আমার একেনবাবু পাঠের অভিজ্ঞতা
গোয়েন্দা কাহিনির ভক্ত ছিলাম কৈশোর কাল থেকেই। বলাই বাহুল্য, সেই বয়সটা বিচার বা রুচি বোধের ধার ধারে না। সেই বয়সটা হল সর্বগ্রাসী ক্ষুধার – যা লম্বকর্ণের মতোই খাদ্যাখাদ্যের বিচার করে না। তাই স্বীকার করতে লজ্জা নেই, সেই প্রথম কৈশোরে ফেলুদা-কিরীটী-জয়ন্ত-দীপক-কর্নেল নীলাদ্রি- সবাই সমানভাবে আমাকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিলেন।
বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কিশোরপাঠ্য গোয়েন্দা কাহিনির পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে সমকালীন লেখকদের রচিত বয়স্কপাঠ্য গোয়েন্দা কাহিনির সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে। এই সময়েই একবার বইমেলায় পিতৃদেবের কাছ থেকে উপহার পেলাম শরদিন্দু অমনিবাস প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। সেই প্রথম পরিচয় ব্যোমকেশের সঙ্গে। ব্যোমকেশ পাঠের সাথে সাথেই সার্থক বয়স্কপাঠ্য গোয়েন্দা গল্পের সংজ্ঞাটাই যেন বদলে গেল। একই সঙ্গে শরদিন্দু-পরবর্তী অধিকাংশ লেখকের গোয়েন্দা কাহিনির সীমাবদ্ধতাগুলিও যেন ক্রমশঃ প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের, সার্থক বয়স্কপাঠ্য গোয়েন্দা গল্প যে আর কোনো বাঙালি লেখকের কলম দিয়ে নিঃসৃত হয়নি, এই বোধের সঙ্গে সঙ্গেই ধীরে ধীরে জন্ম নিতে থাকে ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’কে ঘিরে একধরনের হীনমন্যতা। অথচ গোয়েন্দা কাহিনির ক্ষুধা উত্তরোত্তর বর্ধমান। তাই সাহিত্যের এই একটিমাত্র শাখায় মাতৃভাষার দীনতাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্বীকার করে নিয়ে হাত বাড়াই ইংরেজি সাহিত্যে। হোমস-মিস মার্পল-পোয়ারো- এদের কাহিনি পাঠে মন ভরে ঠিকই কিন্তু দুষ্টচক্রের মতো মাতৃভাষার রিক্ততা বোধ ততই যেন আগ্রাসী রূপ ধারণ করে। তন্ন তন্ন করে আধুনিক লেখকদের বয়স্কপাঠ্য যা কিছু গোয়েন্দা গল্প হাতের কাছে পাই নিঃশেষে শেষ করে ফেলি । এইভাবে কর্নেল(১), ভাদুড়ীমশাই(২), অশোক ঠাকুর(৩), শবর (৪), মিতিন(৫), দময়ন্তী(৬), গার্গী(৭) প্রমুখ আধুনিক গোয়েন্দাদের কিশোর ও বয়স্কপাঠ্য যাবতীয় কাহিনি এক সময় পড়া হয়ে যায়। কিছু কিছু কাহিনি আকর্ষণীয় লাগে, আবার যেহেতু লেখকদের মধ্যে অনেকেই শক্তিশালী ঔপন্যাসিক, তাই বহু রচনাতেই পাওয়া যায় প্রকৃত উপন্যাসের স্বাদ। কিন্তু বহুস্তরীয় জটিল রহস্য, অপরাধের ধরণ, উদ্দেশ্য, অপরাধীর মনস্তত্ত্ব এবং সর্বোপরি গোয়েন্দার সম্পূর্ণ যুক্তিনির্ভর রহস্যভেদ – এই সব কিছু মিলিয়ে যে জমাট, সুসংহত রচনা সার্থক প্রাপ্তবয়স্ক গোয়েন্দা কাহিনির প্রাণ – তা যেন ঠিক কোথাও পাই না। অর্থাৎ বহু রচনাই উপন্যাস হয়ে উঠেও শেষ পর্যন্ত প্রকৃত গোয়েন্দা উপন্যাস হয়ে ওঠে না।
ঠিক এই সময়েই, বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সুবাদে পরিচয় হয় ‘একেনবাবু’ নামটার সঙ্গে। বস্তুতঃ, নামটার সঙ্গে পূর্ব পরিচয় না থাকায় ওই ওয়েব সিরিজটির ব্যাপারেও প্রাথমিক ভাবে কোনো উৎসাহ অনুভব করিনি। ততদিনে একেনবাবুর তিন তিনটি গল্প ওটিটি তে চলচ্চিত্রায়িত হয়ে গেছে। অবশেষে বিভিন্ন বাংলা ও হিন্দি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নিয়মিত এবং একনিষ্ঠ দর্শক আমার সহধর্মিনীর সুপারিশে একদিন দেখে ফেললাম পরপর তিনটি গল্প।
গল্প হিসেবে দারুণ লাগল, কিন্তু দেখলাম মোটামুটিভাবে গল্পগুলোকে কিশোরোপযোগীই বলা চলে। জানলাম এই গল্পগুলি আদৌ নতুন কাহিনি নয়। নব্বইয়ের দশকে, অর্থাৎ যে সময়টাতে “কৈশোর ফেলে আসা রঙচঙে স্বপ্নের দিন” পেরিয়ে এসে আমি নিজে মাসিক আনন্দমেলা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম, সেই সময় আনন্দমেলায় গল্পদুটি প্রকাশিত হয়েছিল। আগেই বলেছি, সেই সময় সত্যিকারের ভালো, প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী গোয়েন্দা কাহিনির জন্য তীব্র ক্ষুধায় চারদিক চষে ফেলছি। তখনই জানলাম, যে কিশোরপাঠ্য গোয়েন্দা হিসেবে জীবন শুরু করলেও পরবর্তীকালে একেনবাবু পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী রহস্যও প্রচুর সমাধান করেছেন ও করে চলেছেন ।
এর পরেই অন্তর্জালে অনুসন্ধান চালিয়ে সন্ধান পেয়ে যাই ‘একেনবাবু সমগ্র’-এর। প্রবাসী, তাই সন্ধান পেলেও বাংলা বই সংগ্রহের কাজটি খুব সহজসাধ্য নয়। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে এ সমস্যার সমাধানও হয়ে যায় অতি সহজে। দেখলাম, ‘একেনবাবু সমগ্র’ এর চার খণ্ডই (অর্থাৎ তৎকালীন প্রকাশিত সব কটি খণ্ড) পাওয়া যাচ্ছে ‘গুগল বুকস’-এ। আর কী! তৎক্ষণাৎ সংগ্ৰহ করে পড়া শুরু করি। চার খণ্ড প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ হয়ে গেল। চলচ্চিত্র রূপে ‘ম্যানহাটনে মুনস্টোন’, ‘ম্যানহাটনে ম্যানহান্ট’ আর ‘ঢাকা রহস্য উন্মোচিত’ তো আগেই দেখা ছিল – তবু আবার পড়লাম। সেই সঙ্গে ‘সংখ্যার সংকেত,’ ‘একেনবাবু ও কেয়াদিদি,’ ‘শান্তিনিকেতনে অশান্তি,’ ‘ম্যানহাটনে ম্যাডম্যান,’ ’আসল খুনির সন্ধানে’ … ইত্যাদি ইত্যাদি – সব কিছু।
হ্যাঁ, ততদিনে “পৃথিবী গোল” এই মহান তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করে এ ও জেনে গেছি, যে একেনবাবুর স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্ত মানুষটি আমেরিকা প্রবাসী এবং একেনবাবুদেরই প্রতিবেশী! তিনি শুধু আমাদের যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তনীই নন, ‘অবসর’ পত্রিকার সূত্রে তিনি আমাদের সবারই খুব কাছের মানুষ। ‘অবসর’এর সম্পাদক তথা অগ্রজপ্রতিম ভাস্কর বসুর মধ্যস্থতায় একদিন এই প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দূরভাষে দীর্ঘ বাৰ্তালাপও সম্ভব হয়ে গেল! ওনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কনিষ্ঠ – একথা জেনে এবং খুঁটিয়ে একেনবাবু পড়েছি দেখে বাস্তবিকই খুশি হলেন। ওঁর সেই আনন্দটুকু আমার স্মৃতিতে চিরকাল অমলিন থাকবে।
.
একেনবাবুর কাহিনি নিয়ে আলোচনার আগে একেনবাবু মানুষটিকে নিয়ে প্রথমে কিছু কথা বলা উচিত। এযাবৎ দেশি-বিদেশী মৎপঠিত যাবতীয় গোয়েন্দা গল্পে গোয়েন্দাদের আকৃতি-প্রকৃতি সম্বন্ধে যে বর্ণনা পড়েছি, অর্থাৎ সুপুরুষ, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং ব্যক্তিত্ববান চেহারা, তেমনি বুদ্ধিদীপ্ত এবং আকর্ষণীয় কথাবার্তা, এই চিরাচরিত ধারণাকে সুজনবাবু ভেঙে গুড়িয়ে দেন একেনবাবুর সঙ্গে পাঠকের প্রথম সাক্ষাতেই। এবং এ ব্যাপারে কারো কোনো ভুল ধারণা যাতে না থাকে তাই একেনবাবুর প্রায় প্রতিটি গল্পের শুরুতেই লেখক একেনবাবুর সম্ভ্রমহীন চেহারা, বিরক্তি জাগানো কথাবার্তা, সেইসঙ্গে কৃপণ স্বভাব – ইত্যাদি ভূরি ভূরি নেতিবাচক বর্ণনার মাধ্যমে পাঠকের মনে চরিত্রটি সম্বন্ধে একটা বিকর্ষক ধারণা গড়ে তোলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বের তাবৎ মানুষকে, বয়স নির্বিশেষে স্যার কিংবা ম্যাডাম সম্বোধন করা। এমন একজন বাঙালি গোয়েন্দা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গঞ্জে, কি বড় জোর কলকাতা শহরে গোয়েন্দাগিরি করলেও হয়তো মানাত, কিন্তু তিনি বিভিন্ন জটিল রহস্যের সমাধান করেন খোদ নিউ ইয়র্কের মত ঝাঁ চকচকে বিদেশ বিভুঁয়ে বসে! এই প্রবাসে তাঁর ভরসা অবশ্য বাপি আর প্রমথর মতো দুটি উচ্চশিক্ষিত, বুদ্ধিমান প্রবাসী বাঙালি যুবক- যাদের আশ্রয়ে একেনবাবুর থাকা খাওয়া চলে। এমনকি তদন্ত চলাকালীনও একেনবাবুর জেরা করা বা কেস সম্বন্ধে নানান কথাবার্তা বলা থেকে মনে হয় না এ লোক শেষ পর্যন্ত একটা জটিল রহস্যের সমাধান করতে সক্ষম হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন প্রতিটি সমাধান সূত্রের সদ্ব্যবহার করে, রহস্যের প্রতিটি স্তর একে একে ভেদ করে শেষ পর্যন্ত অপরাধীকে চিহ্নিত করেন তখনই মানুষটার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য চেনা যায়।
গল্পগুলির ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, সার্থক গোয়েন্দা গল্পের যে গুণগুলি থাকা দরকার তার সবই এই গল্পগুলিতে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রথমে রহস্যের ব্যাপক জাল বিস্তার, সবার সঙ্গে গোয়েন্দারও নাজেহাল অবস্থা, এরপর ধীরে ধীরে পাঠকের জ্ঞাতসারেরই গোয়েন্দার হাতে একটি দুটি সূত্রের আগমন, পাশাপাশি ঘটে চলা একাধিক অপরাধ, প্রবল সাসপেন্স, শেষ পর্যন্ত সবার সামনে গোয়েন্দার হাতে রহস্যভেদ- এবং রহস্য ভেদকালে পাঠকের কাছে রহস্যের কোনো সুতোই না-গোটানো অবস্থায় না থাকা। এই প্রসঙ্গে সবার অনুমতিক্রমে একটি ব্যক্তিগত অভিমত না জানিয়ে পারছি না, তা হল – আজকাল প্রায়ই দেখা যায় গোয়েন্দা গল্পের ক্ষেত্রে তথাকথিত “Who dunit “ ফরম্যাটের প্রতি প্রাচীনপন্থার ধুয়ো তুলে বহু আধুনিক লেখকের অবজ্ঞা। আমার কিন্তু মনে হয়, এই ফরম্যাট হল গোয়েন্দা লেখকদের কাছে চিরকালের “অম্ল পরীক্ষা,” কারণ একমাত্র এই আঙ্গিকে গল্প বলতে গেলেই রহস্য সমাধানে একটি সম্পূর্ণ নিশ্ছিদ্র যুক্তিজাল এবং পূর্বে উল্লেখিত সবকটি শর্ত পূরণ করার আবশ্যকতা দেখা দেয়। এর পাশাপাশি কাহিনির শুরু থেকেই অপরাধীকে চিহ্নিত করে দিয়ে শুধুমাত্র গোয়েন্দা কর্তৃক তাকে ধরার পদ্ধতি দেখানোর যে থ্রিলার-সুলভ আঙ্গিক, তাতে গল্পের গতি হয়তো বৃদ্ধি পায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তির দু-একটা ফাঁক ফোঁকর রেখে দিলেও তা চট করে ধরা পড়ে না। অভিজ্ঞ পাঠকদের অবশ্য চোখ এড়ানো সবসময়েই শক্ত। বলাই বাহুল্য, একেনবাবুর কোনো গল্পই থ্রিলার নয় – আদি-অকৃত্রিম গোয়েন্দা গল্প।
একেনবাবুর গল্পগুলির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এদের আধুনিকতা। এই আধুনিকতা শুধুমাত্র গোয়েন্দার হাতে একটি মোবাইল বা ল্যাপটপ ধরানো, কিংবা তাকে দিয়ে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রথমেই যেটা চোখে পড়তে বাধ্য, তা হল গল্পগুলোর বিশাল পটভূমিকা। “শান্তিনিকেতনে অশান্তি” শুরু হচ্ছে নিউ ইয়র্ক শহরে কিন্তু ধীরে ধীরে রহস্যের জাল ছড়িয়ে পরে সুদূর নিউ ইয়র্ক থেকে ঘরের কাছের শান্তিনিকেতনে। এইভাবেই “ম্যানহাটনে ম্যাডম্যান,” “ হরপ্পার শিলালিপি,” কিংবা “আসল খুনিরা” গল্পে পটভূমিকা বিস্তৃত হয়েছে আমেরিকা থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। আজকের বিশ্বায়নের যুগ তো গোয়েন্দা গল্পের এমন বিশ্বজোড়া পটভূমিকাই দাবি করে। অবশ্য স্বাদ বদলের জন্য (এবং সম্ভবতঃ সেইসঙ্গে পাঠককুলকে দেখিয়ে দেবার জন্য যে যতই প্রবাসী হোন না কেন, লেখক তার শিকড়কে কোনোদিন বিস্মৃত হননি) একেনবাবু পুরোপুরি কলকাতার বুকেও রহস্য উন্মোচন করেছেন। (‘স্পোকেন ইংলিশ মার্ডার মিস্ট্রি,’ কিংবা ‘হাউজবোটে নিখোঁজ।’)
একেনবাবুর গল্পের আরেকটি আকর্ষণস্থল হল, সমাধানের ব্যাপারে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ। আপাতদৃষ্টিতে ন্যালাখ্যাপা একেনবাবু সর্বদাই দাবি করেন তিনি কম্পিউটারসহ যাবতীয় আধুনিক প্রযুক্তি সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ – কিন্তু প্রয়োজন মত বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির যথার্থ সদ্ব্যবহার ঠিকই করে থাকেন। যেমন “একেনবাবু ও কেয়াদিদি” গল্পে দেখা যায়, অবাঙালি অপরাধী বাংলায় ইমেইল পাঠানোর প্রয়োজনে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করেছিল। কিন্তু মেলের বাংলা অনুবাদ পরীক্ষা করে যখন বাপির বোন কেয়া জানিয়ে দেয় যে ব্যবহৃত গুগল ট্রান্সলেটটি চার পাঁচ বছরের পুরোনো ভার্সনের তখন তার থেকেই একেনবাবু সূত্র পেয়ে যান সমাধানের। তেমনি ‘শান্তিনিকেতনে অশান্তি’তে ‘জিনিওলজি’ নামক বংশলতিকা তৈরির আধুনিক বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে মেলে সমাধানসূত্র – এমনকি অপরাধীর অপরাধের উদ্দেশ্যও খুঁজে পাওয়া যায় ওই জিনিওলজিতে নিহিত দুই পুরুষ আগের তথ্যের মধ্যে! পড়তে পড়তে মনে হয়, এই না হলে একবিংশ শতাব্দীর গোয়েন্দা কাহিনি!
গল্পগুলিতে অন্য নানাভাবে ছড়িয়ে আছে লেখক সুজন দাশগুপ্তের মেধা ও প্রতিভা। ‘সংখ্যার সংকেতে’ দেখা যায় প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ডে মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে কতগুলি সংখ্যা লিখে সংকেতের মাধ্যমে খুনির নাম জানিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এতদিন পর একেনবাবু দেখিয়ে দিচ্ছেন যে সেই একই সংকেতের একাধিক ব্যাখ্যা আর সেই অনুযায়ী একাধিক সমাধান সম্ভব – আর সেই সমাধান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সম্ভাব্য অপরাধীদের মধ্যে একেক জন চিহ্নিত হচ্ছেন । শেষ পর্যন্ত অবশ্য আরো সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে একেনবাবু প্রকৃত অপরাধীদের ঠিকই চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। সঙ্কেত, ধাঁধা তার সমাধান – এগুলিতে সুজনবাবুর আগ্রহ ও প্রতিভা তো চিরপরিচিত – ‘ধাঁধাপুরীর গোলকধাঁধায়’ এর মতো একাধিক বইতে এই প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।
সেই একদিনের দূরভাষ-আলাপ। এরপর চূড়ান্ত আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম ১লা ফেব্রুয়ারি দিনটির জন্য- প্রথমবার এই প্রিয় মানুষটিকে মুখোমুখি দেখা ও আলাপ করবার জন্য। কিন্তু তা হবার ছিল না। যিনি সুজনদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই ভাস্করদার মুখেই ১৮ই জানুয়ারি পেলাম সেই মর্মান্তিক সংবাদ – এবার বইমেলায় প্রকাশিতব্য ষষ্ঠ খণ্ডই ‘একেনবাবু সমগ্র’র শেষ খণ্ড। ভবিষ্যতে আর কোনো খণ্ড প্রকাশিত হবার কোনো সম্ভাবনা আর রইল না।