‘আজি প্রণমি তোমারে’

শ্রী শঙ্খ ঘোষ প্রায় সাত দশক ধরে আধুনিক বাংলা সাহিত্যজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। একুশে মে, ২০২১ তাঁর প্রয়াণ দিবস — আপামর বাঙালি ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অন্ধকারময় দিন। এক নক্ষত্রপতনের দিন। পঞ্চাশের দশকের কবিদের মধ্যে আমরা আগেই হারিয়েছি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রহমান, বিনয় মজুমদার প্রমুখকে। আর জার্মানিতে মাত্র কয়েক মাস আগে ২০২০-র নভেম্বরে প্রয়াত হলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বিশের বিষময় অতিমারীর ভয়াবহ দিনগুলিতে তবু শঙ্খবাবু ছিলেন সকলের মাথার ওপর ছাতা হয়ে। একুশের এপ্রিল একুশ, বাঙালির নিজস্ব বিবেক ও সত্তাপ্রতিম এই কবিকেও অতিমারী ছোবল দিয়ে কেড়ে নিল।
কবি হিসেবে শঙ্খ ঘোষ প্রবাদপ্রতিম। তিনিই একমাত্র সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব যিনি বহু পুরস্কারের সঙ্গে পদ্মভূষণ (২০১১), সাহিত্য আকাদেমি (১৯৭৭), জ্ঞানপীঠ (২০১৬), ও সরস্বতী সম্মান (১৯৯৮) পেয়েছেন। তাঁর কবিতার ভাষা, শব্দ, বাক্য, ও পংক্তি যেন আমাদের মুখে মুখে প্রবাদ-প্রবচন হয়ে গেছে। যেমন, ‘আয় সবে বেঁধে বেঁধে থাকি;’ ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ, রক্তে জল ছলছল করে;’ ‘আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক;’ ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে;’ ‘শব্দ কুহক খোলা আজান নৌকা কাঙাল;’ ‘নিওন আলোয় পণ্য হল যা কিছু আজ ব্যক্তিগত;’ ‘রাস্তা কেউ দেবে না, রাস্তা করে নিন/ মশাই দেখছি ভীষণ সৌখিন!’ এমনকী তাঁর কবিতার বই ও গদ্যগ্রন্থগুলির নামও যেন এক একটি ছন্দময় বাক্য – প্রবাদ কবিতা — যেমন, ‘তুমি তেমন গৌরী নও;’ ‘নিঃশব্দের তর্জনী;’ ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ;’ ‘ধুম লেগেছে হৃদকমলে;’ ‘মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়;’ ‘শবের ওপর শামিয়ানা;’ ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে;’ ইত্যাদি।
শুধু কবিতার ভাষা বা ছন্দ নয়, তাঁর গদ্য, ‘এখন সব অলীক;’ ‘ইছামতীর মশা;’ ‘এ আমির আবরণ;’ ইত্যাদি অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল — যেন দক্ষিণের বারান্দার এক ঝলক খোলা হাওয়া। সেই গদ্যে তিনি রবীন্দ্রবিষয়ক কিংবা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে যেমন মননশীল প্রবন্ধ লিখেছেন, তেমনি সরল সহজ কিশোর-শিশু উপন্যাসও লিখেছেন। লিখেছেন জাদুময় সেই ভাষায় স্মৃতিকথা, আত্মকথা, ভ্রমণ, আয়ওয়ার ডায়েরি, এমনকী সিনেমা বা সমসাময়িক বিষয়েও অনেক লেখা। বলাই বাহুল্য, সর্বত্র তাঁর লেখনী সাবলীলতার সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত মনোগ্রাহী, তাৎপর্যপূর্ণ, এবং প্রাসঙ্গিক।
আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য, গত চারটি দশক শঙ্খ ঘোষকে দেখার, জানার, ও আশীর্বাদ পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে পাশ করার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যখন ঢুকেছিলাম, তিনতলায় বাংলা বিভাগ তখন চাঁদের হাট। দেবীপ্রসাদবাবু ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। এছাড়া ছিলেন লেখক অভ্র রায়, নাট্য-ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জন ঘোষ, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার, তরুণ অধ্যাপক পিনাকেশ সরকার, এবং সর্বোপরি কবি-অধ্যাপক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ শঙ্খ ঘোষ। দোতলায় তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগও ছিল তারকাখচিত। বিভাগীয় প্রধান শ্রী নরেশ গুহ আমাকে ডাকেন তাঁর বিভাগে যোগ দিতে, কিন্তু শঙ্খবাবুর কাছে পড়ব বলে বিভাগ বদল করিনি। আজও নিজেকে সেই জন্য ধন্যবাদ দিই।

যাদবপুরে আমাদের স্নাতকোত্তর ছাত্রাবস্থার দিনগুলিতে শঙ্খবাবু ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দু’টি বিশেষ সেমিনার করিয়েছিলেন। তিনি নিজেই ছিলেন লিটল ম্যাগাজিনের যথার্থ অভিভাবক। তাই একবার লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে এবং দ্বিতীয়বার রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ দিকের ফটোগ্রাফার শ্রী শম্ভু সাহার নিজস্ব রবীন্দ্র আলোকচিত্র সংগ্রহ নিয়ে। লিটল ম্যাগাজিনের সুবাদে আমরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত প্রমুখকে ইন্টারভিউ করতে শঙ্খবাবুর চিঠি নিয়ে তাঁদের বাড়ি গিয়েছিলাম। উফ… ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস না করে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে, রীতিমতো এক গুরু দায়িত্ব নিয়ে ইন্টারভিউ করতে যাওয়া — সে যে কী উদ্দীপনা, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না! দুটি সেমিনারই অপূর্ব হয়েছিল এবং আমরাও হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে ঋদ্ধ হয়েছি।
তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে পরেও অত্যন্ত যোগাযোগ ছিল, বিশেষত স্বপন মজুমদারের সঙ্গে। অনেক পরে, ২০১২ সালে যখন বই নিয়ে প্রকাশনার কথা ভাবি, স্বপনবাবু ও শঙ্খবাবুর কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছিলাম। তার কিছুদিন পরে স্বপনবাবুর দীর্ঘ দুরারোগ্য অসুস্থতা বারবার আমাদের সকলকে অত্যন্ত দুঃখ দিয়েছে, বিচলিত করেছে। সেই সময় দু’একবার শঙ্খবাবুকে নিয়ে আলাদা করে স্বপনবাবুকে দেখতেও গিয়েছিলাম এবং দেখেছি অগ্রজের মতো স্বপনবাবুর প্রতি তাঁর অনাবিল স্নেহ। আমার কিছুদিন বেঙ্গালুরু বাসের কারণে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। যখন সাধারণ এলোপ্যাথি চিকিৎসায় স্বপনবাবুর শারীরিক উন্নতির কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না, ‘এবার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করালে কেমন হয়,’ আমার এই প্রস্তাবে সকলেই বুঝি একটু আশার আলো দেখতে পান। শঙ্খবাবু যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলেন এই কথায়। সেই চিকিৎসায় স্বপনবাবুর কিছু উপকার হয়। নিজের কাজ, কবিতা ও অন্যান্য বই লেখা, পড়ানো, ও অজস্র কাজের ফাঁকে ফাঁকে শঙ্খবাবুকে আশেপাশের সকলের ভালো থাকা ও থাকানোর প্রতি যে নিরলস উদ্বেগ ও আনন্দ পেতে দেখছি, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
পুরোনো কথায় ফিরি। এম-এ পরীক্ষা দিয়েই আমার গোত্রান্তর হয়ে গেল। আমি হলদিয়ায় চলে গেলাম। যাবার আগে যখন তাঁকে প্রণাম করতে গিয়েছিলাম, শঙ্খবাবু আমায় তাঁর কাছে PhD করতে বলেন; বিষয় — উপন্যাস। আমার দুর্ভাগ্য তা আর সম্ভব হয়নি। হলদিয়ার কিছুদিন পরই আমরা আমেরিকা চলে আসি আমার স্বামীর PhD প্রোগ্রামের সুবাদে। গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট অবস্থায় ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের নিয়ে, আমেরিকার প্রথম কয়েক বছরের দিনগুলি খুবই ঝড়ঝঞ্ঝা টালমাটালে গেল। তবু চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল বরাবরই।
এরপর আমি সাহিত্য ছেড়ে দিয়ে ফিন্যান্স নিয়ে বস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করি। দীর্ঘ অনেক বছর পর যখন কলকাতায় গেলাম, তার অল্পদিন পরেই শঙ্খবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম । আমার শাখা বদলের সব খবর শুনে একটু নিরাশ হলেও আগামী সম্ভাবনার কথা বলে উৎসাহও দিয়েছিলেন প্রচুর। স্বভাবজাত একটু চুপ করে থেকে বলেছিলেন, ‘যাই করো, পড়ার অভ্যাসটা ছেড়ো না কোনোদিন।’ কথাটা আজও আমার কাছে বেদবাক্য হয়ে আছে।
কলকাতায় গেলে একবার করে দুপুরে খেতে বলতেন। ‘সুমিতা ছোট মাছ ভালোবাসে,’ এই সাধারণ কথা মনে রেখে যখন বলতেন, তখন তাঁর পিতৃসুলভ স্নেহটুকুই পেয়েছি। আর এই আপাত-সামান্য কথার ভিতর দিয়ে অসামান্য এক স্নেহ-দরদের ছোঁয়া এসে আমায় আপ্লুত করত। প্রতিমাদি কত যত্ন করে পরিবেশন করতেন, তাতে যেন খাবারের স্বাদটুকু অমৃতের মতো লাগত।
যতবার গেছি শঙ্খবাবুর বাড়িতে — বলে, অথবা কখনো বা না-বলে, ‘মিঠি/টিয়া’ লেখা দরজাটার বাইরে দাঁড়িয়ে টোকা দেবার আগেই জানতাম হয়তো প্রতিমাদি দরজা খুলে সহাস্যে বলবেন, ‘এস এস, ভেতরে এস।’ ঠিক তাই। স্যারও এগিয়ে এসে বলতেন, ‘আরে থাক থাক, কবে এলে?’ আপ্যায়নের সেই নির্মল স্নেহমাখা মুখগুলি আজীবন একই দেখেছি।
২০২০-তে তাঁর সঙ্গে বার কয়েক দেখা হয়েছিল এবং প্রতিবার হাঁটার অসুবিধা সত্ত্বেও ঠিক দরজা পর্যন্ত এসে দাঁড়াতেন সহাস্য মুখে। শঙ্খবাবুর এই অভ্যাসটার কথা সকলেই বলবেন, এর অন্যথা হত না কখনোই এবং কারোর ক্ষেত্রেই। তবে ‘২০-র মার্চ মাসে তখন তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে শয্যাগত, মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। হাসপাতালের মতো বিছানাটি উঁচু করা। মনটা সেদিন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বললেন, ‘পৌঁছে ফোন করে খবর দিও।’ পরে শুনেছিলাম আবার উঠে দাঁড়িয়ে অল্প অল্প হাঁটাচলা শুরু করেছিলেন।
শঙ্খবাবুকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি – তাঁর গলার স্বরটি কানে ভাসে। ফোন করলে সেই গম্ভীর অথচ এক সাদর আপ্যায়ন মেশানো গলা, ‘হ্যাঁ… কোথা থেকে বলছ? অনেক দিন খবর নেই কেন? কবে আসছ?’ আর যদি কলকাতা থেকেই ফোন করেছি, ‘কবে এলে? অ, দু’সপ্তাহ হয়ে গেছে!’ নিজেরই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করত ওই কথা শুনলে!
স্মৃতির অতল থেকে কত কিছু ভেসে ওঠে আবার। মনে আছে নব্বইয়ের দশকে একবার শঙ্খবাবুর একটা চিঠি পেলাম, কলকাতায় এলে যেন অবশ্যই যোগাযোগ করি। আমার ছেলেমেয়েরা তখন ছোটো। ওদের নিয়ে কলকাতায় দেখা ও প্রণাম করতে গিয়ে গিয়ে শুনলাম, টিয়া (সেমন্তী) বস্টন-এ আসছে টাফটস ইউনিভার্সিটিতে PhD করতে। প্রতিমাদি ও স্যার দু’জনই একটু চিন্তিত। আবার আমি বস্টনে থাকি বলে একটু যেন নিশ্চিন্ত। আমি এই খুশির খবরটায় খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। আমার আশ্বাসে দু’জনকেই একটু যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখলাম।
টিয়ার আমেরিকাতে আসার ব্যাপারে স্যারের থেকে চিঠি পেয়েছিলাম, সংগ্রহে তা আছে এখনো। টিয়ার আসা, পড়াশোনা, তার নিজস্ব জীবন, আমাদের কাছে কিছুদিন থাকা আর তার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগের দিনগুলি যেন মনে হয় গতকাল। ওই সময় টিয়াকে কাছে পেয়ে মনে হল নিজের অনেক আদরের ছোট বোনকে কাছে পেলাম। টিয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে স্যারকে আবার পিতৃস্নেহে ভরপুর দেখেছি।
প্রতিবার তাঁর বাড়িতে গেলেই বই উপহার দিতেন, বেশির ভাগই নিজের বই আর কিছু লেখা থাকত তাতে। ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ বইটিতে লিখে দিয়েছিলেন, “তুমি তো সু-মিতা, জানো তো তুমি তা?” আমার সংগ্রহে এটি একটি অতি অমূল্য রত্ন।

নাম নিয়েই একটা মজার ঘটনা হঠাৎ মনে পড়ল। একদিন রাতে খেতে খেতে টিয়া বলল, ‘দেখ সুমিতাদি, আমার বাবা এত বড় কবি আর আমার নাম রেখেছে কিনা টিয়া। কেমন শুনতে লাগে বল, টিয়া ঘোষ!’ কথাটা আমাকেও ভাবালো। কিন্তু সেই শুনে আমার দশ বছরের ছেলে দীপ গম্ভীর হয়ে বলে উঠল, ‘তাও তো কাক রাখেনি।’ প্রথমে থতমত খেলেও, আমরা সকলে হো হো করে হেসে উঠলাম। ঠিকই তো, কাক তো নয়! টিয়া হাসি থামিয়ে বলল, ‘বেশ, আমি কখনো এ নিয়ে আর দুঃখ করব না।’ টিয়া থাকাকালীন শঙ্খবাবুর ছোটবেলার গল্প, প্রতিমাদির সঙ্গে প্রথম দেখার গল্প, ওদের বাড়ির অনেক গল্প শুনেছিলাম।
আমার ছাত্রাবস্থার প্রথম দিকে যাদবপুরে ছাত্রী জীবনে তাঁকে দেখেছি ধবধবে সাদা সরু পাড় সাধারণ ধুতি ও তেমনি দুধ সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত স্মিতহাস্য অথচ গাম্ভীর্যের আড়ালে এক ছাত্রপ্রেমী মাস্টারমশাই হিসেবে। এই ছিল তাঁর আজীবনের পোশাক। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও গাম্ভীর্যের কারণে প্রথমটা একটু সংকোচ লাগলেও দু’চার দিনের মধ্যেই বেশ সহজ হয়ে গেল সম্পর্কটা। ছাত্রছাত্রীদের খুব সময় ও সঙ্গ দিতেন। একটা বানান ভুল নিয়ে একবার আমায় আলাদা করে ডেকেছিলেন। বাপ্ রে, সে কী টেনশন! পিছনের বারান্দার শেষ দিকে তাঁর নিজের ছোট অফিস ঘরে দুরুদুরু বুকে হাজির হতে, ভয় ভাঙিয়ে বানান শুধরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘সচেতন থেকো এই বিষয়ে। আর ক’দিন পরে তোমারও তো পড়াবে, তখন ছাত্রছাত্রীর কাছে নির্ভুল বানান ও তথ্য দেওয়া অনেক বড় দায়িত্ব।’ অনেকদিন পরে, বস্টন-এ বসে ‘বাবার বানান নিয়ে খুব সচেতনতা’ টিয়ার মুখে এই মন্তব্য শুনে ঘটনাটা আবার মনে পড়ে গিয়েছিল।
শুনেছি, বুদ্ধদেব বসুর কাছে কবিতা জমা দেবার সময় লিখেছিলেন, ‘শংখ ঘোষ।’ বুদ্ধদেব বসু ফিরে ডেকে বলেছিলেন, ‘নিজের নামের বানান জানো না? ওটা হবে শঙ্খ।’ সেদিন মোটেই ভালো লাগেনি শুনতে কথাটা, কিন্তু তারপর থেকে পাকাপাকি ভাবে হয়ে গেলেন, শঙ্খ ঘোষ।
গল্প কথায় শুনেছি, প্রথম যখন প্রতিমাদি জলপাইগুড়ি থেকে সে বছরে প্রথম হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম-এ পড়তেন আসেন, কোনো এক বন্ধু তাঁদের আলাপ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘দেখো কী সুন্দর হাতের লেখা, ইনিই প্রথম হয়েছেন এবছর!’ শঙ্খবাবু সহপাঠিনীর খাতা দেখে বলেছিলেন, ‘ইস, হাতের লেখায় কী হবে, বানান ভুল!’ আবার সেই বানান! সেই বানান নিয়েই দু’জনের যেদিন তর্ক হবার কথা, তার আগেই অন্য কিছু একটা হয়ে গেল। শঙ্খ-প্রতিমা যেন একটি সমার্থক শব্দ, একটি বাক্য, এক জীবন। তাই বোধহয় স্বতঃফূর্ত মনের কথা কবির কলমে মূর্ত হয় কবিতায়, “কিন্তু আমার ভালো লাগে না যদি ঘরে ফিরে না দেখতে পাই/ তুমি আছো তুমি” (‘তুমি’)।
বিবাহিত জীবনের দীর্ঘ পঁয়ষট্টি বছর পার করে, বিচ্ছেদময় এই ভালো-না-লাগার দিন ছিল মাত্র এক সপ্তাহ। সর্বদা পাশে রাখা আজীবনের চেয়ারটার অধিকারিণী সদা প্রশান্ত হাস্যময়ীও দেরি করলেন না। মাত্র ক’দিনের আড়াআড়ি, ২০২১-এর এপ্রিলেই অধরা পারে পাড়ি দিলেন তিনিও। সারাজীবন স্বচ্ছন্দভাবে যে হাতে হাত রেখেছেন একে অপরের, মুখে হয়তো বলেছেন, “হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়,” তাই, “এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে/ সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়” (‘সঙ্গিনী’)। আবার অত সহজ হোক বা না হোক তার বোঝাপড়া করতেই হয়তো শঙ্খ-প্রতিমা, হর-পার্বতীর মতোই একাকার হয়ে গেলেন।
তাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ল। সেটা ২০২০র জানুয়ারির মাঝামাঝি। টিয়া বলল, ‘বাবাকে বললে শোনেন না। যে যেখানে ডাকছে সেখানেই চলে যান। বাড়িতে আমরা খুব চিন্তায় থাকি, রাতও করেন, সকলের চিন্তা হয় এই ব্যাপারে। তুমি তো যাচ্ছ, একটু বোলো তো।’ খুবই গুরু দায়িত্ব। কী আর করা! কী ভাবে কথাটা বলব ভাবতে ভাবতে হাডকোর মোড়ে তাঁদের ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসের তিনতলার শান্তির নীড়টিতে সেদিন গিয়ে দেখলাম, স্যার বাড়িতে নেই। আদর করে প্রতিমাদি ভিতরের ঘরটিতে ডাকলেন। চা খেতে খেতে, প্রতিমাদির সঙ্গে ঘরে বসে কথা বলছিলাম। প্রতিমাদি একটা চেয়ারে বসে সামনের মোড়ার উপর পা তুলে ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। এটা ওটা কথার পর স্যারের বেরোনো নিয়ে কথা তুললাম। শান্ত হেসে বললেন, ‘জানি জানি, সত্যি চিন্তাও হয়। সকলে ওঁকে ডাকে আর আসলে উনিও খুব ভালোবাসেন তো, তাই আমি আর না বলি না।’ একটু পরে শঙ্খবাবু ফিরলেন, প্রায় সাড়ে ন’টা তখন ঘড়িতে। স্যারকে বেরোনো নিয়ে কথা তুলতেই বলে উঠলেন, ‘সেকি ওরা আমায় ডেকেছে, যাব না?’ বললাম, ‘কিন্তু আপনি নাকি অনেক দূরে দূরে জন্মদিনের নিমন্ত্রণ রাখতেও যাচ্ছেন!’ বললেন, ‘বা রে, ওটা তো একটি ছোট মেয়ের জন্মদিন, আমায় যেতে বলল!’ বুঝলাম আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সকলকে ভালোবেসে সকলের পাশে তিনি থাকতে চান, সকলের আনন্দে তাঁর প্রাণ ভরে ওঠে আর তাদেরই দুঃখে মন হয় ভারাক্রান্ত। এই মানবদরদী মানুষটিকে ঘরবন্দি করবে কে? তাও শেষ পর্যন্ত ঘরবন্দি করল অতিমারী। তাই, ‘এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়,’ এর অল্পদিন পরেই মুক্তমনা মানুষটি দেহমনের সুদূর পারে সকলের ধরা ছোঁওয়ার ওপারে দিলেন পাড়ি, মুক্তি-আশে। আজীবনের সঙ্গিনীকেও নিলেন সঙ্গে।
২০২০র জানুয়ারির মাঝামাঝির সেই দিনটিতে আমার সঙ্গে কন্যা শ্রুতি ছিল। ওরই বিয়ের জন্য আশীর্বাদ চাইতে গিয়েছিলাম আর আগামী পাঁচই ফেব্রুয়ারি জন্মদিনের জন্য একটা বড় চকোলেটের বাক্স ছিল সঙ্গে। শ্রুতি প্রণাম করতে ওর মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘আমি কী আশীর্বাদ করব?’ একটু থেমে বললেন, ‘এগিয়ে যাও, থেমো না।’ সামান্য কথা অথচ কী অসামান্য, কী শক্তিশালী, কত গভীর এর দ্যোতনা! তাঁর এ আশীর্বাদ আমাদের জীবনে এক বিরাট পাওয়া ও পাথেয়।

ফিরে আসি সত্তরের একেবারে শেষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালের দিনগুলিতে আর একবার। শঙ্খবাবু পড়াতেন আধুনিক বাংলা কবিতা, পড়াতেন ‘রক্তকরবী। তাঁর ‘রক্তকরবী’ ক্লাস-এর সময়ে স্পষ্ট মনে আছে, ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে অন্যান্য বিভাগ, এমনকী ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অগণিত ছাত্রছাত্রীরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত সেই গমগমে গলায় রাজা বা কিশোর, বা বিশু, বা নন্দিনীর পাঠ। আমরা ক্লাসের মধ্যে বসে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করতাম আগাগোড়া সময়। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আবশ্যিক বাংলা পাঠ্যে পড়াতেন ‘জীবনস্মৃতি।’ শুনেছি, ছাত্রছাত্রীরা সেখানেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো ক্লাস করত।
রবীন্দ্রনাথই ছিলেন শঙ্খবাবুর ধ্রুবতারা। রবীন্দ্রনাথের দেড়শ’ বছর পরেও বারবার বলতেন, ‘রবীন্দ্রনাথের মতো প্রাসঙ্গিক আর হয় না।’ কোনো এক জায়গায় পড়েছি তাঁর নিজের লেখা চিঠি এই বিষয়ে: “রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আমাদের শেখা, কোনো নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর বাইরে আর সব কিছুতেই রাগ করা বা সন্দেহ করা বা ভয় পাওয়াই যক্ষপুরী বা অচলায়তনের প্রধান লক্ষণ।” রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আগামী যুগোত্তর এই কবির ছেলেবেলা থেকেই অচ্ছেদ্য এক বন্ধন। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর প্রসঙ্গ ছিল তাঁদের বাড়িতে মুখে মুখে বহু চর্চিত। শঙ্খবাবু মনে করতেন, রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যে দিয়ে তাঁর নিবিড়তম বিকাশ। প্রাসঙ্গিকতার প্রসঙ্গেও তাঁর বিশ্বাস — অচলায়তন, যক্ষপুরী আজও আমাদের চারদিকে — অসহায় রাজারা সেখানে স্বেচ্ছাবন্দি, তাল-তমাল শুধু নম্বর, আর নন্দিনীরা জীবনের গান গায়। করবী শুধু ভালোবাসার রঙে লাল নয়, রক্তের রঙেও লাল।
রবীন্দ্রনাথের মতো শঙ্খ ঘোষও বিশ্বাস করেছেন ও অভিবাদন করেছেন আগামী দিনের নুতন সূর্যকে। তারুণ্যকে, আগামীকে দু’হাত তুলে অভিবাদন জানিয়েছেন। তাঁর বাড়িতে প্রতি রবিবার সকালের আড্ডায় তাই কত পরিচিতদের সঙ্গে সঙ্গে কত নতুন তরুণ তরুণীরাও আসতেন অবলীলায়। সকলের ছিল অবারিত দ্বার। সেখানে চা, বিস্কুট, মিষ্টি সকলের জন্য বরাদ্দ আর তিনি বেশির ভাগ সময়ই স্মিতহাস্যে উপভোগ করতেন জমাটি এই রবিবাসরীয় আড্ডা। রবিবার নিয়ে তাঁর ‘এখন সব অলীক’ গদ্যগ্রন্থে একটি চমৎকার প্রবন্ধ আছে। সেখান থেকে তুলে দিলাম কয়েকটি লাইন।
টিয়া এসে বলে, বাবা ওঠ, আজ না রবিবার?
কেন উঠব?
বাঃ, আজ না রবিবার? আজ তোমার সভা না?…
আজ আমার ঘরের সভা। সবাই সবার কাছে যাবে আজ, আসবে আজ, এ হলো সেই সমবায়ের সভা। ছোটো এই ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের যাওয়া আসা, এ হল এক রবিবারের অবাধ জমায়েত, নানাবয়সী ছেলেমেয়েদের অল্প সময়ের সাহচর্য।… প্রতি রবিবার এসে আমার জানালার কাছে ঠোঁট থেকে ফেলে রেখে যায় একটুকরো সবুজ পাথর। (‘এখন সব অলীক,’ ১৯৯৪)

অন্য অনেক দিনের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় থাকলে কত রবিবারও গিয়েছি স্যারের কাছে। কত কথা, স্নেহ, ভালোবাসা। শুনেছিলাম পুরোনো কথা, তাঁর ছেলেবেলার গল্প। যদিও কিশোর উপন্যাস ‘সকাল বেলার আলো,’ ‘সুপুরি বনের সারি’তেও পড়েছি একটু আধটু। শঙ্খবাবুরা আটজন ভাই বোন। আদি দেশ বরিশাল হলেও, বড় হয়েছিলেন পাবনা জেলার পাকশীতে। পাকশী আধা শহর-গ্রাম। তাঁর বাবা ছিলেন সেখানকার স্কুলের হেড মাস্টারমশাই। ১৯৪৭এ দেশভাগের আগে পর্যন্ত শঙ্খবাবু ওখানে ছিলেন এবং সেখান থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পাস্ করেন। তারপর কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া, তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দেশভাগের পর, ১৯৪৭ থেকে এপার-বাংলায় বাস হলেও প্রথম প্রথম এবং পরেও বাসে, ট্রেনে, পথে উদ্বাস্তু / বাস্তুহারা এই শব্দগুলি তাঁকে নাড়া ও পীড়া দিয়েছে আজীবন। মনে হয়েছে, ভৌগোলিক সীমারেখাই কি বুকের মাঝে সীমারেখা আঁকে আজন্মের চেনা জন্মভূমির গণ্ডিকে ঘিরে? দেশভাগজনিত বাস্তুহারার বেদনা যেমন ছুঁয়ে গেছে তাঁর লেখায়, তেমনি বারবার জল ও জলের নানান আভাস এসেছে লেখায়। মনে আছে, প্রশ্ন করলে বলেছিলেন, ছেলেবেলায় খেলতে খেলতে একবার জলে পড়ে যান। বোধহয় ডুবে যাচ্ছিলেন। তলিয়ে যাবার সেই স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি আজীবন ঘুরে এসেছে তাঁর। খুড়তুতো দিদি চুলের মুঠি ধরে কোনোরকমে ডাঙায় তুলে আনেন। ডুবন্ত মানুষের তলিয়ে যাবার জ্বলজ্বলে অভিজ্ঞতা তাই যেন স্থায়ী চিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে অনেক লেখাতেই।
জল তাঁর কবিতায় নানান অনুষঙ্গে উপস্থিত বারবার। যেমন,
“বালির গভীর তলে ঘন হয়ে বসে আছে জল
এখানে ঘুমোনো এতো সনাতন, জেগে ওঠা, তাও” (৪ নং)
“কেন কষ্ট পাও? কেন ওই হাতে হাত ছুঁতে চাও?
জলের লহরী যেন ভাস্কর্য ধরেছে বুকে এসে” (৫১ নং, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ,’ ১৯৮০)
“পা-ডোবানো অলস জল, এখন আমায় মনে পড়ে?
কোথায় চলে গিয়েছিলাম ঝুরি-নামানো সন্ধ্যা বেলা?” (‘অলস জল,’ ১৯৭৮)
শঙ্খ ঘোষ যথার্থই ছিলেন বাঙালির মেরুদন্ড, বাঙালির বিবেক। স্বল্পবাক, স্থিতধী, মনোযোগী, শ্রোতা। বাঙালির সৌজন্যমূলকতার প্রতিভূ। শঙ্খ ঘোষের শঙ্খ নির্ঘোষ শুধু বাংলা সাহিত্যকেই নয়, বাঙালি সমাজ ও চেতনাকে সর্বস্তরে অনুরণিত করেছে গত সাত দশক ধরে। কোনো দল নয়, শুধু মানুষ ও সাম্যের জয়গান তাঁর ভাবনায়, বিশ্বাসে ও লেখায়। আজীবন তাই খুঁজে পাই তাঁর কলমে নিরপেক্ষ মানবতা। শুনতে পাই অখণ্ডতার অমোঘ সুর, রুচির আপোষহীন সমগ্রতা। একই সঙ্গে সেখানে বিদ্যমান কবিতার কোমলতা ও কঠোরতা, নম্রতা ও কাঠিন্য, একাধারে তিনি রাজা ও নন্দিনী। ‘চুপ কর, শব্দহীন হও’ — এ বুঝি তাঁর নিজেরই ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বাস। অনায়াসে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন শিরদাঁড়া উঁচু করে। তাঁর নীরবতাই ছিল তাঁর প্রতিবাদের বাঙময় রূপ।
সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক নানান ঘটনায়, মানবিকতার বৈষম্যে, সামাজিক মুখোশের অস্বচ্ছ ব্যবহারে অশীতিপর এই মানুষটি অবলীলায় মিছিলে যোগদান করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল, কলমে তাঁর গর্জে উঠেছে সেই প্রতিবাদ যা যুগে যুগে দেশে কালেও অদ্ভুতভাবে এবং নিশ্চিতভাবে প্রযোজ্য।
“বাবুদের লজ্জা হল, আমি যে কুড়িয়ে খাবো সেটা ঠিক সইল না আজ…
আমি তাই জেল হাজতে দেখে নিই শাঠ্যে শঠে” (‘লজ্জা,’ ২০০৭)
“কী কাজ, কী কথা সেটা তত বড় কথা নয়,
তার আগে বল, তুমি কোন দল” (‘তুমি কোন দলে,’ ১৯৯৩)
“মন্ত্রীমশাই আসবেন আজ বিকেল বেলায়। সকাল থেকে
অনেক রকম বাদ্যিবাদন, পুলিশবাহার।
…ছাড়তে হবে সবার জন্য কয়েকজনকে ছাড়তে হবে।
…একটা কেবল মুশকিল যে মন্ত্রীমশাই
ওদের মতো সবার মতো এই ভুবনের বিকেলবেলায়
জন্মভূমির পায়ের কাছে সন্ধ্যা নেমে আসার মতো
মাঝেমধ্যে আমারও খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে…” (‘মন্ত্রীমশাই,’ ১৯৮২-৮৩)
“ভেবে দেখ এতদিন পরে
শেষ মুহূর্তের অবসরে
কে চায় সুন্দর কথা আর
দু-একটি সত্যি কথা শুধু বলো” (‘কথা,’ ১৯৭৪)
আর এখানেই শঙ্খ ঘোষ ও তাঁর কবিতা কালোত্তীর্ণ, যুগোত্তীর্ণ, সময়াতীত। তাঁর অগণিত গদ্য ও কবিতা বাংলা সাহিত্যের পরম সম্পদ হয়ে এবং আপামর বাঙালির বিবেক ও গর্ব হয়ে, থেকে যাবে চিরদিন। আর ব্যক্তিগত ভাবে আমার এক দুর্লভ পাওনা। এ মহার্ঘ্য রত্নের স্থান আমার মনের একান্ত মণিকোঠায়।
1 Comment