রী-র শেষদিকে মাত্র ৯ শতাংশের মতন ব্যবহার করা হয়েছিল। অবশ্য দেরীর কারণ হল অর্থ বরাদ্দে নানা কর্ম-সম্পাদনের পদ্ধতি। অর্থের বরাদ্দের বেশির ভাগটাই খরচ হওয়ার কথা ২০১০ এবং ২০১১ খ্রী-তে।

উৎপাদিত সবুজ বিদ্যুৎ, ২০০৭-০৯

সারণী ২.

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ খ্রী-তে বিশ্বে মোট সবুজ শক্তির ক্যাপাসিটি দেখানো হল- বড় জলবিদ্যুৎ ছাড়া এবং সহ। উৎস অনুযায়ী এই বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে সারণী ২-এ।

সবুজ-শক্তিতে লগ্নী [ চিত্র ৯ ]
২০০৭ থেকে ২০০৯ খ্রী-তে লগ্নীর পরিমাণ হল : ২০০৭- ১০৪ , ২০০৮- ১৩০ , এবং ২০০৯- ১৫০ বিলিয়ন মর্কিন ডলার।আমরা হিসাবে পাচ্ছি য ২০০৭ খ্রী থেকে ২০০৯-এ প্রতি গিগা-ওয়াটে লগ্নী কমছে ১০.৪৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮.২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ লগ্নীর সঙ্গে সঙ্গে সবুজ শক্তির মূল্য কমে যাচ্ছে। তাছাড়া এটা জ্ঞাতব্য যে, ২০০৮ ও ২০০৯ খ্রী-তে সারা বিশ্বে মোট শক্তি উৎপাদনে যা লগ্নী হয়েছে, শুধু সবুজ শক্তিতে লগ্নী তার অর্ধেকেরও বেশি।

চিত্র ৯


সবুজ শক্তির বিকাশ, ২০০৯

২০০৯ খ্রী-তে বিশ্বের মোট শক্তি ক্যাপাসিটির ( ৪৮০০ গিগা-ওয়াট ) প্রায় এক-চতুর্থাংশ ( ১২৩০ গিগা-ওয়াট ) হচ্ছে সবুজ শক্তি যা ২০০৮ খ্রী থেকে ৭ শতাংশ বেশি। ব্যবহারের জন্য দিয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ ; আর এই বৎসরে বিশ্বে মোট বিদ্যুৎশক্তি যা বেড়েছে ( ১৯৪ গিগাওয়াট ), তার প্রায় অর্ধেকই ( ৪৭ শতাংশ- ৯১.১৮ গিগা-ওয়াট ) এসেছে সবুজ শক্তি থেকে।
  • ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দে চীন বিশ্বের মোট সৌর পি. ভি. য়োগানের ৪০-শতাংশ, বায়ু- টারবাইনের ৩০-শতাংশ ( ২০০৭ খ্রী-তে যা' ছিল ১০ শতাংশ ) এবং সৌর গরম জল সংগ্রাহকের ৭৭-শতাংশ উৎপাদন করেছে।
  • ল্যাটিন আমেরিকায় বেশ কয়েকটি নূতন জৈবজ্বালানি উৎপাদকের দেশ আবির্ভূত হয়েছে যেমন, আর্জেণ্টিনা, ব্রাজিল, কলাম্বিয়া, ইকোয়েডর এবং পেরু।
    মধ্য প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং আফ্রিকা-মহাদেশের সাহারা-সন্নিহিত অঞ্চলের অন্ততঃ ২০টি দেশে সবুজ শক্তির কার্য-তৎপর বাজার উদ্ভূত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইয়োরোপের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান-এ নানারূপ বিচিত্র কৃৎকৌশলের আবির্ভাব হচ্ছে যা' সবুজ শক্তিতে মানুষের আত্মপ্রত্যয় বাড়াচ্ছে।
  • অন্যান্য সবুজ উৎসের মধ্যে বায়ু-শক্তি বেড়েছে সব থেকে বেশি ২০০৯ খ্রী-তে, - ৩৮ গিগা-ওয়াট ; জলবিদ্যুৎ বাড়ছে এ সময়ে বছরে প্রায় ৩০ গিগা-ওয়াট করে আর সৌর পি.ভি. ক্যাপাসিটি ২০০৯ সালে বেড়েছে ৭ গিগা-ওযাট। সারা
  • বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালীতে সৌর গরম জল ব্যবহার ক্রমাগত ঊর্ধমুখী এবং ২০০৯ খ্রী-তে দাঁড়িয়েছে ৭০ মিলিয়ন বসতবাড়ী।
  • ২০০৯ খ্রী-তে সবুজ শক্তির (ছোট জলবিদ্যুৎ-সহ) ক্যাপাসিটির উপরের থেকে প্রথম পাঁচটি দেশ হল চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন এবং ভারত। যদি বড় বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ধরা হয় তবে এই তালিকা দাঁড়াবে- চীন, মাঃ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল এবং জাপান। ইয়োরোপিয়ন ইউনিয়ন-এ ২০০৯ খ্রী-তে নূতন সংস্থাপিত শক্তি-ক্যাপাসিটির ৬০ শতাংশ হচ্ছে সবুজ ; মাঃ যুক্তরাষ্ট্রের নূতন সংযুক্তির বেশির ভাগটাই হল বায়ু, আর চীন গ্রীড-যুক্ত সবুজ শক্তিতে প্রায় ৩৭ গিগা-ওয়াট যুক্ত করেছে ২০০৯ খ্রী-তে, যার ফলে মোট সংযুক্তি হল ২২৬ গিগা-ওয়াট।
  • কর্মসংস্থান:
    সবুজ-শক্তির বিকাশ ত্বরান্বিত করতে একটি শক্তি হল নূতন শিল্প সংস্থাপনের এবং সহস্রাধিক নূতন কর্মসংস্থানের সভাবনা। বস্তুতঃ বিভিন্ন দেশে এই সম্ভাবনা রূপায়িত হচ্ছে। সার্বিকভাবে বিশ্বে নূতন সরাসরি কর্মের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে ৩০ লক্ষের মতন, যার অর্ধেক হচ্ছে জৈবজ্বালানি শিল্পগুলিতে। এ ছাড়া পরোক্ষ চাকুরী তো আছেই [ 'বক্স' দেখুন ]।

সবুজ-শক্তিতে কর্মসংস্থান

বিশ্বব্যাপী সবুজ-শক্তিতে কর্মসংস্থান ৩ মিলিয়নের বেশি হয়েছে ২০০৯ খ্রী-তে। ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দের এক রিপোর্টে সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জ পরিবেশ প্রোগ্রাম (UNEP) জানাচ্ছেন যে, সবুজ-শক্তিতে আত্মনির্ভরতা আনতে কৃৎকৌশল যোগানে যদিও নেতৃত্ব দিয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলি, উন্নয়নশীল দেশগুলি একটা বৃহত্তর অংশ নিচ্ছে এদের ব্যবহারে- বিশেষতঃ নূতন কর্মসংস্থানে। চীন এবং ব্রাজিল-এর অবদান এখন পর্যন্ত সুবৃহৎ- সৌর গরম জল এবং জৈব-জ্বালানী শিল্পে। বেশির ভাগ কাজই যন্ত্রাদির ব্যবস্থাপন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষন-এ এবং জৈব-জ্বালানির জন্য পশুধনে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে বাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পগুলিতে নূতন কর্মসংস্থান হবে। নীচে ২০০৯ খ্রী-র একটা আনুমানিক হিসাব দেওয়া হল।


সরকারী ও উন্নয়ন ব্যাংকগুলি থেকে বিপুল আকারের লগ্নী সবুজশক্তি বিকাশের অন্যতম কারণ, বিশেষতঃ ইয়োরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায়। ইয়োরোপিয়ন ইনভেষ্টমেণ্ট ব্যাংক ( The European Investment Bank ) এবং ব্রাজিলিয়ান ডেভেলপমেণ্ট ব্যাংক (The Brazilian Development Bank)এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। লগ্নী ২০০৮-খ্রী-র ২ বিলিয়ন ডলার থেকে লাফিয়ে ৫ বিলিয়নে উঠেছে ২০০৯ খ্রী-তে। সব চাইতে বড় যোগানদারগুলি হল বিশ্ব ব্যাঙ্ক গ্রুপ, জার্মানির Kfw, ইণ্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেণ্ট ব্যাঙ্ক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেণ্ট ব্যাঙ্ক। এ ছাড়া ছোট-খাটো উন্নয়ন ব্যাঙ্ক তো আছেই।
সবুজ-শক্তির ভূগোল যে ভাবে পরিবর্তনের মুখে তা' দেখে মনে হয় একটা নূতন যুগ আসছে ভৌগলিক বিভিন্নতায়। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৯০ খ্রী-তে বায়ু-শক্তি ছিল হাতে-গোনা কয়েকটি দেশে ; এখন ৮২-র বেশি দেশ এটা ব্যবহার করছে। যন্ত্রাদি উৎপাদনের নেতৃত্ব ইয়োরোপ থেকে এশিয়া মহাদেশে স্থানান্তর হয়েছে- চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া সবুজ-শক্তির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা স্বীকার করে এগিয়ে চলেছে।
২০০৯ খ্রী নাগাদ সবুজ-শক্তি বিষয়ে পলিসি-টার্গেট গ্রহণে বিশ্বের মোট ৮৫টি দেশের মধ্যে ৪৫টি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ। আর এসময়ে বিশ্বে যে ৮৩টি দেশ সবুজ-শক্তিতে উৎসাহ-বর্ধনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে ৪২টি হল উন্নয়নশীল দেশ।
শঙ্কর সেন
নভেম্বর ৯, ২০১১
উৎস: IEA ENERGY STATICS ; Renewables 2010 Global Status Report

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।