‘সুজন’বাদিয়ার ঘাট

‘সুজন’বাদিয়ার ঘাট

বছর বারো-চোদ্দ হয়ে গেলো। কোনও এক বাইশে শ্রাবণে ‘গুরুচন্ডা৯’-তে একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম, ‘মৃত্যুরাখাল ও সদানন্দ।’ সবাই জানেন, কবির জীবনে প্রায় বাল্যকাল থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত মৃত্যু-রাখাল তাঁকে নিরন্তর তাড়না করে গেছে। তার খতিয়ান দেখলে মনে হতে পারে কোনও ট্র্যাজেডি কিং-এর লেখা এক চিৎপুরি যাত্রাপালা। কিন্তু সদানন্দ কবির সৃজনশীলতাকে সেই সব শোক নিবৃত্ত করতে পারেনি। বরং সমৃদ্ধ করেছিলো। লেখাটি পড়ে সুমিত রায় নামের এক পাঠক প্রচুর প্রশস্তি বাচন করেন। তাঁকে তখন চিনতাম না। বন্ধু নিনা-র সূত্রে পরিচয় হলো শেষ পর্যন্ত। তিনি ত্বরিতক্রমে ‘সুমিতদা’ হয়ে গিয়ে আমাকে আদেশ করলেন ‘অবসর’-এর জন্য রবীন্দ্রনাথকে বিষয় করে একটি নিবন্ধ পাঠাতে। সেই আদেশের ফলশ্রুতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ও জালিয়ানওয়ালাবাগ প্রসঙ্গে আমার ‘হননবৈশাখ ও কবি’ রচনাটি ‘অবসর’-এ প্রকাশিত হয়। তার পর আর পিছু ফিরে তাকানো ছিলো না। প্রায় আড়াই-তিন বছর ধরে ‘অবসর’-এর প্রায় প্রতি সংখ্যায় কিছু না কিছু লিখে এসেছি। সুমিতদা, এবং কিছুদিন পর থেকে সুজনদার সঙ্গেও, একটা অদ্ভুত স্নেহমায়ার সম্পর্কে বাঁধা পড়ে যাই। নিজে চারপুরুষের প্রবাসী বঙ্গসন্তান হবার সুবাদে এই দু’জন প্রবাসী মানুষের অনুভূতি ও মেধাজগতের সঙ্গে নির্বিবাদ একাত্ম বোধ করতে থাকি। এঁদের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ আমার ভাবনার দিকচক্রকে বহুদূর প্রসারিত করেছিলো। সুমিতদাকে তো চাক্ষুষ করিনি কখনও, সুজনদার সঙ্গে সেই সৌভাগ্যটি হয়েছিলো।

যখন ‘অবসর’এ নিয়মিত লেখা শুরু করি, তখন সুজনদাই সম্পাদক। লেখালেখি নিয়ে মাঝেমাঝেই মেল চালাচালি হতো। যদিও সম্পর্কটি ছিলো পোশাকি। লেখক ও সম্পাদকের মধ্যে যেমন থাকে আর কী! তবে একজন পোড়-খাওয়া সরকারি জনতা হিসেবে বুঝতে পারতাম এই মানুষটির এলেম ও মানসিকতার আকাশটি বেশ বিস্তৃত। তখনও তাঁর সম্বন্ধে ব্যক্তিগত ভাবে কিছুই জানতাম না। বন্ধু নিনা এ বিষয়ে আমার জ্ঞান বর্ধনের কাজ করতো মাঝে মাঝে। কলকাতায় থাকতে আসি ২০১৬-র শেষদিকে। ২০১৭-র বইমেলায় সুজনদার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় হয়।  খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিচয়ের নৈকট্য গভীর হয়ে পড়ে। তিনি আমায় বলেন তাঁকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতে। তা হলে তিনি আমাকে ‘তুই’ বলতে পারবেন। আমি বলি, তিনি স্বচ্ছন্দে আমাকে ‘তুই’ বলতে পারেন। তবে আমরা তো বাংলা মাধ্যম, বড়োদের ‘আপনি’ ছাড়া সম্বোধন করতে পারি না। সুজনদা খুব হাসলেন। বললেন, ‘কিছু বলার নেই।’ 

২০১৭-র বইমেলায়
সুজনদার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয়

২০১৭ থেকে ২০১৮-র মধ্যে সুজনদার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিনিময়টি গাঢ়তর হয়েছিলো। সতেরোর হেমন্তে সুজনদা যখন দেশে এলেন, একদিন সন্ধেবেলা বৌদিকে নিয়ে আমার কুলায় উপস্থিত। ন্যূনতম আপ্যায়নের নামেই গ্লুটেন ভূতের ভয় দেখালেন। অথচ তাঁর নিজের বাড়িতে আমাদের দীয়তাং ভুজ্যতাং ভোজন করিয়েছেন। সেখানে আলাপ হয়েছিলো তাঁর দাদা সুমনদার সঙ্গে। তিনিও তো চলে গেছেন কিছুদিন আগেই। গরিবের বাড়ি খাবার কথা বলতে গেলেই দুর্ভেদ্য যবনিকা নেমে আসে। ‘তোমার বাড়ি খেয়ে যদি আমার শরীর খারাপ হয়, তবে তুমি কি খুশি হবে?’ অকাট্য যুক্তি। বলি, তবে বৌদিই যোগ দিন আমাদের আয়োজনে। তিনি আরও ভাবলেশহীন মুখে বলেন, ‘আমাদের দেশে পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য হয়। তুমি পতিকে বঞ্চিত করে সতীকে পাপের ভাগী যদি করতে চাও, তো করো।’ তাও অকাট্যতর! ‘শুধু কফি খাবো।’ বলি, তবে কফিটা বৌদির জন্য রইলো। আপনার সিঙ্গল মল্টে সমস্যা নেই তো? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওটা অল্প চলতে পারে।’ সুজনদা আর বৌদির এক অদ্বিতীয় যুগলবন্দি। আমার ব্রাহ্মণী বলেন, ‘দে হ্যাভ গ্রোন আপ টুগেদার।’ শুধু সময়ের বিচারে নয়, মানসিকতার বিচারেও। অথচ সুজনদার সব গাম্ভীর্যের পিছনে অপ্রতিরোধ্য ‘ইয়ার্কি’র খরস্রোত লুকিয়ে থাকে। নাহ, শুধু ‘কৌতুকী’ বা ‘সুজনকথা’র লেখক হিসেবে নয়। মানুষটাই অমন। বৌদির যাবতীয় সস্মিত বিনিময়ের স্রোত বাঁধা থাকে মর্মর পাথরের বাঁধা ঘাটে। কূল ছাপানোর অবকাশ নেই কোনও।

তিনি লিখেছিলেন, ইশকুল জীবনে পরীক্ষায় যে রকম নম্বর পেতেন তাতে তাঁর ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে বিশেষ আশাবাদী হবার কোনও কারণ ছিলো না। তাঁর পিতৃদেব একজন বিশ্রুত মনোবিদ ছিলেন। তিনি গত শতকের চল্লিশের দশকে আই কিউ তত্ত্বের ভারতীয় মডেল নিয়ে বিশদ গবেষণাও করেছিলেন। সেই গবেষণা মাফিক সুজনদাকে পড়াশোনায় ‘গাধা’ মনে করার কোনও হেতু তিনি খুঁজে পাননি। তাঁর ধারণা সত্য প্রতীত হয় যখন সুজনদা শেষ পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফলাফল করেন। এ বিষয়ে সুজনদার বৈপ্লবিক যুক্তি হলো নিশ্চয় অন্য কোনও ‘দুর্ভাগা’ সুজন দাশগুপ্তের নম্বর তাঁর সঙ্গে অদলবদল হয়ে গিয়েছিলো। তাঁর অর্জিত অ-কহতব্য নম্বরগুলির অভিশাপ নিশ্চয় সেই ‘অন্য’ সুজন দাশগুপ্তের নসিব হয়েছিলো। এরকম একটি সিনারিও ভেবে নিয়ে তিনি বেশ বিমর্ষ বোধ করতেন। কৌতুক ছলে পেশ করা এই খোশ গল্পটি থেকে সুজনদার মনোজগৎটির হদিশ পাওয়া যায়। ও রকম আপাদমস্তক রসবোধ নিমজ্জিত একটি মেধা আমরা ক্বচিৎ দেখতে পাই। লেখক হয়ে ওঠার আগে তাঁর ছাত্র বা বৃত্তিগত জীবন নিয়ে তিনি ‘ইয়ার্কি’র ছলে মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন মন্তব্য করলেও যাঁরা জানেন, তাঁরাই জানেন। যে শীর্ষস্তরের পেশাগত সাফল্য তিনি অর্জন করেছিলেন তার বিন্দুমাত্র ইশারা তাঁর আলাপচারিতায় কখনও ধরা পড়তো না।

আমাদের দেশে যখন কোনও মানুষ সন্ন্যাস নিতে চায়, তখন তার পূর্বাশ্রমের সব পরিচয়, অস্তিত্বকে বিরজা হোমের আগুনে সমর্পণ করে এক নতুন জীবনকে আত্মস্থ করে। আমি একবার সুজনদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার বিদ্যা ও বৃত্তিগত যাপনকে একজন সন্ন্যাসীর মতো আপনি বিরজা হোমে ভস্ম করে দিতে পেরেছেন।’ এই সাফল্যটি হয়তো আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রিয় স্বপ্ন। কিন্তু কজনই বা পারে তা অর্জন করতে। সামান্য পার্থিব ‘সাফল্যে’র নিরর্থক অহমিকায় গ্রস্ত থেকে আমাদের দিন ফুরিয়ে যায়। নিজস্ব দাঁড়াবার জায়গাটা খুঁজতে খুঁজতে এ জন্মটা অপচয় হয়ে যায়। তিনি অবলীলায় এই অবমাননা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন।

হাল আমলে আমরা দেখেছি সুজনদার স্বস্তিসুখের রসযাপন একটু উত্তাল স্তুতির স্বাদ পেয়েছিলো। রূপালি পর্দার সংসর্গ একজন পরিচয়হীন মানুষকেও বেদীর উপর স্থাপনা করতে পারে। সুজনদা একজন গুণান্বিত অস্তি। তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সোনালি রূপালি কোনও জেল্লাই দরকার হয় না। কিন্তু তেল-নুন-লকড়ি’র সীমায়িত জগতে বন্দি আমাদের মতো ইতর মানুষ বিনোদনমুখী বিভা’র মহিমায় বিশ্বাস করে। ‘একেনবাবু’ সুজনদার সৃজনশীল আয়োজনের বৃহত্তম মাইলফলক। এই উদ্যোগটি সাম্প্রতিক কালে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে বটে, কিন্তু তার নিরিখে সুজনদার সৃজনশীলতা সম্বন্ধে শেষ কথা বলা যায় না। সুজনদা স্বভাবসুলভ স্মিত আন্ডারস্টেটমেন্ট থেকে বলেন, ‘একেনবাবুর বই তো কেউ পড়েন না। পর্দায় দেখেন।’ লেখকের প্রতি জনস্তুতির জোয়ার নিছক প্রতিবিম্বিত মহিমা মাত্র। আসল রহস্যের মেঘনাদ হলো ফিল্মি গ্ল্যামর। আমরা হয়তো মানি না। তিনি তর্কও করেন না। কোনও অবসরেই উচ্চকিত না হতে চাওয়ার বিরল সংযম তিনি রপ্ত করেছিলেন। এও একটা অর্জন।

গত বছর পাঁচেক ধরে প্রায় প্রত্যহ তাঁর সঙ্গে খুনসুটি আদানপ্রদানের একটা নিয়মিত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। রসিক মানুষের সংসর্গকেই শাস্ত্রে ‘ভূমা’ সুখ বলা হয়। নিত্যদিনের জীবনে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য রসবস্তু উপযুক্ত অভিনিবেশের অভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে যায়। তারা ধরা পড়ে যেতো সুজনদার সরস, সহৃদয় চোখের আয়নায়। পাথরের শুকনো নির্মমতা থেকেও তিনি উদ্ধার করে আনতেন কয়েক মুহূর্তের হাসির খোরাক। শরীরের বয়স যে মনের বয়সকে কোনও ভাবেই ম্লান করতে পারে না, শাশ্বত এই বিশ্বাসকে লালন করতো তাঁর অমল প্রাণশক্তি। স্ফুরিত রসবোধ। বয়স মাপতে গেলে আমরা হয়তো ওঁর থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকি। কিন্তু রসিকের আবার বয়স কী? ওসব তো ‘বুড়ো’ লোকের বালাই। গুরুর উপলব্ধি, ‘এত বুড়ো কোনও দিন হব নাকো আমি/ হাসি তামাশারে যবে কবো ছ্যাবলামি…’, সুজনদার যাপনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো।

এককালে বাঙালি মেয়েদের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতে শেখানো হতো। উদ্দেশ্যটি অবশ্য মহৎই বলতে হবে। ভাবী শ্বশুর-শাশুড়িকে একটা শ্যামাসঙ্গীত বা রবিবাবুর গান জুতসই শুনিয়ে দিতে পারলে পাত্রস্থ হবার পরীক্ষায় ডিস্টিংশন-সহ পাস করা যেতো। তা সে রাম নেই, সে অযোধ্যাও নেই। সেসব শ্বশুরও নেই, মেদিনীপুরের সেই সব বন্যার্তরাও নেই আর। কিন্তু হারমোনিয়াম থেকে গেছে। সুজনদা লিখলেন কোনও অনুষ্ঠানে বা কারো বাড়ি গেলে যখন জনতা একটা হারমোনিয়াম বার করে প্যাঁ প্যাঁ করতে থাকে, তাঁর পগারপার হতে ইচ্ছে হয়। তা গত বছর দশেক ধরে আমার কোনও গান পোস্ট করলেই সুমিতদা আর সুজনদাকে আমি ট্যাগ করে দিতাম। মনে হয় ওঁরা শুনতেন। মানে মন্তব্য পড়লে সে রকমই লাগতো। সুজনদার থেকে হারমোনিয়াম সংক্রান্ত মন্তব্যটি পড়ে আমি তাঁকে ট্যাগ করার আগে ‘Beware of dog’ স্টাইলে ‘Beware of harmonium’ লিখে দিতাম। তিনি খুব উপভোগ করতেন ব্যাপারটা। বৌদির কাছে শুনলাম সুজনদা আমাকে ভালোবাসতেন খুব।

আমাদের সরকারি ভাষা ‘হিন্দি’ ছিলো তাঁর কাছে নেমেসিস। আমি এবং বন্ধু নিনা আগমার্কা বিহারি হবার সূত্রে হিন্দি নিয়ে তাঁর গুল্ফ আকর্ষণ করে গেছি সমানে। কোথায় একবার কোন একটি সভা হিন্দি ভাষায় সঞ্চালিত হতে দেখে তিনি পাগল কুকুরের ভয় তুচ্ছ করে ছুটে পালিয়েছিলেন। এ জাতীয় গৌরবগাথা ছিলো তাঁর নিত্যসঙ্গী। আমরা সুযোগ পেলেই (না পেলেও) সুজনদাকে শুধু হিন্দি নয়, ভোজপুরিতেও শাসিয়েছি। কয়েকবার কবি গালিব বা মীর তকী মীরের উর্দু শ্যায়রি লিখেও ভয় দেখাতাম। ‘একেনবাবু’ জনপ্রিয় হতে কোনও এক বঙ্গসন্তান সুজনদাকে আদেশ করেছিলেন গল্পগুলো ইংরেজিতে লিখে, নিদেন পক্ষে হিন্দি হলেও চলবে, তাঁকে যেন শোনানো হয়। নিজের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে সুজনদার অবিরত কৌতুক করার সাধ তো সবাই জানেন। আর হিন্দি?? আমি বলি আমি সাহায্য করবো। কে জানে টলিউডের মতো বলিউডেও হয়তো হিন্দি একেনবাবু একদিন রাজ করবেন। সুজনদা ছদ্মভীতি দেখিয়ে বলতেন হিন্দির ভয়ে দেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইল পালিয়ে সাহেবদের দেশে এসেও দেখছি নিস্তার নেই।

আমার বাড়ি থেকে উদিতা-য় সুজনদার বাড়ি বড়ো জোর মিনিট পনেরো। সরলরেখায় ই এম বাইপাস। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পুরো দু’মাস। অনেক সময়। সুজনদা তো জেনুইন ব্যস্ত মানুষ। আমিও নানা বাঁধনে চমৎকারা। মোদ্দা কথা, এতদিন কেটে যাবার পরেও আমাদের মুখোমুখি ব্যাটেবলে হয়নি। যা কিছু বিনিময়, সবই অলীক মাধ্যমে। এই গ্রহে তাঁর শেষ রাতটিতে যোগাযোগ হলো একবার। তখন অনেক রাত। কিছু একটা লিখছিলাম আমি । হঠাৎ দেখি আমার প্রোপিক লাইক করলেন সুজনদা। এতক্ষণ জেগে আছেন? সঙ্গে সঙ্গেই মনে এলো কালই একটু বেলায় ফোন করে একটা ‘অ্যাপো’ নিতে হবে। দু’মাস হলো প্রায় এসেছেন। এখনও চোখের দেখা হলো না। অফিসিয়ালি কাছেই থাকেন। কিন্তু তিনি এখন সেলিব্রিটি। কখন কোথায় গেলে তাঁকে পাওয়া যাবে তিনিই শুধু বলতে পারেন।

দেখা হচ্ছে না বলে অনুযোগ করতে মেসেজ করলেন ‘দেখা হবেই।’ সেই বেলা আর গড়ালো না। দেখাও হলো না আর। শেষবার যখন দেখলাম তাঁকে, সাদা চুল পাট পাট করে ব্যাকব্রাশ করা। চোখে চেনা হাফ মেটালিক ফ্রেমের চশমাটি। চোখদুটি বোজা। মুখে অপার প্রশান্তি। শুধু ঠোঁটের ফাঁকে লুকোনো মশকরার আলোটি ছিলো না। মনে মনে দেখতে পাই সুমিতদা আর সুজনদা এই মুহূর্তে মেঘের ওপারে অন্তরীক্ষে কোনও ‘সুজন’বাদিয়ার ঘাটে অন্তহীন আড্ডায় মশগুল…

‘…নিজের পায়ের চিহ্ন নিজে আর মনেও রাখেনি
আমিও রাখিনি কিছু, তবু হাত রাখে পিছুটান
মাটিতে বসানো জালা, ঠাণ্ডা বুক ভরে আছে জলে
এখনও বুঝিনি ভালো, কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে… ‘
                                                               (শঙ্খ ঘোষ)

মেয়ের বিয়েতে শমীতাবৌদি - সুজনদার সঙ্গে আমি ও আমার ভাই
শিবাংশু দে'র লেখনী অনায়াসে ছুঁয়ে যায় সঙ্গীত কাব্য ইতিহাস কিংবা উত্তরভারতীয় শিল্পশহরের ধুলোবালি। সূক্ষ্ম নরম অক্ষরে জাগান তুলোট কাগজে লুকিয়ে থাকা ছবি যার পরতে পরতে অপেক্ষা করে পাঠকের নবতর বিস্ময়। ব্যক্তি জীবনে শিবাংশু বিখ্যাত তাঁর সুভদ্র পাণ্ডিত্যের জন্যে। অতিব্যস্ত পেশাগত জীবনের খতিয়ান হয়তো লেখক পরিচয়ে তত প্রাসঙ্গিক নয়, যদি না তজ্জনিত আসমুদ্রহিমাচল ভ্রমণ ও বহু মানুষ দেখাজনিত অভিজ্ঞতা স্মরণ করা হয়।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • ishani , March 19, 2023 @ 5:14 pm

    এইসব লেখা পড়ে ভাবি, সুজনদা কি তবে সত্যিই নেই ? তারপর মনে হয়, আছে! কারণ, এই যে প্রতিদিন সুজনদার কথা মনে পড়ে , সুজনদাকে ‘মিস’ করি …তার মানেই তো থেকে যাওয়া। আসলে রোজই সেই অর্থে সুজনদার জন্মদিন। যারা অন্যদের মনে অনন্ত আয়ুর আধার হিসেবে বসত করে, রোজই তাদের জন্মদিনের উদযাপন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *