আধুনিক ক্রিকেট, দেশপ্রেম এবং বিদ্বেষবিষ

আধুনিক ক্রিকেট, দেশপ্রেম, এবং বিদ্বেষবিষ

ভূমিকাঃ

ইডেন বা ওয়াংখেড়ের মতো দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা ঠিক শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নয়। নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন থেকে ট্যাক্সিতে প্রায় ২৫/২৬ দিরহাম ভাড়া লাগে যেটা ভারতীয় টাকায় প্রায় ৬০০/৭০০ টাকা। আর এই স্টেডিয়াম থেকে প্রায় কিলোমিটার দুয়েক দূরে অবস্থিত আইসিসি হেড অফিস এবং ঠিক তার উল্টোদিকে আইসিসি ক্রিকেট আকাদেমি, যেখানে সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়ে দলগুলো অনুশীলন করেছিল। অনলাইন অ্যাপ ছাড়া এখান থেকে ট্যাক্সি পেতে হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই হবে।

ডিসেম্বরের ৮ তারিখ, পরিকল্পনা ছিল সকালে বেরিয়ে প্রথমেই সোজা যাব আইসিসি আকাদেমি এবং সেখান থেকে দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়াম ভারত বনাম বাংলাদেশ ১৯ এশিয়া কাপ ফাইনাল দেখতে। আকাদেমিতে যাওয়ার পরই পরিচয় হল ওখানে কর্মরত বাংলাদেশের দুই যুবকের সঙ্গে। স্টেডিয়ামে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি পেতে দেরি হওয়ায় তাঁরাই উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের এক বন্ধুকে ডেকে দিলেন যিনি তাঁর গাড়িতে করে স্টেডিয়ামে পৌঁছে দিলেন। আর তারপর এক অন্য অভিজ্ঞতা।

পাশাপাশি সমর্থকদের হাতে উড়ছে দুই দেশের পতাকা, একই গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছেন দুই দেশের সমর্থকরা অথচ হাতে থাকা মোবাইলে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে চলছে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা – খিস্তি আর গালাগালির। সিনিয়র দলের ম্যাচ হলে তো এটা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চোখ রাখা যায় না সামাজিক মাধ্যমে, ভরে যায় অসামাজিক আচরণে।

দুবাই স্টেডিয়ামে পাশাপাশি সমর্থকদের হাতে উড়ছে দুই দেশের পতাকা

বিশ্বক্রিকেটে এশীয় উত্থানের পরিপ্রেক্ষিত

১৯৮৩তে শুধু ভারতের প্রথম বিশ্বজয় নয়, বলা যায় সীমিত ওভারে এশীয় দেশগুলোর আধিপত্যের সূত্রপাত। সেবার ভারত বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানও দ্বিতীয়বারের জন্য সেমিফাইনাল খেলে। বছর দেড়েক বাদে, ১৯৮৫ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ার্ল্ড সিরিজে ফাইনালে উঠল এই দুই দল। ‘৮৭ সালে নিজেদের দেশে সেমিফাইনাল এবং অবশেষে ‘৯২-এ পাকিস্তান ও ‘৯৬-এ শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন। পরের তিনটে বিশ্বকাপে যথাক্ৰম পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা রানার্স এবং সবশেষে ২০১১-তে অল এশিয়া ফাইনাল বিশ্বকাপে।

অর্থাৎ ১৯৮৭ বিশ্বকাপের পর প্রথমবার ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল হলো কোন এশীয় দেশ ছাড়া। ফলে বোঝাই যাচ্ছে মাঝের সময়টায় সার্বিকভাবে সাদা বলের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এশীয় দেশগুলোর দাপট। ফলে দলের অনুরাগীদের উৎসাহ এবং প্রত্যাশাও ক্রমবর্ধমান। অন্যদিকে ‘৯৯-এ বাংলাদেশের পাকিস্তানকে হারানো, ২০০৭ সালে ভারতকে হারানো, ২০১৫ বিশ্বকাপে কোর্য়াটার ফাইনালে খেলা – তাদের বিশ্ব পর্যায়ে একটা জায়গা করে দেয়।

শুধু মাঠের দাপটই নয়, মাঠের বাইরেও একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল দলগুলো বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোর মধ্যে। মাঠের কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনওই সেখানে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি এক দেশের প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা অন্যদেশকে সাহায্য করে নিজের দেশকে বিপদে ফেলেছেন এমন একাধিক উদাহরণও আছে। কখনও নেটে জাহির আব্বাস আজহারউদ্দিনের ব্যাটিং গ্রিপ ঠিক করে দেন তো কখনও সান্ধ্যকালীন আড্ডায় সরফরাজ নওয়াজ রিভার্স স্যুইং শেখালেন মনোজ প্রভাকরকে তো আবার কখনও ‘৮৭র সেই বিখ্যাত বেঙ্গালুরু টেস্টের মাঝে বেদী পাকিস্তানী স্পিনারদের বলে দিলেন কীভাবে বল করলে সাফল্য আসবে। আজকের দিনে কল্পনা করতে পারেন কী পরিস্থিতি হবে যদি কোহলি অফ ফর্মে থাকা বাবর আজমকে টিপস দেন আর পরের দিন বাবরের শতরানে পাকিস্তান ভারতকে  হারায়! শুধু তাই নয়, কয়েকবছর আগে পর্যন্ত কেকেআরের বোলিং পরামর্শদাতা ছিলেন ওয়াসিম আক্রম আর সৌরভ গাঙ্গুলির স্বপ্নের ভিসন-২০২০ প্রজেক্টে বোলিং কোচ ছিলেন ওয়াকার ইউনিস!

 আর এই সুস্থ পরিবেশের কারণেই হয়তো ২০২৩-র আগে অবধি উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত প্রতিটা পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ একাধিক দেশ মিলে আয়োজন করেছে, ‘৯৬ বিশ্বকাপের আগে কলম্বোয় জঙ্গিহানার পর ভারত-পাকিস্তান যৌথ দল সেখানে খেলতে গিয়ে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল, কার্গিল যুদ্ধের মাঝেও বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা গিয়েছিল, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো উইলস ট্রফি বা আইসিসি নকআউট ট্রফির মতো বড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের সুযোগ পায়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

'৯৬ বিশ্বকাপের আগে কলম্বোয় জঙ্গিহানার পর ভারত-পাকিস্তান যৌথ দল সেখানে খেলতে গিয়ে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল

বর্তমান অবস্থাক্রমাগত অবনমন

এদিকে সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলারই সুযোগ পেল না শ্রীলঙ্কা কারণ তারা এখন দুনিয়ার প্রথম আট দলের মধ্যে নেই। প্রচন্ড হাইপ তৈরী করা হল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে আর তারপর দেখা গেল একটা অতি জোলো ম্যাচ। একটা পার্টনারশিপ ছাড়া ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচও তাই। এটা শুধু একটা ম্যাচ নয়, যদি এই মুহূর্তে একাধিক ভারত-পাক ম্যাচ আয়োজন করা হয়, ফলাফলের কোন পার্থক্য হবে না। একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। এতটাই পিছিয়ে পড়েছে উপমহাদেশের বাকি ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলো।

এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান আবার রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে একই অপরের দেশে গিয়ে খেলবে না। কিন্তু বুঝি না যখন এই দুই দেশ নিরপেক্ষ দেশে আইসিসি ইভেন্টে এক অপরের মুখোমুখি হতে পারে, তখন নিরপেক্ষ দেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে অসুবিধে কোথায়? নাকি ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হলে আইসিসির মুনাফা কমবে? বছরে একটা আইসিসি ইভেন্টে একটা প্রায় বাধ্যতামূলক ভারত-পাক ম্যাচ রেখে প্রবল উত্তেজনা তৈরী করে ব্যবসা করার চেষ্টা? কিন্তু এটা বেশিদিন চলবে না। পাকিস্তান ক্রিকেট যেভাবে পিছনে যাচ্ছে এরপর হাজার চেষ্টা করেও হয়তো এই হাইপ তৈরী করা যাবে না। যার কিছুটা আভাস কিন্তু এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ দিয়ে গেল। মাত্র ২৫০০০ দর্শকাসনের স্টেডিয়ামও শুরু থেকে ভরল না, অনেকেই সন্ধ্যে নাগাদ মাঠে ঢুকলেন আর দুবাইয়ে প্রচুর পাকিস্তানী থাকা সত্ত্বেও দর্শকাসনে উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। পাকিস্তান টিমের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কি এর একটা বড় কারণ? ফলে মাঠের ভেতরের উপমহাদেশীয় ক্রিকেট এই মুহূর্তে অনেকটাই একপেশে হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সদ্য ভাইরাল হয়ে একটা ভিডিওর মতোই পেছনে হেঁটে চলেছে।

একবিংশ শতাব্দী, টি২০ ক্রিকেট, সামাজিক মাধ্যম

এরপরই খানিক পট পরিবর্তন। একদিকে টি-২০ ক্রিকেটের ক্ৰমবৰ্ধমান জনপ্রিয়তা, খেলাটাকে স্কিল নির্ভরতার বাইরে বের করে ট্যাকটিক্স এবং শক্তি  নির্ভর করে ছেড়েছে, যার বড় প্রভাব উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে পড়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় মেরুকরণ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য, সামাজিক মাধ্যমের ক্ৰমবৰ্ধমান প্রভাব এবং মিডিয়ার একাংশের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার – এতগুলো বাউন্সারের প্রভাব যেমন পড়ল উপমহাদেশের ক্রিকেটে, তেমনই প্রভাব পড়ল সমর্থককুলের মধ্যে। প্ৰতিদ্বন্দী হয়ে গেল শত্রু।  অবশ্য আফগান ক্রিকেটের সাম্প্ৰতিক সাফল্য (সাদা বলের ক্রিকেটে) আশাবাদী করতেই পারে কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে আফগানদের থেকে ক্রিকেটীয় ভিত অনেক বেশি পোক্ত ছিল শ্রীলঙ্কার, সাফল্য ছিল সবরকম ফরম্যাটে। কিন্তু আজ? শুধুই কি প্রতিভার অভাব? নাকি রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক সংকট তাদের ক্রিকেটেও বড় প্রভাব ফেলেছে? আর এই দুটো বিষয় কিন্তু আফগানিস্তানেও অতি পরিচিত বস্তু, ফলে রশিদ খানদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রবলভাবে উঠে না আসা পর্যন্ত আফগান ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী না হওয়াই শ্রেয়। আর প্রতিভা? সেটাও যে এই দেশগুলোতে যথেষ্ট আছে, অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের পারফরম্যান্সই তার প্রমাণ। আর্থিক কারণে (অন্যতম) ভঙ্গুর ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিকাঠামো, প্রকৃত সুযোগ এবং উপরের বেশ কিছু কারণের সমন্বয়ে এই প্রতিভাগুলো সিনিয়র পর্যায়ে এসে হারিয়ে যাচ্ছে।

আর এই সামাজিক মাধ্যমের বেশ কিছু ভাল দিকের সঙ্গে বাড়তি উপহার হিসেবে কী দিল? হাতে এসে গেল যাকে যা খুশি বলার, লেখার অধিকার আর তার সঙ্গে ব্যক্তিগত হতাশার বহিঃপ্রকাশ। ক্ৰমবৰ্ধমান অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্ররোচনার সামনে পড়ে বোধবুদ্ধিহীন আচরণ করতে শুরু করলেন একদল ক্রীড়া সমর্থক। ক্রমে সেটাই হয়ে গেলো ট্রেন্ড।

অপরের দিকে বিষোদ্‌গার না করলে পুরোমাত্রায় ক্রীড়াপ্রেমী হয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ফলে আজ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যে ভারত-বাংলাদেশ বা ভারত-পাকিস্তান খেলা থাকলেই সামাজিক মাধ্যম দেখলে মনে হয় ‘যুদ্ধ এসেছে।’ তবে এক্ষেত্রে বুদ্ধ হেসেছেন কিনা জানা নেই! অথচ দেখুন আজকে অধিকাংশ ফরম্যাটেই ভারতের সঙ্গে তার যে কোন প্রতিবেশী দেশের ম্যাচ মানেই যেন ওয়াকওভার পেয়ে যাওয়া। নব্বইয়ের দশক বা এই শতাব্দীর প্রথম দশকের ম্যাচগুলোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ তো স্বপ্ন। আর  সেখানেও বিপক্ষ ভালো খেললেও আপনি প্রশংসা করতে পারবেন না, আর করলেই আপনি দেশদ্রোহী! ট্রোলের বিষয়বস্তু! অবশ্য এটা দেখেও মাঝে মধ্যে ভালো লাগে এই ভেবে যে আমার বাবা এযুগে জন্মগ্রহণ করেননি কারণ জাভেদ মিয়াদাদের লড়াকু ব্যাটিং তিনি পছন্দ করতেন। শুনেছি সেযুগে অবশ্য এদেশে ইমরান, জাহিরের আর পাকিস্তানে কপিল, সানির অগণিত ভক্ত ছিল। ১৯৭৮ সালে অনেকদিন পর যখন ভারত পাকিস্তানে যায় এবং ১৯৭৯-৮০ তে পাকিস্তান যখন ভারতে আসে, দু’দলই অভূতপূর্ব সম্বর্ধনা পেয়েছিল।

নিজের চোখেও দেখেছি, ১৯৯৯ সালে ভারত পাকিস্তানের কাছে টেস্ট ম্যাচ হেরে যায় মাত্র ১২ রানে – শচীনের অনবদ্য শতরান সত্ত্বেও। ওয়াসিম আক্রমের নেতৃত্বে চেন্নাইয়ের মাঠভর্তি দর্শকের অকুণ্ঠ অভিনন্দন কুড়িয়েছিল সেদিন পাকিস্তান দল। ২০০৪-এর পাকিস্তান সফরের সময়ে সিকিউরিটিবিহীন অবস্থায় সৌরভ গাঙ্গুলি মাঝরাতে লাহোরের ফুডস্ট্রিট থেকে ঘুরে আসতে পেরেছেন।

আজ যেন এইসব স্বপ্ন মনে হয়।

১৯৯৯ সালে চেন্নাইয়ের মাঠে ভারতীয় দর্শকদের অভিনন্দন কুড়োচ্ছেন বিজয়ী পাকিস্তান দল

প্রভাবশালীদের ভূমিকা

এর সঙ্গে সাম্প্রতিককালে মাঝেমধ্যে নয়, প্রায়শই অবিবেচকের মতো, দায়িত্বজ্ঞানহীন, উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে কিছু ক্রিকেটার (প্রাক্তন ও বর্তমান), ধারাভাষ্যকার, ও প্রশাসকদেরও, যা ক্ষেত্রবিশেষে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হিসেবে ভালোই সফল হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়  সম্ভবত এটাই।

যাঁদের সুস্থ পরিবেশ, পরিস্থিতি তৈরী করতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করা উচিত, তাঁরাই দিচ্ছেন ঘৃতাহুতি। এঁরা কবে বুঝবেন এঁদের বক্তব্যের গুরুত্ব! অনেকক্ষেত্রেই হয়তো শুধু মাত্র প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্য, কিছু সস্তা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় তাঁরা এসব করে যান। সঙ্গে আবার আছে (সম্ভবত) চ্যানেলকে জনপ্রিয় করার দায়িত্ব, কারণ সেখানে তো যত বিতর্ক, যত গালাগালি ততই ক্রমবর্ধমান টিআরপি।

সামনের দিকে তাকিয়ে

এইরকম এক অসুস্থ পরিবেশে দাঁড়িয়ে ওই গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী দুনিয়ায় আমি কলকাতা তথা ভারতীয় জেনেও অপরিচিত দু’তিনজন বাংলাদেশী যুবক যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাতে মনে হল সৌভাগ্যক্রমে সত্যিই রিয়েল দুনিয়ার সঙ্গে রিল এবং ভার্চুয়াল দুনিয়ার অনেকটাই পার্থক্য এখনও রয়ে গেছে। আর তারপর মাঠেও যখন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলাররা যথেষ্ট দাপট দেখিয়ে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব -১৯ এশিয়া কাপ জিতে নিল, মনে হল উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে এখনও সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ ফেরা সম্ভব। আর সেটা প্রয়োজনও, এই ভারত এবং সেনা দেশ – এই বৃত্তের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আনতে হলে।

সমাজ মাধ্যমে প্রভাবশালীদের গুরুত্বপূর্ণ সদর্থক ভূমিকার প্রয়োজনের কথা আরেকবার বলে শেষ করতে চাই। টিভিতে, রেডিওতে, কমেন্টারি করার সময়, সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বা কোন বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে আবেগকে সংযত করে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। সাধারণ দর্শক তাঁদের বিশেষভাবে অনুসরণ করেন, সমাজমাধ্যমে তো তাঁদের বিভিন্ন অনুরাগীদের সংগঠনও আছে। একবার নয়, বারেবারেই তাঁদের সক্রিয়, সদর্থক ভূমিকা আমরা দেখতে চাই। আমরা জানি, ‘অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো’ – এই মন্ত্রে তাঁরাই পারেন পরের প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তুলতে।

চিত্রঋণ

দুবাই স্টেডিয়ামের ছবিগুলি ‘উইলোর উইল’ পত্রিকা থেকে অনুমতি সাপেক্ষে গৃহীত।

অন্যান্য ছবিগুলি অন্তর্জাল থেকে গৃহীত। 

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, নেশায় ক্রিকেট। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বললে ইট ক্রিকেট,স্লিপ ক্রিকেট। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন ক্রিকেট দেখার শুরু, বাবা বলেছিলেন, প্রকৃত ক্রিকেট বুঝতে হলে গাভাসকার এবং বয়কটের কমেন্ট্রি শুনতে এবং বুঝতে হবে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এখনও ক্রিকেট দেখে চলা এবং সামান্য কিছু কাজ করার চেষ্টা যার প্রথম ফসল ছিল ২০২১-এ প্রকাশিত উইলোর উইল নামক ক্রিকেট পূজাবার্ষিকী আর আপাতত চলছে উইলোর উইল -এর ইউটিউব চ্যানেল (https://youtube.com/@willowrwill_cricket?si=tPGZsqxsFNkcQoZj)। স্বপ্ন অবশ্যই ক্রিকেট নিয়ে আরও কাজ করা।

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Saurav Brahmachari , April 17, 2025 @ 5:38 pm

    খুবই প্রাসঙ্গিক এই লেখাটা। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এইরকম একটা লেখার দরকার ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *