কলকাতার ‘অভয়া’ ও ধর্ষণ-সংস্কৃতি
এ বছরের ৯ই অগাস্ট, কলকাতার আর. জি. কর মেডিকাল কলেজে কর্মরত একটি একত্রিশ বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার-শিক্ষার্থীকে কেউ বা কারা পৈশাচিকভাবে ধর্ষণ ও খুন করল। তারপর সেই খুনের প্রমাণ লোপাট করে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে আরও যে সব ভয়ঙ্কর কাণ্ড কারখানা ঘটানো হল তার প্রবাহ এখন মোটামুটি সবাই জানেন। আইন মেনে ধর্ষণ ও হত্যার পর মেয়েটির নামকরণ হয়েছে ‘তিলোত্তমা’ বা ‘অভয়া।’ ধর্ষণের শিকার হলে পৃথিবীর সব দেশে পরিচয় গোপন রাখার অধিকার তাকে দেওয়া হয়। ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে ‘অভয়া’র ওপর সেই নারকীয় অপরাধের প্রতিবাদে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে উঠল পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন সমাজ – বিশেষ করে কলকাতায় আর শহরতলীতে। মেয়েটির সহকর্মী, ‘জুনিয়ার ডাক্তার’দের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ-আন্দোলন আজ চল্লিশদিন পরেও সজীব। দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যম এই নজিরবিহীন আন্দোলনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পেশ করে চলেছে – তাই সুদূর বিদেশে বসেও আমরা জানতে পারছি সেই তথ্য। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখতে দেখতে কিছু প্রশ্ন আমার মনে জেগেছে – তার কয়েকটা নিয়েই আজকের আলোচনার আরম্ভ।
প্রথম প্রশ্ন, কেন এই লাগাতার আন্দোলন? আমাদের দেশে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা! ইটভাটার মহিলাকর্মীরা বলেন কাজ পেতে এবং টিকিয়ে রাখতে ম্যানেজারবাবুর যৌন-জুলুম তাঁরা মেনে নিতে বাধ্য হন। কাজের জগতে আদিবাসী মহিলাদের অভিজ্ঞতাও একই ধরনের। ডেলি প্যাসেঞ্জার মেয়েরা স্বীকার করেন ট্রাম-বাস-ট্রেনে যাতায়াতে যৌন নিগ্রহ আকছার ঘটে। নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিদেশি পর্যটকেরা ভারতবর্ষকে ‘মেয়েদের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ আখ্যা দিয়েছেন।[i] সরকারি পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায়, মেয়েরা যৌন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে – বাড়ির ভেতরে এবং বাইরে। ন্যায়বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, সিংহভাগ মেয়েকেই যৌন নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে – এ ছাড়া তাদের কোনও উপায় নেই। তাহলে কোন মন্ত্রবলে ‘অভয়া’ সমাজের চেতনা এমনভাবে জাগিয়ে তুলল? যেসব নারীপুরুষ এতদিন রাজনৈতিক আন্দোলন সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছেন, তাঁরাও এবার প্রতিবাদ মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। যে যেখানে, যেমন করে পারেন, পথে নেমেছেন। একটি মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে এমন বিশাল জনস্রোত আর একবারই দেখা গেছিল – ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে, দিল্লীতে ‘নির্ভয়া’ হত্যার পরে। সেদিনও দিল্লীর যুবসমাজ শীত, জল-কামান, আর পুলিশের লাঠি অগ্রাহ্য করে একটি ধর্ষণ-হত্যার সুবিচার চেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
ভাবতে গর্ব হয়, কলকাতায় নিরাপত্তার দাবি নিয়ে প্রথম প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল মেয়েরা – ‘রাত দখলের’ আহ্বান। ‘অভয়া’র হত্যার খবর জানাজানি হবার পর আর. জি. কর মেডিকাল কলেজের অধ্যক্ষ মন্তব্য করেছিলেন, ‘মেয়েটির আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। রাতের বেলা একা মেয়ে সেমিনার ঘরে গিয়েছিল কেন?’ অর্থাৎ খুন হবার দায়িত্ব ‘অভয়া’রই – নিজের অসাবধানতার জন্যেই সে আজ ধর্ষিত এবং মৃত। এই প্রাগৈতিহাসিক এবং বিষাক্ত মনোভাব ও বক্তব্যের উত্তরে কলকাতার মহিলারা সংগঠিত করেছিল ‘রিক্লেম দ্য নাইট’ মিছিল এবং জনসাধারণের কাছ থেকে পেয়েছিল অভূতপূর্ব সাড়া। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, ১৪ই অগাস্ট, সারা রাত ধরে চলেছিল মেয়েদের নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার স্থাপনের আন্দোলন। তারা সোচ্চারে জানিয়েছিল চার দেওয়াল ও রাতদিনের সময়ের গণ্ডিতে বাঁধা থাকতে তারা নারাজ।
অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি, ‘অভয়া’ কী করে এত মানুষকে প্রতিরোধের শরিক হতে অনুপ্রাণিত করল? এই প্রসঙ্গে আমার এক বন্ধুর উত্তর তাৎপর্যপূর্ণ। নিজের আবেগ খুঁটিয়ে দেখে সে বলল, ‘এর আগে যতগুলি ধর্ষণ ও খুন ঘটেছে দুঃখ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সহমর্মিতা অনুভব করিনি। ভেবেছি অমন অঞ্চলে আমি থাকি না, ওই রাস্তায় আমি হাঁটি না, অতএব এ ধরনের হিংস্রতা আমার জীবনে ঘটবে না। আমি সুরক্ষিত। ‘অভয়া’র বেলায় ঠিক এর উল্টো অনুভূতি হয়েছে। মেয়েটি আমারই মত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্রী – কর্মক্ষেত্রে কাজ করছিল। ‘অভয়া’ যেন হঠাৎ আমাকে তার জায়গায় বসিয়ে দিল। সেই মেয়েটিকে দেখে বুঝতে পারছি, এমন নৃশংসতা আমার জীবনেও ঘটতে পারে। আমার নিরাপত্তাবোধ অলীক।’ আমার ধারণা, এমনই বোধ থেকেই কলকাতার সমাজ ‘অভয়া’র সঙ্গে একাত্ম হয়েছে – মহিলারা ‘রাত দখল’ করতে পথে নেমেছে।
মেয়েদের লড়াই, ‘রাত্রির অধিকার’ দাবির ইতিহাস দীর্ঘ। এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৭৫ সালে, পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরে সুসান অ্যালেকজান্ডার স্পিথ নামে এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট কাজ সেরে রাতে একা বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তাঁকে ধর্ষণ ও খুন করা হল। অবশ্যই কথা উঠেছিল একজন মহিলা এত রাতে পথে একা কেন, আরও সাবধানতা অবলম্বন করেনি কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আরম্ভ হয়েছিল মৃতের প্রতি দোষারোপ। রোষে গর্জে উঠেছিল সেই সময়ের নারীবাদী সংগঠনগুলি। সেই ক্রোধাগ্নি থেকেই জন্মায় ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ (রাত্রি দখল) নারী-অধিকারের আন্দোলন। যৌন অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ল পাশ্চাত্যের নানান দেশে। ইয়োরোপে প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল ব্রাসেলস শহরে, ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৭ সালে রাত্রি অধিকারের মিছিল বের হল আমেরিকার পিটসবার্গ শহরে। ১৯৭৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান-ফ্রান্সিস্কো এবং ওহাইয়োর কলম্বাস শহরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে উঠেছিল এই প্রতিবাদ। কলম্বাসের সেই প্রথম ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ মিছিলে[ii] সঙ্গীদের সঙ্গে পথ হেঁটেছিলাম আমি, আমার ছোট্টো মেয়ের হাত ধরে। পরে আমার মেয়ে তার নারীবাদী রচনায় এই মিছিলে যাবার অভিজ্ঞতা নিয়ে বারবার লিখেছে।
বিদেশে থাকা সত্ত্বেও কলকাতায় গড়ে ওঠা ধর্ষণবিরোধী এই আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে আছি উৎসুক হয়ে। মানুষের মনোভাব কতটা পাল্টেছে, আদৌ পরিবর্তন হয়েছে কিনা, যাচাই করার জন্যে শুধু আমি নই, গোটা বিশ্ব অপেক্ষা করছে। আমার প্রথম সহমর্মিতা জেগেছিল মা হিসেবে। আমার মেয়েও ডাক্তার। সে যখন রেসিডেন্সি (ইন্টার্নশিপ/হাউজ সার্জনশিপ) করছিল, ৩৬/৪৮ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকত, কতবার বলেছে ‘দশ মিনিট সময় পেলে, কোনাঘুঁজি খুঁজে একটু ঘুমিয়ে নিই।’ জানি, ‘অভয়া’ও তাই করছিল। তারপরের ভাবনাগুলো এসেছিল নারী হিসেবে, নারীবাদী হিসেবে।
নারীবাদীরা বলেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মৌখিক টিটকিরি থেকে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হেনস্থা থেকে ধর্ষণ, নারীকে আয়ত্তে আনার, তার ওপর প্রভুত্ব কায়েম করার কৌশল। ব্যক্তি হিসেবে পুরুষ যৌন অত্যাচার করে নারী-বিদ্বেষ চরিতার্থ করতে এবং নারীর ওপর তার আধিপত্য চাপাতে। তাই ধর্ষণ ঘটে কর্মক্ষত্রে, পরিবারের মধ্যে, খেলার মাঠে, যুদ্ধক্ষেত্রে, রায়টে, আন্দোলনে, দেশজয়ের উৎসবে, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে একত্রে হুল্লোড় করতে। অর্থাৎ সমাজের যেখানেই নারী বাস করে, ঘোরাফেরা করে, ধর্ষণের ক্ষেত্র হয় সেটাই। নারীর জন্যে সমাজের কোথাও কোনও নিরাপদ স্থান নেই।
তবে শুধু একজন ব্যক্তিপুরুষ একজন নারীকে দমন করতে ধর্ষণ করে না, অনেক সময়ই চলে গণধর্ষণ – উদ্দেশ্য গোটা নারীজাতকে অধীন করা। যখন কোনও অঞ্চলে ধর্ষণ ঘটে শুধু একজন মহিলা ক্ষতিগ্রস্ত হন না, পুরো মহিলা সমাজ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পথেঘাটে তাদের নিঃশঙ্ক এবং অবাধ বিচরণ ব্যহত হয় এবং পরিবারের লোকেরা তাদের সুরক্ষিত রাখতে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকার বিধান দেন। তাঁরা ভুলে যান, পরিবারও নারীকে সবসময় নিরাপত্তা দিতে পারে না। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে বা যুদ্ধশেষে বিজয়ী সৈন্যরা গণধর্ষণ করে শুধু মেয়েদের দখল করতে নয়, শত্রুসমাজের পুরুষদের শায়েস্তা করতে। পুরুষের মনোবল ভেঙে নতজানু করতে সেই সমাজের মেয়েদের শরীরকে ব্যবহার করা হয়।[iii] ইদানীংকালের গবেষণায় জানা গেছে, কয়েদি পুরুষ সৈনিক ও সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দিতেও যৌন অত্যাচারের নজির আছে।[iv] এক্ষেত্রে বক্তব্য প্রাঞ্জল – ‘তোমার প্রাণের ওপর তো বটেই, তোমার শরীরের ওপরও আমার যথেচ্ছ অধিকার রয়েছে। তুমি আমার পদানত।’
‘অভয়া’র ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদ সর্বজনীন হয়ে ওঠার আরও একটি কারণ থাকতে পারে। ম্যালকাম গ্ল্যাডওয়েল তাঁর বই ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ সমাজ পরিবর্তনের একটি চমৎকার তত্ত্ব পেশ করেছেন।[v] তাঁর মতে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো, প্রায় অদৃশ্য রদবদল নিয়মিত ঘটে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবস্থান্তর জমতে জমতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছয় যখন হঠাৎ একটা বিশাল পরিবর্তন আসে। সেই মুহূর্তটিই হল ‘টিপিং পয়েন্ট।’ ঠিক ওই সময়ে কেন পরিবর্তন ঘটল, বৈজ্ঞানিকভাবে তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পরিবর্তন এমনই আকস্মিক, মনে হয় যেন জাদুবলে উপস্থিত হয়েছে। একটা গামলায় ছোট্টো ফোঁটায় জল জমতে জমতে হঠাৎ সুনামির তোড়ে ভাসিয়ে দেবার মতো! ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুন হয়তো পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা বাস্তবায়িত করার ‘টিপিং পয়েন্ট।’
কলকাতায় ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হবার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই আরেকটি প্রশ্ন করেছেন, ‘সব পুরুষই ধর্ষক নাকি?’ প্রশ্নটায় কোথায় যেন একটু অভিমান আর ডিফেন্সিভনেস জড়িয়ে আছে। উত্তরে বলি, ‘না, সব পুরুষ কখনওই ধর্ষক নয়, কিন্তু সব ধর্ষকই পুরুষ।’ পুরুষের সামাজিকীকরণে রয়েছে ধর্ষক হবার বীজ। ছোটবেলা থেকে ছেলেরা পায় নারীর ওপর কর্তৃত্ব ফলাবার শিক্ষা, তাদের মনে গেঁথে দেওয়া হয় নারী তাদের চেয়ে নীচুতলার জীব, নারীকে তারা চেনে বস্তু হিসেবে। পৌরুষের পাঠেই থাকে ধর্ষক হবার সম্ভাবনা, বিশেষত তা যখন তীব্র ও বিষাক্ত (toxic) হয়ে ওঠে।
সমাজতাত্বিকদের মতে পুরুষত্বের সংজ্ঞা হল নারীত্বের উল্টো। পুরুষের বৈশিষ্ট্য নারীর ভাবমূর্তির ঠিক বিপরীত – নারী যদি কোমল হয়, পুরুষ হবে কঠিন। নারীর জগত হবে পরিবারের ভেতরে, পুরুষের বাইরে, নারী সেবা করবে, পুরুষ সেবা নেবে। পুরুষ হবে স্বাধীন, শক্তিময়, সাহসী, আগ্রাসী, দৃঢ়, কর্তা, জয়ী, ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েলিপনা খারিজ করলে পরেই পুরুষ হওয়া যায়। ছেলেদের অপমান করা হয় ‘মেয়েলি’ বা ‘স্ত্রৈণ’ বলে। কোনও পুরুষকে ‘ভীরু’ চিহ্নিত করতে বলা হয় ‘চুড়ি পরে বাড়িতে বসে থাক।’ ধরে নেওয়া হয় মেয়েরা অকর্মণ্য, দুর্বল, ভীতু, তাদের মানসিকতা পুরুষের কাম্য নয়। এমনতর সামাজিক শিক্ষারই চরম প্রকাশ নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ। যতদিন না সমাজে নারী-পুরুষের মূল্যায়ন সমান সমান হচ্ছে, ধর্ষণ বা নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়।
‘অভয়া’ আন্দোলন সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক ঘটনার কথা মনে পড়ল। এই ভয়াবহ ঘটনার অকুস্থল ফ্রান্স – নারীবাদী লেখক সিমন দ্য ব্যুভোয়া’র জন্ম ও কর্মস্থল। সাম্প্রতিক ঘটনাটি ফরাসি প্রশাসনকে মূল থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষত্ব ও পিতৃতন্ত্র সম্বন্ধে নারীবাদের বহু যুক্তি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, তাই মনে হল এই ঘটনার আলোচনা এখানে প্রযোজ্য।
ফ্রান্সের প্রভাঁস (Provence) অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে জায়গাটি বিখ্যাত। চারদিকে ফলের বাগান, ওয়াইন তৈরির আঙুর খেত, ফুলের সমারোহ। জীবনযাত্রায় পশ্চিমী হুড়োহুড়ি নেই – প্রতিবেশীদের মধ্যে নিশ্চিন্ত বন্ধুত্বের কমতি নেই। জায়গাটার এমনই গুণ, বহু লেখক এখানে কিছুদিন থেকে উপন্যাস লিখেছেন। প্রভাঁস-এর মধ্যে ছোট্টো গ্রাম মাজঅঁ (Mazan), লোকসংখ্যা সাত হাজারের কাছাকাছি। অবসরগ্রহণ করে বহু ফরাসি নাগরিক এখানে এসে পাকাপাকি বাস করেন। তেমনি এক দম্পতি, ডমিনিক পেলিকো ও তাঁর স্ত্রী, জিসেল, প্যারিসের কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়ে ২০১০/২০১১ সালে মাজঅঁ’তে চলে এলেন। মেয়ে বড়ো হয়ে নিজের জীবন বেছে নিয়েছে, তাই সেদিক থেকে তাঁরা নিশ্চিন্ত।
২০২০ সালে, মাজঁ’র এক পুলিশ কনস্টেবল হঠাৎ ডমিনিককে গ্রেপ্তার করল – অভিযোগ, সে একজন মহিলার স্কার্টের তলায় ক্যামেরা রেখে ছবি তুলেছে। এই ধরনের চোরাগোপ্তা যৌন হেনস্থার ব্যাপারে ফ্রান্সের আইন ঢিলেঢালা। অনেকসময় দোষীকে সামান্য সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার তা হল না। বিক্ষুব্ধ তরুণী আইনি অভিযোগ আনলেন – অপরাধীকে তিনি সহজে ছাড়বেন না। তদন্তের খাতিরে ডমিনিকের কম্প্যুটার পুলিশ ক্রোক করল। অনুসন্ধানের সময়, সেই কম্প্যুটারে সংরক্ষিত ছবি দেখে, পুলিশের আক্কেল গুড়ুম! পুলিশের কর্তা জিসেল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ততদিনে অবশ্য স্বামীর ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়ে জিসেল বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা এনেছেন।
কম্প্যুটার ঘেঁটে দেখা গেল ২০১১ সাল থেকে ২০২০ অবধি ‘অ্যাবিউস’ নামে একটি ফোল্ডারে ডমিনিক বহু ছবি, ভিডিও, সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। ছবির বিষয়, জিসেল অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন আর একের পর এক পুরুষ তাঁকে ধর্ষণ করছে। দশ বছর ধরে বহু অচেনা পুরুষকে ডমিনিক আমন্ত্রণ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে। এদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করত অনলাইনে – একটি গোপন পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ওয়েবসাইটের নাম ‘Against Her Will’ (তার মতের বিরুদ্ধে)। নাম দেখেই বোঝা যায় কী উদ্দেশ্য, কারা এখানে বিচরণ করে (দ্রষ্টব্য, পুলিশের তদন্ত শুরু হতেই সাইটটি উবে গেছে)। কম্প্যুটারে ছবি দেখে, এই অবধি পুলিশ প্রায় ৮২ জন মাজঅঁ’বাসী ধর্ষককে শনাক্ত করতে পেরেছে। আরও কিছু ধর্ষক আছে, সবাইকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাজঅঁ’র সব বাসিন্দাদেরও চার্জশিট দেওয়া যায়নি – কয়েকজন ইতিমধ্যে মারা গেছে। ধর্ষকরা কেউ শিক্ষক, মিস্ত্রি, কারিগর, দোকানদার, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকুরে। ২২ বছর থেকে ৭৬ বছর বয়সি পুরুষেরা অচেতন জিসেলকে স্বেচ্ছায় ধর্ষণ করেছে। পুলিশের কাছে প্রায় সবাই স্বীকার করেছে ধর্ষণের সময় তারা জানত জিসেলের জ্ঞান নেই।
প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে, যা ঘটছিল জিসেল কি কিছুই বুঝতে পারেননি? পুলিশি তদন্তের পরে সে বিষয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই। ২০১১ সাল থেকে ডমিনিক এক ধরনের তীব্র ঘুমের ওষুধ স্ত্রীর খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতেন। জিসেল অচেতন হয়ে পড়লে আগমন হত পাড়ার ধর্ষকদের। বস্তুত বহুদিন ধরেই জিসেল বারবার নানান ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন শারীরিক অসুস্থতার জন্যে – ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম, গা বমি, স্মৃতিলোপ, এমনই নানান উপসর্গ। তার মধ্যে গাইনোকলজিকাল সমস্যাও আছে। ডাক্তারেরা কিছু ধরতে পারেননি, বরং জিসেলকে বলেছেন এই অসুস্থতা তাঁর মনগড়া, মানসিক বিকৃতি। শেষ পর্যন্ত জিসেলের ধারণা হয়েছিল তাঁর অলজহাইমার রোগ হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে ডমিনিক পেলিকো এবং পঞ্চাশজন অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রভাঁস-এর আদালতে ধর্ষণের মামলা লাগু হয়েছে। কেস চলবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি অবধি, তাই বিচারকের রায় কী হবে জানি না। ইতিমধ্যে ডমিনিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকদিনের জন্যে কেস স্থগিত রাখা হয়েছিল। ধর্ষিতা হিসেবে জিসেল পেলিকো নিজের নাম ও ছবি গোপন রাখতে পারতেন। তাঁর অধিকার ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে বিচারকের কামরায় সাক্ষ্য দেওয়া। কিন্তু ৭২ বছরের জিসেল ঠিক করেলেন এই আইনি অধিকার উনি প্রয়োগ করবেন না। নিজের নাম ও ছবি গোপন করবেন না – খোলা আদালতে, সবার সামনে বয়ান দেবেন। নিজের উদাহরণ দিয়ে ফ্রান্সের মেয়েদের উনি সতর্ক করতে চান। তাঁর উদ্দেশ্য, ফ্রান্সের ধর্ষণ সংস্কৃতির স্বরূপ তিনি সবার সামনে তুলে ধরবেন। জিসেল বললেন, ‘ধর্ষণের লজ্জা তাঁর নয়, ধর্ষকদের। তাই নিজেকে লুকোবার প্রশ্ন ওঠে না।’ আদালতের বাইরে, জিসেলের আসাযাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে ফরাসি মহিলাসমাজ প্রতিদিন করতালি দিয়ে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানায়।
পঞ্চাশজন বিচারাধীন অপরাধীর মধ্যে মাত্র আঠারোজন জেল হেফাজতে রয়েছে – বাকি সবাই জামিনে মুক্ত। প্রথম প্রথম মাজঅঁ’বাসী অনেকেই জিসেলের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছিল। ধর্ষকেরা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি – প্রত্যেকের চাকরি, ব্যবসায়, স্ত্রী-ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাঁদের জীবনে জিসেল কেন এমন ঝড় তুললেন? বিবিসি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মাজঅঁ’র মেয়র বললেন, ‘এত হই চই হচ্ছে কেন! কেউ মারা যায়নি, কারোর ক্ষতি হয়নি – ব্যাপারটা এত গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোনও কারণই নেই।’ পরে নারীবাদীদের চাপে পড়ে অবশ্য এই বক্তব্যের জন্যে তিনি সর্বসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন। তাছাড়া আদালতের সাক্ষ্যবয়ানে ঘটনাপ্রবাহ সম্বন্ধে যতই জানা যাচ্ছে, মাজঁ গ্রামের বাসিন্দারা ততই লজ্জা প্রকাশ করছেন।[vi]
মাজঅঁ’র এই মামলায় বেশ কিছু নতুন তথ্য ও চিন্তাধারা মানুষের সামনে উঠে এসেছে। প্রথমত, নতুন একটা অপরাধের নামকরণ হয়েছে – কেমিক্যাল কনসেন্ট। আইন স্বীকার করেছে ঘুমের ওষুধ বা মাদক খেয়ে বা খাইয়ে অচেতন বা অর্ধঅচেতন অবস্থায় যৌন সংসর্গে রাজি অরাজির প্রশ্ন উঠতে পারে না। সেই সময়ে সজ্ঞানে সম্মতি জানাবার ক্ষমতা কারোর থাকে না। অতএব সেই অবস্থায় যৌন সংসর্গকে সবসময়ই ধর্ষণ গণ্য করা হবে। এ ব্যাপারে ফরাসি সরকার নতুন আইন প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছে।
প্রথম থেকেই জিসেল-এর উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের পুরুষতান্ত্রিক রেপ-কালচারকে নগ্ন করে দেখানো। তাঁর সেই উদ্দেশ্য সফল হতে চলেছে। ধর্ষকদের সপক্ষে তাদের উকিলেরা যে সমস্ত যুক্তি পেশ করছেন তাতে পুরুষতন্ত্র ও রেপ-কালচার-এর চরিত্র একেবারে সুস্পষ্ট। তারই মধ্যে কয়েকটি ‘যুক্তি’ ও উদাহরণের ব্যাখ্যা করছি।**
ক) ‘আমার ক্লায়েন্ট ধর্ষণ করতে চায়নি, কিন্তু সে যৌন সংসর্গে আসক্ত। কিছুতেই নিজের আবেগ আয়ত্বে রাখতে পারে না।’ – পুরুষের ব্যবহার সম্পর্কে এ হল চিরাচরিত যুক্তি – Boys will be boys। পুরুষ যৌন উত্তেজনা সামলাতে পারে না – তাই এই ধরনের ব্যবহার স্বাভাবিক। যদি কোনও দোষ হয়ে থাকে, তা মেয়েদের। তারাই সেক্সি পোশাক পড়ে, অবাধে মেলামেশা করে পুরুষকে প্রলোভিত করে।
খ) ‘আমার ক্লায়েন্ট ভীরু প্রকৃতির। তাকে কিছু করতে বললে সে ‘না’ বলতে পারে না।’ – পুরুষের দুর্ব্যবহার অনেক সময়েই তার মানসিক অক্ষমতা বলে হালকা করে দেওয়া হয়। কোনও পুরুষ যৌন বা শারীরিক নির্যাতন করে জানতে পারলে অনেককে বলতে শুনেছি, ‘লোকটির মানসিক সমস্যা বা অসুখ আছে।’ কারোর যদি সত্যি মানসিক রোগ থাকে, তাকে তো আর তার আচরণের জন্যে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না! এই যুক্তি অবাস্তব। রাষ্ট্রসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে অন্তত ৩৫% বিবাহিতা মহিলা স্বামীর হাতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ্য করেন। পৃথিবীর ৩৫ শতাংশ পুরুষ মানসিক রোগগ্রস্ত হতে পারে কি?
গ) ‘মহিলার স্বামীর আমন্ত্রণেই আমার ক্লায়েন্ট সেখানে গেছিল। অতএব সে ধরেই নিয়েছে মহিলার সম্মতি আছে।’ – এই যুক্তি পিতৃতান্ত্রিকতার উৎকট প্রকাশ। প্রতি ধর্ষক স্বীকার করেছে জিসেলকে সে অচেতন অবস্থায় দেখেছে। কারোরই জিসেলের সঙ্গে কথা হয়নি, তবু ধরে নেওয়া হয়েছে জিসেলের সম্মতি আছে। ধর্ষকেরা মহিলাকে দেখেছে জড়বস্তু হিসেবে। মহিলার স্বামীর আমন্ত্রণই তাঁর অনুমতির নিদর্শন। মহিলার মতামত শোনার বা জানার কোনও প্রয়োজন নেই।
ঘ) ‘আমার ক্লায়েন্ট বিশ্বাস করে নিজের স্ত্রীর ওপর তার স্বামীর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাই স্বামীর অনুমতিই যথেষ্ট।’ – এই বক্তব্যের উদ্ভবও কট্টর পিতৃতান্ত্রিকতায়। স্বামী তার স্ত্রীর প্রভু, দণ্ডমুণ্ডের মালিক। অতএব তার অধিকার রয়েছে স্ত্রীকে যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করার।
ঙ) ‘আমার ক্লায়েন্ট যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ করেনি। মহিলা কোনও উত্তর দিচ্ছে না দেখে ও ভেবেছিল সম্মতি আছে।’ – সম্মতি কী, সজ্ঞানে স্পষ্ট করে তা দেওয়া হচ্ছে কি না, এই বিষয়টি বহু পুরুষই অবজ্ঞা করে। অনেকে আবার বিশ্বাস করে মেয়েদের ‘না’ বলা মানে ‘হ্যাঁ,’ কারণ মেয়েরা মুখফুটে সম্মতি দিতে পারে না।
এগুলি ছাড়াও আরও তিনটি বিষয় মাজঅঁ’র মামলা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে। (১) ধর্ষণ শুধু বাড়ির বাইরে হয় না। বাড়ির অভ্যন্তরে, নিজেদের শোয়ার ঘরে, নিজের খাটেও ঘটে। (২) ধর্ষণ সংক্রান্ত পৃথিবীব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, সিংহভাগ ধর্ষণ ঘটে পরিবারের মধ্যে – ধর্ষক মেয়েদেরই প্রিয়জন বা পরিচিত, অচেনা মানুষ নয়। এক্ষেত্রে জিসেলের স্বামীই তার ধর্ষণ ঘটিয়েছে। (৩) ধর্ষকেরা অস্বাভাবিক, আসুরীয় জন্তু নয়। তারা আমাদেরই ভাই, বাবা, কাকা, দাদু, মেসো – তারা সমাজে বাস করে, পরিবারের ভরণপোষণ করে, সংসার করে। তবে তারা প্রকটভাবে বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিক ধর্ষণ-সংস্কৃতির শরিক।
শুধু ফ্রান্সের মাজঅঁ গ্রামে নয়, এই পুরুষতান্ত্রিক ধর্ষণ-সংস্কৃতি পৃথিবীর সব সমাজে চালু রয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ-সংস্কৃতি আসলে কী? কী তার প্রকৃতি? নারীবাদীরা বলেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাতাবরণ এমনভাবে তৈরি হয় যেখানে যৌন নির্যাতন মায় ধর্ষণ পর্যন্ত পুরুষের স্বাভাবিক আচরণ বলে মেনে নেওয়া হয়। ধরে নেওয়া হয় পুরুষ তো মেয়েদের ওপর জোর খাটাবেই। তাই বাড়ির মহিলারা কেমন জামাকাপড় পরবে, কী রান্না করবে, কোথায় যাবে, কার সঙ্গে কথা বলবে তা জবরদস্তি বেঁধে দেওয়া থেকে যৌন অত্যাচার করাও পুরুষের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ধর্ষণ-সংস্কৃতি অনুসারে দোষী হয় মেয়েরা – কেন সে রাতে বের হল, কেন একা গেল, কেন ছোটো জামা পরল, কেন অন্য পুরুষের সঙ্গে হেসে কথা বলল! মেয়েরা সামাজিক অনুশাসনের গণ্ডি লঙ্ঘন করেছে বলেই তারা ধর্ষিত হয়। ফলে সবটুকু দোষ তাদেরই।
এই বিষাক্ত আবহাওয়াই সমাজে ধর্ষণ সংস্কৃতি সৃষ্টি করে, তাকে পুষ্ট করে। এই সংস্কৃতির প্রভাবেই যৌন নিগ্রহকে আমরা ‘ইভ টিজিং’ বলে মুচকি হাসি, সিনেমায় হালকা গানের সঙ্গে ‘ইভ টিজিং’ উপভোগ করি। পরিবারের মধ্যে ধর্ষণ হলে ভিক্টিমকে বলি মুখ না খুলতে, কারণ এতে তারই লজ্জা। বিয়ের পর, বৌকে যে তার বর জোরজবরদস্তি করে যৌন সংসর্গ করছে, সে নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করি না। ধরে নিই সেটাই স্বাভাবিক। আর মেনে নিই খারাপ মেয়েরাই ধর্ষিত হয়। তাই মন্তব্য করি, ‘যৌনকর্মীর আবার ধর্ষণ কী?’[vii]
মাজঅঁ গ্রামের ঘটনা হয়তো একটা চরম উদাহরণ। কিন্তু ঘটনাটি সভ্য সমাজের ভদ্র মুখোশ ছিঁড়ে দিয়েছে। যে ধর্ষণ সংস্কৃতি নিয়ে নারীবাদীরা বহুদিন ধরে অভিযোগ করে চলেছে, তার উপস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই মামলা। ধর্ষণ সংস্কৃতির রূপ, আর. জি. কর হাসপাতাল আর মাজঅঁ গ্রামে অভিন্ন। একমাত্র এই সংস্কৃতিকে নষ্ট করেই ধর্ষণের দীর্ঘ মেয়াদি পরিশেষ আসতে পারে।
———-
[i] Narayan, D. (2018, July 2). “Inia is the most dangerous country for women. It must face reality.” The Guardian. Available at: https://www.theguardian.com/commentisfree/2018/jul/02/india-most-dangerous-country-women-survey
[ii] Reclaiming our Histories. (1978, May 1) “Women join in protest to “take back the night.” Available: https://reclaimingourhistories.org/exhibits/show/anti-rape-organizations/item/476
[iii] United Nations. (2016, April 20). Conflict-Related Sexual Violence. Report of the Secretary General. Available at: https://www.un.org/sexualviolenceinconflict/wp-content/uploads/report/s-2016-361/SG-Annual-Report-spread-2015.pdf
[iv] Sivakumaran, S. (2007). Sexual violence against men in armed conflict. The European Journal of International Law, 18, 253-276.
[v] Gladwell, M. (2000). The tipping point: How little things can make a big difference. Boston, MA: Little, Brown & Co.
[vi] Chrisafis, A. (2024, September 20). “’Everyone here is disgusted’: The village at the heart of the rape trial that shook France.” The Guardian. Available at: https://www.theguardian.com/world/2024/sep/20/everyone-here-is-disgusted-the-village-at-the-heart-of-the-trial-that-shook-france
[vii] কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ধর্ষণ-বিরোধী আলোচনা সভায় পুলিশের প্রাক্তন প্রধান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা যদি সোনাগাছিতে ঘটত, আমরা বলতাম তা হতেই পারে। কিন্তু এই ঘটনা আর জি কর-এর মত জায়গায় হতে পারে না।” অর্থাৎ, ‘খারাপ’ মেয়েদের ধর্ষণ হওয়া স্বাভাবিক। Available at: https://www.facebook.com/satabdid1/videos/895827445766803 (কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ শতাব্দী দাস)
ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত
** ফরাসি থেকে ইংরেজি তর্জমা পড়ে অনুবাদ করেছি আমি।