চৈতন্য থেকে চিৎপুর : বাংলা যাত্রাশিল্পের ধারাবাহিকতা

চৈতন্য থেকে চিৎপুর : বাংলা যাত্রাশিল্পের ধারাবাহিকতা

অভিনয়শৈলীকে মাধ্যম করে সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর আয়োজনে আপামর সাধারণ মানুষের কাছে যাত্রাশিল্পের আবেদন। গ্রামবাংলার আঞ্চলিক ক্ষুদ্র পরিসরে সাধারণ মানুষের অবসর বিনোদনের মাধ্যম এই যাত্রা, যেখানে অংশগ্রহণ করেন সেই স্থানীয় মানুষরাই। তাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন জীবিকার প্রয়োজনে। তাঁদের জীবনযাপন নিতান্তই ছাপোষা। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের এই সংস্কৃতিও বাহুল্যবর্জিত। ধ্রুপদী যাত্রাপালায় তাই থাকেনা উন্নতমানের মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, শব্দযন্ত্র ও আবহসুরের চমক। শিল্পীর উদাত্ত কণ্ঠ, সংলাপ-ভঙ্গিমা, নৃত্যগীতের দক্ষতাই হয়ে ওঠে যাত্রাশিল্পের উৎকর্ষের নির্ধারক। একই সঙ্গে যাত্রার দর্শককেও অবলম্বন করতে হয় অধিকতর কল্পনাশক্তি এবং ‘অবিশ্বাসের ইচ্ছাকৃত অবদমন’। তার ফলে নড়বড়ে এক কাঠের চেয়ারকে রাজসিংহাসন হিসেবে মেনে নিতে, সজ্জাহীন একটি আসরকেই কখনও গভীর অরণ্য, কখনও বা রাজদরবার বলে গ্রহণ করতে যাত্রার দর্শকদের কোনো অসুবিধা হয় না। এই নিরাভরণ উপস্থাপনের আস্বাদনেই যাত্রাশিল্পের স্বতন্ত্রতাকে খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও সাম্প্রতিককালের যাত্রাগুলির দিকে তাকালে এই বৈশিষ্ট্য হয়তো আমরা আর দেখতে পাব না। লোকায়ত মানুষের সংস্কৃতি থেকে শহুরে পণ্যে যাত্রার বিবর্তনটিকে তাই একবার ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে।
আমাদের দেশে অতি প্রাচীনকাল থেকেই যাত্রাভিনয়ের চল দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে এই শিল্প মূলত শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ছিল। মেগাস্থেনিসের বিবরণী থেকে পাটলিপুত্রের রাজদরবারে যাত্রাভিনয়ের কথা জানতে পারা যায়। ভবভূতি রচিত মালতী-মাধবও প্রাচীন ভারতের যাত্রাপালার জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য দেয়। প্রাচীন বাংলায় শিবযাত্রা ও তার খানিক পরে রামযাত্রা অধিক প্রচলিত ছিল। আরও পরবর্তীকালে জনপ্রিয় হয় কৃষ্ণযাত্রা।

বর্তমানে আমরা যাত্রা বলতেই যে রূপকল্পনা করি, তার বিকাশ ঘটে শ্রীচৈতন্যদেবের হাত ধরে মধ্যযুগের বাংলায়। যাত্রার আধুনিক রূপের জনক তাই চৈতন্যদেবকেই বলা উচিত। তিনিই প্রথম কৃষ্ণবিষয়ক সংকীর্তন ও যাত্রাভিনয়কে নতুনভাবে পরিবেশনের কথা ভেবেছিলেন। ঘটনার উপযোগী বেশ-ভূষণ পরিধান করে যাত্রায় অভিনয় ইতিপূর্বে করা হতনা। এর সূচনা শ্রীচৈতন্যদেবই করেন। শুধু তাই নয়, চন্দ্রশেখর আচার্যের আঙিনায় চৈতন্যদেবই সর্বপ্রথম যাত্রার ‘আসর’ সাজিয়েছিলেন। যাত্রার মূল নারীচরিত্রে অভিনয় করতেন তিনিই স্বয়ং। ‘চৈতন্যভাগবত’-এ চৈতন্যদেব ও তার দলের সাজসজ্জার বিবরণ পাওয়া যায়। চৈতন্যদেব সেজেছেন দেবীলক্ষ্মী, হরিদাস সেজেছেন কোতোয়াল, শ্রীবাস সেজেছেন নারদ। জানা যায় শচীমাতাও শ্রীবাসকে দেখে চিনতে পারেননি, এতটাই নিখুঁত ছিল সেই সময়ের অভিনয়-সজ্জা। অংশগ্রহণ করতেন গদাধর, অদ্বৈত মহাপ্রভু এমনকি উড়িষ্যার রাজা প্রতাপসূর্যদেবও। গীতগোবিন্দ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চণ্ডীযাত্রা প্রভৃতি চৈতন্যদেবের নির্দেশনায় পরিবেশিত হত চন্দ্রশেখর আচার্যের এই আঙিনার আসরে। শ্রীকৃষ্ণের মহিমা, অলৌকিক ক্ষমতার পাশাপাশি তাঁর জীবন ও রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি প্রচারিত হত কৃষ্ণযাত্রায়। গানগুলি ছিল তার অন্যতম প্রধান অঙ্গ। অনেক বিশেষজ্ঞ এই কৃষ্ণলীলা ও কৃষ্ণসংকীর্তনকে ইউরোপের ‘মিরাকল প্লে’ এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। মধ্যযুগের ইউরোপে এই ‘মিরাকল প্লে’-গুলিতে অভিনয় ও গানের মাধ্যমে খ্রিস্টের অলৌকিক ক্ষমতা প্রচার করা হত। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষ্ণযাত্রাপালা তার মধ্যযুগীয় আবরণ ভেদ করে পূর্ণাঙ্গ নাটকের আকার কখনওই নিতে পারেনি। অর্থাৎ নাটক ও যাত্রার মধ্যেকার পার্থক্য বরাবরই রয়ে গেছিল। আধুনিককালে যখন যাত্রাভিনয়ের জন্য মঞ্চ ব্যবহার শুরু হয়, তখনও কিন্তু এই ব্যবধানের স্পষ্টতা কমেনি। এবার তবে চোখ রাখা যাক আধুনিক বাংলার যাত্রাশিল্পের দিকে।
ঔপনিবেশিক বাংলায় নবজাগ্রত আধুনিকতা যাত্রাসংস্কৃতিতেও বদল নিয়ে আসে। যাত্রায় উপজীব্য হয়ে ওঠে বহু ধর্মবহির্ভূত সামাজিক বিষয়। অলৌকিকত্ব ও আধ্যাত্মিকতাকে ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, নরনারীর প্রেম, মানবিক সম্পর্ক, আবেগ-অনুভূতি, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদি যাত্রায় প্রতিফলিত হয়। ঔপনিবেশিক বাংলার জনপ্রিয় পালাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘নল-দময়ন্তী’ ও ‘বিদ্যাসুন্দর পালা’। বিদ্যাসুন্দর যাত্রায় গোপাল উড়ের অভিনয় ও মালিনীর নৃত্য আধুনিক যাত্রার বিশেষ অঙ্গে পরিণত হয়। ক্রমে নিছক নাচগান, হাস্যকৌতুক, পারিবারিক জীবনযাত্রা সবকিছুই যাত্রার বিষয় হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ের বাংলা যাত্রাশিল্পের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কে এবার আমরা আলোচনা করব।

আসর:-

যাত্রাভিনয়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিসরটিই হল যাত্রার আসর। বৈদিক নাট্যমঞ্চের থেকে যাত্রার আসর অনেকটাই আলাদা। প্রাচীন ভারতবর্ষে যে নাটক অভিনীত হত, তার জন্য প্রস্তুত নাট্যমঞ্চ ছিল উঁচু ও চতুষ্কোণ আকারের। সেখানে দর্শকরা সামনে বসে অভিনয় দেখত। কিন্তু, যাত্রার আসর ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তা বরং খানিকটা গ্রীক শৈলীর অনুসারী। গ্রীক নাটক যেরকম গোলাকার অর্কেস্ট্রার মধ্যে অভিনীত হত, ঠিক তেমনি খোলা জায়গায় গোল আসর করে যাত্রা অভিনয় করা হত। দর্শকরা চারিদিকে ঘিরে বসতেন। যাত্রার কুশীলবরা থাকতেন মাঝখানে, যাতে সবাই সমানভাবেই কুশীলবদের দেখার সুযোগ পেতেন। সাধারণত খোলা মাঠে, নদীর তীরে, বাগান বা বনের একাংশ পরিষ্কার করে যাত্রার আসর বসানো হত। বিশেষ ক্ষেত্রে দেবালয়, ধনী জমিদার বা সম্ভ্রান্ত কোনো ব্যক্তির বাড়ির উঠোনেও এই আসরের আয়োজন করা হত। যাত্রাকে জনপ্রিয় করতে অভিনেতারা বেশ কিছু নতুন কৌশল যুক্ত করেন। যেমন, যাত্রার গান এবং গুরুত্বপূর্ণ সংলাপগুলির পুনরাবৃত্তি, যা কাহিনিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

অধিকারী ও কুশীলব:-

যাত্রার কুশীলবদের মধ্যে থাকতেন অভিনেতা, বাদ্যযন্ত্রী ও দোহাররা। দোহারদের কাজ ছিল একটি গান বা কোনো বিশেষ সংলাপ ও বিলাপ শেষ হওয়ার পর তার ধুয়ো ধরা, যা ওই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তর রেশটিকে দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী হতে সাহায্য করত।এই গোটা যাত্রার দলের প্রধান হলেন অধিকারী, যাঁকে আমরা যাত্রাদলের নেতৃত্বে দেখতে পাই। সাধারণ দর্শকদের মধ্যে অধিকারীর নামেই যাত্রাদলের পরিচয় গড়ে উঠত। অধিকারীই পালাকার, পরিচালক এবং অন্য কুশীলবদের শিক্ষক। পরমানন্দ, গোবিন্দ, মতিলাল প্রমুখ ছিলেন বাংলা যাত্রার খ্যাতনামা অধিকারী, যাঁরা নিজেরাও অভিনয় করতেন।

সাজসজ্জা: –

অভিনয়কে বাস্তবসম্মত এবং দর্শকের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে উপযুক্ত বেশভূষা। যাত্রার এই সাজসজ্জাকে বলা হত কাচসজ্জা। আগেই বলা হয়েছে মধ্যযুগে এর প্রচলন করেন শ্রীচৈতন্যদেব। কিন্তু ঔপনিবেশিক পর্বে এসে আমরা দেখতে পাই এই সময়কার যাত্রার কুশীলবরা মূলত সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর স্বল্পশিক্ষিত খেটেখাওয়া মানুষ। বাস্তবজীবনের যন্ত্রণাকে ভুলে কল্পিত চরিত্রের কাচসজ্জায় তাঁরা সেজে উঠতে চাইতেন। তাই এই পর্বে কৃত্রিম সুবেশ ও সালঙ্কার সাজ জনপ্রিয় হয়।

আঙ্গিক:-

এরপর আসা যাক যাত্রাপালার গঠন বা আঙ্গিকের কথায়। আসরের মতো বাংলা যাত্রার গঠনরীতিতেও গ্রীক প্রভাব স্পষ্ট। প্রাচীন গ্রীকনাট্যে তিনটি অংশ থাকত, যথা- ‘Prologue, Episode, Exode’। তেমনই বাংলা যাত্রারও ছিল তিনটি অংশ। গৌরচন্দ্রিকা, বস্তু ও পরিণাম।

মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন পালাকারদের হাতে যাত্রাপালার বিবর্তন ঘটে। প্রথমদিকের কয়েকজন বিখ্যাত পালাকার হলেন কৃষ্ণকমল অধিকারী, শিশুরাম, শ্রীদাম ও সুদাম অধিকারী, পরমানন্দ, গোবিন্দ অধিকারী। গোবিন্দ অধিকারীর ‘শুক-সারির পালা’ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাচ্যবাদী ব্রিটিশ পণ্ডিত ন্যাথানিয়েল হ্যালহেডও বর্ধমান রাজবাড়িতে যাত্রাপালায় অভিনয় করেছিলেন। জোড়াসাঁকোর বীরসিংহ মল্লিকের ‘বিদ্যাসুন্দর’-যাত্রাদলের অধিকারী ছিলেন গোপাল উড়ে। তিনি তাঁর সমকালেই কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন। উড়িষ্যার অধিবাসী হওয়ায় ঠাট্টা করে মানুষ গোপাল অধিকারীকে গোপাল উড়ে নাম দেন। তিনি নারী-চরিত্রে অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করতেন। নৃত্যগীতেও তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচিত টপ্পা অঙ্গের গানগুলি উড়ের টপ্পা নামে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত যাত্রার প্রচার ও প্রসার গ্রামাঞ্চলেই বেশি ছিল। ব্যতিক্রম হল মুকুন্দদাসের স্বদেশী যাত্রা, যা শহরবাসী শিক্ষিত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল। যতদিন পর্যন্ত জমিদারী প্রথা টিকে ছিল ততদিন গ্রামের জমিদাররাই যাত্রাশিল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাই স্বাধীনতালাভের পর গ্রাম্যযাত্রার প্রকৃত সংকট দেখা দিল। জমিদারী-প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় যাত্রাপালা তার পুরোনো পৃষ্ঠপোষকতা হারাল। সেই সঙ্গে তৈরি হতে লাগল সিনেমা-হল ও থিয়েটার-হল। ফলে শহুরে বিনোদনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেকে হারাতে থাকল যাত্রাপালা। স্বাভাবিকভাবেই তাই টিকে থাকার প্রয়োজনে সিনেমার অনুকরণ শুরু হল যাত্রায়। এর ফলে শহুরে মানুষদের আর্থিক আনুকূল্য কিছু জুটল বটে, কিন্তু নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্যকে হারিয়ে গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ধারা থেকে যাত্রাশিল্প বেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বদলে গেল গঠনরীতি, বিষয়বস্তু, সাজসজ্জা, অভিনয়শৈলী। আসরের স্থান দখল করল উঁচু মঞ্চ। দর্শকদের জায়গা হল নাটকের মতো মঞ্চের সামনে। স্পটলাইট, মাইক্রোফোন, যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যবহার শুরু হল। তৈরি হল পেশাদার যাত্রা-কোম্পানিগুলি। চিৎপুর অঞ্চলে গড়ে উঠল তাদের নতুন নতুন কার্যালয়। নট্ট-কোম্পানি, নাট্যসমাজ, ভোলানাথ অপেরা, নবরঞ্জন অপেরা প্রভৃতি এই সময়ের পেশাদার নাট্য কোম্পানি। সিনেমায় অভিনয়ের মতোই এই কোম্পানিগুলির তৈরি করা পালায় পেশাদার অভিনেতারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অভিনয় করেন। বদলে যাওয়া সমাজবাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যাত্রাপালা বদলে ফেলেছে তার নিজস্ব চরিত্র। স্থানীয় স্তরে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের অবসর বিনোদনের লক্ষ্যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বেড়ে ওঠা সেই যাত্রাশিল্প আজ পুরোপুরি পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক পণ্যে।

তথ্যসূত্র

 ১) আশুতোষ ভট্টাচার্য, বাংলার লোকসংস্কৃতি।

২) কালীপ্রসন্ন ঘোষাল, মহাকবি ভবভূতি প্রণীত মালতীমাধব নাটকের উপাখ্যানভাগ।

৩) গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষ, যাত্রাশিল্পের ইতিহাস।

৪) বৃন্দাবনদাস ঠাকুর, শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত।

৫) ব্রজেন্দ্র কুমার দে, বাংলারযাত্রা নাটক।

৬) ভগীরথ মিশ্র, আসর।

৭) যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, সেকালের যাত্রা।

 

নারী-ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক-ইতিহাসচর্চায় আগ্রহী গবেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *