![]() |
গ্রন্থের নামঃ বীরোল
লেখকঃ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
প্রকাশনাঃ দ্য ক্যাফে টেবল
কল্পবিজ্ঞান (সায়েন্স ফিকশন) বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা (genre)। অনেক দিকপাল লেখকের লেখনীর ঝরনাধারায় সিক্ত সাহিত্যমাতৃকার এই অংশ। কিশোর উপযোগী সায়েন্স ফিকশন রচনায় বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য। তাঁরই সাম্প্রতিকতম উপন্যাস গ্রন্থ বীরোল।
এই গ্রন্থে আছে মোট দু’খানি উপন্যাস, “নতুন দিনের আলো” ও “বীরোল।”
২১৪০ সালের পৃথিবী – জিমারা গ্রহমণ্ডলের আগ্রাসী সভ্যতা প্রায় পুরো ছায়াপথ জুড়ে তাদের আধিপত্য স্থাপন করেছে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে জলবাসী ডলফিন ও তাদের সভ্যতাকে। অন্যান্য গ্রহের প্রাণীদের ঘটানো হয়েছে জিনগত পরিবর্তন, অত্যাচারের সব সীমা পেরিয়ে গেছে জিমাররা। পৃথিবীর মানুষের সাইকিকশক্তি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, তারা এখন জিমারদের আজ্ঞাবহ৷ লক্ষ্যপূরণে ব্যস্ত জিমাররা খেয়াল করে না, কয়েকজন বন্দি ডলফিন খুঁজে বের করেছেন ত্রিশজন এমন ছেলেমেয়েকে যারা সম্পূর্ণ সুস্থ। তাদেরই নেত্রী ডলফিন গবেষণাকেন্দ্রের শিক্ষানবিশ ডুবুরি লীনা। এই ছেলেমেয়েগুলি কি সক্ষম হবে সব বন্দি ডলফিনদের উদ্ধার করতে? হিংস্র জিমার সভ্যতার অবসান ঘটে কি পৃথিবীতে ফিরবে শান্তি? এই নিয়েই প্রথম উপন্যাস ‘নতুন দিনের আলো।’ অনবদ্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের বিবরণ ও সেই সঙ্গে ডলফিন ও মানুষের সম্পর্ক সুচারুভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এই উপন্যাসে। পড়তে পড়তে লীনার দুর্ধর্ষ অভিযানের সঙ্গী হতে ইচ্ছে করে বইকি!
জিপসি বিজ্ঞান, যা অধুনা পৃথিবীতে ব্রাত্য, তাই নিয়েই দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বীরোল।’ দুর্লভ রাইমিন গ্রন্থির মালিক এবং ‘প্রথম সমান্তরাল’-এ অধীন ভারতবর্ষের একমাত্র আশার প্রদীপ বীরোল, ভাইসরয় ভিনিগালের বিধ্বংসী জাদুর কবলে পড়ে পাথরের মূর্তিতে রূপান্তরিত। তাই বীরোলের প্রতিরূপের সন্ধানে পৃথিবীতে আসেন সমান্তরাল পৃথিবীর বিপ্লবী, কাইকর৷ তিনি বিল্লু নামক কিশোরটিকে নিয়ে যান সমান্তরাল পৃথিবীতে। এই উপন্যাসের উপজীব্য এক কিশোরের বীরোল হয়ে ওঠা। দুর্ধর্ষ বিবরণ, ডায়মেনশন নির্মাণ, এই উপন্যাসের মূল ভিত্তি। পড়তে পড়তে গা-ছমছমে অনুভূতি হয়৷
সব মিলিয়ে ‘বীরোল’ কিশোর উপযোগী এক উৎকৃষ্ট গ্রন্থ৷ পড়তে পড়তে আমরা ফিরে যাই কৈশোরের সেই সময়টিতে, যখন স্বপ্ন দেখতাম কলম্বাসের মত নতুন কিছু আবিষ্কারের, আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, ওখানে আছে কি মানুষের মতো অন্য জীবদের দুনিয়া? কী হবে যদি তারা নেমে আসে পৃথিবীতে! তারা কি মানুষের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান?
এই উপন্যাস দু’খানি কিশোর অভিযান কেন্দ্রিক, ভালো ও মন্দের দ্বন্দ্বের চিরায়ত আখ্যান৷ টানটান লেখনী আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, যেন চোখের সামনেই ঘটছে সবকিছু৷ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য আধুনিক বাংলা কিশোর সাহিত্যের অন্যতম সেরা নাম, আর তাঁর লিখিত এই উপন্যাস সত্যিই উপভোগ্য। পড়তে পড়তে নিয়ে যায় কৈশোরের সেই নির্মল দুনিয়ায়। তথ্য ও বিবরণের উৎকর্ষতা সত্যিই তারিফযোগ্য। সেইসঙ্গে অনবদ্য চিত্রসজ্জা বইটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে৷ মুদ্রণপ্রমাদ তেমন চোখে পড়েনি আমার।
সব মিলিয়ে সায়েন্স ফিকশন প্রেমীরা পড়তেই পারেন এই উপন্যাসদুটি। আর পড়তে পারেন তাঁরা, যারা কৈশোরে সাহসী অভিযানের স্বপ্ন দেখতেন। এই গ্রন্থ আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সেই স্বপ্ন দেখা দিনগুলোয় – লেখকের জিত এখানেই। অনেকদিন পরে কিশোর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস পড়ে খুব ভালো লাগলো।