ঝাড়গ্রামে দুটো রাত

ঝাড়গ্রামে দুটো রাত

সুদূর আমেরিকা থেকেই শিখা বলতে শুরু করেছিল, “আগস্টের শেষে ফিরব, প্ল্যান করো কোথাও বেড়াতে যাওয়ার।” কথাটা দিবাকরকেই হোয়াটস্যাপে বলেছিল শিখা সেই জুন মাস থেকে। দিবাকর হেসেই কুটিপাটি। বলেছিল, “আরে বাবা, এখনও দু’মাস বাকি, তুমি এসো তো আগে, তারপর ধীরে সুস্থে প্ল্যান করা যাবে।” 

এরা সব আমার কলেজের বন্ধু। আমাদের এই বন্ধুত্বের বয়স পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেল। তবু মনে হয়, এই তো সেদিন কলেজ ছাড়লাম। এখনও একসঙ্গে সমান তালে সেই কলেজ জীবনের মতই নির্ভেজাল আড্ডা চলে। আর, তার সঙ্গে খাওয়াদাওয়া।

তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। শিখা এখন বিদেশেই পাকাপাকিভাবে বাকি জীবনটা ওর মেয়ে-জামাইয়ের কাছে কাটিয়ে দেবে ঠিক করে ফেলেছে। গ্রিন কার্ড পেয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী  এখন কিছুদিন ছ’মাস দেশে এবং ছ’মাস বিদেশে থাকতে হবে। তারপর একসময় দেশের পাট চুকিয়ে দিয়ে বিদেশে ঘাঁটি করবে স্থায়ীভাবে। এবার আগস্টে এসে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আবার আমেরিকা ফিরে যাবে। অর্থাৎ এবারের স্থায়িত্ব ছ’মাস। তাই ও বেড়ানোর কথা বলে চলেছে। ও খুব মিস করে আমাদের। আমরাও ওকে মিস করি।

দিবাকর, সুস্মিতা, শিখা, শুভব্রত, শর্মিলা আর আমি – এই ছ’জন আমাদের বেড়ানোর সলিড গ্রুপ। অনেক জায়গায় বেড়াতে গেছি আমরা। আর, এসব ব্যাপারে প্রথম ধুয়ো তোলে শিখা। শুভব্রত এবং দিবাকর সেটার বাস্তব রূপ দেয়। সকলে মিলে দিন ঠিক করা হয়। তারপর জায়গা বুকিং করা, কীরকম খরচখরচা হবে, এটা ওরা দুজন মিলে ঠিক করে। তারপর আলোচনা হয় সকলে মিলে।

দিবাকর প্রথম আমাকে জানালো শিখার বেড়ানোর প্রস্তাবটা। বলল, “অলরেডি শুভব্রতকে জানানো হয়ে গেছে।” বুঝলাম, ওরা দুজন এবার কাজে লেগে পড়বেই। 

দেখতে দেখতে দিন কেটে গেল। শিখা আমেরিকা থেকে দেশে ফিরল আগস্টের শেষ দিকেই। আমাদের সকলকে একদিন ওর বাড়িতে ডাকল সান্ধ্য আড্ডায়। সকলে গেলাম আমরা। সেখানেই দু’দিন দু’রাতের জন্য বেড়ানোর প্ল্যান ঠিক হয়ে গেল। তারিখ ঠিক হয়ে গেল কয়েক দিনের মধ্যে।  ঠিক হল, ঝাড়গ্রাম যাওয়া হবে গাড়ি নিয়ে, বাই রোড। দিবাকরের গাড়ি আর শিখার গাড়ি।

দুএকদিনের মধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল টুরিজমের গেস্ট হাউস বুকিং হয়ে গেল।  চারটে ঘর। আমার জন্য বরাদ্দ হল একটা ডাবল বেডেড রুম। সিঙ্গল রুম সেই অর্থে বোধহয় নেই। যাই হোক, হাত-পা ছড়িয়ে থাকব নিজের মত। এখন এমনটাই ভালো লাগে, একটু নিরিবিলি। 

ভোরবেলা যাওয়া। ঠিক হয়েছে দুটো গাড়ি নেওয়া হবে। একটা শিখার, অন্যটা দিবাকরের। ও আর সুস্মিতা গাড়ি নিয়ে চলে আসবে আমার বাড়ির সামনে, সকাল ছ’টা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ। অনেকেই ভোরে এত তাড়াতাড়ি কিংবা তারও আগে বেরোতে অভ্যস্ত। বিশেষ করে যারা দূর-দূরান্তে চাকরির ব্যাপারে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে, তাদের তো খুব ভোরেই উঠতে হয়। তারা সেইভাবেই অভ্যস্ত। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই পৌনে সাতটাটাই অনেক তাড়াতাড়ি! এসব ক্ষেত্রে অনেক ভোরে আমাকে উঠতে হয়। কীই আর করা যাবে!

কিছুদিন বাদে দিবাকর আমাকে জানাল, ও আমাকে সকাল সাতটা নাগাদ তুলবে। মনে মনে ভাবলাম, যাক, তবুও হাতে তো অতিরিক্ত পনেরো মিনিট সময় পাওয়া গেল!

নির্দিষ্ট দিনে ভোর চারটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠলাম। টুকটাক ছোটখাটো জিনিস গুছোতে গিয়ে সময় অনেকটাই লেগে গেল। তবে সাতটার মধ্যে আমি তৈরি হয়ে নিলাম। 

দিবাকর অসম্ভব সময় মেনে চলা মানুষ। সাতটা বললে ও ছটা পঞ্চাশ মিনিটেও চলে আসতে পারে। এবারেও সেরকমই হল মোটামুটি। ও এল ছটা পঞ্চান্ন মিনিট নাগাদ। আমি জিনিসপত্র নিয়ে নীচে নেমে গেলাম। ওর ড্রাইভার রাকেশ ডিকি খুলে আমার ভারি জিনিসটা ভেতরে রেখে দিল। 

শিখার বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন সাড়ে সাতটা বাজে। শুভব্রত-শর্মিলা তখনও এসে পৌঁছয়নি। শিখার বাড়িতে আমাদের সকলের জমায়েত হওয়ার কথা। আমরা অপেক্ষা করে আছি। শুভব্রত শর্মিলাকে নিয়ে এলো মোটামুটি ঠিক সময়। সাতটা চল্লিশ নাগাদ আমাদের দুটো গাড়ি ছাড়ল। 

দিবাকর জানিয়েছিল প্রথমেই, কোনো খাবার নেওয়া হবে না। কোলাঘাট গিয়ে আমরা ব্রেকফাস্ট করব। তবে চা-কফি, বিস্কুট থাকবে।

সকাল ন’টা নাগাদ ধুলাগড় ছাড়িয়ে এসে আমাদের গাড়ি দুটো রাস্তার বাঁদিকে থামল। শুনলাম, শিখা কিছু খাবার নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে, যেটা ও প্রত্যেকবারই না বললেও করে। ওর তৈরি চিজ-স্যান্ডউইচ অসাধারণ। মিনি ব্রেকফাস্ট হয়ে গেল সেটা দিয়ে। সেইসঙ্গে চা’ও খাওয়া হল গাড়ি থেকে নেমে। দিবাকর কিছু মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। বেশ খিদেও পেয়েছিল, তবে স্যান্ডউইচ, চা আর মিষ্টি খেয়ে বেশ আরাম পেলাম। তখনও ঠিক হয়ে আছে, কোলাঘাটে আসল ব্রেকফাস্ট করা হবে। আমি, শুভব্রত আর দিবাকর একটা গাড়িতে। আমাদেরটাকে ফলো করছে আমাদের অন্য গাড়িটা, যেটাতে মেয়েরা আছে। রাকেশ আমাদের গাড়িটা চালাচ্ছে। গুগল ম্যাপ অনুসরণ করে আমরা চলেছি। শুভব্রত আর দিবাকর দুজনেই গুগল ম্যাপ খুলে বসেছে। আমি বিন্দাস, চারপাশটা দেখছি আর গল্প করছি ওদের সঙ্গে। ওদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার এই সুবিধেটা আছে আমার। ওরা  দুজনেই ঘোষণা করল, “গুগল ম্যাপ বলছে, সকাল দশটা নাগাদ গাড়ি কোলাঘাট পৌঁছবে।” সেইমত ওরা গাইড করছে রাকেশকে। কিন্তু ঘটল এক অদ্ভুত কান্ড। গুগল ম্যাপ কোলাঘাটে যাওয়ার জন্য দেখিয়েছিল একটা পথ, কিন্তু শুভব্রত এবং দিবাকর দুজনেই সেই পথটা নিতে পারল না কোনও কারণে। কিছুক্ষণ পর আমরা খেয়াল করলাম, কোলাঘাট ছাড়িয়ে আমরা অন্য রাস্তায় চলে গেছি অনেক দূর! অর্থাৎ পূর্ব-পরিকল্পিত ব্রেকফাস্ট করা গেল না কোলাঘাটে। সবাই হাসতে হাসতে বলাবলি করলাম, ভাগ্যিস স্যান্ডউইচ, মিষ্টি এসব রাস্তাতেই খেয়ে নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য পরে বুঝলাম, গুগল ম্যাপ ঝাড়গ্রাম যাওয়ার শর্টকাট পথটা ধরে নিয়েছে এবং সেটা সত্যি হল যখন ১১-৩০ নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজম-এর গেস্ট হাউসে, যেখানে চেক-ইন করার কথা ছিল ১২ টা নাগাদ।

গোটা অঞ্চলটাই ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, বিরাট এলাকা জুড়ে। তার বেশ কিছুটা অংশ পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ে তাদের ভ্রমণ বিভাগ খুলেছে।  বিভিন্ন দামের সব ঘর রয়েছে আমাদের জন্য। আমাদের জন্য যে ঘরগুলো বরাদ্দ ছিল, সেগুলোকে বলা হয় কটেজ। আমাদের কটেজগুলো ছিল ডাবল-বেডেড।  প্রত্যেকটির মূল্য সাড়ে তিন হাজার টাকা পার ডে। দু’রাতের জন্য ৭ হাজার টাকা।  সিনিয়র সিটিজেন বলে ১০% কম হয়ে দাঁড়াল ছ’হাজার তিনশো টাকা। খাওয়ার খরচ আলাদা। ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি। আমরা দুটো কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট পেলাম। আমাদের দুটো গাড়ির জন্য দুটো ড্রাইভার। তাদের ব্যবস্থা আলাদা ছিল। আমাদের সকলের হয়ে প্রাথমিক কিছু অফিশিয়াল কাজ দিবাকর করল। যেহেতু চারটে ঘর আমরা নিয়েছিলাম, সুতরাং চারটে আধার কার্ডের দরকার হল। 

গাড়ি থেকে আমাদের ভারি মালপত্রগুলো ওদের লোকেরাই আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিল। ঘরের ব্যবস্থা চমৎকার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে একশোতে একশো। বিরাট আয়না, টিভি, দুটো খাট, দুটো চেয়ার, কাবার্ড এবং টুকিটাকি প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র আছে। আমরা যে যার ঘরে ঢুকে গেলাম। প্রথমেই বাথরুমটা দেখে নিলাম, কারণ, আমার বাথরুমটাই সাধারণত খারাপ হয়! কয়েকটা দুঃসহ অভিজ্ঞতা আছে। বন্ধুরা এসব নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। সে আর বলে কাজ নেই। তবে দেখলাম, আমার ভাগ্য এবার বেশ ভালোই।

কমপ্লেক্সের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। ঘরে ঢোকার পথেই দেখেছি। বিশাল এক দিঘি রয়েছে মাঝখানে। তার চারদিকে সবুজে ঘেরা গাছগাছালি। ঘরে ঢুকে কোনওমতে জিনিসপত্র রেখেই আমি ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এটা আমার বরাবরের ভালোলাগা। নতুন জায়গাটাকে আগেভাগে একা একা সরেজমিনে একবার দেখে নেওয়া। আমি জানি, আমার বাকি বন্ধুরা এখন রেস্ট নেবে, একসঙ্গে বসে চা খাবে, আড্ডা মারবে, প্ল্যান করবে দুপুরে কী খাওয়া যেতে পারে। সেসব নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ, তবে আমার নিজের কোনো পছন্দ নেই। ওরা যা ঠিক করবে তাই খাব। এটা ওরা সবাই জানে। ফলে আমি মুক্ত এসব আলোচনার থেকে। বাইরে তখন ভীষণ রোদ্দুর, ঝকঝকে চারপাশটা। গরমও বেশ ছিল। ভাবলাম, শীতকালে নিশ্চয়ই ব্যাপারটা আরও মনোরম হবে।    

গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্যামেরাতে আমি ছবি তুলতে লাগলাম পাগলের মত। ম্যানুয়াল সেটিং-এ ছবি তুলেই আমি বেশি মজা পাই। মনে হয় এক্সপেরিমেন্টটা সফল হল। আমার এক বন্ধুকে দেখতাম, অত্যন্ত দামি একটা ক্যামেরা কিনে সে অটো-ফোকাস মোডে ছবি তোলে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তুমি তো ম্যানুয়ালি সেট করে আরও ভালো ছবি তুলতে পারো!” সে বলেছিল, “কে আর অত খাটে!” আমি বিস্মিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে, তাহলে এত দামি ক্যামেরা কেনার কী মানে হয়! 

কমপ্লেক্সের দিঘিটা পুরোটা না হলেও প্রায়  অর্ধেকটা প্রদক্ষিণ করলাম, আর, ছবি তুললাম প্রাণভরে। একটা জায়গা ছিল যেখানে এক দঙ্গল রাজহাঁস ঘুড়ে বেড়াচ্ছিল (ছবি-৩)।  আমাকে ছবি তুলতে দেখে তারা বোধহয় সবাই অবাক হয়ে গেল। ঘাড় উঁচু করে সকলে মিলে বিকট আওয়াজ করতে লাগল। আমি প্রথমে দূর থেকে ওদের ছবি নিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ওদের খুব কাছে চলে গেলাম। তখন বোধহয় ওরা বুঝতে পারল, এই লোকটা ক্ষতিকারক নয়। ফলে সেই একযোগে ডাকাডাকি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু ঘাড় উঁচিয়ে দেখে যেতে লাগল আমাকে। সন্দেহ যায় না মোটেই, আসলে মানুষ জাতটাকে অন্যান্য প্রাণীরা বোধহয় চট করে বিশ্বাস করতে চায় না।

ছবি তুলতে তুলতে দিঘির একটা ঘাটে পৌঁছে গেলাম। চওড়া সিঁড়ি ধরে নেমে গেলাম নীচে। একদম শেষের আগের ধাপে, প্রায়  জলের কাছাকাছি।  দেখলাম, দিঘির জলেও কিছু হাঁস খেলে বেড়াচ্ছে। সেগুলো রাজহাঁস নয়। ওদেরও ছবি নিলাম। দিঘির ছবি নিলাম বেশ কয়েকটা অ্যাঙ্গেল থেকে। 

দিবাকরের ফোন হঠাৎ। বলল, “লাঞ্চের বিষয়ে আলোচনা চলছে, শিখার ঘরে চলে এসো।” আমাদের এই ক্লাসমেট বন্ধুরা যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন, আড্ডাটা হয় শিখার ঘরে বসেই। আমাদের নিজেদের ঘরগুলো বন্ধ করে সকলে ওর ঘরে চলে যাই। শিখা চায় সেটা। ও একলা থাকতে ভালোবাসে না, বিশেষত যখন বেড়াতে যাই সকলে মিলে।

লাঞ্চে আমরা সকলেই খেলাম চিকেন থালি। বেশ ভালোই আয়োজন। ডাল, তরকারি, চিকেন এবং ভাজাভুজি ছাড়া শেষ পাতে একটা রসগোল্লাও ছিল।

খাওয়াদাওয়া সারলাম দুটো নাগাদ। ঠিক হল, ঘণ্টা দেড়েক বিশ্রাম করে সাড়ে তিনটে নাগাদ বেরোনো হবে। রিসেপশনের ভদ্রলোকের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হল, কাছাকাছির মধ্যে তিনটে জায়গায় ঘুরে আসা যেতে পারে।  প্রথম কনকদুর্গার মন্দির, দ্বিতীয় ডুলুং নদী, তৃতীয় চিল্কিগড়ের রাজবাড়ি। 

ঘরে ঢুকে একটু লেখালেখি করলাম, মোটামুটি ছোট করে একটু লিখে রাখা, নাহলে ভুলে যাব। তারপর শরীর ছেড়ে দিল একদম। ঘুমে চোখ বুজে এল। ঘড়িতে তিনটে দশ তখন। ওদিকে সাড়ে তিনটে নাগাদ বেরোতে হবে। বোধহয় মিনিট পনেরো হবে ঘুমিয়েছি, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। দরজা খুলে দেখি, আমাদের বন্ধুরা সব রেডি যাওয়ার জন্য। দু’মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে নিলাম। দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে দেখি, ওরা সবাই গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিছুক্ষণ আমাকে নিয়ে হাঁই মাই কাই। আমি গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিল।

আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল কনকদুর্গার মন্দির। আমাদের কটেজ থেকে তার দূরত্ব হবে চোদ্দ কিলোমিটার। গাড়ি ছুটে চলেছে সুন্দর রাস্তা ধরে। দুপাশে কখনো ঘন বন, কখনো ধানক্ষেত। মনে হচ্ছিল, গাড়ি থেকে নেমে কিছু ছবি তুলি। কিন্তু সেটা আর করলাম না, কারণ দেরি হয়ে যাবে, আলো কমে আসবে। 

ঘন জঙ্গল বলতে শালবন। আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল জামবনি রোড ধরে। রোদের তেজ তখন নেই বললেই চলে, বরং সামান্য মেঘলা আকাশ।

প্রায় বাইশ-তেইশ মিনিট লাগল কনকদুর্গার মন্দিরে যেতে। গাড়ি যেখানে থামল, সেখান থেকে বেশ কিছুটা পথ, – প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মিটার হবে – পায়ে হেঁটে যেতে হল। এই পথটা ছিল ভারী সুন্দর,  সরু, নির্জন, দুপাশে বিচিত্র সব গাছগাছালির জঙ্গল। যাওয়ার পথে কিছু ছবি তুললাম আশপাশের এবং আমার বন্ধুদের। ঘন গাছগাছালির সৌজন্যে পথটা কেমন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং রহস্যময় লাগছিল।  বেশ কিছু মানুষকে দেখতে পেলাম, যারা ফিরছিল মন্দির দর্শন করে। 

মন্দির চত্বরে যখন পৌঁছলাম, দেখলাম,  চারপাশে শুধু ছোট বড় মাঝারি সাইজের বানরের মেলা। ওরাও বন্দি হল আমার ক্যামেরায়। 

শতাব্দী প্রাচীন এই কনকদুর্গার মন্দিরটি একটি ছোট্ট নদী ডুলুং-এর পাশে ঘন জঙ্গলে অবস্থিত। অসংখ্য বিরল প্রজাতির গাছ, পাখি আর বানর (যা আমরা এই মন্দির চত্বরে আসার পথেই দেখেছি) এই জঙ্গলে দেখা যায়। এই মন্দিরের সঙ্গে যেন ইতিহাস মিশে আছে। দেবী এখানে অশ্বারোহিণী চতুর্ভূজা। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, চারপাশের এই গভীর জঙ্গলের মধ্যে সামন্ত রাজাদের এই মন্দিরে আজও অষ্টমীর রাতে দেবী নিজেই নিজের ভোগ রান্না করেন। একসময় নরবলি হত এখানে। এখনও নাকি মোষ বা পাঁঠাবলি হয় কিছু রীতি মেনে। দুর্গাপুজোর চারদিন দেবীকে হাঁসের ডিম, মাছ পোড়া, শাকভাজা, পান্তাভাত দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। এটি গুগল থেকে পাওয়া তথ্য।

এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল ডুলুং নদী। স্থানীয় লোক মারফত জেনেছিলাম, কনক দুর্গা মন্দিরের পেছন দিকের অরণ্য-সুবুজ পথ ধরে হেঁটে ডুলুং নদীর ধারে যাওয়া যায়। খুব ইচ্ছে ছিল ওই পথ ধরে ডুলুং-এ পৌঁছব, কিন্তু আমাদের গ্রুপের সকলে সেই পথে যেতে চাইল না। সঙ্গে গাড়ি ছিল আমাদের। তাই গাড়ির রাস্তাই ধরলাম। দুতিন মিনিটেই পৌঁছে গেলাম ডুলুং। অপরূপ দৃশ্য! নদীর মধ্যেই ছোট ছোট দ্বীপে যেন কাশফুলের মেলা বসেছে। কোনো নদীর মধ্যে এরকম দারুণ কাশফুলের অস্তিত্ব এর আগে দেখিনি কখনও। প্রচুর ছবি তুললাম। আমাদের কয়েকজন তো বেশ কায়দা করে ছবি তুলল। দারুণ উচ্ছ্বাসে ভরে গেল ভেতরটা। 

ডুলুং নদী ছাড়িয়ে সামান্য একটু হেঁটেই পৌঁছে গেলাম চিল্কিগড়ের রাজবাড়িতে। ‘চিল্কিগড়’ নামটা শুনেই কেমন যেন একটা শিহরণ জেগেছিল ভেতরে। মনে হয়েছিল, রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখব তার বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ। কিন্তু না, সেরকম নয়। বড় রাস্তার ওপরেই রাজবাড়ি প্রবেশের বেশ উঁচু তোরণদ্বার। কিন্তু কেমন যেন ন্যাড়া ন্যাড়া, অনাদর চারপাশ। তেমন খেয়াল না করলে পাশ দিয়েই স্বচ্ছন্দে রাজবাড়ি ছাড়িয়ে চলে যেতে পারতাম। বুঝতেই পারতাম না। ঢোকার পথে কোনো বিধিনিষেধ নেই, কোনো মানুষজন আশপাশে নেই। একটা ছাগল কিংবা গরুও ঢুকতে বেরোতে পারে। এটা যে একটা দর্শনীয় স্থান হতে পারে, মনেই আসে না। তোরণদ্বার পার হয়ে ঢুকেই একটা উন্মুক্ত বিরাট মাঠ। সেখানেও গরু ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর দশটা গ্রাম্য জায়গার মতন। আবার আমাদের মতন কিছু মানুষও রয়েছে, যারা দেখতে এসেছে রাজবাড়ি। তবে সংখ্যায় খুবই কম।

দূরে দেখতে পেলাম, সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়ির অংশ। প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো এই রাজবাড়িটি বিশাল। একটা দিকের অংশকে মনে হল, সেখানে অফিসিয়াল কাজকর্ম কিছু হয়। ওই অংশটি বাদ দিয়ে বাঁদিকের বেশ কিছু অংশ চূড়ান্ত অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে বোঝা গেল। ভগ্নাবশেষ বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ওইদিকটাই আমাকে টানল বেশি। খুব কাছাকাছি চলে গেলাম সেইদিকে। অনেক ছবি তুললাম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে।

একেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামার পথে। ফলে আলো কমে এসেছিল। একবার মনে হল একটু ভেতরে ঢুকলে কেমন হয়! তারপরেই মনে হল, ভেতরে সাপ বা অন্য কিছু থাকাও বিচিত্র নয়। বন্ধুদের একজনকে বললাম, “ভেতরে ঢুকবি নাকি?” সে নিষেধ করল। আমারও একটু কেমন কেমন লাগছিল। ফিরে গেলাম। ফেরার পথে নামল তুমুল বৃষ্টি। 

পরের দিন খুব সকাল সকাল উঠে পড়লাম ঘুম থেকে। আমাদের বন্ধুরা কেউ ওঠেনি ঘুম থেকে তখন। গতদিন তো প্রায় বেলার দিকে এসে পৌছেছিলাম জায়গাটাতে, কিন্তু সকালের রূপ তো সেভাবে দেখা হয়নি। ছিলাম যে জায়গাটায়, সেটাও তো বড় আকর্ষণীয়। ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কমপ্লেক্সের দিঘির কথা আগেই বলেছি। ছবিও নিয়েছিলাম। কিন্তু দিঘিটার পুরো এক পাক ঘোরা হয়নি গতকাল। আজ আশ মিটিয়ে ঘুরলাম একা একা। ছবি তুললাম অনেক। মুগ্ধ হয়ে গেলাম দূর থেকে এদেরকে দেখে। জুম করে ছবি তুলে নিলাম ক্যামেরায়।  

ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল ন’টা তিরিশ নাগাদ রওনা দিলাম পিছিয়ে পড়া আদিবাসী লোধা-শবর অধ্যুষিত ঝাড়গ্রামের খোয়াব গাঁ পরিদর্শন করতে। এই গ্রামে সব মিলিয়ে আছে তেরোটি বাড়ি। নানা রঙে নানা ছবিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাড়িগুলো। এই গ্রামটির প্রকৃত নাম লালবাজার। কয়েক বছর আগে কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি সংস্থার সদস্যরা এই গ্রামটিতে ঘুরতে এসে কথা বলেন স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে। গ্রামের লোধা, শবর এবং কুরমি পরিবারের লোকজনদের সাক্ষর করতে, তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে, সেইসঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এই জায়গাটিকে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা করেন। বাড়িগুলোতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকা শুরু করেন প্রথম প্রথম সংস্থার সদস্যরা। পরবর্তীকালে এইসব চিত্র আঁকার কাজ করে এলাকার লোধা-শবর পরিবারের ছেলেমেয়েরা। তাদের দক্ষ করে তোলা হয়েছে এইসব কাজে। প্রত্যেক বছর এইসব চিত্র পরিবর্তিত হয়। লালবাজার এখন খোয়াব গাঁ হিসেবে পরিচিত – খবর দিল গুগল জ্যাঠা। ঝাড়গ্রাম থেকে পাঁচ–ছ’ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল দিয়ে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম খোয়াব গাঁ দেখব বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, পথ হারিয়ে গেল জঙ্গলে। শেষকালে ফেরার পথে বেশ কয়েকজন লোককে জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও কেউ তার হদিস দিতে পারল না।

এরপর সেখান থেকে আমরা বেলপাহাড়ি রওনা দিলাম ঘাগড়া জলপ্রপাত দেখতে। বেলপাহাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘাগড়া জলপ্রপাত। যদিও গুগল ম্যাপ অনুসরণ করে চলছিলাম, তাও গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে স্থানীয় মানুষদের জিজ্ঞেস করতে হচ্ছিল জলপ্রপাতের জায়গাটার হদিশ পাওয়ার জন্য। শেষমেষ গাড়ি গিয়ে থামল একটা উন্মুক্ত ফাঁকা প্রান্তরে। খুব নির্জন জায়গা। আরও দুএকটা গাড়ি রয়েছে দেখলাম।  জানা গেল, কিছুটা হাঁটতে হবে জলপ্রপাতের জায়গাটায় পৌঁছনোর  জন্য। বেশ উঁচুনীচু পাথুরে জায়গা। হাঁটুর সমস্যা থাকলে একটু মুশকিল হবে পথ চলতে। যাই হোক, পৌঁছে গেলাম জায়গাটাতে। আমাদের মতন আরও লোকজন এসেছেন জায়গাটাতে। ঝর্নার জল আছড়ে পড়ছে পাথুরে জায়গাটার ওপর। জলের ধাক্কায় পাথরের স্তূপের মধ্যে ছোট-বড় খাদ তৈরি হয়েছে। প্রচুর ছবি তুললাম জলপ্রপাতের।

ঘাঘড়া জলপ্রপাত থেকে উত্তরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে তারাফেনি নদীর ওপর রয়েছে তারাফেনি ব্যারেজ। সেখানে পৌঁছলাম আমরা। কংসাবতী নদীর একটি উপনদী হচ্ছে এই তারাফেনি নদী। এই নদীটি স্থানীয় মানুষদের পানীয় জলের উৎস। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ব্যারেজের কিছু ছবি তুললাম আমরা। সেখান থেকে চলে গেলাম খাঁদারানি বা খান্দারানি লেক। অনেকটা জায়গা জুড়ে লেক। গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখলাম। ছবিও তুললাম কিছু। রোদ তখন একেবারে মাথার ওপরে। ফলে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। গাড়িতে উঠে পড়লাম।

যে গেস্ট হাউসে উঠেছিলাম আমরা, সেখানেই বিশ্বনাথবাবু নামে এক  ভদ্রলোক বলে দিয়েছিলেন, “পথে দুপুরের খাওয়ার জন্য তেমন ভালো জায়গা পাবেন না। মোটামুটি ভালো জায়গা পেতে হলে আপনাদের কাঁকড়াঝোড় যেতে হবে।” কাঁকড়াঝোড়ে যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বনাথবাবু। পথে যেতে যেতেই গাড়ির মধ্যে বসে আমরা কাঁকড়াঝোড়ের সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। খান্দারানি লেকে যখন পৌঁছলাম তখন দুপুর প্রায় একটা। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আমরা কাঁকড়াঝোড়ের পথ ধরলাম। কিছুটা লোকালয় পার হয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম শাল-পিয়াল ঘেরা জঙ্গলের রাস্তায়। জনহীন রাস্তা। এঁকেবেঁকে ছুটছে গাড়ি, কোনো বসতির চিহ্ন নেই, রাস্তায় কোনো মানুষ নেই, দুপাশে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। গাড়ির ভেতরে বসে আমরা কেউ কারুর সঙ্গে কথা বলছিলাম না। একটানা গাড়ির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই! সকলেরই চোখ গাড়ির বাইরে। বোধহয় গাড়ির মধ্যে বসেই আমরা সকলে হারিয়ে গিয়েছিলাম জঙ্গলের মধ্যে। সবাই সম্ভবত খুঁজে নিচ্ছিলাম নিজেকে।

একসময় গাড়ি থামল বিরাট একটা লোহার গেটের সামনে। গেটের ফাঁক দিয়ে দেখলাম, বিরাট ফাঁকা জায়গা। একটু দূরে সামনে দুতিনটে বড় বড় বাড়ি। বাঁদিক থেকে একটি লোক ছূটে এসে গেটটা খুলে দিল। আমরা গাড়ি নিয়ে ঢুকে গেলাম ভেতরে। লোকটিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, সামনের ওই বাড়িগুলোতে থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে খুব বেশি লোকের জন্য নয়।

বোধহয় দুপুর আড়াইটে বাজে তখন। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। লোকটিকে অনুসরণ করে আমরা বাঁদিকের রাস্তা ধরলাম। বিশ্বনাথবাবুর নাম করাতে লোকটি ইতিবাচক ঘাড় নাড়ল। বুঝলাম, দুপুরের খাওয়ার ব্যাপারে বলাই আছে সবকিছু। আমরা ঢুকে গেলাম খাওয়ার জায়গায়। খুব আহামরি ব্যবস্থা নয়। কয়েকটা টেবিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। তবে মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। জঙ্গলের মধ্যে এরকম ব্যবস্থাও আশা করা যায় না। খাওয়াদাওয়া মোটামুটি ভালোই হল। প্রায় তিনটে নাগাদ আমরা রওনা দিলাম সেখান থেকে।

পরের দিনই আমাদের ট্যুর প্রোগ্রামের শেষ দিন। চটপট গেস্ট হাউসের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা সমস্ত বিল মিটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দর্শনীয় জায়গার মধ্যে আমাদের শেষ আইটেম ছিল ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি পরিদর্শন। ১৫৭০ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের আদেশে রাজস্থানের তৎকালীন রাজা সর্বেশ্বর সিং চৌহান বাংলায় আসেন আধিপত্য বিস্তার করতে। সেই সময় ঝাড়খণ্ডে শাসনকার্য চালাতেন মল্ল শাসকেরা। তখন এই রাজ্যের নাম ছিল ঝাড়িখণ্ড। রাজা সর্বেশ্বর সিং চৌহান মল্লদের রাজাকে পরাজিত করে উপাধি নেন ‘মল্লদেব’ এবং এক নতুন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই রাজবংশের ১৮ জন রাজা প্রায় ৪০০ বছর ধরে শাসনকার্য চালান। ১৯২২ সালে এই রাজবাড়িটির নির্মাণ পর্ব শুরু হয় এবং যা শেষ হয় ১৯৩১ সালে। প্রায় ৭০ বিঘা জমির উপর স্থাপিত ইটালিয়ান ও ইসলামিক স্থাপত্য শৈলী দ্বারা নির্মিত এই রাজবাড়িটি পর্যটকদের কাছে একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। 

তথ্যসূত্র: https://www.tripoto.com/trip/tripoto-603f4fd0136d6

রাজবাড়ির একেবারে অন্দরে ঢোকার নিয়ম নেই। রাজবাড়ির তোরণদ্বার অতিক্রম করে লম্বা রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা হেঁটে রাজবাড়ির কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। সেটাই করলাম আমরা। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে রাজবাড়ির ছবি নিলাম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো।

এরপর ফেরার পালা। ফিরতে মন চায় না। কিন্তু না চাইলেও ফিরতে হয় আমাদের। গাড়িতে চাপলাম আমরা। সকাল দশটা বাজে তখন। সকলেই দেখলাম বেশ চুপচাপ। আমিও চুপ। আবার সেই ব্যস্ত জীবনে, কেজো জীবনে ফেরা। বেশ কিছুক্ষণ বাদে নীরবতা ভঙ্গ করে আমাদের মধ্যে কে যেন বলল, “তাহলে লাঞ্চ কোথায় করা হবে?”

বুঝলাম, সত্যি সত্যিই ফিরেই চলেছি আমরা। দিবাকর একটু নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিল, “ওই তো কোলাঘাট। আসার পথে যেটা মিস করেছিলাম আমরা!”

মনে মনে বললাম, এবার আর মিস করা নেই।   

৫ জানুয়ারী ১৯৫৩ কলকাতায় জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে পি এইচ ডি। ১৯৯১ – ২০০২ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে তারাতলার ইন্সটিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টে অধ্যাপনা। ২০০২ – ২০১৩ কলকাতার নেতাজীনগর ডে কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা। তারপর প্রথাসম্মত অবসর। অবসরের পর পাঁচ বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট লেকচারার। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। প্রথমদিকে কবিতা, তারপর নিয়মিত গল্প লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, বইয়ের রিভিউ। এখন পুরো সময়টা কাটে সাহিত্য চর্চায়। ‘কণিকামাত্র’ এবং ‘অণুরেণু’ অণুগল্পের দু’টি সংকলন। ‘গল্প পঞ্চদশ’ পনেরোটি ছোটোগল্পের একটি সংকলন। এছাড়া খুব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি উপন্যাস ‘কোভিডের দিনগুলি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *