ছাতের পাঁচালি
বাড়ি। বাড়ি মানেই মানুষ। বাড়ি মানেই অনুভূতিদের যোগফল। আচ্ছা, এই বাড়ির শেকড় কোথায়? মাটিতে? নাকি ছাতে? আসলে মানুষ যেখানে তার আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারে বোধহয় সেখানেই প্রোথিত থাকে তার শেকড়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণা আর অপুর ভালোবাসার শেকড় গড়ে উঠেছিল তাদের হতশ্রী ভাড়াবাড়ির এক চিলতে ছাতের ঘরে। এই ভালবাসাই পরে জীবনবিমুখতা থেকে জীবনের পথে ফিরিয়ে এনেছিল অপুকে।
সভ্যতাকে থামিয়ে দেওয়া একটা বীজাণু আমাদের গৃহবন্দি করেছিল দীর্ঘদিন। দুঃসময়ের এমন আঁধারে হতাশা, বিষণ্ণতা গ্রাস করেছিল মাকড়সার জালের মতো। দুশ্চিন্তার মেঘ চারিদিকে। চার দেওয়ালের গায়েও আতঙ্ক। চারিদিকে কোথাও যেন অন্ধকারের হাতছানি। একটুকরো সাদা, মুক্তির আকাশের জন্য আকুলি বিকুলি করছে প্রাণ। ছোটবেলায় মায়ের শরীর খারাপ হলে এমনই মেঘ ছড়ানো কালো রং ধরত মনের আকাশে।
এই বিশ্বও মাতৃসম। তার অসুখ। তখনো পর্যন্ত সেই অসুখ শরীরে না লাগলেও, মনের আনাচে-কানাচে লেগে গেছে তার ছোঁয়া। মেয়েবেলার কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। কী করতাম মায়ের শরীর খারাপ হলে? বাড়ির সবচেয়ে আপন অংশে নিজের প্রার্থনার পৃথিবী সাজাতাম। চেষ্টা করতাম মনের অন্ধকার জাল সরাতে। এবারেও তাই করলাম। মনের দরজা, জানালায় লেগে থাকা অন্ধকার এই জাল সরাতেই ফিরিয়ে এনেছিলাম পুরনো একটা অভ্যেস। ছাত। আমার অনুভূতিনামার সাক্ষী।
আমি ‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো’য় বিশ্বাসী। অতিমারীর দিনগুলো তখন স্তব্ধ, ফাঁকা ডায়েরির মতো মনে হত। সেই ফাঁকা পাতায় যোগ করলাম একটা ‘সুযোগ,’ তার নাম ছাত। বাড়ির সবচেয়ে আপন অংশ। আমার নিজের প্রার্থনার পৃথিবী। ছাতের ওপর বিরাজমান মুক্ত আকাশ। যেন সেই ‘খাঁচার পাখি’র সঙ্গে দেখা হল ‘বনের পাখি’র। নিত্য ইঁদুরদৌড়ে ব্যস্ত জীবনের অবকাশ।
আমাদের জীবনের সবখানেই কবিগুরু তাঁর অক্ষরের ছায়া নিয়ে বিরাজমান। ছাতের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তাই ছাতে উঠে প্রথমেই মনে পড়েছে তাঁর কথা। রবীন্দ্রনাথের জীবনেও ছাত অবকাশের সঙ্গী হয়েছে। তাঁর ভাবনাকে আলোকিত করেছে আকাশের অভিমুখে থাকা বাড়ির এই অংশ। বাড়ির অন্তঃপুর যখন বিশ্রামে ব্যস্ত, কবিগুরু ছাতের বুকে দেখেছেন তাঁর ভাবনাদের। ছাতের পাঁচিল বরাবর আলাপ হয়েছে বন্দিদশা আর মুক্তমনের।
আচ্ছা, ছাতের নাম স্মৃতি-কক্ষ হল না কেন? নিদেনপক্ষে প্রার্থনা-ঘর? আমার ছাতে এক বিশেষ স্থানে রাখা রয়েছে একটা টগর ফুলের টব। নিয়মমাফিক কেউ জল দেয়। সবুজ পাতা, সাদা ফুল। কোথাও জরা বা ব্যাধির লেশমাত্র নেই। সে দিব্যি হাসছে। তার এই দ্বিধাহীন বেড়ে ওঠা আমার শৈশবের দিনের মতোই। ছাতের একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে। মন খারাপ করা, আবার মনের ভেতরে স্মৃতির ঝাঁপিকে উসকে দিয়ে মন ভালো করা।
একদিন ছাতে উঠতেই ক্যালাইডোস্কোপের মতো কতগুলো ছবি ভেসে উঠল মনের মধ্যে। মনে হচ্ছিল যেন গত জন্মের কথা। ছাতের এক কোনে মাদুর পাতা। ছোট, ছোট হাত-পা’ওলা স্বপ্ন মানুষেরা যেন মাদুরের ওপর বসে। তারা এক অন্য পৃথিবী সাজাচ্ছে। প্রতিযোগিতা, হিংসে, নম্বর, রেজাল্টের বাইরের পৃথিবী। বাড়ির উঠোন থেকে কুড়িয়ে আনা ইট, কাঠ, পাথর। অথচ তারা প্রাণহীন নয়। শৈশব ধরে রাখার আধার। ছাতের মধ্যে তখন রান্না বাটি খেলা চলত। সংসার নামক মায়া-জগতের একটুকরো কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি। ভাগ্যিস ওই কল্পনার জগতটুকু ছিল। আমরা, সখীরা, নিজেদের এক মিছিমিছি জগত গড়তাম। বর পুতুল, বউ পুতুল সাজানো। যেন তাদের জীবন গুছিয়ে দেওয়া। ভাগ্যিস আমাদের জীবনের জটিল চিন্তা তখনো নাগপাশের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেনি শৈশবকে। আর সঙ্গী ছিল উঠোনের ‘লুচি পাতা’ গাছ। গাছ থেকে কতগুলো পাতা তুলে নিয়ে ইচ্ছেমতো রান্নাবান্না চলত। পুতুলদের বেয়াই-বেয়ান বাড়িতে সে সব বিলিয়ে দিতাম। লাল গামছা দিয়ে লম্বা চুল বাঁধা সকলের। আলতা-রাঙা পায়ে দুপুরের গল্প চলত।
ছাতের দুপুর মানেই মাদকতা। শীতকাল। দুপুরের শিরশিরে হাওয়া আর হাতের কাছে পছন্দের বই। এক অন্য জগত। কখনো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বড়দিদি’, কখনো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘অদ্ভুতুড়ে’ সিরিজ। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি।’ পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হারিয়ে যাওয়া – কোন এক কাল্পনিক নাম-না-জানা জগতে। ছাতের মেঝে তখন কমলালেবুর খোসা গুনছে। কমলালেবুর গন্ধে মাখামাখি দুপুর।
আমার কিশোরীবেলা মানে নব্বই দশক। টেলিভিশন মানেই দূরদর্শন। লালকমল-নীলকমল, ছুটি-ছুটি। হঠাৎ করে টিভির পর্দায় রঙিন ঝিলমিল। অমনি দে ছুট। ছাতে থাকে অ্যান্টেনা। অবুঝের মতো তার অভিমুখ ঘুরিয়ে ছবি বদলের চেষ্টা। সাফল্য খুঁজতে আবার টিভির সামনে। অসফল হলেই আবার সেই ছাতে ছোটা। ক্লান্তিহীন ছুটোছুটি। ছাত বোধহয় কখনো ক্লান্ত হত না।
গ্রীষ্মের ছুটির বিকেলগুলো মায়ার মতো ছিল। ইচ্ছে করত বেঁধে রাখতে। কিন্তু সে বয়েই চলত। বন্ধুদের জন্য মন-খারাপ। ছাতের ফুরফুরে হাওয়া। ছাতের কার্নিশে কনুই দিয়ে তাতে মাথা রেখে চলত দুঃখ-যাপন। এতো স্মৃতি বুকে নিয়ে ছাত কেমন করে আকাশের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে থাকে? যদিও বিবাহসূত্রে আমার ছাত বদল হয়েছে, তবে স্মৃতির অভিমুখ মনের দরজা পর্যন্ত একই পথে যাতায়াত করে। তাই ছাতের আরেক নাম স্মৃতি-কক্ষ হলে বোধহয় মন্দ হত না।
আচ্ছা, ছাত আর আকাশের সম্পর্ক ঠিক কেমন? বোধহয় প্রার্থনার। শুভ কিছুর জন্য। জীবনের খাতে দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশার বহমানতা শুরু হওয়ার আগের কথা। কখনো এমনি এমনি ছাতে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। প্রার্থনা করতাম। তাতে স্বার্থের গন্ধ থাকত না। ছোট, ছোট অথচ মূল্যবান। এই যেমন অমুক ক্রিকেট ম্যাচটাতে ভারত যেন জেতে, বা স্কুলের যে বান্ধবীর সঙ্গে সেভাবে কথা হয়না, তার শরীর খারাপের কথা শুনে উথাল-পাথাল মনের প্রার্থনা। কোনো কোনো বিকেলে ফুচকাওয়ালার দেখা পাওয়ার প্রার্থনা। ক্ষুদ্র এক জীবনের বিস্তৃত হওয়ার পথের প্রার্থনা দিয়েই বিকেলগুলো কাটত।
স্কুলে হয়তো প্রিয় বান্ধবীর সঙ্গে মন-কষাকষি হয়েছে। মন মেঘময়। ছাতে উঠে হাপুস নয়নে বৃষ্টি ঝরেছে। পরের দিন স্কুলে গিয়ে আবার ভাব জমেছে। মনে যথারীতি রোদ্দুর। ধন্যবাদ জানাতে হবে না? কাকে? সেই যে এক বিস্তৃত শক্তিকে! সময়মতো পৌঁছে যেতাম ছাতে। কথা শুরু করতাম অদৃশ্য কারোর সঙ্গে। আড়ি-ভাবের গল্প নেমে আসত বিকেলে। কোনো দিন আবার পাড়াতুতো কোনো সঙ্গী এসে জুটত। কল্পনার জগত তখন হয়ে উঠতো আরো আনন্দময়। ছাতের বুকে বন্ধুত্বের আঁকিবুকি কাটা চলতো।
অতিমারীর সময় যখন প্রায় রোজই ছাতে উঠেছি আকাশটাকে বেশি নীল মনে হয়েছে। আসলে মনের আকাশের রং তখন ধূসর। তাই প্রকৃতির আকাশেই রং খুঁজে পেয়েছি। অপলক ভাবে তাকিয়ে থেকেছি। কখনো অকারণ হাত বাড়িয়েছি ছোঁয়ার জন্য। হাতে লেগেছে রোদ্দুর, বৃষ্টি। ঠিক জীবনের মতো। ছাত না থাকলে আকাশের প্রতি জীবনের এই অভিমুখ কে চেনাত আমায়?
এক শীতের দুপুরে হঠাৎ করেই চোখ লেগে গেছে ছাতের বুকে। ঘুমের মধ্যে ছাত আমায় নিয়ে গেছে মেঘের দেশে। মনে হয়েছে এই বুঝি সপ্তর্ষিমণ্ডলের দেখা পাব। ধ্রুবতারা নিশ্চয়ই পথ চেনাবে। তারপর ঘুম ভেঙে গেছে। হঠাৎ করে মন ভালো হয়েছে। ছাতের এমন অলৌকিক শক্তি আছে! আশ্চর্য হয়েছি ভেবে!
আচ্ছা, ছাতের বন্ধু কে? মানুষ? নাকি পায়রা? আমরা নব্বই দশকের ছেলেমেয়েরা দেখেছি ছাত আর পায়রার নিখাদ বন্ধুত্ব। চিলেকোঠার ঘর পেরোলেই ছাত আর পায়রার মন্তাজ। কিচিরমিচির ডাক। আমরা যারা মফস্বলে বড় হয়েছি তাদের কাছে এই ছিল বিশ্ব-প্রকৃতি। আমাদের সঙ্গে নক্ষত্রদের সম্পর্ক ছিল ভারি গভীর। সপ্তর্ষিমণ্ডল, কালপুরুষ, ধ্রুবতারার সঙ্গে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতাম। কখনো সেই তারায় ছেড়ে যাওয়া আপনজনদের খুঁজে বেড়িয়েছি।
এ বিষয়ে ছোটবেলার একটা স্মৃতি আজও মনের মধ্যে ছবির মতো স্পষ্ট। তারা গোনা। খোলা ছাতের বুকে বারবার বিফল চেষ্টা। একেক দিন খুব অধৈর্য হয়ে পড়তাম। কোনদিনই কি তবে শেষ হবে না এই তারা গোনার অংক? কারণ ফলাফল কিছুতেই ধরা দিত না। তারপর অন্য এক পন্থা নিলাম নিজেকে শান্ত রাখতে। কাল্পনিক তারা জুড়ে কোন অচেনা, অজানা মুখ আঁকার চেষ্টা।
চোখে পড়া নক্ষত্রদের কাল্পনিক রেখাংশ দিয়ে যোগ করে পছন্দের মানুষদের ছবি আঁকতাম। মনে মনে। আজগুবি, কাল্পনিক জগৎ, অথচ মনের কাছাকাছি। হারিয়ে যাওয়া অন্তরের কান্না ছাত ছাড়া আর কেউ কি খুঁজে দিত আমায়। কেউ যেন বলে উঠত –
”আমি ছিলাম ছাতে
তারায় ভরা চৈত্র মাসের রাতে।”
আমায় জিজ্ঞেস করত – ‘কী হয়েছে বামি?’
আর কেঁদে উঠে আমি বলতাম- ”হারিয়ে গেছি আমি!’’
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘হারিয়ে যাওয়া’)
এই গৃহবন্দি অবস্থায় আমরা যারা রোজ মোটামুটি ছাতে উঠেছি, তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে এক অন্য প্রকৃতির। আমাদের চারপাশে সাজিয়ে রাখা প্রকৃতি। ঝিরিঝিরি, টুপটাপ বৃষ্টি। সোনালি রোদ্দুরের ঝিলমিল। ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসা বৃষ্টির চাদরের সঙ্গে পুকুরের বন্ধুত্ব আমাদের দেখিয়েছে ‘ছাত’ নামের এই মায়া-পৃথিবী।
আরেক প্রকৃতির সঙ্গেও ছাত হয়তো আমাদের আলাপ করিয়েছে এই গৃহবন্দিত্বে। পাশের বাড়ি। প্রতিবেশী পাড়া। সেও এক পৃথিবী। কিন্তু আগে কি কখনো এদের সঙ্গে দেখা হয়নি? হয়তো হয়েছে, হয়তো বা হয়নি। বেণীবাঁধা মেয়েটা আর বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো ছেলেটা রোজ ছাতে ওঠে। ওরা একে অপরের দিকে চোখ মেলে তাকায়। কখনো মেয়েটা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। আমি গোলাপি আভা দেখতে পাই। মেয়েটার গালে। ইশারায় কথা বলে ওরা। কোনো একদিন হয়তো গোলাপি আভা গাঢ় হবে। লাল-চেলির স্পর্শে ওদের জীবন রঙিন হোক। মাঝে মাঝে ভয় পেয়েছি। স্পর্শহীন এই পৃথিবীতে হারিয়ে যাবে না তো ভালোবাসা নামের গভীর অনুভূতি। পরের দিনই যখন ওদের দেখেছি একই ভাবে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে, দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। মারীকালে ভালোবাসাও সংক্রমিত হয় তবে?
আমি কল্পনা করি বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এই ছেলেটার হাতে লাটাই। ঘুড়ির সুতো উড়ছে আকাশে। ওই দিকের ছাতে মেয়েটা একা। ছাত থেকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে লাল ঘুড়ির দিকে। ‘ছেলেটা যেন জেতে।’ অব্যক্ত প্রার্থনা। মাঝখানের সেতু ছাত, আকাশ আর ঘুড়ি।
মতি নন্দীর রচনাতেও ছাতের প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। তাঁর ছোটগল্প সমগ্রে ‘ছাদ’ নিজের জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর রচনায় ছাত অনুভূতির সমার্থক। কখনো সে বয়ে নিয়ে এসেছে অভিমানের তীক্ষ্ণতা, কখনো প্রেমের শীতল স্পর্শ। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘লোটাকম্বল’-এও ছাত অসীমের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে ‘পিন্টু’কে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে স্বামীহারা মেয়েটি তার স্বামীর অপেক্ষা করত ছাতে। ছাত তার কাছে অপেক্ষার আশ্রয়। কল্পনার আধার| সাহিত্যে ছাত বরাবরই তার নিজের অধিষ্ঠানে সমাদৃত। নানা অনুভূতির অন্ত্যমিল খুঁজে পাওয়া গেছে ছাতে।
ব্যস্ততা নামক দৈত্য জীবনকে গ্রাস করার পর রক্ষা পায়নি আমার ছাত নিয়ে রোমান্টিকতা। ধীরে ধীরে সে বিলীন হয়েছে উচ্চাকাঙ্ক্ষার গর্ভে। একটা বীজাণু এসে পাল্টে দিচ্ছে আমাদের জীবনভঙ্গিমা। তবুও কিছু বিষয় একই থেকে যায়। তাই বিবাহসূত্রে ছাত বদল হলেও পাল্টায়নি আমার জীবনে তার বিস্তৃতি। মারীকালে আরো বেশি করে খুঁজে পেয়েছি তাকে। আমরা না চাইতেও আজ একা। বিচ্ছিন্নতাই যে চিরসত্য ছাত আমাকে তা শেখাচ্ছে। এতদিন বাড়িকে শুধু উঁচু স্তম্ভ ব্যতীত কিছু মনে হয়নি। সেই বাড়ির ভগ্নাংশ ছাত। সে আমায় খুঁজে দিয়েছে আনন্দ। প্রকৃতির ফিসফিস, তারাদের মিটিমিটি, সব মিলিয়ে ছাত যেন আমার অচঞ্চল জীবনযাত্রা। জীবনের সব মুহূর্তই যে এমন অনন্ত ছাত না থাকলে কে উপলব্ধি করাতো?
ছাতে উঠে আকাশের দিকে তাকালে আকাশটাকে মাঝে মাঝে সাদা পাতা মনে হয়েছে। কখনো রোদের কাটাকুটি খেলা। কখনো বৃষ্টির সমীকরণ। প্রকৃতি মাঝে মাঝেই তার ভালোবাসা এঁকে দেয় আকাশে। মেঘ, নক্ষত্র, পাখি, চাঁদ। সকলের ভালোবাসার ওম লেগে থাকে ছাতের গায়ে।
ছোটবেলায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে একবার ছাতে উঠতাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার প্রণাম করতাম। কাকে? ঈশ্বরকে? নাকি বিশাল, বিস্তৃত প্রার্থনা-কক্ষে দাঁড়িয়ে কোন শুভ শক্তির উদ্দেশে দুর্বল মনের চিন্তাগুলো উগরে দিতাম! আকাশের উচ্চতার স্তরে প্রার্থনার অভিমুখ। কেন হবে না ছাতের আরেক নাম প্রার্থনা-কক্ষ?
ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।
2 Comments